বেসিক লাইফ সাপোর্ট

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
46
46

‘’বেসিক লাইফ সাপোর্ট (Basic Life support ) " BLS নামেও পরিচিত। এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সরণাপন্ন অবস্থায় মানুষের জীবন রক্ষার প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটা ভক্তক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োগ করা হয়, যতক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তি আরও বিস্তারিত বিশেষজ্ঞ সেবা গ্রহণ করার সুযোগ না পাচ্ছেন। এই দক্ষতাগুলো প্যারামেডিকস, নার্স এবং যারা BLS প্রশিক্ষণ পেয়েছে তাদের থাকে, দক্ষ হাতে না করলে রোগী আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরে যেতে পারে। আগের অধ্যায়ে আমরা বেসিক হেল্থ স্ক্রিনিং-এর প্রাথমিক ধারণা লাভ করেছি এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক জ্ঞান ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জেনেছি। এ অধ্যায়ে আমরা জানবো চিকিৎসা ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাগুলো কী কী, ঐ অবস্থাগুলোতে প্রাথমিকভাবে উপস্থিত ব্যক্তির করণীয় এবং বেসিক লাইফ সাপোর্ট এক্সপার্টের করণীয় কী।

 

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

  • কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, টুলস, ইকিউপমেন্ট ও ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ এবং নির্বাচন করতে পাৱৰো ।
  • বেসিক লাইফ সাপোর্ট প্রদানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে পারবো।
  • শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতার লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারবো ও শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা দূর করার পদ্ধতি প্রদর্শন করতে পারবো।
  • নাড়ি পরীক্ষা করতে পারবো। 
  • সঠিক নিয়মে সিপিলার (কার্ডিও পালমোনারী রিসাসিটেশন)- এর প্রাথমিক ধাপগুলো বর্ণনা ও প্রদর্শন করতে পারবো ।
  • চোকিং-ব্যবস্থাপনার জন্য ভিক্টিমের বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী হাইমলেখ ম্যানুভার প্রদর্শন করতে পারবো।
  • পুড়ে যাওয়া ও নাক দিয়ে রক্তপাত্ত হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করতে পারবো।

উল্লিখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন আইটেমের জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই জবের মাধ্যমে আমরা মরণাপন্ন মানুষকে প্রাথমকিভাবে সেবাদান করতে পারবো। অবগুলো সম্পন্ন করার পূর্বে প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানবো।

 

৫.১ বেসিক লাইফ সাপোর্ট (Basic Life Support )

যখন একজন রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেন্ট হয় (হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়), তখন তাদের জীবন রক্ষার্থে বেসিক লাইফ সাপোর্ট (BLS) প্রদান করা যেতে পারে। মূলত এখানে হৃদপিন্ড থেকে শরীরের চারপাশে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে বুকের চাপ দেওয়া হয়, যা টিস্যু ও মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখা নিশ্চিত করে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা অ্যাসফেন্সিয়া (মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব)-এর শিকার ব্যক্তিরা এমন জরুরি অবস্থার মধ্যে থাকে, যেখানে তাদের জীবন বাচাতে এবং তাদের স্বাস্থ্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য "চেইন অফ সারভাইভালো” নামক চারটি কাজের সমন্বয় প্রয়োজন হয়। এই চারটি কাজ হল (চিত্র ৫.৯.ক):

১. কার্ডিয়াক প্যারেন্ট প্রতিরোধ 

২. কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের অবিলম্বে সনাক্তকরণ এবং জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থা সক্রিয়করণ 

৩. বেসিক লাইফ সাপোর্ট ( CPR - Cardiopulmonary resuscitation and AED - Automated External defibrillator) 

৪. অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট এবং পরবর্তী সেবা

চিত্র ৫.১.ক সব বয়সের জন্য চেইন অফ সারভাইভালো। প্রতিরোধ, অবিলম্বে সনাক্তকরণ ও জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থা সক্রিয়করণ, প্রাথমিক সিপিআর এবং অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট এবং পরবর্তী সেবা

 

৫.১.১ বেসিক লাইফ সাপোর্ট-এর পুরুত্ব (Importance of Basic Life Support)

বেসিক লাইফ সাপোর্ট (BLS) হল একটি জরুরি চিকিৎসা সেবা। যেকোনো জায়গায় একজন সরনাপন্ন ব্যক্তির জীবন বাচানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি খুবই সহায়ক হতে পারে। এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে BLS-এর উদ্দেশ্য ব্যক্তির ‘রোগমুক্তি’ করা নয় বরং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা না আসা পর্যন্ত রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে না দেওয়া। BLS পদ্ধতিটি মূলত হৃদযন্ত্র বা শ্বাসযন্ত্রের বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্মুখীন ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে, ব্যক্তির শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন পুনরুজ্জীবিত করা যেতে পারে। তবে পরবর্তীতে রোগীকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ । BLS পদ্ধতিটি সঠিক উপায়ে প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে, বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদত্ত BLS প্রশিক্ষণের উপর প্রচুর জোর দেওয়া হয়। সঠিক উপায়ে BLS প্রদান করতে ব্যর্থ হলে রোগী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরতে পারে, তাই সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রশিক্ষণটি নেয়া জরুরি।

