বাংলাদেশে বিভিন্ন সবজির বর্তমান ও অতীত পরিসংখ্যান
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ শাক সবজি খেয়ে আসছে। তবুও বাংলাদেশের জনগণ এখনো সবজির খাদ্যমান ও অন্যান্য গুনাগুণ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনে জমির ব্যবহার ও প্রকৃত উৎপাদন সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কেননা মানুষ প্রয়াজন মেটাতে বা সখের বশবর্তী হয়ে বাড়ির আশেপাশে, ঘরের চালে, বাড়ির ধারে, আনাচে কানাচে, গাছের উপর বাইয়ে দিয়ে সবজি উৎপাদন করে থাকে। অনেক সময় জমির আইলে, সাথী ফসল হিসেবে বা মিশ্র ফসল হিসেবে সবজি চাষ হয়। এরূপ অবস্থায় সবজির জমি ও উৎপাদনগত সঠিক তথ্য পাওয়া কষ্টসাধ্য। বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্রের কারণে কিছু কিছু সবজি নির্দিষ্ট মৌসুমে সফলভাবে চাষ হয়। আবার কিছু কিছু সবজি সারাবছরই চাষ হয়। সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ১০০০০ রকমের শাক সবজির পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে আর ৬০টি শাক সবজি পাওয়া যায়। এগুলোকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্য তাদের অংশগুলোকে কয়েকটি ভাগে বিভাজন করা হয়। যেমন- পাতাজাতীয় মূলজাতীয়, কম্পজাতীয়, কচুজাতীয়, শিমজাতীয়, কপিজাতীয়, কুমড়াজাতীয়, ফলজাতীয় ইত্যাদি। উৎপাদন মৌসুম হিসেবে শাক-সবজিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন ও বারমাসি । শাক সবজির কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন- দ্রুত বর্ধনশীল, স্বল্প সময়ে উৎপাদন করা যায় এবং সহজে আহারপোযোগী হয়, একর/হেক্টর প্রতি ফলন অন্যান্য খাদ্যশস্য অপেক্ষা অনেক বেশি, অনেক সময় সেচ ছাড়াই জন্মানো যায়, ইত্যাদি।
শাক সবজি আহারের সাথে মানুষের স্বাস্থ্যের বিরাট সম্পর্ক আছে। যারা যত বেশি শাক-সবজি খাবে, তাদের শরীরে রোগবালাই তত কম হবে। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ শাক সবজি খেলে পুষ্টিহীনতা দূর হবে এবং অন্ধত্ব, রাতকানা, এ্যানিমিয়া, পলগন্ড, স্ক্যাব প্রভৃতি সমস্যা হতে রেহাই পাবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০-২২০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত, কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীতে যায় মাত্র ৩০-৩৫ গ্রাম। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩.২৫ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ জমি থেকে প্রায় ৪২.৫৫ লাখ মে. টন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। অথচ বর্তমানে চাহিদা প্রায় ১১০ লাখ মে.টন। এ চাহিদা পুরণ করতে বর্তমান উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন প্রকার সবজি
ক. শীতকালীন সবজি ও আলু, বেগুণ, টমেটো, মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কচু, মিষ্টি কুমড়া, শিম, পালংশাক ইত্যাদি।
খ. গ্রীষ্মকালীন সবজি: বেগুন, লাউ, চালকুমড়া, পটল, ঝিঙা, করলা, শশা, চিচিঙ্গা, ডাঁটা, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, পেঁপে, কাঁচা কলা প্রভৃতি। বাংলাদেশে সবজি সরবরাহ বা বাজারে সবজি সরবরাহের অধিক প্রাপ্তি ও স্বল্প প্রাপ্তির সময় সীমা উল্লেখ করা হলো। উন্নত দেশে সংরক্ষণ ও আমদানির মাধ্যমে প্রধান প্রধান সবজি সারা বছরই ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য। বাংলাদেশের সবজির সরবরাহ সুষম নয়। মৌসুম অনুযায়ী এর প্রচুর ব্যবধান রয়েছে, সবজি আমদানির সুযোগও কম। এদেশের মাত্র কয়েকটি সবজি সারা বছর পাওয়া যায়। অন্যান্য সবজির উৎপাদন ও ব্যবহার ঋতুভিত্তিক। নিচে বাংলাদেশের কোন মাসে কি পরিমাণ সবজি বাজারে পাওয়া যায় তা দেয়া হলো।
মার্চ-এপ্রিল মাসে সর্বাধিক পরিমাণ সবজি পাওয়া যায় এবং এ সময়ে সবজি সংখ্যায়ও বেশি। তারপর নভেম্বর পর্যন্ত এদের প্রাপ্তি কমতেই থাকে। অক্টোবর মাসে দুঃষ্প্রাপ্য হয়।
মৌসুমভিত্তিক বাংলাদেশে সবজির উৎপাদন টন/হেক্টর
বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা
বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা অনেক, যেমন-
(১) জলবায়ুগত সমস্যাঃ বাংলাদেশে বিরাজমান জলবায়ুর কারণে বছরের সবসময় সব ধরনের শাক-সবজির উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ঠান্ডা আবহাওয়া ভালো এমন সবজি কেবল রবি মৌসুমে এবং গরম আবহাওয়া উপযোগী সবজিগুলোকে খারিফ মৌসুমে উৎপাদন করা সম্ভব হয়। বর্ষাকালে অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের দরুণ সবজি উৎপাদন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। মার্চ-মে মাসে বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত ও অনিয়মিত হলেও এ সময়ে বারবার প্রবল ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় যা সবজির জন্য নিরাপদ নয়।
(২) নিম্নমানের ফলনঃ বাংলাদেশের সবজির গড় ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম, যদিও অন্যান্য দেশের তুলনায় জমির গুণাগুণ এত খারাপ নয়। উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার না করা এর প্রধান কারণ ।
(৩) বীজের সমস্যাঃ বীজ সমস্যার কারণে এ দেশের সবজি উৎপাদন ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সবজি বীজ সমস্যার মধ্যে অনেক সবজির বীজ আমাদের দেশে উৎপাদিত না হওয়া, উৎপাদিত বীজের নিম্নমান এবং বিদেশ থেকে বীজ আমদানিতে সমস্যা। বিদেশ থেকে যে বীজগুলো আমদানি করা হয় তা আমাদের দেশের জলবায়ুতে উৎপন্ন হয় না যেমন-বাঁধাকপি, ফুলকপি ।
(৪) বাজারজাতকরণ সমস্যাঃ বাংলাদেশে সবজির বাজারজাতকরণের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। উৎপাদন মৌসুমে চাহিদা আছে এমন স্থানে শাক-সবজির যথেষ্ট মূল্য থাকলেও উৎপাদন এলাকায় এর মূল্য থাকে খুবই কম থাকে ।
(৫) সবজির উচ্চ উৎপাদন খরচ ও নিম্নমূল্যঃ সবজি চাষের উপকরণের মধ্যে বীজ, সার, ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও সিঞ্চন যত্র ইত্যাদি উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতা, নিম্ন গুণাগুণ ও দাম খুব বেশি ।
(৬) সবজির উৎপাদনে যথাযথ ও সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা থেকে অনেক উন্নত জাতের সবজির জাত আবিষ্কার করেছে, কিন্তু এগুলো সকল অঞ্চলের কৃষকদের দ্বার পর্যন্ত সময়মত পৌঁছায় না ।
শাক-সবজির বর্তমান অবস্থা উন্নয়নের পদক্ষেপ
সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জাতীয় ও কৃষক পর্যায়ে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সে সম্পর্কে তেমন কোন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। শাক-সবজির উৎপাদন, ব্যবহার ও সার্বিক উন্নয়নে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ঘাটতি মৌসুমে শাক সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি : জলবায়ুগত কারণে বছরের সব সময় সবজির উৎপাদন সমান থাকে না যথাযথ উৎপাদন কৌশল ও উপযোগী জাতের ব্যবহারের মাধ্যমে ঘাটতি মৌসুমগুলোতে সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
শাক সবজি উৎপাদনে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করেঃ শীতকালীন শাক-সবজির চাষ অনেকাংশে পানিসেচ সুবিধার ওপর নির্ভরশীল। সেচের সুযোগ বৃদ্ধি করে সবজি চাষাধীন জমি বাড়ানো সম্ভব।
শাক সবজি ফলন বৃদ্ধিঃ উন্নত ও উপযোগী জাত দ্বারা সবজির ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। সকল কৃষকই যদি উন্নত জাতের সবজি চাষ করে তাহলে সবজির ফলন অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেঃ আমাদের কৃষকেরা খুবই কম পরিমাণে সবজি উৎপাদন করে এবং কম জমিতে সবজি চাষ করে। সবজি যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় তাহলে সবজি উৎপাদন বেড়ে যাবে।
সবজি বীজ উৎপাদনের মাধ্যমেঃ বাংলাদেশে সব ধরনের বীজ সব জায়গায় উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়। তাই যে অঞ্চলে বীজ উৎপাদন ভালো হয়, সেভাবে বীজ উৎপাদন করা যায়। সবজি বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
গবেষণা জোরদারকরণঃ সবজির জাত উন্নয়ন এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসল রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে হবে। রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত বের করা খুবই প্রয়োজন।
উৎপাদন উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিতকরণঃ উন্নত মানের বীজ, নির্ভেজাল বালাইনাশক ও অন্যান্য উৎপাদন উপকরণ কৃষকেরা যাতে সময়মত এবং যুক্তিসঙ্গত দামে ক্রয় করতে পারে, তার ব্যাবস্থা করা। সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় সবজির উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবজি উৎপাদনের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশে সবজি চাষকৃত জমির পরিমাণ, সবজি উৎপাদন ও বিশ্বে সবজি উৎপাদন পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য জানা দরকার। সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নিম্নরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।
(১) সবজির উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন।
(২) পতিত জমিকে অধিক পরিমাণে শাক-সবজির উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা।
(৩) প্লাবনমুক্ত পাহাড়ি এবং টিরেস এলাকায় সবজি উৎপাদন বাড়ানো।
(৪) হিমাগারের সংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধি করে বীজআলু সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন।
(৫) বর্ষাকালে সবজি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম এলাকায় বিশেষ প্রকল্প
(৬) বাড়ি-ঘর, অফিস, স্কুল-কলেজ এবং রাস্তার পার্শ্ববর্তী পতিত জমিতে শাক-সবজি উৎপাদন।
(৭) সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
(৮) কীট-পতঙ্গ ও রোগ দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ ।
(৯) শিম, মিষ্টি আলু, শাক ও কচুজাতীয় সবজির উৎপাদন বাড়ানো ।
(১০) লবণাক্ত অঞ্চলে চাষাবাদের জন্যে বিভিন্ন সবজির জাত উদ্ভাবন ।
(১১) মিশ্র ফসলের চাষ, সাথী ফসলের চাষ।
বর্তমানে সবজি উৎপাদন ব্যবস্থা ৩ ভাগে পরিচালিত হচ্ছে-
ক) বসতবাড়ির আশপাশ ও অনির্ধারিত পতিত স্থানে সবজি উৎপাদন
খ) বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সবজি উৎপাদন এবং
গ) বীজের ব্যবসাকে লক্ষ করে সবজি উৎপাদন।
বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ হাজার খানা আছে। এসব খানায় পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য ১৫টি গ্রীষ্মকালীন ও ১৩টি শীতকালীন সবজি সারাবছরই চাষ হয়ে থাকে। ব্যবসায়িক উৎপাদনের উন্নয়ন করা হলে অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদা পূরণ এবং রপ্তানির জন্য উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ আছে। সাম্প্রতিককালে শহরের আশেপাশে ও শহরতলীতে শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। সবজি চাষ বৃদ্ধি এবং নিবিড়তার কারণে সবজি বীজের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। তাই উন্নতমানের বীজ উৎপাদনের জন্য সরকার বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের মাধ্যমে বীজ সরবরাহ করছে এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছে । বাংলাদেশে সবজির মধ্যে আলুকে অন্যতম ফসল ধরা হয়। আলু মূলত শ্বেতসারজাতীয় খাদ্য। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে বেশি পরিমাণে সবজি গ্রহণ করা হলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা সুষম হয়। শরীরের মোট ক্যালোরির অন্তত ৫% ফল সবজি হতে আসা উচিত। এতে যে পরিমাণ সবজি খেতে হবে তাতে শরীরের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ হবে।
বাংলাদেশে ২০০৬-২০০৭ ও ২০০৭-২০০৮ এ দানা শস্য চাষের অধীন জমি ছিল ১১৯.০৭ ও ১২২.৪৭ লাখ হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল 330.8১ ও ৩৫২.৯২ লাখ মেট্রিক টন। আমরা খাদ্য হিসেবে শুধু দানাদার শস্য (ধান, গম ও ভূট্টা) বেশি গ্রহণ করে থাকি। অথচ সবজির তুলনায় দানাদার শস্যের হেক্টর প্রতি ফলন অনেক কম। তাই খাদ্য ঘাটতি পূরণে দানাদার শস্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। শাক সবজি যেহেতু অল্প সময়ে বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা যায়, তাই খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য শাক সবজির উৎপাদন ও বেশি আহার করা প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বের জনগণ মাথাপিছু দৈনিক ৩০০-৫০০ গ্রাম শাকসবজি খেয়ে থাকে। যারফলে তাদের স্বাস্থ্য অনেক ভালো এবং নিরোগ। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের শাকসবজি খাওয়ার হার প্রতিদিন প্রায় ৩০ গ্রাম এবং দানাশস্য গ্রহণের হার প্রায় ৫০০ গ্রাম। এতে খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য দানাশস্য চালের ওপর বেশি চাপ পড়ে। শাক সবজি খাওয়া পরিমাণের প্রতি একটু যত্নশীল হলেই বাড়ানো সম্ভব। তাতে শাক সবজির বার্ষিক খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ২৮-৩০ লক্ষ টন হতে প্রায় ২০০ লাখ টনে উন্নিত হবে। অধিকাংশ শাকসবজিই সংগ্রহের পর পরই খেতে হয়। তবুও অনেক সবজি আছে, যা অন্য উপায়ে বা শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
সারণিঃ বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের জনগণের মাথাপিছু দৈনিক খাদ্য গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র
একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের দৈনিক খাদ্য তালিকায় যা থাকা উচিত তা হলো-
শাকসবজি উৎপাদন কম, তাই গ্রহণের পরিমাণও কম। অন্যদিকে শাকসবজি ব্যবহারেরও যথেষ্ট ত্রুটি আছে। যেমন-
(ক) শাকসবজি উঠানোর/সংগ্রহকালে অপরিচ্ছন্ন পাত্রে বা মাটিতেই রাখা হয়। শাকসবজি নরম ও রসালে বিধায় অনেক রোগ জীবাণু তাতে সহজে প্রবেশ করে।
(খ) শাক সবজি যতদূর সম্ভব টাটকা অবস্থায় খাওয়া উচিত। কিন্তু একমাত্র পারিবারিক বাগান ছাড়া বাণিজ্যিক- ভাবে উৎপাদিত শাক-সবজি টাটকা পাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া সেগুলো নোংরা পানিতে ধুয়ে বা নোংরা পানির ছিটা দিয়ে নোংরা পরিবেশে নোংরা পাত্রে ভরে দীর্ঘসময় গরম পরিবেশে বহন করে বাজারে/আড়তে পৌঁছায়।
(গ) বাজারে শাক সবজি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নাই, ফলে গুণাগুণ অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু তা না করে কাটার পর পানিতে ধুয়ে নেওয়া হয়, ফলে পুষ্টিগুণ বহুগুণে কমে যায় ।
(ঘ) শাক সবজি চাষকালে মারাত্মক বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
(ঙ) শাকসবজি রান্নার আগে যখন কেটে প্রস্তুত করা হয় তার পূর্বে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
(চ) রান্নার সময় যতদূর সম্ভব সবজি কম সেদ্ধ করতে হয়। কিন্তু তা না করে অতিরিক্ত সিদ্ধ বা ভাজা পোড়া করে রান্না করা হয়, তাতে সবজির পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যায়।
(ছ) যতটা সম্ভব কম পানি দিয়ে সবজি সিদ্ধ করতে হয় এবং পানি ফেলে দিতে হয় না। কিন্তু তা না করে সিদ্ধ করার পর পানি ফেলে দিয়ে বেশিরভাগ পরিবারে রান্না করে থাকে ।
(জ) যে সব সবজি কাঁচা খাওয়া যায়, সেগুলো কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া উচিত। যেমন- টমেটো, ক্যাপসিকাম, শশা, গাজর, লেটুস, মটরশুটি ইত্যাদি। অথচ টমেটো, শশা, গাজর রান্নার তরকারির সাথে যোগ করে দেওয়া হয়, তাতে অনেক পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায় ।
(ঝ) ঢেঁড়শ কাঁচা অবস্থায় খাওয়া সম্ভব, যদি কচি সংগ্রহ করা যায়। তবে একটু সিদ্ধ করে তাতে সামান্য লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। কিন্তু ঢেঁড়শ সাধারণত ভাজা করে খায়। এতে পুষ্টিমান কমে যায় ।
এক কথায় উত্তর
১. শাক সবজি উৎপাদন মৌসুম হিসেবে শাকসবজি কয় ভাগে বিভক্ত ?
২. বাংলাদেশে বর্তমানে সবজির চাহিদা কত মেট্রিক টন ?
৩. বাংলাদেশে মোট খানার সংখ্যা কত ?
8. উন্নত বিশ্বের জনগণ মাথাপিছু দৈনিক কত গ্রাম সবজি খায় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সবজি চাষের সমস্যাসমূহ কী কী ?
২. সবজি চাষের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশে সবজি চাষের বর্তমান অবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায় তা আলোচনা কর ।
সবজির বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ
শাক-সবজিকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন- মৌসুমভিত্তিক, ব্যবহারভিত্তিক, উৎপত্তি ভিত্তিক, ভক্ষণযোগ্য ভিত্তিক, শেকড়ের গভীরতা অনুযায়ী, মাটির উপরে বা নিচে জন্মানোভিত্তিক, উদ্ভিদতাত্ত্বিক ইত্যাদি।
ক) মৌসুম ভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ ও মৌসুম অনুযায়ী বাংলাদেশের সবজিগুলোকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- (১) রবি মৌসুমের সবজি- এ সবজি শীতকালে জন্মে থাকে। উদাহরণ- ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, গাজর, লেটুস, শিম, ওলকপি, মুথা, টমেটো ইত্যাদি ।
(২) খারিফ সবজি- এ সবজি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে জন্মে থাকে। উদাহরণ- চালকুমড়া, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দল, ঢেঁড়শ, কলা, ডাঁটা, পুঁইশাক, পটল, কচু, বরবটি ইত্যাদি।
(৩) বারমাসি সবজি- এ সবজি সারা বছর জন্মে থাকে। উদাহারণ বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পেঁপে, শশা ইত্যাদি ।
খ) ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ- সবজি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে সবজিগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
১। সালাদজাতীয় সবজি- এ সবজিগুলো সাধারণত সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- শশা, গাজর, লেটুস, ক্যাপসিকাম, পেঁপে ইত্যাদি ।
২। তরকারিজাতীয় সবজি- এ সবজিগুলো তরকারি রান্নার জন্য শুধু ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- বেগুন, পটল, ঝিঙা, আলু, ধুন্দল ইত্যাদি।
৩। ভর্তাজাতীয় খাবার তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো অনেক সময় ভর্তা তৈরি করে খাওয়া হয়। উদাহরণ ওলকচু, কাঁচাকলা, পেঁপে, বেগুন ইত্যাদি।
৪। চাটনী তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো চাটনি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- টমেটো, ধনিয়াপাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি।
৫। ভাজা খাবার তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো ভাজা খাবার তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- বরবটি, করলা, শিম, লালশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি।
৬। স্যুপ তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো স্যুপ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- পিঁয়াজ পাতা, পুদিনা পাতা, সিলারি, গাজর, মটরশুটি ইত্যাদি।
গ) উৎপত্তিভিত্তিক সবজি- বাংলাদেশে যে সমস্ত শাকসবজির চাষ হচ্ছে সেগুলোকে উৎপত্তিস্থলের ভিত্তিতে দেশি ও বিদেশি হিসেবে ভাগ করা যায়। যথা
(১) দেশি সবজি- পটল, লালশাক, কলমিশাক, শিম, মিষ্টি কুমড়া, কচুজাতীয়, পাটশাক ইত্যাদি ।
(২) বিদেশী সবজি- কপিজাতীয়, লেটুস, সিলারী, গিমা কলমি, বীট, গাজর, ব্রোকলী, চিনা বাধাকপি ইত্যাদি।
ঘ) আহারোপযোগী/ভক্ষণযোগ্য ভিত্তিক- ফসলের প্রকারভেদে বিভিন্ন অংশ খাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে সবজিগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।
(১) পাতাজাতীয় সবজি- লালশাক, পুঁইশাক, লেটুস, পার্সলি, সিলারি ইত্যাদি।
(২) ফলজাতীয় সবজি- বেগুন, টমেটো, কুমড়াজাতীয়, শিম, বরবটি ইত্যাদি ।
(৩) কম্পাল সবজি- আলু, মেটে আলু, পাহু আৰু ইত্যাদি।
(৪) কাজাতীয় সবজি- ডাঁটা, পানিকচুর লতা ইত্যাদি ।
(৫) কচুজাতীয় সবজি- মুখীকচু, ওলকচু, মানকচু ইত্যাদি।
(৬) ফুলজাতীয় সবজি- ফুলকপি, ব্রোকলি, মিষ্টি কুমড়া ফুল, শাপলা ফুল, বকফুল ইত্যাদি।
(৭) বীজজাতীয় সবজি- শিম বীজ, কাঁঠাল বীজ, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
ঙ) শিকড়ের গভীরতাভিত্তিক সবজি- এ জাতীয় সবজিকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- অগভীর ও গভীর শিকড়জাতীয় সবজি।
১। অগভীর শেকড়যুক্ত সবজি- বীট, গাজর ইত্যাদি।
২। গভীর শিকড়যুক্ত সবজি- মূলা, মেটে আলু ইত্যাদি।
চ) জীবনকালভিত্তিক সবজি- জীবনকালের ভিত্তিতে সব সবজিকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (১) বর্ষজীবী (২) দ্বিবর্ষজীবী ও (৩) বহুবর্ষজীবী
১। বর্ষজীবী সবজি-মুলা, গাজর, লেটুস, ওলকপি, বীট ও আলু ইত্যাদি।
২। দ্বিবর্ষজীবী সবজি- কাঁকরোল, করলা, শিম, বরবটি, বেগুন, পটল, পুঁইশাক ইত্যাদি।
৩। বহুবর্ষজীবী সবজি- পেঁপে, মেটে আলু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি।
৩। বহুবর্ষজীবী সবজি- পেঁপে, মেটে আলু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি।
একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী সবজির পরিবার ও উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম
বীজ বলতে আমরা বীজত্বক দ্বারা আবৃত এবং সুপ্ত প্রম্পযুক্ত পরিণত, পরিপুষ্ট ও নিষিক্ত ডিম্বককে বীজ হিসেবে বুঝে থাকি। একটি সাধারণ বীজের ২টি অংশ থাকে। যথা- বীঘত্বক ও বীজসার বা কার্ণেল। একটি বীে বীজপত্রের সংখ্যা অনুসারে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী।
(১) একবীজপত্রী- ধান, গম, ভুট্টা, কলা, খেজুর, কচু ইত্যাদি ।
(২) দ্বিবীজপত্রী - শিম, চিচিংগা, ধুন্দল, বেগুন, ছোলা, কঁঠাল ইত্যাদি।
এছাড়া আরও এক প্রকারের উদ্ভিদ আছে যথা- বহুবীজপত্রী বীজ। উদাহরণ পাইনগাছ। যে কোন বীজেরই একটি বা তার বেশি বীজপত্র থাকে। বীজপত্রের সংখ্যা যখন একটি থাকে তখন তাকে একবীজপত্রী বীজ বলে। আর বীজে বীজপত্রের সংখ্যা যখন দুটি থাকে তখন তাকে দ্বিবীজপত্রী বীর বলে। একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী বীজের পার্থক্য
একবীজপত্রী বীজ | দ্বিবীজপত্রী বীজ |
১। সাধারণত বীজত্বক ও ফলত্বক পরস্পর যুক্ত থাকে | ১। বীজত্বক ও ফলত্বক বুক্ত থাকে না। |
২। ভ্রূণ ছোট ও একটি বীজপত্র থাকে। | ২। ভ্রূণ বড় এবং এতে দুটি বীজপত্র থাকে। |
৩। ভ্রূণ মূল ও ভ্রূণমুকুল আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে । | ৩। কোন আবরণ থাকে না। |
৪। বীজপত্র ভ্রূণাক্ষের শীর্ষে এবং ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল ভ্রূণাক্ষের দু'পাশে থাকে। | ৪। ভ্রূণাক্ষের দুপাশে বীজপত্রদ্বয় ও দুপ্রান্তে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল থাকে। |
একবীজপত্রী শাকসবজী
১। বর্গ এরিয়ালেস- (Ariales)
২। গোত্র- এরেসী (Araceae)
Colocasia Esculent (কোলোকেশিরা এসকুলো)- মুখী কচু, পানি কচু, পঞ্চমুখী কচু ।
Alocasia mycorrhiza বা Indica (লোকেপিয়া ম্যাক্রোরাইলা ইন্ডিকা)মানকচু (coco yarn)
২। বর্গ - লিলিয়ালেস (Liliales)
৩। গোত্র- লিলিয়েশী (Liliaceae)।
Alium ceps পেঁয়াজ (Onion)
Alium satium রসুন (Garlic)
দ্বিবীজপত্রী শাকসবজী
১। বর্গ-এমারানথালেস (Amaranthiales)
গোত্র- এমারানথেসি (Amaranthaceac )
Amaranthus gangeticus লালশাক (Red amaranths)
Amaranthus lividus (Amaranthus)
২। বর্গ-বাসিলালেস (Basellales)
গোত্র- ব্যাসিলেসি (Basellaceac )
Basella alba পুঁইশাক (সাদা) Indian spinach ( white)
৩। বর্গ-বোরাজীনালেস (Baragiinales)
গোত্র- কনভুলভুলেসি (Convolvulaceae)
Impomea aquatica কলমিশাক (Swanp cabbage)
৪। বর্গ-রোডালেস (Rhoedales)
গোত্রে ক্রুসিফেরি (Crucipperae)
Bassica oleracea Variety-Capitata বাঁধাকপি (Cabbage)
Bassica oleracea Variety-botrytis ফুলকপি (Cauliflower)
Raphanus Sativus মূলা
৪। বর্গ-কিউকারবিটালেস (Cucurbitales)
গোত্র- কিউকারবিটেসি (Cucurbitaccac)
Cucurbita moschata মিষ্টি কুমড়া (Sweet gourd)
Cucumis Sativus শশা (Cucumber)
৫। বর্গ-লিগুমিনোসালেস (Leguminosales)
গোত্র- লিগুমিনোসি (Leguminosae)
Dolichos Lablab শিম (Country bean)
Vigna Sesquipedalis বরবটি (Yard long bean)
৬। বর্গ-মালভলেস (Malvales)
গোত্র- মালভেসি (Malvaceac )
Hibiscus esculentus ঢেঁড়স (Okra or Ladys finger)
৭। বর্গ- পোলেমোনিয়ালেস ( Polemoniales)
গোত্র- সোলানেসি (Solanaceac )
Solanum tuberosum আলু (Potato)
Solanum melongena বেগুণ (Brinjal)
Lycopersicon esculentum টমেটো (Tomato)
শাক-সবজির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ— শাক-সবজির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ সম্পর্কে এ অধ্যায়ে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
এক কথায় উত্তর
১. মৌসুম অনুযায়ী বাংলাদেশের সবজিগুলোকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ?
