বাস্তব ও স্মৃতি থেকে অনুশীলন

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা - NCTB BOOK

পাঠ : ১, ২, ৩, ৪, ৫

স্টিল লাইক ও শিল্পকলাঃ  আমরা দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা প্রকারের  জিনিসের এককভাবে অনুশীলন করেছি। এখন আমরা করগুলো কতু বা জিনিসকে একত্রে সাজালেও যে এটি একটি আলাদা বিষয় হয়ে শিল্পগুণে প্রকাশিত বা উপস্থাপিত হতে পারে তা জানব।

স্থিরচিত্র অঙ্কনে যে বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন তা হলো বিবরবস্তুর আকার আকৃতির সুসমন্বয় বিষয় নির্বাচন, বিষয় সাজানো সর্বোপরি আলোর দিক নির্দেশনা লক্ষ করে বাস্তবভাবে কীভাবে অক্ষন করা যায় তা শিক্ষকের সাহায্যে এবং নিজের চিত্র থেকে ধারণা নিয়ে তোমরাও মনেরমতো বিষয় নির্বাচন করে অনুশীলন করতে পারবে।

পোস্টার রঙে আঁকা স্টিল লাইফ বা স্থির চিত্র

পাঠ : ৭, ৮, ৯, ১০, ১১৩ ১২

মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর ছ অষ্টম শ্রেণিতে মানুষ ও প্রাণী আঁকার প্রাথমিক অনুশীলন আমরা জেনেছি। এখন আমরা জন মানুষ আঁকার কিছু কাঠামোগত কৌশল। ছোট শিশু থেকে পূর্ণবয়স্ক একটি মানুষের ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কতগুলো মাপজোকের নিয়ম আছে। বয়স ভেদে মানুষের দেহ অবকাঠামোর পরিবর্তন ঘটে। একটি শিশুর ছবি থাকার পরিমাপকের সাথে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ছবি আঁকার পরিমাপকের ভিন্নতা রয়েছে। যেমন- একটি ছোট শিশুর ছবি থাকার সময় যদি তার মাধার মাপকেএকক করে নেই তাহলে তার সমস্ত শরীর যেমন ৪টি মাপে বিভাজন করা যাবে, তেমনি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হবে না। তার মাথার মাপ একক করে বিভাজন করলে তা ৭ কিংবা ৮ গুণে ভাগ করা যাবে।শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে তোমরা অনুশীলন করলে এ বিষয়ে আরও দক্ষতা নিজেরাই অর্জন করতে পারবে। তাছাড়া মানুষের গতি-প্রকৃতির ওপর একটু গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে পূর্বে অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয় করে তোমরা তোমাদের অঙ্কিত ছবিতে মানুষের সাথে কোনো প্রাণীর ছবি সংযোজন করে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারবে।

পাঠ : ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮,১৯

প্রকৃতি থেকে অনুশীলন

আমরা এতদিন স্মৃতিনির্ভর ছবি এঁকেছি। এখন আমরা বাস্তবের একটা ছবি কীভাবে আঁকা যাবে, সে বিষয়ে জানব। আমরা যে যেখানেই থাকিনা কেন তার চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে। তোমার পারিপার্শ্বিকতার যে দৃশ্যটি তোমার বেশি ভালো লাগে— কোনো এক ছুটির দিনে সেখানে কাগজ, বোর্ড, পেনসিল নিয়ে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে বসে ছবি জাকার সাধারণ নিয়মের আলোকে এবং শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিবে। এখানে যে বিষরটি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো তোমার কাগজে বা ক্যানভাসে তোমার নির্বাচিত বিষয়ের কোন অংশটুকু থাকবে তা মনে মনে ভেবে নিবে। আরও একটি বিষয়ের দিক খেয়াল রাখতে হবে তা হলো- ভূমি যে সময় ছবিটি আঁকবে সেই সময়ের আলোর নির্দেশনা, যেমন— তুমি যদি সকাল নয়টায় ছবিটি আঁক তাহলে সূর্যের আলো পূর্ব দিকে থাকবে পশ্চিম দিকে ছায়া পরবে। আবার বারোটার পর দুইটা কিংবা তিনটার সময় যদি তুমি ছবিটি আৰু তাহলে ভালো পশ্চিম দিক থেকে আসবে এবং পূর্ব দিকে ছায়া পরবে। প্রকৃতির সাথে আলোচ্চারার যে নিবিড় সম্পর্ক তা জেনে তুমি যখন ছবি আঁকবে তখন তোমার ছবি বলে দিবে এটা কোন সময়ে এঁকেছ। প্রাকৃতিক দৃশ্য বা যে কোনো ছবি আঁকার সময় এ ব্যাপারটি মনে রাখতে হবে।পাঠ: ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪ ২৫

