পাঠ-১ : পুষ্টির ধারণা ও এর প্রয়োজনীয়তা :

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি | NCTB BOOK

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের দৈহিক বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত হয়। শারীরিক এই বৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। শরীরে শক্তি যোগানো, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধের জন্য বাড়ন্ত বয়সে সকল উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্যসামগ্রী যথাযথ পরিমাণে গ্রহণ করতে হয়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য না খেলে শরীর ও মনের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন অনেক বেশি। এই বয়সে ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা, দৌড় ঝাঁপ, খেলাধুলা প্রভৃতি নিয়ে মেতে থাকে। শারীরিক পরিশ্রমের কারণে তাদের বেশি ক্যালরি বা খাদ্যশক্তির প্রয়োজন হয়। পুষ্টিমান কম এমন খাদ্য গ্রহণ করলে দেহের বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়

খাদ্য উপাদান : খাদ্যে মোট ৬টি উপাদান আছে। এগুলো হলো প্রোটিন বা আমিষ, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, ফ্যাট বা স্নেহ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, মিনারেল বা খনিজ পদার্থ এবং পানি। যে খাদ্যে যে উপাদান আছে সেই খাদ্য সেই উপাদানের নামে পরিচিত। যেমন যে খাদ্যে আমিষ আছে তা আমিষ জাতীয় খাদ্য, যাতে শর্করা আছে তা শর্করা জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।

খাদ্য উপাদানের উৎস ও এর গুণাগুণ : খাদ্যের আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় উপাদান দেহ গঠন করে, দেহের বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণ করে। আমিষ জাতীয় খাদ্য দেহে কর্মশক্তি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, পনির, ছানা, সব রকম ডাল, শিমজাতীয় সবজির বীজ ইত্যাদিতে আমিষ পাওয়া যায়। শর্করা ও শ্বেতসার প্রধানত তাপ ও কর্মশক্তি যোগায়। চাল, গম, ভুট্টা, আলু, চিনি, মধু, ওল, মিষ্টি ইত্যাদি শ্বেতসার ও শর্করাজাতীয় খাদ্য। চর্বি বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে। মাখন, ঘি, চর্বি, সয়াবিন, সরিষার তেল, দুধ, মাছের তেল, নারিকেল তেল ইত্যাদিতে স্নেহ বা ফ্যাট রয়েছে। দেহের রোগ প্রতিরোধ করা ও দেহের ভিতরে বিভিন্ন কাজকর্ম সচল রাখা, দেহকে রক্ষা করা ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণের কাজ। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মাছের তেল, সবুজ ও লাল রঙের শাক-সবজি, ফল, সব রকমের ডাল, তেলবীজ, ঢেকি ছাঁটা চাল, ভুসিযুক্ত আটা, অঙ্কুরিত বীজ প্রভৃতি ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য। দেহের অভ্যন্তরীণ গঠনের কাজ সম্পাদনের জন্য খনিজ পদার্থ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেহে লোহা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি খনিজ পদার্থ থাকে এবং তা প্রতিদিন মলমূত্র এবং ঘামের সাথে বেরিয়ে গিয়ে শরীরের ক্ষয় সাধন করে। এ ক্ষয় পূরণের জন্য খনিজ লবণ পাওয়া যায় এমন খাদ্য যেমন লবণ, দুধ, দুধজাত খাদ্য, ছোট মাছ, মাংস, ডিমের কুসুম, নানা রকম ডাল, শাক-সবজি, লেবু, কলা, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হয়। দেহের শতকরা ৭০ ভাগ পানি। পানি দেহের গঠন বজায় রাখে ও দেহকে ঠান্ডা ও সচল রাখে, খাদ্য হজমে সাহায্য করে, রক্ত চলাচলে ও দেহের অভ্যন্তরে পুষ্টি পরিবহন এবং দেহের বর্জ্য নিঃসরণে সহায়তা করে। শরীর রক্ষা ও বদ্ধির জন্য যথাসময়ে সুষম খাদ্য পরিমাণমতো গ্রহণ করা প্রয়োজন। উপরে উল্লিখিত খাদ্য উপাদানসমূহ যে সকল খাদ্যে যথাযথ অনুপাতে ও পরিমাণে থাকে তাই সুষম খাদ্য। বিভিন্ন বয়সে সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিন্ন হয়। একটি শিশুর জন্য যতটুকু আমিষ, শর্করা ও অন্যান্য উপাদান সংবলিত খাদ্য প্রয়োজন, একজন কিশোর বা কিশোরীর প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি। অতএব বয়স, লিঙ্গ, দৈহিক কাঠামো অনুযায়ী এই সুষম খাদ্যের চাহিদারও ভিন্নতা হবে।

 

 

কাজ-১ : নিচের ছকে কলাম-১ ও কলাম-২ তে যথাক্রমে খাদ্যের নাম এবং তা দেহের কোন কাজে লাগে তা এলোমেলোভাবে দেওয়া আছে।

প্রতিটি খাদ্য দেহের যে কাজে লাগে তীর চিহ্ন দিয়ে তার সাথে মিলাও।

 

                 কলাম-১

                 খাদ্য

                                            কলাম – ২

                           প্রধানত দেহের যে কাজে লাগে

  • চাল
  • রঙিন শাক-সবজি
  •  আয়োডিনযুক্ত লবণ
  • কচু শাক
  • মাংস ও ডিম
  • পানি
  • মাখন
  • সব রকমের ফল
  • রোগ প্রতিরোধ করে
  • দেহের খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে
  • রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে
  • দেহের গঠন ও বৃদ্ধি সাধন করে
  • রক্ত চলাচলে সাহায্য করে
  • দেহকে ঠান্ডা ও সচল রাখে
  • দেহের ক্ষয়পূরণ করে
  • দেহের বর্জ্য নিঃসরণে সাহায্য করে
  • তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে





 

 

Content added || updated By
Promotion