২. শেকড়ের গভীরতা ভিত্তিক সবজিগুলোকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
৩. একটি সাধারণ বীজে কয়টি অঙ্গ থাকে ?
৪. একটি বীজে যখন বীজপত্রের সংখ্যা দুটি থাকে তখন তাকে কী বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সবজির উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করে প্রত্যেকটি ২টি করে উদাহরণ দাও ।
২. একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রীর মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে?
৩. গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ২টি করে সবজির ইংরেজি, বাংলা ও উদ্ভিদতাত্তিক নাম লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সবজিকে কিসের কিসের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয় তা উল্লেখ পূর্বক যে কোন ৩টি শ্রেণির উদাহরণসহ তার শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
বিভিন্ন সবজিতে প্রাপ্ত পুষ্টিসমূহের নাম
দেহের পুষ্টিসাধন, ক্ষয়পূরণ, শক্তি যোগান এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শাক সবজি থেকে পাওয়া যায়। খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের পর পাচনতন্ত্রে হজম হয়ে এর যে অংশ শরীরের জীবকোষে শোষিত হয় ও শরীরের পুষ্টি সাধনে অবদান রাখে সেগুলো পুষ্টির মৌলিক উপাদান । বিজ্ঞানীগণ পুষ্টি উপাদানগুলোকে ৭টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা
ক) আমিষ/প্রোটিনজাতীয় খাদ্য
খ) শ্বেতসার/শর্করা/কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য
গ) স্নেহ/চর্বি/তেলজাতীয় খাদ্য।
ঘ) খাদ্যপ্রাণ/ভিটামিন জাতীয় খাদ্য
ঙ) খণিজ পদার্থ লবণ/ মিনারেল জাতীয় খাদ্য
চ) ফাংশনাল/কার্যকর জাতীয় খাদ্য (আঁশজাতীয়)
ছ) পানিজাতীয় খাদ্য।
ক) আমিষজাতীয় খাদ্য-মটরশুটি, বরবটি, শিম, বিভিন্ন রকমের শাক, কচু, গোলআলু, ফুলকপি, ব্রোকলী, কালোকছু, করলা ইত্যাদি।
খ) শ্বেতসারজাতীয় খাদ্য- পেঁপে, শালগম, কাঁঠাল, আলু, কলা, কাসাভা, মটরশুটি, কাঁকরোল, ফুলকপি, বেগুন, করলা, কচুজাতীয় সবজি ইত্যাদি।
গ) স্নেহজাতীয় খাদ্য-কচু ও কচু জাতীয় সবজি, মটরশুটি, সয়াবিন, গোল আলু, কাঁকরোল, করলা, বেগুন, ফুলকপি ইত্যাদি ।
ঘ) খাদ্যপ্রাণজাতীয় খাদ্য-সকল সবুজ ও রঙিন শাক সবজি, আলু, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, লালশাক, কচুশাক, পটল, শালগম, মূলাশাক, ডাঁটাশাক, উচ্ছে, পালংশাক, ক্যাপসিকাম, মরিচ, কাচা মটরশুটি, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি ইত্যাদি ।
ঙ) খনিজ পদার্থজাতীয় খাদ্য-বীট, শিম, কচুশাক, ডাঁটা, পুঁইশাক, ধনেশাক, ঢেঁড়শ, কলমীশাক, ফুলকপি, রাইশাক, লালশাক, লেটুস, কালো কচুশাক ইত্যাদি।
চ) কার্যকর সবজিজাতীয় খাদ্য-ঢেঁড়শ, ডাঁটা, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দল ইত্যাদি (আঁশজাতীয় খাদ্য)।
ছ) পানিজাতীয় খাদ্য-শশা, পেঁপে, কুমড়াজাতীয়সহ সকল শাক সবজিতে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি আছে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের পুষ্টি উপাদান (খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে)
মানুষের পুষ্টিতে সবজির ভূমিকা
মানুষের পুষ্টিতে এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দৈনন্দিন পুষ্টি উপাদান সরবরাহে সবজির গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের স্বাভাবিক কাজ ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে মানুষের সব ধরনের খাদ্যোপাদানের প্রয়োজন। যথা- শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান, পানি ও কার্যকর খাদ্য উপাদান। এগুলোকে পুষ্টির মৌলিক উপাদান বলা হয়। দেহের সঠিক বৃদ্ধি, উন্নয়ন, প্রজনন তথা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রত্যেকটি জৈব বা অজৈব উপাদান প্রয়োজনীয় পরিমাণে নিয়মিতভাবে সরবরাহ করতে হয়। এ জন্য উপাদান সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের সবজি গ্রহণ করতে হবে। একজন ব্যক্তির দৈনিক কোন উপাদান কতটুকু প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার দেহের ওজন, লিঙ্গ, পেশা ও জলবায়ুর ওপর। একজন বয়স্ক ব্যক্তির (মহিলা এবং পুরুষ) জন্য দৈনিক বিভিন্ন উপাদান কতটুকু প্রয়োজন তা নিচে । উল্লেখ করা হলো।
স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ভূমিকা
স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ভূমিকা এবং তাদের চাহিদা মেটাতে শাকসবজির অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ক. শর্করা ও রেহ উপাদান : এ জাতীয় খাদ্যসমূহ শরীরের তাপমাত্রা রক্ষা করে এবং দৈনন্দিন শারীরিক ও মানসিক কাজ কর্ম সমাধা করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা সরবরাহ করে । প্রয়োজনে আমিষও শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
প্রতি গ্রাম শর্করা ৪.১০ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম স্নেহ ৯.৪৫ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম আমিষ ৫.৬৫ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। ক্যালোরির অভাবে দেহের ওজন কমে আসে ও কাজকর্ম করার ক্ষমতা লোপ পায়। তাছাড়া এর অভাবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা কমে যায়, যার ফলে তাদের স্বাভাবিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না। বিভিন্ন উৎস হতে পাওয়া ক্যালোরির স্থানগত কোন পার্থক্য নেই। তবে মোট চাহিদার অন্তত দশভাগ ক্যালরি স্নেহ হতে আসা উচিত, অন্যথায় রেহের মধ্যে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন এ, ডি, ই, কে) এর শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ক্যালোরির প্রধান উৎস উদ্ভিজ ও প্রাণিজ খাদ্য। তবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) মতে, শরীরের চাহিদার কমপক্ষে শতকরা ৫% ক্যালোরি শাকসবজি ও ফলমূল থেকে আসা উচিত, যা ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করে থাকে ।
নিচে শর্করা ও চর্বি সরবরাহকারী সবজির তালিকা দেয়া হলো।
খ. প্রোটিনঃ আমাদের দেহের জলীয় অংশটুকু বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তার অর্ধেকটাই প্রোটিন। দেহের প্রত্যেকটি কোষের মৌলিক কাঠামো প্রোটিন দ্বারা গঠিত। তাই দেহের সর্বত্রই প্রোটিন বিদ্যমান। যদিও মাংসপেশী এবং রক্তে প্রোটিন সর্বাধিক। দেহের মধ্যে প্রািেটনের প্রধান কাজ হলো টিস্যু তৈরির মৌলিক উপকরণ ও কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া এবং প্রয়োজনবোধে ক্যালোরি সরবরাহ করা। তাই বর্ধনশীল বালক-বালিকা এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন সর্বাধিক। বয়স্ক লোকের দেহে প্রোটিন প্রধানত টিস্যু গঠন, শরীরকে সুরক্ষা ও ক্ষয়প্রাপ্ত টিস্যু পুনর্গঠন করে। প্রোটিনের অভাবে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যদি শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য যেমন- শর্করা, ভিটামিন 'সি' প্রভৃতির অভাব ঘটে, তবে প্রোটিন শক্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্রাণিজ খাদ্য হলো প্রোটিনের প্রধান উৎস। যথা- মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
শাক সবজিতে অন্যান্য খাদ্য অপেক্ষা প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম। প্রোটিন হলো এমাইনো এসিডের পলিমার; যেখানে ২০টিরও বেশি এমাইনো এসিড রয়েছে, যার মধ্যে ৮টি মানুষের জন্য অত্যাবশকীয় (শিশুর জন্য ১০টি তবে আরজিনিন, হিষ্টিডিন বেশি প্রয়োজন হয়)। শস্য কণায় যে প্রোটিন পাওয়া যায় তাতে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড় না পাওয়া গেলেও শাকসবজিতে উক্ত এমাইনো এসিডসমূহ পাওয়া যায়। যেমন- ট্রিপটোফেন, মিথিওনিন, হিষ্টিডিন, ভ্যালিন, লিউসিন, ফিনাইল, এলানিন ইত্যাদি। সুতরাং নিয়মিত সবজি ভক্ষণ করলে এমাইনো এসিডের অভাব অল্প হলেও দূর করা সম্ভব। নিচে প্রোটিন সরবরাহকারী সবজির নাম দেয়া হলো ।
মটর : ৭.৪ গ্রাম/১০০ গ্রাম | পালংশাকঃ ৩.৩ গ্রাম/১০০ গ্রাম এবং |
শিমঃ ৩.৯ গ্রাম/১০০ গ্রাম | করলাঃ ১২.৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম |
কালো কচুশাকঃ ৬.৮ গ্রাম/১০০ গ্রাম |
গ. ভিটামিনঃ ভিটামিন বলতে এমন কতগুলো যৌগিক পদার্থকে বঝায় যেগুলো ব্যতীত দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি সম্ভব নয়। পরিমাণের দিক দিয়ে যদিও ভিটামিনের চাহিদা ততো বেশি নয়, তবুও দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভিটামিনের সামান্য অভাবে দেহে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয় । ভিটামিন এ-এর প্রধান উৎস হলো শাকসবজি ও ফলমূল। মানব দেহের চাহিদার প্রায় ৯০-৯৫% ভিটামিন সি, ৬০-৮০% ভিটামিন এ, ২০-৩০% ভিটামিন বি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কে ও ই শাক সবজি ও ফলমূল হতে আসে।
ভিটামিন-এঃ উদ্ভিজ্জ ও প্রানিজ উভয় রকমের অনেক খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ আছে। প্রাণিজ খাদ্য দুধ, ডিম, মাখন কলিজা, মাছ ইত্যাদি।
উদ্ভিজ্জ খাদ্যঃ সবুজ শাকসবজি, আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। ভিটামিন 'এ' এর প্রধান উৎস। উদ্ভিজ খাদ্যের মধ্যে ভিটামিন 'এ' কতগুলো হলুদ বর্ণের রঞ্জক বিদ্যমান থাকে । এদেরকে ভিটামিন ‘এ' এর প্রিকারসর বা ক্যারোটিন বলা হয়। ক্যারোটিন কলিজায় সহজেই সিক্ত হয়ে ভিটামিন 'এ' তে পরিণত হয় । শরীর বৃদ্ধির জন্য বিশেষ করে দাঁত উঠার সময় এবং দাঁতের পুষ্টির জন্য ও দৃষ্টি অক্ষুন্ন রাখার জন্য ভিটামিন ‘এ’ একান্ত প্রয়োজন । এর অভাবে রাতকানা রোগ হয় এবং ‘এ’ এর অভাব বেশি দিন ধরে চললে চোখ সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হতে পারে। এছাড়া শরীরে ভিটামিন 'এ' এর অভাব দেখা দিলে সহজেই মানুষ ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। সবুজ শাকসবজি মানব দেহের চাহিদার ৩০% ভিটামিন এ সরবরাহ করে। বিভিন্ন শাকসবজি থেকে যে পরিমাণ ভিটামিন 'এ' পাওয়া যায় তা নিম্নরূপঃ
লালশাকঃ ১১.৯৪ গ্রাম/ ১০০ গ্রাম | ডাঁটাশাকঃ ১০.১০ গ্রাম/ ১০০ গ্রাম |
কচুশাকঃ ১২.০০ গ্রাম/ ১০০ গ্রাম | পুইশাকঃ ১২.৭৫ গ্রাম/ ১০০ গ্রাম; |
ভিটামিন বি১, ও দেহের মধ্যে শ্বেতসারের বিপাক ক্রিয়ায় থায়ামিণের প্রয়োজন। স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ সম্পাদনের ব্যাপারেও এটি জড়িত। এর অভাবে ক্ষুধা কমে যায়, মানসিক অবসাদ বিষণ্ন হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, শরীরের তাপ ও ওজন কমে যায়,স্মরণশক্তি কমে আসে, হজম শক্তি লোপ পায় এবং দুর্বলতা দেখা দেয় । এর অভাব বেশিদিন ধরে চললে বেরিবেরি রোগের সৃষ্টি হয়- যা মানুষকে পঙ্গু করে ফেলে। ভিটামিন বি, -এর উৎস হলো- ঢেঁকিছাটা সিদ্ধ চাল, ডিম, মাছ, কলিজা ইত্যাদি।
শাকসবজিতে ভিটামিন বি-এর পরিমাণ সবুজ কচুশাক : ০.২২ গ্রাম/১০০ গ্রাম ।
পটলঃ ০.৩০ গ্রাম/১০০ গ্রাম ডাটাশাক : ০,২৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম ।
ঝিঙা ৪ ০.১১ গ্রাম/১০০ গ্রাম শালগম। : ০.৩১ গ্রাম/১০০ গ্রাম।
ভিটামিন বি২, ও সুস্বাস্থ্য ও দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য রিবোফ্লোভিনের দরকার হয়। এর অভাবে- চর্ম রোগ হয়, চোখের জ্যোতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ঠোট ও নাকফোলা দেখা দেয় ইত্যাদি । ভিটামিন বি, পাওয়া যায়- ডিম, কলিজা, দুগ্ধজাতীয় খাবার, শাকসবজি, কালো কচুশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে বি, পাওয়া যায় ৷
ভিটামিন বি৩, ৪ হজম শক্তি ও চামড়ার মসৃণতা বৃদ্ধিতে এই ভিটামিনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এর অভাবে পগা রোগ দেখা দেয় । যার ফলে শরীরের অঙ্গসমূহ লাল হয়ে উঠে এবং পরবর্তীতে চর্মরোগ দেখা দেয়। জিহ্বাতেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা, চীনাবাদাম, মাশরুম এবং শাকজাতীয় খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে নিয়াসিন ওয়া যায় ।
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) : প্রোটিন মেটাবলিজমের জন্য ভিটামিন বি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। এর অভাবে ত্বক, লিভার, রক্ত নালিকা স্নায়ুতন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয় ৷
ভিটামিন বি১২ঃ এর অভাবে ডিএনএ- এর গঠন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। ইহা সব পাতাজাতীয় সবজি এবং সবুজ শাক সবজিতে পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি (এসকরবিক এসিড)ঃ এ ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন পেশীর কোষসমূহকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত রাখতে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম ও লোহার বিপাকে সহায়তা করে। ভিটামিন ‘সি’- এর অভাবে স্কার্ভি রোগ দেখা দেয়। এ রোগের আক্রমণে দাঁত ক্ষয় হয়, দাঁতের মাড়ি হতে রক্ত পড়ে এবং হাত পা ফুলে যায়। ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে ‘সি' ভিটামিনের অবদান প্রমাণিত হয়েছে। দেহের চাহিদার ২৪% ভিটামিন সি সবুজ শাকসবজি, ১৫% গোল আলু, ৩৫% টমেটো ও লেবুজাতীয় ফল হতে আসে । ফলের মধ্যে আমলকি, পেয়ারা, লেবু এবং সবজির মধ্যে বিবিন্ন জাতের শাক, বাঁধাকপি, টমেটো ভিটামিন “সি” এর ভালো উৎস। গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর থেকে ফল ও সবজিতে ভিটামিন 'সি' এর পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে । ধৌত ও রান্নার সময় ভিটামিন 'সি' নষ্ট হয় বিধায় টাটকা অবস্থায় ফল ও সম্ভব হলে সবজি অসিদ্ধ অবস্থায় খাওয়া বাঞ্ছনীয় । নিচে বিভিন্ন সবজিতে ভিটামিন 'সি' এর পরিমাণ উল্লেখ করা হলো ।
মূলাশাক : ১৪৮ গ্রাম/১০০ গ্রাম
পালংশাকঃ ৯৭ গ্রাম/১০০ গ্রাম
ডাটাশাকঃ ৭৮ গ্রাম/ গ্রাম/১০০ গ্রাম
কাঁচা মরিচঃ ১২৫ গ্রাম/ গ্রাম/১০০ গ্রাম
উচ্ছেঃ ৯০ গ্রাম/ গ্রাম/১০০ গ্রাম।
ভিটামিন ইঃ এ ভিটামিন টোকোফেরল নামেও পরিচিত। বন্ধ্যাত্ব নিবারণে এ ভিটামিন সহায়তা করে। বাধাকপি, পালং শাক, রসুন, কাঁচা মটরশুটিতে ভিটামিন ই বিদ্যমান ।
ভিটামিন ‘কে’ঃ রক্তে অবস্থিত প্রোথ্রোম্বিন নামক পদার্থ রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘কে’ এই পদার্থটি তৈরি করে। তাই ভিটামিন কে এর অভাব হলে ক্ষতস্থান হতে রক্ত ক্ষরণ সহজে বন্ধ হয় না। প্রসবের সময় যাতে অধিক রক্তপাত না ঘটে সে জন্য গর্ভবতী মাকে ভিটামিন 'কে' বেশি দেওয়া হয়। বাঁধাকপি, গাজর ও ফুলকপিতে ১০ গ্রাম এ ২-৪ গ্রাম ভিটামিন ‘কে’ পাওয়া যায় ৷
ঘ. খনিজ পদার্থ- শরীরের সুষ্ঠু গড়নের জন্য খনিজ পদার্থ অপরিহার্য। বিভিন্ন ধরনের প্রধান খনিজ পদার্থগুলো হচ্ছে Ca, Fe, K, Mn, Na, Cl, Cu, Zn ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কোন কোন উপাদান শরীরের হাড়, রক্ত বা হরমোন তৈরির কাজে নিয়োজিত। অন্যগুলো দেহের তরল পদার্থে লবণরূপে দ্রবীভূত হয়ে থাকে এবং পেশী ও কোষের বাহ্যিক ও রাসায়নিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। শরীরের মোট ওজনের শতকরা ৪.৩ থেকে ৪.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ থাকে।
ক্যালসিয়ামঃ দেহে Ca এর অভাব হলে হাড় ও দাঁতের গঠন দুর্বল হয় এবং সহজে ভেঙে যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শাক, তিলের বীজ, নারিকেল, ইলিশ মাছ, ধনিয়া, জিরা, দুধ Ca এর ভাল উৎস। শাকসবজির মধ্যে ঢেঁড়শে ১১৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম, কালো কচু শাকে ৪৬০ গ্রাম/১০০ গ্রাম, সবুজ কচু শাকে ২২৭ গ্রাম/১০০ গ্রাম, লাল শাকে ৩৭৪ গ্রাম/১০০ গ্রাম, ডাঁটাতে ২৬০ গ্রাম/১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
লোহাঃ লোহা হিমোগ্লবিন এর একটি উপাদান। হিমোগ্লবিন ফুসফুসে হতে দেহের সর্বত্র O২, দেয়া এবং দেহের বিভিন্ন অংশ হতে CO, বহন করে নিয়ে আসার কাজ করে। হিমোগ্লবিন সবসময় স্থায়ী থাকে না । অনবরত উৎপন্ন হয় ও ধ্বংস হয়, ফলে এটি উৎপন্ন হওয়ার জন্য দেহে নিয়মিত লোহা সরবরাহ করতে হয়। লোহার অভাবে রক্ত শূন্যতা সৃষ্টি হয়। বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য লোহার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কালো কচুশাকে ৩৮.৭ গ্রাম/১০০ গ্রাম, সবুজ কচুশাকে ১০ গ্রাম/১০০ গ্রাম, লেটুসে ২৪ গ্রাম/১০০ গ্রাম, পুঁইশাকে ১০ গ্রাম/১০০ গ্রাম, ডাঁটাশাকে ২৫.৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম লাহো পাওয়া যায় ।
এক কথায় উত্তর
১. মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমুহকে বিজ্ঞানীগণ কয়টি ভাগে ভাগ করেছে ?
২. এক গ্রাম শর্করা কত কিলো ক্যালরি শক্তি সরবরাহ করে ?
৩. কোন পুষ্টির অভাবে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় ?
৪. দৃষ্টি অক্ষুন্ন রাখার জন্য কোন ভিটামিন একান্ত প্রয়োজন ?
৫. শরীরে প্রোটিন মেটাবলিজমের জন্য কোন ভিটামিন একান্ত প্ৰয়াজন?
৬. দেহের চাহিদার কত % ভিটামিন স্থি সবুজ শাক সবজি হতে আসে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর নাম লেখ।
২. একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক খাদ্য তালিকায় কী থাকা উচিত ?