 

৫.১.২ বেসিক লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন এমন পরিস্থিতি (Situation where BLS is needed)

সাধারণত হৃদযন্ত্র বা শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে বেসিক লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। যেমন :

  • হার্ট অ্যাটাক
  • করোনারি ধমনীর রোগ
  • হার্ট ফেইলিউর
  • হার্টের অনিয়মিত ছন্দ
  • যেকোনো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ

এছাড়া প্রয়োজন হতে পারে ইলেক্ট্রোকিউশন, প্রচুর রক্তক্ষরণ, এলার্জি প্রতিক্রিয়া, ডুবে যাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত মাদকসেবন প্রভৃতি পরিস্থিতিতে। একটি কার্ডিও পালমোনারী অ্যারেন্ট সাধারণত সতর্কতা ছাড়াই ঘটে। যদি কেউ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে থাকে, তবে সে,

  • অজ্ঞান হয়ে যাবে
  • প্রতিক্রিয়াহীন হবে এবং
  • স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিবেনা

 

৫.১.৩ ৰেসিক লাইফ সাপোর্টের সময় প্রাথমিক পরিস্থিতি পরীক্ষা: (DR-AB)

ধাপ-১ পারিপার্শ্বিক বিপদচিহ্ন (Danger): আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান ও স্থান এবং তোমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত কর। রোগীর আশেপাশের অবস্থা, রোগীর কোনো সংক্রমক রোগের চিহ্ন আছে কি না ইত্যাদি।

ধাপ-২ রোগীর প্রতিক্রিয়াশীলতা (Response): সাহায্যের জন্য আশেপাশের মানুষের কাছে আবেদন কর, রোগীকে উদ্দীপিত কর, রোগীর কাঁধে হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকো। ১০ সেকেন্ডের জন্য এই লক্ষণগুলো আছে কি না লক্ষ্য কর:

  • অজ্ঞান হওয়া
  • প্রতিক্রিয়াহীনতা এবং
  • শ্বাস-প্ৰশ্বাসহীনতা

অভিজ্ঞরা ক্যারোটিড পালস পরীক্ষা করেও দেখতে পারে, তবে এটা জরুরি অবস্থায় অত্যাবশ্যক ।

রোগী তোমার ডাকে সাড়া দিলে তাকে তার অবস্থানে থাকতে দাও ও তার কি সমস্যা হয়েছিল তা জানার চেষ্টা কর। প্রয়োজনে সাহায্য নাও। রোগী তোমার ডাকে সাড়া না দিলে পরবর্তী ধাপে যাও।

ধাপ-৩ রোগীর শ্বাসনালী (Airway):

এয়ারওয়ে ব্যবস্থাপনা মেরুদণ্ডসহ অন্য যে কোনো আঘাতের চেয়ে পুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালীতে কিছু আছে কিনা পরীক্ষা করতে রোগীর মুখ খুলে দেখ এবং যদি থাকে তা বের করার জন্য মাথা একপাশে ঘুরিয়ে দাও। যদি কিছু বের না হয়, তাহলে রোগীর প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখার জন্য পুনরায় পরীক্ষা কর। শ্বাসনালী পর্যবেক্ষণ করার কৌশলগুলো মনে রাখতে হবে - প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কপালে এক হাত রেখে মাথা পিছনের দিকে বা বারে দিকে সামান্য ভাঁজ করবে ও অন্য হাত দিয়ে চিবুক সামান্য উঁচু করে ধরতে হবে, শিশুদের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে।

 

ধাপ-৪ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস (Breathing):

রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা কর, মাথা এবং চিবুকের অবস্থান বজায় রেখে এটি কর, তোমার গাল এবং কান রোগীর মুখের উপর রাখো যেন বুক পর্যবেক্ষণ করার সময় শ্বাসযন্ত্রের যে কোনোও প্রচেষ্টা অনুভব করা যায় এবং বুকের উঠানামা দেখা যায়। ১০ সেকেন্ড ধরে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কি না তা মূল্যায়ন করা উচিত। যদি রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, কিন্তু অজ্ঞান থাকে, তাহলে রোগীকে চিত্র ৫.১.৪ এর ন্যায় পুনরউদ্ধার অবস্থানে (Recovery position) নিয়ে আসতে হবে।

 

               চিত্র ৫.১.৩: পুনরউদ্ধার অবস্থানে (Recovery position) নিয়ে আসার নিয়ম

১- ব্যক্তির হাত-পা সোজা কর। তার মাথার পাশে ডান হাতটি ভাঁজ করে রাখো।

২- ব্যক্তির বাম হাতটি তার ডান গালের নীচে রাখো। 

৩- ব্যক্তির বাম পা হাঁটু বরাবর ভাঁজ কর। ব্যক্তির মাথা এবং ঘাড় সতর্কতার সাথে ধরে আলতোভাবে ভাঁজ করা হাঁটুটিকে ডানদিকে নিয়ে কাত করে শোয়াও। 

