যেসব ফাইবার প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়নি কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়, এ সমস্ত ফাইবারকে কৃত্রিম ফাইবার বলে। ঘন থকথকে জেলির মতো রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা অত্যধিক চাপে খুব সূক্ষ্ম অসংখ্য ছিদ্রবিশিষ্ট নজেলের মধ্য দিয়ে বের করে ড্রাই, ওয়েট অথবা মেন্ট পদ্ধতিতে কৃত্রিম ফাইবারের ফিলামেন্ট সংগ্রহ করা হয়।
কৃত্রিম আঁশের উৎসসমূহ
কৃত্রিম বা সিনথেটিক ফাইবারের মূল উৎসই পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ও কয়লা। পেট্রোলিয়াম থেকে বায়বীয়, তরল ও কঠিন হাইড্রো কার্বন পাওয়া যায় যা দ্বারা কৃত্রিম আঁশ তৈরি করা সম্ভব। তবে কোলটার থেকে বৃহৎ পরিমাণে অ্যারোমেটিক কম্পাউন্ড পাওয়া যায়।
কৃত্রিম আঁশের বৈশিষ্ট্য
প্রাকৃতিক আঁশের মতো কৃত্রিম আঁশও প্রায় একই গুণাগুণসম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ কৃত্রিম আঁশে প্রাকৃতিক আঁশের থেকে সামান্য আলাদা ।
* যে কোনো রাসায়নিক পদার্থের সাথে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।
* মাইক্রো অর্গানিজম অর্থাৎ পোকামাকড়ের প্রতি প্রতিরোধক্ষমতা ভালো।
* দাহ্যতা কম।
* উচ্চ ইলাস্টিক গুণসম্পন্ন।
* ক্রিজিং-এ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।
* ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
কৃত্রিম ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of synthetic fibre)
সম্পূর্ণ কৃত্রিম ফাইবারকে এর কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১) আংশিক কৃত্রিম ও
২) পূর্ণ কৃত্রিম ।
আংশিক কৃত্রিম (Partial synthetic fibre)
প্রাকৃতিক বিভিন্ন সেলুলোজিক পদার্থকে অবস্থা ও গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটিয়ে যে নতুন ফাইবার তৈরি করা হয় তাকে আংশিক কৃত্রিম ফাইবার বলে। উদাহরণ- ভিসকোস রেয়ন, কিউপ্রোমোনিয়াম রেয়ন, অ্যাসিটেড রেয়ন, ট্রাই অ্যাসিটেড রেয়ন ইত্যাদি।
পূর্ণ কৃত্রিম (Fully synthetic fibre)
সম্পূর্ণ কৃত্রিম অর্থাৎ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থকে পলিমারাইজেশন করে ১০০ ভাগ কৃত্রিম ফাইবার তৈরি করা হয়। উদাহরণ- নাইলন, পলিয়েস্টার, একরাইলিক, স্পানডেক্স।
কৃত্রিম ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of synthetic fibre) -
কৃত্রিম ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ নিম্নের ছক আকারে দেওয়া হলো
নবম শ্রেণিতে ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ ৩ ও ৪ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত দেয়া হয়েছে।
ফিলামেন্ট তৈরির স্পিনিং পদ্ধতি (Spinning system of making filament)
ফিলামেন্ট তৈরির জন্য ফিলামেন্টের কাঁচামাল রাসায়নিক পদার্থকে প্রথমে গলিত ঘন থকথকে জেলির মতো পদার্থে রূপান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে অত্যধিক চাপে স্পিনারেট নামক ডিভাইসের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। যেমন- ওয়েট, ড্রাই ও মেন্টেড পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। যে ডিভাইসের মাধ্যমে অত্যধিক চাপে গলিত পদার্থকে ফিলামেন্ট রূপে রূপান্তরিত করা হয় তাকে স্পিনারেট বলে। যে পদ্ধতিতে এই কৃত্রিম ফিলামেন্ট তৈরি ও সংগ্রহ করা হয় তাকে বলা হয় স্পিনিং পদ্ধতি। এটা সাধারণ পদ্ধতি। শর্ট স্ট্যাপল অথবা লং স্ট্যাপল স্পিনিং পদ্ধতির মতো নয়। প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে সুতা পাকানোর পদ্ধতিকে সাধারণ স্পিনিং বলা হয় এবং কৃত্রিম ফাইবার বা আঁশ তৈরি পদ্ধতি অর্থাৎ স্পিনিং সে অর্থে ভিন্নধর্মী। কখনো কখনো ফিলামেন্ট স্পিনিংকে কেমিক্যাল স্পিনিংও বলা হয়। যেহেতু বিভিন্ন কেমিক্যাল থেকে ফিলামেন্ট তৈরি করা হয় সেহেতু এ ধরনের স্পিনিংকে কেমিক্যাল স্পিনিং বলা হয়।
স্পিনারেট (Spinnerate)
ফিলামেন্ট তৈরির জন্য স্পিনারেট স্পিনিং মেশিনারির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্পিনারেটের মধ্যে যে ছিদ্র থাকে তা এতই সূক্ষ্ম যে তার ব্যাসার্ধ মানুষের চুলের ব্যাসার্ধের থেকেও কম। সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো প্লাটিনাম বা এ জাতীয় ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরি হয়। যাতে উক্ত ছিদ্রগুলো ফিলামেন্টের ঘর্ষণের ফলে কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। স্পিনারেটগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি স্পিনারেটে ৩০০ -এর মতো ছিদ্র থাকে। আবার যেসব স্পিনারেট স্ট্যাপল ফাইবার তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়, তাতে প্রায় ৩০০০ -এর মতো ছিদ্র থাকে। কারণ, স্ট্যাপল ফাইবার তৈরির জন্য যত বেশি ফিলামেন্ট একসংঙ্গে স্পিনারেট থেকে বের হবে তত বেশি স্ট্যাপল ফাইবার একসংঙ্গে পাওয়া যাবে। স্পিনারেট থেকে ফিলামেন্ট বের হওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনমতো দৈর্ঘ্যের স্ট্যাপল ফাইবার কেটে নেওয়া যায়। মনোফিলামেন্টের জন্য স্পিনারেটে একটি মাত্র ছিদ্র থাকে এবং মাল্টিফিলামেন্টের জন্য স্পিনারেটে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে।
ফিলামেন্ট তৈরির জন্য স্পিনিং পদ্ধতির প্রকারভেদ ফিলামেন্ট তৈরির জন্য স্পিনিং পদ্ধতি ৩ প্রকার। যথা-
১) ওয়েট স্পিনিং (Wet spinning )
২) ড্রাই স্পিনিং (Dry spinning )
৩) মেল্ট স্পিনিং (Melt spinning )
ওয়েট স্পিনিং (Wet spinning)-
মানুষের তৈরি আঁশ অর্থাৎ কৃত্রিম আঁশ তৈরির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে পদ্ধতি সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই ওয়েট স্পিনিং (Wet spinning)। এ পদ্ধতি সর্বপ্রথম রেয়ন ফাইবারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতি বর্তমানেও ব্যবহার হচ্ছে। প্রথমে কৃত্রিম ফাইবার তৈরির পলিমারকে গলিয়ে ঘন ভিসকোস আকারে নেওয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে উচ্চ চাপে স্পিনারেটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। স্পিনারেটের অসংখ্য ছিদ্রের মধ্য দিয়ে উক্ত পলিমারকে ফিলামেন্ট আকারে বের করার সাথে সাথে একটি কেমিক্যাল বাথে ফেলা হয় এবং ফিলামেন্টগুলো উক্ত কেমিক্যাল বাথে কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে শক্ত হয়ে সুতার আকারে রূপ নেয়। কেমিক্যাল বাথকে কোগুলেটেড বাথও (Coulugated bath) বলা হয়। কোগুলেটিং বাথে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ থাকে যার সংস্পর্শে নরম ফিলামেন্ট আসার সাথে সাথে শক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ধোয়া ও শুকানোর পর স্কুলে জড়ানো হয়।
ড্রাই স্পিনিং (Dry spinning )
এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় তরল পলিমার / দ্রবণ স্পিনারেটের ছিদ্র দিয়ে অত্যধিক জোরে পাম্প করে বের করার পর ওয়েট স্পিনিং -এর মতো কেমিক্যাল বাথের পরিবর্তে গরম এয়ার চেম্বারের মধ্য দিয়ে টানা হয়। ফলে স্পিনারেট থেকে বের হওয়া নরম ফিলামেন্টগুলো গরম বাতাসের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে জলীয় বাষ্প বের করে দিয়ে শক্ত হয়ে যায়। পরে উক্ত ফিলামেন্টগুলো টুইস্টিং ও ওয়াইন্ডিং করে সংগ্রহ করা হয়। স্ট্যাপল ফাইবারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কেটে টুকরো টুকরো করে সংগ্রহ করা হয়।
মেন্ট স্পিনিং (Melt Spinning )
সর্বশেষ ও তৃতীয় যে পদ্ধতিতে কৃত্রিম ফাইবার প্রস্তুত করা হয় তাই মেন্ট স্পিনিং। এ পদ্ধতিতে চিপস অথবা পলিমারকে গলিয়ে স্পিনারেটের ছিদ্র দিয়ে পাম্প করে বের করা হয়। এবং এয়ার চেম্বারের মধ্য দিয়ে ঠান্ডা জমাট বাঁধিয়ে শক্ত করে ফিলামেন্টগুলো পূর্বের মতো সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতি সরাসরি প্রক্রিয়া এবং সবচেয়ে কম খরচ। এতে বাথ, কোনো দ্রাবক বা ধোয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না । উপরোক্ত স্পিনিং পদ্ধতি ছাড়াও আর কিছু স্পিনিং পদ্ধতি আধুনিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- বাইকম্পোনেন্ট স্পিনিং, বাইকনস্টিটিয়েন্ট স্পিনিং, ফ্লিম স্পিনিং পদ্ধতি ইত্যাদি ।
নাইলন হল পলি জ্যামাইড ফাইবার। অ্যামাইড নামক রাসায়নিক পদার্থের পলিমারাইজেশন করে পলিঅ্যামাইড ফাইবার গঠন করা হয়।
- CO-NH -
জামাইড
পলিঅ্যানাইত ফাইবারের প্রকার (Classification of Polyamalde fibre)
সাধারণত আমরা দুই ধরনের পলিঅ্যামাইড ফাইবার দেখতে পাই।
১) নাইলন ৬.৬ ও
২) নাইলন ৬
উপরোক্ত দুই ধরনের পলিঅ্যামাইড ফাইবার ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে নিম্নলিখিত ফাইবার উৎপাদিত হচ্ছে।
১) নাইলন ১১
২) নাইলন 6.10.
নিম্নে নাইলন ৬.৬ ও নাইলন ও পলিঅ্যামাইড ফাইবারের বর্ণনা দেওয়া হলো ।
নাইলন ৬.৬ (ONylon 6.6):
নাইলন ৬.৬ কে পলিঅ্যামাইড ৬.৬৪ বলা হয়। নাইলন ৬.৬ -এর রাসায়নিক নাম পলিহেক্সামিথিলিন
অ্যাডোপামাইড (Polyhexamethylene Adopamide) ।
- C ONH{CH2)=NHCO{CH2 – CONH(CH2)_NHCO – (CH2)CO
পলিহেব্রামিথিলিন অ্যাডোপ্যামাইড
উপরোক্ত ফাইবার দুইটি রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণে তৈরি হয়। যেমন- হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ও অ্যাডিপিক অ্যাসিড।
নাইলনকে পৃথিবীর সর্বপ্রথম কৃত্রিম ফাইবার বলা হয়। নাইলন ফাইবার উচ্চশক্তিসম্পন্ন। ইহা ছাড়াও ঘর্ষণজনিত শক্তি নষ্ট হয় না বললেই চলে। ফাইবারের স্থিতিস্থাপকতা গুণও খুব ভালো। ইহা ছাড়া সক্স ও ফুল তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।
নাইলন ৬.৬ প্রস্তুত প্রণালি :
নাইলন ৬.৬ প্রস্তুতপ্রণালি কতগুলো ধাপে সম্পন্ন হয়। নিম্নে ধাপগুলো দেওয়া হলো।
কাঁচামাল : কাঁচামাল হিসেবে হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ও অ্যাডিপিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়।
এডিপিক অ্যাসিড প্রস্তুত প্রণালি
কোলটার (Coal-tar) অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম হতে প্রথমে ফেনল (phenol) সংগ্রহ করা হয়। এই ফেনলকে হাইড্রোজেনেশন করে সাইক্লোহেক্সানল ও পরে অক্সিডেশন করে অ্যাডিপিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়।
হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন প্রস্তুত প্রণালি
উপরোক্ত অ্যাডিপিক অ্যাসিডের সাহায্যে হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন প্রস্তুত করা হয়। অ্যাডিপিক অ্যাসিড ক্যাটালিস্ট (ফসফরিক অ্যাসিড ও বোরন সালফেট) এর উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়ার সাথে ডিহাইড্রেট হয়ে অ্যাডিপোনাইট্রাইল তৈরি করে। পরে এই অ্যাডিপোনাইট্রাইল নিকেলের উপস্থিতিতে রিডিউজড হয়ে হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন গঠন করে।
পলিমারাইজেশন ও উৎপাদন
হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ও অ্যাডিপিক অ্যাসিড বিক্রিয়া করে মিথাইল অ্যালকোহলের উপস্থিতিতে নাইলন সল্টকে একটি বন্ধ পাত্রে তাপ দেওয়া হয়। ফলে নাইলন সল্ট পানি বের করে দেয় ও হেক্সামিথিলিন অ্যাডিপ্যামাইড গঠন করে যা পরবর্তীতে পলিমারাইজেশন হয়ে আরও পানি বের করে দেয় ও নাইলন পলিমার গঠন করে। পরে এই পলিমারকে ২৮° সে. তাপমাত্রায় ৮ ঘণ্টা যাবৎ তাপ দেওয়া হয় ফলে এটা একবার গলে ও জমাট বেঁধে সম্পূর্ণ পলিমারাইজেশন শেষ করে। এই পলিমারগুলিকে প্রথমে রিবন আকারে ও পরে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চিপস -এ টুকরো টুকরো হয় এবং স্পিনিং সেকশনে প্রেরণ করা হয়।
নাইলন ৬.৬ স্পিনিং
নাইলন গলানোর পর স্পিনিং করা হয় বলে একে মেল্ট স্পিনিং বলা হয়। প্রথমে একটি হপারে নাইলন চিসগুলিকে রাখা হয় ও পরে একটি পাত্রে নেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি ছিদ্রযুক্ত প্লেট আছে। যাকে বৈদ্যুতিক তাপ দেওয়া হয়। তাপে নাইলন চিসগুলি গলে ছিদ্র দ্বারা ভ্যাসেলের মধ্যে অর্থাৎ নিচে আসে। লক্ষ্য রাখতে হবে এ অবস্থায় যাতে সলভেন্টসমূহ অক্সিজেন অথবা বাতাসের সংস্পর্শে না আসে। উক্ত গলিত নাইলনকে ২৮° সে. তাপমাত্রায় পাম্পের সাহায্যে ফিল্টার পেট হয়ে স্পিনারেটে আসে। (স্পিনারেটটি ০.২৫" মোটা ২-৩" ব্যাস এবং ০.০১” ব্যাস বিশিষ্ট ২৪টি ছিদ্রযুক্ত) এবং চাপের কারণে স্পিনারেট থেকে বের হয়ে যত শিগগির সম্ভব এটা কুলিং জোন এর মধ্য দিয়ে আসার সময় শক্ত হয়ে ফিলামেন্টে রূপ নেয়। ফিলামেন্ট সংগ্রহের গতি ১২০০ মিটার/মিনিট।
ড্রইং এবং ওয়াইন্ডিং
ড্রইং ও ওয়াইন্ডিং -এ ফিলামেন্টগুলিকে একটি ৭০° সে. তাপমাত্রায় স্টিম চেম্বারের মধ্য দিয়ে আনা হয় এবং বিভিন্ন গাইডের মাধ্যমে ববিনে জড়ানো হয়।
নাইলন ৬.৬ এর ব্যবহার
১) প্যারাসুট কাপড়, কর্ড, হারনেস কর্ড, সেলাই সুতা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
২) ল্যাডিজ হুজ (Hose) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৩) দড়ি, মটর ও অ্যারোপ্লেনের টায়ার কর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪) পিভিসি -এর উপর নাইলনের প্রলেপ দিয়ে তারপুলিন তৈরি হয়।
৫) লিঙ্ক বেল্ট ও জয়েন্ট ডিস্ক ইত্যাদি
৬) টাইপ রাইটারের রিবন।
৭) ছোট ফিশিং বোট (Boat)
৮) ফিল্টার কাপড়।
৯) কার্পেট, অ্যাপারেল।
নাইলন ৬ উৎপাদন :
ক্যাপরোল্যাকটাম প্রস্তুতকরণ
ফেনল, বেনজিন ও অ্যানিলিনকে ক্যাপরোল্যাকটাম প্রস্তুতের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপরোক্ত কাঁচামাল দ্বারা প্রথমে সাইক্লোহেক্সানল প্রস্তুত করা হয়। নিকেল ফ্যাস্টালিস্ট -এর উপস্থিতিতে ১৫০° থেকে ২২০° সে. তাপমাত্রায় ২৫ অ্যাটমোসফেয়ারিক চাপে বেনজিনকে হাইড্রোজেনেটেড করে সাইক্লোহেক্সানল গঠন করে।
