বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিকার

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিকার.
Content

বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিকার

সমাজ ও সামাজিক সমস্যা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সমাজ সৃষ্টির লগ্ন থেকেই সামাজিক সমস্যা ছিল, এখনও রয়েছে। শুধু সমস্যার প্রকৃতি ও ধরনের পার্থক্য ঘটেছে। সামাজিক সমস্যা হলো সমাজের এমন একটা অস্বাভাবিক অবস্থা যা অধিকাংশ লোককে প্রভাবিত করে এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হয়। আমরা পূর্ববর্তী অধ্যায়ে সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে জেনেছি। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অপরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা কিংবা ভূমিকা পালনের ব্যর্থতাই সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। সমাজভেদে সামাজিক সমস্যার রুপ পরিবর্তিত হয়। বাংলাদেশে বহু সামাজিক সমস্যা রয়েছে। এ অধ্যায়ে আমরা সামাজিক নৈরাজ্য, মূল্যবোধের অবক্ষয়, নারীর প্রতি সহিংসতা, এইচআইভি এইডস, সড়ক দুর্ঘটনা, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতি সম্পর্কে অবহিত হব।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• সামাজিক সমস্যার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;                                                                           • সামাজিক নৈরাজ্য ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;                                                                                                                                                                       • বাংলাদেশে সামাজিক নৈরাজ্য ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ ও প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারব;
• সামাজিক নৈরাজ্য ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধের পদক্ষেপ চিহ্নিত করতে পারব : • 'নারীর প্রতি সহিংসতা - ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে পারব;
• বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন ও কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব;                                                 • নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনের বিষয়বস্ত্তু ও শাস্তি ব্যাখ্যা করতে পারব;
• বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব;
• শিশুশ্রম ও কিশোর অপরাধের ধারণা, ধরন ও আইনি প্রতিকার ব্যাখ্যা করতে পারব :
• মাতৃকল্যাণ ধারণা ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা ব্যাখ্যা করতে পারব;                                                     • এইচআইভি/এইডসের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
• এইচআইভি/এইডসের পরিস্থিতি ও কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• এইচআইভি/এইডসের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব এবং প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে পারব;
• সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে পারব :                                                          • সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারব;                                                                        • দুর্ঘটনা মুক্ত বা নিরাপদ সড়ক করার উপায় এবং দুর্ঘটনা হ্রাসের পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করতে পারব;

• জঙ্গিবাদের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;
• জঙ্গিবাদের কারণ ও প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারব :                                                                        • জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের পদক্ষেপ চিহ্নিত করতে পারব;                                                         • দুর্নীতির ধারণা, কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব,
• দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করতে পারব এবং আদর্শ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ হব;
• নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন হবঃ                                           • এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতন হব এবং আক্রান্ত রোগীর সেবায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে       আসব;                                                                                                                                     ● দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুর্ঘটনা বিষয়ে সচেতন হব;
• ধর্মীয় আদর্শ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ হব।

 

 

 

 

Content added By

পরিচ্ছেদ ১৬.১ : সামাজিক নৈরাজ্য ও মূল্যবোধের অবক্ষয়

সাধারণভাবে সমাজের জন্য ক্ষতিকর ও অসুবিধাজনক অবস্থা বা পরিস্থিতিকেই সামাজিক সমস্যা বলে। সামাজিক সমস্যা সাময়িক সময়ের জন্য সৃষ্টি হয় না। এটি কমবেশি স্থায়ী হয় এবং এর সমাধানের লক্ষ্যে যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সুতরাং সামাজিক সমস্যা হলো সমাজ জীবনের এমন এক অবস্থা, যা সমাজবাসীর বৃহৎ অংশকে প্রভাবিত করে, যা অবাঞ্ছিত এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য সমাজবাসী ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে উদ্যোগী হয় ।

সামাজিক বৈষম্য এবং বিশৃঙ্খলা হতে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সমাজের প্রচলিত আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, প্রথা প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণের ব্যতিক্রমই সামাজিক বিশৃঙ্খলা। সামাজিক বিশৃঙ্খলা তখনই দেখা দিবে যখন ব্যক্তির উপর সামাজিক রীতিনীতির প্রভাব হ্রাস পাবে। সামাজিক রীতিনীতি যখন ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তখন মানুষের নৈতিক অবনতি শুরু হয়। নৈতিক অবনতি ব্যাপক আকার ধারণ করলে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভাঙন শুরু হয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভাঙনের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দেখা দেয়। এসব পরিস্থিতিতে সমাজে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হতে থাকে।

সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো— অপরাধ, কিশোর অপরাধ, মাদকাসক্তি, অপহরণ, আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, ছিনতাই, সন্ত্রাস, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি, যৌন আচরণ, যৌনব্যাধির প্রাদুর্ভাব, স্বেচ্ছাচার, শিশুশ্রম, শিশুদের প্রতি অবহেলা, হত্যা প্রভৃতি ।

সামাজিক নৈরাজ্যের ধারণা
সামাজিক বিশৃঙ্খলার চরম রূপ হচ্ছে সামাজিক নৈরাজ্য। রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যখন আর কাজ করে না এবং শাসনযন্ত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তখন সমাজে নৈরাজ্য দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ ঘুষ, নারী নির্যাতন, অপহরণ, যৌন আচরণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়।

সামাজিক নৈরাজ্যের কারণ
সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টির পিছনে বহু কারণ দায়ী। সামাজিক মূল্যবোধের যথাযথ অনুশীলন সুন্দর সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সমাজে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও শিথিলতা ঘটলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সাহায্যপ্রার্থী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। সমাজের সংস্কৃতি পরিপন্থি কর্মকাণ্ড, অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি প্রভৃতির কারণে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়।

সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের ধারণা
যে কোনো সমাজের রীতিনীতি, মনোভাব এবং সমাজের অন্যান্য অনুমোদিত আচার-আচরণের সমন্বয়ে সামাজিক মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়। বস্তুত যেসব ধ্যানধারণা, বিশ্বাস, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সংকল্প মানুষের আচার-আচরণ এবং কার্যাবলিকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোর সমষ্টিই হলো মূল্যবোধ। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ছোটদের প্রতি স্নেহ, মায়া-মমতা প্রভৃতি সামাজিক মূল্যবোধের উদাহরণ। এসব মূল্যবোধের অবনতিই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় সামাজিক অসঙ্গতি ।

সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের কারণ
সমাজ পরিবর্তনের সাথে মূল্যবোধ পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। সমাজে যখন শিক্ষা উন্নয়ন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে তখন মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। মূল্যবোধের এই পরিবর্তন ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। মূল্যবোধের ইতিবাচক পরিবর্তন সমাজ অনুমোদিত। মূল্যবোধের নেতিবাচক পরিবর্তন সমাজ অনুমোদিত নয়। এটি মূল্যবোধের অবক্ষয়।

সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অভাব দেখা দিলেও সামাজিক বিশৃঙ্খলা বা অসঙ্গতি বেড়ে যায়। ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটবে। তাছাড়া সমাজে আইনের শাসনের দুর্বলতা ও অভাব, মানুষের সহনশীলতার অভাব এবং বিশৃঙ্খল পরিবেশের কারণেও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। ধর্মীয় অপব্যাখ্যাও মানুষকে মূল্যবোধহীন পথে পরিচালিত করতে পারে, যেমন—কোনো বিষয়ে মনগড়া ফতোয়াজারির মাধ্যমে দোররা মারা মূল্যবোধ পরিপন্থি কাজ ।

সামাজিক নৈরাজ্য ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রভাব
সমাজ জীবনে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নৈরাজ্যপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মানুষের অধিকারের বঞ্চনা বেড়ে যায় ঘুষ,দুর্নীতিতে গোটা সমাজ অচল হয়ে পড়ে। অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ অপরাধী শাস্তি পায় না। সমাজ জীবনে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশের সকল সেবা খাতের মান নিম্নগামী হয়। সমাজে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা বেড়ে যায়।

কাজ:

দলগত: সমাজে মূল্যবোধের কয়েকটি অবক্ষয় চিহ্নিত কর এবং এর প্রতিরোধ পদক্ষেপ লেখ 

একক: সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক নৈরাজ্যের পার্থক্য উদাহরণের মাধ্যমে দেখাও।

 

সামাজিক নৈরাজ্য ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ
সামাজিক নৈরাজ্য ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে—

  • ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ;
  • আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়ন;
  • অপসংস্কৃতি রোধে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ;
  • দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধে কর্মক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ;                                                                                                      ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন;
  • সমাজের হিংসাত্মক কার্যক্রম রোধে সচেতনতা সৃষ্টি;
  • আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি।
Content added By

পরিচ্ছেদ ১৬.২ : নারীর প্রতি সহিংসতা

নারীর প্রতি সহিংসতার ধারণা
পুরুষ বা নারী কর্তৃক যে কোনো বয়সের নারীর প্রতি শুধু নারী হওয়ার কারণে যে সহিংস আচরণ করা হয় তাই নারীর প্রতি সহিংসতা। কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি নানা অজুহাতে নারীর আর্থ-সামাজিক, শারীরিক কিংবা মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটিয়ে থাকে। নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক বা মানসিকভাবে এই নির্যাতন চালানো হয়। এ সহিংস আচরণ বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র, হাট-বাজার থেকে শুরু করে যে কোনো স্থানে ঘটতে পারে।

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকৃতি
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা নারীর স্বাধীনতা এবং ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক। নারীর প্রতি সহিংসতার নানা প্রকৃতি রয়েছে। নারীরা বাড়িতে শারীরিক ও মানসিক যেসব নির্যাতনের শিকার হয় তাকে বলে পারিবারিক সহিংসতা। সাধারণত স্বামী, শাশুড়ি, ননদ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য দ্বারা নারী এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে প্রহার, যৌতুক সম্পর্কিত নির্যাতন, শিক্ষা ও সম্পত্তির অধিকারের বঞ্চনা, অত্যধিক কাজের বোঝা চাপানো, কন্যা শিশুকে মারধর, নিপীড়ন প্রভৃতি ।

যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও ধর্ষণ, মনগড়া ফতোয়া, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার প্রভৃতি হলো বর্বর, নির্মম ও পৈশাচিক সহিংসতা।

যৌন হয়রানি : সাম্প্রতিক সময়ে যৌন হয়রানি বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। এটি নৈতিকতার চরম অবক্ষয়, একটি সামাজিক বিপর্যয়। নারীরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে কিশোরী, তরুণী এমনকি বিবাহিত নারীও জঘন্য যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। যৌন হয়রানিকে ইভটিজিংও (Eveteasing) বলা হয়। ইভটিজিং শব্দটি যৌন হয়রানির ইংরেজি প্রতিশব্দ। ইভটিজিং হচ্ছে লোকসমাগমপূর্ণ স্থানে পুরুষ কর্তৃক নারীদের নিগ্রহ বা উত্ত্যক্ত করা। গৃহঅভ্যন্তরে, কর্মক্ষেত্রে অথবা যাতায়াতের পথে, কখনোবা নিরিবিলি স্থানে অসৎ উদ্দেশ্যে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পুরুষ কর্তৃক নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। অনেক সময় শিশুরাও যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

ফতোয়া : গ্রামীণ এলাকায় মনগড়া ফতোয়ার মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়। কখনো কখনো গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ মনগড়া আইনের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করে। এসব দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

এসিড নিক্ষেপ : এসিড নিক্ষেপ নারীর প্রতি একটি ভয়াবহ সহিংসতা। বর্তমানে বাংলাদেশে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত নারীদের উপরই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা অধিক ঘটে থাকে। প্রেম ও অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণে এসিড নিক্ষেপের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে।

নারী ও শিশু পাচার : নারী ও শিশুরা পাচার হয়ে নানাভাবে সহিংসতার শিকার হয় । দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ও শিশু পাচারের পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর নারী ও শিশু পাচার হয়ে যায়। এদের বলপূর্বক বিভিন্ন অবমাননাকর এবং অমানবিক কাজ, যেমন- দেহ ব্যবসায়, উটের জকি ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় এসব পাচারকৃত নারী ও শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিক্রি করা হয়।

নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ
সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার বহু কারণ রয়েছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কাজে নারী সর্বদা অপারদর্শী অদক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়। বাইরের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত রাখা, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ক্রমাগত কন্যা সন্তানের জন্ম ও এর ফলে পুত্রসন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা প্রভৃতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থা আমাদের দেশে যৌতুক প্রথাকে প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করেছে। ক্রমে যৌতুকপ্রথা পরিণত হয়েছে সহিংসতার হাতিয়ার রূপে। তাছাড়া নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখা, মতলবি ফতোয়া, বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

এখনও আমাদের সমাজে অনেক পুরুষ নারীকে দুর্বল ও অবলা হিসেবে মনে করে। গ্রামীণ ও শহুরে সমাজের কতিপয় পরিবারে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি হলো নারীর কাজ গৃহে রান্না-বান্না, সন্তান জন্মদান,   লালন-পালন, সবজি বাগান করা, গবাদিপশু পালন, শিশুকে পাঠদান, শারীরিক শুশ্রুষা করা প্রভৃতি।পুরুষতান্ত্রিক অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি, যেমন- পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, নারীরা স্বামীর সেবাদাসী, স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেস্ত প্রভৃতি মনোভাব থেকেই নারীর প্রতি সহিংসতার সৃষ্টি হয়। আবার শৈশবে নিজ পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে একজন পুরুষকে সহিংস করে তুলতে পারে। কন্যা সন্তানকে শিক্ষা দানের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া, কন্যা সন্তানের প্রতি মা-বাবার উদাসীনতা, পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া, বিবাহে কন্যার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করার মনোভাব প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয় ৷

নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্য ঘোচাতে কাজের খোঁজে এসে অনেক নারী সহিংসতার শিকার হয়। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের একটা বিরাট অংশ পোশাক শিল্পে কাজ করে। এসব নারী শ্রমিক রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে বা শয়নকক্ষ সংকটের কারণে একই ঘরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বসবাস করার কারণে অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এছাড়াও বাসাবাড়িতে কাজ করে এমন গৃহকর্মী নারী বা শিশু অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে ।

লোকলজ্জা, পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদার ভয়সহ নানা কারণে বাংলাদেশের নারী সমাজ অনেক সময় নির্যাতনের বিষয় বাইরে প্রকাশ করতে বা প্রতিবাদ করতে পারে না। ফলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস ঘটনা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তবে নারী ও শিশুর এ নীরবতা ভাঙতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা, যেমন— আইন সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পুলিশের ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার', ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

                                                            কাজঃ                                                                     একক : গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরনগুলো লেখা ।

 দলগত : নারীর প্রতি সহিংসতার কারণগুলোর একটি ছক তৈরি কর।

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রভাব
নারীর জীবনে সহিংসতার প্রভাব জটিল ও ভয়াবহ। নারীর প্রতি শারীরিক নির্যাতন কখনো কখনো নারীর অঙ্গহানি ঘটায়। সহিংস ঘটনায় নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতবিক্ষত হয়। অনেক ক্ষেত্রে নারী আত্মহত্যা পর্যন্ত করে থাকে। সহিংসতার শিকার নারীরা সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। নারীর প্রতি এই সহিংসতা আমাদের দেশের অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

কাজঃ একক : নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

 

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনি প্রতিকার
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কতিপয় আইনি প্রতিকার হলো:                                                     
১. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩ সালে সংশোধিত) যৌন হয়রানিকে শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে—'যদি কোনো পুরুষ অযাচিতভাবে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করার জন্য নারীর শালীনতা অবমাননা কিংবা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ ঘটায় তবে উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব সাত বছর এবং সর্বনিম্ন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

২. এসিড অপরাধ দমন আইন-২০০২ : এসিড অপরাধ দমন আইনে এসিড দ্বারা মৃত্যু ঘটানো, এসিড দ্বারা আহত করা, এসিড নিক্ষেপ করা বা নিক্ষেপের চেষ্টা করা এবং এ অপরাধে সহায়তা করা প্রভৃতির শাস্তি, বিচার পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসিড দ্বারা মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি : যদি কোনো ব্যক্তি এসিড দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটান তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