৪- উপরের পা সামঞ্জস্য কর, যাতে নিজস্ব এবং হাঁটু উভয়ই ডান কোণে ৰাকানো থাকে। নিশ্চিত কর যে ব্যক্তিটি যেন ঘুড়ে না যায়।

যদি রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয়, তবে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কর বা ৯৯৯ এ কল করে সাহায্যের জন্য আবেদন কর। অবিলম্বে তার উপর CPR শুরু কর।

 

৫.২ কার্ডিওপালমোনারী রিসাসিটেশন (CPR- Cardiopulomonary resuscitation)

বেসিক লাইফ সাপোর্টের সময় প্রাথমিক পরিস্থিতি পরীক্ষার পরই যেই ধাপ তা হল, কার্ডিও পালমোনারী রিসাসিটেশন। কার্ডিও পালমোনারী রিসাসিটেশন শুরু করার আগে তোমার ৰাজ্ব ও শরীর সঠিক অবস্থানে জানতে হবে।

৫. ২১ বুকে চাপ দিয়ে সংকোচন শুধু করার জন্য বাছ এবং শরীরের অবস্থানের নিয়ম নিচে বর্ণনা করা হলোঃ

৮ বছরের শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যঃ

  • তোমার দুই ৰাহু, কনুই ও কাঁধ সোজা কর যেন সব সমরেখায় থাকে।
  • বুকের উপরে স্টার্নামের নিম্নের অংশে (চিত্র ৫১.ক) এই অবস্থানে হাতের গোড়ালি রেখে, তার উপর আরেক হাত দিয়ে আঙ্গুলগুলো চিত্র ৫.২.ক-এর ন্যায় ইন্টারলক করা

 

১-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য

  • তোমার দুই বাহু, কনুই ও কাঁধ সোজা কর যেন সব সমরেখায় থাকে।
  • বুকের উপরে স্টার্নামের নিম্নের অংশে (চিত্র ৫.২.ক ও চিত্র ৫.২. অনুসরণ কর) এই অবস্থানে এক হাতের গোড়ালি রাখো।

 

১ বছর বয়সী বা এর চেয়ে ছোট শিশুদের জন্য

  • শিশুর নিপলের সাথে সংযোগকারী একটি রেখা চিত্র কল্পনা কর এবং সেই লাইনের ঠিক নীচে শিশুর স্টার্নামের উপর দুটি আঙ্গুল রাখো।
  • বুক চাপতে তোমার দুটি আঙ্গুল ব্যবহার কর যেন শিশুর বুকের গভীরতার অন্তত ১ ইঞ্চি নিচে দেৰে যায়।

 

৫.২. কার্ডিও পালমোনারী রিসাসিটেশনের নিয়ম:

৮ বছরের শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: তুমি যদি সিপিআর-এ প্রশিক্ষিত হয়ে থাকো এবং তোমার দক্ষতা ব্যবহার করতে আত্মবিশ্বাসী বোধ কর, তবে তুমি নিম্নোক্ত ধাপগুলো মেনে হ্যান্ডস-এননি সিপিআর বা উদ্ধার নিঃশ্বাসসহ সিপিআর দিতে পারবে।

ক. হ্যান্ডস-অনলি সিপিআর 

১। রোগীর পাশে হাঁটু গেড়ে বস এবং তোমার বাহু এবং শরীরের অবস্থান পূর্বে উল্লেখিত নিয়মে বুকের মাঝখানে স্টার্নামের নিচের অংশের উপর রাখো। 

২। তোমার শরীরের ভর ব্যবহার করে একটি অবিচলিত হচ্ছে নিচের দিকে চাপ দাও, যেন রোগীর বুকের খাঁচা ৫ থেকে ৬ সেমি (২ থেকে ২.৪ ইঞ্চি) নিচে দেবে যায়। তার বুক যথাযথ অবস্থানে ফিরে যেতে দাও যেন সংকোচন ও প্রসারণের একটি সাইকেল পূর্ণ হয়। 

৩। অ্যাম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত বা যতক্ষণ তুমি ক্লান্ত না হচ্ছে। ততক্ষণ প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার এই কম্প্রেশনগুলো পুনরাবৃদ্ধি কর।

 

খ. উদ্ধার শ্বাস (Rescue Breath) সহ সিপিআর 

১। ব্যক্তির মাথাটি আলতোভাবে পিছনের দিকে কাত কর এবং ২ আঙ্গুল দিয়ে চিবুকটি উপরে তুলো। ব্যক্তির নাকে চিমটি দিয়ে ধর যেন নাক দিয়ে বাতাস না বের হতে পারে। 

২। তার মুখের উপর তোমার মুখ এমনভাবে রাখো যেন কোনো বাতাস বের হয়ে না যেতে পারে। প্রায় ১ সেকেন্ডের জন্য তাদের মুখের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে এবং দৃঢ়ভাবে ফুঁ দাও। তার বুকের উঠা নামা পরীক্ষা কর। ২ টি উচ্চার শ্বাস দাও।

