বায়োফিল্টার প্রস্তুত প্রণালি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বায়োফিল্টারের আয়তন সাধারণত এলআরটি-এর ১০% এবং উচ্চতা এলআরটি-এর সমান হতে হবে। প্রতিটি এলআরটি-এর জন্য পৃথক বায়োফিল্টার প্রয়োজন। এর মোট উচ্চতা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন পানিপূর্ণ অবস্থায় বায়োফিল্টার এবং এলআরটি-এর উপরের ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খালি থাকে। জীবাণুমুক্ত করে ধৌত করার পরে ১ মিটার উচ্চতার একটি বায়োফিল্টারে ৮৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা পর্যন্ত মিডিয়া দেয়া যেতে পারে। বায়োফিল্টার স্থাপনের পূর্বে পাথর, ঝিনুক, নেট, ড্রাম, পাইপ, এয়ার স্টোন ইত্যাদি ১৫০ পিপিএম ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে জীবাণুমুক্ত স্বাদু পানি দিয়ে ভালাভাবে ধুয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। বায়োফিল্টারের নিচের দিকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার সাইজের পাথর দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ২য় স্তরে ১৫ সেমি ঝিনুক, ৩য় স্তরে ২০ সেমি পাথর, ৪র্থ স্তরে ৫ সেমি ঝিনুক, ৫ম স্তরে ২০ সেমি পাথর ও ৬ষ্ঠ স্তরে ১০ সেমি ঝিনুক পর্যায়ক্রমে সাজাতে হবে এবং উপরের ১৫ সেমি খালি জায়গা রাখতে হয় থেকে বায়োফিল্টারে পানি প্রবেশ করার পাইপ স্থাপন করতে হবে এবং বায়োফিল্টার থেকে এলআরটি-তে শোধিত পানি পুনঃসঞ্চালনের জন্য নুড়িপাথরের নিচ পর্যন্ত পাইপ স্থাপন করে বাতাসের পাইপ ও এয়ার স্টোন স্থাপন করতে হবে।

Content added By

বায়োফিল্টারে পানি সরবরাহ

প্রথমে স্বাদু পানি দিয়ে বায়োফিল্টার ভর্তি করে ২৫০ পিপিএম হারে ফরমালিন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বায়ুসঞ্চলন করার পর সমস্ত পানি ফেলে দিয়ে প্রথমে জীবাণুমুক্ত স্বাদু পানি এবং পরে ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পরিষ্কার করতে হবে। বায়োফিল্টারে পরিশোধিত ১২ পিপিটি লবণ পানি দিয়ে ঝিনুকের উপর ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত পানি দিয়ে এতে বায়ুসঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে। অতঃপর ১.৫ মিলি তরল অ্যামোনিয়া যোগ করতে হবে। ২০-২৫ দিন বায়ুসঞ্চালনের পর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। যদি এ অবস্থায় অ্যামোনিয়া না পাওয়া যায় তবে পুনরায় অ্যামোনিয়া দিতে হবে এবং ৩-৪ দিন পর পুনরায় অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে অ্যামোনিয়ার অনুপস্থিতি বায়োফিল্টারের ১০০ ভাগ কার্যক্ষম নির্দেশিক। বায়োফিল্টারে অ্যামোনিয়ার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিলীন না হওয়া পর্যন্ত লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সাথে এর সংযোগ দেয়া যাবে না।

Content added By

বায়োফিল্টার সক্রিয়করণ

বায়োফিল্টার স্থাপন করে সাথে সাথে তা এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। বায়োফিল্ডারকে সক্রিয় করার পূর্বে এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করা হলে প্রতিপালন ট্যাংকের পানি অ্যামোনিয়াজনিত বিষাক্ততা থেকে মুক্ত হবে না বিধায় লার্ভার জন্য বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনটি পদ্ধতিতে বায়োফিল্টার সক্রিয় করা যায়।

প্রথম পদ্ধতিঃ নতুন বায়োফিল্টারে নুড়ি স্থাপনপূর্বক নির্ধারিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি প্রবেশের পরে ১.৫ মিলি অ্যামোনিয়া যোগ করতে হবে। এরপর ২০-২৫ দিন বায়ুসঞ্চালন করা হলে নুড়িপাথরের গায়ে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। যাহোক ২০-২৫ দিন পরে পানিতে অ্যামেনিয়ার  পরিমাণ কমে গেলে বা অনুপস্থিত থাকলে এদের উপস্থিতির মাধ্যমে বায়োফিল্টারের সক্রিয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: কোনো সক্রিয় বায়োফিল্টার থেকে কিছু নুড়িপাথর এনে নতুনভাবে প্রস্তুতকৃত বায়োফিল্টারে দিয়ে ৮-১০ দিন বায়ুসঞ্চালন করা হলে নুড়িপাথরের পায়ে হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং বায়োফিল্টার সক্রিয় হয়ে যায়।

