১. লালারস ক্ষরণ (Secretion of saliva) :
মুখগহ্বরে অবস্থিত লালাগ্রন্থি থেকে লালারস ক্ষরণ দুধরণের প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথমটি সহজাত প্রতিবর্তী বা অনপেক্ষ প্রতিবর্তী (unconditional reflex) – এ ধরনের প্রতিবর্তী ক্রিয়া জন্মগত স্থির ও কোনো শর্তাধীন নয়। দ্বিতীয়টি অর্জিত বা সাপেক্ষ প্রতিবর্তী (conditional reflex) – এ ধরণের প্রতিবর্তী জন্মগত নয়, বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
২. গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরণ (Secretion of Gastric Juice)
ক. স্নায়ু পর্যায় (Nervous phase) বা মস্তিষ্ক দশা (Cephalic phase) :
মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তুর উপস্থিতি এবং এর গলাধঃকরণ একপ্রকার স্নায়ু উদ্দীপনাকে সৃষ্টি করে যা দ্রুত মস্তিষ্কের ভেগা স্নায়ু থেকে পাকস্থলীতে পৌঁছে। পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক উদ্দীপনায় গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় পাকস্থলীতে খাদ্য পৌঁছার পূর্বে রস নিঃসরণ শুরু হয়। স্নায়ু পর্যায় প্রায় ১ ঘণ্টাকাল স্থায়ী হয়।
খ. পাকস্থলীর পর্যায় বা গ্যাস্ট্রিক পর্যায় (Gastric phase) :
খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছালে পাকস্থলীর প্রাচীর উদ্দীপ্ত হয় এবং স্নায়বিক উদ্দীপনা সাবমিউকাস স্তরের মেসনার’স প্লেক্সাস (meissener’s plexus)- এ পৌঁছে। ফলে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে উদ্দীপনা পৌঁছালে তা সক্রিয় হয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের ক্ষরণ ঘটায়। পাশাপাশি উদ্দীপনা মিউকোসা অবস্থিত বিশেষ এন্ডোক্রিন কোষকে গ্যাস্ট্রিন (gastrin) হরমোন নিঃসরণের জন্য প্রভাবিত করে। উভয়বিধ ক্রিয়ার হাইড্রোক্লোরিক এসিড সমৃদ্ধ গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ এর প্রায় ৪ ঘণ্টা যাবৎ চলতে থাকে।
গ. আন্ত্রিক পর্যায় (Intestinal phase) :
যখন খাদ্যদলা/কাইম (bolus/chime) ডিওডেনামে প্রবেশ করে এর প্রাচীরের সংস্পর্শে আসে তখন হরমোনাল এবং স্নায়বিক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এ সময় ডিওডেনামের মিউকোসা কোলেসিস্টোকিনিন (cholecystokinin) ও সিক্রেটিন (secretin) হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। সিক্রেটিন পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ বন্ধ করে এবং কোলেসিস্টোকিনিন পাকস্থলী থেকে খাদ্য ডিওডেনামে আসার গতি নিয়ন্ত্রণ করে।৩. অগ্ন্যাশয় রস ও পিত্ত নিঃসরণ (Pancreatic Juice and Bile Secretion)
সিক্রেটিন এবং কোলেসিস্টোকিনিন উভয় হরমোনই অগ্ন্যাশয় ও পিত্ত ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ভেগাস স্নায়ু যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত করে।
১. গ্যাস্ট্রিন (Gastrin)
পাকস্থলীর জী-কোষ থেকে গ্যাস্ট্রিন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে পাকস্থলীর প্রাচীরে অবস্থিত গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক জুস নিঃসৃত হয়। এটি HCl এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
২. সিক্রেটিন (Secretin) :
অন্ত্রের (ডিওডেনামের) মিউকোসা থেকে হরমোন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে অগ্নাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। এটি পাকস্থলীর প্রাচীরকে পেপসিন এনজাইম। যকৃতকে পিত্ত ক্ষরণে উদ্দীপিত করে। এটি প্রথম আবিষ্কৃত হরমোন।
৩. কোলেসিস্টোকিনিন (cholecystokinin) :
এর অপর নাম প্যানক্রিওজাইমিন। ক্ষুদ্রান্তের প্রাচীর থেকে ক্ষরিত হরমোনটি অগ্নাশয় বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণ উদ্দীপিত করে।
৪. সোমাটোস্ট্যাটিন (Somatostatin) :
এ হরমোনটি পাকস্থলী ও অন্ত্রের মিউকোসা তে অবস্থিত ডি-কোষ থেকে ক্ষরিত হয়। এটি গ্যাস্ট্রিন এর ক্ষরণ নিবারণ করে ফলে পাকস্থলীর রসের ক্ষরণ হ্রাস পায়। এটি অগ্নাশয় রসের ক্ষরণও হ্রাস করে।
৫. এন্টেরোকাইনিনঃ ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে নিঃসৃত হয়ে লিবারকুন গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে আন্ত্রিক রসে এনজাইম নিঃসরণ করে।
৬. এন্টেরোগ্যাস্টরোন: ডিওডেনাম থেকে নিঃসৃত হয়ে পাকস্থলীর বিচলন ও গ্যাস্ট্রিক জুস নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে।
৭. ডিওক্রাইনিন: ডিওডেনাম থেকে নিঃসৃত হয়ে ব্রুনারের গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে আন্ত্রিক রসে এনজাইম ও মিউকাস ক্ষরণ করে।
৮. প্যানক্রিয়েটিক পলিপেপটাইড: প্যানকিয়েটিক পলিপেপটাইড কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণে বাধা দেয়।
৯. ভিল্লিকাইনিন: ক্ষুদ্রান্ত থেকে নিঃসৃত হয়ে ভিলাই- এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
আরও দেখুন...