এ সাইক্লোহেক্সানল বিক্রিয়াটি নাইট্রোসিল -এর সঙ্গে পারদের ল্যাম্পের শক্তি ও আলোর উপস্থিতিতে সংঘটিত হয়। সাইক্লোহেক্সানন অক্সিম ও পরে সালফিউরিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যাপরোল্যাকটাম গঠন করে।
পলিমারাইজেশন
ল্যাকটামকে তরল অবস্থায় ছেঁকে তাপে ও অত্যাধিক চাপে একটি অটোকেভ-এ নেওয়া হয়। যাতে প্রায় ২০০ -এর মতো মনোমারিক ইউনিট থেকে একটি বড় পলিমারিক ইউনিট দেয়, যার নাম পারলন ( Parlon )। এ পলিমার পারলনকে নাইলন ৬ বলা হয়। কারণ এটা ৬টি কার্বন অ্যাটমের পলিমার।
স্পিনিং (Spinning)
পারলন পলিমারকে ধৌত ও শুকানোর পর গলানো হয়। নাইলন ৬ এ গলনাঙ্ক খুবই কম। অতঃপর ইহাকে উচ্চ চাপে স্পিনারেটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। স্পিনিং গতি ১০০০ মি. মিনিট। পলিমারকে মেন্ট স্পিনিং -এর মাধ্যমে ফিলামেন্টগুলো সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ যত শিগগির সম্ভব ফিলামেন্টসমূহকে কুলিং (Cooling) জোন-এর মধ্য দিয়ে নিয়ে আসার সময় শক্ত হয়ে যায় এবং গাইড রোলারের মাধ্যমে ববিনে জড়ানো হয়।
নাইলন ৬ এর ব্যবহার
১. সাফল্যজনকভাবে নাইলন-৬ টায়ার কর্ড প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। নাইলন ৬ এর তাপ প্রতিরোধক ও রাবারের প্রতি সংযুক্তের কারণে টায়ার কর্ড প্রস্তুত হচ্ছে।
২. নাইলন ৬ ফিশিং লাইন অর্থাৎ মাছ ধরার জাল, সুতা ও দড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের জন্য নাইলনের দড়ি ব্যবহৃত হয়।
৪. হোজ ( Hose ) ও মোজা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. জর্জেট, কার্পেট, সাঁতারের পোশাক, ইউনিফরম, ফ্লাগ, বর্ণাঢ্য বস্ত্র, ফিল্টার ক্লথ, নিটেড ব্লাউজ, শার্টিং ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
৬. টাইপ রাইটারের রিবন।
৭. ছোট ফিশিং বোট
৮. ফিল্টার কাপড়।
৯. কার্পেট, অ্যাপারেল।
পলিয়েস্টার ফাইবার পলিমারিক এস্টার ফাইবারের একটি উদাহরণ। আমেরিকাতে যে পলিয়েস্টার ফাইবার উৎপাদন হয় তাকে বাণিজ্যিকভাবে ড্যাকরন, যুক্তরাষ্ট্রে টেরিলিন, ইন্ডিয়াতে টেরিন বলে।
অ্যাসিড ও অ্যালকোহল বিক্রিয়া করে অ্যাস্টার গঠন করা হয়। পলিয়েস্টার ফাইবার তৈরির বেলায় অ্যাসিড হিসেবে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়। পলিয়েস্টার ফাইবার যথেষ্ট শক্তিশালী ফাইবার কিন্তু আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা (মাত্র ০.৪%) বলে ইহা ব্যবহারের দিক থেকে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ফলে পলিয়েস্টার ফাইবার দ্বারা পোশাক তৈরি করা হয় না বললেই চলে। তবে ফার্নিশিং ক্লথ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লথ ইত্যাদি কাজে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। কটন পলিয়েস্টার বেন্ডেড করে যে কাপড় হচ্ছে তা পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাসায়নিক প্রকৃতি
এটি একটি উচ্চ পলিমার বিশিষ্ট কৃত্রিম ফাইবার যা এস্টারিকেশন -এর মাধ্যমে তৈরি হয়। সাধারণত ইথিলিন গ্লাইকল ও টেরিপথেলিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে পলিইথিলিন ট্যারিপথ্যালেট গঠন করে। এ পলিইথিলিন ট্যারিপথ্যালেটের পর্যায়ক্রমিক ইউনিটকেই পলিয়েস্টার পলিমার বলে ।
পুনরায় পেট্রোলিয়াম থেকে ন্যাপথা ডিস্টিলড করে প্যারাজাইলিন সংগ্রহ করা হয় এবং প্যারাজাইলিন বাতাসে ক্যাটালিস্ট-এর উপস্থিতিতে অক্সিডাইজড হয়ে প্রথমে টেরিপথ্যালিক অ্যাসিড ও পরে ডাইমিথাইল ট্যারিপথ্যালেট উৎপন্ন করে। এ ডাইমিথাইল ট্যারিপথ্যালেট দ্বারা টেরিলিন অথবা ড্যাকরণ উৎপন্ন করা হয়।
ট্যারিপখালিক এস্টার ও ইথিলিন গ্লাইকল পলিমারাইজড হয়ে পলিয়েস্টার উৎপন্ন করে। পলিয়েস্টার ১০০ ভাগ কৃত্রিম ফাইবার। এটা পলিইথিলিন ট্যারি পথ্যালেট-এর একটি পলিমার।
পলিয়েস্টা ফাইবার প্রস্তুত প্রণালী
পলিয়েস্টার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে সাধারণত প্যারাজাইলিন, ইথিলিন গ্লাইকল ও মিথানল ব্যবহার করা হয় । প্যারাজাইলিন পেট্রোলিয়াম থেকে পাওয়া যায়। প্যারাজাইলিন বাতাস ও সাইট্রিক অ্যাসিডের সাথে বি করে ট্যারিপখ্যালিক অ্যাসিড গঠন করে। এই ট্যারিপথ্যালিক অ্যাসিড মিথাইল অ্যালকোহলের সাথে ভাই মিথাইল ট্যারিপখ্যালেট তৈরি করে যা পরবর্তীতে ইথিলিন গ্লাইকলের সাথে পলিইথিলিন ট্যারিপখ্যালেট-এর পলিমার গঠন করে যা রিবনের আকৃতিতে পাওয়া যায়। অতঃপর এই রিবনের মতো পলিমারকে চিপস আকারে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এ ভিজা চিপসগুলো প্রথমে শুকানো হয়, পরে এই শুকানো চিপসগুলো একটি ডেলিভারি হপারে নিয়ে লাগানো হয়। এবং পলিত পলিমারকে উচ্চ চাপে স্পিনারেটের মধ্যে পাঠানো হয়। স্পিনারেটে ২৪টি ছিদ্র বা ০.০৫-০১ মিমি (মিলিমিটার) ব্যাস যুক্ত থাকে। প্রতিটি ছিদ্র (Hole) থেকে এক একটি ফিলামেন্ট বের হয়। বা পরবর্তীতে ফিলামেন্টরূপে পাইড রোলারের মাধ্যমে বৰিলে জড়ানো হয় অথবা ক্রিমপিং ও হিট সেটিং (Heat setting) ও সর্বশেষ কেটে ছোট ছোট ফাইবারের আকারে নেওয়া হয়। নিচে পলিয়েস্টার ফাইবার প্রস্তুতপ্রণালির ফ্লো নিট দেখানো হলো।
পলিয়েস্টার ফাইবারের ব্যবহার
১. বিভিন্ন অ্যাপারেল ফার্নিশিং, বাড়িতে সজ্জামূলক কাপড় এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
২. ওভেন ও নিটেড তৈরিতে এবং ক্রিজ প্রুফ কাপড় ও ফার্নিশিং কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৩. কটন, উল ও ভিসকোসের সাথে ব্লেন্ডেড করে বিভিন্ন অ্যাপারেলস পর্দায় ব্যবহৃত হয়।
৪. স্টাপল পলিয়েস্টার ও কটন-এর সাথে মিশ্রিত করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহারের জন্য টায়ার কর্ড, কনভেয়র বেল্ট, স্ক্রিন কাপড়, ফিল্টার ক্লথ, মাছ ধরার জাল ইত্যাদি তৈরি হয় ।
৬. অ্যাসিড হ্যান্ডলিং প্লান্টে প্রোটেকটিভ রুথ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৭. গলিত পলিয়েস্টার দ্বারা কাগজ তৈরির মেশিন, ইনসুলেটিং টেপ ও উচ্চ হর্স পাওয়ার যুক্ত মোটর তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৮. ফায়ার এক্সটিংগুইশার (Extinguisher) এর পিভিসি পাইপের সাথে পলিয়েস্টার হোজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৯. দড়ি, মাছ ধরার জাল, পালের কাপড় ইত্যাদি তৈরি হয়।
অ্যাকরাইলিক ফাইবারের মূল কাঁচামাল হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) ও অ্যাসিটাইলিন (CH=CH), অন্য পদ্ধতিতে ইথিলিন (CH2=CH2 ) ও হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) অ্যাকরাইলিক ফাইবার অর্থ্যাৎ অ্যাকরাইলো নাইট্রাইলের একটি পলিমার, কমপক্ষে ৮৫% অ্যাক্রাইলো নাইট্রাইল দ্বারা অ্যাকরাইলিক ফাইবার তৈরি করা হয়। ডিনাইল সায়ানাইডকেই অ্যাকরাইলো নাইট্রাইল বলা হয়।
CH2=CH
।
C=N
উলের মতো গুণাগুণের কারণে অ্যাকরাইলিক ফাইবারকে উলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিটেড ফেব্রিক, টি শার্ট, সোয়েটার ও কম্বল তৈরিতে অ্যাকরাইলিক ফাইবার বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে অনেক ধরনের অ্যাকরাইলিক ফাইবার রয়েছে যেমন- অরলন, অ্যাকরিল্যান, করটেলি, ক্রেসল্যান ইত্যাদি।
এ বিক্রিয়াটি Ca2Cl2 (কিউপ্রাস ক্লোরাইড), ক্যাটালিস্ট-এর উপস্থিতিতে ৮০° C তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট অ্যাটমোসফিয়ারিক তাপে সংঘটিত হয়।
কাঁচামাল
হাইড্রোজেন সায়ানাইড, (HCN) ও অন্য পদ্ধতিতে
অ্যাসিটাইলিন (CH=CH) ইথিলিন CH2=CH2 ও হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN)
অ্যাকরাইলিক ফাইবারের প্রস্তুতপ্রণালি
অ্যালুমিনিয়াম পারসালফেট ও সোডিয়াম বাই সালফাইড প্রথমে পানিতে ৪০° তাপমাত্রায় দ্রবীভূত করা হয়। এরপর অ্যাকরাইলো নাইট্রাইল ও কিছু ভিনাইল মনোমার একটি পাত্রে ২ ঘণ্টা যাবৎ নাড়া হয়। এতে পলিমারের দানা পড়ে তা ধৌত ও ফিল্টার করে শুকানো হয়। এই অ্যাকরাইলো নাইট্রাইলের মনোমার পানিতে দ্রবণীয় কিন্তু পলিমার পানিতে অদ্রবণীয়। এ ছাড়া পলিমারাইজেশন পাত্র বাতাস মুক্ত রাখতে হবে এবং দ্রবণের pH 2.5 রাখা প্রয়োজন।
অতঃপর উক্ত পলিমারকে সলুউশন ভ্যাসেলে সলভেন্ট যারা দ্রবীভূত করে স্পিনারেট প্রেরণ করা এবং ড্রাই স্পিনিং এর মাধ্যমে ফিলামেন্ট সংগ্রহ করা হয়। যা বিভিন্ন গাইড রোলারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়ে বৰিনে জড়ানো হয় অথবা শপিং হিট সেটিং ও সবশেষে কেটে ছোট ছোট স্ট্যাপল ফাইবারে রূপান্তর করা হয়।
অ্যাকরাইলিক -এর ব্যবহার
১. উলের মতো অনুভব ও গুণাগুণের কারণে অ্যাকরাইলিক ফাইবার নিটেড ফেব্রিক, সোয়েটার ও কম্বল তৈরিতে ব্যবহার হয়।
২. এটি পলিয়েস্টার ফাইবারের সাথে ব্লেন্ডেড করে বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৩. এটি কটনের সাথে ব্লেন্ডেড করে স্পোর্টস শার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৪. ভালো রেসিলিয়েন্সি ও উজ্জ্বলতার কারণে এটি পাইল ফেব্রিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. কার্পেট ও ছোট গালিচা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কাউন্ট হলো এমন একটি সংখ্যা যা সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভর বা একক ভরের দৈর্ঘ্যকে নির্দেশ করে। সুতার কাউন্ট বা নম্বর হচ্ছে একটি সংখ্যাবাচক শব্দ, যা দ্বারা সূক্ষ্মতা বা স্থূলতা প্রকাশ পায়। কোনো বস্তুর সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা ঐ বস্তুর ব্যাস ও প্রস্থচ্ছেদ অনুপাতকে বোঝায়। সূক্ষ্মতা বলতে চিকন ও স্থূলতা বলতে মোটা সুতাকে বুঝানো হয়েছে । সুতার লিনিয়ার ডেনসিটি বোঝাতে দৈর্ঘ্য ও ব্যাসের সাথে সম্পর্ককে বোঝায়। সুতা বা আঁশের একক দৈর্ঘ্যের ওজনকে লিনিয়ার ডেনসিটি বলে।
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বিভিন্ন আঁশের উপর নির্ভর করে কাউন্ট নির্ণয়ও বিভিন্ন হয়ে থাকে । কটন, জুট, পলিয়েস্টার ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ফাইবারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। নবম শ্রেণিতে কিছু কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। দশম শ্রেণিতে টেক্স, ডেনিয়ার, মেট্রিক ও ওরস্টেড কাউন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাউন্টের সংজ্ঞা (Definition of Count)
কাউন্টের সংজ্ঞা সরাসরি বলতে হলে একক দৈর্ঘ্যের ভর অথবা একক ভরের দৈর্ঘ্য কে বুঝায়। ইংরেজিতে যাকে 'Length per unit weight or weight per unit length' বলে। উপরোক্ত সংজ্ঞা বাদেও বিভিন্ন সুতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাউন্ট রয়েছে। যেমন- কটন কাউন্ট, জুট কাউন্ট, ডাইরেক্ট সিস্টেমে কাউন্ট ও ইনডাইরেক্ট সিস্টেমে কাউন্ট ইত্যাদি যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে।
সুতার কাউন্টের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Yarn count)
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ে প্রধানত: দুইটি পদ্ধতি। যথা-
১। পরোক্ষ পদ্ধতি (Indirect system )
২। প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct System)
পরোক্ষ পদ্ধতি ( Indirect system ) -
পরোক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক ভরের দৈর্ঘ্যকে কাউন্ট বলে। সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে সুভা তত চিকন বা সূক্ষ্ম হবে। আর কাউন্ট যত কম হবে সুতা তত মোটা হবে। পরোক্ষ পদ্ধতিতে প্রতিটি সুতার ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে আবার ওজনেরও একক আছে যা দ্বারা সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ ১০০ কটন কাউন্টের সুতার চেয়ে ১০ কটন কাউন্টের সুতা অনেক মোটা। কটন, উল, উরস্টেড, লিনেন ইত্যাদি আঁশের তৈরি সুতার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিম্নের সূত্রের সাহায্যে সহজেই সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা সম্ভব ।
প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct System )
প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভরকে কাউন্ট বলে। সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে সুতা তত মোটা হবে এবং কাউন্ট যত কম হবে সূক্ষ্ম অর্থাৎ চিকন হবে। এই পদ্ধতিতেও একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের একক ও ওজনের একক আছে যা দ্বারা সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা যায়। উদাহরণস্বরূপ - ২৪ পাউন্ডস/স্পাইন্ডেল সুতার চেয়ে ৮ পাউন্ডস / স্পাইন্ডেলের সুতা অনেক চিকন । সাধারণত জুট, সিল্ক, উল, হেম্প, পলিয়েস্টার, নাইলন ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়।
টেক্স (Tex)-
টেক্স পদ্ধতিকে ইউনিভার্সেল সিস্টেমও (Universal system) বলা হয়। ISO (International Stan darization Organization) সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের ক্ষেত্রে টেক্স পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। সকল ধরনের সুতা, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম যে ধরনেরই হোক না কেন এ পদ্ধতিতে কাউন্ট বের করা সম্ভব। আঁশ থেকে সুতা প্রতিটি স্তরেই এ পদ্ধতিতে কাউন্ট বের করা সম্ভব। ১০০০ মিটার সুতার ওজন যত গ্রাম তত টেক্স। সুতা যত সূক্ষ্ম হবে টেক্স তত কম হবে। উদাহরণস্বরূপ-এক কিলোমিটার অর্থাৎ ১০০০ মিটার সুতার ওজন ১ গ্রাম হলে সুতার টেক্স ১। এখানে দৈর্ঘ্যের একক ১০০০ মিটার ও ওজনের একক গ্রাম । অতি সূক্ষ্ম আঁশ থেকে শুরু করে অতি মোটা স্লাইভারের কাউন্ট পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বের করা সম্ভব। অতি সূক্ষ্ম আঁশ ও সুতার ক্ষেত্রে মিলিটেক্স (Militex) এবং মোটা ও স্থূল স্লাইভারের ক্ষেত্রে কিলোটেক্স ব্যবহার করা হয়। মিলিটেক্স (Militex) ১ কিলোমিটার সুতার ওজন যত মিলিগ্রাম তত মিলিটেক্স। কিলোটেক্স (Kilotex) ১ কিলোমিটার সুতার ওজন যত কিলোগ্রাম তত কিলোটেক্স। কিলোটেক্সকে সংক্ষেপে K-tex টেক্স বলা হয়।