এসিড দ্বারা আহত করার শাস্তি : এই আইনে আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এসিড দ্বারা কাউকে এমনভাবে আহত করেন যে- ক. তার দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নষ্ট হয় বা মুখমণ্ডল বিকৃত বা নষ্ট হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। খ. শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ, গ্রন্থি বা অংশ বিকৃত বা নষ্ট হয় বা শরীরের কোনো স্থান আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক চৌদ্দ বছর কিন্তু অন্যূন সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। এছাড়া এসিড নিক্ষেপ করা বা নিক্ষেপের চেষ্টা বা অপরাধে সহায়তা করার জন্যও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে সরকার এসিডের মজুদ, বহন, আনা-নেওয়া ব্যবস্থা ইত্যাদির ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক এসিড নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন-২০১০ পাস হয়।

৩. নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এ বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি পতিতাবৃত্তি বা বেআইনি বা নীতিগর্হিত কোনো কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুকে বিদেশ থেকে আনয়ন করেন বা বিদেশে পাচার বা প্রেরণ করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা অনুরূপ কোনো উদ্দেশ্যে কোনো নারী ও শিশুকে তার দখলে বা হেফাজতে রাখেন তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ বছর কিন্তু অন্যূন ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এছাড়াও নারী ও শিশু অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, যৌনপীড়ন, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। 

                                                                       কাজঃ                                                                  দলগত : নিম্নোক্ত ছকে প্রদত্ত আইনের বিধানে শাস্তি উল্লেখ করে  নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব চিহ্নিত কর।

আইন  বিধানাবলি  শাস্তি  দায়িত্ব ও কর্তব্য
যৌন হয়রানি      
এসিড নিক্ষেপ      
নারী ও শিশু পাচার      

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১১-এ মানব পাচারের জন্য দায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের করণীয়                                                                  নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের করণীয় কী তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. নারী শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, বিধবা ভাতা প্রদান এবং নারীর জন্য ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি ;                                                                                                              ২. নির্যাতন, সহিংসতার ধরন ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ;                                                                                                                                    ৩.পরিবারে ছেলেমেয়ে উভয়কেই পারিবারিক জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ গঠন সম্পর্কিত শিক্ষাপ্রদান;
৪. নারী অধিকার এবং অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি;
৫. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মতৎপরতার সম্প্রসারণ;
৬. নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা;
৭. নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রবর্তিত আইন, যেমন- এসিড অপরাধ দমন আইন, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, বাল্যবিবাহ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ইত্যাদির যথাযথ প্রয়োগ;
৮. সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা;
৯. নারীর বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার প্রভাব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি;
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়বস্তু সহজভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপন ও প্রচার।

                                                               কাজঃ

দলগত কাজ : যৌন  হয়রানি বন্ধে তুমি কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পার? উল্লেখ কর।

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরও কতকগুলো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ, অপসংস্কৃতিরোধ, নারী ও পুরুষের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, সুস্থ পরিবার গঠন, শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শ অনুশীলন করা, নারীর ভূমিকা ও মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । এছাড়াও সামাজিক চাপ প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন- গ্রাম আদালত, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতিকে অধিক সক্রিয় করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধী কিংবা অপরাধীর পরিবারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, অপরাধীকে সামাজিকভাবে বয়কট করে এক ঘরে করে রাখা প্রভৃতি সামাজিক চাপসংক্রান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সহিংস ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অপরাধীকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।

শিশু শ্ৰম
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশু শ্রম আছে। যে বয়সে একটি শিশু স্কুলে যাওয়া আসা করবে, সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করবে ঐ বয়সে দরিদ্র শিশুদের জীবিকার জন্য কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে শিশু শ্রমের প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো — অর্থনৈতিক দুরবস্থা। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ভরণ-পোষণ মিটিয়ে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগানো বাবা-মার পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে তাদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকেরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় পিতা বা মাতা মনে করেন, সন্তান কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়ে আয় রোজগার করলে পরিবারের উপকার হবে। শিশুদের অল্প পারিশ্রমিকে দীর্ঘক্ষণ কাজে খাটানো যায় বলে নিয়োগ কর্তারাও তাদেরকে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহী হয়। দরিদ্র পিতা-মাতা শিক্ষাকে একটি অলাভজনক কর্মকাণ্ড মনে করে। সন্তানদের ১৫-১৬ বছর ধরে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়ার মতো ধৈর্য ও অর্থ তাদের থাকে না। শিশু শ্রমের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের উদাসীনতায় শিশু শ্ৰম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরজীবনে গৃহস্থালি কাজে গৃহকর্মীর ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীলতাও শিশু শ্রমকে উৎসাহিত করছে।

শিশু শ্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন ও বাংলাদেশ অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক সনদসমূহ বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুদের অধিকার : বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এ শিশু ও কিশোরদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে শিশুর ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর এবং কিশোরের ন্যূনতম বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে কাজে নিয়োগ করা যাবে না এবং শিশুর পিতামাতা কিংবা অভিভাবক শিশুকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য কারও সাথে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবে না। কিশোর শ্রমিক নিয়োগ করতে হলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের কাছ থেকে মালিকের খরচে ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। কিশোর শ্রমিকদের স্বাভাবিক কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক ৫ ঘণ্টা। তবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত কোনো কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক কাজ করানো যাবে না। পাশাপাশি এ আইনে আরও বলা হয়েছে যে, ১২ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের কেবল সে ধরনের হালকা কাজই করানো যাবে যে কাজে কোনো ক্ষতি হবে না এবং যা তাদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারকে বিঘ্নিত করবে না।

                                                                কাজঃ

দলগত : শিশু শ্রম বন্ধে তোমাদের কী করণীয় উল্লেখ কর ।

জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি ২০১০-এ শিশু শ্রম বিলোপ সাধনে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিশু শ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূলে কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসনে সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সব ধরনের শিশু শ্রম বিলোপে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ : ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশু শ্রম বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। এই সনদে বলা হয়েছে, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো শিশু শ্রমের জন্য বয়স, বিশেষ কর্মঘণ্টা ও কর্মে নিয়োগের যথার্থ শর্তাবলি নির্ধারণ করবে। এছাড়া এ সনদে শিশুর সুরক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে যা পরোক্ষভাবে শিশুশ্রম নিরসনে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এ সনদ অনুসমর্থন করেছে।

কিশোর অপরাধ
কিশোর অপরাধ প্রতিটি সমাজের জন্য একটি উদ্বেগজনক সামাজিক সমস্যা। আমাদের সমাজে এবং পৃথিবীব্যাপী উল্লেখযোগ্য হারে সমস্যাটি বিদ্যমান রয়েছে। সামাজিক সুষ্ঠু পরিবেশ ও মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়ে খারাপ সঙ্গ এবং পাচারকারী ও বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে জড়িত হয়ে শিশু-কিশোররা অপরাধী হয়ে ওঠে। শিশুরা জাতির মূল্যবান সম্পদ। সুতরাং তাদের উন্নয়নের জন্য এবং সমসুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে। কর্মক্ষম ও নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং সমাজের প্রয়োজনে উপযুক্ত দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বঞ্চিত ও অবহেলিত শিশু-কিশোররা সহজেই অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। কাউকে পরোয়া না করা, বিচক্ষণতার অভাব, উদ্যম, শারীরিক শক্তি এবং টিকে থাকার ক্ষমতা, দুঃসাহসিক প্রকৃতি প্রভৃতি কারণে কিশোররা অপরাধ ও বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পারিবারিক অভাব-অনটন, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং বাবা-মায়ের দায়িত্বহীন আচরণ ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে শহরের বস্তিতে বসবাসকারী কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেশি জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া শহর জীবনের একাকিত্ব, বাবা-মায়ের কর্মব্যস্ততা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবসহ নানা কারণে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। গঠনমূলক পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি, পরিবার ও বিদ্যালয়ে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, চিত্তবিনোদনমূলক কার্যক্রম, অপসংস্কৃতিরোধ প্রভৃতি পদক্ষেপের মাধ্যমে কিশোর অপরাধ মোকাবিলা করা যেতে পারে। আবার যেসব শিশু ও কিশোর ইতোমধ্যেই অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে তাদের চরিত্র সংশোধনের জন্য কিশোর আদালত, কিশোর হাজত, সংশোধনী প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

