নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন অন্যতম মহৎগুণ। মর্যাদার দিক থেকে নারী-পুরুষকে ইসলাম আলাদা করেনি। ইসলাম নারী জাতিকে যথাযথ অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে। সম্মানের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হলো নারী জাতির প্রতি উত্তম আচরণ করা, তার প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা।
ইসলামে নারীর সম্মান ও মর্যাদা
নারীর মর্যাদা বলতে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারীর যথার্থ মূল্যায়নকেই বুঝানো হয়। ইসলাম নারীকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। কেননা ইসলাম পূর্ব যুগে নারী ছিল সবচেয়ে অবহেলিত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত। সে সময় নারীদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হতো না। তাদের সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। তাদের প্রতি খুবই কঠোর আচরণ করা হতো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কন্যা সন্তানকেও জীবন্ত কবর দিত। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া অমর্যাদার প্রতীক মনে করা হতো।
ইসলাম মা হিসেবে নারীকে সন্তানের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেছে। একদিন জনৈক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল। আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, অতঃপর কে? রাসুল (স.) বললেন, তোমার মা। সাহাবি বললেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবি বললেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর তোমার পিতা। (বুখারি) এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সন্তানের উপর পিতার চাইতেও মাতার অধিকার তিন গুণ বেশি। এটি মা হিসেবে নারীর অনন্য মর্যাদার পরিচায়ক।
কন্যা হিসেবেও নারীর মর্যাদা অপরিসীম। কন্যাদের ভালোভাবে প্রতিপালনের জন্য ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছে। মহানবি (সা.) বলেছেন, 'মেয়ে শিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক'। হাদিসে আরও আছে, 'যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যা সন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যা সন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়'। (তিরমিযি)
ইসলাম স্ত্রী হিসেবে নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে। মহানবি (সা.) বলেছেন, 'উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক'। (মুসলিম) তিনি আরও বলেন, 'তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম'। (তিরমিযি) স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা ও সম্মান স্বামীর অনুরূপ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 'নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার'। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮)
অনেক পরিবারে মনে করা হয় পরিবারের ছেলেরা 'বংশের বাতি', তারা মা-বাবাকে রোজগার করে খাওয়াবে, দেখাশোনা করবে আর মেয়েরা তো চলে যাবে পরের বাড়ি। কাজেই খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া সব ব্যাপারেই সকলের মনোযোগ থাকে ছেলেদের প্রতি। ইসলাম এমন আচরণ করতে নিষেধ করেছে। মহানবি (সা.) ঘোষণা করেন, 'কোনো ব্যক্তির ঘরে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে সে যদি তাকে জীবন্ত কবর না দেয়, তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা না করে এবং তার পুত্র সন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয় তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন'। (আবু দাউদ)
নারীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা মুমিনের নিদর্শন। নারীর প্রতি সম্মানবোধ না থাকলে ইমান পূর্ণ হয় না। নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যায়। কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে মুমিনদেরকে নানা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের প্রতি ভালো ব্যবহারকারীদের উত্তম উম্মত হিসেবে বর্ণনা করে বলেন-
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ
অর্থ: 'তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম'। (তিরমিযি)
অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি পূর্নাঙ্গ মুমিন হবে। যে তাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও নিজ পরিবারের প্রতি অধিক সদয়'। (তিরমিযি)
ইসলাম নারীর মর্যাদার স্বীকৃতিস্বরূপ বিবাহের ক্ষেত্রে মহর প্রদান অপরিহার্য করেছে। কিন্তু অনেক মুসলিম মহর আদায় করে না। আবার কেউ আংশিক আদায় করে। আবার কেউ যৌতুক গ্রহণ করে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত কাজ। মহর আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وأتوا النِّسَاءَ صَدُقَتِهِنَّ نِحْلَةً
অর্থ: 'আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।' (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)
ইসলাম নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিয়ে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীদেরকে তাদের উত্তরাধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হয়। কেউ আংশিক সম্পত্তি দেন। কেউ সামান্য কিছু টাকা পয়সা দিয়ে সমস্ত সম্পত্তি লিখে নেয়। কেউ বাড়ি, গাড়ি, স্বর্ণ অলংকার, নগদ টাকা দিতে চায় না। মনে করে নারীরা অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয় না। আবার কেউ সম্পূর্ণ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে। এটা নারীদের ওপর সবচেয়ে বড় যুলুম, যা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। ইসলাম নারী পুরুষকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বানিয়েছে নির্দিষ্ট অংশের ভিত্তিতে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক অথবা বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ'। (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৭)
পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জনের জন্য নারীর প্রতি সম্মানবোধ থাকা আবশ্যক। অন্তর থেকে নারীদের সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি নিজ আচরণ ও কর্ম দ্বারাও এর প্রমাণ দিতে হবে। এতে আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্ট হবেন। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারব।
দলগত কাজ আমি আমার পরিবার, প্রতিবেশি, বিদ্যালয়ে নারীদের যে যে উপায়ে সম্মান প্রদর্শন করবো। শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক তুমি/তোমরা একটি তালিকা তৈরি করো। | ||
যে ক্ষেত্রে সম্মান করবো | যাকে সম্মান করবো | যে উপায়ে সম্মান করতে পারি |
পরিবার | মা, বোন | গৃহের কাজে সহায়তা করবো |
প্রতিবেশি | ||
বিদ্যালয়ে |
আরও দেখুন...