বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ:
একটি দেশের দলব্যবস্থা দ্বারা শুধু সে দেশের রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি বোঝায় না। দলের সংখ্যা, গঠন, সরকারের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ইত্যাদি বোঝায় । দেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ ও সংগঠন বা সমিতি করার অধিকার রয়েছে । এর প্রতিফলন হিসেবে আমরা বাংলাদেশে বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান দেখতে পাই। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে । এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উল্লেখযোগ্য । নিচে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ:
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস। আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে পুরাতন ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকায় আওয়ামী মুসলীম লীগ নামে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলীম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় । বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ আওয়ামী লীগের মূলনীতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দল পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে । আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় । এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয় । ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পূনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে এ দলের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। এছাড়া এ দলের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষ অংশগ্রহণ করে সফল হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি):
সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হয়। বিভিন্ন দল ও আদর্শের নেতা-কর্মীদের একত্রিত করে গঠিত এ দলটি ইসলামী মূল্যবোধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ।
জাতীয় পার্টি:
জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহৎ দল। ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি লেঃ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় । জাতীয় পার্টির ঘোষণাপত্রে (১) স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, (২) ইসলামি আদর্শ ও সকল ধর্মের স্বাধীনতা, (৩) বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, (৪) গণতন্ত্র এবং (৫) সামাজিক প্ৰগতি তথা অর্থনৈতিক মুক্তি— এই পাঁচটিকে দলের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয় ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী:
জামায়াতে ইসলামী একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল । ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ভারতে মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে এ দলের প্রতিষ্ঠা । তখন এর নাম ছিল ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ'। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এর নাম হয় ‘জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান' । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন করার কাজে দলীয় শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এ দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে পুনরায় দলটি আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ লাভ করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন শীর্ষ নেতা যুদ্ধপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ):
মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রতিষ্ঠিত হয় । জাসদ সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি):
অবিভক্ত ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি এবং ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ গঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। এই দলটি মার্কসবাদী- লেলিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে পরিচিত। এদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ কমরেড মনি সিং (মৃত্যু ১৯৯০) ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রাণপুরুষ।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি:
এদেশের বহুধা বিভক্ত চীনপন্থী কমিউনিস্টদের কয়েকটি অংশ মিলিত হয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করে । ১৯৮০ সালে এ দলের আত্মপ্রকাশ ।
আরও দেখুন...