কিশোর অপরাধ দমন আইন এবং বিচার ব্যবস্থা : কিশোর অপরাধের বিচার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সাজা দেওয়া নয় বরং তারা যেন তাদের ভুলগুলো উপলব্ধি করে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পায় ।

কিশোর অপরাধী : জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকলেই শিশু বলে বিবেচিত । বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এ সনদ অনুমোদন করে। বাংলাদেশে শিশুদের সংজ্ঞায়নে বিভিন্ন ধরনের আইন রয়েছে।

কিশোর অপরাধ আইন : সাধারণত সাত থেকে ষোলো বছর বয়সী শিশুরাই কিশোর-কিশোরী হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ শিশু আইন-১৯৭৪-ই কিশোর অপরাধ দমন ও বিচারের মূল আইন হিসেবে ধরা হয়। এ আইনে কিশোর অপরাধের বিচার সংক্রান্ত কিশোর আদালত গঠন, আলাদা হাজত বা আটক স্থান এবং কিশোর সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

                                                                   কাজঃ

দলগত: কিশোর অপরাধীকে সুপথে আনার জন্যে করণীয় পদক্ষেপ চিহ্নিত কর ।

এছাড়া এ আইন অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে শিশু আদালত গঠিত হবে। এ আদালত প্রতিমাসে অন্তত ২ থেকে ৩ বার কিংবা তার অধিক সংখ্যক বার বসবে। 

 আইনে বলা হয়, কিশোর হাজত সাধারণ হাজত থেকে ভিন্নতর হবে। কিছু কিছু অপরাধ খতিয়ে দেখতে বিচারের শুনানি এবং নিষ্পত্তির জন্য কিশোরদের প্রায়শই আটক রাখার প্রয়োজন হয়। এ সময় তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আটক শিশুকে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং শিশুর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে অপরাধ সংঘটনের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। তদন্ত কর্মকর্তারা বিচার, বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে এবং অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী আদালতে রিপোর্ট পেশ করবেন। কিশোর হাজতে আটক অবস্থায় শিশু-কিশোরদের বিভিন্নভাবে সংশোধনমূলক কর্মকাণ্ডে এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।
কিশোর সংশোধন : আইনে কিশোরদের সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ও দোষী শিশু এবং আনুষ্ঠানিক সংশোধন প্রয়োজন এমন কিশোরদের সংশোধন কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে।   

মাতৃকল্যাণ
স্বাস্থ্য একটি মানবাধিকার। সকল জনগণের সুস্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে সেবা প্রাপ্তিতে সাম্য, নারী-পুরুষ সমতা এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর সেবার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে মায়েদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এককথায়, মাতৃকল্যাণ বলতে মায়ের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং ভালো থাকার জন্য সমাজ এবং সামাজিক সংগঠন কর্তৃক সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টাসমূহকে বোঝায়। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সেবা, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, নিরাপদ প্রসূতি সেবা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর উপস্থিতি ও পরিচর্যা, প্রজননকালীন রুগ্নতা, মাতৃত্বজনিত মৃত্যুহার রোধ প্রভৃতি মাতৃকল্যাণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে মাতৃত্বজনিত মৃত্যু নারীদের বাঁচার ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারকে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে। বাংলাদেশে সার্বিক মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য পরিস্থিতি উন্নতির পথে। তবে মাতৃত্বজনিত কারণে এখনও অনেক প্রসূতি মা মারা যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস করা; বিশেষ করে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এ হারকে যুক্তিসংগত পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে সরকার মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । যথাসম্ভব প্রতিটি গ্রামে নিরাপদ প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা অর্জন করছে।

বাংলাদেশ সরকার ১১ জানুয়ারি ২০১১ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত নারী কর্মীদের জন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণা করে, যা ৯ জানুয়ারি ২০১১ সাল থেকে কার্যকর হয়। মাতৃত্বজনিত ছুটি বৃদ্ধির ফলে মায়েরা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে সমর্থ হবেন এবং এর ফলে নবজাতক শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর হবে।

Content added || updated By

পরিচ্ছেদ ১৬.৩ : এইচআইভি (HIV)/এইডস (AIDS)

এইচআইভির ধারণা
এইচআইভি (HIV) হলো অতি ক্ষুদ্র এক বিশেষ ধরনের ভাইরাস। এ ভাইরাস এর পুরো নাম হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (Human Immuno Deficiency Virus) সংক্ষেপে এইচআইভি (HIV)। এটি মানব দেহে প্রবেশ করে দেহের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। এইচআইভি ভাইরাস অনেকদিন পর্যন্ত শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সাধারণত এর সুপ্তিকাল ৬-৭ মাস ।
এ ভাইরাসের অবস্থান আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যোনিরস, থুতু, চোখের পানি, মূত্র এবং স্তনের দুধের মধ্যে। তবে চোখের পানি, মূত্র ও থুতুর মধ্যে এ ভাইরাসের ঘনত্ব অত্যন্ত কম থাকার ফলে এগুলোর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বলে বিশেষজ্ঞরা মতপ্রকাশ করেন।

এইডসের ধারণা
এইডস (AIDS) এর পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি রূপ হলো Acquired Immune Deficiency Syndrome। এইচআইভি কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে মানব দেহে প্রবেশ করে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পরিমাণে ধ্বংস করে দেয়। এইচআইভি সংক্রমণের সর্বশেষ পর্যায় হলো এইডস। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্য যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়। এইডসের কোনো কার্যকর প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। সে কারণে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির অনিবার্য পরিণতি অকাল মৃত্যু।

কাজ -একক : এইডস সংক্রমণের কারণ চিহ্নিত কর।

কাজ-একক :এইডস ছোঁয়াচে নয় কেন? তোমার যুক্তি উপস্থাপন কর।

এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে দৈনন্দিন কাজকর্ম করলে এইডস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যাদের দেহে এইচআইভি আছে, তারাই শেষ পর্যন্ত এইডসে আক্রান্ত হন। যদি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কারও দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা যায় তবেই তাকে এইচআইভি পজেটিভ বলা হয়।

এইডসের কারণ
এইডস একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি। এইচআইভি সংক্রমণের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির দেহে এটি প্রবেশ করে। এইচআইভি সংক্ৰমিত পুরুষ বা নারীর সাথে যৌন মিলন কিংবা এইচআইভি বহনকারীর রক্ত অন্যের শরীরে সঞ্চালনের ফলে এইডস হয়। তাছাড়া এ ভাইরাসযুক্ত সিরিঞ্জ, সুচ, অপারেশনের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করলে, সমকামিতার মাধ্যমে, আক্রান্ত মায়ের গর্ভে সন্তান জন্ম নিলে অথবা আক্রান্ত মায়ের দুধের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের সঙ্গে সুস্থ ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শ ঘটলে, যেমন—উভয়ের কাটা, ফোড়া, ঘা, ক্ষত ইত্যাদির মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও কান-নাক ফোঁড়ার সুচ ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহারের ফলে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির অঙ্গ, যেমন-কর্নিয়া, হূৎপিণ্ড, কিডনি, লিভার প্রভৃতি বা কোষসমষ্টি কোনো ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে এইডস ছড়াতে পারে। এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির ওজন ২ মাসের মধ্যে শতকরা ১১ ভাগের বেশি কমে যায়। সার্বক্ষণিক জ্বর ও ডায়রিয়া লেগে থাকে। এক মাসের বেশি সময় ধরে তার ক্রমাগত কাশি হতে থাকে। শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ হয়। শুকনা কাশি লেগে থাকে। ঘাড় ও বগলে অসহ্য ব্যথা হয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ দেখা দেয়। অতিরিক্ত অবসাদ অনুভব করে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত থালা-বাসন, কাপ, গ্লাস, জামা-কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করলে এইডস ছড়ায় না। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে করমর্দন, কোলাকুলি, খেলাধুলা, লেখাপড়া এবং সেবা-শুশ্রুষা করলেও এ রোগ ছড়ায় না।