৩। উপরের হ্যান্ডস-ওনলি সিপিজারের নিয়মে প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার কম্প্রেশনগুলো পুনরাবৃদ্ধি কর। প্রতি ৩০টি কম্প্রেশনের পরে উপরের নিয়মে চিত্র ৫.২.৭ – এর ন্যায় ২টি করে উদ্ধার শ্বাস দাও। বুকে ৩০টি কম্প্রেশন এবং ২টি রেসকিউ শ্বাসের চক্র চাপিয়ে যাও যতক্ষণ না উন্নত জরুরি চিকিৎসা সাহায্য আসে।

**বিশেষ দ্রষ্টব্য: অসুস্থ ব্যক্তির COVID-19 বা কোনো সংক্রমক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, তাদের সুখে এবং নাকের উপর একটি কাপড় বা তোয়ালে রেখে একটি অ্যাম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত শুধুমাত্র হ্যান্ডস-ওনলি সিপিয়ার কর।

> শিশুদের উপর সিপিআর: শিশুদের হার্টের সমস্যার চেয়ে তাদের শ্বাসনালী এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে Rescue Breath দিয়ে শুরু করতে হয়।

 

ক. ১-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য

১। শিশুর কপালে এক হাত রেখে, আলতোভাবে তাদের মাথা পিছনে কাজ করে এবং চিবুকটি ভুলে তার শ্বাসনালী খোল। তার মুখ এবং নাক থেকে কোনো দৃশ্যমান ৰাধা অপসারণ কর। 

২। শিশুর নাকে চিমটি দিয়ে ধর যেন নাক দিয়ে বাতাস না বের হতে পারে। তার মুখের উপর তোমার মুখ এমনভাবে রাখো যেন কোনো বাভাস বের হয়ে না যেতে পারে। প্রায় ১ সেকেন্ডের জন্য তাদের মুখের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে এবং দৃঢ়ভাবে ফুঁ দাও। তার বুকের উঠা নামা পরীক্ষা কর। প্রথমেই ৫ টি প্রাথমিক উদ্ধার শ্বাস (Rescue Breath) দাও |

৩। তোমার বাহু এবং শরীরের অবস্থান পূর্বে উল্লেখিত নিয়মে বুকের মাঝখানে স্টার্নামের নিচের অংশের উপর রাখো। তোমার শরীরের ভর ব্যবহার করে একটি অবিচলিত ছন্দে নিচের দিকে চাপ দাও, যেন রোগীর বুকের খাঁচা অন্তত ২ ইঞ্চি নিচে দেবে যায়, যা বুকের ব্যাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বুকের সংকোচনের গুণমান (গভীরতা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি এক হাত ব্যবহার করে ২ ইঞ্চি গভীরতা অর্জন করতে না পারলে ২ হাত ব্যবহার কর। 

৪। উপরের হ্যান্ডল ওনলি সিপিআরের নিয়মে প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার কম্প্রেশনগুলো পুনরাবৃত্তি কর। প্রতি ৩০টি কম্প্রেশনের পরে উপরের নিয়মে চিত্র ৫.১.ট – এর ন্যায় ২টি করে উদ্ধার শ্বাস দাও। ৩০টি বুকে কম্প্রেশন এবং ২টি উদ্ধার শ্বাসের চক্র চালিয়ে যাও যতক্ষণ না উন্নত জরুরি চিকিৎসা সাহায্য আসে।

 

খ. ১ বছরের কম বয়সী শিশু

১। শিশুর কপালে এক হাত রেখে, আলতোভাবে তাদের মাথা পিছনে কাত করে এবং চিবুকটি তুলে তার শ্বাসনালী খোল। তার মুখ এবং নাক থেকে কোনো দৃশ্যমান বাধা অপসারণ কর। 

২। শিশুর নাকে চিমটি দিয়ে ধর যেন নাক দিয়ে বাতাস না বের হতে পারে। তার মুখের উপর তোমার মুখ এমনভাবে রাখো যেন কোনো বাতাস বের হয়ে না যেতে পারে। প্রায় ১ সেকেন্ডের জন্য তাদের মুখের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে এবং দৃঢ়ভাবে ফুঁ দাও। তার বুকের উঠা নামা পরীক্ষা কর। প্রথমেই ৫ টি প্রাথমিক উদ্ধার শ্বাস (Rescue Breath) দাও। 

৩। তোমার হাতের দুই আঙ্গুলের অবস্থান পূর্বে উল্লেখিত নিয়মে বুকের মাঝখানে স্টার্নামের নিচের অংশের উপর রাখো এবং অবিচলিত ছন্দে নিচের দিকে চাপ দাও, যেন রোগীর বুকের খাঁচা অন্তত ১.৫ ইঞ্চি নিচে দেবে যায়, যা বুকের ব্যাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বুকের সংকোচনের গুণমান (গভীরতা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি দুই আঙুলের ব্যবহার করে ১.৫ ইঞ্চি গভীরতা অর্জন করতে না পারলে ১ – ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য উল্লেখিত নিয়মে এক হাতের গোড়ালী ব্যবহার করতে পারো। 

