সেবাদানের জন্য মানব শরীর সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। দেহের গঠন, কার্যপ্রণালী, গুরুত্ব, প্রত্যঙ্গ ও অন্নসমূহের জ্ঞান, সেবা গ্রহণকারীর চাহিদা অনুযায়ী কাজের পরিধি ও পরিকল্পণা করার পূর্ব শর্ত। এ অধ্যায়ে আমরা মানব শরীরের পঠন, অঙ্গ পরিচিতি, তন্ত্রের কাজ ও গুরুত্ব এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করব।
উল্লেখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা একটি জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই জবের মাধ্যমে জামরা মানবকোষের বিভিন্ন অঙ্গানু সনাক্ত করতে পারবো। জবগুলো সম্পন্ন করার আগে প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানব।
বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রকৃতিকে যে মূল দুই ধারায় বিশ্লেষণ করা হয় তা হল, জীব ও জড় পদার্থ। বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের সার্বিক বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে জীববিজ্ঞান বলে। বিজ্ঞানের এই প্রাচীনতম শাখায় উদ্ভিদ এবং প্রাণী, এদের গঠন, কার্যকারিতা, কার্যকৌশল পদ্ধতি বা জৈবনিক ক্রিয়া, পুষ্টি ও প্রজনন সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়। ইংরেজিতে জীববিজ্ঞানকে Biology বলা হয়, যা ল্যাটিন শব্দ Bios অর্থাৎ জীবন; Logos অর্থাৎ জ্ঞান এর সমন্বয়ে তৈরি।
জীবের ধরনভেদে প্রধান দুই শাখায় বিভক্ত; উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও প্রাণী বিজ্ঞান। এছাড়াও এমন অনেক জীব আছে যা উদ্ভিদ বা প্রাণী কোনোটাই না। যেমন: ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি। তাই বৈশিষ্টের ভিত্তিতে আবার ভৌত জীববিজ্ঞান ও ফলিত জীববিজ্ঞান এই দুই ভাগে বিভক্ত।
৩.১.১ ভৌত জীববিজ্ঞান: জীববিজ্ঞানের তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
১. অঙ্গসংস্থান (Morphology) সার্বিক দৈহিক বর্ণনা, ২. শ্রেণিবিন্যাস বিদ্যা (Taxonomy) শ্রেণিবিন্যাসের নিয়মনীতি ৩. শরীরবিদ্যা (Physiology) শরীরবৃত্তীয় কাজের বিবরণ ৪. হিস্টোলজি (Histology) আনুবিক্ষণিক গঠন, বিন্যাস, কার্য | ৫. ভ্রূণবিদ্যা (Embryology): ভ্রূনের পরিস্ফুরন, ৬. কোষবিদ্যা (Cytology): কোষের যাবতীয় বিষয়, ৭. বংশগতিবিদ্যা (Genetics): জিন ও বংশগতিধারা, ৮। বাস্তুবিদ্যা (Ecology): পরিবেশ ও জীবের আন্তঃসম্পর্ক |
৩.১.২ ফলিত জীববিজ্ঞান: প্রায়োগিক বিষয়সমূহ-
১. জীবপ্রত্নতত্ত্ব (Paleontology) ২. জীব পরিসংখ্যান বিদ্যা (Biostatistics) ৩. পরজীবীবিদ্যা (Parasitology) ৪. কীটতত্ত্ব (Entomology) ৫. অণুজীববিদ্যা (Microbiology) | ৬. প্রাণরসায়ন (Biochemistry) ৭. চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical science) ৮. জীব প্রযুক্তি (Biotechnology) ৯. ফার্মেসি (Pharmacy) ১০. বন বিজ্ঞান (Forestry) |
|
১) ডান উল্লম্ব তল (Right Vertical Plane)- এই তলটি ডান স্তনবৃত্তের সোজাসুজি নিচে নেমে আসে।
২) বাম উল্লম্ব ভল (Left Vertical Plane)- এই তলটি বাম স্তনবৃত্তের সোজাসুজি নিচে নেমে আসে।
৩) পাইলোরাসের মধ্যতল (Transpyloric Plane)- এটি সামনের পাজড়ার বরাবর আড়াআড়ি তল।
৪) টিউবারকুলের অন্তবর্তী তল (Inter Tubercular Plane)- বস্তির দুইটি প্রধান হাড় (Pelvic Bone ) এর সামনের পয়েন্ট বা Anterior Superior Iliac Spine- এর সংযোগ লাইন।
এর ফলে পেট যে নয়টি ভাগে বিভক্ত হয়-
ক) উপরের তিনটি ভাগ
১) ডান হাইপোকোনোড্রিয়াক (Right Hypochondriac),
২) ইপিগ্যাসট্রিক (Epigastric ) ও
৩) ৰাম হাইপোকোনোডিয়াক (Left Hypochondriac) ।
খ) মাঝের তিনটি ভাগ:
৪) ডান লাম্বার (Right Lumber),
৫) আম্বিলিক্যাল (Umbilical) ও
৬) বাম লাম্বার (Left Lumber) |
গ) নিচের তিনটি ভাগ
৭) ডান ইলিয়াক (Right Iliac ),
৮) হাইপোগ্যাস্ট্রিক (Hypogastric) ও
৯) বাম ইলিয়াক (Left Iliac) । এই ভাগ অনুযায়ী পেটের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের অবস্থান ও রোগের লক্ষণ বুঝতে সুবিধা হয়।
কোষ (Cell) মানব দেহের গঠনের ও কাজের একক (Unit)! একই উৎস থেকে উদ্ভূত, একই আকৃতির বা ভিন্ন আকৃতির কোষগুলো (cells) যখন মিলিতভাবে কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে তখন সমষ্টিগত কোষকে একত্রে কলা (Tissue) বলা হয়। দুই বা ততধিক ধরনের কলা একত্রিত হয়ে তৈরি হয় এক একটি অঙ্গ (Organ); যেমন হৃৎপিণ্ড (Heart), ফুসফুস (Lung), বৃক্ক (Kidney) ইত্যাদি। এছাড়াও মানবদেহকে বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় ৫টি এলাকায় (Region) ভাগ করা হয়
১) মাথা এবং গলা বা (Head & Neck),
২) বুক বা (Chest or Thorax),
৩) পেট বা (Abdomen),
৪) হাত বা (Superior Extremity) এবং
৫) পা বা (Inferior Extremity)
১) মাথার ভাগ- ক) মস্তিষ্ক বা (Cranium) এবং খ) মুখ বা (Face) ।
২) বুক বা Thorax এ প্রধান অঙ্গসমূহ - ক) হৃদপিণ্ড বা (Heart), খ) দুইটি ফুসফুস বা (Lungs), গ) শ্বাসনালী বা (Trachea) ও বায়ুনালী বা (Bronchi), ঘ) অন্ননালী বা (Oesophagus) | হৃদপিণ্ড বা Heart থাকার কারণে ফুসফুস দুইটি বা Lungs এর মাঝে যে গর্ত হয় তার নাম বক্ষ গহবর বা Mediastinum | এ ছাড়া সব শিরা ও ধমনীর উৎস মুখে এই বক্ষ গহ্বরে অবস্থিত। ব্যবচ্ছেদ পেশি বা Diaphragm উপরের দিকে বেঁকে থাকে এবং বুক ও পেটকে ভাগ করে।
৩) পেট বা Abdomen এর অবস্থান ব্যবচ্ছেদ পেশি বা Diaphragm এর নিচে। এর প্রধান দুইটি অংশ-
i) উপরের পেট ও
ii) তলপেট।
পেটের উপরের অংশে আছে : ঙ) পিত্তকোষ বা Gall Bladder,
ক) পাকস্থলী বা Stomach, চ) অগ্নাশয় বা Pancreas
খ), ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র বা Intestines, ছ) বৃক্ক বা Kidney এবং
গ) যকৃৎ বা Liver, জ) মহাধমনী (Aorta) ও নিম্ন মহাশিরা Inferior Vena Cava
ঘ) প্লীহা বা Spleen,
পেটের নিচের অংশ বা বস্তিকোটরের (Pelvic Cavity) অঙ্গসমূহ-
ক) মুত্রথলি বা Urinary Bladder, গ) বৃহদন্ত্রের অংশ বা Colon & Rectum
খ) জনন অঙ্গসমূহ বা Reproductive Organs এবং
৪) হাতের ভাগ- ক) উর্ধ বাহু বা (Arm), খ) সম্মুখ বাহু বা (Forearm), গ) কজি বা (Wrist), ঘ) করতল বা (Palm) এবং ঙ) হাতের আঙ্গুল বা (Finger)
৫) পায়ের ভাগ- ক) উরু বা (Thigh), খ) নিম্ন পা বা (Leg), গ) চরণ বা (Foot) এবং ঘ) পায়ের আঙ্গুল বা (Toe) ।
কোষ একটি জীবদেহের গঠন ও কার্যপ্রণালির একক, যা বৈষম্য ভেদ্য (selectively permeable) পর্দা দ্বারা আবৃত এবং যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে। মানবদেহ প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে। এই কোষের আকার সাধারণত ৫ - ৫০ মাইক্রোমিটার (m) পর্যন্ত হয়। নিউক্লিয়াসের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের। কাজের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের হয়
১) দেহ কোষ (Somatic cell) মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করে। উদাহরণ-যকৃৎ কোষ (Hepatocyte), ত্বকের কোষ (Epithelial cell)। এদের মধ্যে কিছু কোষ প্রাথমিক পরিপক্কতা লাভের পর আর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে না। উদাহরণ- স্নায়ু কোষ (Nerve cell বা Neuron), হৃৎপেশি কোষ (Cardiac myocyte)
২) জনন কোষ ( Gametic cell) মিয়োসিস পদ্ধতিতে পুং ও স্ত্রী জনন কোষে বিভক্ত হয়। এদের মধ্যে ক্রোমোজোমের সংখ্যা, দেহ কোষের অর্ধেক হয়। পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট কোষকে জাইগোট (Zygote) বলে।
ক) আদি বা প্রাককেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotic cell):
খ) প্রকৃত বা সুকেন্দ্রিক কোষ (Eukaryotic cell)
ইলেকট্রন অনুবিক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যত প্রানী কোষের অঙ্গাণু সমূহ হল-
প্রোটোপ্লাজম: কোষের ভিতর অবস্থিত অর্ধস্বচ্ছ, জেলির মত বস্তু হল প্রোটোপ্লাজম। কোষ আবরণী, সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস নিয়ে প্রোটোপ্লাজম তৈরি হয়।
কোষ আবরণী (Cell Membrane): প্রোটোপ্লাজম যে ত্রিস্তর বিশিষ্ট স্থিতিস্থাপক পর্দা দ্বারা বেষ্টিত তাকে কোষ আবরণী (Cell Membrane) বলে। এটি মূলত লিপিড ও প্রটিন দিয়ে তৈরি। কোষঝিল্লির ভাঁজকে মিক্রোভিলাই বলে। এই পর্দা বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় অভিস্রবণের মাধ্যমে পানি, লবন, পরিপোষক পদার্থ ও বর্জ্য চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাশাপাশি কোশগুলো থেকে পৃথক রাখা। এই আবরণের পুরুত্ব ৭.৫ থেকে ১০ ন্যানোমিটার (৭.৫ থেকে ১০ nm)।
কোষ আবরণীর কাজ
সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm): কোষের প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস সরিয়ে নিলে যে জেলির মত বস্তু রয়ে যায় তা সাইটোপ্লাজম। নিউক্লিয়াসের বাইরে কোষের সকল অঙ্গাণু সাইটোপ্লাজমে থাকে। এই অঙ্গাণুগুলোর আবরণী বেষ্টিত হওয়া যা না হওয়ার উপর ভিত্তি করে এদের আবরণীযুক্ত এবং আবরণীবিহীন সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুতে ভাগ করা হয়।