সুতার টুইস্ট বা পাক (Twist of yarn)-
একটি সুতার প্রস্থচ্ছেদ করলে তার মধ্যে অনেকগুলো আঁশ দৃষ্টিগোচর হবে। আঁশগুলো আলাদা আলাদা থাকলে একসঙ্গে এটাকে আমরা সুতা বলব না। কিন্তু এই আলাদা আঁশসমূহ একত্রে মোচড় দেওয়া অবস্থায় থাকলে তখন আমরা তাকে সুতা বলব। কাজেই আঁশ যখন আলাদা আলাদা পাশাপাশি থাকে তাকে সুতায় রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্যাঁচ বা মোচড় দেওয়া হয় তখন তাকে আমরা পাক বা টুইস্ট বলতে পারি। স্পিনিং মেশিনে সুতা উৎপাদনকালীন সময়ে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে টুইস্ট প্রদান করা হয়। টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতায় শক্তি বৃদ্ধি ও প্যাকেজে জড়ানো এবং বহনে সুবিধা হয়।
স্পিনিং ফ্রেমে প্রথমে সুতা উৎপাদন করে পরে টুইস্ট প্রদান করে সুতায় শক্তি বৃদ্ধি করে ও পুরোপুরি সুতায় রূপ দেয়। এই সুতা জড়ানো অর্থাৎ কোনো প্যাকেজে জড়ানো না হলে স্পিনিং ফ্রেম থেকে সুতা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। সুতা সংগ্রহ করার জন্য স্পিনিং মেশিনেই ছোট-বড় প্যাকেজে রূপান্তরিত করতে হবে। এই প্যাকেজে রূপান্তরের জন্য স্পিনিং ফ্রেমে প্যাকেজ বিল্ডিং -এর প্রয়োজন রয়েছে। প্যাকেজ বিল্ডিং-এর জন্য স্পিনিং ফ্রেমে যে মোশন কাজ করে তাই বিল্ডিং মোশন।
টুইস্ট
সুতার মধ্যে অবস্থিত আঁশসমূহকে তার অক্ষের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ডান থেকে বাম দিকে অথবা বাম থেকে ডান দিকে যে প্যাঁচ বা মোচড় দেওয়া হয় তাকে প্যাঁচ বা টুইস্ট বলে। টুইস্ট প্রদানের মূল উদ্দেশ্য-
০ সুতার শক্তি বৃদ্ধি করা।
০ সুতার মধ্যে অবস্থিত আঁশসমূহকে ধরে রাখা।
০ সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধি করা।
০ সুতা দৃঢ় করা।
০ সুতাকে গোলাকৃতি আকার ধারণ করা।
০ সুতার মধ্যে আঁশ দ্বারা ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানে একটি কোণের সৃষ্টি করা ।
০ পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ কাপড় তৈরিতে সহায়তা করা।
টুইস্ট -এর গুরুত্ব
সুতার টুইস্ট এর গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো।
১। টুইস্ট প্রদানে সুতার শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২। পাশাপাশি অবস্থিত সমান্তরাল আঁশসমুহে টুইস্ট এলানের কারণে অনের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ।
৩। স্পিনিং থেকে উৎপাদিত সুতা দৃঢ় হয় ফলে স্পিন্ডেল জড়াতে সহজ হয়।
৪। টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতা গোলাকৃতি আকার ধারণ করে এবং সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধি পায় ।
৫। টুইস্ট প্রদান নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলে সুতা যথেষ্ট মজবুত হয়।
৬। টুইস্ট প্রদানের কারণেই পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ কাপড় তৈরিতে সহজ হয়।
সুতার টুইট প্রদান করার পর নিম্নলিখিত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
• সুতার টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে সহজ হয়।
• সুতার টুইস্ট প্রদানের কারণে সহজেই বহনযোগ্য হয়, কারণ টুইস্টবিহীন আঁশ বহনযোগ্য নয়।
• সুভার আঁশসমূহ পাশাপাশি থাকলেও শক্তিতে কোনো সহায়তা করে না যতক্ষণ পর্যন্ত মা সুতার টুইস্ট প্রान করা হয়।
• সুতার নির্দিষ্ট আকার অর্থাৎ সুতা মাত্রই গোলাকার, তা একমাত্র টুইন্ট প্রদান করার জন্যই সম্বব।
• সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধির জন্য টুইস্ট প্রদান করা অপরিহার্য।
• সুভা দ্বারা কাপড় পরত করা হয়। সুতায় পাক প্রদান করার কারণেই কাপড় তৈরি সম্ভব হয়েছে।
• সুতায় পাক প্রদান বের করার জন্য ইঞ্চিতে কয়টি মোচড় আছে তা বের করে টিপিজাই (TPI) নির্ণয় করা হয়।
টুইস্ট -এর প্রকারভেদ
টুইস্ট -এর দিকের উপর নির্ভর করে টুইস্ট -এর প্রকারভেদ করা হয়। অর্থাৎ আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে কোনো দিকে আবর্তিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে টুইস্টের প্রকারভেদ করা হয়। তাই টুইস্ট -এর দিকের উপর নির্ভর করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১। এস টুইস্ট (s-twist)
২। জেড টুইস্ট (Z-twist )
এল টুইট (S-twist)-
এক্ষেত্রে আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে বাম দিকে ঘুরে ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে ঘুরে যে টুইস্ট গঠন করে ডাকে এস টুইস্ট (S-twist) বলে। ইংরেজি এল (S) অক্ষরের পেটের অংশ বেভাবে বাঁক খার, আপসমূহ সুতার অক্ষের সাথে সেভাবে পাক খায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
জেড টুইস্ট (Z-twist)-
এক্ষেত্রে আঁশসমূহ সুভার অক্ষের সাথে ডান দিকে ঘুরে ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার দিকে ঘুরে যে টুইস্ট গঠন করে তাকে এন টুইস্ট (S-twist) বলে। ইংরেজি এস (2) অক্ষরের পেটের অংশ যেভাবে বাঁক খায়, আঁশসমূহও সুতার অক্ষের সাথে সেভাবে পাক খায় বলে রূপ নামকরণ করা হয়েছে।
সাধারণত বহু সংখ্যক টানা সুতা বিশিষ্ট গ্রে এবং চেক ফেব্রিক তৈরির ক্ষেত্রে সেকশনাল ওয়ার্সিং ব্যবহার করা হয়। এটা ছাড়াও মোটা সুতার সংখ্যা ১৫% এর বেশি রঙিন সুতা ব্যবহার করে বিমিং করার প্রয়োজন হলে সেকশনাল ওয়ার্সিং-এর মাধ্যমে বিমিং করা হয়। হ্যান্ড লুমের ওয়ার্সিং-এর ক্ষেত্রেও সেকশনাল ওয়ার্সিং করা হয় । টানা সুতাগুলোকে হ্যাংক অবস্থায় সাইজিং করা সুতাগুলোকে ববিনে জড়িয়ে ক্রিলে সাজানো হয়। ক্রিল হতে নির্দিষ্ট প্রস্থের সুতাকে সারিবদ্ধভাবে ড্রামে জড়ানো হয়। এভাবে কয়েক সারি সুতা পরপর ড্রামে সাজিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্থের সুতার সারি প্রথমে ড্রামে ও পরে ড্রাম থেকে উইভার্স বিমে জড়িয়ে ওয়ার্সিং করা হয়। উপরোক্ত পদ্ধতিই সেকশনাল ওয়ার্সিং। সেকশনাল ওয়ার্সিং-এ সময় বেশি লাগে।
বিভিন্ন ধরনের ক্রিস বিমিং করার পূর্বে যে ফ্রেমে ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ অর্থাৎ কোন সাজিয়ে রাখা হয় সে ফ্রেমকে ক্রিল বলে । ক্রিল প্রধানত তিন প্রকার-
১. সিঙ্গেল এন্ড ক্রিল (Single end creel)
(ক) ডুপ্লিকেটেড ক্রিল
(খ) ট্রাক ক্রিল।
২. ম্যাগাজিন ক্রিল
৩. ট্রাভেলিং ক্রিল
১. সিঙ্গেল এন্ড ক্রিল
যে ক্রিলের মধ্যে একটি ইয়ার্ন প্যাকেজে একটি টানা সুতা জড়ানোর জন্য সুতা নির্দিষ্ট থাকে তাকে সিঙ্গেল এন্ড ক্রিল বলে। এ জন্য ক্রিলগুলোর প্যাকেজের আকার অনেক বড় হয়। সিঙ্গেল এন্ড ক্রিল ২ প্রকার।
ডুপ্লিকেটেড ক্রিস
এই ক্রিলের ক্রিল ফ্রেম স্থির ও হেড স্টক মুভেবল। কাজেই এক্ষেত্রে দুইটি ক্রিলের সুতা ব্যবহৃত হয়। ট্রাক ক্রিল: এখানে হেড স্টক স্থির কিন্তু ক্রিল মুভেবল। একটি ক্রিলের সুতা শেষ হয়ে গেলে তাকে সরিয়ে রিজার্ভ ক্রিল ব্যবহার করা হয়।
২. ম্যাগজিন ক্রিল
একটি বহুমুখী প্যকেজ ক্রিল। এখানে একটি টানা সুতার জন্য ২টি প্যাকেজ ব্যবহৃত হয়। যার প্রথম প্যাকেজ এর শেষ প্রান্ত ২য় প্যাকেজের ১ম প্রান্তের সাথে গিঁট দ্বারা যুক্ত থাকে। একটি প্যাকেজের সুতা শেষ হয়ে গেলে ২য় প্যাকেজের সুতা বিমিং হতে থাকে।
৩. ট্রাভেলিং ক্রিল বা মুভেবল প্যাকেজ ক্রিল
এখানে প্যাকেজ ক্যারিয়ার লুপ আকারে ঘুরতে থাকে। বাইরের ক্রিলের প্যাকেজের সুতা শেষ হয়ে গেলে উক্ত প্যাকেজে ঘুরে ভেতরে চলে যায় এবং বাইরের পরবর্তী প্যাকেজ থেকে সুতা বিমিং হতে থাকে এবং ভেতরের খালি প্যাকেজ সরিয়ে পুনরায় পূর্ণ প্যাকেজ রাখা হয়। উপরোক্ত ক্রিলসমূহ ছাড়াও হ্যান্ডলুমে ব্যবহারের জন্য কেজ ক্রিল ও বুক ক্রিল ব্যবহৃত হয়।
লেকশনাল ওয়ার্নিং-এর সজ্ঞা
যে ওয়ার্সিং প্রক্রিয়ায় টানা সুভাকে প্রস্থ বরাবর ভাগ করে ভাগ ভাগ অবস্থায় গ্রামে পাশাপাশি জড়ানোর পরে সবগুলো সুতাকে উইভার্স বিমে একসাথে বিমিং করা হয় তাকে সেকশনাল ওয়ার্সিং বলে।
স্পিনারস ববিন (Spinner's bobbin)
স্পিনিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত রিং ববিনকে সাধারণত স্পিনারস ববিন বলা হয় ।
হ্যাংক (Hank )
রিং ববিন হতে ওয়াইন্ডিং বিভাগ রিলিং এর মাধ্যমে সুতাসমূহকে হ্যাংক আকারে নেওয়া হয়।
সাইজিং (Sizing )
টানা সুতা শক্তি বৃদ্ধি করা ও তাঁতে টানা সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হ্যাংক আকারে টানা সুতাসমূহকে সাইজিং করা হয়।
ববিন ওয়াইন্ডিং (Bobbin winding )
সাইজিং করা হ্যাংক সুতাকে সেকশনাল ওয়ার্সিং করার জন্য ফ্রাঞ্জ (Flange) ববিনে জড়ানো হয়।
ক্রিলিং (Creeling)
সুতাসহ ফ্লাঞ্জ ববিনকে ক্রিলে সাজাতে হবে যাতে পরবর্তীতে ড্রামে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুতা জড়ানো যায় ।
ড্রামে ওয়াইন্ডিং (Drum winding )
ক্রিলে সাজানো ববিন থেকে সুতার প্রাপ্ত নিয়ে ড্রামে সেকশন সাজানো হয়।
উইভার্স বিম (Weaver's beam)
ড্রাম থেকে সুতার সংখ্যা অনুযায়ী সম্পূর্ণ সুতার সারিকে একটি বিমে জড়ানো হয় যা পরবর্তীতে উইভিং করার জন্য তাঁতে উঠানো হয়।
সেকশনাল ওয়ার্সিং-এর জন্য ক্রিল সাজানো
টানা করার জন্য কাপড়ের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও ইঞ্চি প্রতি সুতার সংখ্যা এবং সুতার পরিমাণ নির্ণয় করার পর ঐ সুতাগুলোকে ফ্লাঞ্জ ববিনে জড়িয়ে নিতে হয়। সুতা জড়ানো ববিনসমূহ ক্রিলের ফাঁকে শলা বা কাঠি পরিয়ে ক্রিলে সাজিয়ে নিতে হয়। কাঠ দিয়ে তৈরি ক্রিলের গঠনপ্রণালি কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। ক্রিলের কাজ শুধু টানা প্রস্তুতের জন্য সুতা জড়ানো ববিনসমূহ এমনভাবে সাজিয়ে নির্ধারিত নিয়মে সেকশনাল ওয়ার্সিং সমাপ্ত করা। ক্রিলের মধ্যে পরিমাণমতো ববিনসমূহ এমনভাবে সাজাতে হয় যেন সুতা খুলে আসার সময় সব ববি একই দিকে ঘুরতে থাকে এবং সুতার প্রাপ্ত সকল একই নিয়মে একই দিক থেকে বের হতে থাকে। পাশাপাশি দুইটি সুতা একটি অপরটির বিপরীত দিক থেকে বের হয়। তবে উভয়টি একত্রে জড়িয়ে কাজের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করবে। কাজেই এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কাপড়ে ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা সাজায়ে নিলে কাজের সুবিধা হয়। তারপর ববিন থেকে সুতার প্রান্ত কেটে দিয়ে সেলেটের চোখ ও ফাঁকে ধারাবাহিকভাবে গেঁথে নিয়ে সকল সুতার মাথা একত্র করে গিঁট দিয়ে টানা সেকশন করে ড্রামে জড়ানো হয় ।
স্পিনিং ও ওয়াইন্ডিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতা হতে তৈরি ওয়াপাস বিম দ্বারা সরাসরি উইভিং করা যায় না। সুতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে। এছাড়াও ঝাঁপ ও চক্ষু দ্বারা শেড গঠনের জন্য টানা সুতা বারবার ঘষা খায়। ফলে এর হেয়ারিনেস বৃদ্ধি পায় ও সুতার শক্তি কমে যায়। অনেক সময় সুতার পাক কম থাকে, সুতা দুর্বল থাকে যার কারণে তাঁতের বিভিন্ন মোশন, ঝাঁপের ওঠানামা মাকু -এর ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে না। ইত্যাদি কারণে উইভিং করার সময় টানা সুতা ছিঁড়ে যায়, উৎপাদন ব্যাহত হয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, কাপড়ও ত্রুটিপূর্ণ হয় । উপরোক্ত অসুবিধাসমূহ দূর করার জন্য ওয়াপাস বিমের টানা সুতায় মাড় দেওয়া হয়। মাড় প্রকরণে প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো টানা সুতার ন্যূনতম কোনো ক্ষতি সাধন না করে কাপড় বয়ন অর্থাৎ উইভিং করা। মাড় প্রকরণ সুতা ও কাপড়ের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে কাপড়ের দৃঢ়তা ও ওজন বৃদ্ধি করে। সর্বোপরি সুতার শক্তি ও মসৃণতা বৃদ্ধি করে টানা সুতা ছেঁড়ার হার কমিয়ে দেয়।
মাড় প্রকরণের সংজ্ঞা (Definition of sizing )
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণজনিত কারণে সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমিং করা টানা সুতার পৃষ্ঠব্যাপী আঠালো পদার্থ দ্বারা মসৃণ করার প্রণালিকে মাড় প্রকরণ বা সাইজিং (Sizing) বলে ।
সাইজিং -এর উদ্দেশ্য
১. টানা সুতার ঘর্ষণজনিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
২. টানা সুতাকে কোমল, মসৃণ ও উজ্জ্বল করা।
৩. টানা সুতার বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ভাসমান আঁশগুলো সুতার পৃষ্ঠে লাগিয়ে দিয়ে সুতাকে মসৃণ করা ও শক্তি বৃদ্ধি করা।
৪. দুর্বল ও কম শক্তিসম্পন্ন সুতাকে ব্যবহার উপযোগী করা।
৫. সুতার উপর প্রতিরোধকারী পাতলা আবরণ দেওয়া।
৬. সুতার শক্তি বৃদ্ধি করা।
৭. সুতার ওজন বৃদ্ধি করা।
৮. পলিয়েস্টার মিশ্রিত সুতায় যে স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা হ্রাস করা।
মাড়ের উপাদানসমূহ
মাড় বা সাইজ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন। প্রতিটি উপাদানেরই আলাদা আলাদা গুণাগুণ রয়েছে। সুতার গুণগত মান ও প্রকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকার মাড়ের উপাদান প্রয়োগ করা হয়। নিম্নে মাড়ের উপাদানসমূহ উল্লেখ করা হলো।
১. শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
২. সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents )
৩. হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents)
৪. অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics Agents )
৫. নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents )
৬. অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents )
৭. টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents )
৮. ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents )
উপাদানসমূহের বিবরণ
শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
একে মাড়/সাইজের মূল উপাদনও বলা হয়। এ উপাদানের জন্য মাড় আঠালো হয় । এ শ্বেতসারযুক্ত উপাদানের সাথে পানি মিশ্রিত করে তাপ প্রয়োগ করলে আঠালো পদার্থের পেস্ট (Paste) -এ পরিণত হয়। উদাহরণ- মেইজ স্টার্চ (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্চ (Topioca starch), ময়দা (Flour ), সাগু স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ । আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিভিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ।
সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents)
সফেনিং এজেন্টকে কোমল রাখার উপাদানও বলা হয়। টানা সুতা কখনও কখনও শক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয়। এছাড়া সুতার খসখসে ভাব ও নমনীয়তা দূর করার জন্য সফেনিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- মাটন ট্যালো (Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেডির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স (Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি ।
হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents )
সুতাকে আর্দ্র রাখার জন্য হাইগ্রোসকোপিক এজেন্ট ব্যাবহার করা হয়। আর্দ্র রাখার উপাদানসমূহ বাতাস হতে জলীয় বাষ্প গ্রহন করে থাকে। এ এজেন্টস ব্যবহার করার ফলে টানা সুতা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমান আর্দ্রতা শোষণ করে সুতাকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণ- ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।
অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics )
একে বাংলায় প্রতিষেধক উপাদান বলা হয়। মিলডিউ অর্থাৎ ছত্রাক আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সমস্ত স্টার্চই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই কার্বন সুতা সাইজিং করার প্রয়োজনে স্টার্চ -এর পাশাপাশি অ্যান্টিসেপটিকস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় । উদাহরণ- জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CH (OH) COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents )
মাড় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় দ্রবনের (PH) মাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই দ্রবণকে নিউট্রাল করার জন্য নিউট্রালাইজিং এজেন্টস যোগ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রবণের (PH) মাত্রা ৬.৮ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প অল্প করে এ এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- সোডা অ্যাশ।
অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents)
মাড় দ্রবণ অথবা মাড় পেস্ট প্রস্তুত করার সময় দ্রবণে ফেনা হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। যার ফলে উক্ত দ্রবণ টানা সুতায় প্রয়োগ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাড় দ্রবণে অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। যা মাড়, পেস্ট বা দ্রবণে ফেনার উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে । উদাহরণ- অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি ।
টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents )
টানা সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের প্রাকৃতিক রংকে নিউট্রালাইজড করার জন্য এ এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যে সমস্ত কাপড় যে অবস্থায় বিক্রি হবে উক্ত কাপড় প্রস্তুত করতে টানা সুতায় মাড় দেওয়ার সময় এ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।
ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents)
সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলোই ওয়েটিং এজেন্ট। শুধু গ্রে অবস্থায় বিক্রি করার জন্যই এ ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ( MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2 ) ইত্যাদি ।
উপরোক্ত মাড় দ্রবণ বা পেস্ট সাধারণত ১০০ ভাগ কটন সুতার জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
সাইজিং পদ্ধতির শ্রেণিবিভাগ
সাইজ-এর প্রয়োগ পদ্ধতি ও ড্রাই পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। সাইজিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সিলিন্ডার ড্রাইং (Cylinder drying)
ক) দুই সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Two cylinder type)
খ) বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Multi cylinder type)
২) হট এয়ার ড্রাইং (Hot air drying)
৩) ইনফ্রারেড ড্রাইং (Infrared drying)
৪) কম্বাইন্ড পদ্ধতি (Combind system)
প্রয়োগ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মাড়করণ বা সাইজিং পদ্ধতিতে নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যথা-
১. টেপ অথবা শ্লেশার সাইজিং (Tape or Slasher sizing )
২. হট মেল্ট সাইজিং (Hot melt sizing )
৩. হাই প্রেসার সাইজিং (High pressure sizing )
৪. ফোম সাইজিং (Foam sizing )
৫. সলভেন্ট সাইজিং (Solvent sizing )
৬. ইলেকট্রোস্ট্যাটিক সাইজিং (Electrostatic sizing )
৭. পলিমার ইমালশন সাইজিং (Polymer emulsion sizing )
৮. কম্বাইন্ড সাইজিং (Combind sizing )
মাড় প্রস্তুতপ্রণালি
সাধারণ খোলা ট্যাংক
কাঠ, সিমেন্ট ও মেটালের তৈরি আয়তাকার ট্যাংক যার ভেতরের দিকে কপার অথবা স্টেইনলেস স্টিলের প্রলেপ দেওয়া থাকে। এই আয়তকার ট্যাংকের ঠিক মাঝখানে একটি নাড়নি থাকে। এক্ষেত্রে সরাসরি স্টিম প্রবেশ করে মাড় মিক্সিং ও কুকিং করা হয়।
ট্যাংক এর আকার
ট্যাংক এর দৈর্ঘ্য = ৪ ফুট
ট্যাংক এর প্রস্থ = ৩ ফুট
ট্যাংক এর উচ্চতা = ৪ ফুট
ট্যাংক এর আয়তন = 8x ৩ x ৪ ঘনফুট
অর্থাৎ ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাড়ের দ্রবণের পরিমাণ ১ ঘনফুট, সাধারণত একটি কাঠের কাঠি দ্বারা মাড়ের পরিমাণ মাপা যায়। এই মাপন কাঠিতে ১ ইঞ্চি পরপর দাগ কাটা থাকে যাতে সহজেই প্রতি দাগে ১ ঘনফুট মাড়ের পরিমাণ বোঝা যায়। এখন যদি ট্যাংকের পানির উচ্চতা ১৬ হয় তবে পানির আয়তন হবে ১৬ ঘনফুট। ব্যবহারের সুবধার্থে ট্যাংকের উপরোক্ত আকার করা হয়েছে।
মনে করা যাক, এক ঘনফুট পানির ওজন ৬২.৫ পাউন্ড । ফলে ১৬ ঘনফুট পানির ওজন ১৬ x ৬২.৫= ১০০০ পাউন্ড বা ১০০ গ্যালন। ফুটানোর সময় স্টিমের কারণে পানির পরিমাণ সামান্য বেড়ে যায়। কাজেই মিক্সিং এর সময় সামান্য পরিমাণ পানি কম যোগ করতে হয়।
ইন্ডাস্ট্রিতে মাড়
প্রস্তুতপ্রণালি সাধারণ খোলা ট্যাংক
১. প্রথমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ট্যাংকে যোগ করি।
২. পানি দেওয়ার পরপরই নাড়ানো শুরু করতে হবে এবং মাড় প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত চালু রাখতে হবে। এখন অ্যাডহেসিভ দ্রবাদি যোগ করি।
৩. এবার প্রতিষেধক যোগ করি এবং ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত নাড়তে থাকি ।
৪. অতঃপর স্টিম যোগ করি এবং মিক্সারকে বয়েলিং তাপমাত্রায় নিয়ে যাই ।
৫. এরপর সফেনিং এজেন্ট যোগ করি।
৬. স্টিম ক্রমাগত যোগ করতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না লিকারের ঘনত্ব উপযুক্ত হয়।
৭. স্টিম চালনা বন্ধ রাখি।
৮. এখন PH পেপার দ্বারা PH পরীক্ষা করি এবং সোডা অ্যাশ যোগ করতে থাকি যতক্ষণ PH ৬.৮ না হয়।
৯. PH ৬.৮ এ আসলেই লিকার তৈরি হলো অর্থাৎ ব্যবহারের উপযোগী হলো। তাপমাত্রা ৬০° সে. এ ঠিক রাখি।
টেপ অথবা স্লেশার সাইজিং মেশিন
এই সাইজিং মেশিনটিকে কনভেনশনাল সাইজিং মেশিনও বলা হয়। ওয়ার্পার মেশিন হতে ওয়ার্পারস বিম তৈরি করে স্লেশার সাইজিং মেশিনের ক্রিলে সেট করা হয়। মনে করা যাক ক্রিলের প্রতিটি বিমে ৫০০টি সুতা থাকে। কাজেই ২৫০০ অথবা ৩০০০ সুতার টানা বিম প্রস্তুত করার জন্য ৫টি অথবা ৬টি ওয়ার্পারস বিমের প্রয়োজন হয়। যা স্লেশার সাইজিং মেশিনের ক্রিলে স্থাপন করা হয়। চিত্র অনুযায়ী টানা সুতার শিট গাইড রোলার উপর দিয়ে মাড়ের বক্স এ আনা হয়। সাইজ বক্সে কপারের তৈরি একটি ছোট ইমালশন রোলার আছে যার নিচ দিয়ে টানা সুতার শিট টেনে আনা হয়। এরপর উক্ত সুতা এক জোড়া স্কুইজিং রোলার এর মধ্যদিয়ে সামনের দিকে চলতে থাকে। এর ফলে টানা সুতার গায়ে লেগে থাকা অতিরিক্ত মাড় সাইজ বক্সে পড়ে যায় । পূর্বে থেকে প্রস্তুতকৃত সাইজ পাইপের মাধ্যমে সাইজ বক্সে আনা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সাইজ বক্সে তাপমাত্রা সঠিক রাখার জন্য বক্সের মাড়ের মধ্যে স্টিম চালনা করা হয়। মাড় প্রয়োগের পর সুতার পৃষ্ঠের মাড় শুকানোর জন্য দুটি ড্রাইং সিলিন্ডারের পৃষ্ঠ দিয়ে টানা হয়। প্রথমে বড় ড্রাইং সিলিন্ডার ও পরে ছোট ড্রাইং সিলিন্ডার থাকে। অতঃপর সুতার শিট ফ্যান- এর উপর দিয়ে গাইড রোলারের মাধ্যম্যে লিজিং রড টানা সুতাগুলো আলাদা করে এক্সপেন্ডিং কম্ব এর সাহায্যে শুকানো টানা সুতার শিট একক সুতায় পরিণত হয়। অর্থাৎ প্রতিটি টানা সুতা একটি থেকে অপরটি আলাদা থাকে। এরপর টানা সুতা গাইড রোলার অতিক্রম করে মেজরিং রোলার এর উপর দিয়ে যায়। সবশেষে মাড়কৃত টানা সুতার শিট ড্রইং রোলার ও এর মধ্য দিয়ে উইভার্স বিমে জড়ানো হয়।
স্লেশার সাইজিং মেশিনের সাইজ বক্সের ইমালশন রোলার যত নিচে থাকবে মাড় পিক আপাতত বেশি হবে। মেশিন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ইমারশন রোলার সাইজ বক্স থেকে উপরে অবস্থান করে যাতে রোলারটিতে মাড় স্পর্শ না করে। ড্রাইং সিলিন্ডার দুটির মধ্যে পাইপের মাধ্যমে বয়লার থেকে স্টিম সরবরাহ করা হয় এবং তাপমাত্রা এমন রাখা হয় যাতে সাইজকৃত টানা সুতা ময়েশ্চার রিগেইন ৭% থেকে ৭.৫% এর মধ্যে থাকে। বড় ড্রাই সিলিন্ডারটি ৬ থেকে ৭ ফুট ব্যাসের ও ছোট ড্রাইং সিলিন্ডারটি ৪ ফুট ব্যাসের হয়ে থাকে। উইভার্স বিমের টানা জড়ানোর গতি প্রতি মিনিটে ২৫ থেকে ৩৬ গজ এবং টানা সুতাকে উপযুক্ত টেনশনে ফাইনাল বিম অর্থাৎ উইভার্স বিমে জড়ানো হয়। নতুবা পরবর্তী প্রক্রিয়ায় মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
একটা টানা বিমে প্রয়োজন অনুযায়ী দৈর্ঘ্যের টানা জড়ানো হয়, কিন্তু তাঁতে কাপড় রোলারে জড়ানোর সুবিধার্থে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পরপর কাপড় কেটে ইন্সপেকশন বিভাগে পাঠানো হয়। এ নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যেকে শনাক্ত করার জন্য স্লেশার সাইজিং মেশিনে উইভার্স বিম তৈরি করাকালীন রং দ্বারা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পরপর একটি কিল মার্ক দেওয়া হয়।
সাইজিং-এর সময় গৃহীত সতর্কতাসমূহ
সাইজিং-এর সময় নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কাপড়ের বিভিন্ন ত্রুটি তাঁতে কাপড় বুননকালে সৃষ্টি হয়। ত্রুটিসমূহকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। ওয়ার্পে ত্রুটি (Warp faults)
২। ওয়েফটে ত্রুটি (Weft faults)
৩। কাপড়ে ত্রুটি (Faults of fabrics)
কাপড়ের বিভিন্ন ত্রুটির নাম নিচে দেওয়া হলো।
ক) টানা বরাবর ত্রুটি (Warp way defects)
১. ওয়ার্প স্টিচিং (Warp stitching)
২. লং ফুট (Long float)
৩. টানা বাদ পড়া (Missing warp)
৪. দ্বৈত টানা (Double warp)
৫. রিড মার্ক (Reed mark)
৬. টানা সুতার গিট (Knot in the warp )
৭. টাইট ওয়ার্প (Tight warp )
৮. ঢিলা ওয়ার্প (Slack warp)
৯. ওয়ার্স স্ট্রিক (Warp streak)
১০. পাড় প্রভাব (Selvedge effect)
i. ঢেউ খেলানো পাড় (Curly or wavy selvedge)
ii. কর্ডেড পাড় (Corded selvedge )
iii. পাড়ে ভাঙা পড়েন (Weft breaks)
iv. লুপ বিশিষ্ট পাড় (Loop in the selvedge )
v. টেম্পলের দাগ (Temple marks)
খ) পড়েন বরাবর ত্রুটি (Weft way defects)-
১. মিস পিক বা ব্রোকেন পিক (Miss pick or broken pick )
২. ব্রোকেন প্যাটার্ন (Broken pattern)
৩. থিক অ্যান্ড থিন প্লেস (Thick and thin place)
৪. শাটেল মার্ক (Shuttle mark)
৫. ওয়েফট কার্লস (Weft curls)
৬. তির্যক পড়েন (Weft stew)
৭. টাইট পড়েন (Tight weft)
৮. ব্যাক ল্যাশিং বা ল্যাশিং ইন (Back lashing or lashing in
৯. স্টার্টিং মার্ক (Starting mark)
১০. ক্র্যাকস (Cracks )
১১. টিয়ার ড্রপ (Tear drops)
১২. গোট (Goat)
১৩. ব্লাক পিকস (Black picks)
১৪. ফিঙ্গার মার্কস (Finger marks)
১৫. বো ইফেক্ট (Bow effects)
১৬. নট-ইন দ্যা ওয়েফট ( Knot in the weft)
১৭. ক্যাচ নট (Catch knot)
গ) টানা ও পড়েন উভয় বরাবর ত্রুটি-
১. ক্লাউডি বা অসমান কাপড় (Cloudy uneven cloth )
২.তেলের দাগ (Oil or grease spot)
৩. হোলস ইন দ্যা ক্লথ (Holes in the cloths)
৪. ওয়েভি ক্লথ (Wavy cloth )
৫. রাস্ট ইন ফেব্রিক (Rust in cloth ) Q.
