কম্পিউটারকে যেকোনো নির্দেশ দিতে গেলে কম্পিউটার বুঝতে পারে এমন ভাষায় নির্দেশ লিখতে হয়। সপ্তম শ্রেণিতে সুডো কোড লেখা শিখেছিলাম আমরা। সুডো কোডের মাধ্যমে আমরা একটি নির্দেশমালা তৈরি করেছিলাম যা অনুসরণ করে একটি রোবট আগুন নিভাতে পারবে। কিন্তু সুডো কোড সরাসরি কম্পিউটার বা রোবটের কাছে দিলে সেটি আমাদের কম্পিউটার কিংবা রোবট বুঝতে পারবে না। আমরা তো আগেই জেনেছি কম্পিউটারসহ যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস শুধুমাত্র ০ আর ১ কে বুঝতে পারে। এদিকে শুধু ০ আর ১ দিয়ে নিজেদের নির্দেশগুলো লিখে ফেলাও আমাদের জন্য কঠিন। তাহলে কম্পিউটারের সাথে কীভাবে আমরা যোগাযোগ করব? এমন কিছু ভাষা আছে, যেখানে ওই ভাষার রীতিনীতি অনুসরণ করে নির্দেশ লিখলে কম্পিউটার সেই ভাষাকে সহজেই বাইনারিতে অথবা হেক্সাডেসিম্যালে রূপান্তর করে নিয়ে নির্দেশগুলো বুঝতে পারে। এই ভাষাগুলোকে বলা হয় প্রোগ্রামিং ভাষা। মানুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য বাংলা, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন, স্প্যানিশ ইত্যাদি কতরকমের ভাষা ব্যবহার করে! ঠিক তেমনই অনেক রকম প্রোগ্রামিং ভাষা আছে। যেমন সি, সি++, পাইথন, জাভা ইত্যাদি।
আমরা এরকম যেকোনো একটি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখলে সেই ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারকে প্রয়োজনমত বিভিন্ন নির্দেশ দিতে পারব। আমাদের কম্পিউটারের একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনে প্রথমে আমরা নির্দিষ্ট কোনো প্রোগ্রামিং ভাষায় নির্দেশগুলো লিখে ফেলব। কম্পিউটারে এমন একটি রূপান্তর ব্যবস্থা থাকে যা সেই প্রোগ্রামিং ভাষার নির্দেশগুলোকে মেশিন কোডে রূপান্তর করে।
মেশিন কোড কি? মূলত ০ আর ১ এর সমন্বয়ে তৈরি বাইনারি কোডকেই মেশিন কোড বলা হয়, যা আমাদের কম্পিউটার বুঝতে পারে। এই রূপান্তরের ফলে আমাদের নির্দেশগুলো কম্পিউটার বুঝতে পারবে এবং সেই নির্দেশ অনুসরণ করে একটি কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
কম্পিউটারে থাকা প্রোগ্রামিং ভাষার রূপান্তর ব্যবস্থা আবার দুই রকমের হতে পারে-
ক) কিছু রূপান্তর ব্যবস্থায় আমরা যতগুলো নির্দেশ দিব, যদি নির্দেশগুলো নির্ভুল হয় তাহলে সবগুলো নির্দেশ একসাথে মেশিন কোডে রূপান্তর হবে। এই রূপান্তর ব্যবস্থাকে বলা হয় কম্পাইল (Compile) করা। আর যে সফটওয়্যার রূপান্তর করল, সেই রুপান্তরকারী হচ্ছে একটি কম্পাইলার (Compiler)। তবে কম্পাইলার যদি পুরো নির্দেশের কোথাও ভুল পায়, তাহলে রূপান্তর করতে পারে না। সবগুলো নির্দেশ নির্ভুল দিলে তখনই রুপান্তরের কাজটি করতে পারে।
খ) কিছু রূপান্তর ব্যবস্থায় আমরা যত নির্দেশই দেই না কেন, সব একসাথে রূপান্তর হবে না। একটি একটি করে নির্দেশ ধারাবাহিকভাবে রূপান্তর হতে থাকবে। এই রূপান্তর ব্যবস্থাকে বলা হয় ইন্টারপ্রেট (Interprete) করা। আর যে রূপান্তর কাজটি করছে তাকে বলা হয় ইন্টারপ্রেটার (Interpreter)। ইন্টারপ্রেটার একটি একটি করে নির্দেশ রূপান্তর করতে থাকবে। কোনো নির্দেশে ভুল পেলে সেই নির্দেশে আসার পর থেমে যাবে।
এবারে নিচের ছকে সঠিক অপশনে টিক চিহ্ন দেই-