৪। উপরের হ্যান্ডস-ওনলি সিপিআরের নিয়মে প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার কম্প্রেশনগুলো পুনরাবৃত্তি কর। প্রতি ৩০টি কম্প্রেশনের পরে উপরের নিয়মে চিত্র ৫.১.ছ – এর ন্যায় ২টি করে উদ্ধার শ্বাস দাও। ৩০টি বুকে কম্প্রেশন এবং ২টি উদ্ধার শ্বাসের চক্র চালিয়ে যাও যতক্ষণ না উন্নত জরুরি চিকিৎসা সাহায্য আসে।

**বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • মনে রাখতে হবে, শিশুদের ক্ষেত্রে প্রথমেই ৫ টি উদ্ধার শ্বাস এবং পরে ৩০টি বুকে কম্প্রেশন ও ২টি উদ্ধার শ্বাসের চক্র।
  • শিশুদের উপর সিপিআরের নিয়ম অনেকাংশে তাদের ওজনের উপর নির্ভর করে।

 

৫.৩ চোকিং (Choking)

খাদ্য, পানীয়, নকল দাঁত অথবা দুর্ঘটনাক্রমে নাক বা মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া কোনো বস্তুর কারণে শ্বাসনালীর পথ আটকে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার কারণে দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে । এই অবস্থাকে চোকিং বলা হয়। বাতাস ফুসফুসে পৌঁছাতে না পারলে মৃত্যুও হতে পারে।

 

৫.৩.১ হেইমলিখ কৌশল ( Heimlich maneuver)

হেইমলিখ কৌশল (Heimlich Maneuver) হল একজন চোকিং আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুকে সাহায্য করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এই কৌশলে পিঠে ধাক্কা (Back blow), পেটে চাপ (Abdominal thrust) এবং এক বছরের ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বুকে চাপ (Chest thrust) দেওয়া হয়। বয়স ও বিশেষ অবস্থাভেদে হেইমলিখ কৌশল ভিন্ন। হেইমলিখ কৌশল সম্পাদন করার পূর্বে তোমাকে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা নির্ভর করে যে তুমি কাকে সাহায্য করছো :

  • একজন ব্যক্তি যিনি গর্ভবতী না বা শিশু না 
  • একজন গর্ভবতী মহিলা বা স্থূলকার ব্যক্তি 
  • একজন শিশু যে এক বছরের কম বয়সী 
  • একজন শিশু যে এক বছরের বেশি বয়সী
  • নিজেকে

ক. একজন ব্যক্তি যিনি গর্ভবতী না বা শিশু না

প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তির পেটে চাপ দেওয়ার (Abdominal thrust) প্রয়োজন আছে কিনা তা নির্ধারণ কর। দম বন্ধ হয়ে আসছে বলে মনে হলে, ব্যক্তিটি যদি সচেতন থাকে এবং কাশি দিতে পারে, তাহলে সে নিজেই বস্তুটিকে শ্বাসনালী থেকে বের করে দিতে সক্ষম হতে পারে। যদি ব্যক্তিটি নিম্নের অবস্থায় থাকে, তবে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু কর:

  • কাশি দিতে পারছে না
  • কথা বলতে বা শ্বাস নিতে অক্ষম
  • সাহায্যের জন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে (সাধারণত নিজের গলা হাত দিয়ে চেপে ধরে)

প্রথমত, যদি কোনো পথচারী থাকে, তাদেরকে বল জরুরি সাহায্যের জন্য স্থানীয় জরুরি ফোন নম্বরে কল করতে। তুমি যদি উপস্থিত একমাত্র ব্যক্তি হও, তবে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু কর: 

১। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাঁড়াতে বল।

২। নিজে ব্যক্তির পিছনে গিয়ে দাঁড়াও। 

৩। ব্যক্তিটিকে চিত্র ৫.৩.ক-এর ন্যায় সামনের দিকে ঝুঁকতে সাহায্য কর এবং তোমার হাতের গোড়ালি দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি আঘাত কর (Back blow) । 

৪। তার কোমরের চারপাশে তোমার এক হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধর। হাতটি দিয়ে একটি মুষ্টি তৈরি কর এবং এটি নাভির ঠিক উপরে রাখো (বৃদ্ধাঙ্গুল ভিতরের দিকে থাকে)। 

৫। চিত্র ৫.৩.খ-এর ন্যায় তোমার অন্য হাতটি দিয়ে মুঠিটি ধর এবং একই সাথে ভিতরের দিকে ও উপরের দিকে চাপ দাও। এভাবে পর পর ৫টি চাপ (Abdominal thrust) সম্পাদন কর। 

৬। বস্তুটি বের না হওয়া পর্যন্ত এই কৌশল পুনরাবৃত্তি কর এবং ব্যক্তিকে নিজে থেকে শ্বাস নিতে বা কাশি দিতে উদ্বুদ্ধ কর। 

 

 

**বিশেষ দ্রষ্টব্য: যদি ব্যক্তি উঠে দাঁড়াতে না পারে, শোয়া অবস্থায় তার কোমর ধরে একইভাবে যুক্তি ভিতরের দিকে এবং উপরের দিকে চাপ দাও, যেভাবে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দিতে হতো।