১. মাইটোকক্ৰিয়া (Mitochondria) এটি শ্বসনে অংশগ্রহণকারী, দ্বিস্তরের আবরণী বিশিষ্ট একটি অঙ্গাণু। এর ভিতরের স্তনটি আঙ্গুলের মত ভিত্তরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে, যাকে ক্রিস্টি (Cristae) বলে। ক্রিস্টির গায়ে বৃত্তযুক্ত গোলাকার বন্ধু অবস্থিত, এনের অক্সিজোম (Oxisomes) বলে। অক্সিজোমে উৎসেচক বা (Enzymes ) সাজানো থাকে। মাইটোকঙ্কিয়ার ভিতর ম্যাট্রিক্স (Matrix) থাকে। অসনের যে মূল চারটি ( ক্রমানুসারে গ্লাইকোলাইসিস, অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি, ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন প্রবাহ তন্ত্র) ধাপ রয়েছে। যদিও প্রথম ধাপ, গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো মাইটোকণ্ডিয়ায় না ঘটলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যেই সম্পন্ন হয়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব কোষেই মাইটোকড়িয়া থাকে। যেমন Trichosangs, Morocercouomoides ইত্যাদি প্রোটোজোয়াতে এবং মানবদেহের লহিত রক্ত কনিকাতে মিটকড়িয়া থাকে না।
২. গলজি বস্তু (Goll body): গলজি বস্তু (কিংবা গলগি বস্তু) প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়, ও কিছু ক্ষেত্রে উদ্ভিদকোষেও দেখা যায়। এটি সিস্টার্নি ও কয়েক ধরনের ভেসিকল নিয়ে তৈরি।
৩. এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic reticulum) সাইটোপ্লাজমের ভিতরে জালের মত বিস্তৃত, নিউক্লিয় পর্দার সাথে সংযুক্ত অঙ্গানু এটি।
৪. কোষগহবর (Vacuale) সাইটোপ্লাজমে কোষের মধ্যে যে ফাঁকা দেখা যায়, সেগুলোই কোষগহবর। বৃহৎ কোষগহবর উদ্ভিদ কোষের বৈশিষ্ট্য। প্রাণিকোষে কোষগহবর সাধারণত অনুপস্থিত থাকে, থাকলেও সেগুলো আকারে ছোট হয়।
৫. লাইসোজোম (Lysosome) ক্ষুদ্র আবরণীযুক্ত অঙ্গাণু।
১. কোষাকজাল (Cytoskeleton): কোষআবরণীর ভিতরে লম্বা এবং মোটা চিকন মিশিয়ে অসংখ্য দড়ির মধ্যে বস্তু যা কোষের চারদিকে জালের মতো ছড়িয়ে থাকে। অ্যাকটিন, মারোসিন, টিউবিউলিন ইত্যাদি প্রোটিন দিয়ে যথাক্রমে মাইক্রোটিউবিউল, মাইক্রোফিলামেন্ট কিংবা ইন্টারমিডিয়েট ফিলামেন্ট দিয়ে কোষকালের বিভিন্ন ধরনের তন্তু নির্মিত হয়।
২. রাইবোজোম (Ribosome) এই আবরণীবিহীন অঙ্গাণু এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে লেগে থাকে।
৩. সেন্ট্রোজোম Centrosome): প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে দুটি কাঁপা নলাকার বাস্তকার বস্তু দেখা যায়, তাদের সেন্ট্রিওল বলে। সেট্রোজোমে থাকা সেন্ট্রিওল কোষ বিভাজনের সময় ড্যাস্টার তৈরি করে।
৪. নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা (Nucleus): জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমে নির্দিষ্ট পর্দা ঘেরা ক্রোমোজোম বহনকারী সুস্পষ্ট যে বস্তুটি দেখা যায় তা হচ্ছে নিউক্লিয়াস। এটি গোলাকার, ডিম্বাকার বা নলাকার। সিজকোষ এবং লোহিত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াস থাকে না। নিউক্লিয়াসের কাজ-
সুগঠিত নিউক্লিয়াসে নিচের অংশগুলো দেখা যায়।
ক. নিউক্লিয়ার আবরণী (Nuclear membrane): নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখা যে আবরণী, তাকে নিউক্লিয়ার আবরণী বা কেন্দ্রিক আবরণী বলে। এটি দুই স্তর বিশিষ্ট। এই জাবরণী লিপিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এতে কিছু ছিদ্র থাকে, থাকে নিউক্লিয়ার মন্ত্র বলে। এই ছিদ্রের ভিতর দিয়ে নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যে কিছু বস্তু চলাচল করে। নিউক্লিয়ার আবরণী সাইটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াসের অন্যান্য বস্তুকে পৃথক রাখা এবং বিভিন্ন বস্তুর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
খ. নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm): নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভিতরে জেলির মধ্যে বস্তু বা রস থাকে। একে নিউক্লিওপ্লাজম বলে। নিউক্লিওপ্লাজিষে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন, উৎসেচক ও কতিপয় খনিজ লবণ থাকে।
গ. নিউক্লিওলাস (Nucleolus) : নিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যে ক্রোমোজোমের সাথে সংলগ্ন গোলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস বা কেন্দ্রিকাপু বলে। ক্রোমোজোমের রসগ্রাহী অংশের সাথে এক্স লেগে থাকে। এরা RNA এ প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। এরা বাইবোজোম সংশ্লেষণ করে।
ঘ. ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum): কোষের বিশ্রামকালে অর্থাৎ যখন কোষ বিভাজন চলে না, তখন এই ক্রোমাটিনকে নিউক্লিয়াসের মধ্যে সুতার মতো জট পাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্রোমাটিন মূলত DNA এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত জটিল কাঠামো। কোষ বিভাজনের সময় এরা মোটা এবং খাটো হয়, তাই তখন তাদের জালাদা আলাদা ক্রোমোজোম হিসেবে দেখা যায়। ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলো বংশগতির গুণাবলি বহন করে এক প্রজন্ম থেকে জন্য প্রজন্মে নিয়ে যায়। কোনো একটি জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ঐ জীবের জন্য ।
১) খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ এবং হজম করা ( Ingestion and Assimilation)- এর মাধ্যমে কোষ তার প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড (Amino Acid), লবণ (Salt) প্রভৃতি খাদ্য গ্রহণ করে ও পরিত্যাজ্য অংশ ত্যাগ করে।
২) বৃদ্ধি, মেরামত বা ক্ষয়পূরণ (Growth and Repair)- প্রতিটি কোষের মধ্যে নতুন প্রোটোপাজম তৈরি হয়। গঠনমূলক কাজ (Anabolism) দ্বারা কোষের ক্ষয়পুরণ বা মেরামতের কাজ হয়ে থাকে ।
৩) বিপাক প্রক্রিয়া (Metabolism)- প্রতিটি কোষের কাজ করার জন্য চাই শক্তি (Energy)। খাদ্যের কণা যে প্রক্রিয়ায় ভেঙে যায় তাকে ভঙ্গ প্রক্রিয়া (Catabolism) বলে। এরপর খাদ্য কণাগুলো রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক কাজ করে ও তাপ সৃষ্টি করে। একে (Anabolism) বলা হয়। এই দুইটি প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে বলা হয় বিপাক প্রক্রিয়া (Metabolism ) ।
৪) শ্বসন (Respiration) ফুসফুস যে অক্সিজেন গ্রহণ করে তা মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মাধ্যমে। প্রতিটি কোষ পর্যন্ত তা পৌছায় এবং কোষগুলো এই অক্সিজেন গ্রহণ করে। আবার কোষ থেকে নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা CO2 শিরা দ্বারা বাহিত হয়ে যায় হৃদপিণ্ডে। তারপর তা ফুসফুস থেকে প্রশ্বাসের সঙ্গে বেড়িয়ে যায় ।
৫) দূষিত পদার্থ ত্যাগ (Excretion) – শরীরের ত্যাজ্য বা বিষাক্ত পদার্থ কোষগুলো থেকে বেরিয়ে রক্তে মিশে যায়। তারপর তারা নানা পথে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের ত্যাজ্য পদার্থ যে সমস্ত পথে দেহ থেকে বের হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ক) বায়বিয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয় ফুসফুস থেকে নাকের ছিদ্র পথে।
খ) তরল পদার্থ বের হয় বৃক্ক বা Kidney দিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে যা মানবদেহের ছাকনির কাজ করে
গ) কঠিন ত্যাজ্য পদার্থ বের হয় মলাশয় বা Colon দিয়ে পায়খানার সঙ্গে আবর্জনা রূপে।
৬) উত্তেজনা ও সঞ্চালন (Irritability and Conductivity) – প্রতিটি কোষ হলো কর্মক্ষম। যে কোনো রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়াজনিত-তাপ, চাপ, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, আঘাত প্রভৃতিতে কোষগুলো উত্তেজিত হয়ে উঠে। আবার কখনও কখনও এটি সংকুচিত হয় যেমন মাংশ পেশীর তন্তু বা Muscle Fibre | হাঁটা- চলায় এবং নড়াচড়ায় পেশিকোষ ব্যবহৃত হয়। আবার কখনও বা বার্তা বয়ে নিয়ে যায় বা সঞ্চালন করে। যেমন- স্নায়ুতন্তু বা Nerve Fibre | স্নায়ুকোষ দেহজুড়ে জালের মত ছড়িয়ে থাকে। যেকোনো অংশের উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে, আবার মস্তিষ্কের কোনো বার্তা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে দেয়। চোখের স্নায়ুকোষগুলো দেখতে এবং কানের স্নায়ুকোষগুলো শুনতে সাহায্য করে।
৭) প্রজনন ( Reproduction) একটি কোষ ভেঙে দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে। এর মূল হলো সেন্ট্রোসোম (Centrosome) এর কাজ। সেন্ট্রোসাম দুভাগে ভাগ হয় ও সেই সঙ্গে নিউক্লিয়াস (Nucleus) এর চেহারার পরিবর্তন ঘটে।.তারপর দুটি কোষের মধ্যে একটি স্তর (Layer) পড়ে ও দুটি নিউক্লিয়াসে দুইটি সেন্ট্রোসোম দেখা যায়।। একটি নিউক্লিয়াসে ক্রোমজমের সংখ্যা মোট ৪৬টি। যখন কোষ বিভাজন হয় তখন দেখা যায় প্রতিটি নিউক্লিয়াসে ৪৬টি করেই ক্রোমজম আছে। তা থেকে এটা বুঝতে পারা যায় যে, প্রতিটি ক্রোমজম দুইটি সমান ভাগে বিভক্ত রয়েছে। এ ভাবে কোষ বিভক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া বা (Mitosis)। এছাড়া আর এক ধরনের কোষ বিভাজন হলো পরোক্ষ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া বা (Meiosis)। এটি সাধারণত জনন অঙ্গেই হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় একটি কোষ বিভাজন শেষে প্রতিটি নিউক্লিয়াসে ২৩টি করে ক্রোমজম থাকে। এর ফলে পুং ও স্ত্রী জনন কোষ তৈরি হয়। এদের নিষিক্তের মাধ্যমে জাইগোট হয়।