কিন্তু এই যে অজস্র প্রোগ্রামিং ভাষা আছে, এরমধ্যে কোনটি আমরা শিখব? যেকোনো একটি প্রোগ্রামিং ভাষা প্রথমে শিখলেই হলো। কারণ সব প্রোগ্রামিং ভাষার মূল গঠন একইরকমের, শুধু ভাষাগুলোতে বিভিন্ন নির্দেশ লেখার নিয়ম একটু ভিন্ন থাকে। যেমন সি প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রতিটি নির্দেশ (স্টেটমেন্ট) শেষ হবার পর একটি সেমিকোলন চিহ্ন দিতে হয়, কিন্তু পাইথনে এই কাজ করতে হয় না। এরকম কিছু পার্থক্য থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। তুমি একটি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে নিলে এরপর অন্য প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো শেখা খুব সহজ হয়ে যাবে তোমার জন্য। আমরা এই বইয়ে পাইথন নিয়ে কাজ শুরু করব। তুমি চাইলে পাইথন শেখার পর খুব সহজে অন্য প্রোগ্রামিং ভাষাও শিখে নিতে পারবে।
পাইথনের যাত্রা শুরু:
সহজে শেখার জন্য পাইথন বেশ মজার একটি প্রোগ্রামিং ভাষা।
পাইথন ভাষায় নির্দেশ লেখার জন্য সবার আগে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে-
১। সবার আগে আমাদের পাইথন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ইন্সটল করতে হবে।
এই লিংকে চলে যাই - https://www.python.org/downloads/
এরপর সেখান থেকে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ভার্সন নামিয়ে নেই।
২। অ্যাপ্লিকেশন নামানো হয়ে গেলে এটি ইন্সটল করে ফেলি। ইন্সটলের সময় নিচের ছবির মতো একটি উইন্ডো আমরা দেখতে পাব-
আমরা ইন্সটল উইন্ডোর নিচে থাকা অপশনগুলো ক্লিক করে টিক চিহ্ন দিয়ে দিব। তারপর Install Now অপশনে ক্লিক করব। এসময় ইন্সটল হবার অনুমতি চাইলে সেটাও অনুমতি দিয়ে দিব।
৩। এরপর আমাদের মেসেজ দেখাবে যে আমাদের সেটআপ সফল হয়েছে।
৪। পাইথন আমাদের কম্পিউটারে যুক্ত হলো। কিন্তু আমাদের আরেকটি সফটওয়্যার এপ্লিকেশন লাগবে যেখানে আমরা আমাদের নির্দেশ লিখে কম্পিউটারকে বুঝিয়ে দিব। সেজন্য এই লিংকে যাই- https://thonny.org/
এই লিংক থেকে thonny সফটওয়ারটি নামিয়ে নেই ও ইন্সটল করে ফেলি।
৫। thonny সফটওয়্যার এরপর চালু করি। নিচের মতো উইন্ডো দেখতে পাব-
৭। এবারে একটা কাজ করি। আমরা একটা প্রোগ্রাম লিখি, যার কাজ হবে আউটপুট হিসেবে Hello World! প্রিন্ট করা। আউটপুট হিসেবে কোনো কিছু প্রিন্ট করতে হলে print () ব্যবহার করতে হয়। আমরা যেই টেক্সট প্রিন্ট করতে চাই, সেটা print () এর ভিতরে Single Quotation ('') দিয়ে তারমধ্যে লিখব। তাহলে Hello World! প্রিন্ট করতে লেখি-
print('Hello World!")
এরপর রান বাটনে ক্লিক করলে নিচে আউটপুট হিসেবে Hello World! লেখা উঠবে।
৮। এবারে সেভ বাটনে ক্লিক করে প্রোগ্রামের একটি নাম দিয়ে ফাইলটি সেভ করি। তখন আমাদের ফাইলের নামও প্রদর্শন করবে প্রোগ্রামের উপরে।
কোনো টেক্সট প্রদর্শন করা কত সহজ দেখেছ? আমরা যেমন ইংরেজি টেক্সট প্রিন্ট করলাম, একইভাবে বাংলা লিখেও তুমি সেটা প্রিন্ট করতে পারবে।
যেমন, নিচের লাইন লিখে রান করে দেখ তো কি দেখা যায়-
print ('আমি এখন পাইথন শিখছি')
তুমিও কি এমন বিভিন্ন টেক্সট প্রদর্শন করতে পারবে?
নিচের ছকে কোনো টেক্সট প্রদর্শন করতে কি প্রোগ্রাম লিখতে হবে তা পূরণ কর-
যা টেক্সট প্রদর্শন করব | প্রোগ্রাম যা লিখতে হবে |
তোমার নিজের নাম ইংরেজিতে ও বাংলায় লিখে প্রিন্ট কর | |
I love Bangladesh | |
আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়ি | |
প্রোগ্রামিং শিখতে ভারি মজা |
আরও দেখুন...