খ. গর্ভবতী মহিলা বা স্থুলাকার ব্যক্তি

গর্ভবতী মহিলা বা স্থুলাকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, তোমার হাতটি তার খড় থেকে কিঞ্চিত উঁচুতে স্টার্নামের নিচের অংশে রেখে একইভাবে মুটি ভিতরের দিকে এবং উপরের দিকে চাপ দাও। যদি সেই ব্যক্তি অজ্ঞান থাকে, তবে তাদের পিঠে রাখো এবং আঙ্গুল দিয়ে শ্বাসনালী পরিষ্কার করার চেষ্টা কর। যদি বস্তুটি সরাতে না পারো, তাহলে CPR শুরু কর।

 

গ. একজন এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর উপর

১। আক্রান্ত শিশুটিকে দাঁড়াতে বল। অথবা চিত্র ৫.৩.ঘ-এর ন্যায় তুমি একটা চেয়ারে বসে শিশুটির উচ্চতা ও ভর বিবেচনায় রেখে তাকে তোমার দুই উরুর উপর উপুড় করে নাও ।

 ২। নিজে শিশুটির পিছনে গিয়ে শিশুর উচ্চতা বিবেচনা করে হাঁটু গেড়ে বস বা দাঁড়াও। 

৩। শিশুটিকে চিত্র ৫.৩.ঘ-এর ন্যায় সামনের দিকে ঝুঁকতে সাহায্য কর এবং তোমার হাতের গোড়ালি দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি আঘাত কর (Back blow) । 

৪। তার কোমরের চারপাশে তোমার এক হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধর। হাতটি দিয়ে একটি মুষ্টি তৈরি কর এবং এটি নাভির ঠিক উপরে রাখো (বৃদ্ধাঙ্গুল ভিতরের দিকে থাকে)। 

৫। চিত্র ৫.৩.খ-এর ন্যায় তোমার অন্য হাতটি দিয়ে মুঠিটি ধর এবং একই সাথে ভিতরের দিকে ও উপরের দিকে চাপ দাও। এভাবে পর পর ৫টি চাপ (Abdominal thrust) দাও। 

৬। বস্তুটি বের না হওয়া পর্যন্ত এই কৌশল পুনরাবৃত্তি কর এবং ব্যক্তিকে নিজে থেকে শ্বাস নিতে বা কাশি দিতে উদ্বুদ্ধ কর।

ঘ. একজন এক বছরের কম বয়সী শিশুর উপর

১। চেয়ারে বস এবং চিত্র ৫.৩.ছ-এর ন্যায় তোমার উরুতে শিশুটিকে শুইয়ে নিয়ে সাবধানে তার মুখে কাছাকাছি কিছু আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখ। খেয়াল রাখবে যেন শিশুর মুখ পরীক্ষা করতে যেয়ে বস্তুটি আরো ভিতরে চলে না যায় । 

২। শিশুটির উচ্চতা ও ভর বিবেচনায় রেখে চিত্র ৫.৩.ঙ বা চিত্র ৫.৩.ছ-এর ন্যায় তাকে তোমার উরুর উপর উপুড় করে নাও, যেন তার পেট হাঁটুর ভাঁজ বরাবর থাকে। তোমার বাহুর উপরে শিশুর মুখমন্ডলটি ধরে রাখো। 

৩। তোমার হাতের গোড়ালি দিয়ে আলতো করে পিঠে পাঁচটি ধাক্কা দাও।

৪। যদি এটি কাজ না করে, তাহলে শিশুকে উল্লিটিয়ে নিয়ে তোমার বাহু এবং উরু দ্বারা সাপোর্ট দিয়ে তোমার মুখোমুখি অবস্থানে নাও, যেন শিশুটির মাথা তার ট্রাঙ্কের চেয়ে নীচের অবস্থানে থাকে। তাদের স্টার্নামের নিচের অংশে রেখে দুটি আঙ্গুল রাখো এবং দ্রুত বুকে পাঁচটি চাপ দাও (চিত্র 6.9.5)|

৫। এই প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি কর যতক্ষণ না বস্তুটি বের হয়ে যায় এবং শিশু নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারে বা কাশি দিতে পারে।

 

ঙ. নিজের উপর: তুমি যদি একা থাকো এবং চোকিং হয়, তবে এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ কর:

১। একটি মুষ্টি তৈরি কর এবং এটি তোমার নাভির ঠিক উপরে রাখো বৃদ্ধাঙ্গুল ভিতরের দিকে থাকবে) । 

২। তোমার অন্য হাত দিয়ে মুঠিটি এর এবং একই সাথে ভিতরের দিকে ও উপরের দিকে চাপ দাও। এভাবে পেটে পর পর ৫টি চাপ (Abdominal thrust) দাও। 

৩। এই প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি কর যতক্ষণ না বস্তুটি বের হয়ে যায় এবং তুমি নিজে থেকে শ্বাস নিতে বা কাশি দিতে পারো। 