৩. শরীরে প্রোটিনের কাজ কী তা বর্ণনা কর ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. স্বাস্থ্যরক্ষায় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন ও ভিটামিনের ভূমিকা সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
সবজি চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন
শাক সবজি ভেদে শাক সবজি চাষের জন্য যথেষ্ট আলো বাতাসের সুবিধা আছে এমন জমি নির্বাচন করা উচিত। বিশেষ করে ফল জাতীয় সবজির (বেগুন, ঢেঁড়শ, টমেটো, কুমড়া, শশা, পেঁপে, মরিচ, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম ইত্যাদি) জন্য আলোর দরকার হয়। শাক ও মূল জাতীয় সবজি (ডাঁটা, পুঁইশাক, কলমিশাক, সিলারি, লেটুস, বিট, গাজর, মূলা, শালগম) কিছু কম আলোতে এবং কচু, মেটে আলু, গাছ আলু ইত্যাদি সবজি ছায়াতেও ভালোভাবে জন্মাতে পারে।
সারা বছর শাক সবজি চাষাবাদের জন্য সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন উঁচু জমি সুবিধাজনক। পানি সেচ ও নিকাশের জন্য জমি মোটামুটি সমতল ও একদিকে কিছুটা ঢালু থাকলে ভালো হয়। সবজি বাগান এমন জমিতে হওয়া উচিত যেখানে কাছাকাছি পানির উৎস আছে এবং সহজেই পানি সেচ ও নিকাশ করা যায়। সবজি বাগানে ছায়া যত কম পড়বে ততই ভালো। শাক সবজির বাগান যদিও সাধারণত বাড়ির আশে পাশেই করা হয়ে থাকে এবং সহজে দেখাশোনা করা যায়। তবে সবজির চাহিদা ও উৎপাদনের উদ্দেশের ওপর ভিত্তি করে জমির স্থান নির্বাচন করা উচিত। যেমন- গার্হস্থ্য সবজি বাগান, বিক্রয়মূলক সবজি বাগান, সৌখিন সবজি বাগান, বাহির বাণিজ্য বাগান ইত্যাদি।
গার্হস্থ্য সবজি বাগান
এ ধরনের সবজি বাগানের জন্য যে কোন ধরনের যে কোন আকারের খণ্ড জমি হলেই চলে। এ ধরনের সবজি বাগান সাধারণত ছোট আকারের হয়ে থাকে। যতদূর সম্ভব বাড়ির আশে পাশে পতিত বা ফঁকা স্থানগুলোতে এ বাগান করা হয়। এক্ষেত্রে পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য স্বল্প সময়ে বেশি পরিমাণে জন্মে এমন ধরনের সবজি নির্বাচন করে চাষ করা হয়। এ বাগানে কী কী শাক সবজি জন্মানো হবে তা পরিবারের লোকজনদের আবার পছন্দের ওপর নির্ভর করে। বাড়ির আশে পাশের জমিতে বাগান করা হয় বলে পরিবারের মেয়েরা এ ধরনের বাগানের সুযোগ বুঝে কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া সবজি সংগ্রহও মহিলারাই করে থাকে।
শাক সবজি যতদূর সম্ভব টাটকা অবস্থায় খাওয়া উচিত। গার্হস্থ্য সবজি বাগান হতে বেশি ফলপ্রসুভাবে টাটকা অবস্থায় পছন্দমত শাক সবজি সহজে সংগ্রহ করা যায়। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১.৫ কোটি খানা আছে এবং প্রতি খানাতেই কিছু কিছু করে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এতে জমির নিবিড় ব্যবহার, পরিবারের বিভিন্ন জনের শ্রমের ব্যবহার হয় এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
সৌখিন সবজি বাগান
অনেকে টমেটো, বেগুন, মরিচ, শিম বা কপিজাতীয় ২-৪টি গাছ বাসার সামনে, টবে, ড্রামে বা ছাদে লাগায় নিতান্তই শখের বসে। অবসর সময়ে, কাজের ফাঁকে বা বিকেলে গাছের যত্ন নিতে আনন্দ বোধ করে এবং গাছে ২-৪টা ফল ধরলে খুব আনন্দ পায়। অনেকে সৌখিন বাগানকে গার্হস্থ্য সবজি বাগান বলে থাকে।
বাণিজ্য সবজি বাগানঃ বিদেশের চাহিদা মোতাবেক বিশেষ ধরনের সবজি নির্দিষ্ট এলাকায় উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে সে ধরনের সবজি জোন গড়ে উঠেনি। তবে এ ধরনের বাগান তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
বিক্রয়মূলক সবজি বাগান
বাজারের চাহিদা এবং বেশি মূল্য পাওয়ার ওপর জোর দিয়ে সাধারণ এ ধরনের বাগান করা হয়। আগেকার দিনে যে সমস্ত বিক্রয়মূলক সবজি বাগান ছিল তা শহরের আশে পাশে সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু বর্তমানে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণসহ বিভিন্ন কারণে শহর বা বাজার হতে অনেক দূরবর্তী স্থানেও শাক সবজি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। যেহেতু রাস্তাঘাট ও যানবাহনের সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জনগণের রুচি পরিবর্তন ও চাহিদা বাড়ছে, অধিক লাভজনক ও নতুন নতুন আকর্ষণীয় সবজি প্রবর্তিত হচ্ছে।
সৌখিন সবজি বাগান
অনেকে টমেটো, বেগুণ, মরিচ, শিম বা কপিজাতীয় সবজির ২-৪টি গাছ বাসার সামনে বা টবে বা ড্রামে বা ছাদে লাগায় নিতান্তই শখের বসে। অবসর সময়ে বা কাজের ফাঁকে বা বিকেলে গাছের যত্ন নিতে আনন্দ বোধ করে এবং গাছ বড় হলে ২-৪টা ফল ধরলে খুব আনন্দ পায়। অনেকে সৌখিন বাগানকে গার্হস্থ্য সবজি বাগান বলে থাকে।
মাটির বৈশিষ্ট্য বুঝে সবজি চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন
মাটির বৈশিষ্ট্যঃ জমি মাটি দ্বারা গঠিত যা জৈব পদার্থযুক্ত। গাছপালা সে মাটি হতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। মাটি একটি জীবন্ত ও পরিবর্তনশীল পদার্থ। মাটির বৈশিষ্ট্য অনুসারে সকল মাটিকে তিনভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা- (ক) ভৌতিক (খ) রাসায়নিক ও (গ) জৈবিক।
(ক) ভৌতিক- মাটি বিভিন্ন প্রকার কণার সমন্বয়ে গঠিত। বিভিন্ন প্রকার কণার পরিমাণের ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে মাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এতে মাটির বুনট, সংযুক্তি, ঘনত্ব, মাটিতে রন্ধতা, মাটির রং, দৃঢ়তা ও কমনীয়তা, তাপমাত্রা, পানি ধারণক্ষমতা বৈশিষ্টগুলো থাকবে। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ- (১) পাথুরে মাটি (২) বেলে মাটি (৩) পলি মাটি (৪) কাদা মাটি (৫) দোঁআশ মাটি।
(১) পাথুরে মাটি- পাথর গুড়ি, কাঁকর ও বালির সমন্বয়ে এ মাটি গঠিত। এ মাটি চাষ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও কৃষি কাজের জন্য অনুপযোগী। এর কণাগুলো খালি চোখে দেখা যায় ।
(২) বেলে মাটি- শতকরা ৭০ ভাগ বা তার অধিক বালিকণাযুক্ত মাটি। নদীর চর, চরাভূমি, মরুঅঞ্চল এবং বৃষ্টিবহুল এলাকায় এরূপ মাটি দেখা যায়। এ মাটি সহজে কর্ষণ করা যায়; কিন্তু অনুর্বর ও পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। এ মাটিতে আগাম শীতকালীন সবজি ও মূলজাতীয় ফসল ভালো জন্মে। এর কণাগুলো খালি চোখে দেখা যায়।
(৩) পলি মাটি- নদীর তীরবর্তী ও প্লাবিত অঞ্চলে এ ধরণের মাটি বেশি পাওয়া যায়। এ মাটি উর্বর, তাই সব ধরনের সবজিই জন্মানোর উপযোগী। এর কণাগুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ভালোভাবে দেখা যায় ।
(৪) কাঁদা মাটি- শতকরা ৪০-৫০ ভাগ কর্দম কণাযুক্ত মাটি। এ মাটিতে পলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি। ভিজা অবস্থায় খুবই নরম ও আঁঠালো প্রকৃতির থাকে, কিন্তু শুকালে খুবই শক্ত হয়। সবজি চাষের জন্য এ মাটি খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। এর কণাগুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও দেখতে কষ্টকর হয়।
(৫) দোঁআশ মাটি শতকরা ৭০ ভাগের কম ও ২০ ভাগের বেশি বালিকণা বিশিষ্ট মাটি। কোন কোন ক্ষেত্রে বালিকণার পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত নেমে গেলেও মাটি দোঁআশ হতে পারে। তবে আদর্শ দোঁআশ মাটিতে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বালিকণা এবং অর্ধেক পরিমাণ পলি ও কদমকণার মিশ্রণ থাকে।
দোঁআশ মাটিতে বালি ও কর্দম কণার কম বেশির অনুপাত অনুসারে এ মাটিকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়।
যথা- (ক) বেলে দোঁআশ ও (খ) এঁটেল দোআশ ।
ক) বেলে দোঁআশ- বেলে দোঁআশ মাটিতে শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ হতে ৬৫ ভাগ পর্যন্ত বালি থাকতে পারে ।
(খ) এটেল দোঁআশ- এটেল দোআশ মাটিতে শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ কর্মকণা এবং একই পরিমাণ পলি কণা থাকতে পারে।
এছাড়া পলি কণার তারতম্য অনুসারে দোঁআশ মাটিকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (১) পলি দোঁআশ ও (২) পলি এঁটেল দোঁআশ ।
(১) পলি দোঁআশ- পলি দোঁআশ মাটিতে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ পলি ও ২০ ভাগ কর্দম কণা এবং
(২) পলি এঁটেল দোঁআশ- এ মাটিতে শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ বালি এবং ৩০ ভাগ কর্দম কণা থাকে । দো-আশ মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি এবং এর অভ্যন্তরে বেশি পরিমাণে বায়ু চলাচল করতে পারে। তাই এ মাটি গভীর তর পর্যন্ত রসালো থাকে। এ মাটি ঝুরঝুরে প্রকৃতির ও উর্বর হয়ে থাকে তাই এ মাটিতে যে কোন ফসল ভালোভাবে জন্মানো যায় ।
খ) রাসায়নিক- রাসায়নিক বিশ্লেষণ দ্বারা মাটির উর্বরতা এবং মাটিতে পুষ্টির অভাব আছে কি না তা জানা যায় । সাধারণত দুই ধরনের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা হয়। যথা- মাটিতে মোট পুষ্টির পরিমাণ ও গাছের খাদ্য হিসেবে উপযোগী প্রয়োজনীয় পুষ্টি। মাটির রাসায়নিক উপাদান তথা গাছের পুষ্টি উপাদানগুলো যথা- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, বোরণ, কপার, জিংক, আয়োডিন, মলিবডেনাম ইত্যাদি। এগুলো মাটির মধ্যে উপযুক্ত পরিমাণে থাকা দরকার; যেহেতু শাক সবিজর স্বাভাবিকভাবে জন্মানোর জন্য এগুলো প্রয়োজন। এই উপাদানগুলো উপযুক্ত পরিমাণে না থাকলে গাছ গাছড়ার বৃদ্ধিতে নানা ধরনের অসুবিধা হয়। উল্লিখিত উপাদানগুলোর মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিংক গাছের জন্য বেশি পরিমাণে দরকার হয়। তাই সুষ্ঠুভাবে ফসল ফলানোর জন্য এগুলো জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। তবে অন্যান্য উপাদানগুলো খুব অল্প পরিমাণে দরকার হয় এবং মাটিতে যে পরিমাণে আছে তাতেই ফসলের প্রয়োজন মিটে যায়। তবে সারা বছর ঘন ঘন ফসল চাষের ফলে অন্যান্য উপাদানগুলোর ঘাটতিও মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে।
মাটিতে হাইড্রোজেন আয়রনের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে মাটি অম্ল বা ক্ষার হয়। শস্য উৎপাদন এই অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের (পি.এইচ মানাঙ্ক) ওপর নির্ভর করে। এই অম্লত্ব বা ক্ষারত্বকে পি.এইচ মানাঙ্ক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। পি.এইচ-এর নিরপেক্ষ মানাঙ্ক ৭। এর নিচের মানাঙ্ক অম্ল এবং উপরের মানাঙ্ক ক্ষার। নিরপেক্ষ মানাঙ্ক হতে অম্ল বা ক্ষারের মান যত দূরে হবে মাটি ততবেশি অম্ল বা ক্ষার হবে। বিভিন্ন শাক সবজির চাষ উপযোগী পি.এইচ মানাঙ্ক সারণিতে দেয়া হলো।
অম্লমাটি- যে মাটির পি.এইচ মানাঙ্ক ৭ এর চেয়ে কম থাকে তাকে অম্লীয় মাটি বলে। মাটিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বা চুনের অভাব হলে বা জৈব পদার্থ বেশি হলে মাটি অম্লীয় ভাবাপন্ন হয়। উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির পানির সাথে চুন মাটির অভ্যন্তরে চুয়ায়ে যায় । এর ফলেও মাটিতে অম্লীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া এমোনিয়াম সালফেটজাতীয় সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এবং বৃষ্টিপাত কম হলে মাটিতে অম্লত্ব সৃষ্টি হয়। শাকসবজি সাধারণত অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে।
ক্ষারীয় মাটি- যে মাটির পি.এইচ মানাঙ্ক ৭ এর উপরে থাকে তাকে ক্ষারীয় মাটি বলে। কোন মাটিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা না থাকলে এবং দীর্ঘদিন ধরে বাষ্পীয়ভবন হলে সেখানে লবণাক্ততা ও ক্ষারীয় অবস্থার সৃষ্টি হয় । এ ধরনের মাটিতে লৌহের অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ক্ষার সহিষ্ণু ফসল ছাড়া অন্য ফসল ভালোভাবে জন্মে না । মাটির পি.এইচ মানাঙ্ক নিরপেক্ষ করার জন্য চুন প্রয়োগের পরিমাণ সারণিতে দেওয়া হলো মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রধান বিক্রিয়ার শ্রেণি।
অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব সংশোধনের উপায়
অম্লীয় মাটি |
| ক্ষারীয় মাটি | |
১. | পানি নিকাশ ব্যবস্থা ও সেচের পানির উন্নয়ন | ১. | পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা |
২. | চুন বা ক্যালসিয়াম প্রয়োগ | ২. | পাবন সেচের দ্বারা জমি ধৌত করা |
৩. | উপযুক্ত শস্যচক্র অনুসরণ | ৩. | জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিপসাম বা ক্যালসিয়াম সালফেট ব্যবহার করা |
৪. | কাঠের ছাই প্রয়োগ, জৈব সার প্রয়োগ, সুষম মাত্রার সারের ব্যবহার | ৪. | মাটির উপরিভাগে খড়কুটার মালচিং দ্বারা পানির বাষ্পীভবন রোধ করা |
৫. | মাটিতে চুন প্রয়োগের একমাসের মধ্যে গোবর, খৈল, ইউরিয়া ব্যবহার না করা এবং বীজ/চারা রোপণ বা বপন না করা | ৫. | জমির উপরিভাগের মাটি ৫-১০ সে.মি. গভীর করে অপসারণ করা |
মাটি যত ভারী হবে চুনের পরিমাণ তত বেশি লাগবে। দোঁআশ বেলে মাটির চেয়ে এঁটেল মাটিতে চুন প্রয়োজন প্রায় দ্বিগুণ । কোন মাটির অম্লমান ৬.০ থেকে ৬.৫-এ বাড়াতে যে পরিমাণ চুন প্রয়োজন, অম্লমান ৪.৫ থেকে ৫.০ -তে উন্নীত করতে প্রায় ৩ গুণ বেশি চুন প্রয়োজন ।
গ) জৈবিক- মাটিতে অনেক প্রকার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জীবাণু আছে। যথা- নানা রকম ব্যাকটেরিয়া, মোল্ড, ইষ্ট, প্রটোজোয়া এবং ফানজাই । এই সমস্ত জীবাণুসমূহের রাসায়নিক কার্যাবলির ফলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ অংশ পঁচে জৈব সারে রূপান্তরিত হয়। কতকগুলো ব্যাকটেরিয়া শিম বা ডাল জাতীয় শস্যের শিকড়ে বাতাস হতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে জমা করে। কতগুলো ব্যাকটেরিয়া এমোনিয়া এসিডকে এমোনিয়াতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু গাছপালা কেবল নাইট্রোজেন এমোনিয়া রূপে থাকলে তা গ্রহণ করতে পারে।
বাংলাদেশে সবজি চাষের জমির অবস্থা
বাংলাদেশের সবজি উৎপাদন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গেলে সবজি চাষের আওতায় জমির পরিসংখ্যান জানা দরকার। তবে সবজি চাষের আওতায় জমি ও উৎপাদনের সঠিক তথ্য নিরূপণ করার খুব কঠিন। কারণ দু'একটি ফসল ছাড়া প্রায় ফসলই ব্যাপকভাবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ করা হয় না। যেমন- তরমুজ, আলু, গাজর, , শিম ইত্যাদি ।
তাছাড়া বাংলাদেশে জমির আইল ও বসতবাড়ির এলাকায় জন্মানো সবজির পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তবুও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে জমির ব্যবহার ও সবজি চাষের পরিসংখ্যান সারণিতে দেওয়া হলো ।
সারণিঃ বাংলাদেশে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে জমির ব্যবহার
বাংলাদেশে সাধারণত ১৫-২৮ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি বিরাজ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। খাদ্য বলতে আমরা সাধারণত দানা জাতীয় শস্যকে বিবেচনা করে থাকি । বর্তমানে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ায় ও সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে দানাজাতীয় খাদ্যের সাথে সবজি ও ফসলের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে দানাজাতীয় শস্যের (ধান ও গম উৎপাদন, ঘাটতি এবং আমদানির হিসেব নিচে সারণিতে দেয়া হলো।
সারণি : বাংলাদেশে ধান ও গমের উৎপাদন ঘাটতি এবং আমদানির পরিমাণ ।
আমাদের দেশে শাকসবজি অপেক্ষা দানাজাতীয় শস্যের হেক্টর প্রতি ফলন অনেক কম । এছাড়া খাদ্যমানের দিক থেকেও সবজির মান অনেক উঁচুতে। কেননা প্রায় সকল সবজিতেই মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এমন অনেক সবজি আছে যেগুলো দানাজাতীয় শস্য উৎপাদন সময়কালের মধ্যে ২-৩ বার উৎপাদন করা সম্ভব হয় । যেমন- ধান বা গম উৎপাদন সময়ের মধ্যে লাল শাক, মূলা শাক, ডাটা ২-৩ বার জন্মানো যায়। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে সহজে সবজি জন্মানোর উপযোগী । কিন্তু নানাবিধ কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের চাইতে হেক্টর প্রতি গড় ফলন অনেক কম । সারণিতে কয়েকটি দেশের দৈনিক মাথাপিছু গড় শাক সবজি উৎপাদনের (গ্রাম) পরিসংখ্যাণ দেয়া হলো ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শুধু দানাজাতীয় শস্য উৎপাদন করে সহজে পুষ্টি সমস্যা ও পুষ্টিযুক্ত খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই শাক সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করে পুষ্টি ঘাটতি ও দানাজাতীয় শস্যের উৎপাদন সমন্বয় করার চেষ্টা করা অপরিহার্য । বাংলাদেশ শাক সবজি ও দানাজাতীয় শস্যের গতিধারায় দেখা যায় যে দানাজাতীয় শস্যের চেয়ে শাক সবজির জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯৪-৯৫ সনে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি একত্রে ৩৬২০০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়, যা মোট ফসলি জমির শতকরা ২.৬৯ ভাগ। ঐ একই সময়ে মোট ১০৫৬৬০০০ হেক্টর জমিতে দানাজাতীয় শস্য চাষ হয়, যা মোট ফসলি জমির শতকরা ৭৮.১০ ভাগ। বাংলাদেশে অধিকাংশ সবজি শীতকালে এবং সমতল ও উঁচু উভয় ধরনের জমিতে জন্মে থাকে। গ্রীষ্মকালে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ এবং কম সংখ্যক সবজি চাষ করা হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ সবজি শীতকালে এবং ৩০ ভাগ সবজি গ্রীষ্মকালে জন্মে। নিচু এবং পাহাড়ি এলাকায় সবজি একেবারে চাষ হয় না বললেই চলে।
২০০৭-০৮ এ সবজি চাষ হয় ৬.৫১ লাখ হেক্টরে এবং দানাজাতীয় শস্য চাষ হয় ১৮২.২৯ লাখ হেক্টরে যা মোট আবাদি জমির যথাক্রমে ৮০% ও ৩%।
সবজি চাষের জমি তৈরি (কর্ষণ, বেড তৈরি, নালা তৈরি)
জমি তৈরির সুবিধাদি ও প্রস্তুত পদ্ধতি- সবজি চাষের জমি সমতল হওয়া বাঞ্চনীয়। তাতে পানি সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। চাষের পূর্বে অসমতল জমি ও পূর্ববর্তী ফসলের আইল, কেয়ারী, মাদা ইত্যাদি কেটে সমতল করে নিতে হয়। জো অবস্থায় পুনঃ পুনঃ চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঢেলামুক্ত ও ঝুরঝুরে করতে হয়। শাকের ক্ষেত্রে ২০-২৫ সেমি, এবং মূলজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ সেমি গভীর করে চাষ দিতে হয়। এ কাজ কোদাল, ট্রাক্টর বা রোটোভেটেরের সাহায্যে সহজে করা যায়। এক মৌসুমে জমি গভীরভাবে চাষ না করে কয়েক মৌসুমে অল্প অল্প করে গভীর করে চাষ দেয়া উচিত। একবারে গভীর করে চাষ করলে নিম্নস্তরের মাটি উপরে চলে আসে এবং সেক্ষেত্রে ভালো ফলন আশা করা যায় না। জমি যত ভালোভাবে তৈরি হয়, তত মাটির পানি ধারণ ও বায়ু চলাচল ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে গাছের শেকড় তত সহজে বিস্তার লাভ করে। ফলে গাছ অধিক খাদ্যোপাদান গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া মাটির স্বাভাবিক তাপ ও আর্দ্রতা বজায় থাকে। অপরদিকে অনিষ্টকারী কীট ও রোগ জীবাণু এবং আগাছা ইত্যাদি বিনষ্ট হয়। মাটির জীবাণুসমূহের মধ্যে বিশেষতঃ নাইট্রোজেনযুক্তকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
জমি সঠিকভাবে ওলটপালট করে চাষের সময় রোদে উন্মুক্ত রাখতে হয়। মই দিয়ে জমি সমতল করে ঢেলা ভেঙে ঝুরঝুরে করতে হয়। আঁচড়া দিয়ে আগাছা টেনে পরিষ্কার করতে হয়। ভেজা অবস্থায় জমি চাষ দেওয়া ঠিক নয় । বিশেষ করে এঁটেল মাটি ভিজা অবস্থায় চাষ করলে ঢেলা ভাঙ্গা দুরহ হয়ে যায়। দোঁআশ মাটি কিছু ভিজা অবস্থায় চাষ করা গেলেও মাটি শুকানোর পূর্বে মই দেওয়া উচিত নয়। উল্লেখ্য যে চাষ ও মই দেওয়া জমি থেকে বৃষ্টি বা সেচের পরপর প্রায় ১৪% পানি বাষ্পীভূত হয় অথচ চাষহীন জমি হতে ৮০% পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তাই জমিতে রস সংরক্ষণের জন্য চাষের পর জোযুক্ত জমিতে মই দিতে হয়। জমিতে চটা তৈরি হলে তা ভেঙ্গে দিতে হয়। তাতে রস ধরে রাখতে পারে। সুতরাং জমি তৈরিকরণের সাথে মাটির তাপ ও রস সংরক্ষণ এবং সবজি আবাদের সাফল্য কতটা নির্ভরশীল তা সহজেই বোঝা যায়। জমি সমতল না হলে ঢাল হয়ে থাকলে ভূমি ক্ষয় বেশি হয় এবং পুষ্টি উপাদান চুয়ায়ে বা গড়ায়ে নিচু স্থানে চলে যায়। এতে জমি অনুর্বর হয়। জমি তৈরিতে শেষ চাষের পূর্বে মৌল সার ছিটিয়ে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
কোন কোন সবজি চাষ ছাড়া করা যায়। মাটিতে আলু চাষ, মেটে বা গাছ আলু রোপণে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না। যে জমিতে ফসলটি শেষ পর্যন্ত জন্মিবে সেখানকার মাটির পরিবেশ তার উপযোগী করে তৈরি করা প্রয়োজন। সাধারণ শস্য অপেক্ষা সবজির জমি উত্তমরূপে তৈরি করতে হয়। বেশির ভাগ সবজির চারা তৈরি করে চাষ করা হয়। চারা তৈরিতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় এবং বীজতলায় চারার অবস্থাসমূহ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বীজতলায় সহজে পানি দেওয়া এবং সহজে নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়। রৌদ্রের তেজ এবং বৃষ্টি ও ঝড়ের ঝাপটা হতে রক্ষা করার বিশেষ ব্যবস্থাও সবজি চাষের প্রথম ধাপ হিসেবে বীজতলায় রাখতে হয়। তাহলে চারার প্রাথমিক দুর্বল অবস্থায়ও চারা দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।
সবজি চাষে বেড তৈরি- বেডে সবজি চাষ করতে সহজ হয়। অধিকাংশ সবজিই চারা তৈরি করে চাষ করা হয়। এছাড়াও অনেক সবজির বীজ লাইনে বপন/রোপণ করা হয় এবং এতে বীজ কম লাগে, পরিচর্যা সহজ হয়, রোগ পোকামাকড় দমন সহজ হয়, সেচ নিকাশ সুবিধাজনক হয়, ফলন বাড়ে। তাই সবজি চাষে বেড তৈরি করার গুরুত্ব আছে। জমি চাষ করে পরিপাটিভাবে তৈরির পর ফসলের দূরত্বের সাথে সংগতি রেখে চওড়া করে বেডের মাপ দিতে হয়। প্রতিটি বেডের পর ১৫-২০ সে.মি. চওড়া অগভীর নালা কেটে সরু লম্বা ফালিতে বিভক্ত করা হয়। লম্বা ফালির মাটি দুপাশ দিয়ে একটু উঁচু আকারে বেড তৈরি করা হয়। এরপর বেডে মাদা করে বা খুবরী (গর্ত) করে বা লাইন টেনে বীজ/চারা রোপণ করা হয়। নালাগুলো পানি সেচ বা নিকাশ ও কাজের জন্য চলাচলে ব্যবহার করা হয়। বেডগুলো অনেক সময় বীজ/চারা এক বা দুই বা তিন সারিতে রোপণ করা হবে কী না তার ওপর নির্ভর করে চওড়া করা হয়। প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ১৫-২০ সে.মি. চওড়া ও ৭-৮ সে.মি. গভীর করে নালা তৈরি করা হয়।
এই নালা তৈরির সময় যে মাটি উঠানো হয় তা বেড়ে দিয়ে বেডকে কিছুটা উঁচু করা হয় যাতে সেচ বা বৃষ্টির পানি সাথে সাথে গড়ায়ে নালায় যেতে পারে। কেননা অধিকাংশ সবজিই দাড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। কিছু কিছু সবজি আছে যেগুলো বেডের পরিবর্তে আইল তৈরি করে তাতে রোপণ করা হয়। যেমন- বরবটি, শসা, টমেটো। জমি উত্তমরুপে তৈরি করে ফসলের দূরত্ব বিবেচনা করে উঁচু উঁচু আইল তৈরি করা হয়। এ আইলে সবজি রোপণ করে ইংরেজি 'এ' অক্ষরের ন্যায় বাউনি তৈরি করে তাতে গাছ উঠায়ে দেওয়া যায়।। যে সব সবজির বীজ সরাসরি ছিটিয়ে বোনা হয় এসব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ জমিকে লাঙ্গল দিয়ে ফালি টেনে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। সাধারণত বীজ ছিটিয়ে বোনার পর জমিতে ফালি টানা হয়। এই ফালিগুলোই পরিচর্যার জন্য চলাচল, সেচ ও নিকাশের কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলা, লালশাক, সর্ষে শাক, মটর শাকজাতীয় সবজির বীজ বপণের পর জমিতে ফালি টানা হয়।
নালা তৈরিঃ সবজি চাষে অঙ্কুরোদগমকৃত এবং রোপণকৃত বীজ বা চারার জন্য পানির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। সবজির ধরন, চাষের সময়, জমির ধরন ও ফসলের বৈশিষ্ট্যের ওপর পানির প্রয়োজন কতটুকু তা নির্ভর করে। এই পানি বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হয়। জমির শোষণ ক্ষমতা ও ফসলের চাহিদার অতিরিক্ত পানি যদি জমিতে দাঁড়ানো থাকে তাহলে ফসলের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি জমি দীর্ঘসময় ভেজা থাকলে ফসলের চাহিদাকৃত পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা যায়। আবার জমি বেশি শুকনা থাকলে বা রসের ঘাটতি থাকলে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই এ উভয় অবস্থা থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য সেচ বা নিকাশের জন্য নালার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। জমির চারদিক দিয়ে বা ভিতরে নালা করতে হলে জমির এ নালার সাথে অন্যান্য মাঝারি বা বড় নালার সাথে সংযাগে থাকতে হবে। তাহলে জমি থেকে অতিরিক্ত পানি দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সবজি চাষে সারের ব্যবহার
সবজি চাষে সারের চাহিদা নিরূপণ
চাষের পূর্বে সবজির সারের চাহিদা নিরূপণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সবজির চাহিদা মোতাবেক সঠিক পরিমাণ অপেক্ষা কম সার ব্যবহার করলে ফলন কমে যাবে। অন্যদিকে বেশি সার ব্যবহারে সারের অপচয় হবে, খরচ বেড়ে যাবে, ফসলের গুণাবলি ও জমির উর্বরতা নষ্ট হবে। সবজির সারের চাহিদা সঠিকভাবে জানতে হলে চাষাবাদের পূর্বে মাটিতে কতটুকু খাদ্যোপাদান আছে পরীক্ষা করা উচিত। মাটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকলে তা প্রয়োগের মাধ্যমে পূরণ করে দিতে হবে। ফসল সংগ্রহের পর আবার পরীক্ষা করে জানা যাবে যে উক্ত ফসল জমি হতে কতটুকু বিভিন্ন খাদ্যোপাদান শোষণ করেছে। শোষণকৃত পরিমাণই হলো উক্ত ফসলের সারের চাহিদা। তবে, সারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে কতগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন-