৮) মানব দেহের তিন ধরনের রক্তকোষের মধ্যে লোহিত রক্তকণিকা ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ করে হৃদযন্ত্রের সাহায্যে ধমনির মাধ্যমে কৈশিকনালি হয়ে দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শ্বেত কণিকা দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। অণুচক্রিকা শরীরের কেটে যাওয়া অংশ থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
৯) ত্বকীয় কোষগুলো দেহের আবরণ দেয়া ছাড়াও শরীরের অবস্থানভেদে বিভিন্ন কাজ করে থাকে।
১০) মাথার ত্বকীয় কোষগুলো থেকে চুল গজিয়ে থাকে ।
১১) অস্থিকোষ দেহে অস্থি অথবা কোমলাস্থি তৈরি করে দেহের দৃঢ়তা, দেহের আকার, গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
একই ভ্রূণীয় কোষ থেকে উৎপন্ন হয়ে এক বা একাধিক ধরনের কিছু কোষ জীবদেহের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে সমষ্টিগতভাবে একটা কাজে নিয়োজিত থাকলে ঐ কোষগুলো সমষ্টিগতভাবে টিস্যু (Tissue) বা তণ্ডু তৈরি করে। টিস্যু নিয়ে আলোচনাকে টিস্যুতত্ত্ব (Histology) বলে। যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা একেক ধরনের কোষ। এরা একত্রে তরল যোজক টিস্যু বা রক্ত নামক টিস্যু হিসেবে পরিচিত। তরল যোজক টিস্যু রক্ত, দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় শরীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নেয়।
প্রাণিটিস্যু তার গঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্টের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরনের হয়— আবরণী টিস্যু, যোজক টিস্যু, পেশি টিস্যু এবং স্নায়ু টিস্যু।
এই টিস্যুর কাজ হলো- অঙ্গকে আবৃত রাখা (Lining), বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা (Protection) করা, প্রোটিনসহ বিভিন্ন পদার্থ ক্ষরণ বা নিঃসরণ (secretion) করা, বিভিন্ন পদার্থ শোষণ (absorption) করা এবং কোষীয় স্তর পেরিয়ে সুনির্দিষ্ট পদার্থের পরিবহণ (transcellular transport)। আবরণী টিস্যুর কোষগুলো ঘন সন্নিবেশিত এবং একটি বিভিন্ন পর্দার উপর বিন্যস্ত থাকে। কোষের আকৃতি, প্রাণিদেহে এর অবস্থান এবং কাজের প্রকৃতিভেদে এ টিস্যু তিন ধরনের হয়। যেমন-
i. স্কোয়ামাস অবিরণী টিস্যু (Squamous Epithelial): এই টিস্যুর কোষগুলো মাছের আঁশের মতো চ্যাপটা এবং এদের নিউক্লিয়াস বড় আকারের হয়। যেমন- বৃক্কের বোম্যান্স ক্যাপসুল প্রাচীর। এই টিস্যু প্রধান আবরণ ছাড়াও ছাঁকনির কাজ করে থাকে।
ii. কিউবয়ডাল আবরণী টিস্যু (Cuboidal Epithelial): এই টিস্যুর কোষগুলো ঘনকার বা কিউব আকৃতির অর্থাৎ কোষগুলোর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা প্রায় সমান। যেমন- বৃক্কের সংগ্রাহক নালিকা। এই টিস্যু প্রধান পরিশোষণ এবং আবরণ কাজে লিপ্ত থাকে।
iii. কলামনার আবরণী টিস্যু (Columnar Epithelial): এই টিস্যুর কোষসমূহ স্তম্ভের মতো সরু এবং লম্বা। যেমন- প্রাণীর অস্ত্রের আন্তঃপ্রাচীরের কোষগুলো মূলত ক্ষ রণ, রক্ষণ এবং শোষণ কাজ করে থাকে। প্রাণিদেহে ভিত্তিপর্দার উপর সজ্জিত কোষগুলোর সংখ্যার ভিত্তিতে এপিথেলিয়াল বা আবরণী টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
গ্রন্থি বা Gland হলো নিঃসরণের যন্ত্র (Secretory Organ) যা দেহের বিভিন্ন স্থানে থাকে। যেমন- যকৃত (Liver), অগ্নাশয় (Pancreas), পিত্তথলি (Gall Bladder), পাকস্থলী (Stomach) প্রভৃতি। ক্ষরণ পদ্ধতি ও ক্ষরণ নির্গমন নালীর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে গ্রন্থিগুলো প্রধানত ২টি ভাগে ভাগ করা হয়-
১। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (Exocrine gland) বা নালীযুক্ত গ্রন্থি (Gland with duct)- যে সব গ্রন্থি এর রাসায়নিক রস নালিকার মাধ্যমে উৎপত্তিস্থলের অদূরে বহন করে নিঃসরণ করে। এদের নিঃসৃত রস বা জুস (Juice) নামে পরিচিত। যেমন- লালা গ্রন্থি (Salivary Gland), যকৃত (Liver), অগ্নাশয় (Pancreas) প্রভৃতি।
২। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine gland) বা নালীবিহীন গ্রন্থি (Ductless Gland)- যে সব গ্রন্থি নালীবিহীন, এদের নিঃসরণ সরাসরি রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দূরবর্তী সুনির্দিষ্ট অঙ্গে ক্রিয়াশীল হয় । যেমন- পিটুইটারী (Pituitary), থাইরয়েড (Thyroid), এড্রিনাল (Adrenal) প্রভৃতি। নিঃসরণের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে গ্রন্থিকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়-
যোজক বা কানেকটিভ টিস্যুতে মাতৃকার (Matrix) পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি এবং কোষের সংখ্যা কম। গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে কানেকটিভ টিস্যু প্রধানত তিন ধরনের হয়। যথা-
অস্থি বিশেষ ধরনের দৃঢ়, ভঙ্গুর এবং অনমনীয় টিস্যু যার মাতৃকায় ক্যালসিয়াম- জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে দেহের সর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় যোজক কলায় পরিণত হয়। এর ম্যাট্রিক্সে পানি (২৫%), জৈব পদার্থ (৩০%) ও অজৈব পদার্থ (৪৫%) দ্বারা গঠিত হওয়ায় সম্পূর্ণ কলাটি কঠিন। জৈব অংশটি কোলাজেন (Collagen) ও অস্টিওমিউকয়েড (Osteomucoid) নিয়ে গঠিত হয়। অজৈব অংশটি প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিয়ে গঠিত। ম্যাট্রিক্সে অস্থিকোষ (Osteocyte) ছড়ানো থাকে। পেরিঅস্টিয়াম (Periosteum) নামক তন্তুময় যোজক কলা নির্মিত পাতলা ও মসৃণ আবরণ প্রতিটি অস্থিকে ঘিরে রাখা। অস্থির গঠন ও অস্থির ম্যাট্রিক্স কতকগুলো স্তরে সাজানো থাকে। স্তরগুলোকে ল্যামেলী (Lamellae) বলে। ল্যামেলীগুলো একটি সুস্পষ্ট নালীর চারদিকে চক্রাকারে বিন্যস্ত। কেন্দ্রিয় এই নালীকে হ্যাভারসিয়ান নালী (Haversian canal) বলে। প্রতিটি হ্যাভারসিয়ান নালী ও একে বেষ্টনকারী ল্যামেলীগুলোর সমন্বয়ে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র (Haversian system) সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক ল্যামেলায় ল্যাকুনা নামে কতগুলো ক্ষুদ্র গহবর থাকে। অস্থিকোষ ল্যাকুনার ভেতরে অবস্থান করে। প্রতিটি ল্যাকুনার চারদিক থেকে সূক্ষ্ম নালিকা বেরোয়। এদের ক্যানালিকুলি (Canaliculi) বলা হয়। এসব নালিকার মাধ্যমে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্রের বিভিন্ন ল্যাকুনা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে।
অস্থি মজ্জা (Bone Marrow) - অস্থির কেন্দ্রস্থলে যে গহবর থাকে তার নাম মজ্জা গহবর (Medullary cavity)।লম্বা অস্থির মজ্জা গহ্বরে এবং স্পঞ্জি অস্থির মধ্যে যে নরম, জেলি । সদৃশ, উচ্চ রক্তবাহী নালী সমৃদ্ধ বস্তু থাকে তাকে অস্থি মজ্জা (Bone marrow) বলে। অস্থি মজ্জা দেহের বৃহত্তম অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি এবং এর প্রধান কাজগুলো রক্ত উৎপন্ন করা। অস্থি মজ্জা দুই ধরনের:
১) লাল অস্থি মজ্জা (Red bone marrow) ও
২) হলুদ অস্থি মজ্জা (Yellow bone marrow)
অস্থির প্রকারভেদ
ক) ঘনত্ব ও দৃঢ়তার ভিত্তিতে অস্থিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
১। ঘনসন্নিবিষ্ট বা দৃঢ় অস্থি (Compact bone): লম্বা অস্থি যেমন ফিমার ও হিউমেরাস এর অস্থিকাণ্ডের (Diaphysis)অংশে এ দৃঢ় অস্থি পাওয়া যায়।
২। স্পঞ্জ বা জালিকা সদৃশ অস্থি (Spongy bone): মাথার খুলি ও চ্যাপ্টা অস্থিগুলোতে এ ধরনের অস্থি পাওয়া যায়।
খ) আকার ও আকৃতির উপর ভিত্তি করে অস্থিকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
১। লম্বা অস্থি (Long Bone)- যেমন হিউমেরাস (Humncrus), ব্রেডিয়াস (Radius), আলনা (UIna), ফিমার (Femer), টিবিয়া (Tibia) এবং ফিবুলা (Fibula) |
২। খাটো অস্থি (Short bone)- হাত ও পারের ছোট অস্থি কারপাল (Carpal) এবং টারসাল (Taraal)
৩। চ্যাপ্টা অস্থি (Flat bone)- স্ক্যাপুলা (Scapula), স্টানাম (Stermum), পাজরের অস্থি বা (Rib) I
৪। অসম আকৃতির অস্থি (Irregular bone) - কশেরুকা (Vertebra ) ।
৫। বায়ু প্রকোষ্ঠ অগ্নি (Pneumatic bone)- ম্যাক্সিলা (Maxilla), স্কেনয়েড (Sphenoid) ও ইথাময়েড (Ethmoid) |
৬। পেশি থেকে উদ্ভূত ছোট অস্থি (Seanmold bone)- প্যাটেলা (Patella) ও পিজিফর্ম (Pisiform )
অস্থি তন্ত্র (Skeletal system)-বিশেষ ধরনের যোজক কলা নির্মিত অস্থি (Bone) ও তরুণাস্থি (Cartilage) -এর সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্র দেহের কাঠামো নির্মাণ, অঙ্গ রক্ষণ এবং ভার বহন করে তাকে অস্থি তন্ত্র বলে।
অস্থি তন্ত্রের কাজ-
১। গঠন ও আকৃতি প্রদান
২। চলাচল- সংযুক্ত পেশির সংকোচনের মাধ্যমে চলন ঘটায়।
৩। রক্ষণাবেক্ষণ-মস্তিষ্ক, সুষুম্না কাণ্ড, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি নরম ও সংবেদনশীল অঙ্গসমূহকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।
৪। সফর - অস্থি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সঞ্চয় করে।
৫। লোহিত কণিকা উৎপাদন- অস্থি মজ্জা থেকে উৎপন্ন হয়।
অস্থি তন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাস
মানবদেহের মোট ২০৬টি অস্থি আছে যা প্রধান ২ টি ভাগে ভাগ করা হয়-
১) অক্ষীয় অস্থির (Axial skeletal system),
২) উপালীয় অস্থি (Appendicular skeletal system) |
অক্ষীয় অস্থিতন্ত্র- যে অস্থিসমূহ দেহের অক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করে মস্তিষ্কের এবং দেহ গহ্বরের নরম অঙ্গগুলোকে ধারণ করে ও রক্ষা করে, তাদের অক্ষীয় অস্থিতন্ত্র বলে। এই তন্ত্রে যেসব অস্থি আছে সেগুলো হল-
১) মাথার খুলি বা করোটির অস্থি (Skull bones)
২) গলার অস্থি (Hyoid bone) Tibia
৩) মেরুদণ্ডের অস্থি (Vertebral column)
৪) বুকের অস্থি ও পাঁজরের অস্থিসমূহ (Sternum and rib )
মানবদেহের অস্থিসমূহের তালিকা
২৮টি অস্থি নিয়ে করোটি গঠিত। এগুলো দুভাগে বিভক্ত- করোটিকা (Cranium) বা (Cranial bone) ও মুখমণ্ডলীয় অস্থি (Facial bone)।
ক) করোটিকা (Cranium)- করোটিকা ৮টি চ্যাপ্টা ও শক্ত অস্থি নিয়ে গঠিত। অস্থিগুলো খাঁজকাটা কিনারাযুক্ত হওয়ায় একত্রে ঘন সন্নিবেশিত ও দৃঢ়সংলগ্ন থাকে।
১) সম্মুখস্থ অস্থি (Frontal bone)
২) প্যারাইটাল অস্থি (Parietal bone)
৩) টেমপোরাল অস্থি (Temporal bone) এ অস্থিতে শ্রবণাঙ্গ, শ্রমতি নালী, ক্যারোটিড নালী ও মুখমণ্ডলীয় স্নায়ুর নালী অবস্থান করে।
৪) অক্সিপিটাল অস্থি (Occipital bone)
৫) স্কেনয়েড অস্থি (Sphenoid bone)- এর দুই পাশে টেমপওরাল অস্থি, সামনে এথময়েড ও পিছে অক্সিপিটাল অস্থি থাকে ।
৬) এথময়েড অস্থি (Ethmoid bone)
করোটিকার কাজ
খ) মুখমণ্ডলীর অস্থি (Facial bone)
করোটিকার সামনের ও নিচের দিকের অংশ মুখমন্ডল অস্থি নিয়ে গঠিত। (প্রত্যেক কানে ৩টি করে মোট ৬ টি অস্থি, জিহবার পেছন দিকে গোড়ায় হাইওয়েড নামে অস্থি থাকে। এসব অস্থি অস্থিগণনার বাইরে থাকে)।
১) উধর্ব চোয়াল বা (Maxilla )
২) ) নিম্ন চোয়াল বা (Mandible) - ম্যান্ডিলই করোটির একমাত্র নড়নক্ষম অস্থি।
৩) জাইগোম্যাটিক অস্থি (Zygomatic bone)
8) নসিকা অস্থি (Nasal bone)
৫) ল্যাক্রিমাল আছি (Lacrimal bone)
৬) (Interior Nasal Concha)
৭) ভোমার (Vomar)
৮) প্যালেস্টাইন অস্থি (Palatine Bone)
হাইওয়েড অস্থি (Hyald Bone) চোয়াল ও ল্যারিংক্সের মাঝখানে অবস্থিত। ঘাড়ের অনেক পেশি এ অস্থির সাথে লাগানো থাকে।
মুখমণ্ডলীর অস্থির কাজ
দেহকান্ত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত- ১) মেরুদন্ত ও ২) বক্ষপিঞ্জর।
মেরুদণ্ডকে শিরদীরা বা স্পাইনাল কলাম নামেও অভিহিত করা হয়। ৩৩টি কশেরুকা বা (Vertebra) নিয়ে মেরুদন্ত গঠিত। একটি আদর্শ কশেরুকা অনিয়মিত আকৃতির অস্থি যার গঠন বিভিন্ন কশেরুকায় বিভিন্ন রকম।
আদর্শ কশেরুকা বৈশিষ্ট -
১) দেহ (Body)- সামনের স্কুলো অংশ যা স্পঞ্জি অস্থিতে গঠিত।
২) আর্চ (Arch)- পিছন দিকে পাতলা অস্থি নিয়ে গঠিত।
৩) ইন্টারভার্টিব্রাল ফোরামেন (Intervertebral Foramon) - এই ছিদ্রের ভেতর দিয়ে সুষুম্না স্নায়ু (Spinal nerve) ও রক্তবাহিকা অতিক্রান্ত হয়।
৪) কশেরুকীয় ছিদ্র (Vertebral Foramen)- সকল কশেরুকীয় ছি সম্মিলিতভাবে ভাটিব্রাল ফ্যালেন্স (Vertebral Canal) নির্মাণ করে। এর ভেতরে আৰৱণীসহ সুষুম্না কাণ্ড (Spinal cord) ও রক্তবাহিকা সুরক্ষিত থাকে।
কশেরুকার প্রকারভেদ
অবস্থান অনুযায়ী ৫ অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
১। সারভাইকাল (গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা (Cervical vertebrae) …. …. ….. ….. …. ৭টি
২। থোরাসিক (বক্ষদেশীয় কশেরুকা (Thoracic vertebrae)… …. …. …. …. … ১২টি
৩। লাম্বার (কটিদেশীয় কশেরুকা (Lumbar vertebrae) …. …. ….. ….. …. ৫টি
৪। স্যাক্রাল (প্রোনিদেশীয় কশেরুকা (Sacral vertebrae) …. ….. ….. …. ৫টি (একীভূত)
৫। কক্সিজিয়াল (পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা ( Coocygeal vertebrae) …. ….. ….. ….. …. ৪টি (একীভূত)।
পরিণত বয়সে শ্রোণিদেশীয় কশেরুকা একীভূত হয়ে স্যাক্রাম (Sacrum) এবং পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা কক্সিস (Coccyx) গঠন করে, ফলে পৃথক অস্থি আকারে কশেরুকার সংখ্যা ২৬টিতে দাঁড়ায়।
১। গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা- সংখ্যা ৭টি
এর মধ্যে তিনটি ভিন্ন গড়নের কশেরুকা-
১। এ্যাটলাস (Atlas/ ১ম কশেরুকা),
২। এ্যাক্সিস (Axis/ ২য় কশেরুকা) ও
৩। (Vertebra Prominans / ৭ম কশেরুকা)
দেহের পর্শকা, বক্ষদেশীয় কশেরুকা ও স্টার্নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে খাঁচার আকৃতি বক্ষপিঞ্জর তৈরি করে। বক্ষপিঞ্জরের গঠন-
স্টার্ণাম বৈশিষ্ট্য-
১। বুকের কেন্দ্রীয় সম্মুখ অংশে অবস্থিত চাপা অস্থি
২। ৩টি অংশে বিভক্ত –
ক) উপরের ত্রিকোণাকার ম্যানুব্রিয়াম,
খ) মাঝের লম্বা দেহ, এবং
গ) নিচের ক্ষুদ্র জিফয়েড প্রসেস।
৩। পার্শ্ব কিনারায় ক্ল্যাভিলের এবং ৭ জোড়া পর্শকার খাঁজ থাকে ।
পর্শুকা বৈশিষ্ট্য-
১। লম্বা, সুরু, চাপা ও বাঁকা অস্থি।
২। দেহে ১২ জোড়া পর্শুকা থাকে ।
৩। একটি আদর্শ পর্শুকার বৈশিষ্ট্য
ক) পশ্চাৎপ্রান্তে ফ্যাসেটবাহী মস্তক বা ক্যাপিছুলাম, ক্রেস্টবাহী গ্রীবা, সংযোগী তলসহ টিউবার্কল থাকে
খ) দেহ কোণ করে বাঁকানো থাকে।
গ) পর্শুকার সম্মুখ প্রান্ত তরুণাস্থিময়।
ঘ) প্রথম ৭ জোড়া পর্শুকা তরুণাস্থি দিয়ে স্টার্ণামের সাথে যুক্ত থাকে, এদের প্রকৃত পর্শুকা বলে।
৪। বাকি ৫ জোড়া (৮ম-১২তম) স্টার্নামের সাথে যুক্ত নয় বলে নকল পর্শুকা বলে।
৫। ৮ম, ৯ম ও ১০ম পর্শুকা তরুণাস্থির সাথে একীভূত হয়ে কোস্টাল আর্চ (Costal arch) তৈরি করে।
৬। ১১ ও ১২তম পর্শুকা সামনে অংশ উন্মুক্ত থাকে, তাই এদের ‘ভাসমান পৰ্শকা' বলে।
৭। পর্শুকার অন্তর্তলের নিচের কিনারায় কোস্টাল খাদে স্নায়ু ও রক্তবাহিকা অবস্থান করে।
৮। প্রথম পর্শুকার উপরতলে সংস্পর্শে সাবক্লাভিয়ান ধমনী ও শিরা থাকে।
৯। উপরে ও নিচে দুই কোস্টাল তরুণাস্থির মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে ইন্টারকোস্টাল স্পেস বলে।
বক্ষ পিঞ্জরের কাজ- হৃদপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বক্ষপিঞ্জরের ভেতরে সুরক্ষিত থাকে।
২। উপাশীয় কঙ্কাল: উর্ধাঙ্গ (দুইবাহু ও বক্ষ-অস্থিচক্র) ও নিম্নাঙ্গ (দুইপা ও শ্রোণি-অস্থিচক্র) এর অস্থিগুলোকে একত্রে উপাঙ্গীয় কঙ্কাল বলে।
উর্ধাঙ্গের অস্থিসমূহ: বক্ষ-অস্থিচক্র ও দুইবাহ নিয়ে উর্ধাঙ্গর গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩২ টি করে মোট ৬৪ টি অস্থি উর্ধাঙ্গের অন্তর্গত।
বক্ষ অস্থি ও হাতের অস্থি
১) পিঠের ত্রিকোণাস্থি (Scapula),
২) কণ্ঠার অস্থি (Clavicle),
৩) ঊর্ধ্ব বাহুর অস্থি ( Homarus),
৪) সম্মুখ বাহুর অস্থি (Radius & Ulna),
৫) কারপাল অস্থি (Carpal Bones),
৬) মেটা কারপাল অস্থি (Meta carpal Bones) এবং
৭) হাতের আঙুলের অস্থি (Phalanges)।
নিম্নাঙ্গের অস্থিসমূহ: শ্রোণি-অস্থিচক্র ও দুইপা নিয়ে নিম্নাঙ্গ গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩১টি করে মোট ৬২টি অস্থি নিম্নাঙ্গে রয়েছে।
শ্রোণি অস্থি ও পায়ের অস্থি -
১) বস্থিদেশের হাড় (Pelvis),
২) উরুর অস্থি (Femur),
৩) নিম্ন পায়ের অস্থি ( Tibia & fibula),
৪) গড়ালি সংলগ্ন অস্থি ( Tarsal bones),
৫) চরণ অস্থি (Metatarsal bones) এবং
৬) পায়ের আঙ্গুলের অস্থি (Phalanges)।
২) নিম্ন পায়ের অস্থি- নিম্ন পা এ দুটি অস্থি থাকে- টিবিয়া ও ফিবুলা।
টিবিয়া- বেশি মোটা এর উর্ধ প্রান্ত দুটি কন্ডাইল থাকে। টিবিয়ার দেহ ত্রিধারবিশিষ্ট। এর সম্মুখ কিনারা ঝুঁটি (Shin) নামে পরিচিত। টিবিয়ার নিম্ন প্রান্তে ম্যালিওলাস নামে দুটি উঁচু অংশ থাকে। এতে ট্যালাসের (টার্সাল অস্থি) সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য সংযোগী তলও রয়েছে।
ফিবুলা- দেখতে দীর্ঘ ষষ্টির মতো। এর মস্তক চোখা ধরনের ও নিচের দিকে থাকে।
৩) চরণ- গোড়লি, পদতল ও আঙ্গুল নিয়ে চরণ গঠিত।
পায়ের কাজ: ভারবহন করে ও চলাচলের সাহায্য করে।
অস্থিসন্ধি (Joints): যে স্থানে দুই বা ততোধিক অস্থির সংযোগ হয়, তাদের মধ্যে নড়াচড়া হলে অথবা না হলেও তাকে অস্থিসন্ধি বলে। অস্থিগুলো পরস্পরের সাথে যোজক কলা দিয়ে এমনভাবে যুক্ত থাকে যাতে সংলগ্ন অস্থিগুলো বিভিন্ন মাত্রায় সঞ্চালিত হতে পারে। তাই দেখা যায়, কোনো কোনো অস্থিসন্ধি একেবারেই অনঢ়- করোটির অস্থিসন্ধি। কোনোটি আবার সামান্য সঞ্চালনক্ষম- আন্তঃকশেরুকীয় অস্থিসন্ধি। কিছু সন্ধির ফলে অস্থিগুলো মুক্ত ও স্বচ্ছন্দে সঞ্চালনক্ষম হয়ে থাকে।
অস্থিসন্ধির শ্রেণিবিন্যাস: অস্থিসন্ধি ৩ রকমের হয়ে থাকে-
ক) তন্তুময় সন্ধি,
খ) তরুণাস্থিময় সন্ধি এবং
গ) সাইনোভিয়াল সন্ধি।
গ) সাইনোভিয়া (Synovial joints) বৈশিষ্ট্য-
সাইনোভিয়াল অস্থি সন্ধির শ্রেণিবিন্যাস
সংযোগকারী তলের সংখ্যার ভিত্তিতে দুই ভাগ করা হয়- ১) সরল সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি ও ২) জটিল সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি। সংযোগকারী তলের আকারের উপর ভিত্তি করে সানোভিয়াল অস্থিসন্ধিকে ৬ প্রকারে বিভক্ত করা যায়: ১) সমতল অস্থিসন্ধি, ২) অস্থিসন্ধি, ৩) পিত্তট অস্থিসন্ধি, ৪) কন্ডাইলয়েড অস্থিসন্ধি, ৫) স্যাল অস্থিসন্ধি এবং ৬) ফল ও কোটর অস্থিসন্ধি
