পাঠ ৪৪: দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার | | NCTB BOOK
2

একটি সময় ছিল যখন আমরা কাউকে প্রশ্ন করতাম যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কোন কোন কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি। তথপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে সময় এমনভাবে পাল্টে গেছে যে আমরা এখন বরং উল্টো প্রশ্নটাই করতে পারি, আমাদের দৈনন্দিন কোন কাজটি করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় না? 

একসময় ইন্টারনেটের জন্য বড় ডেস্কটপ কম্পিউটারের দরকার হতো, তারপর সেটি একটু ছোট হয়ে ল্যাপটপ হয়ে গেল। তারপর আরো ছোট হয়ে নেটবুক হলো, আরও ছোট হয়ে ট্যাব/প্যাড হলো এখন সেটি করার জন্যে স্মার্ট ফোন হলেই যথেষ্ট এবং তার দাম এত কমে এসেছে যে অনেকেই এটি কিনতে পারে। একটি স্মার্ট ফোন মানুষ কাছে রাখতে পারে আর তাই সে দিনের প্রতিটি মুহূর্তই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। শুধু তাই নয়, আজকাল প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই তারবিহীন ওয়ারলেস ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়। সেটিকে ওয়াই-ফাই বলে। কাজেই প্রায় সময়েই আমরা ইন্টারনেট সার্ভিস পেয়ে যাই। যে সমস্ত দেশ প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে আছে তারা সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট যোগাযোগ ছাড়া একটি মুহূর্তও চলতে পারে না এবং আমরাও খুব দ্রুত সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছি।

দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। আমরা শুধু তোমাদের কয়েকটা উদাহরণ দিই। সাধারণত আমরা দিনটি শুরু করি খবরের কাগজ পড়ে। আজকাল প্রত্যেকটি খবরের কাগজ ইন্টারনেটে থাকে। কাজেই একজন, খবরের কাগজ হাতে না নিয়ে অন-লাইন খবরের কাগজে দিনের খবরা-খবর পেয়ে যেতে পারে। আগে হয়তো কেউ একটি বা দুটি কাগজ পড়ত। এখন যে কেউ সবগুলো কাগজ পড়তে পারে। খবরের কাগজের পাশাপাশি আমরা রেডিও বা টেলিভিশন শুনতাম ও দেখতাম এখন সেটিও ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে গেছে। আমরা ইচ্ছে করলে ইন্টারনেটে রেডিও-টেলিভিশন শুনতে বা দেখতে পারি। দিন শুরু করার জন্য আমরা যখন ঘর থেকে বের হই, পথ- ঘাটের তথ্য আমরা ইন্টারনেট থেকে পেয়ে যাই। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস আমাদের অবস্থানটা নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারে এবং সেটি আজকাল প্রায় সব স্মার্ট ফোনেই লাগানো থাকে। তাই কখন কোন পথে যেতে হবে কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানটি কোথায় সেটিও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। বর্তমান প্রায় সব পাড়িতেই পথ দেখানোর জন্য জিপিএস লাগানো থাকে ।

আমরা যখন আমাদের কাজের জায়গায় পৌছাই তখন আমাদের কাজের ধরনের উপর ইন্টারনেটের ব্যবহার নির্ভর করে। কেউ বেশি আবার কেউবা কম ব্যবহার করে; কিন্তু ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করে না এ রকম ব্যাক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অন্য কিছু হোক না হোক আমাদের ইমেইল পাঠাতে হয় কিংবা আমাদের কাছে পাঠানো ইমেইলগুলো পড়তে হয়। ইন্টারনেট থাকার কারণে সেই ইমেইল পাশের ঘর থেকে আসছে নাকি পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠ থেকে আসছে তার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।

কাজ শেষ করে আমরা যখন বাড়ি ফিরে আসি, দৈনন্দিন কাজে ইন্টারনেট আবার নতুন মাত্রায় ব্যবহার শুরু হয়। আগে আমরা শুধু টেলিফোনে কথা বলতাম, ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ (Bandwidth) বেড়ে যাওয়ায় আজকাল শুধু কথায় আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় না। আমরা যার সাথে কথা বলছি তাকে দেখতেও পাই। একসময় কেউ যখন বিদেশ যেত, হাতে লেখা চিঠি ছিল যোগাযোগের একমাত্র উপায়। এখন সামনাসামনি দেখে কথা বলা খুব প্রচলিত বিষয় হয়ে গেছে।

দৈনন্দিন জীবনকে আনন্দময় করার জন্য বিনোদনের একটা ভূমিকা থাকে। ইন্টারনেট ছাড়া এই বিনোদন কল্পনা করা কঠিন হয়ে গেছে। প্রায় সব বইই এখন ঘরে বসে ই-বুক হিসেবে পাওয়া সম্ভব। শুধু বই নয়, গান বা চলচ্চিত্রও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা যায়। ব্যান্ডউইডথ যদি বেশি হয়, তখন আর ডাউনলোড করতে হয় না, সরাসরি দেখা বা শোনা সম্ভব। বিনোদনের জন্য অনেকেই কম্পিউটার গেম খেলতে পছন্দ করে, ইন্টারনেট ব্যবহার সেই গেম খেলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আমরা যদি জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করি, তাহলে দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার হয় সামাজিক নেটওয়ার্কে। সেখানে একজন অন্যজনের সাথে ভাব বিনিময় করে, ছবি-ভিডিও বিনিময় করে, কথাবার্তা বলে কিংবা বিশেষ কোনো একটি বিষয়কে আলোচনায় নিয়ে আসে।

ইন্টারনেট আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে কোন কারণে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলে আমরা খুব অসহায় বোধ করি।

তরুণ প্রজন্ম আজকাল সামাজিক নেটওয়ার্কে (যেমন ফেসবুক) বেশি সময় ব্যয় করছে। কিন্তু ইন্টারনেটের গোলক ধাঁধার বাস্তব জগতের বিনোদন, খেলাধুলা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন ইত্যাদি থেকে তারা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অর্থাৎ সাইবার জগতের বাইরেও যে সত্যিকারের একটি জগৎ আছে তা যেন তরুণ প্রজন্ম উপলব্ধি করে।

দলগত কাজ : একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিনলিপি লিখ।

নতুন শিখলাম : ওয়াই-ফাই, ফেসবুক, ই-বুক, ব্যান্ডউইডথ।

Content added By
Promotion