(১) ফসলের খাদ্যোপাদান চাহিদা ও পরিশোষণ ক্ষমতা
(২) ভূমির উর্বরতা।
(৩) মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক অবস্থা
(৪) আবাদ পদ্ধতি ও মৌসুম
(৫) সারের গুণাবলি এবং
(৬) সার ও ফসলের মূল্যের অনুপাত।
মাটিতে কোন একটি খাদ্যোপাদান ঘাটতি থাকলে এবং অন্যান্য খাদ্যোপাদানের পরিমাণ বেশি থাকলেও গাছ সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। তাই ফসলের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে কৃত্রিম উপায়ে সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। কোন ফসলের প্রয়োজনীয় সব খাদ্যোপাদান উপযুক্ত মাত্রাকে একত্রে সুষম মাত্রা বলে।
যেখানে মাটি পরীক্ষার সুযোগ নেই সেখানে সবজির সারের চাহিদা নিরূপণ করতে হয় এর আহারাপেযাগী অংশ বিবেচনা করে। যেমন, পাতাজাতীয় সবজি প্রধানত নাইট্রোজেন, ফুল ও ফল জাতীয় সবজি ফসফরাস এবং মূলজাতীয় সবজি পটাশ সার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে থাকে। তাই আহারপযাগেী অংশের কথা খেয়াল রেখে সবজির সারের চাহিদা ঠিক করতে হবে। এছাড়া সবজি চাষের মেয়াদ বিবেচনা করেও সারের চাহিদা ঠিক করা যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি সবজির বেলায় বেশি মেয়াদি সবজির চেয়ে কম পরিমাণ সারের প্রয়োজন হবে।
সারের চাহিদা পূরণের জন্য রাসায়নিক সারের ওপর পুরোপণরি নির্ভর না করে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। সবজির প্রধান খাদ্যোপাদানগুলোর মোট চাহিদার অনতুত ১০-১৫ ভাগ জৈব সার হতে আসা উচিত। বিভিন্ন সবজির খাদ্যোপাদান চাহিদা নিচের সারণিতে দেওয়া হলো ।
সারণিঃ বিভিন্ন সবজির খাদ্যোপাদান পরিশাষেণের পরিমাণ (জাপানী মি. ইয়ামা জাকীর ফলাফল (১৯৫৮)
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সবজি চাষে সার প্রয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সারের প্রয়োগ পদ্ধতি নিম্নোক্ত কারণে বিভিন্ন রকম হতে পারে। যথা- ১) মাটির ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থা, ২) আবহাওয়া, ৩) সারের প্রকার ও গুণাবলি, ৫) ফসলের প্রকার (পাতা, দানা বা ফুলজাতীয় ইত্যাদি), ৬) শিকড়ের প্রকৃতি ও খাদ্যোপাদান গ্রহণ ক্ষমতা, ৭) ফসলের সময়কাল, ৮) সারের ধরন ইত্যাদি। সারের প্রয়োগ পদ্ধতির ওপর সারের কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুষ্ঠুভাবে উপযুক্ত পরিবেশে শিকড়ের নাগালের মধ্যে সার প্রয়োগ করা হলে ফসল পুরোপুরি তা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া সার মাটিতে আবদ্ধ হয়ে, পানিতে ধুয়ে বা বাতাসে উড়ে বিনষ্ট হতে পারে। সার প্রয়োগের পদ্ধতি ও সময়কে বিবেচনা করে সার প্রয়োগ কার্যক্রমকে চারভাগে ভাগ করা হলো। যথা-
(ক) মৌল (খ) উপরি (গ) পাতায় ও (ঘ) বিশেষ প্রয়োগ ।
ক) মৌল প্রয়োগঃ জমিতে বীজ বপন বা চারা রোপণের পূর্বে সার প্রয়োগ করাকে মৌল প্রয়াগ বলা হয়। যে সব সার ধীরে ধীরে দ্রবণীয় বা গাছের গ্রহণ উপযোগী হয় এবং সহজে বিনষ্ট হয় না সেগুলো, এবং সহজে বিনষ্ট হয় না সেগুলোকে মৌল হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন জৈব সার, চুন, ফসফরাস, জিপসাম ইত্যাদি প্রায় পুরোপুরি মৌল হিসেবে প্রয়োগ করা হয় আবার পটাশ, জিংক, নাইট্রোজেন ইত্যাদি মাটির ও ফসলের প্রকারভেদে ২৫-৫০ ভাগ মৌল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে দ্রবণীয় সার আগাম প্রয়োগ করা হলে ফসলের প্রয়োজনের সময়ে পরিশোষণে উপযোগী হয় । এছাড়া সারের রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবে বীজ বা চারার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মৌল প্রয়োগের উদ্দেশ্যে হলো পরিচালন ক্ষমতাহীন সার ফসলের শেকড়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া।
(১) ছিটিয়ে প্রয়োগ- এ ক্ষেত্রে জমি চাষের পর সমস্ত জমিতে সার ছিটিয়ে মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি খুবই সহজ, কম শ্রম ও স্বল্প ব্যয় সাপেক্ষ এবং সময়ও কম লাগে। গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধিকালীন সময়ে উপরি প্রয়োগ বা পার্শ্ব প্রয়োগের মাধ্যমেও সার ছিটিয়ে দেয়া হয়।
সার ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করা হলে সাধারণত মাটিতে আবদ্ধ হয়ে যায় ফলে গাছ গ্রহণ করতে পারে না। ছিটিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে সার গাছের নাগালের বাইরে চলে যায় এতে অপচয় হবার সম্ভবনা বেশি থাকে। ঝড়ো বাতাসের সময় বিশেষ করে গুড়ো সার প্রয়োগ করা অসুবিধাজনক এবং অপচয় হয়। অনুর্বর, সেচবিহীন এবং পাতলা চারা সম্পন্ন ফসলের জমিতে এ পদ্ধতি একেবারেই উপযোগী নয়। ফসলের অঙ্গজ বৃদ্ধির সময় সার ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করা হলে গাছের পাতা পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
স্বল্পমেয়াদি ও ঘন করে ছিটিয়ে বানো শাক-সবজির জমিতে দ্রুত দ্রবণীয় ও পরিচালনশীল সার ছিটিয়ে মৌল হিসেবে প্রয়োগ করা যায়।
(২) স্থানীয় প্রয়োগ- অনুর্বর জমিতে এই পদ্ধতি উপযোগী এবং কম সার ব্যবহার করে বেশি ফলন পাওয়া যায়। বীজের কাছাকাছি সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাশে ও গভীরতায় যথাক্রমে ৮ সেমি দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। আর গাছের বেলায় শিকড়ে বিস্তৃতি লক্ষ করে সারা প্রয়োগ করা উচিত। মৌল সারের অর্ধেক ছিটিয়ে এবং বাকী অর্ধেক সারি বা শেকলের কাছে প্রয়োগ করা উত্তম। নিচে সার প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।
(১) চারার গর্তে প্রয়োগ- সবজির চারা রোপণের পূর্বে নির্দিষ্ট স্থানে পর্ব করে মাটির সাথে মৌল সারের অর্ধেক মিশিয়ে দেওয়া হয়। যথা- ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোশী, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি।
(২) মাদায় প্রয়োগ- ফল জাতীয় সবজির বীজ বা চারা রোপণের জমিতে নির্দিষ্ট স্থানে মাদা বা খালা তৈরি করে লাগানো হয়। চারা লাগানোর পূর্বে মাদায় মৌল সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যথা- কুমড়া জাতীয়, লাউ, শসা, চিচিঙ্গা, পেঁপে, কলা ইত্যাদি ।
(৩) লাঙ্গল স্তরে প্রয়োগ- জমি তৈরি শেষে লাঙ্গলের সাহায্যে অগভীর জুলি বা নালা তৈরি করে তাতে মৌল সার প্রয়োগ করা হয়। পরে মই দিয়ে জমি সমান করে দিয়ে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা হয়। বীজ বা চারার শেকড় বাড়ার পর প্রয়োগকৃত সার শেকড়ের সাহায্যে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে ।
(৪) বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ- এ পদ্ধতিতে বীজ ও সার একত্রে বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ করা হয়। এ প্রথার বীজের ক্ষতিকর সম্ভাবনা থাকে। তাই একত্রে বীজ ও সার ছিল বা বপন না করাই ভালো।
(গ) উপরি প্রয়োগ- জমিতে বীজ বপন বা চারা রোপণের পরে সার প্রয়োগ করা হলে তাকে উপরি প্ররোগ বলে। সাধারণত নাইট্রোজেন, পটাশ, ছাই, দা, তরুণ গোবর ইত্যাদি সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করা হয়। গাছের পাতায়, কাখে বা মূলে সরাসরি লেগে গেলে ফসলের ক্ষতি হয়। তবে শস্যের অবস্থা বুঝে সার প্রয়োগ করা হলে সারের অপচয় কম হবে। বড় বৃষ্টিতে ফসল ক্ষতিত হলে উপরি প্রয়োগ করে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হয়।
সবজি চাষে এ পদ্ধতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উপরি প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।
১। ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ- ছিটিয়ে বালো সবজির জন্য নাইট্রোজেন ও পটাশ জাতীয় সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা বেশ সহজ। মাটিতে রসের অভাব থাকলে উপরি প্ররোগ সারের সুফল কম পাওয়া যায়। মূলা, ভাটা, লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি সবজিতে উপরি প্রয়োগ হিসেবে সার ছিটিয়ে দেয়া হয়।
২। পার্শ্বপ্রয়োগ- সারি পদ্ধতিতে আবাদ করা সবজির পার্শে লাইন টেনে তাতে সার প্রয়োগ করা যায়। যথা ফুলকুপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, গোলআলু, টমেটো, শশা, মুখীকচু কোন কোন ক্ষেত্রে মূলা, পালংশাক ইত্যাদিতে সার প্রয়োগের পর ফসলের চাহিদানুযারী গোড়ার মাটি তুলে সার ঢেকে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ফসলের সারির দুদিকে একবারে সার না দিয়ে পর্যায়ক্রমে দু'দিকে দারে সার দেয়া উত্তম। একে ব্যান্ড প্রয়োগ পদ্ধতিও বলা হয়।
৩। চারপাশে প্রয়োগ- মাদায় লাগানো গাছের চারপাশে শেকড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে রিং করে নালা কাটা হয় । । এক্ষেত্রে নালায় সার প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। যথা- লাউ, শিম, কুমড়াজাতীয় শসা, কলা, পেঁপে ইত্যাদি।
৪। কালার গোলকে প্রয়োগ- এ পদ্ধতিতে কাদামাটি দিয়ে গোলক তৈরি করা হয়। মাটির গোলকের কেন্দ্রে সামান্য পরিমাণ ফাঁকা করে নাইট্রোজেন সার দিয়ে গোলকটি আঁটকেয়ে ভালোভাবে শুকানো হয়। সাধারণত ১ : ১০ অনুপাত নাইট্রোজেন সার ও কাদামাটি দিয়ে গোলক তৈরি করা উত্তম। এ পদ্ধতিতে প্রয়োগকৃত সার অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে দেড়গুণ বেশি পরিমাপে গাছের গ্রহণ উপযোগী হয়। সবজি চাষে এ পদ্ধতির প্রচলন এখনো তেমন হয়নি।
৫। বড়ি প্রয়োগ- এ পদ্ধতিতে সারের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে আবরণ তৈরি করা হয়। এ ধরনের সার হতে উপাদান ধীরে ধীরে দ্রবণশীল হয়। ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গাছ খাদ্যোপাদান সরবরাহ পেয়ে থাকে এবং এতে অপচয় কম হয়। যেমন- ইউরিয়া ফরম, সালফার কোটেড ইউরিয়া, মিশ্র সার উল্লেখযোগ্য। এ সারের দাম কিছুটা বেশি হলেও কার্যকরিতা অনেক বেশি। সবজি চাষে এ পদ্ধতি প্রচলন এখনো তেমন হয়নি।
৬। প্রবিষ্টকরণ- এ পদ্ধতিতে তরল বা দানা জাতীয় সার সিরিঞ্জের মত যন্ত্রে চাপ প্রয়োগের দ্বারা মাটির অত্যন্তরে দেয়া হয়। এতে মাটির বিভিন্ন স্তরে এবং গাছের শেকড়ের কাছাকাছি সার প্রয়োগ করা সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে সারের অপচয় একেবারেই হয় না। তবে এ পদ্ধতি এখনো তেমন প্রচলিত হয় নাই। অনেক উন্নত দেশে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- জাপান, তাইওয়ান ।
(গ) পাতায় প্রয়োগ
বিশেষ ক্ষেত্রে সারের দ্রবণ তৈরি করে সিঞ্চনের মাধ্যমে গাছের পাতায় প্রয়োগ করা হয়। এতে নির্দিষ্ট অনুপাতে দ্রবীভূত সার সিঞ্চন যন্ত্রে বা হেলিকপ্টারের সাহায্যে গাছের পাতায় প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। দ্রবণকৃত সার সব সময় পাতার কোষের রসের ঘনত্বের চেয়ে কম হওয়া দরকার। অন্যথা পাতা পুড়ে যাবে। এ পদ্ধতিতে যে কোন মূখ্য উপাদানের অর্ধেক ও গৌণ উপাদানের প্রায় সবটুকু সার পাতায় প্রয়োগ করা চলে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও জাতীয় সার অধিক পরিমাণে লাগে বিধায় শুধু পাতায় প্রয়োগ করে গাছের চাহিদা মেটানো খুব দুরহ। তবে গৌণ উপাদানের প্রকৃতি অনুপাতে দ্রবণ তৈরি করে পাতায় স্প্রে করে গাছের চাহিদা পূরণ করা যায়। সারের দ্রবণ তৈরির নিয়ম নিচে দেয়া হলো ।
সারণি ও বিভিন্ন সারের দ্রবণ তৈরির বিবরণ
উপাদান | কী আকারে পাওয়া যায় | প্রতি লিটার পানিতে মিশানোর পরিমাণ (গ্রাম) | |
১) লৌহ | ফেরাস সালফেট | ২.৫ | ৩.৫ |
২) ম্যাংগানিজ | ম্যাংগানিজ সালফেট | ২.৫ | ৫.০ |
৩) জিংক | জিংক সালফেট | ২.৫ | ৫.০ |
৪) কপার | কপার সালফেট | ২.৫ | ৫.০ |
৫) বোরন | সোডিয়াম বোরেট | ২.৫ | ৬.০ |
৬) মলিবডিনাম | এমোনিয়াম মলিবডেট সোডিয়াম মলিবডেট | ০.৩ ০.৬ | ০.৮ ০.৬ |
এছাড়া ১-১.৫ ভাগ ইউরিয়া সারের দ্রবণ তৈরি করে সবজি ও অন্যান্য ফসলের পাতায় বিকালে প্রয়োগ করা যায় । পাতাজাতীয় সবজিতে পাতায় প্রয়োগে সবজি তাড়াতাড়ি সবুজ ও সতেজ হয়। বয়স্ক পাতা ও পাতার বাইরের পিঠের পরিশাষেণ ক্ষমতা বেশি। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলেই প্রথমে পাতায় সার সিঞ্চন করা যায়। বর্ষজীবী ফসলে তার জীবনকালে ৩-৪ বার সিঞ্চন করা চলে ।
চিত্রঃ সিঞ্চন পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ
গোবর, খৈল ইত্যাদি জৈব সার ভালোভাবে পচারে তরলাকারে পাতায় প্রয়োগ করা যায়। এ পদ্ধতিতে অপচয় কম হয় ও গাছে দ্রুত খাদ্যোপাদান পরিশোধিত হয়। ফসলের জমিতে পানি পরিপূর্ণ থাকলে এবং মাটিতে কোনরুপ প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এ পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করা যায়। তবে মূখ্য খাদ্যোপাদানের চাহিদা সম্পূর্ণ পুরণ করা যায় না। বেশি বাতাসের সময় সার প্রয়োগে অসুবিধা হয়। সার প্রয়োগের পর পরই বৃষ্টি হলে সার ধুয়ে যায়। তাই মেঘলা আবহাওয়ার বা বৃষ্টির পূর্বে সার দেওয়া উচিত নয়। যে সব ফসলের পাতা মোমযুক্ত সেক্ষেত্রে পাতায় সার প্রয়োগে কোন সুফল পাওয়া যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে ফসলে দ্রবণের সাথে আঁঠালো পদার্থ (টুইন -২০) মিশিয়ে দেখ করা উত্তম।
(ঘ) বিশেষ প্রয়োগ
(১) সেচের পানির সাথে এ পদ্ধতিতে সেচের পানির সাথে সার মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সমতল জমিতে, সমস্ত জমিতে সমভাবে ও সম উচ্চতার পানি পৌঁছালে সবগাছ সমানভাবে সার পরিশোষণ করতে পারে।
(২) বুস্টার বা স্টার্টার দ্রবণ প্রয়োগ- চারার চাহিদা পূরণ ও বৃদ্ধি দ্রুত করার জন্য মূখ্য উপাদানসমূহের দ্রবণ চারার গোড়ায় সিঞ্চন করা হয়। মূখ্য উপাদান ৩টি যথা- নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ। এগুলোকে একত্রে বা পৃথকভাবে পানিতে গুলিয়ে ১৪৫৪২ অনুপাতে চারার গোড়ায় সিঞ্চন করাকে স্টার্টার প্রয়োগ বলে। সাধারণত এন.পি.কে ১৪৫৪২ অনুপাতের দ্রবণ তৈরির জন্য ডাই এমোনিয়াম ফসফেট ও মনাপটাশিয়াম মিশ্রণ সমানুপাতিক- ভাবে গুলিয়ে নিতে হয়। প্রতি গ্যালন পানিতে এক আউন্স বা প্রতি লিটার পানিতে ৬ গ্রাম দ্রবীভূত করলে এই দ্রবণ (এনপিকে) তৈরি হয়।
(৩) বায়বীয় আকারে প্রয়োগ- বায়ুতে সাধারণত ০.০৩ ভাগ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিদ্যমান থাকে। কৃত্রিমভাবে বাতাসে এর পরিমাণ বাড়ানো গেলে গাছের সালোক সংশ্লেষণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে ফসলের ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে এবং গাছের জীবনকাল কমে যাবে। তাই ফলন বাড়ানোর জন্য অনেক দেশে গ্রীণ হাউজে ও খোলা মাঠেও কার্বন ডাই অক্সাইড বা এমোনিয়াম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
সার প্রয়োগের সময়- ফসলের দৈহিক বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্যোপাদানের চাহিদা বিভিন্ন রকম হয়। চারা অবস্থায় খাদ্যোপাদান চাহিদা কম থাকে এবং চারার বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে চাহিদা বাড়তে থাকে। দৈহিক বৃদ্ধি, শাখা প্রশাখা, মূল ইত্যাদি অপেক্ষা ফুল ও ফল ধারণকালে চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। আবার চারা অবস্থার শেষ সময়ে চাহিদা কমে যায়। সার ভালোভাবে কাজে লাগার জন্য নিচের বিষয়গুলো বিশেষভাবে দায়ী। যথা-
১। গাছের বিভিন্ন খাদ্যোপাদান মাটিতে ধরে রাখার ক্ষমতা
২। সারের মাত্র
৩। মাটিতে তাপমাত্রা ও সারের প্রয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি।
৪। সারের গুণাবলি
৫। সারের দ্রবীভূত ক্ষমতা
৬। মাটিতে রসের পরিমাণ
সার ব্যবহারের কয়েকটি সাধারণ নিয়মাবলি নিচে দেয়া হলো ।
(১) সব ধরনের জৈব সার (গোবর সার, আবর্জনা পঁচা সার, সবুজ সার), ফসফরাস পুরোপুরি এবং পটাশ সারের অর্ধেক মাত্রা জমি তৈরির শেষ চাষের সময় দিতে হয়। সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয় ।
(২) সেচ বিহীন ও শুকনো জমিতে সব ধরনের জৈব ও অজৈব সার পূর্ণমাত্রায় বীজ বপনের পূর্বে প্রয়োগ করতে হয়।
(৩) মাদায় রোপণযোগ্য (লাউ, কুমড়াজাতীয়, শিম, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি) সবজির জন্য ফসফরাস ও জৈব সার পুরাপুরি বীজ বপন বা চারা রোপণের পূর্বে মাদায় মৌল হিসেবে প্রয়োগ করতে হয়। পটাশ ও নাইট্রোজেনযুক্ত সার পরবর্তীতে বারে বারে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
(৪) বহুবর্ষজীবী ফসলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ও বর্ষার শেষ দিকে মোট ২ বারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
(৫) স্বল্পমেয়াদি শাক সবজিতে নাইট্রোজেন ব্যতিত প্রায় সব সারই মৌল হিসেবে এবং নাইট্রোজেন সার কয়েক কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
বিভিন্ন শাক সবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মূলা, বেগুন, মরিচ, টমেটো, গাজর ইত্যাদি বৃদ্ধির কোন পর্যায়ে কী পরিমাণ খাদ্যোপাদান প্রয়োজন তা সারণিতে পূর্বে দেওয়া হয়েছে। এ ভিত্তিতে ২-৩ বারে সারের উপরি প্রয়োগ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায় এবং অপচয় কম হয়।
সার প্রয়োগের সাবধানতা
সার প্রয়োগের জন্য নিচের সাবধানতাগুলো মেনে চলা উচিত। যেমন-
(১) ঝড়ো বাতাসের সময়ে বা ফসলের পাতা ভেজা অবস্থায় সার উপরি প্রয়োগ করা উচিত নয়। এতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
(২) কাঁচা গোবর, খৈল, চুন, হাড়ের গুড়ো ইত্যাদি দন্ডায়মান ফসলে প্রয়োগ করা উচিত নয়। ফচা সার জমিতে প্রয়োগ করা হলে তার প্রায় একমাস পরে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা উচিত।
(৩) জমিতে শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রাসায়নিক সার ও জৈব সার সুষম মাত্রার প্ররোপের মাধ্যমে জমির উর্বরতা বজায় রাখা যাবে।
(8) সমস্ত জমিতে সমভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। (৫) জমির অম্লতা বা ক্ষারত্বের সাথে মিল রেখে সার প্রয়োগ করা উচিত।
(৬) বিভিন্ন ধরনের সার একরে মেশানোর পূর্বে সেগুলোর রাসায়নিক বিক্রিয়া জেনে তারপর মিশাতে হবে। কেননা কোন কোন সার মিশালে বিক্রিয়া ঘটে।
(৭) বৃষ্টির ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বা জমিতে প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া হলে সে সময় সার প্রয়োগ করা উচিত নয় ।
(৮) প্রখর রোদের সমর বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার ছিটালে বেশির ভাগই বাতাসে উড়ে নষ্ট হতে পারে।
সবজি চাষে পানি সেচ ও নিষ্কাশন
পানির অপর নাম জীবন। এ কথাটি প্রাণি ও উদ্ভিদ জগতের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। পানি মাটির খাদ্যোপাদানসমূহকে দ্রবীভূত করে গাছের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে থাকে। গাছের অঙ্গার আত্মীকরন শস্যের সজীবতা রক্ষা, প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সরবরাহ প্রভৃতি কাজে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটিতে পর্যাপ্ত রসের অভাবে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আবার জলাবদ্ধতা ঘটলে উদ্ভিদের শ্বাস প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং যথেষ্ট ক্ষতি হয়। সুতরাং সবজি চাষে সাফল্য লাভের জন্য পানি সেচ ও নিকাশের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত অত্যাধিক হলেও বারো মাসে সমানভাবে হয় না। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত অতিবৃষ্টি আর কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত অনাবৃষ্টির কারণে সবজির চাষে অসুবিধা হয়। তাই সেচ ও নিকাশ সুবিধাযুক্ত জমি সবজি চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত । পানি সেচ ও নিকাশ সুবিধার জন্য জমি কয়েকটি সুবিধাজনক খণ্ডে বিভক্ত করে নিতে হয়। এরপর সবজির ধরন, মৌসুম ও আবাদ পদ্ধতির ওপর লক্ষ রেখে জমিতে প্রয়োজনীয় আইল ও নালা তৈরি করতে হয়। তাতে পানি নিয়ন্ত্রণ কর সহজ হয়।
বিভিন্ন সবজির পানির চাহিদা
সব ধরনের সবজির পানির চাহিদা এক রকম নয়। তাছাড়া একই সবজির জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তরে পানির চাহিদাও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নিচের সারণিতে সবজির জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তর ও পানির চাহিদার তারতম্য দেখানো হলো ।
সারণি ও সাধারণভাবে সবজির জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তরে পানির চাহিদা
এই তথ্যের ভিত্তিতে সবজি চাষে জমিতে সেচ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। পাতাজাতীয় সবজি (লেটুস, পালং শাক, পুঁই শাক) ও কপি গোত্রের সবজির পানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলোর শিকড় মাটির বেশি গভীরে প্রবেশ করে না বিধায় বেশি পরিমাণে ও ঘন ঘন সেচ দিতে হয়। পেঁয়াজ, মরিচ, বেগুন, শসা এবং টমেটোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানির প্রয়োজন। গোল আলু, মূলা প্রভৃতির জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন থাকলেও নিয়ন্ত্রিতভাবে সেচ দেওয়া আবশ্যক। সেচের দ্বারা বা বৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধতা ঘটলে শিকড় ও ফসল পঁচে বিনষ্ট হতে পারে। অপরদিকে শিমজাতীয়, কুমড়া ও অন্যান্য বহুবর্ষজীবি সবজি পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত সেচে ভালো ফলন দেয়।
সবজি চাষে সেচের মাধ্যমে কী পানি দিতে হবে তাও জানা দরকার। কেননা সেচের পানির সাথে ফসলের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু বা উপাদান যেতে পারে। বীজতলায় বীজ গজানোর বা সবজি রোপণের পর পরই যে সেচ দেওয়া হয় তা লবণমুক্ত হতে হবে। পুকুর, নদী বা খালের পানিতে নানা ধরণের আগাছা ও কলকারখানার বর্জ্য মিশে সেচের অনুপোযোগী হতে পারে। তাই সেচের পানিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ।
(১) পুকুর, নদী বা খালের পানি সেচ দেওয়ার সময় হেঁকে নিতে পারলে ভালো ।
(২) পানির উৎসের পাশে ট্যাঙ্ক স্থাপন করে বালি দ্বারা ফিল্টার করে পানি সংরক্ষণ করে তা সেচে ব্যবহার করা।
(৩) সবজির চারা অবস্থায় ০.৫ মিলিগ্রাম ক্লোরিন প্রতি এক লিটার পানিতে মিশায়ে সেচ দেয়া যায়। তাতে অনেক রোগের জীবাণু মারা যায় ও শেওলা দমন হয় ।
(৪) গভীর বা অগভীর নলকূপের পানি কোন পুকুর বা ট্যাংকে জমা রেখে তারপর সেচ দেয়া ভালো। বর্তমান- কালে খাল, নালা, ডাবো ইত্যাদি জলাশয়ের পানি যেখানেও দূষিত হচ্ছে সেখানে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
সেচের সঠিক সময় নির্ণয়
সেচ দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মাটিকে সরস রাখা, যাতে ফসলের ভালো ফলন নিশ্চিত হয়। শাক সবজির (পানি কচু ব্যতীত) বেলায় জমির সরস অবস্থার একটু নিচেই পানির মাত্রা গিয়ে যখন পৌঁছে তখনই সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ অবস্থা কখন হবে তা খালি চোখে দেখে বুঝা যায় না। এজন্যে মাটির রস মেপে দেখতে হয়। হাতের সাহায্যে মাটির রস মাপার সহজ পদ্ধতি নিচে ছবিতে দেখানো হলো। সবজি চাষে সেচ সময় নির্ধারণের সাধারণ বিবেচ্য বিষয়গুলো। যথা-
(১) চারা গজানোর পর থেকে ফুল ধরা পর্যন্ত সবজির পানির চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। তারপর এ চাহিদা আবার কমতে থাকে । তাই গাছের বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কখন এবং কতবার সেচ দিতে হবে তা ঠিক করে নিতে হয়। সাধারণত বৃষ্টি না হলে সবজির ফুল আসা অবধি প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
(২) বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুব কম। এ জাতীয় মাটিতে ঘন ঘন সেচ দিতে হবে।
(৩) জমিতে পানির অভাব হলে মাটির রং হালকা ধরনের হয়। তাই মাটি হালকা রং ধারণ করলে সেচ দেয়া উচিত।
(৪) পানির অভাব দেখা দিলে গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখা দেয়া মাত্র পানি সেচ দেয়া উচিত।
(৫) স্বল্প গভীর শিকড় বিশিষ্ট সবজির জমিতে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতার শতকরা ৭০ ভাগের কম হলেই সেচ দেয়া উচিত ।
(৬) নিচের সূত্র দ্বারা মাটিতে পানির পরিমাণ জেনে নিয়ে সবজির জমিতে সেচ দেয়া যেতে পারে। জমি হতে নেয়া ১ কেজি মাটির ওজন - চুলোতে শুকানোর পর ঐ মাটির ওজন। মাটিতে পানির পরিমাণ (%)
ধরা যাকঃ চুলাতে শুকানো মাটির ওজন ৬০০ গ্রাম। তাহলে পানি ছিল ১০০০-৬০০ গ্রাম = ৪০০ গ্রাম
এখন রসের %
হাতের সাহায্যে মাটির রস মাপার কৌশল
এ পদ্ধতি খুব কার্যকরি এবং এভাবে জমিতে রসের অবস্থা দেখে সেচ দেয়া যেতে পারে। নিচের পদ্ধতি অনুসারে মাটিতে পানির ধারণ ক্ষমতা নির্ণয় করা এবং সারণির বর্ণনা মোতাবেক মাটিতে সেচ দেয়া উচিত।
ধাপ - ১
জমির মাঝখানে একটি ছোট গর্ত করতে হবে। গর্তটির মাপ হবে জমিতে যে ফল আছে সে ফসলের শেকড়ের গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ।
ধাপ ২
গর্ভের তলা থেকে মাটি নিয়ে হাতের মুঠোর চাপ দিয়ে গোলাকার করে দলা বা বল তৈরি করতে হবে। শেকড় অঞ্চলের গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ গভীরতার মাটি।
ধাপ ৩
সারণির বর্ণনার সাথে এ মাটির দলার বা বলের মিল করে জমির মাটিতে গাছের উপযোগী কতটুকু রস আছে তা বোঝা যাবে।
এক কথায় উত্তর
১. বেলে মাটিতে শতকরা কতভাগ বালিকণা থাকে?