১) সমতল অস্থিসন্ধি (Plane joints)- এক্ষেত্রে অস্থিসন্ধিতে দুটি অস্থির সংযোগী ভল চাপা বা সামান্য বাঁকানো এবং অত্যন্ত সীমিত মাত্রায় যে কোনো দিকে সঞ্চালিত হয়। উদাহরণ- দুটি কার্পাল অস্থির মধ্যকার সংযোগ (Intercarpal joints); দুটি মেটাটাসান অস্থির মধ্যকার সংযোগ (Intermetatargal joints)।
২) কব্জা অস্থিসন্ধি (Hinge joints)- এক্ষেত্রে একটি অস্থির উত্তল মস্তক অন্য অস্থির অবতল অংশে এমন চমৎকার ভাবে বসানো থাকে যার ফলে অস্থির চলন শুধু দরজার কপাটের মতো হয়। উদাহরণ- কনুইয়ের সি (Elbow joints): হাটুর সন্ধি (Knee joints)।
৩) পিভট অস্থিসন্ধি (Pivot joints)- এ ক্ষেত্রে একটি অস্থির গোল সুচালো বা কোণাকার সংযোগী ভল এমন একটি রিং-এর ভেতর ঢোকানো থাকে যা অন্য একটি অস্থি ও লিগামেন্টের অংশ নিয়ে গঠিত এবং প্রবিষ্ট অস্থিটি কেবল ঘূর্ণনে সক্ষম হয়। উদাহরণ- প্রথম দুইটি গ্রীৰা দেশীয় বা সারভাইকাল কশেরুকার মধ্যকার অস্থিসন্ধি (Atlanto-axial joint) |
৪) কন্ডাইলয়েড অস্থিসন্ধি (Condylold joints)- এ ক্ষেত্রে একটি অস্থির ডিম্বাকার মস্তক অন্য অস্থির ডিম্বাকার গহবরে ঢোকানো থাকে এবং যে কোনো তলে সঞ্চালনক্ষম হলেও ঘূর্ণনে অক্ষম থাকে। উদাহরণ- হাঁটুর সন্ধি (Knee joint) ।
৫) স্যাডল অস্থিসন্ধি - এক্ষেত্রে এক অস্থির সংযোগী গুদের একদিক উত্তল অন্যদিক অবতল এবং দ্বিতীয় অস্থির বৈশিষ্ট ঠিক তার বিপরীত। এই সন্ধিতে অস্থির বিভিন্নমুখী সঞ্চালন সম্ভব হলেও ঘূর্ণন অত্যন্ত সীমিত। উদাহরণ- বৃদ্ধাঙ্গুলের কার্পাল ও সেটাকাপালের মধ্যকার সন্ধি (Carpometacarpal joint of the thumb ) ।
৬) বল ও কোটর অস্থিসন্ধি (Ball and socket joint)- এক্ষেত্রে একটি অস্থির বলের মতো গোল মস্তক অন্য অস্থির পেয়ালাকৃতির গহবরে ঢোকানো থাকে এবং যে কোনো অক্ষে বা তলে তাদের সঞ্চালন ঘটে। উদাহরণ- স্কন্ধসন্ধি (Shoulder joint), জঙ্ঘাসন্ধি (Hip joint) |
একটি আদর্শ অস্থিসন্ধির গঠন
১। অস্থিসন্ধির বহির্ভাগ - অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ তরুণাস্থিতে (Hyaline cartilage) মোড়ানো থাকে।
২। অস্থিসন্ধি আবরণী-এ আবরণী অস্থিসন্ধির বহির্ভাগে থাকে ও সেখান থেকে অস্থি আবরণীতে মিলে যায়।
৩। অস্থিসন্ধি গহবর- এ গহবর সংকীর্ণ ফাঁকের মত যা সন্ধির তরুনাস্থির বহির্ভাগ ও অস্থিসন্ধি আৰৱণী দিয়ে চারদিকে জাবদ্ধ থাকে। এতে সাইনোভিয়াল রস নিঃসৃত হয়।
মানুষের চলনে পেশি ও অস্থিতন্ত্রের সমন্বর মানুষের চলনে পেশি ও পেশির সঙ্গে যুক্ত অস্থির মাধ্যমে হয়। চলনের জন্য পেশি ও অস্থির সমন্বয়ে যে ভয় গঠিত হয় তাকে পেশি-লছি (Musculoskeletal system)
মানুষের চলনে অস্থি ও পেশির ভূমিকা
বিভিন্ন পেশির ভূমিকা-
১) এক্সটেনসর(Extensor)- এ ধরনের পেশি অঙ্গকে প্রসারিত করে বা ছড়িয়ে দেয়— ট্রাইসেপসৃ (Triceps) যা সম্মুখ বাহুকে প্রসারিত করে।
২) ফ্লেক্সর (Flexor)- এ ধরনের পেশি অঙ্গকে দুই ভাঁজ করে বাইসেপস্ (Biceps) যা কনুইকে বাঁকায়।
৩) এবডাক্টর(Abductor)- এ পেশি দেহের অক্ষ থেকে দেহের অঙ্গকে দুরে সরিয়ে নেয়- ডেলটয়েড পেশি(Deltoid muscle) |
৪) এভাক্টর (Adductor)- এ পেশি কোনো অঙ্গকে দেহ অক্ষের কাছে টেনে আনে- ল্যাটিসিমাস ডরসি Latissimus dorsi) |
৫) ডিপ্রেসর (Depressor)- এ দেশি কোনো অঙ্গকে নিচে নামায় - ডিগ্রেসর ম্যানডিবুলা (Depressor mandibula) নামে পেশি নিচের চোয়াল নামিয়ে মুখগহবরকে উন্মুক্ত করে।
৬) লিভেটর (Levator)- কোনো অঙ্গকে নিচ থেকে উপরে তোলে ম্যাসেটার (Masseter) নিচের চোয়াল উপরে তুলে মুখ বন্ধ করে।
৭) রোটেটর (Rotator)- এ গেলি অলকে প্রধান অক্ষের চারপাশে বা ডানে বাঁয়ে মোরায় - পিরিকর্মিস (Pyriformis) ফিমারকে উপরে তোলে বা ঘোয়ায়।
৮) প্রোট্রাক্টর (Protractor)- এ পেশি সংশ্লিষ্ট অস্থিৰে উপর দিকে টেনে অঙ্গকে সামনে প্রসারিত করে।
৯) রিট্রাকটর (Retractor)- এ পেশি সংশ্লিষ্ট অস্থিকে নিচের দিকে টেনে অঙ্গকে পেছনের দিকে প্রসারিত হয়।
মানুষের চলনে পেশি-অস্থিতন্ত্রের ভূমিকা: চলনের সময় মানুষ তার দেহের তার পর্যায়ক্রমে ডান ও বাঁ পায়ের উপর স্তর করে। কারণ যে সময় কোনো এক পা মাটির উপর উঠে থাকে তখন মাটিতে লাগানো পা বা মেরুদণ্ডের মধ্য দিয়ে ওজন স্থানান্তরের অভিকর্ষ রেখা ৰাহিত হয়।
রক্তঃ
তরল যোজক টিস্যু (Fluld connective tissue); রক্ত এক ধরনের ক্ষারীয়, ঈষৎ লবণাক্ত এবং ললিবর্ণের তরল যোজক টিস্যু। ধমনি, শিরা ও কৈশিকনালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রক্ত অভ্যন্তরীণ পরিবহনে অংশ নেয়।
রক্তের বৈশিষ্ট-
ক) রক্তের পরিমাণ ৭০ কেজি ওজনের প্রাপ্তবয়স্কের : ৫-৬ মিটার।
খ) স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : সামান্য ক্ষারীয়, pH =৭,৩৬-৭.৪৫
গ) আপেক্ষিক গুরুত্ব : ১,০৫২ হতে ১,০৬০ এর মধ্যে।
ঘ) রক্তের তাপমাত্রা : ৩৬ হতে ৩৮ সেলসিয়াস ।
ঙ) স্বাদঃ লবণাক্ত।
চ) বর্ণ : লাল; লোহিত কণিকায় লৌহ উপাদান হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতির জন্য রক্তের রং লাল হয় ।
রক্তের কাজ
রক্তের উপাদান:
১) রক্ত কণিকা (Blood Corpusclea) ৪৫%
রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন ধরনের কোষকে রক্তকণিকা বলে।
প্রধানত তিন প্রকার: ক) লোহিত রক্তকণিকা (Erythrocyte), খ) তে রক্তকণিকা (Leucocyte) ও গ অনুচক্রিকা (Platelet) |
লোহিত রক্ত কণিকা (Erythrocyte): মানবদেহের পরিণত লোহিত রক্ত কণিকা ক্ষুদ্র দ্বি-অবতল ও নিউক্লিয়াসবিহীন চাকতির মতো লাল রংয়ের কোষ। এতে হিমোগ্লোবিন নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে। এর কিনারা মসুন এবং মধ্যাংশের চেয়ে পুরু। পরিণত কনিকা অত্যন্ত নমনীয় ও ভিত্তিস্থাপক।
লোহিত রক্ত কণিকার কাজ
শ্বেত রক্ত কণিকা (Leucocyte): মানবদেহের পরিণত শ্বেতকণিকা অনিয়তাকার ও নিউক্লিয়াস যুক্ত বড় কোষ। এরা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবানু ধক্ষংস করে। আকার: নির্দিষ্ট আকারবিহীন, প্রয়োজনে আকার পরিবর্তিত হয়। নিউক্লিয়াস প্রথমে গোল বা ডিম্বাকার হয় কিন্তু বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃক্কাকার ও অশ্বক্ষুরাকার ধারণ করে। নিউক্লিয়াস
ক) এগ্র্যানুলোসাইট: দানাহীন, স্বচ্ছ ও বৃহদাকার নিউক্লিয়াসযুক্ত। আকৃতিগত ভাবে এরা দুই ধরনের, যথা- লিম্ফোসাইট (Lymphocyte) ও মনোসাইট (Monocyte)। এদের
লিম্ফোসাইট: সমসত্ব ও ক্ষারাসক্ত সাইটোপ্লাজোমের পাতলা স্তরে আবৃত বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা। এরা কৈশিক নালী থেকে যোজক কলায় অভিযাত্রী হতে পারে।
মনোসাইট: বিপুল পরিমাণ সাইটোপ্লাজম ও একটি অপেক্ষাকৃত ছোট ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসবাহী বড় কণিকা।
লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট রক্ত কণিকার কাজ
> লিম্ফোসাইট এন্টিবডি উৎপন্ন করে।
> লিম্ফোসাইট থেকে ফাইব্রোব্লাস্ট সৃষ্টি হয়ে কলার ক্ষয়পুরণ করে।
> মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ধংস করে।
খ) গ্রানুলোসাইট: সূক্ষ দানাময় এবং ২-৭ খন্ডযুক্ত নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট। দানাগুলো লিশম্যান রঞ্জকে নানাভাবে রঞ্জিত হয়। বর্ণধারার ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্রানুলোসাইট ৩ ধরনের, যথা :
নিউট্রোফিল (Neutrophil): নিউট্রোফিল এর সাইটোপ্লাজম বর্ণ নিরপেক্ষ দানাযুক্ত।
ইসিনোফিল (Eosinophil) : ইওসিনোফিল এর দানাগুলো ইওসিন রঞ্জকে লাল বর্ণধারণ করে।
ব্যাসোফিল (Basophil): ব্যাসোফিল এর দানাগুলো ক্ষারাসক্ত হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করে
নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল ও ব্যাসোফিল কণিকার কাজ
> নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইট্রোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ভক্ষণ করে
> ইসিনোফিল ও ব্যাসোফিল হিস্টামিন নিঃসৃত করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
> ব্যাসোফিল নিসৃত হেপারিন রক্তকে রক্তবাহিকার ভেতর জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
অনুচক্রিকা (Thrombocytes or Platelets):
অনুচক্রিকা ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা। এটি দানাময় ও নিউক্লিয়াসবিহীন।
আকার: গোল, ডিম্বাকার বা দণ্ডাকার কিন্তু নিউক্লিয়াসবিহীন।
আয়তন: ৩ -৫– ব্যাস বিশিষ্ট
সংখ্যা: পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে সংখ্যা প্রায় ২.৫-৫ লক্ষ।
গঠন: দানাময় সাইটোপ্লাজম, গহ্বর, পিনোসাইটিক গহ্বর ও অন্যান্য কোষ অঙ্গাণু একক আবরণী বেষ্টিত।
উৎপত্তি স্থল:অস্থিমজ্জার অন্যতম বড় কোষ মেগাক্যারিওসাইট (Megakaryocyte) এর ভগ্ন ক্ষুদ্রাংশ থেকে উৎপত্তি হয়। অন্যদের মতে শ্বেত কণিকা থেকে থ্রম্বাসোইটের সৃষ্টি হয়।
আয়ু: গড় আয়ু প্রায় ৫-১০দিন ।
পরিণতি:আয়ু শেষে প্লীহা, যকৃৎ ও অন্যান্য অঙ্গে বিনষ্ট হয়।
অণুচক্রিকার কাজ
> রক্ত জমাট বাঁধতে অংশ নেয়।
> রক্তজালিকার ক্ষতিগ্রস্থ এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনর্গঠনে অংশ নেয়।
> বিভিন্ন সংকোচনধর্মী পদার্থ ক্ষরণের মাধ্যমে রক্তবাহিকার সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করে।