বাংলাদেশ ও বিশ্বে এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি
১৯৮১ সালে বিশ্বে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। আমাদের দেশে এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়ে ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান রিপোর্টে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দেখা যায়- মিয়ানমার ৪৭৫, ভিয়েতনাম ২২৮, ভারত ১০৩৬, মালয়েশিয়া ২০০, পাকিস্তান ৪৬, ফিলিপাইন ১৯৮, থাইল্যান্ড- ১৯০৯৫ এবং বাংলাদেশে ৯ জন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চারপাশে ব্যাপকভাবে এইডস ছড়িয়ে পড়েছে। ১লা ডিসেম্বর ২০০২ বিশ্ব এইডস দিবসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় AIDS / STD (Sexually Transmitted Disease) কার্যক্রমের এক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে। এ পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০০১ সালে বাংলাদেশে HIV ভাইরাস বহনকারীর সংখ্যা ছিল ১৮৮ জন, যা ৩০ ডিসেম্বর ২০০২ এ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৪৮ জনে। National AIDS and STD Program- ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমিত চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা ২০৮৮, এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫০ এবং মৃত্যুবরণ করেছিল ২৪১ জন। একই কর্মসূচি ২০১৬ এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমিত চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা ৫৭৮ জন। এ হিসাবে ১৯৮৯-২০১৬ পর্যন্ত এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৭২১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৭৯৯ জন। দেশে ৩ কোটির ঊর্ধ্বে ১৫-২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস প্রতিরোধ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই ।

বাংলাদেশে এইডস বা এইচআইভি বিস্তারের বহুবিধ কারণ রয়েছে। দেশটির পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে এইডসের বিস্তার ভয়াবহ। বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য কারণে প্রতিদিন দেশের হাজার হাজার লোক বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে আশংকাজনকভাবে যৌনকর্মীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ৬% যৌনকর্মী এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত এবং ৫২% এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া দেশে পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যাও বেড়েছে। এসব রক্তদাতার সিংহভাগ মাদকাসক্ত । আমাদের দেশে এইডস সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ও সচেতনতার অভাব এইডস সংক্রমণের প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আমাদের দেশের প্রায় ৯৯% মোটর শ্রমিক ও রিকশাচালক এইডস সম্পর্কে কিছু জানে না অথচ এরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে লিপ্ত রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৮০,০০০ লোক বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গমন করেন। তাদের কেউ কেউ নানাভাবে এ রোগের ভাইরাস বহন করে দেশে ফিরে আসে। তাছাড়া একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে শিরায় মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীর সংখ্যা দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম এইডস সংক্রমিত ব্যক্তি দুবাইতে কর্মরত ছিল।

এইডস-এর প্রভাব
এইডস বা এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়। পৃথিবীর প্রায় সকল সমাজে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। তাদের প্রতি কোনো প্রকার সহযোগিতা ও সহানুভূতি দেখানো হয় না বরং সর্বক্ষেত্রে তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়। ফলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক মৃত্যুর পূর্বেই মানসিক মৃত্যু ঘটে।

এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে পড়ে, যা তার পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দুর্বল করে ফেলে। তাছাড়া পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবারের মধ্যে অসঙ্গতি ও বিপর্যয় নেমে আসে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

কাজ-একক :বাংলাদেশে এইডস বা এইচআইভি কেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তোমার যুক্তি উপস্থাপন কর।

কাজ-দলগত :ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে এইচআইভি বা এইডস-এর প্রভাব চিহ্নিত কর।

কাজ-একক : বাংলাদেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এইডস বা এইচআইভি এর ওপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত কর।

এইডস বা এইচআইভির কারণে আমাদের দেশে নিরাপদ রক্তের প্রাপ্যতা ঝুঁকিপূর্ণ। দরিদ্র দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর অব্যাহত উন্নয়ন এবং সেবা ব্যবস্থাও হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বে এইডস-এর কারণে একদিকে অকাল মৃত্যুর হার বাড়ছে এবং গড় আয়ু কমছে। আর অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও এইডস-এর কারণে প্রজনন হার হ্রাস পাচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র।

বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধের উপায়
এইডসের কোনো প্রতিষেধক নেই। মৃত্যুই এর একমাত্র পরিণাম। তাই বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এর প্রতিরোধ। এইডস প্রতিরোধে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

  • ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করা এবং স্বভাব ও আচরণে সমাজ নির্ধারিত আদর্শ মেনে চলা ;
  • একমাত্র জীবনসঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা বা একজন যৌনসঙ্গী থাকা ;
  • রক্তের এইচআইভি পরীক্ষা করে রক্ত গ্রহণ করা ;
  • . অন্যের ব্যবহৃত সুচ, ব্লেড, সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা ;
  • কিশোর-কিশোরী এবং সকল মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা ;
  • নাক, কান ছিদ্র এবং ছেলেদের সুন্নতে খাৎনা করার সময় জীবাণুমুক্ত সুচ, কাঁচি ব্যবহার করা ;
  • শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা ;
  • বিদেশযাত্রা ও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ;
  • যুবসমাজকে এইডস প্রতিরোধে গণসচেতনতা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা ।

এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আমাদের করণীয়
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সামাজিক ও মানসিক সমর্থনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা জরুরি। আক্রান্তের জ্বর, ডায়রিয়া এবং ব্যথা থাকলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এইডস আক্রান্তের প্রতি পরিবার ও সমাজের অন্যান্যের মানসিক ও সামাজিক সমর্থন জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘৃণা নয়, রোগকে ঘৃণা করার নীতি মেনে চলতে হবে। আক্রান্তের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, স্নেহ- ভালোবাসা দিয়ে তার মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবার কাছ থেকে আলাদা করা উচিত নয় । তাকে সাবধানে রাখতে হবে, যাতে সে অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত না হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করা যাবে না এবং তার সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন থেকে অন্যকে বিরত রাখতে হবে।

Content added By

পরিচ্ছেদ ১৬.৪ : সড়ক দুর্ঘটনা

সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি
সড়ক দুর্ঘটনা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ঘটে থাকে। তবে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি ভয়াবহ। বাংলাদেশের সমাজ জীবনে এ সমস্যা নানামুখী আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এটি মানসিক সমস্যাকেও প্রভাবিত করছে। চালক, মালিক, ট্রাফিক পুলিশ এবং রাস্তার ত্রুটি ও দুর্বলতাজনিত সড়ককেন্দ্রিক যে দুর্ঘটনা তা-ই সড়ক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশে রাস্তাঘাট ও যানবাহন বৃদ্ধির সাথে সাথে দুর্ঘটনার হার অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা ।

বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০১ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৪,০৯১টি এবং ২০০২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪,৯১৮টিতে। তাছাড়া ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যানবাহন দুর্ঘটনায় কবলিতদের মধ্যে মারা যায় ৫০.৫৮%, গুরুতর আহত হয় ৩৮.১০%, এবং সামান্য আহত হয় ১১.৩২% জন । গুরুতর আহতদের মধ্যে অনেকেই আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়, যার কোনো পরিসংখ্যান নেই । প্রকৃতপক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি এরচেয়েও ভয়াবহ। দৈনিক খবরের কাগজে চোখ রাখলেই সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা অবহিত হতে পারব এবং জানতে পারব এ সমস্যার পেছনে রয়েছে বহু কারণ, যার প্রভাবও বহুমুখী ।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ
বাংলাদেশের শহরে গাড়ির সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সে হারে দক্ষ চালক তৈরি হয়নি। অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন চালককে দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গাড়ি চালানোর জন্য যে সকল আইন ও নিয়মনীতি রয়েছে তাও অধিকাংশ গাড়ি চালকরা জানেন না। এ কারণে তারা কখনো কখনো মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে অনেকেই কম বেতনে সনদবিহীন চালক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এসব চালক অধিকাংশই তরুণ যারা রাস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অন্য গাড়িকে ওভারটেক করে এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে থাকে। এ কারণেও
প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