২. কোন মাটিতে ৩৫ ভাগ কর্দমকণা ও একই পরিমাণ পলিকণী থাকে ?
৩. মাটিতে পিএইচ মানাঙ্ক কত ভাগের নিচে থাকলে অম্লীয় মাটি বলে ?
৪. প্রশম মাটিতে পিএইচ মানাঙ্ক কত?
৫. কী প্রয়োগ করে অম্লীয় মান বাড়ানো যায়, অর্থাৎ পিএইচ মানাঙ্ক বেশি হয় ?
৬. ২০০৭-০৮ সনে মোট আবাদি জমির কত % জমিতে শাক সবজি চাষ হয় ?
৭. চাষবিহীন জমি হতে কত % পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায় ?
৮. পুষ্টি সরবরাহে সারের চাহিদার কত % জৈব উৎস হতে আসা উচিত?
৯. সার প্রয়োগের পদ্ধতি বিবেচনা করে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ?
১০. কাদায় গোলকের মাধ্যমে সার প্রয়োগে নাইট্রোজেনযুক্ত সার ও মাটির অনুপাত কত ?
১১. স্টার্টার দ্রবণ তৈরিতে ১:৫:২ অনুপাতে কী কী নেওয়া হয় ?
১২. ফুলকপি চাষে মাটিতে সর্বনিম্ন কত % রস হলে অবশ্যই সেচ দিতে হয় ?
১৩. মালচিং কত প্রকারের হয় ?
১৪. কোন পোকা সবজির ভাইরাস ছড়ায় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. গার্হস্থ্য সবজি বাগান সম্পর্কে লেখ।
২. অম্ল মাটি বলতে কী বোঝায় ?
৩. মাটির পিএইচ মানাঙ্ক কীভাবে সংশোধন করা যায় ?
৪. জমিতে সারের পরিমাণ নির্ধারণে কোন কোন বিষয় বিবেচনা করতে হয় ?
৫. পাতায় প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন সারে দ্রবণ তৈরি করা সম্পর্কে লেখ।
৬. যে সব বিষয়গুলো সারের কার্যকারিতা বাড়ায় তা লেখ।
৭. জমিতে সেচ ও নিকাশ বলতে কী বোঝায় ?
রচনামুলক প্রশ্ন
১. সবজি চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর ।
২. সবজি চাষের জন্য জমি তৈরির সুবিধাদি ও প্রস্তুত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
৩. সবজি চাষের সারের প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
৪. জমিতে সেচের সঠিক সময় কিভাবে নির্ণয় করা যায় তা ব্যাখ্যা কর।
৫. সবজি চাষে আগাছা দমণের পদ্ধতিগুলো বর্ণনা কর।
কাঁকরোলের চাষ
কাঁকরোলের জাতঃ বাংলাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে কাঁকরোলের কোন জাত নেই। তবে ফলের আকার, বর্ণ এবং কাটার বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জাতের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- মনিপুরি, আসামি, সবুজ টেম্পু, হলুদ টেম্পু, বর্ণ টেম্পু, মুকন্দপুরি ইত্যাদি।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
কাঁকরোল চাষের জন্য ৪/৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি হতে আগাছা বেছে ফেলতে হবে। জমি সমতল করে নেওয়া উচিত। তবে পানি জমার সম্ভাবনা থাকলে জমিকে কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত করে নিতে হয়।
সার প্রয়োগ
কাঁকরোল চাষের জন্য হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ও প্রয়োগের নিয়ম নিচে দেওয়া হলো।
গোবর ও টি.এস.পি সারের ৫০% শেষ চাষের সময় সমস্ত জমিতে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকী ৫০% মাদায় বা নালায় প্রয়োগ করতে হয়। গাছ ২৫-৩০ সে.মি. লম্বা হলে ইউরিয়া ও পটাশ সারের ৫০% মাদার চারিদিকে বা পাশ দিয়ে নালা কেটে সেই নালায় প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকী ৫০% সার ফুল আসার সময় একইভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
চারা রোপণ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
বীজ/চারা রোপণ ও মাদা পদ্ধতিতে চাষ করলে ২ × ২.৫ মিটার দূরত্বে প্রতি হেক্টরে ২০০০টি মাদা তৈরি করা যাবে। মাদাপ্রতি ২টি করে মোট ৪০০০ কন্দমূল লাগে। তবে কাণ্ডের কাটিং করা হলে প্রতি মাদায় অন্তত ৩টি করে মোট ৬০০০টি কাটিং লাগানো উচিত। প্রতি হেক্টরে অন্তত ১২৫-১৫০টি পুরুষ মোথা বা কাটিং লাগাতে হবে। কেননা এর পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা আলাদা গাছে জন্মে। পুরুষ মোথা বা কাটিং না লাগালে কাঁকরোলের স্ত্রী ফুলগুলো পরাগায়নের অভাবের ফলে পরিণত হতে পারে না। জমিতে সারি করে বা মাদা তৈরি করে কন্দমূল বা কাটিং রোপণ করতে হয়। মাদা পদ্ধতিতে কাঁকরোল রোপণে ৪০০ সে.মি. চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। প্রতি : বেডে ২ সারি মাদা করে এক মাদা হতে অন্য মাদার দূরত্ব ২৫০ সে.মি রাখতে হয়। নালার মাটি বেডে উঠিয়ে দিলে বীজতলা কিছুটা উঁচু হয় তাতে সেঁচ বা বৃষ্টির পানি সহজে বের হতে পারে। এছাড়া সারি করে ১.৭৫-১২৫ মিটার দূরত্বে কন্দমূল বা কাটিং রোপণ করা যায়। কাঁকরোলের একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায় না। তাই পরাগায়নের সুবিধার্থে ক্ষেতে সমানভাবে আনুমানিক ১০ ভাগ পুরুষ গাছ থাকা উচিত। পুরুষ গাছ বাগানের ধার দিয়ে লাগানো যেতে পারে। এতে পরাগায়নের সুবিধা হয়। পুরুষ গাছে দেরিতে ফুল আসে বিধায় এগুলো স্ত্রী গাছ রোপণের ১০-১৫ দিন আগে রোপণ করতে হয়।
কন্দ বা কাটিং রোপণের এক মাসের মধ্যে গাছ গজিয়ে উঠে। মাটি শুষ্ক হলে সেচের সাহায্যে কন্দ বা কাটিং -এর চারিদিকে ভেজা রাখতে হবে
মাচা বা বাউনি কাঁকরোলের জন্য অপরিহায। কাঁকরোলের গাছ ১৬-১৫ সে.মি. লম্বা হলেই গাছের গোড়া একদিকে হেলিয়ে বাঁশের কাঠি পুঁতে দিতে হবে। গাছ ৫০ সে.মি. লম্বা হলে তখন ১-১.৫ মিটার উঁচু করে মাচা দিয়ে তাতে গাছ তুলে দিতে হবে। কাঁকরোলে কৃত্রিম পরাগায়ন ফলন বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কাঁকরোলে ভোরবেলা কৃত্রিম পরাগায়নের উপযুক্ত সময়।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
পোকার নাম | ক্ষতির ধরন | দম ব্যবস্থা |
জাব পোকা | পাতার সবুজ অংশ ও কাণ্ডের রস চুষে খায় | ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি ১১২৫ মি.লি/হেক্টর বা ডাইক্লোরোফস ১০০ ইসি ৫৬ ইসি ১০০ লিটার পানির | সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে |
ইপিল্যাকনা বিটল | পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। পাতার শিরাগুলো দেখতে জালির মত দেখায়। | পরে পাতা শুকীয়ে যায়। | ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি ১১২৫ মি.লি/হেক্টর বা ডাইক্লোরোফস ১০০ ইতি ৫৬০ ইসি ১০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। |
বিছা পোকা | পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। | ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি ১১২৫ মি.লি/হেক্টর ডাইক্লোরোফস | ১০০ ইসি ৫৬০ ইসি ১০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। |
মাজরা পোকা | কীড়া ছিদ্র করে ফলের ভিতরাংশ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ফল নষ্ট হয়ে যায়। | ৫০০ মিলি/হেক্টর সাইপারমেথ্রিন বা ডায়জিন ১৭০০ মিলি/হেক্টর বা ডিপেটেরেক্স ৫৬০ মিলি/হেক্টর ১০০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। |
ফলের মাছি পোকা | কচি ফলের খোসায় পাড়া ডিম হতে কীড়া বের হয়ে ফলের ভিতর প্রবেশ করে শাঁস খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ফল নষ্ট হয়ে যায়। | ফলের মাছি ধরার ফাঁদ ব্যবহার করা যায়। এতে ভিটেরেক্স ৮৫ ডবিউপি ৫ গ্রাম ঔষধ ১০০ গ্রাম পিষানো কুমড়ার সাথে মিশিয়ে বিষ টোপ তৈরি করে ফাঁদে রাখতে হয়। ফলের মাছি পোকা আক্রমণ এভাবে দমন করা যেতে পারে। প্রতি ৪০০ বর্গমিটার জমির জন্য ১টি পাকা কাঁঠালের মোথা (বোথা) দড়ি দিয়ে বেঁধে মাচার নিচে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এর ফলে কাঁঠালের গন্ধে মাছি কাঁকরোলের উপর না বসে কাঁঠালের মোথায় বসে ডিম | পাড়বে। এতে কাঁকরোল পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। |
রোগবালাই
রোগঃ চারা ঢলে পড়া রোগ ও এ রোগ সাধারণত কচি গাছের গোড়ার আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত অংশ পচে চারা ঢলে পড়ে যায়।
প্রতিকার
১) পানি পরে সুব্যবস্থা করতে হবে।
২) আসন গাছ উপড়ে ফেলতে হবে।
৩) রোগমুক্ত মোথা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
পাউডারী মিলভিউ- পাতার উপরে সাদা পাউডার এ ন্যায় পদার্থ দেখা যায় এবং পাতা মরে যায়। সাদা পাউডার দ্বারা। অনেক সময় পাতা আবৃত হয়ে যায়। এ রোগ দমনের জন্য ২ গ্রাম থিয়োটি প্রতি ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর পাতা ভিজিয়ে দেখ করতে হবে।
মোজাইক ভাইরাস- এ রোগের আক্রমণে গাছের সবুজ পাতার হলুদ মোজাইক রং ধারণ করে। পাছের বাড়ক কমে যায়, ফল কমে যায় এবং ফলের আকার ছোট হয়।
প্রতিকার
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করতে হবে।
২। রোগমুক্ত গাছ লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ৩। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
রেটন ফসল/মুড়ি ফসল- শীতের শুরুতেই কাকরোল গাছ মরে যায় এবং পরবর্তী বর্ষা না আসা পর্যন্ত মাটির নিচে এর মোখা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। তাই শীতকালে এ অবস্থার কাঁকরোলের জমিতে স্বল্পমেয়াদি অন্য ফসল করা যায়। পরবর্তী বর্ষার আগেই ঐ মোখাগুলোকে সনি করার জন্য মাটি আগলা করে সার ও সেচ প্রয়োগ করতে হয়। তাহলেই রেটুন ফসল হিসেবে ফল পাওয়া যাবে। সাধারণত রেটুন ফসলের ফুল ও ফল তাড়াতাড়ি হয় । সেচ ও নিকাশ-বন্যামুক্ত উঁচু ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত দোঁআশ, বেলে দোআশ মাটি কাঁকরোলের জন্য । মাটিতে রস বেশি থাকলে এর বৃদ্ধি ভালো হয়। তবে দাঁড়ানো পানি কাঁকরোলের জন্য ক্ষতিকর।
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- কাঁকরোল যখন সবুজ থেকে হলদে ভাবাপন্ন হয় তখনই উঠানোর উপযুক্ত হয়। সাধারণত পরাগায়নের ১০-১৪ দিন পরই কাঁকরোল তোলার উপযুক্ত হয়। মাঘের মাঝামাঝি হতে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাঁকরোল গাছের মোথা ১টন/হেঃ হারে তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। তবে মোথা বিক্রির সময় স্ত্রী ও পুরুষ মোথা বা কাটিং উভয়ই আনুপাতিক হারে এক সাথে বিক্রি করা উচিত। চারা গজানোর ২ মাসেই ফল ধরে। ফল উঠিয়ে ২-৩ দিন পর্যন্ত রেখে বিক্রি করা যায় ।
ফলন- প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ টন কাঁকরোল পাওয়া যায় ।
ধুন্দলের চাষ
ধুন্দলের জাতঃ
ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হতে ধুন্দলের পুষা চিকনি জাত অনুমোদন করেছে। তবে ধুন্দলের অনুমোদিত ও উন্নত কয়েকটি জাত আছে যা আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। যেমন- মজনুশাহ, ফুজিয়ান, লালনশাহ, গ্রীপিচ, কর্ণফুলী, মিয়ান ইত্যাদি।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
এঁটেল বা দোআশ মাটি এবং সুনিষ্কশিত জমিতে ধুন্দল ভালো জন্মে। জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাদা তৈরি করতে হয়। জমিতে বেড করে বা ২.০-২.৫ মিটার দূরত্বে মাদায় বীজ রোপণ করতে হয়।
সার প্রয়োগ
ধুন্দল চাষের জন্য নিম্নোক্ত পরিমাণ সার দিতে হয়। গোবর ও টিএসপি সারের ৫০% জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে প্রয়োগ করতে হয়। বাকী ৫০% মাদায় দিতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর, ৫০-৬০ দিন পর এবং ৭৫-৮০ দিন পর ৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ হিসেবে দিতে হয়। প্রতিবারই সার উপরি প্রয়োগের সময় গাছের গোড়া হতে কিছু দূর দিয়ে মাটির সাথে মিশায়ে দিতে হয়।
চারা রোপণ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
ধুন্দলের গাছ দীর্ঘ প্রসারি বিধায় কিছুটা পাতলা করে রোপণ করতে হয়। তবে মাদা হতে মাদার দূরত্ব ২.০-২.৫ মিটার এবং সারিতে মাদা হতে মাদার দূরত্ব ১ মিটার করে বীজ রোপণ করা যায়। ধুন্দল বেড়ায়, গাছে বা বাউনিতে উঠিয়ে দেওয়া যায়। জমিতে সারের উপরি প্রয়োগের সময় আগাছা পরিষ্কার করে মাটি মালচিং করে দিতে হয়। এতে যথেষ্ট রসের প্রয়োজন তাই এভাবে জমিতে রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়।
সেচ ও নিষ্কাশন
ধুন্দল গাছের গোড়ায় পানি জমলে গাছ মারা যায়। আবার ধুন্দল গাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত রসের প্রয়োজন হয় । জমি চাষের পর বেড আকারে তৈরি করে তাতে মাদা করলে জমিতে পানি দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে না
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
বীজ রোপণের দুই মাসের মধ্যে ফল ধরে। ধুন্দল কচি অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয় । অন্যথায় আঁশ শক্ত হলে খাবার অনুপযোগী হয়ে যায়। ধুন্দল ধরা শুরু হলে ঠিকমত পরিচর্যা করলে ২-৩ মাসব্যাপি ফল অব্যাহতভাবে সংগ্রহ করা যায়। ফল সংগ্রহ করে ২-৩ দিন পর্যন্ত আর্দ্র, ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করা যায়। ধুন্দল বাজারে নেওয়ার সময় চাপ বা আঘাত পেলে সেখানে বিবর্ণ হয়ে যায়। তাই ঝুড়িতে খড় বিছিয়ে বা ছালায় খাড়াভাবে সাজিয়ে সাবধানে বাজারে পাঠাতে হয়।
এক কথায় উত্তর
১. কাঁকরোলের ১টি জাতের নাম লেখ।
২. মাদা পদ্ধতিতে ২ ২.৫ মিটার দূরত্বে কাঁকরোল চাষে ১ হেক্টরে কয়টি মাদা লাগে ?
৩. ধুন্দল চাষে কত মিটার দূরত্বে মাদায় বীজ বপন করা হয় ?