এরাইথ্রোসাইট, লিউকোসাইট এবং থ্রম্বোসাইট-এর মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | এরাইথ্রোসাইট | লিউকোসাইট | থ্রম্বোসাইট |
সংখ্যা (/mm° of blood) | ৫০ লক্ষ | ৫-৮ হাজার | ২.৫৫ লক্ষ |
নিউক্লিয়াস | পরিপক্ক অবস্থায় নিউক্লিয়াস থাকে না | সব সময় নিউক্লয়াস থাকে | কোনো সময়ই নিউক্লিয়াস থাকে না |
বর্ণ | লাল | বর্নহীন | বর্নহীন |
আয়ু | ১২০ দিন | নির্দিষ্ট নয় | ৫-৯ দিন |
আকৃতি | দ্বি -অবতল, চাকতির মত | গোলাকার বা অনিয়মিত | |
কাজ | শ্বসন | রোগ প্রতিরোধ | রক্ত তঁচন |
২) রক্তরস (Plasma) ৫৫%
রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস বলে। এতে রয়েছে
ক) পানির পরিমাণ ৯১ - ৯২%।
খ) দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের পরিমাণ ৮ - ৯%।
গ) জৈব পদার্থ ৭.১ - ৮.১%। যেমন- গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, স্নেহ জাতীয় পদার্থ, লবন, ভিটামিন ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, বিলিরুবিন, কেরোটিন ইত্যাদি।
ঘ) অজৈব পদার্থ ০.৯%। যেমন- সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ ইত্যাদি।
রক্ত রসের কাজ
> পরিপাকের পর খাদ্যসার রক্তরসে দ্রবীভূত হয়ে দেহের বিভিন্ন কলা ও অঙ্গে বাহিত হয়।
> কলা থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যায়।
> কলার অধিকাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্ত রসে বাইকার্বনেট রুপে দ্রবীভূত থাকে ।
> অতি অল্প পরিমাণ অক্সিজেন এতে বাহিত হয়। লোহিত কণিকায় সংবদ্ধ হওয়ার আগে অক্সিজেন প্রথমে রক্তরসেই দ্রবীভূত হয়।
> হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গে বহন করে।
> রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
রক্ত জমাট বাঁধার পদ্ধতি
শরীরের ক্ষতস্থান থেকে তরল রক্ত বেরিয়ে ঘন জেলীর মতো থকথকে পিণ্ডে পরিণত হলে, তাকে রক্তজমাট (Clot) বলে। রক্তরস থেকে রক্তজমাটের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়াকে রক্তের জমাট বাঁধা বলে। রক্ত ঘাটতির - হাত থেকে রক্ষা পেতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া মানুষের এক গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ১৩টি ফ্যাক্টর (Factor) -এর সমন্বয়ে কয়েকটি ক্রমান্বযিক ধাপে সংঘটিত হয়। নিচে রক্ত। জমাট বাঁধার প্রধান ধাপগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো
১) আঘাতের ফলে ক্ষতস্থানে ক্ষতিগ্রস্থ ও বিদীর্ণ কলা থেকে থ্রোম্বোপ্লাস্টিন নামক এনজাইম বের হয়।
২) থ্রোম্বোপ্লাস্টিন ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় প্রোথ্রোম্বিনকে সক্রিয় থ্রোম্বিনে পরিণত করে।
৩) থ্রোম্বিন ফিব্রিনোজেনকে ফিব্রিন নামক জালকে রূপান্তরিত করে।
৪) ফিব্রিন জালকে লোহিত ও শ্বেত কণিকা জড়িয়ে যায় এবং কোষজাত উপাদানগুলো এবং রক্তের অন্যান্য অংশ আটকে থাকে, ফলে রক্ত জমাট বাধে।
লসিকা: মানবদেহে বিভিন্ন টিস্যুর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে (Intercellular space) যে জলীয় পদার্থ জমা হয় তাকে লসিকা বলে। এগুলো ছোট নালির মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে একটি আলাদা নালিকাতন্ত্র গঠন করে, যাকে লসিকাতন্ত্র (Lymphatic system) বলে। লসিকা ঈষৎ ক্ষারীয় স্বচ্ছ হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ। এর মধ্যে কিছু রোগপ্রতিরোধী কোষ থাকে, এদের লসিকাকোষ (Lymphoid cell) বলে।
প্লাজমা, সিরাম ও লসিকার মধ্যে পার্থক্য
তুলনীয় বিষয় | প্লাজমা | সিরাম | লসিকা |
প্রকৃতি | এটি রক্তের জলীয় অংশ | রক্ত জমাট বাঁধার পর জমাট পদার্থ নিঃসৃত জলীয় অংশ। | রজালক থেকে নিঃসৃত জলীয় অংশ |
রক্তকনিকা | এর মধ্যে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা থাকে | এতে রক্তকণিকা থাকে না। | প্রধানত লিম্ফোসাইট, শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। |
ফিব্রিনোজেন | বিপুল পরিমাণ | অনুপস্থিত | সামান্য পরিমাণ |
অবস্থান | প্রধানত রক্তপ্রবাহে ও হৃদপ্রকোষ্ঠে অবস্থান করে | সাধারণ অবস্থায় দেহের মধ্যে থাকে না। | প্রধানত আন্তঃকোষীয় স্থানে অবস্থান করে । |
৩. পেশি টিস্যু (Muscular Tissue)
ভ্রূণের মেসোডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন ও প্রসারণক্ষম বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে। এদের মাতৃকা প্রায় অনুপস্থিত। পেশিকোষগুলো সরু, লম্বা এবং তন্তুময়। যেসব তন্তুতে আড়াআড়ি ডোরাকাটা থাকে, তাদের ডোরাকাটা পেশি (Striated muscle) এবং ডোরাবিহীন তন্তুকে মসৃণ পেশি (Smooth muscle) বলে। পেশিকোষ সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন, চলন ও অভরীণ পরিবহণ ঘটায়। অবস্থান, গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে পেশি টিস্যু তিন ধরনের, ঐচ্ছিক পেশি, অনৈচ্ছিক পেশি এবং হৃৎপেশি।
(i) ঐচ্ছিক পেশি (Voluntary) বা ডোরাকাটা পেশি (striated muscle): এই পেশি প্রাণির ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ঐচ্ছিক পেশিটিস্যুর কোষগুলো নলাকার, শাখাবিহীন ও আড়াআড়ি ডোরাযুক্ত হয়। এদের সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে। এই পেশি দ্রুত সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে পারে। ঐচ্ছিক পেশি অস্থিতন্ত্রের সংলগ্ন থাকায় একে কঙ্কালপেশিও বলে। উদাহরণ মানুষের হাত এবং পায়ের পেশি।
(ii)অনৈচ্ছিক পেশি (Involuntary muscle) বা মসৃণ পেশি (Smooth muscle): এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণির ইচ্ছাধীন নয়। এ পেশি কোষগুলো মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দুগ থাকে না। এজন্য এ পেশিকে মসৃণ পেশি ৰলে। মেরুদণ্ডী প্রাণিদের রক্তনালি, পৌষ্টিকনালি ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে। প্রধানত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সঞ্চালনে অংশ নেয়। যেমন, খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় অন্ত্রের ক্রমসংকোচন।
(iii) কার্ডিয়াক পেশি বা হৃৎপেশি (Cardiac muscle] এই পেশি মেরুদন্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি। এই টিস্যুর কোষগুলো নলাকৃতি (অনেকটা ঐচ্ছিক পেশির মতো), শাখান্বিত ও আড়াআড়ি দাগযুক্ত। এ টিস্যুর কোষগুলোর মধ্যে ইন্টাবালটেড ডিস্ক (Intercalated disc) থাকে। এর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। অর্থাৎ কার্ডিয়াক পেশির গঠন ঐচ্ছিক পেশির মতো হলেও কাজ অনৈচ্ছিক পেশির মতো। কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে এবং একযোগে সঙ্কুচিত হয়। মানব ভ্রুণ সৃষ্টির একটা বিশেষ পর্যায় থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত স্বপিন্ডের কার্ডিয়াক।
(iv) পেশি একটা নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সচল রাখা।
হৃদপিণ্ড (Heart)
হৃদপিণ্ড হল হৃদপেশী দিয়ে তৈরি ত্রিকোণাকার ভেতরে ফাঁপা প্রকোষ্ঠযুক্ত পাম্পের মত যন্ত্র যা সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালিত করে। একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃদপিণ্ড গড়ে ২৬০০ সিনিয়ন বার স্পন্দিত হয়ে প্রতিটি নিলয় থেকে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন লিটার রক্ত বের করে দেয়। একটি হৃদপিন্ডের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। মহিলাদের হৃদপিন্ড পুরুষের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ ওজনে কম হয়। হৃদপিন্ডের অবস্থান ও হৃদপিন্ড বক্ষ পারে মধ্যচ্ছদার উপর এবং দুই ফুসফুসের মাঝ বরাবর বামদিকে একটু বেশি বাঁকা হয়ে অবস্থান করে। এর পোড়া (Base) চওড়া ও উপরের দিকে থাকে এবং সূঁচালো শীর্ষদেশ (Apex) নিচের দিকে পঞ্চম গাঁজরের ফাকে (5th inter costal space), বুকের বাঁ দিকে (Nipple) এর ১/২ ইঞ্চি নিচে ও পিছনে থাকে। এটি স্টারনাস (Sternum) ওরিগুলোর (Ribs) পেছনে অবস্থিত।
হৃদপিন্ডের গঠন: হৃদপিণ্ডের লেয়ার (Layer) ৩টি। বাইরে পেরিকার্ডিয়ান। সাঝে মাইওকার্ডিয়ান (Myocardium) এবং ভিতরে এণ্ডোকার্ডিয়াম (Endocardium) |
হৃদপিণ্ড একটি দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা ঝিরিতে আবৃত। এর বাইরের স্তর প্যারাইটাল (Parietal) এবং ভিতরেরটি ভিসেরাল পেরিকার্ডিয়াস (Visceral pericardium), দুই স্তরের মাঝখানে অবস্থিত তরল পদার্থ হৃদপিণ্ডের সংকোচন সহজসাধ্য ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি দেখতে লালচে রংয়ের ও ত্রিকোণাকার। মানুষের হৃদপিণ্ড সম্পুর্ণভাবে চারটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। উপরের দুটিকে তান ও বাম অলিন্দ (Right & left ventricle) এবং নিচের দুটিকে ডান ও বাম নিলয় থাকে। ৰাম অপেক্ষা জ্ঞান নিলয়ের প্রাচীর প্রায় তিন গুণ পুরু থাকে। অলিন্দ ও নিলয় উভয়ে লম্বালম্বিভাবে যে পর্দা (Septum) দিয়ে বিভক্ত থাকে তাদের যথাক্রমে -
ক) অলিম্ন পর্দা (Inter-atrial septum) এবং
খ) আন্তঃ নিলয় পদ (Inter ventricular septum) বলে
ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের সংযোগকারী ছিদ্র টাইকাস্পিড কম্পাটিকায় (Tricuspid valve) সংরক্ষিত থাকে। বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মধ্যবর্তী ছিদ্রপথের কপাটিকা বাইকাম্পিড কপাটিকা (Bicuspid valve) নামে পরিচিত। এ উভয় ধরনের কপাটিকা নিশর প্রাচীরের মাংসল অভিক্ষেপ রুপী প্যাপিলারী পেশি (Papilary muscle) করস্তি টেন্ডেনি (Cordae tendinae) নামক তন্তু দিয়ে যুক্ত থাকে। ডান নিলয় থেকে উদ্ভুত পালমোনারী ধমনীর ছিদ্রপথে এবং নাম নিলয় থেকে সৃষ্ট অ্যাওটার মুখের কপাটিকা দুইটি অর্ধচন্দ্রাকার (Semilunar)। এরা রক্তকে পেছনদিকে প্রবাহিত হতে বাধা দেয়। অলিন্দে আগত শিরাগুলোর প্রবেশ পথ কপাটিকাবিহীন। এপিকার্ডিয়ামে প্রায়ই চর্বি লেগে থাকে। মায়োকার্ডিয়াম হৃদপিন্ডের সংকোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলো এভেকার্ডিয়ামে গঠিত। এ স্তর কপাটিগুলোকেও বেষ্টন করে রাখা এবং প্রধান রক্তবাহিকাগুলোর অন্তঃস্থ স্তরের সাথে অবিচ্ছিন্ন।
হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্তসংবহন: হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণের ফলে রক্ত দেহের ভেতরে গতিশীল থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের বিশ্রামরত অবস্থায় প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ৮০ বার হৃদস্পন্দন ঘটে। হৃদপিণ্ডের এ সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃদস্পন্দন হয়ে থাকে। হৃদপিণ্ডের এ সংকোচন ও প্রসারণকে যথাক্রমে সিস্টোল (Systole ) ও ভাল্পস্টোল (Diastole) বলে। হৃদপিণ্ডের মধ্যে নিম্নে বর্নিত উপায়ে রক্ত সংবহিত হয় :
১। শরীরের ঊর্ধ্বভাগ থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত সুপিরিয়র ভেনাক্যাভা এবং নিম্ন ভাগ থেকে ইনফিরিয়র ভেনাক্যাভার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের ডান ভালিদে প্রবেশ করে ৷
২। ফুসফুস থেকে O2 সমৃদ্ধ রক্ত দুইটি পালমোনারী শিরার মাধ্যমে বাস অলিন্দে পৌঁছায়।
৩। ডান অলিন্দ সংকোচনের সময় নিলয় প্রসারিত থাকে। তাই অলিন্দের মধ্যে চাপ বেশি থাকে এবং নিলয়ের মধ্যে চাপ কম থাকে। এ চাপ পার্থক্যের জন্য ডান অলিন্দ- নিলয় ছিদ্র পথে অবস্থিত ট্ৰাইকাম্পিড কপাটিকা খুলে যায় এবং CO2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। এ সময় ভেনাক্যাভা দুইটির কপাটিকা বন্ধ থাকে।
৪। ডান অলিন্দ সংকোচনের সময়ই নাম অলিন্দের ও সংকোচন ঘটে এবং একই ভাবে বাম অলিল-নিলয় ছিদ্রপথে অবস্থিত বাইকাস্পিড কপাটিকা খুলে O2 সমৃদ্ধ রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। এ সময় পালমোনারী শিরা দুটির কপাটিকা বন্ধ থাকে।
৫। অলিন্দ খালি হেয়ে গেলে এর সংকোচন শেষ হয়ে। প্রসারণ শুরু হয় এবং সংঙ্গে সঙ্গে রক্তে পূর্ণ নিলয়ের সংকোচন ঘটে, ফলে নিলয়ের মধ্যে চাপ বাড়ে এবং বাইকাম্পিড ও ট্ৰাইকাস্পিড কপাটিকাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু অ্যাওটা ও পালমোনারী ধমনীতে অবস্থিত সেমিলুনার (অর্ধচন্দ্রাকার) কপাটিকা খুলে যায়।
৬। ডান নিলয় থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত পরিশোধনের জন্য পালমোনারী ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে প্ররিত হয়।
৭। বাম নিলয় থেকে O2 সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাওটায় প্রেরিত হয়।
৮. অ্যাওটা থেকে ধমনী, শাখা-ধমনী ও কৈশিক জালিকার মাধ্যমে রক্ত সারা দেহে সংবহিত হয়। এভাবে হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে পর্যায়ক্রমে রক্তসংবহন অব্যাহত থাকে এবং প্রত্যেক স্পন্দনের সময় চক্রাকারে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
হৃদপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো :
হৃদচক্র বা কার্ডিয়াক সাইকেল (Cardiac cycle): হৃদপিণ্ডের প্রতি স্পন্দনে হৃদপিণ্ডের পরিবর্তনগুলোর যে চক্রাকার পুনরাবৃত্তি ঘটে তাকে কার্ডিয়াক সাইকেল বা হৃদচক্র বলে। স্বাভাবিকভাবে হৃদস্পন্দনের হার যেহেতু মিনিটে ৭০-৮০ (গড়ে ৭৫) বার সেহেতু হৃদচক্রের স্থিতিকাল ০.৮ সেকেণ্ড। প্রতি স্পন্দনে হৃদপিণ্ড একবার সংকুচিত ও একবার প্রসারিত হয়। হৃদপিণ্ডের সংকোচনকে সিস্টোল এবং প্রসারণকে ডায়াস্টোল বলে। হৃদচক্র চলাকালীন হৃদপিণ্ডে রক্ত সংবহন ঘটনা প্রবাহ সমুহঃ
১। অলিন্দের ডায়াস্টোল (Atrial diastole )
ক) অলিন্দ দুইটি প্রসারিত বা শিথিল অবস্থায় থাকে।
খ) ট্রাইকাস্পিড এবং বাইকাস্পিড কপাটিকা বন্ধ থাকে।
গ) অলিন্দ মধ্যবর্তী চাপ হ্রাস পায়, ফলে বাম নিলয় দেহে বিভিন্ন অংশ থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত সুপিরিয়র এবং ইনফিরিয়র ভেনাক্যাভা দিয়ে ডান অলিন্দে এবং পালমোনারী শিরা দিয়ে ফুসফুস থেকে O2 সমৃদ্ধ রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে। এ সময় হৃদপিণ্ডের পেশি থেকেও CO2 সমৃদ্ধ রক্ত করোনারি সাইনাসের মাধ্যমে ডান অলিন্দে আসে। এ অবস্থার সময়কাল ০.৭ সেকেণ্ড। অলিন্দ দুইটি রক্তপূর্ণ হলে অলিন্দের সিস্টোল হয়।
২) অলিন্দের সিস্টোল (Atrial systole )
ক) এ সময় অলিন্দ দুটি সংকুচিত হয়।
খ) ট্রাইকাসপিড ও বাইকাস্পিড কপাটিকা উন্মুক্ত থাকে এবং সেমিলুনার কপাটিকা বন্ধ থাকে।
গ) অলিন্দ মধ্যবর্তী চাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে ডান অলিন্দ থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান নিলয়ে এবং বাম অলিন্দ থেকে O2 সমৃদ্ধ রক্ত বাম নিলয়ে আসে। এ অবস্থার সময়কাল ০.১ সেকেণ্ড।
৩) নিলয়ের সিস্টোল (Ventricular systole)
ক) নিলয় দুটি রক্তপূর্ণ অবস্থায় সংকুচিত হয়।
খ) ট্রাইকাস্পিড ও বাইকাস্পিড কপাটিকা বন্ধ এবং সেমিলুনার কপাটিকা খোলা থাকে ।
গ) নিলয় মধ্যবর্তী চাপ বৃদ্ধি পায় এবং নিলয় থেকে রক্ত নিলয়ের বাইরে নির্গত হয়। ডান নিলয় থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত পালোানারী ধমনীতে এবং বাম নিলয় থেকে O2 সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাওর্টায় প্রবেশ করে। এ অবস্থার সময়কাল ০.৩ সেকেণ্ড।
৪) নিলয়ের ডায়াস্টোল (Ventricular diastole )
ক) এ সময় নিলয় দুটি শিথিল অবস্থায় থাকে।
খ) বাইকাস্পিড ও ট্রাইকাস্পিড কপাটিকা উন্মুক্ত হয় এবং সেমিনার কপাটিকা বন্ধ থাকে।
গ) নিলয় মধ্যবর্তী চাপ হ্রাস পায় ফলে অলিন্দ দুটি থেকে রক্ত নিয়ে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দ থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান নিলয়ে এবং বাম নিলয়ে O2 রক্ত বাম নিলয়ে আসে। এ অবস্থার সময়কাল ০.৫ সেকেণ্ড।
(d) স্নায়ু টিস্যু (Nerve tissue)
দেহের বিশেষ সংবেদী কোষ নিউরন বা স্নায়ুকোষগুলো একত্র স্নায়ু টিস্যু গঠন করে। স্নায়ু টিস্যু পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা যেমন তাপ, স্পর্শ, চাপ ইত্যাদি বার্তা আকারে বহন করে নিয়ে যায়। একটি আদর্শ নিউরনের তিনটি অংশ থাকে, কোষদেহ, ডেনড্রাইট এবং অ্যাক্সন। নিউরন কোষ বহুভুজাকৃতি এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত। কোষের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজিবডি, রাইবোজোম, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি থাকে, তবে সাইটোপ্লাজমে সক্রিয় সেন্ট্রিওল থাকে না বলে নিউরন বিভাজিত হয় না। কোষদেহের চারদিকের শাখাযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রলম্বিত অংশকে ডেনড্রন বলে। ডেনড্রন থেকে যে শাখা বের হয়, তাদের ডেনড্রাইট বলে। ডেনড্রাইটের সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে। নিউরনের কোষদেহ থেকে একটি লম্বা স্নায়ুতন্তু পরবর্তী নিউরনের ডেন্ড্রাইটের সাথে যুক্ত থাকে, তাকে অ্যাক্সন বলে। একটি নিরনের একটি মাত্র অ্যাক্সন থাকে। পরপর দুটি নিউরনে প্রথমটির অ্যাক্সন এবং পরেরটি ডেনড্রাইটের মধ্যে যে স্নায়ুসন্ধি গঠিত হয়, তাকে সিন্যাপস (Synapse) বলে। সিন্যাপসের মধ্য দিয়েই একটি নিউরন থেকে উদ্দীপনা পরবর্তী নিউরনে পরিবাহিত হয়। স্নায়ুটি উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে এবং মস্তিস্কে তাতে সাড়া দেয়। উচ্চতর প্রাণীতে স্নায়ুটি স্মৃতি সংরক্ষণ (Memorise) করাসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
অঙ্গ ও তন্ত্র
তন্ত্র (Organ System): কয়েকটি অঙ্গ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় একটি তন্ত্র। মানবদেহকে প্রধানত ১১ টি তন্ত্রে বিভক্ত করা যায়। যেমন- কঙ্কালতন্ত্র, পেশি তন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, হৃদপিণ্ড ও রক্তসংবহনতন্ত্র, লসিকাতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, জননতন্ত্র, অন্তঃক্ষরাতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও বহিরাবরণতন্ত্র।
বিশেষ অনুভুতির অঙ্গসমূহ (Special Sense Organs): মানুষের বিশেষ বিশেষ অনুভূতি ও কাজের জন্য যে সব অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হয় তাকে বিশেষ অনুভূতির অঙ্গ (Special Sense Organs) বলা হয়। সেগুলো হলো –
১। জিহ্বা বা Tongue যার দ্বারা আমরা স্বাদ গ্রহণ করি।
২। চক্ষু বা Eye যার দ্বারা আমরা দর্শন করি।
৩। নাক বা Nose যার দ্বারা আমরা ঘ্রাণ উপভোগ করি।
৪। কান বা Ear যার দ্বারা আমরা শব্দ শ্রবণ করি।
৫। চর্ম বা Skin যার দ্বারা আমরা স্পর্শ অনুভব করি।