৬. ডার্টি ক্লথ (Dirty cloth )
৭. হেয়ারি ফেব্রিক (Hairy fabric)
৮. অমসৃণ কাপড় (Rough surface)
(ঘ) নিটিং-এর ত্রুটিসমূহ-
১. ব্রোকেন এন্ড বা হোলস ( Broken ends or holes )
২. ড্রপ স্টিচ (Drop stitch)
৩. ক্লথ ফল আউট (Cloth fall out)
৪. স্লাগিং (Slagging)
৫. টাক বা ডাবল স্টিচ (Tuck or double stitch)
৬. বাঞ্চিং আপ (Bunching up)
৭. ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ (Vertical stripes )
৮. আনুভূমিক স্ট্রাইপ (Horizontal stripes)
৯. কালার ফ্লাই ( Color fly)
১০. ডিসটরটেট স্টিচ (Distortet stitch)
ত্রুটিসমূহের কারণ ও প্রতিকার
১. ওয়ার্ল্ড স্টিচিং (Warp stitching) টানা ও পড়েন সুতার মধ্যে বন্ধনী না থাকা।
কারণসমূহ
o এক শেডের সুতা অন্য শেডে চলে যাওয়া।
০ ডবির ক্ষেত্রে পেগ ভাঙা থাকলে ।
০ টানা সুতা ঢিলা থাকলে ।
০ জ্যাকার্ডের ক্ষেত্রে হার্নেস কর্ডের দৈর্ঘ্য অসমান হলে ।
প্রতিকারসমূহ
০ ড্রাফটিং বা ড্রইং ইন করার সময় সাবধানে করতে হবে যাতে এক শেডের সুতা অন্য শেডে চলে না যায়।
০ ভাঙা পেগ পরিবর্তন করে নতুন পেগ লাগাতে হবে।
০ টানা সুতা ঢিলা থাকলে তা টাইট করতে হবে।
০ জ্যাকার্ডের ক্ষেত্রে হার্নেস কর্ডের দৈর্ঘ্য সমান রাখতে হবে।
২. লং ফুট (Long float)
টানা সুতা পড়েন সুতার সাথে বন্ধনীতে অংশগ্রহণ না করে কাপড়ের উপর বা নিচের পৃষ্ঠদেশে লম্বালম্বি ভেসে থাকে।
কারণসমূহ
০ লুমে ট্যাপেট ঠিকমতো বাঁধা না হলে।
০ ডবির পেগ প্লান সঠিক না থাকলে অথবা পেগ ভাঙা থাকলে ।
০ জ্যাকার্ডের ক্ষেত্রে কার্ড কাটিং -এ ত্রুটি থাকলে।
প্রতিকারসমূহ
০ লুমে ট্যাপেট সঠিকভাবে বাঁধতে হবে।
০ ডবির লুমের পেগ পান সঠিক করতে হবে এবং ভাঙা পেগ পরিবর্তন করতে হবে।
০ কার্ড কাটিং এ কোনো ভুল করা চলবে না ।
০ ভুল কার্ডটি পরিবর্তন করে সঠিক ছিদ্রযুক্ত কার্ড লাগাতে হবে।
কারণসমূহ
০ ডেন্টিং-এ ভুল হলে ।
০ টানা বিমে টানা সুতা ছেঁড়া থাকলে।
০ ওয়ার্প স্টপ মোশন সঠিকভাবে কাজ না করলে।
প্রতিকারসমূহ
০ ডেন্টিং সঠিক করতে হবে।
০ টানা বিমে সুতা ছেঁড়া থাকলে তা জোড়া দিয়ে উৎপাদন করতে হবে।
০ ওয়ার্স স্টপ মোশন সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করে সঠিক রাখতে হবে।
৪. দ্বৈত টানা (Double warp)
০ কাপড়ের একই স্থানে একটির স্থলে ২টি টানা সুতা থাকা।
কারণসমূহ
০ একটি মেইল আই এর ভেতর দিয়ে ২টি টানা সুতা অতিক্রম করলে ।
প্রতিকারসমূহ
• ড্রইং ইন সাবধানতার সাথে করতে হবে। একটি মেইল আই এর মধ্যে দিয়ে ১টি টানা সুতা অতিক্রম করাতে হবে।
৫. রিড মার্ক (Reed mark) কাপড়ের টানা বরাবরে দৃশ্যমান কোনো দাগের সৃষ্টি হওয়াকে রিড মার্ক বলে। কারণসমূহ
• চিকন সুতা দ্বারা কাপড় তৈরির সময় পাতলা রিড ব্যবহার করলে।
• রিডের ফাঁকার মধ্যে খুব বেশি অথবা কম সংখ্যক সুতা থাকলে।
প্রতিকারসমূহ
০ সঠিক রিড ব্যবহার করতে হবে।
০ রিডের ফাঁকার মধ্যে প্রয়োজনানুযায়ী সুতা ব্যবহার করতে হবে।
৬. টানা সুতার গিট (Knot in the warp)
টানা সুতায় লম্বা গিট থাকলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়। কারণসমূহ
০ ওয়ার্সিং এর সময় শ্রমিকদের অবহেলার কারণে টানা সুতায় লম্বা গিঁট দেওয়া হয় ।
প্রতিকারসমূহ
০ টানা সুতায় গিঁট প্রদান করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
৭. টাইট ওয়ার্স (Tight warp)
বিমে দুই-একটি টানা সুতা ঢিলা বা লুজ অবস্থায় থাকলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।
কারণসমূহ
০ ত্রুটিযুক্ত ওয়ার্সিং এর সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনো টানা সুতায় অতিরিক্ত টেনশন প্রদান করা না হয়।
প্রতিকারসমূহ
• ওয়ার্সিং এর সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনো টানা সুতায় অতিরিক্ত টেনশন প্রদান করা না হয়।
৮. টিলা ওয়ার্প (Slack warp)
বিমে দু-একটি টানা সুতা ঢিল বা লুজ অবস্থায় থাকলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায় ।
কারণসমূহ
• ওয়ার্সিং এর ত্রুটির কারণে দু-একটি টানা সুতা ঢিল থাকে ।
০ ড্রপার পিনে টানা সুতা ক্রস হলে।
প্রতিকারসমূহ
০ ওয়ার্সিং করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
• ড্রপার পিনে টানা সুতা ক্রস করা যাবে না।
৯. ওয়ার্প স্ট্রিক (Warp streak )
এ ধরনের ত্রুটির জন্য কাপড় ডোরা কাটা দেখা যায় ।
কারণসমূহ
• অসম সুতা ও ওয়ার্প এর প্রস্তুতি ভুল হলে।
প্রতিকারসমূহ
০ সুষম সুতা ব্যবহার করতে হবে এবং ওয়ার্ল্ড প্রিপারেশনে সতর্ক থাকতে হবে।
১০. পাড় প্রভাব (Selvedge effect )
i. ঢেউ খেলানো পাড় (Curly or wavy selvedge)-
কাপড়ের পাড় সোজা না হলে ঢেউ খেলানো হয়।
কারণসমূহ
০ কাপড়ের জমিন ও পাড়ের সুতায় টান অসমান হলে।
০ খুব বেশি রিড স্পেসের লুমে কম বহরের কাপড় তৈরি করলে ।
• টেম্পল খুব শক্ত হলে।
প্রতিকারসমূহ
০ কাপড়ের জমিন ও পাড়ের সুতায় টান বা টেনশন সমান রাখতে হবে
০ বেশি রিড স্পেসের লুমে কম বহরের কাপড় তৈরি করা যাবে না।
০ টেম্পল লুজ রাখতে হবে।
ii. কর্ডেড পাড় (Corded selvedge)
কারণসমূহ
০ কাপড়ের পাড়ে ডেন্টিং অসমান হলে।
০ বেশি চওড়া লুমে কম প্রস্থের কাপড় বুনন করলে। প্রতিকারসমূহ
০ পাড়ে ডেন্টিং সুষম করতে হবে।
• বেশি চওড়া লুমে কম প্রস্থের কাপড় প্রস্তুত করা উচিত নয়।
iii. পাড়ে ভাঙা পড়েন (Weft breaks) কাপড়ের পাড়ের মধ্যে পড়েন সুতা কাটা থাকে ।
কারণসমূহ
• টেম্পল ত্রুটিযুক্ত হলে এবং টেম্পলের সেটিং সঠিক না হলে।
• পড়েন সুতার ঘনত্ব অত্যধিক হওয়ায় সঠিক পিনিং না হলে।
প্রতিকারসমূহ
• টেম্পল ত্রুটিমুক্ত করতে হবে এবং সঠিক সেটিং করতে হবে।
০ পড়েন সুতার ঘনত্ব কমাতে হবে।
iv. লুপ বিশিষ্ট পাড় (Loop in the selvedge )
উৎপাদিত কাপড়ের পাড়ে লুপ তৈরি হওয়াকে লুপ বিশিষ্ট পাড় বলে।
কারণসমূহ
• পার্নে সুতা জড়ানোর সময় সঠিক টেম্পল না হলে।
০ শাটেল বক্সে শাটেল প্রতিক্ষেপণের কারণে।
প্রতিকার সমূহ
০ পার্নে সুতা জড়ানোর সময় সঠিক টেম্পল রাখতে হবে।
০ শাটেল বক্সে শাটেল প্রতিক্ষেপণ না করে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
v. টেম্পলের দাগ (Temple marks)
কাপড়ের পাড়ে ছোট ছোট ছিদ্র ধারাবাহিকভাবে দেখা যায়।
কারণসমূহ
০ পাতলা কাপড়ের ক্ষেত্রে মোটা টেম্পল ব্যবহার করলে।
০ টেম্পলের মধ্যে জ্যাম থাকলে ।
প্রতিকারসমূহ
০ সঠিক কাপড়ের জন্য সঠিক টেম্পল ব্যবহার করবে হবে।
০ টেম্পলের মধ্যে জ্যাম ঢিলা করতে হবে।
খ) পড়েন বরাবর ত্রুটি (Weft way defects)
১. মিস পিক বা ব্রোকেন পিক (Miss pick or broken pick)
কাপড়ের প্রস্থ বরাবর পড়েন সুতা অনুপস্থিত থাকলে ।
কারণসমূহ
• পড়েন সুতা ছিড়ে গেলে বা পার্ণের সুতা শেষ হয়ে গেলে ওয়েফট স্টপ মোশন যদি কাজ না করে।
• মাঝপথে শাটেলের সুতা শেষ হয়ে গেলে।
প্রতিকারসমূহ
• ওয়েফট স্টপ মোশন যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
০ শাটলের সুতা শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই সুতাযুক্ত পার্ণ বদলিয়ে দিতে হবে।
২. ব্রোকেন প্যাটার্ন (Broken pattern)
কাপড়ের মধ্যে তৈরিকৃত প্যাটার্ন সম্পূর্ণ না হলে ।
কারণ
• লিফটিং যদি ত্রুটিযুক্ত হয়।
প্রতিকার
০ সঠিক লিফটিং -এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. থিক অ্যান্ড দ্বিন প্লেস (Thick and thin place )
কাপড়ের কোথাও ঘন আবার কোথাও পাতলা হওয়া। এ ত্রুটিকে বার ইফেক্টও বলে।
কারণ-
০ লেট অফ ও টেক আপ এর কোনো সমন্বয় না থাকলে।
প্রতিকার-
০ লেট অফ ও টেক আপ এর কোন সমন্বয় করতে হবে।
৪. শাটেল মার্ক (Shuttle mark)
কাপড়ের মাঝে মাঝে টানা সুতার উপর পড়েন সুতার সমান্তরালে কিছু কিছু দাগ পাওয়া যায় যাকে শাটল মার্ক বলে।
কারণ
০ শাটেল যাওয়ার সময় টানা সুতার উপর ঘর্ষণের ফলে এ দাগ সৃষ্টি হয়।
প্রতিকারসমূহ
• শাটেল বক্সের সেটিং সঠিক করতে হবে।
• টানা সুতার উপর টান সঠিক রাখতে হবে।
৫. ওয়েফট কার্লস (Weft curls)
কাপড়ের মধ্যে পড়েন সুতা কোকড়ানো থাকা।
কারণসমূহ
০ শাটেল বক্স এবং কাপড়ের মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে।
০ পড়েন সুতায় অতিরিক্ত পাক থাকলে ।
প্রতিকারসমূহ
০ শাটেল বক্স এবং কাপড়ের মধ্যে দূরত কমাতে হবে।
০ পড়েন সুতায় অতিরিক্ত পাক প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. তির্যক পড়েন (Weft stew)
টুইল কাপড়ে পড়েন সুতা স্বভাবিক অবস্থায় না থেকে তির্যক অবস্থায় থাকলে।
কারণসমূহ
• টানা সুতার টান বেশি হলে।
প্রতিকার সমূহ
০ পড়েন সুতায় অতিরিক্ত পাক থাকলে ।
০ টানা সুতার টান কমাতে হবে।
০ পড়েন সুতায় অতিরিক্ত পাক কমাতে হবে।
৭. টাইট পড়েন (Tight weft)
কাপড়ের মধ্যে পড়েন সুতা অতিরিক্ত সোজা থাকলে ।
কারণ
পার্ন অথবা কপ যদি শক্ত হয়।
প্রতিকার
পার্ন অথবা কপ স্বাভাবিক টেনশনে জড়াতে হবে।
৮. ব্যাক ল্যাশিং বা ল্যাশিং ইন (Back lashing or lashing in)
কাপড়ের পাড় থেকে পড়েন সুতা বের হয়ে থাকা ।
কারণ
• পার্ণ পরিবর্তন মেকানিজমের ক্ষেত্রে এ রকম হতে পারে।
প্রতিকার
• ইন্সপেকশনের সময় উৎপাদিত কাপড় থেকে বের হয়ে থাকা পড়েন সুতা কেটে দিতে হবে।
৯. স্টার্টিং মার্ক (Starting mark)
তাঁত বা লুমে উৎপাদন করার সাথে সাথে উৎপাদিত কাপড়ের স্থানে পিকস এর ঘনত্ব বেশি থাকা। এই অংশকে স্টার্টিং মার্ক বলে।
১০. ক্র্যাকস (Cracks )
উৎপাদিত কাপড়ের ফাঁকা স্থানকে ক্রাক বলে ।
কারণ
০ লেট অফ ও টেক আপ মেকানিজমে ত্রুটি থাকলে।
প্রতিকার
• লেট অফ ও টেক আপ মেকানিজমে ত্রুটি মেরামত করতে হবে।
১১. টিয়ার ড্রপ (Tear drops )
টানা সুতা একটি আর একটির উপর উঠে গেলে টিয়ার ড্রপের সৃষ্টি হয়।
কারণ
০ ত্রুটিপূর্ণ সাইজিং -এর জন্য ।
প্রতিকার
০ যথাযথভাবে সাইজিং করতে হবে।
১২. গোট (Goat)
বাইরের কোন ময়লা আবর্জনা উইভিং -এর সময় সুতার শেডের মধ্যে ঢুকে গেলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।
১৩. ব্লাক পিকস (Black picks ) -
পার্নের সুতায় তেল বা কালির দাগ থাকলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।
(গ) টানা ও পড়েন উভয় বরাবর ত্রুটি
১. ক্লাউডি বা অসমান কাপড় (Cloudy uneven cloth )
কারণসমূহ
কাপড়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ত্রুটিযুক্ত টানা ও পড়েন সুতা ব্যবহার করার কারণে এ ধরনের ত্রুটি হয়।
০ ত্রুটিযুক্ত টানা ও পড়েন সুতা ব্যবহার করলে।
০ টেক আপ ও লেট অফ অসমভাবে হলে।
প্রতিকার
• ত্রুটিমুক্ত টানা ও পড়েন সুতা ব্যবহার করতে হবে।
০ টেক আপ ও লেট অফ সুষমভাবে হতে হবে।
২. তেলের দাগ (Oil or grease spot)
তাঁতির ও শ্রমিকদের অসতর্কতার কারণে কাপড়ের মধ্যে তৈল বা গ্রিজ বা অন্যান্য ময়লার দাগ পড়ে।
৩. হোলস ইন দ্য ক্লথ (Holes in the cloths)
মাঝে মাঝে কাপড়ের মধ্যে ছোট ছোট ছিদ্র বা কাটা দাগ দেখা যায়। এটি স্পেলের জন্যও হতে পারে। অথবা কোনো যন্ত্রাংশের সাথে লেগে ছিদ্র হতে পারে।
৪. ওয়েভি ক্লথ (Wavy cloth )
টানা সুতার টান অসমান হলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায় ।
৫. রাস্ট ইন রুথ (Rust in cloth )
ব্যবহৃত কাপড় বা সুতা যদি দীর্ঘ সময় ধরে ধাতব পদার্থের সংস্পর্শে থাকে, তাহলে এতে মরিচা পড়ে যায় যা কাপড় তৈরি করার পর পরিলক্ষিত হয়।
৬. ডার্টি ক্লথ (Dirty cloth )
অপারেটরের অসতর্কতার কারণে বা লুমের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হলে কাপড়ের পৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের ময়লা জমে কাপড় নোংরা হয়।
৭. হেয়ারি ক্লথ (Hairy fabric)
কাপড় উইভিং করার সময় ব্যবহৃত সুতাগুলোতে যদি খুব দ্রুত ঘর্ষণ হয় তবে এগুলো আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। ডেপথ অব শেড কম হওয়ার কারণে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায় ।
৮. অমসৃণ কাপড় (Rough surface)
কতগুলো কাপড় আছে যাদের বৈশিষ্ট্য অমসৃণ। এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয়। যেমন- হানিকম্ব, হুকাব্যাক ইত্যাদি। কাপড় তৈরি করার সময় টানা সুতার টান যদি অসমান বা কমবেশি হয় তাহলে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।
ত্রুটিমুক্ত কাপড় তৈরির সতর্কতাসমূহ
নিচে ত্রুটিমুক্ত কাপড় তৈরির জন্য সতর্কতাসমূহ আলোচনা করা হলো।
১. তাঁত বা লুমে যান্ত্রিক কারণে বিভিন্ন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, কাজেই কাপড় যথাযথ ত্রুটিমুক্ত করে তৈরি করতে হলে তাঁতের সমস্ত যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করতে হয়।