স্মৃতি থেকে অনুশীলন

আজকে যা কিছু আমরা বাস্তবে অবলোকন করি আগামীকাল তা হয়ে যায় মৃর্তি। আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা আছে যা স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে। কোনো কোনো স্মৃতি থাকে মধুর আবার অনেক স্মৃতি থাকে বেদনার। সে সব স্মৃতিনির্ভর ছবি আঁকতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হয় সেই সময়ে। চোখ বুঝলেই দৃশ্যকল্পে ভেসে ওঠে ঘটনার হুবহু বর্ণনা। একটু গভীরভাবে উপলব্ধি করে আমরা সে সব ঘটনার বর্ণনা নিয়েও ছবি আঁকতে পারি। যেমন- বার্ষিক পরীক্ষার পর বিদ্যালয় থেকে তোমানের শ্রেণির সব বন্ধুরা শিক্ষকদের নিয়ে সূত্রে কোনো মনোরম পরিবেশে শিক্ষা সফরে গেলে। সেখানকার প্রকৃতি, পরিবেশ, দর্শনীয় স্থানগুলো সকলে মিলে উপভোগ করেছ। যা এখন তোমার মনের মাঝে গেঁথে আছে। গভীরভাবে ইচ্ছা করলে তুমি সে খান, প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে একটা মজার ছবি এঁকে ফেলতে পার। তেমনিভাবে তোমার স্মৃতিবিজরিত যে কোনো ঘটনা নিয়েও ছবি আঁকতে পার।

পাঠ ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০

মোজাইক পেইন্টিং (Mosaic Painting) / দেওয়ালচিত্র বা ম্যুরাল (Mural) মুরাল শিল্প হিসেবে অত্যন্ত প্রাচীন। সাধারণত পাবলিক প্লেস বা জন সমাগম হয় এ রকম স্থানে, কোনো ভবন বা দেয়ালে বড় আকারের যে ছবি করা হয়, তাকে ম্যুরাল বলে। বড় বড় হোটেল, রেস্তোরাঁ, অফিস ভবন, স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতে মুরাল হয়ে থাকে। রোজ টাইলস এ নির্মিত হয় বলে রোন বৃষ্টি, ঝড়, ধুলা-বালি অন্যান্য প্রতি আবহাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে মুরাল টিকে থাকতে পারে। সে জন্য খোলা জায়গায় বা ভবনের বাইরের দেয়ালে মুরাল নির্মাণ করা হয়। মুরালকে মোজাইক চিত্র বা Mosaic Painting করা হয়।

নানা রঙের গ্লেজ টাইলস দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়। আমরা দেয়ালে লাগানোর জন্য যে সব টাইলস ব্যবহার করি চিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন রং নির্বাচন করে সে সব টাইলস দিয়েই মোজাইক চিত্র বা মুরাল নির্মাণ করা যায়। তবে ছোট ছোট রঙিন পাথরের টাইলস এর এবং কাচের টুকরা বা নানা ধরনের সিরামিক পানের ভাঙা টুকরা দিয়েও মোজাইক চিত্র করা সম্ভব।

নির্মাণ পদ্ধতি

 ম্যুরালের জন্য প্রথমে নির্ধারিত ছবির ছোট লে-আউটকে প্রয়োজন অনুযায়ী বড় করে নিতে হবে। অর্থাৎ ছোট আকারের ছবিটিকে যে জায়গায় ম্যুরাল তৈরি হবে সে জায়গার মাপ অনুযায়ী আনুপাতিক হারে বড় করে নিতে হবে। নকশা বা ছবিটি মাপমতো কাগজে বা রেক্সিন পেপারে রং দিয়ে এঁকে নিতে হবে। পরে ঐ কাগজ বা রেক্সিন আজকাল ছোট ছবি বা লে-আউটকে ডিজিটাল প্রিস্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাপে বড় করা হয়। মেঝেতে বিছিয়ে নিতে হবে। এবার নকশা বা ছবির রং অনুযায়ী রঙিন টাইলস এর ছোট ছোট টুকরা উল্টোপিঠ নিচে এবং রঙিন পিঠ উপরে রেখে ছবির ওপর বসিয়ে দিতে হবে। পুরো ছবিতে রঙিন টুকরা টাইলস সাজিয়ে দিলে কাগজে রেক্সিনে অঙ্কিত ছবি অনুযায়ী রঙিন ম্যুরালচিত্র সম্পন্ন হবে। এরপর ভালোভাবে ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে উপরের ধুলা-বালি ও অন্যান্য ময়লা বাতাস দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর একটু মোটা কাগজে ময়দার আঠা মেখে সাবধানে সেই কাগজ সাজানো টাইলসের ওপর বসিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। আঠা শুকানোর পর ছোট ছোট অংশে ছবিটিকে ভাগ করে দাগ দিয়ে নিতে হবে। ভাগগুলোর রুম বা সিরিয়াল যাতে ঠিক থাকে সে জন্য এতে নম্বর বা চিহ্ন দিতে হবে। তারপর দাগ অনুযায়ী কাগজসহ ছবিটিকে ছোট ছোট টুকরা অংশে কেটে নিতে হবে। সুন্দরভাবে প্যাকেট করে যে স্থানে বা দেয়ালে ম্যুরাল তৈরি হবে, সেখানে নিয়ে যেতে হবে তারপর দেয়ালে সিমেন্টের আস্তর দিয়ে তার ওপর স্ল্যাব বা কাটা অংশগুলো পূর্বের ক্রম অনুযায়ী বসিয়ে দিতে হবে। এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কাগজের নিকটা ওপরে থাকে। সমস্ত অংশ সিমেন্ট লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শুকানোর পর পানি দিয়ে কাগজ ভিজিয়ে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ কাগজ তুলে ফেলতে হবে, তা হলেই প্রয়োজনীয় ম্যুরালচিত্রটি পাওয়া যাবে। কাগজ তোলা শেষ হলে ছবিটি ভালোভাবে পানি ও গুঁড়া সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সাদা সিমেন্টের সাথে রঙিন অক্সাইড মিশিয়ে গুটিং করা যেতে পারে।

Content added By
Promotion