তৃতীয় পদ্ধতি: বায়োফিল্টার স্থাপনের পরে এর ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানিতে কিছু তেলাপিয়া ছেড়ে ২-৩ সপ্তাহ পালন করা হলে নুড়িপাথরের গায়ে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেবে এবং বায়োফিল্টার সক্রিয় হবে। বায়োফিল্টার সক্রিয় হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হলে ট্যাংক থেকে তেলাপিয়া মাছ সরিয়ে নিয়ে। বায়োফিল্টারকে এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করে দেয়া যাতে পারে।

বায়োফিল্টারের কার্যকারিতা: তিনটি পর্যায়ের মাধ্যমে বায়োফিল্টারের কার্যকারিতা বর্ণনা করা যায়।

১ম পর্যায়: অ্যামোনিফিকেশান বা মিনারেলাইজেশান

বায়োফিল্টারে স্থাপিত নুড়িপাথরের গায়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এসব হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা এলআরটি-এর পানিতে লার্ভার মৃতদেহ, মলমূত্র প্রয়োগকৃত খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি পচনের ফলে লার্ভার জন্য চরম ক্ষতিকর আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। এ প্রক্রিয়াকে অ্যামোনিফিকেশান বা মিনারেলাইজেশান বলা হয়।

২য় পর্যায়: নাইট্রিফিকেশান

১ম পর্যায়ে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষতিকর আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়া নাইট্রোসোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অক্সিডেশান প্রক্রিয়ায় প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর নাইট্রাইটে পরিণত হয়। পরবর্তীতে পুনরায় এ নাইট্রাইট আবার নাইট্রোব্যাক্টারের মাধ্যমে সর্বাধিক কম ক্ষতিকর নাইট্রেটে পরিণত হয়। এর ফলে এলআরটি-এর পানি ক্ষতিকর অজৈব নাইট্রোজেনজনিত বিষাক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে লার্ভার জীবনধারণের উপযোগী হয়। নাইট্রিফিকেশান পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য ৬টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এগুলো নিম্নরূপ:

১ বায়োফিল্টারে পানিতে যে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের অনুপস্থিতি

২ বায়োফিল্টারের পানির তাপমাত্রা ২৮-৩০° সেন্টিগ্রেড থাকা বাঞ্ছনীয়;

৩. বায়াফিল্টারের পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ মাত্রার মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়;

৪. বায়োফিল্টারের পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৪ পিপিএম এর বেশি থাকা বাঞ্ছনীয় ; 

৫. বায়োফিল্টারের পানির লবণাক্ততা ১০-১৫ পিপিটি এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়, এবং

৬. বায়োফিল্টারে স্থাপিত নুড়িপাথর ও ঝিনুকের পরিমাণ বেশি হলে অধিক পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং নাইট্রিফিকেশানের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।  বায়োফিল্টারের প্রত্যাশিত সক্রিয়তা প্রাপ্তির জন্য এসব নুড়িপাথর ও ঝিনুক ছোট আকারের এবং অমসৃণ পৃষ্ঠ সম্পন্ন হলে ভালো হয়।

৩য় পর্যায়: ডিসিমিলেশান বা ডি-নাইট্রিফিকেশান 

বায়োফিল্টারের নুড়িপাথরের নিচে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এরা পানিতে উপস্থিত নাইট্রেটকে ভেঙে নাইট্রাইট, মুক্ত নাইট্রোজেন, মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে বায়োফিল্টারের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। এ প্রক্রিয়াকে ডিসিমিলেশান বা ডি- নাইট্রিফিকেশান বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পানিতে উপস্থিত নাইট্রেটের পরিমাণ কমলেও বায়োফিল্টারে তা ব্যাপকভাবে চলতে দেয়া ঠিক নয়। কারণ এর ফলে পানিতে ক্ষতিকর অ্যাসিড সৃষ্টি হয়। তাই বায়োফিল্টারে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিছু পানি পরিবর্তন করে দেয়া উচিত। বায়োফিল্টারের নুড়িপাথরের নিচে বায়ুসঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ডি-নাইট্রিফিকেশানের পরিমাণ কমানো সম্ভব।

Content added By
Promotion