২. কাঁচামাল হিসেবে তাঁতে উইভারস বিম অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড সুতা এবং পার্ন অর্থাৎ ওয়েফট সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাজেই ত্রুটিমুক্ত উইভারস বিম এবং ত্রুটিমুক্ত পার্ন ব্যবহার করলে সুতার কারণে যে সব ত্রুটি হওয়ার আশংকা থাকে তা দূর হবে।
৩. তাঁত চালনার জন্য অপারেটর অর্থাৎ তাঁতি সতর্ক হলে অনেক ত্রুটি দূর করা সম্ভব। তাঁত চালনার সময় যথাসম্ভব কাপড় ও মেশিনের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তাঁত থেকে কাপড় নামানোর পর ইন্সপেকশন টেবিলে কাপড়ের এক প্রান্ত উঠানো হয় এবং একজন অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ কাপড়ের প্রতিটি অংশ ইন্সপেকশন টেবিলের উপর খুব সূক্ষ্মভাবে আস্তে আস্তে পরীক্ষা ও ত্রুটিসমূহ শনাক্ত করে নোট করেন।
তাঁত থেকে কাপড় নামনোর পর কাপড়টি ইন্সপেকশনের জন্য সেকশনে আনা হয়। অতঃপর উক্ত কাপড়ের এক প্রান্ত ইন্সপেকশন টেবিলের উপরে উঠানো হয়। ত্রুটি শনাক্তকরণের সুবিধার্থে ইন্সপেকশন টেবিলের নিচ থেকে আলো ফেলা হয়। টেবিলের একটি অংশ কাচের তৈরি বলে নিচের আলো কাপড়ের উপর পড়ে কাপড়ের ত্রুটি শনাক্তকরণ সহজ করে দেয়। বিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ত্রুটি শনাক্তকরণের পর যদি সম্ভব হয়। উক্ত ত্রুটি তৎক্ষণাৎ মেরামত করেন এবং ইঞ্চি ইঞ্চি করে টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কাপড় নিয়ে নেন। ইন্সপেকশন টেবিল বিশেষভাবে তৈরি এক প্রান্ত নিচু ও অপর প্রান্ত উঁচু থাকে। ফলে টেকনিশিয়ান সহজেই টেবিলের ঢালু প্রান্তে কাপড় টেনে এনে অথবা যান্ত্রিক উপায়ে কাপড় আস্তে আস্তে টেবিলের অন্য প্রান্তে চলে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ কাপড়কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং শনাক্তকরণ ত্রুটিসমূহ রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়।
ত্রুটির উপর ভিত্তি করে কাপড়
গ্রেডিং সাধারণত ইন্সপেকশন কাপড় ইন্সপেকশন করার পর পূর্বের অধ্যায়ে বর্ণিত ত্রুটিসমূহ শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে কিছু কিছু ত্রুটি সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা হয়। মেরামত করার পর কাপড়ের ত্রুটিসমূহ অনেক কমে যায়। কাজেই উক্ত কাপড় পরবর্তী কাজে ব্যবহারের উপযোগী হয়। সাধারণত মিল লাভজনক করার জন্য তাঁতে তৈরিকৃত কাপড় যাতে বাতিল না হয় তার জন্য কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সতর্ক থাকেন। এরই ফলে ম্যানুফ্যাকচারগণ তৈরিকৃত কাপড়কে গ্রেডিং করা থেকে বিরত থাকেন। তবে ত্রুটির উপর ভিত্তি করে কাপড়কে ২টি গ্রেডে ভাগ করা হয়। যথা-
১. গ্রেড-এ
২. গ্রেড-বি
১. গ্রেড-এ
যে সমস্ত কাপড় ত্রুটিমুক্ত থাকে বা খুবই সামান্য ত্রুটিযুক্ত থাকে যা পূর্বে মেরামত করা হয়েছে ঐ সমস্ত কাপড়কে গ্রেড এ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রেড এ কাপড় রপ্তানির উপযোগী। যা পরবর্তীতে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে পোশাক তৈরির জন্য পাঠানো হয়।
২. গ্রেড-বি
যে সমস্ত কাপড় ত্রুটিযুক্ত অর্থাৎ শনাক্তকারীর ত্রুটি মেরামত করা সম্ভব হয় না উক্ত কাপড়কে বাতিল বা গ্রেড বি এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাপড়কে ত্রুটিযুক্ত অংশে কখনও কখনও কেটে ফেলা হয়। ফলে কাপড় ত্রুটিমুক্ত হয় তবে এ ক্ষেত্রে কাপড়ের ছোট ছোট টুকরা অর্থাৎ কাটপিছ হিসেবে বাজারজাত করা সম্ভব হয়। নতুবা ব্যবহারের অনুপযোগী কাপড়কে বাতিল করা হয়। তবে বাতিলযোগ্য কাপড় ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদন হয় না বললেই চলে।
ভূমিকা
রক্ষণাবেক্ষণ এমন একটি কর্তব্য যার অবহেলা নিজ পায়ে কুড়াল মারার শামিল। যন্ত্রপাতি, মালামাল ও সরঞ্জামাদির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের উপর যে কোনো মেশিনের কাজ বা লক্ষ বহুলাংশে নির্ভরশীল। যে কোনো যন্ত্রপাতি, মালামাল ও সাজ সরঞ্জামাদি থেকে শতভাগ সেবা পেতে হলে এদেরকে সর্বদাই কার্যোপযোগী রাখতে হয়। সে জন্য দরকার এদের যথোপযুক্ত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ।
রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
মেশিনের পরিচর্যা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
ক)হ্যান্ড টুলস
* হ্যামার
* ফাইল
* চিজেল
* রেজ
* ডিভাইডার
* অ্যাডজাস্টটেবল রেঞ্জ
* পাইপ রেঞ্জ
* স্প্যানার
* বক্স রেঞ্জ
* টর্ক রেঞ্জ
সতর্কতা
(ক) মেশিন,যন্ত্রপাতি ইত্যাদির ক্ষয় হয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।
(খ) যে কোনো যন্ত্রপাতি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।
(গ) রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত মেশিনারি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত।
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
উৎপাদন কাজে কিছু যন্ত্রপাতি সরাসরি অংশগ্রহণ করে না অর্থাৎ পরোক্ষভাবে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে তাদেরকে সরঞ্জাম বলে এবং কিছু যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো উৎপাদন কাজে সরাসরি নিয়োজিত হয় অর্থাৎ কাজে সরাসরি ব্যবহার করা হয় তাদেরকে টুলস বলে। এ সরঞ্জাম ও টুলস এক একজন প্রযুক্তিবিদকে সহজেই শনাক্ত করা বা চেনা উচিত। টুলসের নাম না জানলে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। নিচে কিছু টুলসের তালিকা দেওয়া হলো ।
টুলস ও সরঞ্জামের তালিকা
ভূমিকা
রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহের মধ্যে কোন যন্ত্রটি কোন কাজে ব্যবহৃত হবে তা পূর্বেই জেনে নিতে হবে বা নিশ্চিত হতে হবে। নতুবা ব্যবহারের সময় উক্ত যন্ত্রটি ব্যবহার না করে অন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করলে উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত মেশিনটি পুরোপরি অকেজো হয়ে যেতে পারে। কাজেই মেশিন সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থের অপচয় কমানোর লক্ষ্যে প্রতিটি মেশিন অপারেটর অথবা ফিটারের উপযুক্ত টুলসের বা সরঞ্জামের ব্যবহারে সম্বন্ধে অবগত থাকতে হবে।
যন্ত্রের তালিকা ও যন্ত্রের ব্যবহার
০ ফাইল, চিজেল, ট্যাপডাই, স্লিপ ইত্যাদি-হাত দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
০ ড্রিল মেশিন, লেদ মেশিন, গ্রাইন্ডিং মেশিন মেশিন টুলস ।
০ স্টিল রুল, ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স, মাইক্রোমিটার- মাপার কাজে ব্যবহৃত হয়।
০ ফাইল, চিজেল, হ্যাকস - কাটিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
০ টেস্টার, রিং প্রুফ, ওয়ার গেজ, সিলিন্ডার রোর গেজ টেস্টিং টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সতর্কতা
০ যন্ত্রটি চেনা থাকলে দুর্ঘটনা হ্রাস পায়।
০ অর্থের অপচয় হ্রাস করার জন্য যন্ত্রটির ব্যবহার জানতে হবে।
০ যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য/উপসংহার
ভূমিকা
রক্ষণাবেক্ষণ কাজের শেষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ এখানে সেখানে ফেলে না রেখে প্রতিটি টুলস বা যন্ত্রকে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখতে হবে যেন পরবর্তী কাজের সময় টুলস বা সরঞ্জামকে খুঁজতে না হয় । সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে যন্ত্রপাতি মেশিনসমূহ ভালো রাখার তাগিদে ও এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজের পূর্বে ও পরে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরিষ্কার রাখার প্রক্রিয়াকেই পরিষ্কারকরণ বলা হয়।
পরিষ্কারকরণ কাজে ব্যবহৃত উপকরণ
o তেল
o গ্রিজ
o কেরোসিন তেল
০ পানি
o সাবান
o নেকড়া
o পরিষ্কার কাপড় ইত্যাদি
সতর্কতা
• ব্যবহারের পর সরঞ্জামসমূহ এখানে সেখানে ফেলে রাখা উচিত নয় ।
• টুলস বা যন্ত্রপাতি পরিষ্কার না করলে যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
• নির্দিষ্ট স্থানে টুলসসমূহ সাজিয়ে রাখা উচিত।
মন্তব্য/উপসংহার
ভূমিকা
দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণযোগ্য অথচ দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দুর্ঘটনা ঘটবে। তাই নিরাপত্তা বিধিগুলোর যথাযথ অনুশীলন, পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নই কেবল দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে। সুতরাং যে কোনো মেশিন বা কারখানার নিরাপদ পদ্ধতিগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও অনুশীলনের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। যে ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা কর্মে সাধারণ প্রক্রিয়া ও ধারাবাহিকতার ব্যাহত হয় তাকে দুর্ঘটনা বলে ।
নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতির জন্য নির্দিষ্ট সতর্কতা
০ কাজের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত মানের বা মাপের যন্ত্রপাতি নির্বাচন করতে হবে।
০ যেখানে বা মেশিনের যে অংশে ব্যবহার করবে তার সম্বন্ধে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নতুবা মেশিন ভেঙে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
০ ঠিক কোন স্থানে টুলস বা সরঞ্জাম ব্যবহার করবে তা নিশ্চিত হতে হবে।
০ আঘাত করা বা যন্ত্র দ্বারা চাপ দেওয়ার পূর্বে নির্দিষ্ট মাপে বা নির্দিষ্ট ওজনে আঘাত বা চাপ প্রয়োগ করতে হবে। স্টিলের তৈরি মেশিন বা যন্ত্রাংশে আঘাত করতে হলে কাঠের বা প্লাস্টিকের তৈরি হ্যামার ব্যবহার করতে হবে।
মন্তব্য/উপসংহার
সংজ্ঞা
(ক) কৃত্রিম আঁশ :
যে সমস্ত ফাইবার প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়নি কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। এগুলোকে কৃত্রিম আঁশ বলে।
(খ) আংশিক কৃত্রিম :
প্রাকৃতিক বিভিন্ন সেলুলোজিক পদার্থকে অবস্থা ও গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন যে ফাইবার তৈরি করা হয় তাকে আংশিক কৃত্রিম ফাইবার বলে । উদাহরণ- ভিসকোস রেয়ন, কিউপ্রামোনিয়াম রেয়ন, অ্যাসিটেড রেয়ন ইত্যাদি।
(গ) পূর্ণ কৃত্রিম
সম্পূর্ণ কৃত্রিম অর্থাৎ রাসায়নিক পদার্থকে পলিমারাইজেশন করে ১০০ ভাগ কৃত্রিম ফাইবার তৈরি করা হয়। উদাহরণ- নাইলন, পলিয়েস্টার, অ্যাকরাইলিক, স্পানডেক্স ইত্যাদি।
কৃত্রিম আঁশ তৈরি কাঁচামালের পরিচিতি
কৃত্রিম আঁশের মূল উৎস পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা। সাধারণত সিনথেটিক বিভিন্ন মনোমার থেকে পলিমারাইজেশনের মাধ্যমে সিনথেটিক ফাইবার উৎপন্ন হয়। মিথেল থেকে ভিনাইল ক্লোরাইড, ভিনাইল অ্যাসিটেড ইত্যাদি মনোমার পাওয়া যায় । আবার প্রোপাইলিন থেকে পলিপ্রোপাইলিন, অ্যাকরাইলো নাইট্রাইল, বেনজিন থেকে অ্যাডিপিক অ্যাসিড, মেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। যার দ্বারা ফাইবার প্রস্তুত করা করা হয়।
সতর্কতা
বিভিন্ন স্পিনিং পদ্ধতিতে কৃত্রিম আঁশ তৈরি করা সম্ভব। নির্দিষ্ট আঁশ নির্দিষ্ট স্পিনিং পদ্ধতিতে সংগ্রহ করতে হবে।
উপসংহার /মন্তব্য
* স্পর্শ বা অনুভব পরীক্ষা (Feeling test )
স্পর্শ পরীক্ষা সাধারণত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। যে সমস্ত প্রযুক্তিবিদ ফাইবার নিয়ে কাজ করে, শুধু তাঁরাই আঁশ দেখে এবং অনুভব করে আঁশের নাম এবং কোয়ালিটি সমন্ধে ধারণা করতে পারেন।
আগুনে পুড়ে পরীক্ষা (Burningtes )
টেক্সটাইল বিভিন্ন ফাইবারের গঠনগত উপাদানের কারণে আগুনে পোড়ার পর আঁশের আচরণ- ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়। ফলে উক্ত আচরণ শনাক্ত করে আঁশকে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণত আঁশের গুচ্ছ থেকে করেকটি আঁশ অথবা কাপড়ে থেকে মমুনা টুকরো সংগ্রহ করে তার থেকে একটা বা দুইটা করে সুতা আগুনের শিখার উপর ধরা হয় এবং আনুমানিক ১০ সেকেন্ড জ্বলতে দেওয়া হয়।
নাইলন
• ধীরে ধীরে পুড়ে ও গলে যায় ।
• আগুন হতে সরালে শিখা আস্তে আস্তে নিভে যায়।
• পিরিডন-এর হালকা পক্ষ পাওয়া যায়।
• চকচকে বা বাদামি শক্ত গোলাকার পুঁতির দানার মতো অবশিষ্ট থাকে।
পলিয়েস্টার
• পুড়ে ধীরে ধীরে গলে যায়।
• শিখা আস্তে আস্তে নিতে যায়, সহজে দাহ্য থাকে না।
• মৃদু মিষ্টি অ্যারোমেটিকের পদ্ধ পাওয়া যায়।
• চকচকে বা বাদামি শক্ত গোলাকার ভঙ্গুর পুঁজির দানার মতো ছাই পাওয়া যায় ।
জ্যাকরাইলিক
• দ্রুত জ্বলে ও মিটমিট করে।
• আগুন হতে সরালে অবিরাম পলে ও পুড়তে থাকে।
• মৃদু মাংস পোড়া গন্ধ ।
• ভঙ্গুর শক্ত অসমান পুঁজির দানার মতো ছাই পাওয়া যায় ।
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা
বিভিন্ন আঁশের প্রকৃতি নির্ধারণে অণুবীক্ষণিক পরীক্ষাই সর্বাপেক্ষা উত্তম, নির্ভরযোগ্য ও নির্ভুল। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখলে বিভিন্ন আকৃতির আঁশ বিভিন্ন দেখায়।
নাইলন
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা বিভিন্ন আঁশের প্রকৃতি নির্ধারণে অণুবীক্ষণিক পরীক্ষাই সর্বাপেক্ষা উত্তম, নির্ভরযোগ্য ও নির্ভুল। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখলে বিভিন্ন আকৃতির আঁশ বিভিন্ন দেখায়।
পলিয়েস্টার
মসৃণ এবং সোজা, ক্রস সেকশন গোলাকার সাধারণত চকচকে তবে কখনও কখনও কম চকচকে করা হয়।
রাসায়নিক পরীক্ষা (Chemical test )
এই পদ্ধতিতে ফাইবার শনাক্ত করা খুবই কষ্টসাধ্য, যখন একই কাপড়ে বা সুতয় বিভিন্ন ধরনের ফাইবার ব্লেন্ডেড অবস্থায় মিশ্রিত থাকে।
ভূমিকা
সুতা বা কাপড় তৈরির গুণাবলি বিদ্যমান এ রকম ফাইবারকেই টেক্সটাইল ফাইবার বলা হয়। সমস্ত টেক্সটাইল ফাইবার সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি প্রাকৃতিক ফাইবার এবং অন্যটি মানুষের তৈরি ফাইবার। মানুষের তৈরি ফাইবারকেই কৃত্রিম ফাইবার নামে অভিহিত করা হয়েছে। যা তার উৎসের উপর নির্ভর করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি পূর্ণ কৃত্রিম অন্যটি আংশিক কৃত্রিম।
বিভিন্ন প্রকার ব্যালেন্স
টেক্সটাইল ফাইবার, সুতা ও কাপড় পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে অনেক আধুনিক ব্যালেন্সও পাওয়া যায়। যা দ্বারা সরাসরি টেক্সটাইল পণ্যের ওজন মাপা হয় ।
বিভিন্ন প্রকারের ব্যালেন্সের তালিকা
• নোয়েলস ব্যালেন্স
• কোয়ার্ডেন্ট ব্যালেন্স
• বিজলিস ইয়ার্ন ব্যালেন্স
• এনালাইটিক্যাল ব্যালেন্স
• ইলেকট্রনিক ব্যালেন্স ইত্যাদি
সতর্কতা
ব্যালেন্স ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে খুব সূক্ষ্ম ওজন নেওয়ার সময় বাতাস ব্যালেন্সে স্পর্শ করতে না পারে ।
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
বিভিন্ন মিলকারখানায় ফাইবার, সুতা ও কাপড় পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যালেন্স রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট ব্যালেন্স
(ক) অ্যানালাইটিক্যাল ব্যালেন্স
এই ব্যালেন্সের সাহায্যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা সহজ এবং শিল্প কারখানায় রুটিন টেস্টের জন্য খুবই উপযোগী। র্যাপরিল দ্বারা সুতার লি প্রস্তুত করে অ্যানালাইটিক্যাল ব্যালেন্স ওজন করে সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা সম্ভব। তবে এ ব্যালেন্স অন্যান্য অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়।
(খ) কোয়ার্ডেন্ট ব্যালেন্স
এই ব্যালেন্সের সাহায্যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা অত্যন্ত সহজ। এতে কোনো ক্যালকুলেটর ছাড়াই স্কেল থেকে সুতার কাউন্ট জানা যায়। যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে তার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য র্যাপিলের সাহায্যে বের করে কেটে হুকে স্থাপন করলেই নির্দেশকটি স্কেলের মধ্যে যে বিন্দু নির্দেশ করবে তা সরাসরি উক্ত কাউন্ট নির্দেশ করে ।
(গ) নোয়েলস ব্যালেন্স
এটি একটি বিশেষ ধরনের ব্যালেন্স। যা দ্বারা সরাসরি সুতার কাউন্ট পাওয়া যায়। এ পদ্ধতি সুতার কাউন্ট বের করার জন্য কোনো গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজন নেই। স্কেল থেকে সরাসরি সুতার কাউন্ট জানা যাবে।
(ঘ) বিজনিস ইয়ার্ন ব্যালেন্স
এ ব্যালেন্সে কাপড় হতে সুতার ছোট ছোট টুকরো সংগ্রহ করে আদর্শ ওজনের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সুতার টুকরো রেখে ডেটাম লাইন বরাবর নির্দেশকটি এলেই টুকরা সুতার সংখ্যাই সুতার কাউন্ট। এ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ ও কম সময়ে বের করা সম্ভব ।
(ঙ) ইলেকট্রনিক ব্যালেন্স
এ ব্যালেন্সে বিভিন্ন ওজন নেওয়ার নিমিত্ত ফাইবার, সুতা, কাপড় ইত্যাদির জন্য প্রথম থেকেই আলাদা প্রোগ্রাম করা থাকে। যে বস্তুটি ওজন করতে হবে তা সরাসরি ওজনের জন্য সেই নির্দেশিত মান ব্যালেন্সের বোতাম বা সুইচের মাধ্যমে মনিটরে ওজন করলেই সরাসরি সুতা বা কাপড়ের ওজন পাওয়া যাবে। বর্তমানে কাপড়ের জিএসএম (GSM) বের করার ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ব্যালেন্স প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সতর্কতা
প্রতিটি ব্যালেন্স ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। ভুলভাবে নাড়াচাড়া ব্যালেন্সকে নষ্ট করে দিতে পারে।
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
র্যাপরিলের পরিধি সাধারণত ১.৫ গজ। কাজেই একটি লি তৈরি করার জন্য র্যাপরিলকে ৮০ বার ঘূর্ণন দেওয়া প্রয়োজন। র্যাপরিলে ৮টি ববিন স্ট্যান্ড থাকে। ববিন স্ট্যান্ড এর পাশাপাশি গাইডও ৮টি থাকে যার মাধ্যমে আটটি লি তৈরি করা সম্ভব।
পদ্ধতি
সাধারণত দুই প্রকার র্যাপরিল পাওয়া যায়, একটি ম্যানুয়াল ও অপরটি বৈদ্যুতিক। ম্যানুয়াল র্যাপরিলে হ্যান্ডেল থাকে যার মাধ্যমে ৮০ বার ঘূর্ণন দ্বারা ১২০ গজের সুতার লি তৈরি করা যায়। এটি ছাড়াও বৈদ্যুতিক র্যাপরিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৮০ বার ঘূর্ণনের পর (৮০ x ১.৫) ১২০ গজের একটি লি প্রস্তুত করার পর থেমে যায়। র্যাপরিলে একবারে ৮টি লি তৈরি করা সম্ভব।
সংজ্ঞা
(ক) কটন কাউন্ট
এক পাউন্ড ওজনের সুতার মধ্যে ৮৪০ গজের যতটা হ্যাংক থাকে উক্ত সুতার কাউন্ট তত।
(খ) মেট্রিক কাউন্ট
১০০০ মিটারের যতগুলো স্টেইনের ওজন ১ কেজি সুতার কাউন্ট তত হবে।
(গ) টেক্স কাউন্ট
১০০০ মিটার বা ১ কিলোমিটার সুতার ওজন যত গ্রাম হবে সুতার কাউন্ট তত হবে।
(ঘ) ডেনিয়ার
৯০০০ মিটার সুতার ওজন যত গ্রাম হবে উক্ত সুতার ডেনিয়ার তত।
(ঙ) উরস্টেড কাউন্ট
৫৬০ গজের যতগুলো হ্যাংকের ওজন এক পাউন্ড হবে উক্ত সুতার উরস্টেড কাউন্ট তত।
(চ) স্পাইন্ডেল
১৪৪০০ গজ সুতার ওজন যত পাউন্ড হবে সুতার কাউন্ট তত পাউন্ডস/স্পাইন্ডেল
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
একটি সুতার প্রস্থচ্ছেদ করলে তার মধ্যে অনেকগুলো আঁশ দৃষ্টিগোচর হবে। আঁশসমূহ আলাদা আলাদা থাকলে একসঙ্গে একে আমরা সুতা বলব না। কিন্তু এই আলাদা আঁশসমূহ একত্রে মোচড় দেওয়া অবস্থায় থাকলে তখন তাকে আমরা সুতা বলব। কাজেই আঁশ যখন আলাদা আলাদা পাশাপাশি থাকে তাকে সুতায় রূপান্তরিত করার জন্য যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্যাচ বা মোচড় দেওয়া হয় তাকে আমরা পাক বা টুইস্ট বলে থাকি।
সংজ্ঞা
টুইস্ট: সুতার মধ্যে অবস্থিত আঁশসমূহকে তার অক্ষের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ডান থেকে বামে অথবা বাম থেকে ডানে যে প্যাঁচ বা মোচড় দেওয়া হয় তাকে পাক বা টুইস্ট বলে।
টুইস্ট এর প্রকারভেদ
টুইস্ট -এর দিকের উপর নির্ভর করে টুইস্ট -এর প্রকারভেদ করা হয়। অর্থাৎ আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে কোন দিকে আবর্তিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে টুইস্টের প্রকারভেদ করা হয় । তাই টুইস্ট উপর নির্ভর করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। -এর দিকের
১। এস টুইস্ট (S-twist)
২। জেড টুইস্ট (Z-twist )
এস টুইস্ট (S-twist)
এক্ষেত্রে আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে বামদিকে ঘুরে ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে ঘুরে যে টুইস্ট গঠন করে তাকে এস টুইস্ট (S-twist) বলে।
জেড টুইস্ট (Z-twist)
এক্ষেত্রে আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে ডান দিকে ঘুরে ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার দিকে ঘুরে যে টুইস্ট গঠন করে তাকে এস টুইস্ট (S-twist) বলে।
সংজ্ঞা
সুতার মধ্যে অবস্থিত আঁশসমূহকে টুইস্ট প্রদান করে সুতায় রূপান্তরিত করা হয়। সুতায় প্রতি ইঞ্চিতে যতগুলো টুইস্ট থাকে তাকে টিপিআই বা টুইস্ট/ইঞ্চি বলে ।
সুতায় টুইস্ট প্রদানে গুরুত্ব
সুতায় টুইস্ট প্রদানের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো।
১। টুইস্ট প্রদানে সুতার শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২। পাশাপাশি অবস্থিত সমান্তরাল আঁশসমূহে টুইস্ট প্রদানের কারণে আঁশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।৩। স্পিনিং থেকে উৎপাদিত সুতা দৃঢ় হয় ফলে স্পিন্ডেলে জড়াতে সহজ হয়।
৪। টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতা গোলাকৃতি আকার ধারণ করে এবং সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধি পায়।
৫। টুইস্ট প্রদান নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলে সুতা যথেষ্ট মজবুত হয়।
৬। টুইস্ট প্রদানের কারণেই পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ কাপড় তৈরিতে সহজ হয়।
ভূমিকা
সুতার সমান্তরাল ফাইবারগুলোকে একসাথে ধরে রাখার জন্য সুতার অক্ষের সাথে ফাইবারগুলো পাক বা টুইস্ট দেওয়া হয়। টুইস্ট বা পাক পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তবে কোনটি কখন ব্যবহার করা হয় তা নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
০ পরীক্ষণীয় বস্তু
০ পরীক্ষণীয় বস্তুর আকৃতি
• পরীক্ষর্ণীয় বস্তুর পরিমাণ
• ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা
সুতার পাক পরিমাপের যন্ত্রের তালিকা
১. অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার
২. কন্টিনিউয়াস টুইস্ট টেস্টার
৩. টুইস্ট কন্সট্রাকশন
৪. টেল আপ টুইস্ট টেস্টার
৫. টুইস্ট মেজারমেন্ট বাই মাইক্রোস্কোপ
পাক পরিমাপের যন্ত্রের পরিচিতি
অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার
অর্ডিনাবি টুইস্ট টেস্টারের মাধ্যমে সিঙ্গেল অথবা প্লাই সুতার টুইস্ট পরিমাপ করা হয়। এ যন্ত্রে দুটি বাঁট থাকে । একটি স্থির অন্যটি চলমান। স্থির বাঁটটি বেসের সাথে দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে। অন্য বাঁটটি চলনশীল একটি রেইলের উপর বসানো থাকে যাতে এ বাঁটটি পরীক্ষণীয় বস্তুর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী একটি ক্যারেজ -এর মাধ্যমে সরানো যায়। একটি স্থির বাট এবং চলনশীল বাঁটের মধ্যে আটকানো সুতার দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে। একটি হুইলের সাথে যুক্ত হাতল উভয় দিকে ঘুরানো যায়। ফলে স্থির বাঁটের ক্লাম্প ঘুরে এবং একই সাথে ক্লাম্পটি কতবার ঘুরবে তা ডায়ালের পয়েন্টার দ্বারা নির্দেশ করে।
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
সুতার পাক পরিমাপের পূর্বে সুতার নমুনায়ন সঠিকভাবে করতে হবে। পাকের পরিমাণ সুতার সব জায়গায় সমান থাকে না। সাধারণত সুতার চিকন জায়গায় পাক বেশি থাকে এবং মোটা জায়গায় পাক কম থাকে। তাই নিজের ইচ্ছা মতো সুতা নিয়ে পাক পরীক্ষা করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না। তাই একটি লম্বা সুতা থেকে পাক পরিমাপ করার জন্য যে নমুনা নেওয়া হবে তা কমপক্ষে ১ গজ অন্তর অন্তর নিতে হবে। এটা ছাড়া একটি ইয়ার্ন প্যাকেজ থেকেও সুতা সংগ্রহ না করে অন্তত ১০টি প্যাকেজ থেকে ২০টি পরীক্ষা করতে হবে।
অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টারের সাহায্যে পাক পরিমাপ
অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার মাধ্যমে সিঙ্গেল অথবা প্লাই সুতার টুইস্ট পরিমাপ করা হয়। এ যন্ত্রে দুটি বাঁট থাকে। একটি স্থির অন্যটি চলমান। স্থির বাঁটটি বেসের সাথে দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে। অন্য বাঁটটি চলনশীল একটি রেইলের উপর বসানো থাকে যাতে এ বাঁটটি পরীক্ষণীয় বস্তুর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী একটি ক্যারেজ এর মাধ্যমে সরানো যায়। একটি স্থির বাঁট এবং চলনশীল চিমটার/ক্লাম্পের মধ্যে আটকানো সুতার দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে। একটি হুইলের সাথে যুক্ত হাতল উভয় দিকে ঘুরানো যায়। ফলে স্থির বাঁটের ক্লাম্প ঘুরে এবং একই সাথে ক্লাম্পটি কতবার ঘুরবে তা ডায়ালের পয়েন্টার দ্বারা নির্দেশ করে।
ফলাফল
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচার বিভাগের সর্বশেষ মেশিন রিং ফ্রেম থেকে প্রাপ্ত রিং ববিনের সুতাসমূহ দ্বারা সরাসরি কাপড় প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ তাঁতে ব্যবহার করা যায় না। তাঁতে ব্যবহারের পূর্বে কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ ধাপগুলোর প্রথমটিই হচ্ছে ওয়াইন্ডিং।
ওয়াইন্ডিং -এর প্রকারভেদ
ওয়াইন্ডিং প্রক্রিয়া তিন প্রকার
ক) সমান্তরাল ওয়াইন্ডিং