আমাদের দেশে অধিকাংশ ট্রাক চালক গাড়িতে পরিবহনসীমার অতিরিক্ত মাল বোঝাই করেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে খালি ট্রাকে যাত্রী বোঝাই করে গন্তব্যে পৌছান। শোভাযাত্রা, মিছিল এবং শিক্ষার্থীরা দলেবলে যাওয়ার জন্য ট্রাক ব্যবহার করে, যা অনেক সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। আমাদের দেশে ট্রাক চালকদের একটি অংশ নেশায় আসক্ত। দূরপাল্লার পরিবহনে এসব চালকরা অনেক সময় নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালান। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় দেখা যায় যাত্রী পরিবহনে আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী, এমনকি গাড়ির ছাদেও যাত্রী বহন করা হয়। এর ফলে অনেক গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

অনেক সময় স্বল্পশিক্ষিত গাড়ির মালিকগণ অতিরিক্ত লাভের প্রত্যাশায় চালকদের হাতে চলাচলের অযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি তুলে দেন ৷ তাছাড়া হালকা বড়ির গাড়ি অনেক ক্ষেত্রে মহাসড়কে চলতে দেখা যায়। এ কারণেও দুর্ঘটনা বেড়ে যায় ।

কাজ-দলগত :সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রভিত্তিক কারণের একটি ছক তৈরি কর ।
চালক মালিক সড়ক সড়ক
       
       

আমরা অনেকেই সড়ক ব্যবহার করার নিয়মনীতি জানি না। রাস্তার কোন পাশ দিয়ে চলতে হবে, কখন পারাপার হতে হবে প্রভৃতি বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। উদাসীন ব্যক্তি, শিশু, বৃদ্ধ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ অনেক সময় অসতর্কভাবে রাস্তায় চলাচল করেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে পথ চলেন। এরূপ নানাবিধ অন্যমনস্কতা ও অসতর্কতা অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটায় ।

রাস্তার উপর হাট-বাজার স্থাপন, নির্মাণসামগ্রী রাস্তায় রাখা, মহাসড়কে ধান, পাট, মরিচ শুকানো, গরু-ছাগল বেঁধে রাখা, একই রাস্তায় গাড়ি, অযান্ত্রিক যান এবং পথচারী চলাচল করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক পথচারীর জেব্রাক্রসিং এবং ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার না হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

চলন্ত অবস্থায় গাড়ি চালকের সাথে কথা বলা, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, রাস্তায় গাড়ি বের করার পূর্বে যান্ত্রিক ত্রুটি পরীক্ষা না করা, সিটবেল্ট ও হেলমেট ব্যবহার না করা, অধিক রাতে গাড়ি চালানো এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারও কারও দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।

আমাদের দেশে কোনো কোনো সড়কের নক্সা এবং নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার এবং কন্ট্রাক্টরের কাজে উদাসীনতা এবং নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি এ সমস্যার জন্য দায়ী। ত্রুটিপূর্ণ সড়কের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে ।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব
সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব পারিবারিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে খুবই মারাত্মক, যা আবার বহু সমস্যার জন্ম দেয় । হাইওয়ে পুলিশ বিভাগের প্রকাশিত প্রতিবেদনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তিদের ২৪% লোকের বয়স ১৫ বছরের নিচে এবং ৩৯% লোকের বয়স ১৬-৫০ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা  কেন্দ্রের গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান শিকার হচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দুর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত হওয়ার কারণে এসব পরিবারের সদস্যদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয় এবং আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ পরিবারের শিশুদের শিক্ষা ব্যাহত হয়।

কাজ-একক:একটি শিশুর জীবনে সড়ক দুর্ঘটনা পরিবারিক জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?

কাজ-দলগত:‘সড়ক দুর্ঘটনা শুধু পারিবারিক জীবনকেই বিপর্যস্ত করে না আর্থ-সামাজিক ও মানসিক জীবনকেও দুর্বিষহ করে তোলে।'- ব্যাখ্যা কর।

অনেক সময় দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তি শারীরিকভাবে পঙ্গু হলে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, যা তার ব্যক্তি জীবনকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। মানসিক ভারসাম্যহীনতা ব্যক্তি জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এ সমস্যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় রূপ নেয়। আবার দেখা যায় পঙ্গু ব্যক্তিটিকে ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশা গ্রহণ করতে। কেউ কেউ জীবন নির্বাহের জন্য অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। চরম হতাশা লাঘবে অনেকে আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনা শুধু ব্যক্তির পারিবারিক জীবনকেই বিপর্যস্ত করে না, আর্থ-সামাজিক ও মানসিক জীবনকেও দুর্বিষহ করে তোলে।

সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাংচুর, সড়ক অবরোধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। অনেক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়। চাকরিজীবীর কর্মঘণ্টা অপচয় হয়। পরিবহনের অভাবে কাঁচামাল নষ্ট হয়। গন্তব্যে মালপত্র পরিবহন বিলম্বিত হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটে। চিকিৎসাসহ জরুরি প্রয়োজন বাধাগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে আমরা প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকায় চোখ রাখলে আরও ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করতে পারব।

সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত রাখার উপায় এবং দুর্ঘটনা হ্রাসের পদক্ষেপ
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশেই কমবেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে আমরা সড়ককে নিরাপদ ও দুর্ঘটনামুক্ত রাখতে পারব।

  • চালক নিয়োগের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ যোগ্যতা নির্ধারণপূর্বক নিয়োগ দেওয়া ;
  • গাড়ির চালককে ট্রাফিক আইন-কানুন ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সাইড, সিগন্যাল, গতি মেনে সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে গাড়ি চালককে উৎসাহিত করা ;
  • বেপরোয়া ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি না চালানো, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল পরিবহন না করা, অন্য গাড়িকে ওভারটেকিং না করার বিষয়ে চালকদের সচেতন এবং আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করা ;
  • ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা;
  • সকল সিগন্যাল পয়েন্টে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল স্থাপন করা ;
  • আধুনিক ও মানসম্মত ড্রাইভিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করা ;
  • ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ সংস্কার ও পুননির্মাণ করে সড়ক নিরাপদ করার পদক্ষেপ গ্রহণ ;
  • গাড়ির ছাদে যাত্রী এবং মালপত্র বহন না করা;
  • প্রতিযোগিতা করে গাড়ি না চালানো ;
  • রাস্তায় গাড়ি বের করার পূর্বে যান্ত্রিক ত্রুটি পরীক্ষা করে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্ৰহণ;
  • আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দায়িত্ব পালনে সচেতন করা;
  • জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার মাধ্যমকে ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করা ;
  • দূরপাল্লার সড়কের পাশে বাড়ি-ঘর তৈরি এবং হাট-বাজার স্থাপন না করা। তাছাড়া সড়কে ধান, পাট, মরিচ শুকাতে না দেওয়া এবং গরু-ছাগল না বাঁধা ;
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্বশীল হওয়া ; ভুয়া লাইসেন্সধারী কেউ যাতে রাস্তায় গাড়ি চালাতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্বশীল করা ;
  • রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যালকোহল বা মাদক গ্রহণকারী গাড়ি চালকদের শনাক্ত করা এবং তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাহার করা ।

নিরাপদ চলাচলের জন্য করণীয়-

  • ফুটপাত দিয়ে চলাচল করা, দৌড়ে রাস্তা পার না হওয়া, চলন্ত গাড়িতে ওঠা-নামা না করা, চলন্ত অবস্থায় গাড়ি চালকের সঙ্গে কথা না বলা এবং জেব্রাক্রসিং, ওভারব্রিজ ও মাটির নিচের সংযোগ পথ তথা আন্ডার পাস দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া ;
  • শিশু-কিশোরদের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তাদের মহাসড়ক, সংযোগ সড়ক ও আধাপাকা সড়ক সম্পর্কে পরিচিত করানো। তাছাড়া চলাচলের জেব্রাক্রসিং, পারাপার সেতু, ট্রাফিক পুলিশ, ফুটপাত, ট্রাফিক বাতি ও চিহ্নাবলি,বিপজ্জনক স্থান প্রভৃতি সম্পর্কে পরিচিত করানো;
  • ছোট ভাইবোনদের নিরাপদ চলাচল বিষয়ে আমরা সচেতন করব। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও প্রবীণদের নিরাপদ চলাচলে সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার এমন পরিবারের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত এবং সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য।
Content added By