৪. ধুন্দল বীজ রোপণের কত মাসের মধ্যে ফল ধরে ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কাঁকরোল চাষে সারের পরিমাণ উল্লেখ কর।
২. কাঁকরোল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে লেখ ।
৩. ধুন্দলের চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. কাঁকরোলের জাতসহ বীজ রোপণ ও পোকামাকড় দমন সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
২. ধুন্দলের চাষাবাদ পদ্ধতি বর্ণনা কর।
মুখীকচুর চাষ
মুখীকচুর জাতঃ বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে মুখীকচু বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- ছড়াকচু, গুড়িকচু, বিন্নীকচু, ঝুমের মুখী, বিলাসী ইত্যাদি।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমি তৈরিঃ দোআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি ও সুনিষ্কাশিত অবস্থায় চাষ করলে মুখীকচু ভালো জন্মে। মুখি কচুর জমি খুব ভালোভাবে চাষ করতে হয়। তাই পুনঃ পুনঃ চাষ ও মই দিয়ে জমি পরিপাটি করে ৬০-৭৫ সে.মি দূরত্বে লাঙ্গল দিয়ে জুলি অর্থাৎ অগভীর নালা তৈরি করে সেই নালাতে কচুর বীজ রোপণ করতে হয়। সেচ সুবিধাযুক্ত জমিতে ফাল্গুন মাসে জমি তৈরি করে এবং সেচ সুবিধা না থাকলে বৈশাখ মাসে প্রথম বৃষ্টিপাতের পরই জমি তৈরি করে বীজ রোপণ করতে হয়। মুখী কচুর জমির মাটি চেপে গেলে এবং বৃষ্টির পানি কোথাও বেধে থাকলে সেখানে কচুর বৃদ্ধি দারুনভাবে ব্যাহত হয়। এমনকি গাছ মারাও যায় । পানি বদ্ধস্থানে কচুর গাছের ছড়া ছাড়ে না, নতুন কুঁশি হয় না ।
সার প্রয়োগ
মুখী কচু চাষে সার ব্যবহার অত্যাবশ্যক। মুখী কচুতে নিম্নোক্ত পরিমাণ সার দেওয়া যায়।
সারের নাম | হেক্টর প্রতি পরিমাণ | প্রয়োগের সময় |
পঁচা গোবর/আবর্জনা পচা সার | ১০-১২ টন | সবটুকু জমিতে শেষ চাষের সময় দিতে হবে। |
ইউরিয়া | ১২০-১৫০ কেজি | ৫০% বীজ লাগানোর ৩০/৩৫দিন পর বাকী ৫০% বীজ লাগানোর ৮০/৯০ দিন পর |
টিএসপি | ১১৫-১২৫ কেজি | সবটুকু জমিতে শেষ চাষের আগে |
এমওপি | ১৪০-১৬৫ কেজি | ৫০% জমির শেষ চাষের আগে ৫০% ইউরিয়া ১ম উপরি প্রয়োগের সময় |
ইউরিয়া ও এমওপি সার বীজ লাগানোর পর ১ম ও ২য় উপরি প্রয়োগের সময় কচুর আইলের পাশ দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে কোদাল দিয়ে মাটি হালকাভাবে নড়াচাড়া করে আইলে মাটি উঠিয়ে দিতে হয়।
চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা
জমি চাষের পর ৬০-৭৫ সে.মি. দূরত্বে জুলি/নালা টেনে নালাতে ২৫-৩০ সে.মি. পর পর ১০-১৫ গ্রাম ওজনের কচুর বীজ মুখী রোপণ করতে হয়। জমিতে যদি জৈব পদার্থ সঠিক মাপে ব্যবহার করা যায় এবং বীজের আকার ২০-২৫ গ্রাম হয় তাহলে ৪৫ সে.মি. পর পর মুখী কচুর বীজ রোপণ করতে হয়। মুখী কচুর বীজ রোপণ পর দু'পাশের মাটি দিয়ে হালকাভাবে বীজগুলো ঢেকে দিতে হয়। মুখীগুলো রোপণ প্রায় ১ মাস আগে স্তূপাকারে রেখে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে পানি ছিটিয়ে দিলে বীজ গজায়ে যায়। সামান্য গজানো মুখী রোপণ করা ভালো। হেক্টরে ৬০০ ৮০০ কেজি বীজ লাগে।
অন্তবর্তী পরিচর্যা- বীজ গজায়ে মাটির উপরে উঠলে সম্ভব হলে খড়কুটা বিছিয়ে হালকাভাবে থেকে দেয়া যায় । মুখী কচুর জমির আগাছা বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে বীজ রোপণের পর প্রথম ২-৩ মাস আগাছামুক্ত রাখা খুবই জরুরি। আনুমানিক ৩ মাস বয়সে সমস্ত জমি পাতায় ঢেকে যায়। সার প্রয়োগের পর প্রতি বারেই কোদাল দিয়ে বীজ রোপণের আইলে বা সারিতে মাটি উঠিয়ে দিতে হয়। কচুর বয়স ৩ মাসের পর হতে পাতা ও গাছ ছোট হতে থাকে। তখন জমি কিছুটা ফাকা হতে দেখা যায়। এ সময় মুখীগুলো বড় হতে থাকে। অন্যদিকে জমি ফাঁকা হওয়ার কারণে আগাছাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই পুনারায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। অর্থাৎ মুখী কচুর জমি সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখতে হয়।
সেচ ও নিকাশ- মুখী কচুর জমিতে পানি জমলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, এমনকি গাছ মারা যায়। তাই সেচের বা নিকাশের নালা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবার পানি সেচের সুবিধা থাকলে আগাম রোপণ করা যায় এবং আগাম ফসল সংগ্রহ করা যায়।
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
বীজ রোপণের প্রায় ৬ মাস পর গাছের পাতা হলুদ হয়ে ধীরে ধীরে গাছ মরতে থাকে, তখন মুখী কচু সংগ্রহ করা যায়। কোদাল দিয়ে আইল ভেঙ্গে মুখী সংগ্রহ করার পর ২-৩ দিন ছায়ায় ও বায়ু চলাচলের সুবিধাযুক্ত স্থানে রেখে শুকায়ে নিতে হয়। এরপর ছোট-বড়, আঘাতপ্রাপ্ত বা কাঁটাগুলোকে বাছাই করে শ্রেণী বিভক্ত করতে হয়। পরিপুষ্ট মুখী ৪-৫ মাস ঘরে রাখা যায়। বস্তায় করে দূরবর্তী বাজারে পাঠানো যায় ।
ফলন : হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ টন ফলন হয়। তবে এর ৬০-৭৫% মুখী এবং বাকীটা গুড়িকন্দ হয়।
লতিরাজ বা পানি কচুর চাষ
লতি কচুর
চাষ লতিরাজ কচুর জাতঃ লতির আকার ও রঙের ওপর ভিত্তি করেও বহুজাতের পানি কচু দেখা যায়। তবে পানি কচুর জাত হলো নারকেলী, গজারী, কাজলী, লতিরাজ, শোলাকচু, বাঁশকচু, খামাকচু ইত্যাদি।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমি তৈরিঃ লতিরাজ কচু প্রধানত লতির জন্য চাষ করা হয়। পানি শুকায় না বা সহজে পানি দেওয়া যাবে এমন মজা পুকুর, টিউবওয়েলের পানি গিয়ে জমে এমন নিচু জমি বা সব সময়ই সামান্য পানি থাকে বা ভেজা থাকে এ ধরনের জমি থকথকে কাদাময় করে তৈরি করতে হয়। জমির উর্বরতাভেদে ৬০-৭৫ সে.মি দূরে দূরে সারি তৈরি করতে হয়। লতিরাজ কচুর জমি খুব বেশি গভীর করে নরম করতে হয় না। কেননা তাতে চারা লাগানোর পর গাছ হেলে পড়ে যেতে পারে। চারা যাতে কাদায় হালকা গভীর করে রোপণের পর দাঁড়ায়ে থাকতে পারে। সেজন্য আধা শক্ত অবস্থা রেখে জমি তৈরি করতে হয়।
সার প্রয়োগঃ পানি কচু চাষে জমি উর্বর না হলে সার প্রয়োগ করতে হয়। জমি কাদা করার শেষ সময় গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সার প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ২০-৩০ দিন পর ১ম কিস্তিতে ৮০ কেজি ইউরিয়া ও চারা রোপণের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে ২য় কিন্তিতে ৭০ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া সারের ২য় কিন্তুির সময় অতিরিক্ত ৬০ কেজি এমওপি সার দেয়া যায়।
সারের নাম ও সার প্রয়োগের নিয়ম :
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
গোবর ইউরিয়া টিএসপি এমওপি জিপসাম জিঙ্ক | ১০-১৫ টন ১৪০-১৬০ কেজি ১২০-১৩০ কেজি ১৫০-১৭০ কেজি ১৯০ কেজি ৮ কেজি |
চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা
পানি কচুর চারা রোপণ করা যায়। এ চারা পানিকচুর বড় গাছের গোড়া থেকে ছোট ছোট চারা আকারে বের হয়। এ চারাকে তেউড় বলা হয়। ৪-৬টি পাতা বিশিষ্ট চারা রোপণের জন্য সবচেয়ে ভালো। এ জাতীয় তেউড়ের মাঝের ২/১টি পাতা রেখে অন্যান্য সমস্ত পাতা ও শিকড় ছেটে এবং কাণ্ডের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। চারা যদি ৩০ সে.মি এর বেশি লম্বা হয় তাহলে ডাঁটাসহ অর্ধেক অংশ কেটে ফেলতে হয়। চারা প্রস্তুত করে রোপণে দেরি হলে ভিজা ও ছায়াযুক্ত স্থানে, খোলাভাবে বিছিয়ে সপ্তাহ খানেক রাখা যায়। তবে আঁটি বেঁধে রাখলে চারা পঁচে যেতে পারে। ৬০-৭৫ সেমি. দূরত্বে সারি করে সারিতে ৪৫-৫০ সেমি. পর পর ৫-৭ সে.মি. গভীরে ১টি করে চারা রোপণ করতে হয়। হেক্টর প্রতি ২৭০০০-৩৮০০০টি চারার প্রয়োজন হয়।
অন্তবর্তী পরিচর্যা
পানি কচুর জমিতে কচুর গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি রাখতে হয় । তবে মাঝে মাঝে পানি নাড়াচাড়া করে কাদাময় করে দিতে হয়। পানি কচুতে সারের উপরিপ্রয়োগের আগে জমির পানি বের করে নিলে ভালো হয়। সার প্রয়োগ করে মাটি নাড়াচাড়া করে দিয়ে ৪৮ ঘন্টা পর পুনরায় পানি দিতে হয়।
গাছ হতে লতি বের হওয়ার আগ পর্যন্ত জমিতে ৫-৬ সে.মি করে দাঁড়ানো পানি রাখতে হয়। সার প্রয়োগের সময় মাটি নাড়াচাড়া করে সার মিশিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে আগাছা থাকলে তা মাটির মধ্যে পুঁতে দিতে হয়। জমি থেকে পানি বের করার সুযোগ না থাকলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে ২-৩ দিন পর মাটি হাতিয়ে নাড়াচাড়া করে দিতে হয়। কচুর লতির সংখ্যা বেশি এবং মোটা করার জন্য জমিতে দাঁড়ানো পানি না রেখে শুধু ভেজা রাখতে হয়। লতি বের হওয়ার পর ২ সপ্তাহ পানি সরিয়ে ভেজা বা শুকনোভাব করে রাখতে হয়। আবার নির্দিষ্ট মাত্রায় পানি দিতে হয়। এভাবে ৩-৪ বার পানি দেওয়া ও বের করা হলে লতি লম্বা ও মোটা হয়
অন্তবর্তী পরিচর্যায় রোগ ও পোকামাকড় দমন
লতিরাজ কচুতে মাকড় ও লেদা পোকার আক্রমণ কিছুটা দেখা যায় ।
মাকড়- পাতার নিচে ছোট ছোট মাকড় থাকে এবং পাতার রস চুষে খায়। থিয়োভিট, কুমুলাস, ওমাইট যেকোন বালাইনাশক ব্যবহার করে মাকড় (মাইট) দমন করা যায়।
লেদা পোকা- ছোট ও কালচে বা মেটে রঙের পোকা পাতা খেয়ে ফেলে। পাতায় গাদা অবস্থায় থাকতে তুলে নিউরোন, মেরে ফেলতে হয়। সাইপারমেথ্রিন/ ম্যালথিয়ন স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। রোগ- পাতার দাগ রোগ- প্রথমে পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। পরে তা বৃত্তাকার হয়ে পচে যায়। কপার মিশ্রিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
সেচ ও নিকাশ
অন্তবর্তী পরিচর্যায় লতিরাজ কচুর পানি সেচ ও নিকাশ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফসল সংগ্রহ, সক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
লতিরাজ কচু রোপণের ৩ মাস হতেই লতি সংগ্রহ করা যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর অনেক আগে হতেই সংগ্রহ শুরু হয়। পরিচর্যা ঠিকমত করলে ৭/৮ মাস পর্যন্ত লতি সংগ্রহ করা যায়। লতি উঠানো শুরু করলে ৮-১০ দিন পর পর উঠানো যায়। উঠাতে দেরি করলে লতির অগ্রভাগে পাতা গজাতে শুরু করে। লতি সংগ্রহ করে ছোট ছোট মুঠি বেঁধে বাজারে পাঠাতে হয়। তবে বাজারে পাঠানোর আগে পলিথিনের মোড়কে বা ভিজা বস্তা দিয়ে মুড়ে দিতে হয়। এতে লতি সতেজ থাকে। কেননা খোলা অবস্থায় এবং শুকনো স্থানে রাখলে লতি শুকায়ে শক্ত হয়ে যায় ।
ফলন- হেক্টর প্রতি ১৮-২০ টন পর্যন্ত লতি পাওয়া যেতে পারে।
এক কথায় উত্তর
১. মুখিকচুর ১টি জাতের নাম লেখ ।
২. মুখি কচুর কতগ্রাম ওজনের বীজ লাগাতে হয় ?
৩. লতিরাজ কচুর ১টি জাতের নাম লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
১. মুখি কচু চাষে সারের মাত্রা উল্লেখ কর।
২. লতিরাজ কচুর অন্তবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ।
রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
১. মুখি কচুর চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর।
২. লতিরাজ কচুর চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর
পুঁইশাকের চাষ
পুঁইশাকের জাতঃ পুঁই শাকের জাতকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- কাণ্ড সবুজ ও কাণ্ড লাল।
কাণ্ড সবুজ- এ জাতের কাণ্ড সবুজ ও মোটা, রসালো এবং নরম। এর পাতা চওড়া ও পুরু, পাতার রং সবুজ।
কান্ড লাল- এ জাতের কাণ্ড বেগুনী লাল, কাণ্ড শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে চিকন। এর পাতা ছোট এবং পাতলা, পাতার কিনারা দিয়ে বেগুনীমত দেখায়। লাল জাতের পুঁই গাছের ফল বেশি ধরে। তবে কয়েকটি পুঁইশাকের উন্নত জাত পাওয়া গেছে। যেমন- বারি পুঁইশাক-১, মাধুরী, মনিষা, রূপসাগ্রীন ইত্যাদি ।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমি তৈরি- বার বার চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঢেলাবিহীন ও ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। জমিতে সরাসরি বীজ বুনার জন্য ১ মিটার প্রস্থ বেড তৈরি করতে হবে। বেড কতটুকু লম্বা হবে তা নির্ভর করে চাষের প্রয়োজন ও জমির দৈর্ঘ্যের ওপর। আর বেডের উচ্চতা হবে ১০-১৫ সেমি.। বেডের দুপাশে নালার গভীরতা হবে ২০ সেমি. এবং প্রস্থ হবে ৩০ সেমি.
সরাসরি বীজ বপন বা রোপণ- সরাসরি বীজ বপন বা রোপণ করলে ৭৫ সেমি. দূরে সারিতে ৪৫ সেমি. দূরে দূরে বীজ বপন বা রোপণ করা হয়।
সার প্রয়োগ
পুঁইশাকে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ এবং প্রয়োগের সময় নিচে দেয়া হলো-
১ম ও ২য় উপরি প্রয়োগঃ উল্লিখিত সময়ে সার প্রয়োগ করে চারার গোড়ার চারদিকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রথম ফসল কাটার পর তৃতীয়বার ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগ এবং পটাশ সার ১ম উপরি প্রয়োগ হিসেবে দিতে হয়ে। এ সময় গাছের গোড়ার চারিদিকে ১৫-১৬ সেমি. দূরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। চতুর্থবার ও একইভাবে দিতে হয়।
জমিতে গন্ধক ও দস্তার অভাব হলে জিপসাম ১০০ কেজি ও দস্তা ১০ কেজি হিসেবে প্রতি হেক্টরে দেয়া যেতে পারে।
বীজ বা চারা রোপণ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
পুঁইশাকের বীজ ছিটিয়ে বপন বা লাইনে রোপণ করা যায়। আবার পলিব্যাগে চারা তৈরি করেও রোপণ করা যায়। তবে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করা ভালো। চারা তৈরি করার জন্য বীজতলায় বীজ বুনে চারার বয়স ৫-৬ সপ্তাহ হলে তুলে মূল জমিতে লাগাতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে অন্তত ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে গজাতে সুবিধা হয়। জমিতে সরাসরি বীজ রোপণ করলে প্রতি মাদায় ২-৩টি করে বীজ রোপণ করা উচিত।
বেডে বীজ বপন বা রোপণ- বেডে বীজ বপন বা রোপণ করলে সারিতে ২-৪ সেমি. গভীর করে প্রতি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন বা রোপণ করতে হয়। পরবর্তীতে আগাছা পরিষ্কার ও ঘাস বাছাই করার সময় প্রতি গর্তে ১টি করে সতেজ চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হবে।
পলিব্যাগে চারা তৈরি- ৫ × ৫ সেমি. সাইজের ছিদ্রযুক্ত ছোট পলিব্যাগে গোবরসার ও বালি সমান অনুপাতে মিশিয়ে ভরতে হবে। ১টি ব্যাগে ১টি করে বীজ মাটির ১ সেমি. গভীরে বসাতে হবে। ৩-৫ দিনের মধ্যে বীজ গজাবে এবং ২৫-৩৫ দিনে চারা রোপণের উপযুক্ত হবে।
বর্ষা মৌসুমে পুঁইশাক লাগাতে হলে ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য কমপক্ষে ১৫ সে.মি গভীর ও ৩০ সেমি. প্রশস্ত নালা করতে হবে। নালার মাটি দ্বারা বেড় ১০-১৫ সেমি. উঁচু করা যাবে। বেডের দুই কিনারে ২০ সেমি. বাদ দিয়ে লম্বালম্বি ৬০ সেমি. মাদা তৈরি করতে হবে। বীজ বা চারা রোপণের পর পরই সেচ দেয়া উচিত। তাতে বীজ তাড়াতাড়ি গজায় এবং চারা লাগানো হলে তাড়াতাড়ি লেগে যায়। একই জমিতে প্রতি বছর পুঁইশাকের চাষ করা উচিত নয়।
পরিচর্যা
আগাছা দমন, মাটি আলগা করে সারের উপরি প্রয়োগ এবং গাছের গোড়ায় হাল্কাভাবে মাটি দেয়ার কাজ একসাথেই করা যেতে পারে। গাছ যখন ৩০-৪৫ সেমি. লম্বা হবে তখন মাথার ডগা কেটে দিলে শাখা প্রশাখা বেশি হবে। পুঁইশাক ১.৫ মিটার উঁচু করে মাচাতেও দেওয়া যেতে পারে। পুঁইশাক সুষ্ঠু বাড়বাড়তির জন্য পুরো জীবনকালে যথেষ্ট সার ও রসের প্রয়োজন হয়। তাই বেশি ফলনের জন্য ডগা কাটার পর ইউরিয়া ও এমওপি সার প্রয়োগ করে হালকা সেচ দিতে হয়।
পোকামাকড় ও রোগবালাই
পোকামাকড় দমন
পুঁইশাকে তেমন কোন মারাত্মক রোগবালাই হয় না। তবে কদাচিৎ পাতায় দাগ পড়া এবং কাণ্ড ও কীকড় পচা রোগ দেখা দিতে পারে।
রোগ- পুঁইশাকে পাতা পচা বা চারা পঁচা রোগ দেখা দিলে সে গাছ তুলে পুঁতে ফেলতে হয়।
প্রতিকার
১) রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২) জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
৩) জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪) একই জমিতে বার বার পুঁইশাক চাষ না করে শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
৫) ডায়াথেন এম ৪৫ বা কপার অক্সিক্লোরাইড ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
সেচ ও নিকাশ- পুঁইশাকে রসের প্রয়োজন বেশি তাই ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। পানি শুকালে মাটি আগলা করাসহ আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হয়। পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
চারা রোপণের ৬-৮ সপ্তাহ পরে ১ম বার সংগ্রহ করা যায়। ডগা ৩০-৩৫ সেমি. লম্বা হলে গোড়ায় ২-৩ টি পাতা রেখে মাটি হতে ৫-৬ সেমি. উপরে কাটতে হয়। এরপর ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২০-৩০ সেমি. লম্বা ডগা হলেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। এভাবে ৬-৭ বার ফসল আহরণ করা যেতে পারে। ৪ থেকে ৬ মাস পর ফুল আসলে আর ফসল সংগ্রহ করা যাবে না। আবার সারি করে ৮-১০ সেমি. পর পর বীজ বুনে/রোপণ করে ৭/৮টি পাতা হলে সম্পূর্ণ গাছসহ তুলে বিক্রি করা যায় এবং পুনরায় বীজ রোপণ করা যায়। এভাবে স্বল্প সময়ে বারবার পুইশাক সগ্রহ করা যায়। পুঁইশাক কেটে স্তরে স্তরে ছালা দিয়ে সাজায়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে বাজারজাত করা যায়। ফলন : হেক্টর প্রতি ২০-২৫ টন।
গিমা কলমি শাকের চাষ
কলমি শাকের জাতঃ পুকুর, খাল, বিল বা জলাশয়ের ধারে কলমিগাছ এমনিতে জন্মে থাকে। তবে কলমি শাক দু'ধরনের। (ক) কাণ্ড ও পাতা সম্পূর্ণ সবুজ ও (খ) কাণ্ড, বোটা, কীরা লালচে কিন্তু পাতা গাঢ় সবুজ। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (RARI) কলমি শাকের মধ্য হতে নির্বাচন করে গিমা কলমির জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ জাতটি খাড়াভাবে জন্মে থাকে। তবে বেশি বিলম্ব করলে লতায়ে যায়।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমি তৈরিঃ মাটির প্রকারভেদে ৪/৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করতে হয়। জমি গভীরভাবে চাষ করলে গিমা কলমির জন্য ভালো। তবে দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটিতে গিমা কলমি বেশি ভালোভাবে জন্মে থাকে। জমি চাষের পর ১ মিটার করে চওড়া বেড তৈরি করে বেডের পাশে বা দুই বেডের মাঝখান দিয়ে ২০-২৫ সেমি. চওড়া করে নালা তৈরি করতে হয়। এক ধরনের কলমি শাক পানিতে জন্মে থাকলেও গিমা কলমিতে পানি নিকাশের সুবন্দোবস্ত রাখতে হয়।
সার প্রয়োগঃ গিমা কলমি চাষের জন্য কম উর্বর জমি হলে জৈব সার বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করতে হয়। জমির শেষ চাষের পূর্বে সম্পূর্ণ পচা গোবর সার, টিএসপি ও পটাশ সার সম্পূর্ণ জমিতে বা বেডে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সারের পরিমাণ নিচে দেয়া হলো।
সারের নাম | হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ |
গোবর/কম্পাস্টে সার | ৬-৮ টন |
ইউরিয়া | ২৮০ কেজি |
টিএসপি | ১২০ কেজি |
এমওপি | ৭৫ কেজি |
ইউরিয়া সার ৪ কিন্তিতে ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। চারা গজানোর পর ৮/১০ সেমি. উঁচু হওয়ার পরে সারির পাশ দিয়ে ইউরিয়া ছিটিয়ে দিয়ে মাটি নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে দিতে হয়। গিমা কলমি ১ মাসের মধ্যেই আহরণ করা যায়। তাই ১ম আহরণ করার পর পরই ২য় কিন্তুি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। ১ম আহরণের ৮-১০ দিন পর পুনরায় ২য় আহরণ করা যায়। ২য় আহরণ করার পর পর পুনরায় ৩য় কিস্তি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। আবার ৮-১০ দিন পর শাক আহরণ করে ৪র্থ কিস্তি সারের উপরিপ্রয়াগ করে আর একবার শাক সংগ্রহ করে পরবর্তীতে বীজের জন্য রেখে দেওয়া যায়। কেননা ৪ বারের পর সাধারণত শাক হিসেবে ভালো ফলন দেয় না এবং মানগত দিক থেকে নিম্নমানের হয়ে যায় ।
বীজ/চারা রোপণ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
বীজ রোপণঃ জমি চাষের পর বেড তৈরি করে বেডে ৩০ সেমি. পর পর বা দূরত্বে লাইন টেনে প্রতি লাইনে ১০- ১৫ সেমি. পর পর ছোট গর্ত করে সে গর্তে দু'টি করে বীজ ১ সেমি. গভীরে লাগাতে হয়। বীজ রোপণের ৩-৪ দিনের মধ্যে বীজ গজায়। বীজ গজানোর পর চারা ৩৪ সেমি. হলে প্রতি গর্তে ১টি করে চারা রেখে বাকীটা উঠিয়ে ফেলতে হয়। কাটিং রোপণের ক্ষেত্রে ২/৩টি গিরাসহ কাটিং নিয়ে ১টি গিরা মাটির গভীরে পুঁতে কাটিং রোপণ করতে হয়। কাটিং রোপণের পূর্বে ছত্রাকনাশকে কাটিং ডুবিয়ে নিলে ভালো হয়। বীজের ক্ষেত্রে বীজ রোপণের পূর্বে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিলে চারা গজানোর হার বৃদ্ধি পায়।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ চারা গজানো বা কাটিং রোপণের পর ১৫ সেমি. পর পর ১টি করে গাছ রেখে বাকীগুলো ১টি উঠানের সময় আগাছা তুলে ফেলতে হয়। গিমা কলমির শিকড়ে প্রচুর আলোকবাতাস লাগার জন্য মাটি সব সময় আগলা করে রাখতে হয়। বর্ষাকালে চাষের সময় সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে একনাগাড়ে ১০-১৫দিন বৃষ্টি না হলে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ৩/৪ বার সারের উপরি প্রয়োগ করার পর পর মাটি খুচিয়ে আলগা করে দিতে হয়, তাতে সারের কার্যকারিতা বাড়ে এবং গাছে আলোবাতাস পায়।
পোকামাকড় ও রোগ দমন
পোকামাকড়ঃ মাঝে মাঝে বিটল পোকা গাছের পাতা খেয়ে ছিদ্র করে। ম্যালথিয়ন, ডায়াজিনন বা ফেনিট্রোথিয়ন স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। পাউডারি মিলডিউ রোগে পাতায় হালকা হলুদ দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে তা পরিবর্তিত হয়ে পাতায় সাদা ধূসরাভ দাগ হয়। এর ফলে গাছ দুর্বল হয়, বৃদ্ধি কমে যায়। কপার মিশ্রণ যৌগ বালাইনাশক স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
সেচ ও নিকাশঃ লিমা কলমি প্রচুর পানি পছন্দ করে। কিন্তু পানিতে স্যাঁতসেতে অবস্থা পছন্দ করে না। দীর্ঘ ধরা হলে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বৃষ্টি বা সেচের পানি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ফসল সংগ্রহ , সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
বীজ গজানোর ৩০ দিনের মধ্যেই শাক সংগ্রহ করার উপযোগী হয়। গাছগুলো ৩০-৩৫ সেমি. লম্বা হলে মাটির লেবেল হতে বা পাছের গোড়া হতে ২/৩ সেমি. উপরে কেটে আহরণ করতে হয়। শাক কেটে ডালা / ঝুড়িতে সুচারুরূপে স্তরে স্তরে সাজিয়ে ছারার ও ঠান্ডার রাখতে হয়। তারপর মুঠি বেঁধে বাজারে পাঠাতে হয়। শাক কাটার পর খোলা মেলাভাবে রোদে রেখে দিলে খুব দ্রুত এর মান খারাপ হয়ে যায়। শাক কাটার পর ঠান্ডা ও আর্দ্র ঘরে বেশি আর্দ্রতার ২/৩দিন রাখা যেতে পারে।
ফলন- যত্নের সাথে চাষ করলে হেক্টরে ৪০-৫০টন পর্যন্ত শাক পাওয়া যেতে পারে।
এক কথায় উত্তর
১. পুঁইশাকের কয়টি জাত আছে?