খ) প্রায় সমান্তরাল ওয়াইন্ডিং
গ) আড়াআড়ি ওয়াইন্ডিং
ক)সমান্তরাল ওয়াইন্ডিং
ইয়ার্ন প্যাকেজে ধরনের ওয়াইন্ডিং -এ সুতাসমূহ সমান্তরালভাবে জড়ানো থাকে।
খ) প্রায় সমান্তরাল ওয়াইন্ডিং
ইয়ার্ন প্যাকেজে ধরনের ওয়াইন্ডিং -এ সুতাসমূহ প্রায় সমান্তরালভাবে জড়ানো থাকে ।
গ) আড়াআড়ি ওয়াইন্ডিং
এ ধরনের প্যাকেজে সুতাগুলো কোনাকুনি অবস্থানে জড়ানো থাকে । বিভিন্ন প্রকার ওয়াইন্ডিং প্যাকেজের নাম
o কোন
০ চিজ
o স্পুন
০ পান
০ কপ ইত্যাদি ।
উপসংহার /মন্তব্য
সংজ্ঞা
(ক)কোন ওয়াইন্ডিং
যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ (রিং ববিন) থেকে পরবর্তী বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সুতার বড় প্যাকেজ অর্থাৎ কোন আকারে সুতায় জড়ানো হয় তাকে ওয়াইন্ডিং বলে। কোন ওয়াইন্ডিং পদ্ধতিতে যে ইয়ার্ন প্যাকেজ প্রস্তুত হয় তাকে কোন বলে। কোন সাধারণত টানা সুতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(খ) পার্ন ওয়াইন্ডিং
যে পদ্ধতিতে পড়েন সুতা মাকুতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে খালি নলি/পার্ন এ জড়ানো হয় তাকে পার্ন ওয়াইন্ডিং বলে। সাধারণত পড়েন সুতা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পার্ন মাকুতে প্রবেশ করানো হয়।
(গ) চিজ ওয়াইন্ডিং
যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ থেকে পরবর্তী সুবিধাজনক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সুতার বড় প্যাকেজ অর্থাৎ চিজ আকারে সুতা জড়ানো হয় তাকে চিজ ওয়াইন্ডিং বলে। সুতা বহন করার সুবিধার্থে চিজ তৈরি করা হয়।
(ঘ) স্থুল ওয়াইন্ডিং
যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ থেকে পরবর্তী সুবিধাজনক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সুতার বড় প্যাকেজ অর্থাৎ স্পুল তৈরি করা হয় তাকে স্পুন ওয়াইন্ডিং বলে। স্পুল সাধারণত জুট ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি করা হয়। বিম তৈরির উদ্দেশ্যে টানা সুতা হিসেবে স্কুল ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন প্রকার ওয়াইন্ডিং প্যাকেজের নাম
o কোন
০ চিজ
o স্কুল
০ পান
০ কপ ইত্যাদি।
উপসংহার /মন্তব্য
সংজ্ঞা
যে পদ্ধতিতে অনেকগুলো ছোট ছোট সুতার প্যাকেজ যেমন- কোন, স্কুল, চিজ প্রভৃতি হতে টানা সুতাগুলোকে নির্দিষ্ট বহরে ও নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে সমান্তরালভাবে সাজিয়ে ধারাবাহিক স্তরের আকারে একটি খালি বিমে জড়ানো হয় তাকে টানা প্রকরণ বলে। যে বিমে সুতাগুলোকে জড়ানো হয় তাকে ওয়ার্পার বিম বলে ।
টানা প্রকরণের প্রকারভেদ
টানা প্রকরণ প্রধানত ২ প্রকার। যথা:
(ক) সেকশনাল বা বিম ওয়ার্সিং
(খ) ড্রাম ওয়ার্সিং
এটি ছাড়া আরও এক প্রকার ওয়ার্নিং রয়েছে যা বল ওয়ার্সিং নামে পরিচিত। টানা প্রকরণ বা ওয়ার্সিংকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়।
উপসংহার /মন্তব্য
সংজ্ঞা
সাধারণত বস্তু সংখ্যক টানা সুতা বিশিষ্ট চেক ফেব্রিক্স এর ক্ষেত্রে যেখানে রঙিন সুতার সংখ্যা মোট সুতার ১৫% এর বেশি সে সব ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে ওয়ার্সিং-এর পূর্বে হ্যাংক অবস্থায় সাইজিং করে নিতে হয়। পরে সাইজিং সুতাকে ববিনে জড়ানো হয়। অতঃপর ববিনগুলোকে ক্রিলে সাজানো হয়। সেকশনাল ওয়ার্সিং এর ক্ষেত্রে আজকাল যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ করা যায় যেমন ওয়ার্সিং -এর বিমিং -এর গতি উচ্চ হতে উচ্চতর হয়ে থাকে। বিমের ফ্লাঞ্জ বৃহৎ রাখা হয় এবং ড্রামে সবগুলো সেকশনের গঠন প্রকৃতি সিলিন্ড্রিক্যাল রাখা হয়।
ক্রিল সাজানো
প্রথমে সুতা ফ্লাঞ্জ ববিনে জড়ানো হয়। এরপর রঙিন সুতার সংখ্যা অনুযায়ী ক্রিলে ববিনসমূহ সাজানো হয়।
মনে করা যাক, সাদা সুতার সংখ্যা = ২৪টি
লাল সুতার সংখ্যা = : ২৪টি
ক্রিলে সাধারণত ৫ খোপ থাকে
যে নিয়মে রঙিন সুতা টানা বিমে রাখতে হবে সে নিয়মে টানা সুতার ফ্রাঞ্জ ববিন ততটি করতে হবে। অর্থাৎ ক্রিলে প্রথমে ২৪টি সাদা সুতার ববিন ও পরে ২৪টি লাল সুতার ববিন এভাবে নিতে হবে। প্রথমে ক্রিলের বাম দিক থেকে উপরের ছিদ্রপথে প্রথম ও দ্বিতীয় খোপে সাদা সুতার ববিন এবং তৃতীয় ও চতুর্থ খোপে লাল সুতার ববিন এই নিয়মে প্রথম কাঠি বা শলা পরিয়ে ববিনগুলো স্থাপন করতে হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি ক্রিলের খোপে ববিন সাজানো হয়।
উপসংহার /মন্তব্য
ভূমিকা
সাইজিং -এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো টানা সুতার ন্যূনতম ক্ষতি না করে কাপড় উইভিং করা। সাইজিং -এ এই উদ্দেশ্য সাধিত হয় সুতার মধ্যকার আঁশসমূহ পারস্পরিক লেগে থেকে এর শক্তি ও ক্ষমতা ও মসৃণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। উইভিং বিভাগে সুতায় সাইজিং করা ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়। তবু সুতায় সাইজিং করা হয়। কেন না সাইজিং করার কারণে উইভিং -এর দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
মাড়ের উপাদান ও উদাহরণ
শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
উদাহরণ- মেইজ স্টার্চ (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্চ (Topioca starch), ময়দা (Flour), সাও স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ। আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিভিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ।
সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents)
উদাহরণ- মাটন ট্যালো ( Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর ওয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেড়ির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স (Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি।
হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents )
উদাহরণ- ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2 ), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।
অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics )
উদাহরণ- জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CH4 (OH) COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি ।
নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents )
উদাহরণ- সোডা অ্যাশ।
অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents )
উদাহরণ- অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি।
টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents )
উদাহরণ- টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।
ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agent)
উদাহরণ- চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ( MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যানেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ইত্যাদি।
মাড়ের উপাদান নির্ধারণ করার বিবেচ্য বিষয়সমূহ
০ টানা সুতার ধরন
০ মাড়ের উপাদান/উপকরণের মূল্য
০ মাড়ের ভিসকোসিটির স্থায়িত্ব
০ আঠালো জাতীয় পদার্থ
০ ডিসাইজিং-এর সময় সহজেই অপসারণের যোগ্যতা
০ মেশিনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সতর্কতা
০ উপকরণ যাতে স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
০ কাপড়ের কোনো ক্ষতি না হয়।
০ পানিতে সহজেই দ্রবণীয় হতে হবে।
০ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুতায় থাকতে হবে।
০ অপসারণের পর্যায়ে খরচ যাতে কম হয়।
উপসংহার /মন্তব্য
সংজ্ঞা সাইজ :
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণজনিত কারণে সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমিং করা টানা সুতার পৃষ্ঠব্যাপী আঠালো পদার্থ ও অন্যান্য উপাদান দ্বারা মসৃণ করা হয়। এই আঠালো পদার্থসমূহকে একত্রে সাইজ বলা হয় এবং প্রণালীকে মাড় প্রকরণ বা সাইজিং (Sizing) বলে।
সাইজিং :
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণজনিত কারণে সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে টানা সুতাকে রক্ষা করার জন্য টানা সুতার শিটের পৃষ্ঠে আঠালো পদার্থ ও অন্যান্য সাইজিং উপাদান-এর সাহায্যে টানা সুতাকে মসৃণ করার প্রণালিকে সাইজিং (Sizing) বলে।
সতর্কতা
০ রেসিপি কমবেশি হলে মাড়ের দ্রবণ ঘন ও পাতলা হতে পারে যা মাড় প্রকরণ সুতার জন্য ক্ষতিকর।
০ মাড়ের উপাদান নির্বাচন করার সময় উপাদানের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে নতুন মাড় প্রকরণের খরচ বেড়ে যাবে।
উপসংহার /মন্তব্য
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কৃত্রিম আঁশ বলতে কী বোঝায় ?
২. ফিলামেন্ট ফাইবারের সংজ্ঞা দাও।
৩. স্পিনারেট কী?
৪. ওয়েট স্পিনিং বলতে কী বোঝায়?
৫. কোন কোন ফাইবার ড্রাই স্পিনিং পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়?
৬. বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত কয়েকটি পলিক্র্যামাইড ফাইবারের নাম লেখ।
৭. নাইলন ৬.৬ এর কাঁচামাল কী?
৮. নাইলন ৬.৬ এর আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা কত?
৯. পলিয়েস্টার-এর বাণিজ্যিক নাম লেখ।
১০. পলিয়েস্টার ফাইবার তৈরির কাঁচামাল কী?
১১. পৃথিবীর সর্বপ্রথম কৃত্রিম ফাইবার কাকে বলা হয়?
১২. পলিয়েস্টার ফাইবার এর আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা কত?
১৩. কয়েকটি অ্যাকরাইলিক ফাইবারের বাণিজ্যিক নাম লেখ?
১৪. অ্যাকরাইলিক ফাইবারের কাঁচামাল কী? লেখ।
১৫. অ্যাকরাইলিক ফাইবারের ফিলামেন্ট কোন ধরনের স্পিনিং-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়?
১৬. মেট্রিক কাউন্ট বলতে কী বোঝায়?
১৭. টেক্স-এর সংজ্ঞা দাও ।
১৮. ডেনিয়ার কাউন্টের দৈর্ঘ্যর একক কত?
১৯. উরস্টেড কাউন্ট-এর সূত্রটি লেখ।
২০. সুতার টুইস্ট বলতে কী বোঝায়?
২১. ক্রিলের সংজ্ঞা দাও ।
২২. সেকশনাল ওয়ার্সিং এর সংজ্ঞা দাও।
২৩. সাইজিং-এর সংজ্ঞা দাও ।
২৪. কাপড়ের যে কোনো ৫টি ত্রুটির নাম লেখ।
২৫. ক্লথ ইন্সপেকশন বলতে কী বোঝায়?
২৬. কাপড়ের গ্রেডিং কাকে বলে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কৃত্রিম আঁশের শ্রেণিবিভাগ কর।
২. ড্রাই স্পিনিং পদ্ধতির বর্ণনা দাও।
৩. মেন্ট স্পিনিং পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।
৪. নাইলন ৬.৬ কে কেন নাইলন ৬.৬ বলা হয়?
৫. নাইলন ৬.৬ এর ভৌত গুণাবলি লেখ।
৬. নাইলন ৬.৬ এর রাসায়নিক গুণাবলি লেখ।
৭. নাইলন ৬.৬ এর ব্যবহার লেখ।
৮. ক্যাপারোল্যাকটাম-এর উৎপাদন সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
৯. পলিয়েস্টার ফাইবারের ভৌত গুণাবলি লেখ ।
১০. পলিয়েস্টার ফাইবারের ব্যবহার লেখ।
১১. ভিনাইল সায়ানাইড-এর সংকেত লেখ।
১২. অ্যাকরাইলিক ফাইবারের ভৌত গুণাবলি লেখ ।
১৩. অ্যাকরাইলিক ফাইবারের রাসায়নিক গুণাবলি লেখ।
১৪. অ্যাকরাইলিক ফাইবারের ব্যবহার লেখ।
১৫. টেক্স থেকে কটন কাউন্ট-এ রূপান্তর-এর সূত্রটি লেখ।
১৬. ডেনিয়ার থেকে টেক্স পদ্ধতিতে রূপান্তর-এর সূত্রটি লেখ।
১৭. কটন কাউন্ট থেকে মেট্রিক কাউন্টে রূপান্তর-এর সূত্রটি লেখ।
১৮. কটন কাউন্টকে ওরস্টেড কাউন্টে রূপান্তর কর।
১৯. কাউন্ট ও টুইস্ট/ইঞ্চি-এর সূত্রটি লেখ।
২০. সেকশনাল ওয়ার্সিং-এর উদ্দেশ্য লেখ।
২১. সেকশনাল ওয়ার্সিং ও মিল ওয়ার্সিং-এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
২২. সাইজিং-এর উদ্দেশ্য লেখ।
২৩. সাইজিং-এর উপাদানসমূহের নাম লেখ।
২৪. কটন সুতার জন্য আদর্শ মাড়ের রেসিপি দেখাও ।
২৫. কয়েকটি অ্যাডহেসিভ ম্যাটারিয়ালের নাম লেখ ।
২৬. যে কোনো ৩টি সফেনিং এজেন্ট-এর নাম লেখ ।
২৭. প্রতিষেধক উপাদানের কাজ কী?
২৮. কাপড়ের ২টি ত্রুটির কারণ ও প্রতিকার লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. কৃত্রিম আঁশের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা।
২. নাইলন ৬.৬ এর প্রস্তুত প্রণালির বর্ণনা দাও।
৩. কৃত্রিম স্পিনিং পদ্ধতির বর্ণনা দাও।
৪. পলিয়েস্টার ফাইবারের প্রস্তুত প্রণালির বর্ণনা দাও।
৫. অ্যাকরাইলক ফাইবারের প্রস্তুত প্রণালির বর্ণনা দাও
৬. টেক্স, ডেনিয়ার, মেট্রিক ও ওরস্টেড কাউন্টের মধ্যে সম্পর্কসমূহ আলোচনা করা।
৭. সাইজিং-এর উপাদানসমূহ উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
৮. স্লেশার সাইজিং মেশিন চিত্রসহ বর্ণনা কর।
৯. সাইজিং-এর উপাদানসমূহ গুণাগুণসহ বর্ণনা কর ।
১০. ক্লথ গ্রেডিং-এর বর্ণনা দাও।
১১. কাপড়ের ত্রুটিসমূহ কারণ ও প্রতিকারসহ বর্ণনা কর।
আরও দেখুন...