পরিচ্ছেদ ১৬.৫ : জঙ্গিবাদ

জঙ্গি এবং জঙ্গিবাদের ধারণা
জঙ্গি শব্দটি ইংরেজি ‘Militant' এবং ল্যাটিন শব্দ 'মিলিট্যার' (Militare) থেকে এসেছে। 'মিলিট্যার' শব্দের অর্থ হলো সৈনিক হিসেবে কাজ করা। আচরণিক দৃষ্টিকোণ থেকে জঙ্গি বলতে তাদের বোঝায় যারা যুদ্ধবাজ, আক্রমণাত্মক, হিংসাত্মক এবং ধ্বংসকারী। জঙ্গিরা আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক উপায়ে রাষ্ট্র বা সমাজ অননুমোদিত সংস্কারের সমর্থনে সমবেতভাবে কাজ করে। জঙ্গিরা চরম ও হিংসাত্মক পন্থার আশ্রয় নেয়। শুধু ধংসাত্মক কাজে অংশগ্রহণকারীই নয়, এ কাজে চাঁদা প্রদান ও সংগ্রহ এবং পরিকল্পনা গ্রহণসহ সকল সহায়তাকারীও জঙ্গি হিসেবে পরিচিত। জঙ্গি কার্যক্রম এককভাবে কিংবা দলীয়ভাবেও পরিচালিত হতে পারে। জঙ্গিরা বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণে তাদের সংগঠন প্রণীত ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ধারণা বা দর্শন সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রবর্তন করতে চায়। তাদের ধারণা প্রচারের জন্য লিফলেট, পোস্টার, পুস্তিকা প্রচারসহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক প্রচার মাধ্যম, যেমন- ইমেইল, ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি ব্যবহার করে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারা সবসময়ই প্রকাশ করতে চায় তাদের ধারণাই সঠিক, তা রাষ্ট্র এবং সমাজ অনুমোদনপ্রাপ্ত হোক বা না হোক। রাষ্ট্রে বিদ্যমান আদর্শ, মূল্যবোধ, নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান তারা মানতে চায় না। জঙ্গি কর্মকাণ্ডে তারা বোমা, স্থলমাইন, সামরিক অস্ত্র এবং অনেক ক্ষেত্রে আধুনিক মারণাস্ত্র পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে। আত্মঘাতের মাধ্যমেও জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কখনোবা তারা বিমান ছিনতাই করে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। জঙ্গিদের প্রস্তুত করার জন্য ব্যাপক গোপন সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে তাদের রয়েছে গোপন আস্তানা ও যোগাযোগ । রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কিত অননুমোদিত নীতিই জঙ্গি নীতি। জঙ্গি দ্বারা রচিত, প্রচারকৃত ও অনুসৃত ধ্যানধারণাই জঙ্গিবাদ নামে পরিচিত।

জঙ্গিবাদের কারণ
বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর চরম রাজনৈতিক কিংবা উগ্র ধর্মীয় অধিকার বা স্বার্থের কারণে গোষ্ঠী চেতনা থেকে জঙ্গি উন্মাদনার জন্ম নিতে পারে। দেশের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে পারে । নৈরাজ্য সৃষ্টির পিছনে কখনো কখনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও লুক্কায়িত থাকতে পারে। জীবন-জগৎ সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ ধারণা কিংবা ধর্মীয় অজ্ঞতার কারণেও অনেক সময় ব্যক্তি জঙ্গিতে পরিণত হতে পারে। আন্তঃগোষ্ঠী কিংবা গোষ্ঠীভিন্নতায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের দ্বন্দ্ব থেকেও জঙ্গি কর্মতৎপরতা সৃষ্টি হতে পারে।

জঙ্গিবাদের প্রভাব ও প্রতিরোধ
রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে জঙ্গি কর্মতৎপরতার প্রভাব ভয়াবহ ও মারাত্মক। জঙ্গি তৎপরতার কারণে একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে পারে। তাছাড়া জঙ্গি কার্যক্রম আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের কাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যেতে পারে। আমরা বিশ্বের বহু দেশের জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত অনেক অপরাধকর্ম সম্পর্কে কমবেশি জানি। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কারণ এই জঙ্গিবাদ। হাজার হাজার মানুষকে হত্যাসহ বহু সম্পদ ধ্বংস হয়েছে এই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে। মুম্বাইয়ের হোটেল তাজের হামলাও জঙ্গিদের কর্মকান্ড। আমাদের দেশে যশোর জেলায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে এবং পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষকে হত্যা জঙ্গিদের কাজ। সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে বেশ কিছু দেশি বিদেশি নারী ও পুরুষকে হত্যা করে। অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গিরা এসব কাজে আত্মাহুতি দিয়ে থাকে। একটি দেশে অব্যাহতভাবে জঙ্গি কার্যক্রম সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য হুমকিস্বরূপ। জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের পরিবারের জন্যও হুমকিস্বরূপ। অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গিদের রক্ষিত বোমা বিস্ফোরণে একই সাথে বসবাসকারী মানুষ, আবাসস্থল ও প্রতিবেশীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। মূলত জঙ্গিদের কোনো সুস্থ পারিবারিক জীবন থাকে না। সমাজ এবং রাষ্ট্র এদেরকে অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখে। অনেক সময় নিজ পরিবারও জঙ্গিদের ঘৃণার চোখে দেখে। এক্ষেত্রে পরিবারের সকলকে সন্তানের আচরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি কর্মতৎপরতার প্রতিরোধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ সতর্ক থাকলে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ সহজতর হবে। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় ধারণার সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রচারপত্র, পোস্টার, লিফলেট প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভার মাধ্যমে উগ্র বিভ্রান্ত ধর্মদর্শনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। এককথায় সুস্থ পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন জঙ্গি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ।

কাজ-একক: জঙ্গির বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত কর।

কাজ-দলগত: রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে জঙ্গি কর্মকান্ডের প্রভাবগুলো চিহ্নিত করে প্রতিরোধ পদক্ষেপ লেখ ।

 

Content added || updated By

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. এইডস আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?
২. কীভাবে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে?
৩. ‘সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়' ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
৪. পাচারকৃত নারী ও শিশু কীভাবে সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে ?
৫. ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক সেবাগ্রহীতার দাপ্তরিক ফাইল আটকানোকে দুর্নীতি বলা হয় কেন?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
১. ‘সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মূল কারণ সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভাঙন।'—কথাটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
২. ‘সামাজিক নৈরাজ্য ও মূল্যাবোধের অবক্ষয় পরস্পর সম্পর্কিত ধারণা।'- দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা কর।
৩. ‘যৌন হয়রানি ও মনগড়া ফতোয়া' নারীর প্রতি বর্বর ও পৈশাচিক সহিংসতা কেন? ব্যাখ্যা কর। ৪. ‘উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই সড়ক দুর্ঘটনার অধিক শিকার।'- কথাটি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা কর।
৫. ‘পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে জঙ্গিরা অপরাধী।'- কথাটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়ে লেখ ।

সৃজনশীল প্রশ্ন :                                                                                                                       ১।   রিমির বাবা চাকরির উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। চাকরিরত অবস্থায় সেখানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করলে দেশে ফিরে আসেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুর ছয় মাস পর তার মাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ‘নির্মল হাসি' নামক উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় চিকিৎসা শুরু করলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার তাকে এইডস রোগে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেন। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারটি এখন বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলা করছে। এ সমস্যা প্রতিরোধে ‘নির্মল হাসি’ রিমির পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় ৷
ক. এইচআইভি কী ?
খ. এইডস রোগ ছড়ানোর একটি উপায় ব্যাখ্যা কর।
গ. ডাক্তার কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, রিমির মা এইডস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রিমির পরিবারের সমস্যা মোকাবিলায় নির্মল হাসি সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্লেষণ কর।