২. কোন জাতের পুঁইশাকের গাছে ফল বেশি ধরে ?
৩. পুঁইশাক চাষে হেক্টর প্রতি কত কেজি জিপসাম দিতে হয় ?
৪. পুঁইশাকের চারা কত সেমি. সাইজের ব্যাগে করা হয় ?
৫. কলমি শাক কয় ধরনের হয় ?
সংক্ষিত প্রশ্ন
১. পুঁইশাক চাষে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ উল্লেখ কর ।
২. পুঁইশাক চাষে অন্তবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ।
৩. কলমি শাক চাষে হেক্টরপ্রতি সারের পরিমাণ উল্লেখ কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. পুঁইশাকের চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর।
২. কলমি শাকের চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর।
গাজরের জাত
গাজরের এশিয়াটিক ও ইউরোপীয় জাত আছে। এশিয়াটিক জাত আকারে বড়, হলুদ গাঢ় বর্ণের এবং খাদে মিষ্টি হয়ে থাকে। এটি উচ্চ তাপমাত্রায় জন্মে এবং শীতের পরিবেশ ছাড়াই বীজ উৎপাদন করতে পারে। ইউরোপীয় জাত কিছুটা ছোট, আকর্ষণীয় ও কম আঁশাল। বাংলাদেশে যে সমস্ত জাত চাষ হয়ে থাকে তার প্রায় সবগুলোই বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। বাংলাদেশে চাষকৃত জাত হলো যথা- রয়েল ক্রস, কোরেল ক্রস, কীনকো, সানটিনো রয়েল ও স্কারলেট নান্টেস, কুরোদা-৬৫, জি কুরোদা, ইয়লো রকেট, অরেঞ্জ কীং ইত্যাদি।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমি তৈরি :
জমি অত্যন্ত ঝুরঝুরে ও রসালো হলে গাজর ভালো জন্মে। এর বীজ অত্যন্ত ছোট ও হালকা। তাই বীজ বপনের আগে ১ ভাগ বীজের সাথে ৯ ভাগ বালি বা ছাই মিশিয়ে নিলে সমভাবে বপন করা যায়। জমিতে সরাসরি ছিটিয়ে বা বেডে লাইন করে বীজ বপন/রোপণ করা যায়। বেড়ে বপন করা হলে ২৫সেমি পর পর জোড়া সারি করে ১-১.৫ সেমি. গভীর জুলিতে বীজ বপন করা উত্তম। প্রতি দুই সারি পর পর ৩০ সেমি করে ফাক দেওয়া যেতে পারে । বীজ বপনের জন্য তৈরি জুলিতে এক নাগাড়ে বীজ বুনার পর ঝুর ঝুর মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। প্রয়োজনবোধে মাটির উপরে খড় বিছিয়ে হালকা করে সেচ দেওয়া যেতে পারে। বীজ গজানার পর খড় সরায়ে দিতে হয়। মাটি আগলা ও চারা পাতলা করে ৫-৭ সেমি. দূরত্বে একটি করে গাছ রাখলে ভালো হয়। এ কাজ চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর করতে হয়।
সার প্রয়োগঃ হেক্টর প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো
গোবর সার - ১০ টন | টিএসপি সার - ১৫০ টন |
ইউরিয়া - ২০০ কেজি | এমওপি সার - ১২০ কেজি |
গোবর/কম্পোস্ট এবং টিএসপি সার পুরোপুরি এবং ইউরিয়া ও পটাশ সারের ১/৩ অংশ জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর ১ম কিস্তি এবং পরবর্তী ১৫ দিন পর পর ২য় ও ৩য় কিস্তি সার দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিত্তির সার ১৫ দিন পর পর সারির দু'পাশে হালকা জুলি কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে পটাশ সারও ঐ একইভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বীজ/চারা রোপণ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
বীজ বপনঃ গাজরের বীজ খুব ছোট। গাজর বীজ ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করা হয়। এর চারা তৈরি করে চাষ করা হয় না। বীজ সমভাবে ও সহজভাবে বপনের জন্য ১ ভাগ বীজের সাথে প্রায় ৯ ভাগ ছাই বা শুকনো বালি মিশিয়ে নিলে ঠিকমত বপন করা যায়। পরিচর্যার সুবিধার্থে চাষকৃত জমিতে ৫০-১০০ সেমি. চওড়া করে বেড় তৈরি করতে হয়।
প্রতি বেড পর পর ২০ সেমি. চওড়া ও ২০ সেমি. গভীর করে নালা তৈরি করতে হয়। বেডে ৩০ সেমি. পর পর সারি টেনে অর্থাৎ প্রতি বেডে জোড়া তিন সারি করে তাতে ১-১.৫ সেমি. গভীর করে নালা/জুলি টানতে হবে। এ নালায় ছাই বা বালি মিশ্রিত বীজ পাতলা করে একনাগাড়ে বপন করে দিতে হয়। তারপর হালকাভাবে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে সামান্য চেপে দিতে হয়। ২-৩ দিনের মধ্যে বীজ গজানো শুরু করে। অনেক সময় বীজ বপনের পর খড় দেওয়া হয়। বীজ গজানোর পর খড় দিলে তা সরায়ে দিয়ে চারা পাতলা করতে হয়। চারা ৫/৭ সেমি. লম্বা হলে প্রতি সারিতে ৫-০ সেমি. পর পর ১টি করে গাছ রেখে অন্যগুলো তুলে ফেলতে হয়। এ কাজ চারা গজানোর ১৫-২০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়।
পোকামাকড় দমন
জাব পোকাঃ এ পোকা পাতা ও গাছের কচি অংশের রস চুষে খেয়ে যথেষ্ট ক্ষতি করে। জাব পোকার আক্রমণ হলে ম্যালাথিয়ন ১.২ লিটার ৬০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করে দমন করা যায় ।
সেচ ও নিষ্কাশন
আগাছা দমন এবং সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা করতে হয়। সার প্রয়োগ এবং সেচ বা বৃষ্টিপাতের পর মাটি খুচিয়ে আগলা করে দিতে হয়। গাছের গোড়ায় হালকাভাবে মাটি তুলে দিলে গাজর যথাযথভাবে বৃদ্ধি পায় ও ফলন বেশি হয়। এসব কাজ করার সময় শিকড়ের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হয়।
ফসল সংগ্রহ, সংক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
বীজ বপনের ১১০-১২০ দিনের মধ্যে গাজর সংগ্রহ উপযোগী হয়। তবে ৭০-৭৫ দিন বয়স থেকেই উঠানো যায় । কিন্তু তাতে ফলন কম হয়। হেক্টরে ১৫-২৫ টন গাজর ও ৩০০-৪০০ কেজি বীজ জন্মিতে পারে। বীজের জন্য গাজর বেশি সময় ধরে জমিতে রাখতে হয়। ফুল হওয়ার ৩০-৩৫ দিন পর বীজ শুকিয়ে খড়ের ন্যায় বা বাদামী রং ধারণ করে। এ সময় ভোরে ফুলের ডাটাসহ কেটে আনতে হয়। পরে মাড়াই করার স্থানে শুকিয়ে কাঠি দিয়ে আস্তে আস্তে পিটিয়ে মাড়াই করে ও পরিষ্কার করে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। গাজর পরিপক্ক হওয়ার পর উঠিয়ে পাতা বোঁটা পর্যন্ত কেটে ছায়ায় ২-৩দিন শুকাতে হয়। ছায়া ও ঠান্ডা স্থানে গাজর ২-৩ সপ্তাহ রাখা যায়। এরপর আরও ২-৩ মাস রাখতে হলে ঠান্ডা পরিচ্ছন্ন বালি দিয়ে ঢেকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হয়।
এক কথায় উত্তর
১. গাজরের কয় ধরনের জাত আছে ?
২. গাজর বীজ বপনে ১ ভাগ বীজের সাথে কয়ভাগ বালি মেশাতে হয় ?
৩. গাজর বীজ কয়ভাবে বপন/রোপণ করা যায় ?
৪. গাজর কতদিনে সংগ্রহ করা যায় ?
৫. হেক্টরে গাজর কত টন হতে পারে ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. গাজরের বীজ বপন পদ্ধতি সম্পর্কে লেখ ।
২. গাজর চাষের হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ উল্লেখ কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. গাজরের চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
প্রাথমিক তথ্য- বাংলাদেশে বহু রকমের সবজি চাষ হয়ে থাকে। সব সবজিরই চারা উৎপাদন করার প্রয়োজন হয় না। চারা রোপণের উপযুক্ত হলে দেরি না করে রোপণ করতে হয়। বয়স্ক এবং অনুপযুক্ত চারা রোপণ করলে ফলন কমে যায়। জমির মাটিতে উপযুক্ত রস যেন থাকে। বীজতলার মাটিতে চারার গোড়া যতটুকু গভীরে ছিল রোপণের সময় ততটুকু গভীরে রোপণ করতে হয়। সারি টেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা লাগিয়ে চারার গোড়ার মাটি সামান্য চেপে দিতে হয়। মাটি শুল্ক হলে ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিতে হয় এবং রোদের সময় ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। মাটিতে চটা ধরলে নিড়ানি দিয়ে তা ভেঙ্গে দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। বীজতলা ও রোপণ উপযোগী সবজির চারা ২। নিড়ানি ৩। চারা উঠানোর জন্য বাঁশের চটা ৪। ঝাঝরি ৫। কলার খোল ৬। খাতা কলম ।
কাজের ধাপ
চারা শনাক্তকরণ
১. বীজতলার পাশে দাঁড়ায়ে চারা স্বাভাবিক আকারের কিনা দেখতে হবে।
২. চারায় ৪-৫টি হতে অনধিক ৬টি পাতাযুক্ত হয়েছে কীনা দেখতে হবে।
৩. রোগের সবরকম লক্ষণ থেকে চারা মুক্ত আছে কীনা দেখতে হবে।
৪. চারার কাণ্ড, পাতা ও গুচ্ছমুলের বৃদ্ধি প্রায় সমানুপাতিক কিনা দেখতে হবে।
৫. কাণ্ড পুরু ও সতেজ কিনা দেখতে হবে।
৬. পাতা স্বাভাবিক সবুজ আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৭. চারার কষ্টসহিষ্ণুতা করে নিতে হবে। তাতে চারায় শ্বেতসার সঞ্চিত হয়।
৮. চারা স্থানান্তরজনিত আঘাত কাটিয়ে উঠার মত যোগ্য কিনা দেখতে হবে।
উল্লিখিত গুণাগুণ থাকলে সে সমস্ত চারা রোপণের জন্য শনাক্ত করার যায়।
রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা
১. চারা বীজতলা হতে উঠায়ে রোপণ পরবর্তী চারার গোড়ায় ৩-৪দিন সকালে প্রয়োজনে বিকালেও ঝাঁঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে।
২. চারা রোপণ করে গোড়া সামান্য চেপে দিতে হবে এবং চারা থেকে গেলে সোজা করে দিতে হবে।
৩. চারা রোপণের পর প্রখর রোদের ভাব থাকলে ৫-৭ দিন পর্যন্ত দিনে ছায়া করে দিতে হবে।
৪. চারা রোপণ হতে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত মালচিং, আগাছা দমন, শূন্যস্থান পূরণ, অংগ হাটাই, পরাগায়ন, করা ইত্যাদি সুচারুরূপে করতে হবে।
৫. কাজের প্রতিটি বিষয় খাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে
প্রাথমিক তথ্য- ভালো কম্পোষ্ট তৈরির জন্য কার্বন, নাইট্রোজেন ও অনুজীবের উৎসগুলো একত্রীকরণ করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কম্পোষ্ট এক ধরনের জৈব সার। গাছপালা তাজা বা শুকনো, লতাপাতা, খড়কুটা, তরিতরকারির অবশিষ্টাংশ, কচুরিপানা, সবুজ ঘাস, পশুপাখির মলমূত্র, কশাইখানার বর্জ্য ইত্যাদি কম্পোষ্ট তৈরিতে প্রয়োগ করা যায়। কম্পোষ্ট তৈরিতে বিষাক্ত দ্রব্য (বিষকাঁটালি, তামাক), অপচনশীল রাসায়নিক দ্রব্যাদি (প্লাষ্টিক ও প্লাস্টিকজাতীয় পদার্থ), কার্বন বেশি আছে এমন গাছ (বাঁশপাতা, ইউক্যালিপটাস, কলা ও হলুদের পাতা) এবং রোগাক্রান্ত গাছপালা ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়।
গাদা পদ্ধতিতে কম্পোষ্ট তৈরির জন্য নির্দিষ্ট মাপ (৩ মিটার x ১.২৫ মিটার ×১.৫ ২.০০ মিটার) দিয়ে সেখানে আবর্জনা, ও অন্যান্য উপকরণ স্তরে স্তরে সাজাতে হবে। স্তুপের উপরে মাটি ও কাঁচা গোবরের পুরুক্তর করে লেপে দিতে হবে। পচনক্রিয়ার জন্য মাঝে মাঝে উপর দিয়ে ছিদ্র করে পানি দিতে হবে। স্তুপের উপরে চালা দিতে হয়। ৩-৪ মাসে কম্পোষ্ট তৈরি করে ব্যবহার করা যায়। পঁচনক্রিয়া ঠিকমত হলে ১.৫-২ মাসেও কম্পোষ্ট তৈরি হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ-
১। খড়কুটা, আবর্জনা, লতাপাতা ইত্যাদি জৈব উপকরণ, ২। পশুপাখির মলমূত্র ও অন্যান্য বর্জ্য ৩। কাঁচা গোবর। ৪। ভিটা মাটি ৫। বাঁশ ৬। চাটাই ৭। কোদাল ৮। চালা ৯। টেপ (মাপার ফিতা) ১০। রকী, ১১। খাতা কলম।
কাজের ধাপ-
১. কম্পোষ্ট গাদা তৈরির জন্য উঁচু স্থানে ৩ × ২ মিটার দৈঘ্য x প্রস্থ) মেপে চিহ্ন করতে হবে।
২. চারকোনায় ৪টি বাঁশে খুঁটি পুঁতে রশি দিয়ে চাটাই দিয়ে আয়তাকার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
৩. এই ক্ষেত্রের ভিতর ঘাস, লতাপাতা, প্রাণিজ আবর্জনা, গরু ছাগলের ঘরের ঝাড়ুর ময়লা জাতীয় সব পঁচনশীল দ্রব্য ফেলে প্রথমে ৩০ সেমি. স্তর বানাতে হবে।
৪. এ স্তরের উপরে ১ কেজি গুড়া খৈল, কাঁচা গোবর, পচা মাটি ইত্যাদি দিয়ে ৫ সেমি. পুরু স্তর বানাতে হবে ।
৫. এরপর পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
৬. এভাবে উপকরণ প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে ৩ থেকে ৬টি স্তর পর পর একই নিয়ম অনুসরণ করে সাজাতে হবে।
৭. সর্বশেষ স্তরের উপর পলিথিন/খড় দ্বারা চালা তৈরি করে দিতে হবে।
৮. গাদা যদি শুকিয়ে যায় তাহলে মাঝে মাঝে উপর দিয়ে ছিদ্র করে পানি দিতে হবে, যাতে ঠিকমত পচন ক্রিয়া চলতে পারে।
৯. গাতা তৈরির ১ মাস পর গুরগুলো ওলটপালট করে দিলে পচন ক্রিয়া সমভাবে হবে এবং ১.৫-২ মাসে সম্পূর্ণ পঁচে কম্পোষ্ট ব্যবহার উপযোগী হবে।
ব্যবহারঃ কম্পোষ্ট তৈরি হলে গাদা ভেঙ্গে শুকিয়ে গুড়া করে প্যাকেটজাত / বস্তায় ভরে রাখা যাবে। তবে খুব বেশি শুকানো উচিত নয়। পচনের ফলে কালচে রং ধারণ করে এবং ঝুরঝুরে হয়। কোন দুগন্ধ থাকে না এবং হাতে নিয়ে মুঠি করে চাপ দিলে স্পঞ্জের মত মনে হয়। এতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশসহ অন্যান্য উপাদান থাকে। এটি সবজির জন্য অত্যন্ত উন্নতমানের জৈব সার।
প্রাথমিক তথ্য
ফসলের বীজ বপন/চারা রোপণের পরে ফসলের বৃদ্ধি পর্যায়ে সার প্রয়োগ করাকে উপরি প্রয়োগ বোঝায়। গাছের জন্য বেশি পরিমাণে লাগে এবং গ্রহণ উপযোগী হতে সময় লাগে এরূপ সারগুলো মৌল সার হিসেবে চাষের সাথে প্রয়োগ করা হয় (টিএসপি, পটাশ, দস্তা, চুন, জিপসাম, বোরণ ইত্যাদি। তবে, নাইট্রোজেন ও পটাশ সার, বোরণ ও দস্তা সার গুলিয়ে, ছাই, পঁচা খৈল ও গোবর সার উপরি প্রয়োগ করা যায়। স্বল্প মেয়াদি ও পাতা জাতীয় সবজিতে নাইট্রোজেন ব্যতিত সব সার মৌল এবং নাইট্রোজেন সার কয়েক কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। ফুল, মূল ও ফল জাতীয় সবজিতে উপরি প্রয়োগের সার ২-৩ টি কিস্তিতে প্রয়োগ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। পাতা, মূল ও ফল জাতীয় সবজি ক্ষেত ২। বিভিন্ন ধরনের সার ৩। সার ছিটানোর পাত্র ৪। খাতা কলম
কাজের ধাপ
পাতাজাতীয় সবজি
১। পালং ও লালশাক, সিলারী, ধনেপাতা, বাঁধাকপি, মূলা শাক ইত্যাদি পাতাজাতীয় সবজি ক্ষেত নিতে হবে।
২। পাতাজাতীয় সবজিতে ফসল তোলার পূর্ববর্তী ৩০ দিন খাদ্য পরিশোষণ হার বেশি। তাই এ সময়ে ২-৩ কিস্তিতে সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
৩। সার গাছের পার্শ্বে, উপর হতে ছিটিয়ে গোড়ায় ব্যান্ড আকারে, সারির পাশ দিয়ে, মাদায় চারিদিকে, স্প্রে করে দেওয়া যাবে। তবে সম্পূর্ণ ইউরিয়া ২-৩ কিন্তিতে, পটাশ মোট সারের অর্ধেক ২ কিস্তিতে খৈল/ছাই/গোবর ৫০% ১-২ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে
মূলজাতীয় সবজি
১। ফসল তোলার ৪৫ দিন আগে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে সারির পাশ দিয়ে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
২। সবজির পাশ দিয়ে লাইন টেনে তাতে সার দিয়ে মাটি দিয়ে বা মাটি তুলে গোড়া বেধে দিতে হবে।
৩। ২ কিস্তিতে সার দিলে লাইনের দুইপাশ দিয়ে ২ বারে দিতে হবে, তাতে সারের কার্যকারিতা বেশি হবে। সার প্রয়োগ সম্পর্কে তাত্ত্বিক অংশে উল্লেখ আছে।
ফলজাতীয় সবজি- মূল জাতীয় সবজির অনুরূপ।
সারের উপরি প্রয়োগের সময় জমিতে রসের ঘাটতি থাকলে সেচে দিতে হবে। তাতে সার বেশি কাজে লাগবে ।
প্রাথমিক তথ্য- বীজ আলু সব সময় ছোট (২০ গ্রাম) আকারের পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু ছোট বীজ বেশি ভালো। সেক্ষেত্রে বড় আকারের বীজ আলুকে কেটে টুকরো করে রোপণ করা যায়। কাটিং করার সময় টুকরার ওজন, আকার, চোখের সংখ্যা লক্ষ রাখতে হয়। এছাড়াও কাটিংকৃত আলুটি যাতে রোগে আক্রান্ত না হতে পারে সেজন্য কাটার যন্ত্রটি শোধন করে নিতে হয়। আলুর কর্তিত স্থানটি ঠিকমত শুকানো হলে শক্ত চটার ন্যায় হবে। তাতে রোগজীবাণু ঢুকতে বাধাগ্রস্থ হবে । কাটা আলু কিউরিং করার পর অঙ্কুর গজানোর জন্য খড়কুটা দ্বারা জাগ দিতে হয়। এতে শক্তিশালী অঙ্কুর বের হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ-
১। বীজ আলু, ২। চাকু, ৩। ছাই ৪। ডেটল/স্যাভলন ৫। খড়কুটা, ৬। ডালা, ৭। খাতা কলম।
কাজের ধাপ
১. বীজ প্রস্তুতকরণের জন্য ২০ গ্রাম ওজনের আস্ত আলু বা ৩-৪ সেমি, অর্থাৎ ৩০ গ্রামের বীজ আলুকে দুটুকরা। এবং ৪ সেমি. এর বড় অর্থাৎ ৪০ গ্রামের বড় আলুকে দু'এর অধিক টুকরো করে কাটতে হবে।
২. বীজ আলু কাটার আগে চাকু, ছুরি বা বটিকে স্যাভলন/ডেটল দ্বারা মুছে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
৩. আলুর কাটিং এর প্রতি টুকরাতে কমপক্ষে ২টি চোখ থাকতে হবে।
৪. আলু কাটর পর কাটাস্থানে গোবরের শুকনো ছাই মাখায়ে ছায়ায় রেখে শুকাতে হবে।
৫. কাটিংগুলো শুকানো হলে কাটাস্থানে শক্ত চটা ধরবে। এরপর এগুলো ৫-৭ সেমি. পুরু করে বিছিয়ে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৬. আলু কাটিং এর সময় পুরাতন অঙ্কুর ভেঙ্গে দিতে হবে।
৭. কিউরিং করার পর বীজ নিম্নে বর্ণিত দুরত্বে লাগাতে হবে।
দূরত্বঃ- সারি হতে সারি = ৬০-৭৫ সেমি.
বীজ হতে বীজ = ২০-২৫ সেমি.