৪। এছাড়াও চিত্র ৫.৩.জ-এর ন্যায় তুমি টেবিলের কোলে বা চেয়ারের পিছনের মতো শক্ত কোনো প্রান্তে তোমার স্টার্নামের নিচের অংশ রেখে একই সাথে ভিতরের দিকে ও উপরের দিকে থা দাও।

চিত্র ৫.৩.জ নিজের উপর হেইমলিশ কৌশলের (Heimlich maneuver) প্রক্রিয়া

 

৫.৪ অন্যান্য প্রাথমিক চিকিৎসা

এছাড়াও আমাদেরকে কিছু জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রায়শই যেতে হতে পারে। তার কিছু উদাহরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দেওয়া হল:

৫.৪.১ রক্তপাত

ক. হাত ধুয়ে ডিসপোজেবল প্লাস (যদি থাকে) পরে নাও। এটি তোমাকে সংক্রমক ব্যাধি থেকে রক্ষা করবে।

গ. পানি দিয়ে ক্ষত ধুয়ে ফেলো।

গ. রক্তের প্রবাহ বন্ধ করতে একটি গল্প বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে সরাসরি চাপ প্রয়োগ কর এবং জমাট বাধতে সাহায্য কর (যখন রক্ত স্বাভাবিকভাবেই ঘন হয়ে যায় তখন রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়)।

ঘ. রক্তপাত হওয়া ক্ষত অংশটি ব্যক্তির মাথার উচ্চতার উপরে উন্নীত কর। 

ঙ. পেচিয়ে রাখা কাপড় ভিজে গেলে সরিয়ে ফেলবে না। প্রথম রটি অপসারণ করলে জমাট বাধার প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করবে এবং এর ফলে আরও রক্তক্ষরণ বাড়বে। পরিবর্তে, প্রয়োজন হলে আরও স্তর যোগ কর। 

চ. রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতস্থানে একটি পরিষ্কার ব্যান্ডেজ লাগাও।

 

হাসপাতলে নিয়ে যাও, যদি:

  • ক্ষত গভীর হয়, ক্ষত বড় হয়
  • চাপ প্রয়োগ করার পর আঘাতে রক্ত বের হয়
  • আঘাত একটি পশু বা মানুষের কামড় থেকে হয়
  • আঘাতটি পোড়া বা বৈদ্যুতিক আঘাত
  • রক্তপাত বন্ধ না হয়

 

৫.৪.২ দহন বা পুড়ে যাওয়া ক্ষত

ক. পোড়ার চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল দাহন প্রক্রিয়া বন্ধ করা। এর অর্থ হতে পারে :

  • রাসায়নিক পদার্থ থাকলে তা পরিষ্কার করা 
  • বৈদ্যুতিক শকে পুড়লে বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করা
  • কল ছেড়ে চলমান পানি দিয়ে ক্ষতস্থান শীতল করা 
  • ঢেকে রাখা বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সূর্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া

খ. পোড়া জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা: অতিরিক্ত পোড়ার জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন। জরুরি নয় এমন পোড়ার জন্য, তুমি এই প্রাথমিক চিকিৎসার পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারো:

  • কয়েক মিনিটের জন্য ঠাণ্ডা চলমান পানি দিয়ে পোড়া জায়গাটি ধুয়ে ফেলো। বরফ ব্যবহার করবে না।
  • একটি হালকা গজ ব্যান্ডেজ আলতো করে ক্ষতের উপর দিয়ে দাও। যদি পোড়া সামান্য হয়, এটি ঢেকে দেওয়ার আগে পোড়ার মলম লাগাতে পারো।
  • প্রয়োজন হলে ব্যথা উপশমের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা উপশমের ওষুধ দিবে।
  • কোনো ফোস্কা হলে তা ফুটা করবে না।

৫.৪.৩ নাক দিয়ে রক্তপাত:

 নাক দিয়ে রক্তপাতের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল ট্রমা। রক্তাক্ত নাকের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:শুষ্ক বা গরম বাতাস, উচ্চ উচ্চতা, রাসায়নিক ধোঁয়া, সর্দি এবং এলার্জি, নাকে ট্রমা, বিচ্যুত সেপ্টাম (বাকা নাকের তরুণাস্থি), অনুনাসিক পলিপ বা নাকের টিউমার, রক্তপাতের ব্যাধি (যেমন, হিমোফিলিয়া এবং লিউকেমিয়া), উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাবস্থা, অনুনাসিক স্প্রে, ডিকনজেস্ট্যান্ট এবং অ্যান্টিহিস্টামিনের ঘন ঘন ব্যবহার, NSAIDs, রক্ত পাতলাকারী (যেমন ওয়ারফারিন), কোকেন এবং অন্যান্য ওষুধ। এই জিনিসগুলোর মধ্যে অনেকগুলো তোমার নাকের সূক্ষ্ম ঝিল্লি শুকিয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যার ফলে সেগুলো খসখসে হয়ে যায় এবং ফেটে যায়।

তোমার নাক দিয়ে রক্তপাত হলে:

  • একটু সামনে ঝুঁকো, পিছনে না ।
  • নাকের ব্রিজের ঠিক নীচে নাক চাপ দিয়ে ধরো।  
  • পাঁচ মিনিট পর দেখে নাও যে রক্তপাত বন্ধ হয়েছে কিনা। যদি না হয়, নাক চাপ দিয়ে ধরে থাকো এবং আরও ১০ মিনিট পরীক্ষা কর।
  • নাকের ব্রিজে একটি ঠাণ্ডা প্যাক প্রয়োগ কর।

উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে যদি:

  • ঘন ঘন নাক দিয়ে রক্তপাত হয়
  • রক্ত সল্পতার লক্ষণ থাকে (যেমন, দুর্বলতা, অজ্ঞানতা, ক্লান্তি এবং ফ্যাকাশে ত্বক)
  • রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করলে
  • রক্ত জমাট বাধা বা রক্তপাতের ব্যাধি থাকলে
  • অস্বাভাবিক ক্ষত থাকলে; প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হলে
  • মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে

 

জব-১: ৮ বছরের শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক / ১ - ৮ বছর বয়সী শিশুদের / ১ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য কার্ডিও পালমোনারী রিসাসিটেশন (CPR - Cardiopulmonary resuscitation)

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও পোশাক পরিধান করা; 
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা; 
  • জব অনুযায়ী টুলস, ইকুইপমেন্ট, মেটেরিয়্যাল সিলেক্ট ও কালেক্ট করা;
  • কাজ শেষে নিয়ম অনুযায়ী কাজের স্থান পরিষ্কার করা; 
  • অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা; 
  • নষ্ট মালামাল (Wastage) এবং স্ক্র্যাপগুলো (Scrap) নির্ধারিত স্থানে ফেলা; 
  • কাজ শেষে চেক লিস্ট অনুযায়ী টুলস ও মালামাল জমা দেওয়া ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী ।

ক্রমিকনামস্পেসিফিকেশনসংখ্যা
০১এপ্রোনপ্রয়োজনীয় সাইজ০১টি
০২মাক্সতিন স্তর বিশিষ্ট০১টি
০৩হ্যান্ড গ্লোভ্সরাবারের তৈরি০১ জোড়া

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্টস ও মেশিন): জব অনুযায়ী যদি প্রয়োজন হয়।

 

কাজের ধারা

ধাপ-১ পারিপার্শ্বিক বিপদচিহ্ন (Danger) লক্ষ্য কর। আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান ও স্থান এবং তোমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত কর। 

ধাপ-২ রোগীর প্রতিক্রিয়াশীলতা (Response) নিশ্চিত কর। রোগী তোমার ডাকে সাড়া দিলে তাকে তার অবস্থানে থাকতে দাও ও তার কি সমস্যা হয়েছিল তা জানার চেষ্ট কর। প্রয়োজনে সাহায্য নাও । রোগী তোমার ডাকে সাড়া না দিলে পরবর্তী ধাপে যাও। 

ধাপ-৩ রোগীর শ্বাসনালী (Airway) পর্যবেক্ষণ কর। শ্বাসনালীতে কিছু আছে কিনা পরীক্ষা করতে রোগীর মুখ খুলে দেখ এবং যদি থাকে তা বের করার জন্য মাথা একপাশে ঘুরিয়ে দাও। যদি কিছু বের না হয়, তাহলে রোগীর প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখার জন্য পুনরায় পরীক্ষা কর।। 

ধাপ-৪ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস (Breathing) পরীক্ষা কর। 

ধাপ-৫ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস ভালো থাকলে তাকে পুনরউদ্ধার অবস্থানে ( Recovery position) নিয়ে আসো। যদি রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয়, তবে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কর, বা ৯৯৯ এ কল করে সাহায্যের জন্য আবেদন কর। অবিলম্বে তার উপর CPR শুরু কর।

অর্জিত দক্ষতা/ফলাফল: প্রশিক্ষণার্থী এই কাজটি ভালোভাবে কয়কেবার অনুসরণ করে মলি প্রিপারশন পদ্ধতি ও খাবার পরবিশেন দেখাতে পারবে।

ফলাফল বিশ্লেষণ ও মন্তব্য: আশাকরি বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।

 

জব-২: প্রাপ্তবয়স্ক / ১ বছরের বেশি বয়সী শিশু/ ১ বছরের কম বয়সী শিশু / গর্ভবতী মহিলার জন্য চোকিং- এর প্রাথমিক চিকিৎসা

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও পোশাক পরিধান করা; 
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা; 
  • জব অনুযায়ী টুলস, ইকুইপমেন্ট, মেটেরিয়্যাল সিলেক্ট ও কালেক্ট করা; 
  • কাজ শেষে নিয়ম অনুযায়ী কাজের স্থান পরিষ্কার করা ; 
  • অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা; 
  • নষ্ট মালামাল (Wastage) এবং স্ক্র্যাপগুলো (Scrap) নির্ধারিত স্থানে ফেলা; 
  • কাজ শেষে চেক লিস্ট অনুযায়ী টুলস ও মালামাল জমা দেওয়া ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।

 

 

 

Content added || updated By

অনুশীলনী

4
4
Please, contribute by adding content to অনুশীলনী.
Content
Promotion