পরিবহন ব্যবস্থা বলতে আমরা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের মাধ্যমে এবং মালপত্র ও লোক চলাচলের মাধ্যমকে বুঝি।
বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা ৩ ধরনের । যথাঃ ১। স্থলপথ ২। জলপথ ৩। আকাশপথ । স্থলপথকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয় । ক) সড়কপথ ও খ) রেলপথ
সড়কপথ হচ্ছেঃ জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কাঁচা সড়ক । রেলপথ হচ্ছে ঃ মিটারগেজ, ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ । জলপথকেও ২ ভাগে ভাগ করা হয় । ক) নৌপথ খ) সমুদ্রপথ
সড়কপথ (Roads)
উৎপাদিত কৃষিপণ্য বণ্টন, দ্রুত যোগাযোগ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সড়কপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেলপথের মাধ্যমে যোগাযোগ সব স্থানে সম্ভব না তাই সড়কপথ থাকা প্রয়োজন। সড়কপথ গড়ে ওঠার জন্য নিম্নোক্ত ভৌগোলিক অবস্থা প্রভাব ফেলে।
অনুকূল অবস্থা সড়কপথ প্ৰতিকূল অবস্থা |
সড়কপথ গড়ে ওঠার অনুকূল অবস্থা
সমতলভূমি | মৃত্তিকার গঠন | সমুদ্রের অবস্থান ও শিল্পক্ষেত্রের অবস্থান |
সমতলভূমি সড়কপথ গড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এজন্য ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে অনেক সড়কপথ গড়ে উঠেছে। | মৃত্তিকার বুনন যদি স্থায়ী বামজবুত হয় তবে বৃষ্টিতে কম ক্ষয় হয়। শক্ত মৃত্তিকার উপর সড়কপথ গড়ে উঠলে তা স্থায়ী হয় । | সমুদ্র উপকূলে বন্দর গড়ে ওঠে। বন্দর ও শিল্পক্ষেত্রকে কেন্দ্র করেও অনেক সড়কপথ গড়ে ওঠে। এজন্য মংলা এবং চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শিল্প অঞ্চলে সড়কপথ গড়ে উঠেছে . |
সড়কপথ গড়ে ওঠার প্রতিকূল অবস্থা
বন্ধুর ভূপ্রকৃতি | ভূমির ঢাল | নিম্নভূমি ও নদীপূর্ণ অঞ্চল |
উঁচুনিচু ও বন্ধুর প্রকৃতির ভূমিরূপের জন্য পার্বত্য এলাকায় সড়কপথ নির্মাণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়কপথ আছে, কিন্তু কম । | ঢালযুক্ত স্থানে সড়কপথ তৈরি করা কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। এতে গাড়ির জ্বালানি খরচ বেশি হয়। অর্থাৎ বেশি ঢাল সড়কপথ তৈরির ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। এজন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সড়কপথের ঘনত্ব কম। | নিম্নভূমি ও নদীপূর্ণ অঞ্চলে বেশি কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণে খরচ বেশি হয়। এজন্য এ সকল অঞ্চলে সড়কপথ কম গড়ে ওঠে। তাই বাংলাদেশের সিলেটের হাওর অঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথ কম। নৌপথ এ অঞ্চলে অগ্রাধিকার পায়। |
বাংলাদেশের সড়কপথগুলো বসতির বিন্যাসের উপর নির্ভর করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ সড়ক স্থানীয় যোগাযোগ রক্ষার জন্য রেলপথ ও নৌপথের পরিপূরক হিসেবে নির্মিত হয়েছে। সাধারণত কাঁচা সড়কগুলোকেই উন্নত করে পাকা সড়ক করা হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিভিন্ন শ্রেণির সড়কপথের পরিমাণ নিয়ে সারণিতে দেখানো হলো :
সারণি ১ : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন শ্রেণির সড়কপথ
সাল | ২০১৪ | ২০১৮ | ২০১৯ |
জাতীয় মহাসড়ক (কিলোমিটার) | ৩,৫৪৪ | ৩,৮১৩ | ৩,৯০৬ |
আঞ্চলিক মহাসড়ক (কিলোমিটার) | ৪,২৭৮ | ৪,২৪৭ | ৪,৪৮৩ |
জেলা সড়ক (কিলোমিটার) | ১৩,৬৫৯ | ১৩,২৪২ | ১৩,২০৭ |
মোট | ২১,৪৮১ | ২১,৩০২ | ২১,৫৯৬ |
উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৯* (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)।
কাজ : উপরের পরিসংখ্যান থেকে তথ্য নিয়ে নিচের ছক পূরণ কর।
সড়কপথের নাম | বেড়েছে | কমেছে | কারণ |
জাতীয় মহাসড়ক | |||
আঞ্চলিক মহাসড়ক | |||
জেলা সড়ক |
আমাদের দেশের সড়কপথগুলো বৃষ্টি, বর্ষা প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়, ফলে কাঁচা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে সারাবছরই সড়ক মেরামত করতে হয়। এছাড়া নদীবিধৌত হওয়ায় কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত করতে হয়, যা সড়কপথের বাধা হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে সড়কপথ ঢাকা কেন্দ্রিক। রুটসমূহ নিম্নরূপ :
ঢাকা ←→ আরিচা নগরবাড়ি হয়ে পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়া।
ঢাকা ←→ দৌলতদিয়া হয়ে ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও বরিশাল।
ঢাকা টাঙ্গাইল, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ।
ঢাকা ←→ কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও টেকনাফ ।
ঢাকা ←→ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সড়কপথের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বর্তমানে সড়কপথের উন্নয়নের জন্য যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সড়কপথ সারা দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। তাই এ দেশের সকল স্থানেই সড়কপথে যাওয়া যায়। বাজার ব্যবহারে উন্নতি, সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন ও বণ্টন, শিল্পোন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সড়কপথ যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে।
আরও দেখুন...