২।   সাম্প্রতিক সময়ে 'ক' দেশের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে প্রার্থনারত কিছু মানুষকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর দায়ভার স্বীকার করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে। বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে তারা তাদের আদর্শের কিছু মৌলিক বিষয় উল্লেখ করে।
ক. . সামাজিক বিশৃঙ্খলার চরম রূপ কী?
খ. মূল্যবোধের অবক্ষয় বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনায় কোন সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে উক্ত সমস্যার প্রভাব মূল্যায়ন কর।

                                                                সমাপ্ত

Content added By

পরিচ্ছেদ ১৬.৬ : দুর্নীতি

দুর্নীতির ধারণা
ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক অবৈধ পন্থায় নীতি-বহির্ভূত বা জনস্বার্থবিরোধী কাজই দুর্নীতি। রাজনৈতিক এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনে দুর্নীতি বলতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্বের অপব্যবহারকে বুঝায়। সাধারণত ঘুষ,স্বজনপ্রীতি, কলপ্রয়োগ বা ভয় প্রদর্শন, প্রভাব খাটানো এবং ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসনের ক্ষমতা অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ অর্জনকে দুর্নীতি বলে। অবৈধ সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য কোনো ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃত অবহেলাও দুর্নীতি। দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকে পেশা, ক্ষমতা, পদবি, স্বার্থ, নগদ অর্থ, বস্তুসামগ্রী প্রভৃতি। দুর্নীতির মাধ্যমে কাউকে না কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এ অপরাধের প্রকৃতি ও কলাকৌশল আলাদা । এ কাজে দৈহিক শ্রমের চেয়ে ধূর্ত বুদ্ধির প্রয়োজন বেশি।

দুর্নীতির কারণ
বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ বহুবিধ। মূলত লোভ ও উচ্চাভিলাষী মনোভাব ব্যক্তিকে দুর্নীতিপরায়ণ করে তোলে। অনেক চাকরিজীবী দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করে। তারা ফাইলের কাজের বিনিময়ে ঘুষ, বকশিশ, কমিশন, চা-নাস্তা বাবদ খরচ, দ্রব্যসামগ্রী প্রভৃতি আদায় করে থাকে। কখনো এসব দুর্নীতিবাজরা দাপ্তরিক ফাইল আটকিয়ে ঘুষ গ্রহণ করে। আবার অনেক সময় অফিসের প্রধান কর্তার টেবিলে দীর্ঘদিন নানা কারণে ফাইলবন্দি হওয়ার কারণে অধস্তন কর্মচারী এ সুযোগ গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে ফাইলবন্দি করাও দুর্নীতি। অফিসের প্রধান বা শাখাপ্রধান দুর্নীতিবাজ হলে এর প্রভাব সংশ্লিষ্ট সকল শাখায় সংক্রমিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে বিলাসী জীবন বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার নেশা ও স্বল্পসময়ে অধিক সম্পদের মালিক হওয়ার প্রত্যাশা দুর্নীতিবাজে পরিণত করে। এদের বৈধ উপার্জনের সাথে জীবনযাত্রার মানের মিল থাকে না। এসব পরিবারের সদস্যদের চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধে দুর্নীতি মিশে থাকে। পরবর্তী জীবনে এরাও দুর্নীতিবাজে পরিণত হয়। এদের অনেকের চাকরি জীবন শুরু হয় অন্য এক দুর্নীতিবাজের মাধ্যমে। পরিবারের সদস্যদের অধিক চাহিদাও অনেক সময় উপার্জনকারীকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করে।

বর্তমান সরকার শিক্ষিত বেকারদের জন্য নানাবিধ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। প্রথম শ্রেণির চাকুরি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির চাকুরিসহ সমস্ত সরকারি চাকুরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করেছেন।

কাজ-একক : একটি অফিস বেছে নাও এবং উক্ত অফিসে কতভাবে দুর্নীতি হতে পারে তার একটি চিত্র তুলে ধর।

একক : দুর্নীতি প্রতিরোধে গড়ে ওঠা একটি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত কর এবং এ প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য দুর্নীতির চিত্র তুলে ধর।

 দলগত: পারিবারিক জীবনে দুর্নীতির প্রভাব চিহ্নিত কর এবং প্রতিরোধ পদক্ষেপ লেখ ।

রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার অভাব, অগণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দুর্নীতি বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। রাজনীতিতে দেশপ্রেমিক, যোগ্য এবং দক্ষ নেতৃত্বের অভাবও দুর্নীতির অনুকূল পরিবেশের সহায়ক। দুর্নীতিবাজদের কোনো মানবিকতা এবং দেশপ্রেম থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব সমাজ জীবনকে অস্থির করে তোলে। এ সামাজিক অস্থিরতাই আবার দুর্নীতির জন্ম দিয়ে থাকে। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাও অনেক ক্ষেত্রে সমাজে দুর্নীতি বাড়িয়ে তোলে। দুর্নীতিবাজ, নকলবাজ, ভেজাল মিশ্রণকারী ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনের আশায় ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় নেমে দুর্নীতি করে।

সাধারণত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে অনেক সময় ব্যবসায়ী, আড়তদার, মওজুদদার, মুনাফাখোর, মধ্যস্বত্বভোগী, ফটকা কারবারীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলে। তারা প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন করে। এর ফলে স্বল্প আয়ের লোকেরা অর্থকষ্টের কারণে বাঁচার তাগিদে দুর্নীতির আশ্রয়গ্রহণ করে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান যখন দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয় কিংবা এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তখন সমাজ ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে ছেয়ে যায়। ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও সমাজে দুর্নীতি বাড়িয়ে তুলতে পারে ।

দুর্নীতির প্রভাব ও প্রতিরোধ
সমাজ জীবনে দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। যে সমাজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে সে সমাজে একে অন্যের দ্বারা প্রতারিত হয়। দুর্নীতিবাজও অন্যের দুর্নীতির শিকারে পরিণত হয়। ন্যায্য অধিকারের বঞ্চনা দুর্নীতিপ্রবণ সমাজের চিত্র। চাকরিজীবনে স্বজনপ্রীতি বা ঘুষের বিনিময়ে যদি অযোগ্যরা নিয়োগ এবং পদোন্নতি পায় তাহলে সমাজের যোগ্যরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। দুর্নীতির কারণে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে, ফলে যোগ্যদের প্রতিভা বিকশিত হয় না । সৃজনশীলতা ক্রমশ হ্রাস পায়। দুর্নীতিপ্রবণ সমাজে আইন-শৃঙ্খলা, নিয়ম-কানুন প্রভৃতির প্রতি মানুষ শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। দুর্নীতি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীর মধ্যে দায়িত্ব-কর্তব্যে অনীহা এবং সম্পদের অপব্যবহার করার মানসিকতা সৃষ্টি করে। দুর্নীতির কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়। সততা, আদর্শ এবং মূল্যবোধ লোপ পেতে থাকে। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি জাতীয় বিপর্যয়ের মূল কারণ। এটি দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির প্রতিবন্ধক।

দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক আন্দোলন। গণসচেতনতা গড়ে তোলার কার্যকর হাতিয়ার হলো গণমাধ্যম। গণমাধ্যমে দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্য প্রচার করে গণসচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব। সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা হলে দুর্নীতি নির্মূল করা যায়। উপার্জন, ব্যয়, সম্পদের হিসাব প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমেও অনেক দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খোলা সম্ভব। দুর্নীতিবাজ, নকলবাজ, প্রতারক ও মুখোশধারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনলে দুর্নীতি উচ্ছেদ সহজতর হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক আন্দোলন কর্মসূচি প্রভৃতির মাধ্যমেও দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটলে সমাজ থেকে দুর্নীতির অবসান ঘটবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণা দুর্নীতি প্রতিরোধে বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

Content added || updated By
Promotion