বিপণনের কার্যাবলি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - বিপণন | NCTB BOOK

বিপণন উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বিপণনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার মালিকানাগত, স্থানগত ও সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়। নিম্নে বিপণনের কাজগুলো বিশ্লেষণ করা হলো—
১. ক্রয় (Buying) : ক্রয় বিপণনের অন্যতম কাজ। নিজস্ব ব্যবহার বা পুনঃবিক্রয়ের জন্য পণ্য-দ্রব্যবা সেবা সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। পণ্য-দ্রব্য বা সেবা সামগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে পণ্যের মালিকানা সৃষ্টি হয়।
২. বিক্রয় (Selling) : বিপণনের একটি আবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে পণ্যের ক্রেতা ও বিক্রেতাকে একত্রিত করা। বিক্রয়ের মাধ্যমে পণ্যের মালিকানা হস্তান্তর হয়। পণ্য বা সেবার চাহিদা নির্ধারণ, ক্রেতা অনুসন্ধান, মূল্যনির্ধারণ বিক্রয়ের সাথে জড়িত।
৩. পরিবহন (Transportation) : পরিবহন পণ্য বা সেবার স্থানগত উপযোগ ও চাহিদা সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানো হয়। এভাবে পণ্য উৎপাদনকারী থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে। পরিবহনের কারণেই চীনের তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য-সামগ্রী আমরা ব্যবহার করতে পারছি। আবার আমাদের দেশের চিংড়ি মাছ ও চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ভোগ করতে পারছে।
৪. গুদামজাতকরণ (Warehousing) : গুদামজাতকরণের মাধ্যমে পণ্যের সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়। বিপণনের সকল পর্যায়ে পণ্যসামগ্রী সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। অনেক পণ্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদিত হয় কিন্তু ব্যবহার হয় সারা বছর। বছরব্যাপী চাহিদা মেটানোর জন্য সে সকল পণ্য গুদামজাতকরণের মাধ্যমে সরক্ষণ করতে হয়। যেমন শীতকালে উৎপাদিত গোল আলু ও টমেটো সারা বছর আমরা গুদামজাতকরণের ফলেই পেয়ে থাকি ।
৫. প্রমিতকরণ (Standardizing) : প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ, আকার, রং, স্বাদ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে পণ্য মূল্য স্থির করা হয়। ফলে পণ্যের বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং বিক্রয় কার্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ৷

৬. পর্যায়িতকরণ (Grading) : মান অনুযায়ী পণ্যকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করাকে পর্যায়িতকরণ বলা হয়। সাধারণত ওজন, আকার ও গুণাগুণ অনুযায়ী পর্যায়িতকরণ করা হয়। ফলে বিক্রয় সহজ হয়।
৭. মোড়কিকরণ (Packaging) : পণ্য সামগ্রীকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা এবং নষ্ট বা ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু দ্বারা আবৃত করাকে মোড়কিকরণ বলা হয়। শিল্পজাত পণ্য যেমন- ফ্রিজ, টেলিভিশন, সাবান এবং কৃষিজাত পণ্য যেমন- পাস্তুরিত দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদির বিক্রয় ও ক্রেতাদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা মোড়কিকরণের উপর নির্ভর করে।
৮. তথ্য সংগ্ৰহ (Collection of Information) : পণ্য ও বাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করাও বিপণনের কাজ। বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ কেমন, ক্রেতা ও ভোক্তাদের পছন্দ ও রুচি কেমন সে সম্পর্কে জানতে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
৯. ভোক্তা বিশ্লেষণ (Consumer Analysis) : বিপণনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর রুচি, চাহিদা, বৈশিষ্ট্য ও আগ্রহ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা। কারণ যথাযথভাবে এ কাজটি না করতে পারলে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং প্রসার ব্যাহত হয়।

Content added By
Promotion