নালার গভীরতা ৫-৭ সেমি.।
৮. আলু রোপণ সম্পর্কে তাত্ত্বিক অংশে বিস্তারিত উল্লেখ আছে ।
প্রাথমিক তথ্য- মাটি দোঁআশ ও এঁটেল দোঁআশযুক্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু এবং নিষ্কাশন সুবিধা আছে এমন জমি উত্তম। এ সমস্ত সবজি কিছুটা ছায়াময় স্থানে জন্মালেও পর্যাপ্ত সূর্যালোকে যেখানে পড়ে সে সমস্ত স্থানে ফলন বেশি হয়। সবজি লাইনে বপন করা যায়। আবার অনেক সবজি মাদা করে মাদায় বীজ রোপণ করা যায়। মাদায় গর্ত করে রোপণ করা হয়। চারা সাধারণত বিকেলে বা মেঘলা দিনে যে কোন সময় রোপণ করা যায়। এতে চারার মৃত্যু হার কম হয়। চারা রোপণের পর জমি শুকনো থাকলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দিতে হয়। সূর্যের আলো প্রখর হলে চারায় ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ : ১। সবজির বীজ, ২। নিড়ানি ৩। কোদাল, ৪ কাঠি ৫। টেপ ৬। চাকু ৭। ছায়ার জন্য চালা, ৮। ডালা/বস্তা ৯। জমির বন্ধুরতার তথ্য ১০। খাতা কলম।
কাজের ধাপ
১. দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি, উঁচু বা মাঝারি উঁচু এবং সেচ ও নিকাশের সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে।
২. সবজির জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে লাইন বা মাদা তৈরি করতে হবে।
সবজির নাম | দূরত্ব (সেমি.) |
গীমা কলমি | লাইন হতে লাইন ১৫ সেমি. চারা হতে চারা ১০ সেমি. |
কাঁকরোল | মাদা হতে মাদা উভয়দিকে ৩ মিটার, মাদায় গর্ত ৭৫ × ৭৫ সেমি. চওড়া ও গভীর |
ধুন্দল | মাদা হতে মাদা ২ মি., মাদার লাইন হতে লাইন ১ মিটার, গর্ত ৭৫ × ৬০ সেমি. |
পুঁইশাক | লাইন হতে লাইন ৪৫ সেমি, চারা হতে চারা ৩০ সেমি. |
পাজর | লাইন হতে লাইন ৩০ সেমি. চারা হতে চারা ৫ সেমি. |
৩. গীমা কলমি ও পুঁইশাক বীজ ৩-৫ সেমি. গভীর নালা টেনে ঐ নালায় নির্দিষ্ঠ দূরত্বে বীজ রোপণ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৪. গাজর বীজ বপনের জন্য ২-৩ সেমি. গভীর করে নালা টেনে নালায় বীজ হালকা করে বপন করতে হবে এবং চারা গজালে ৫ সেমি. পর পর গাছ রেখে পাতলা করে দিতে হবে।
৫. গাজর বীজ বপনের সময় বীজের ওজনের ৯-১০ গুণ পর্যন্ত ছাই/বালি মিশিয়ে নিলে সমভাবে বীজ বপন করা সহজ হবে।
৬. গীমা কলমি, পুঁইশাক ও গাজর বেড করে বপন করতে হবে তাতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হবে এবং নিড়ানিসহ সারের পার্শ্ব প্রয়োগ সহজ হবে।
৭. কাঁকরোল ও ধুন্দল চারার গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য দুই মাদা পর পর সারি টেনে নালা কেটে মাটি তুলে বেড করে দিতে হবে। মাটিতে চটা ধরলে সাথে সাথে ভেঙ্গে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
৮. মাদায় আগাছা জন্মালে নিড়ানি দিয়ে উঠায়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
৯. মাটি শুকনো হলে বা বৃষ্টিপাত না হলে অবস্থা বুঝে প্রয়োজনে ১০ দিন পর পর হালকা করে সেচ দিতে হবে।
১০. রোগ পোকার আক্রমণ যাতে না হতে পারে সেজন্য কপার মিশ্রিত ছত্রাকনাশক ও ম্যালাথিয়ন/ফেনিট্রোথিয়ন জাতীয় বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
১১. যে সমস্ত কাজ করা হবে তা খাতায় লিখে রাখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- শিকড়ের নাগালের মধ্যে সার প্রয়োগ করা হলে গাছ তা গ্রহণ করতে পারে। সার মাটিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া করে মাটিতে আবদ্ধ হয়, পানিতে ধুয়ে/চুয়ায়ে যায়, বাতাসে উড়ে যায়। তবে সার প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি আছে। তন্মধ্যে উপরি প্রয়োগ ১টি পদ্ধতি। জমিতে দণ্ডায়মান ফসলে সার প্রয়োগ করাকে উপরি প্রয়োগ বোঝায়। তবে সহজে দ্রবণীয় বা দ্রুত গাছের গ্রহনোপযোগী পর্যায়ে যায়, এরূপ সারই একমাত্র উপরি প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত হয়। এছাড়াও কিছু সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। যেমন- ছাই, পচা খৈল ও গোবর, দস্তা এবং জৈব উজ্জীবক সার। উপরি প্রয়োগ কয়েকভাবে করা হয়। যথা-ছিটিয়ে, পার্শ্বে, চারপাশে, কাদার গোলকে করে, বড়ি করে, , প্রবিষ্ট করে। আবার ছিটিয়ে প্রয়োগ দু'ভাবে করা হয় (সরাসরি উপর থেকে ছিটিয়ে এবং পাতায় স্প্রে করে)। ফসল বপন/রোপণ (চারা বা বীজ ছিটিয়ে/সারিতে/মাদাতে) কীভাবে করা হয়েছে তার ওপর সারের পরিমাণও দক্ষভাবে প্রয়োগ নির্ভর করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। তরল, দানাদার ও পাউডার সার, ২। ডালা ৩। স্প্রে মেশিন, ৪। সার মাপার যন্ত্র ৫। কাঠি ৬। নিড়ানি, ৭। কোদাল ৮। খাতা কলম
কাজের ধাপ ১. বিভিন্ন ধরনের সার নিতে হবে।
২. ৩৩ নং ব্যবহারিক পাঠে সবজিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সময় উল্লেখ আছে তা দেখে নিতে হবে।
৩. রাসায়নিক সার ঘন মাত্রার সার। তাই শেকড়ের সাথে যাতে না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
৪. মাটিতে রস না থাকলে সার দেয়া উচিত হবে না। মাটির রস পরীক্ষা করে নিতে হবে।
৫. বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা গাছের পাতা ভেজা থাকলে সে সময় সার দেয়া উচিত নয়। সার প্রয়োগের আগে মাঠ পরিদর্শন ও আবহাওয়ার অবস্থা দেখে নিতে হবে।
৬. সার উপরিপ্রয়োগ হিসেবে যে পদ্ধতিতেই দেওয়া হাকে, তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
৭. প্রখর রোদের সময় সার উপরি প্রয়োগ করা উচিত নয়। সার প্রয়োগের আগে সূর্যের প্রখরতা দেখে নিতে হবে।
৮. সকল অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লিখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- রোগজীবাণু উদ্ভিদের শরীরে প্রবেশ করে কোষ নষ্ট করে ও খাদ্যরস গ্রহণ করে। এতে উদ্ভিদের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যা রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। যেমন-গোড়া পঁচা, পাতার দাগ, ক্ষ্যাব, পাউডারি মিলডিউ, মোজাইক, শুকনা পঁচা ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। রোগের নমুনা, ২। চাকু ৩। আতশীকাঁচ ৪। ট্রে, ৫। ফরসেপ ৬। খাতা পেন্সিল ।
কাজের ধাপ
১. রোগের বর্ণনা দেখে জমিতে গিয়ে ফসলের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।
২. নমুনা সংগ্রহের সময় খুব সাবধানে চাকু/কাঁচি দিয়ে কেটে ট্রেতে নিতে হবে।
৩. সংগৃহীত নমুনাটি ছায়ায় রেখে সতেজ থাকা অবস্থায় রোগের লক্ষণ দেখতে হবে।
গাজর | স্ক্যাব | গাজরের গায়ে বিভিন্ন আয়তন ও আকৃতির গুটি বসন্তের ন্যায় দাগ সৃষ্টি হয়। কোনগুলো অগভীর, কোনগুলো ভাসা অবস্থা। দাগের কিনারা অসমান, মাঝে মাঝে অনেকগুলো দাগ একত্রে হয়ে বড় আকার ধারণ করে। আক্রান্ত স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। |
কাঁকরোল | পাউডারি মিলডিউ | আক্রান্ত পাতার উপর সাদা সাদা পাউডারের গুড়ার ন্যায় পদার্থ | বিদ্যমান। এই সাদা গুড়ো দ্বারা আবৃত থাকে। বয়স্ক পাতায় বেশি | দাগ বিলম্বে বাদামী রঙ ধারণ করে। আক্রমণের তীব্রতায় পাতা মারা যায়। |
ধুন্দল | ঐ | ঐ |
কাঁকরোল | মোজাইক | পাতায় হলদে ও গাঢ় সবুজ রঙের ছাপে ছোট ছোট মিশ্রণ সৃষ্টি হয়। তীব্র আক্রমণে পাতা হলদে হয়ে যায় এবং শিরা নিচের দিকে কুঁকড়ে বেঁকে যায়। ফুল ও ফল ধরা কমে যায় এবং ফলের বিকৃতি ঘটে । |
পুঁইশাক | পাতার দাগ | পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। দাগগুলে গোলাকার ও তার কিনারা উজ্জল লাল বর্ণের হয়। পরবর্তীতে দাগের মধ্যে শুকিয়ে ছিদ্র হয়ে যায়। |
গীমা কলমি | গোড়া পচা | |
লতিরাজ কচু | পাতার মড়ক | পাতার উপর বেগুনি হতে বাদামি রঙের গোলাকার দাগ পড়ে। পরে দাগ বৃদ্ধি পেলে পাতা ঝলসে যায়। ৩-৪ দিন বৃষ্টিতে এর মাত্রা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। |
মুখী কচু | শুকনা পচা | আক্রান্ত মুখী কচুর খোসা একটু ডাবা, আক্রান্ত স্থান শুকনা ও শক্ত, | কুঁচকানো হয়। কুচকানো স্থানে ফাঁপা হয়। |
৪. রোগের লক্ষণের সাথে নমুনা দেখে মিলিয়ে তা চিহ্নিত করে খাতায় বর্ণনাসহ লিখতে হবে।
৫. প্রতিটি সবজির নমুনা রোগের লক্ষণের সাথে মিলিয়ে খাতায় লিখতে হবে।
৬. নমুনাগুলোকে রোগের লক্ষণের সাথে মিলানোর পর তা পুঁতে/পুড়ায়ে নষ্ট করতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- রোগের আক্রমণে সবজির ফলন হ্রাস পায় এবং গুণগত মান কমে যায়। ফসলের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের রোগনাশক সরকার রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে থাকে যা বিভিন্ন কোম্পানী বাজারজাত করছে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. রোগনাশকের প্যাকেট বা বোতল
২. মাপার যন্ত্র
৩. চামচ
৪. পানি
৫. স্প্রেয়ার/ডাষ্টার
৬. বালতি
৭. হ্যান্ড গ্লোবস
৮. মাক্ষ
৯. ছোট সাদা কাগজ
১০. গামবুট
১১. এ্যাপ্রোন
১২. চশমা
১৩. বিকার/সিলিন্ডার/পিপেট
কাজের ধাপ
রোগনাশক শনাক্তকরণ
১. রোগনাশকের প্যাকেট/বোতল র্যাকে/ টেবিলে এমনভাবে সাজিয়ে রাখুন, যাতে টেবিলের সামণে দাঁড়ালে সহজে প্যাকেটে/বোতলের লেখা দেখা যায়।
২. রোগনাশক নাড়াচাড়ার আগে মাক্স, হ্যান্ড গ্লোবস, গামবুট, এ্যাপ্রোন ও চশমা পরতে হবে।
৩. লেবেল কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা যাবে তা দেখে নিতে হবে।
৪. লেবেলে রোগনাশক ব্যবহারের মাত্রা লেখা থাকে তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
৫. প্যাকেট/বোতলের লেখা পড়ে, তার নাম, ভৌতিক অবস্থা ও রঙ পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লিখতে হবে।
৬. লেবেলে কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা যাবে তা দেখে নিতে হবে। লেবেলে রোগনাশক ব্যবহারের মাত্রা লেখা থাকে তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
রোগনাশকের মাত্রা নির্ধারণ
১. প্যাকেটের বোতলের গায়ে লেখা মাত্রা দেখে ব্যালেন্স / বিকার/ সিলিন্ডারের সাহায্যে মেপে নিতে হবে। পাউডার/দানাদার হলে ব্যালেন্সের ওপর সাদা কাগজ দিয়ে তাতে রোগনাশক ওজন করে নিতে হবে তরল হলে পিপেট/দাগ কাটা সিলিন্ডার/ড্রপার দ্বারা রোগনাশক মেপে নিতে হবে।
২. রোগনাশক মাপার পরে বালতিতে নির্দেশনা মোতাবেক পরিষ্কার পানি নিয়ে তাতে রোগনাশক ঢালতে হবে। তারপর বাঁশের/কাঠের লাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করে মেশাতে হবে।
৩. বালতিতে রোগনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রেয়ার মেশিনে সাবধানে ঢেলে মুখ বন্ধ করে পাম্প করতে হবে।
রোগনাশক দক্ষভাবে ব্যবহার
১. রোগনাশক ব্যবহারের জন্য মাপা, মিশ্রণ তৈরি, স্প্রেয়ারে ঢালা ইত্যাদি কাজ করার পূর্বে গামবুট, এ্যাপ্রোন, মুখোশ ও হ্যান্ড গ্লোবস পরতে হবে।
২. এ্যাপ্রোন না থাকলে গায়ের স্বাভাবিক কাপড়ের উপর ঢিলে-ঢালা বিশেষ তৈরি পোশাক পরতে হবে।
৩. বৃষ্টি বা মেঘলা অবস্থায় স্প্রে করা যাবে না।
৪. বাতাসের অনুকূলে স্প্রে করতে হবে।
৫. স্প্রে করার সময় স্প্রে নজল যতদূর সম্ভব নিচু করে ধরতে হবে।
৬. প্রখর রৌদ্র বা ঝড়ো বাতাসের সময় স্প্রে করা যাবে না।
৭. রোগনাশকের খালি প্যাকেট/বোতল মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
৮. স্প্রে করার পর সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফেলতে হবে এবং মেশিনটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ডাঙ্গায় রেখেই ধুতে হবে।
৯. কাজের প্রতিটি ধাপ খাতায় লিখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- সবজির পোকা শনাক্তকরণের জন্য কীলিং জারসহ সবজি ক্ষেতে যেতে হবে। কলিং জার না থাকলে সাধারণভাবে হাত জাল দিয়ে বা সুইপ নেটের সাহায্যে পোকা সংগ্রহ করে সাবধানে পলিব্যাগে ঢুকাতে হবে, যাতে পোকা মাকড়ের কোন অংগ ভেঙ্গে না যায়। পোকা লাফালাফি করায় হাত-পা ভেংগে যায়, পাখা দুমড়ে মুচড়ে যায়, এন্টেনা ভেঙ্গে যায় । ফলে পোকা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে ও বিকালে পোকা ধরা উত্তম। প্রখর সূর্যতাপ, খুব ঠান্ডা বা ঝড়বৃষ্টির সময় পোকা ধরা উচিত নয়। কেননা এ সময় পোকা ধরলে পলিথিনের গায়ে লেপ্টে যায়। তবে পোকা ধরার সাথে সাথে কীলিং জারে দেয়া সবচেয়ে ভালো।
পোকা ধরে শনাক্ত করে হার্বোরিয়াম শিটে পোকার নাম ও আক্রান্ত ফসলের নাম লিখে তার কিছুটা উপরে স্বচ্ছ টেপ বা স্বচ্ছ গাম দ্বারা পোকাকে আটকে দিতে হয়। হার্বোরিয়াম শিটে পোকা গাম দিয়ে বা ছোট ভায়ালে পুরে পেট দিয়ে আটকে দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ হার্বোরিয়াম শিটটিতে (২৯ সেমি. × ৪২ সেমি.) পোকা স্থাপন করে সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়ে রাখতে হয়। তাতে বৎসরাধিককাল পোকা সংরক্ষণ করা যায়। সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়ানোর সময় ন্যাপথেলিন দেয়া যায়।
পোকা ধরা বা মারা অনেক রকমের ফাঁদ আছে, যার অনেকগুলোই সহজে তৈরি করা যায়। এক এক ধরনের পোকা মারা বা ধরার জন্য এক এক রকমের ফাঁদ কার্যকর। যেমন- আলোর ফাঁদ, রস ফাদ, ফেরোমোন ব্যবহৃত ফাঁদ, বিষ ফাঁদ ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. পোকা ধরার হাতজাল (সুইপিং নেট) ২. স্বচ্ছ পলিথিন ব্যাগ ৩. রাবার ব্যান্ড ৪. চিমটা (ফরসেপ) ৫. কিলিং জার ৬. আতশ কাঁচ ৭. ভায়ালরাবার টিউব ৮. পাষ্টিকের ছোট গামলা ৯. সাবান গোলা পানি ১০. বিভিন্ন ফাঁদ (ফেরোমোন, বিষ টোপ) ১১. পেট্রিডিস | ১২. ওয়াচ গাস ১৩. কাঁচি ১৪. গাম ১৫. স্বচ্ছ পট ১৬. বাঁশের খুঁটি ১৭. পোকা লেবেলিং কার্ড ১৮. হার্বোরিয়াম কীট ১৯. সেলোফিন পেপার ২০. খাম (মথ রাখার জন্য) ২১. এ্যাসপিরেটর। |
১. পোকা ধরার জাল নিয়ে সবজি ক্ষেতে যেতে হবে।
২. জাল দিয়ে সুইপ করে পোকা ধরে স্বচ্ছ পলিব্যাগে বা কিলিংজারে নিয়ে তাতে ক্লোরোফর্ম দ্বারা ভেজাতুলা দিয়ে পাত্রের মুখ কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে দিলে পোকা মারা যাবে ।
৩. এরপর পলিব্যাগ/জার হতে পোকা বের করে ওয়াচ গ্লাসের উপর রেখে প্রত্যক্ষ করে পোকাগুলোকে শনাক্ত করতে হবে।
৪. যে পোকা ছোট ও ধীর গতিতে চলে সেক্ষেত্রে এসপিরেটরের সাহায্যে পোকা ধরে ভায়ালে নিতে হবে। মথ হলে খামে পুরে নিতে হবে।
৫. হার্বোরিয়াম শিটে পোকা স্থাপনের আগে শুকিয়ে নিতে হবে। পোকা শুকাতে ৭/৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগে । অনেক পোকা শুকানোর পর হাত পা শক্ত হয়ে যায়। তাই পেট্রিডিসে ০.৫-১.০ সেমি. পুরু ভিজা বালি দিয়ে তাতে ৩-৪ ফোটা কার্বোলিক এসিড দিয়ে ব্লটিং পেপার বিছাতে হবে। এর উপর পোকা রেখে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ রাখলে আস্তে আস্তে পোকাটি নরম হবে। প্রজাপতি/মথজাতীয় পোকার পাখা ছড়িয়ে রাখতে হয়। সেজন্য স্প্রেডিং বোর্ডে রেখে মাথার নিচে পাখার সংযোগস্থলে (থোরাক্স) ইনসেক্ট পিন গেঁথে দিতে হবে। পাখাগুলোকে ফরসেফ দিয়ে টান করে পাখার উপর ছোট কাগজের টুকরো স্থাপন করে কাগজের দুই মাথায় পিন দিয়ে চেপে কয়েকদিন রাখতে হবে।
৬. তৈরিকৃত ও শনাক্তকৃত নমুনাগুলোকে হার্বোরিয়াম শিটে পিন/ভায়ালে টেপ লাগিয়ে/শক্ত টুকরা কাগজে গাম দিয়ে পিনে আটকিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি নমুনার নিচে লেবেলিং করতে হবে।
পোকার নামঃ পোষাকের নামঃ সংগ্রহের স্থান
সংগ্রহের তারিখঃ সংগ্রহকারী : ফেরোমোন ফাঁদ
(ক) স্বচ্ছ প্লাষ্টিক বৈয়াম নিয়ে তার দুইদিকে ত্রিকোণাকার করে কেটে ফাঁকা করতে হবে।
(খ) বৈয়ামের ঢাকনার মাঝখানে ছিদ্র করে গুনা (তার) ঢুকিয়ে সেক্স ফেরোমোন (তুলা ও সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে ফেরোমোনকে গুটি বানিয়ে রাবার নলের মধ্যে ভরে দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে। প্রতি গুটিতে ২০ ফোটা ফেরোমোন মাখাতে হবে।
(গ) বয়েমের নিচের অংশে ৩-৪ সেমি. সাবান মিশ্রিত পানি রাখতে হবে।
(ঘ) এভাবে তৈরি বয়েমটির যে দুইদিকে কাটা নেই সেদিকে দুটি বাঁশ দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এভাবে বানানো ফাঁদে পোকা আকৃষ্ট হয়ে পানিতে পড়ে মারা যাবে।
(ঙ) ফাঁদ প্রধানত বেগুন ক্ষেতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে শুধু পুরুষ মাছিই আকৃষ্ট হয় এবং মারা যায়।
৭. বিষটোপ
(ক) লাউ, কুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, ধুন্দল, খিরা, পটলজাতীয় ক্ষেতে ফলের মাছি পোকা দমনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
(খ) ছোট মাটির সানকি বা নারকেলের মালায় ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টিকুমড়া (কুচি কুচি করে কেটে তা থেঁতলে ও পিষে) কাই করে নিতে হবে।
(গ) কাই করা মিষ্টি কুমড়ার সাথে ১২ ফোটা ডিডিভিপি/সামান্য ডিপটেরেক্স নিয়ে ৫০-১০০ মিলি পানি দিতে হবে।
(ঘ) ৩-৪টি গিটওয়ালা বাঁশ নিয়ে উপরের ১-২ টা গিট পর্যন্ত সমানভাবে ৩ ভাগে ফাঁড়তে হবে।
(ঙ) বাঁশটি সবজি ক্ষেতে মাচার চাইতে অন্তত ১৫-২০ সেমি. উঁচু করে পুঁতে ফাঁড়া মাথা ফাঁক করে বিষ মিশ্রিত সানকিটি সেখানে বসাতে হবে।
(চ) সানকিটি যাতে পড়ে না যায়, সেজন্য সুতলি দিয়ে ফাঁড়া বাঁশের মাথা টান করে বেঁধে দিতে হবে। এরপর বাঁশের মাথার উপর একটা ঢাকনা দিতে হবে, যাতে বিষটোপের পাত্র ও ঢাকনার মধ্যে অন্তত ১০ সেমি. ফাঁক থাকে।
(ছ) বিষটোপ শুধু পুরুষ মাছির তুলনায় স্ত্রী মাছি বেশি আসে। স্ত্রী মাছিরাই এসব সবজিতে ডিম পেড়ে নষ্ট করে । তাই স্ত্রী মাছি মারা গেলে সবজি ক্ষেত রক্ষা পায় ।
(জ) কাজের প্রতিটি ধাপ খাতায় লিখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য হরমোন- ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন ও আধুনিক কলাকৌশলের মধ্যে হরমোনের ব্যবহার ও হাইব্রিড বীজ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। হরমোন এক প্রকার জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যা উদ্ভিদে কিছু কিছু স্থানে অল্প পরিমাণে উৎপন্ন হয় এবং সমস্ত শরীরে প্রবাহিত হয়ে শরীরবৃত্তীয় অনেক প্রকারের কাজ করে থাকে। হরমোন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশে অর্থাৎ কাণ্ডের শীর্ষে, মুলের অগ্রভাগে এবং যেখান হতে শাখা প্রশাখা উৎপত্তি হয় সে সমস্ত স্থানের কোষে একপ্রকার বৃদ্ধিকারী পদার্থ (হরমোন নিঃসৃত হয় ।
হরমোন কৃষি ক্ষেত্রে ফসলের বৃদ্ধি ও পুষ্টি ঘটায়।
যেমন- ১. গাছের কলমে নতুন মূল গজাতে সাহায্য করে।
২. ক্যামবিয়াম স্তরের সৃষ্টি করে ও শাখা প্রশাখা বিস্তারে সহায়তা করে।
৩. গাছের ক্ষতস্থান পূরণে সাহায্য করে।
৪. আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. আলুর দ্রুত অঙ্কুরোদগম বিঘ্নিত করে।
৬. দ্রুত পুষ্প ধারন ও ফলে পরিণত হতে সাহায্য করে।
৭. গাছে শস্য ধারন ক্ষমতা বাড়ায়।
উদ্ভিদের বৃদ্ধি, প্রজনন, ফুল, ফল ধারণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ হয় যে সমস্ত জৈব রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা তা হলো- (ক) অক্সিন (খ) জিবারেলিন গ) কাইনিন বা সাইটোকাইনিন, ঘ) ডরমিন ঙ) ইথিলিন ।
হাইব্রিড- বৈসাদৃশ্যমূলক গুণসম্পন্ন দুইটি একই জাতীয় ফসলের মধ্যে সংকরায়ন করে প্রথমে এমন এফ-১) উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার গুণাবলি হবে উন্নত ধরনের। যেমন- সতেজ, পীড়ন সহিষ্ণুতা, ফলন ও
দানার গুণ বেশি ইত্যাদি। যখন এফ-১ উন্নত ধরনের হয় তখন তাকে শংকর সাবল্য বলে। শংকর সাবল্য প্রকাশ করা হয়, সেই ফসলের ফলন, গাছের বৈশিষ্ট্য, ফলের সংখ্যা ও আকার ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। হরমোন ২। কাঁচি/চাকু ৩। বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষেত ৪। স্প্রে মেশিন ৫। বালতি ৬। পানি ৭। হাইব্রিড বীজ কাজের ধাপ
হরমোন
১. ফসলের ধরন (পাতাজাতীয়, ফলজাতীয়, কন্দজাতীয়) অনুসারে হরমোন নির্ধারণ করতে হবে।
২. উদ্ভিদের শেকড় গজানোর কাজে, ফুল থেকে ফল ধারনের কাজে, আগাছা নিধনে অক্সিন হরমোন প্রয়োগ করতে হবে।
৩. দ্রুতবর্ধনশীল কাণ্ডের অগ্রভাগ ভেংগে বা কেটে দিলে তার নিচের অংশে অক্সিন ক্রিয়াশীল হয়ে অনেক মুকুল ও শাখা গজায়ে দিবে। এ কাজটি লতানো সবজিতে, টমেটো, পেঁপে গাছের মাথা কেটে বা ভেঙ্গে দিয়ে প্ৰমাণ করা যাবে।
৪. গাছের বৃদ্ধি ধীর হলে হরমোন জিবারেলিন ব্যবহার করে গাছকে দীর্ঘ ও অনেক বড় আকার করা যাবে। বীজ অঙ্কুরোদগম ও গাছের সুপ্তাবস্থা দূর করতে এটি ব্যবহার করা যাবে।
৫. উদ্ভিদের মূল উন্নত করতে বেশি পরিমাণ অক্সিন ও অল্প পরিমাণ কাইনিন ব্যবহার করতে হবে।
৬. মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে, স্বল্প দিবসীয় গাছের ফুল ফোটা ত্বরান্বিত করার জন্য ডরমিন হরমোন ব্যবহার করতে হবে।
৭. ছায়াতে জন্মানো চারায় ইথিলিন চারাকে স্ফীত করে। ফুল ফোঁটাতে ও ফল পাকাতে ইথিলিন ব্যবহার করা যাবে।
হাইব্রিড বীজ
১. হাইব্রিড বীজ বপন। রোপণের জন্য নির্দিষ্ট সময় জেনে নিতে হবে। কেননা বৃদ্ধি পর্যায়ে, ফুল ফেঁটা, ফল ধারন ইত্যাদি পর্যায়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা না থাকলে ফলনে ভীষণ প্রভাব পড়বে ।
২. হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে হলে মাটি খুব উর্বর হতে হবে।
৩. হাইব্রিড বীজ দ্বারা ফসল জন্মানোর পর সেই ফসল হতে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য বীজ হিসেবে রাখা যাবে না।
৪. হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করে ফসল ফলাতে হলে সকল ধরনের পরিচর্যা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে করতে হবে, অন্যথা ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
৫. সব কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে খাতায় লিখতে হবে।
আরও দেখুন...