মানবদেহের তরল পদার্থ
মানব দেহের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর তরল পদার্থ (Body Fluids) রয়েছে। মানব দেহের তরল পদার্থ (Fluids) মূলত দুইটি ভাগে বিন্যাস করা হয়-
আন্তঃকোষ তরল পদার্থ (Intracellular Fluids) - মানবদেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যস্থিত তরলকে আন্তঃকোষ তরল পদার্থ (Intracellular Fluids) বলে যা পদার্থ শরীরের মোট ওজনের ৪০%।
বহিঃকোষ তরল পদার্থ (Extracellular Fluids) - দেহের বিভিন্ন কোষের বাইরে এই তরল পদার্থ থাকে। যা শরীরের মোট তরল পদার্থের শতকরা ২০% ভাগ। বহিঃকোষ তরল পদার্থ তিনটি ভাগে বিভক্ত –
ক) কোষসমূহের মধ্যবর্তী তরল পদার্থ (Interstitial Fluids),
খ) রক্তের তরল পদার্থ (Blood Plasma),
গ) ট্রান্সসেলুলার তরল পদার্থ (Transcellular Fluid) ।
কোষসমূহের মধ্যবর্তী তরল পদার্থের উদাহরণ- ক্যাপিলারি ফ্লুইড
ট্রালসেলুলার তরল পদার্থের উধাহরণ: ক) সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (Cerebrospinal Fluid); খ) সাইনোভিয়াল ফ্লুইড (Synovial Fluid); গ) পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড (Peritoneal Fluid); ঘ) পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড (Pericardial Fluid); ঙ) ইন্ট্রাঅকুলার ফ্লুইড (intraocular Fluid) প্রভৃতি।
রক্তের তরল পদার্থ বা (Blood Plasma) -এর পরিমাণ শরীরের মোট ওজনের ৫% বা প্রায় ৩ লিটার। এর কাজ বহন করা। বহিঃকোষ তরল পদার্থের সঙ্গে রক্তের তরল পদার্থের যে আদান-প্রদান চলে তা প্রত্যক্ষভাবে হয় না। প্লাজমার চাপ বা Hydrostatic Pressure থাকে বেশি। তাই প্রস্বেদন প্রক্রিয়া (Osmosis) দ্বারা এই আদান-প্রদান (Fluid Exchange) হয়ে থাকে। প্লাজমাতে প্রোটিন আছে, যা বহিঃকোষ তরল পদার্থের মধ্যে তা নেই। এই সব তরল পদার্থের অভাব হলে তা পানি দ্বারা পূর্ণ হয়। তরল পদার্থের অভাব প্রকট হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেমন: কলেরা জনিত ডাইরিয়া হলে অথবা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে মানুষের শরীরে তরল পদার্থের অভাব প্রকট হয়ে পরে। এক বা একাধিক টিস্যু দিয়ে তৈরি এবং একটা নির্দিষ্ট কাজ করতে সক্ষম প্রাণিদেহের অংশবিশেষকে অঙ্গ (Organ) বলে। অবস্থানভেদে মানবদেহে দুধরনের অঙ্গ আছে। বাহ্যিক অঙ্গ-চোখ, কান, নাক, হাত, পা, মাথা ইত্যাদি। আর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ- জীবদেহের ভিতরের অঙ্গগুলো যেমন- পাকস্থলী, ডিওডেনাম, ইলিয়াম, মলাশয়, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা, ফুসফুস, বৃক্ক, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি। পরিপাক, শ্বসন, রেচন, প্রজনন ইত্যাদি শরীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য প্রাণিদেহে কতগুলো অঙ্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন তন্ত্র গঠিত হয়। নিচে মানবদেহের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তন্ত্রের ধারণা দেওয়া হলো ।
পরিপাক: মানবদেহের কোষ গুলোকে সজীব এবং কার্যকর রাখার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু অধিকাংশ খাদ্য জটিল এবং জৈব যৌগ অবস্থায় গ্রহণ করা হয় যা দেহের কোষগুলো সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। খাদ্যকে শোষণযোগ্য ও কোষ উপযোগী করতে হলে তাকে ভেঙে সহজ, সরল এবং তরল অবস্থায় রুপান্তর করাকে পরিপাক বলে। দেহ দুভাবে খাদ্য পরিপাক করে- যান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
যান্ত্রিক প্রক্রিয়া: খাদ্যদ্রব্য মুখগহবরে দাঁতের সাহায্যে চিবানো হয়। প্রথমত চিবানোর ফলে খাদ্য ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়। পাকস্থলি এবং অন্ত্রের মধ্যে এই টুকরা খাদ্যবস্তুগুলো মন্ডে পরিণত হয়।
রাসয়নিক প্রক্রিয়া: রাসায়নিক প্রক্রিয়া পরিপাকের দ্বিতীয় ধাপ। পরিপাক রসের এনজাইম খাদ্যের রাসায়নিক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে জটিল উপাদানগুলো ভেঙে দেহের গ্রহণযোগ্য সরল উপাদানে পরিণত হয়।
পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র (Digestive System): পৌষ্টিকনালি এবং কয়েকটি গ্রন্থি নিয়ে গঠিত। পৌষ্টিকনালি মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ুতে শেষ হয়। বিস্তৃত এই নালিপথ কোথাও সরু আবার কোথাও প্রশস্ত। এর প্রধান অংশগুলো নিম্নরূপ :
(ক) মুখ (Mouth): মুখ থেকে পৌষ্টিকনালি শুরু। এটি নাকের নিচে আড়াআড়ি একটি বড় ছিদ্র, যেটি উপরে এবং নিচে ঠোঁট দিয়ে বেষ্টিত থাকে।
(খ) মুখগহবর (Buccal cavity): মুখের অভ্যন্তরে দাঁত, জিহবা ও লালাগ্রন্থি থাকে। এগুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। দাঁত খাদ্যকে চিবিয়ে ছোট ছোট অংশে পরিণত করে। জিহবা খাদ্যকে নেড়েচেড়ে চিৰাতে সাহায্য করে এবং তার স্বাদ গ্রহণ করে। কানের নিচে চোয়ালের পাশে জিহবার নিচে অবস্থিত লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসের মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে গলধ:করণে সাহায্য করে। লালারসের টায়ালিন ও মলটেজ নামক এনজাইম শর্করা পরিপাকে অংশ নেয়।
(গ) দাঁত (Tooth): মানবদেহে সবচেয়ে শক্ত অংশ দাঁত। প্রাপ্ত বয়সে মুখগহ্বরে উপরে ও নিচের চোয়ালে সাধারণত ১৬ টি করে মোট ৩২ টি দাঁত থাকে। মানবদেহে দাঁত দুবার গজায়। প্রথমবার শিশুকালে দুধ দাঁত, দুধদাঁত পড়ে গিয়ে ১৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার স্থায়ী দাঁত গজায়। স্থায়ী দাঁত চার ধরনের। সেগুলো হচ্ছে-
(ঘ) গলবিল (Pharynx) : মুখগহ্বরের পরে পৌষ্টিকনালির অংশ হল গলবিল। মুখগহ্বর থেকে খাদ্যবস্তু গলবিলের মধ্য দিয়ে অন্ননালিতে পৌঁছে।
(ঙ) অন্ননালি (oesophagus) : গলবিল থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত বিস্তৃত নালিটির নাম অন্ননালি। খাদ্যবস্তু এই নালির মধ্যে দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে।
(চ) পাকস্থলী (Stomach): অন্ননালি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের মাঝখানে একটি থলির মতো অঙ্গ। এর প্রাচীর পুরু ও পেশি বহুল। পাকস্থলীর প্রাচীরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থাকে। পাকস্থলীর পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুকে পিষে মণ্ডে পরিণত করে। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
(ছ) অন্ত্র (Intestine): পাকস্থলীর পরে পৌষ্টিকনালির অংশ হল অস্ত্র। এটি একটি লম্বা প্যাঁচানো নালি। এর দুটি প্রধান অংশ- ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্র।
শ্বসন (Respiration): জীবন ধারণের জন্য চলন, ক্ষয়পুরণ, বৃদ্ধি, প্রজনন প্রভৃতি জৈবিক কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। এ শক্তির প্রধান উৎস সূর্যালোক। সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তুর মধ্যে স্থিতি শক্তিরূপে (Potential energy) সঞ্চিত করে। এই শক্তি জীব তার জীবন ধারণের জন্য সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। শ্বসনের সময় জীবদেহে এই স্থিতি শক্তি রাসায়নিক শক্তি (ATP) হিসেবে তাপরূপে মুক্ত হয় এবং জীবের বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। শর্করাজাতীয় খাদ্যবস্তু ছাড়াও প্রোটিন, ফ্যাট এবং বিভিন্ন জৈব এসিড শ্বসনিক বস্তুরূপে ব্যবহৃত হয়। জীবদেহে এই জটিল যৌগগুলো প্রথমে ভেঙে সরল যৌগে পরিণত হয় এবং পরে জারিত হয়ে রাসায়নিক শক্তিতে (ATP) রূপান্তরিত।
শ্বসনের প্রকারভেদ: শ্বসনের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে শ্বসনকে দুভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসন। সবাত শ্বসন (Aerobic respiration ) - যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় এবং শ্বসনিক বস্তু (শর্করা, প্রোটিন, লিপিড, বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড) সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে CO2, H2O এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে সবাত শ্বসন বলে। সবাত শ্বসনই হলো উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া। অবাত শ্বসন (Anaerobic respiration)- যে শ্বসন প্ৰক্ৰিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে হয়, তাকে অবাত শ্বসন বলে।
মানব শ্বসনতন্ত্র: অক্সিজেন জীবন ধারণের অপরিহার্য উপাদান। মানবদেহে বাতাসের সাথে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে দেহের সব অংশে পৌঁছায়। দেহকোষে পরিপাক হওয়া খাদ্যের সাথে অক্সিনের বিক্রিয়া ঘটে, ফলে তাপ এবং শক্তি উৎপন্ন হয়। অক্সিজেন এবং খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে বিক্রিয়ার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানি উৎপন্ন হয়। এ উপাদানগুলোকে ফুসফুসে নিয়ে যায়। সেখানে অক্সিজেন শোষিত হয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয়। যে প্রক্রিয়া দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করা হয়, তাকে শ্বাসকার্য বলে। যে জৈবিক প্রক্রিয়া প্রাণিদেহের খাকসুকে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে জৱিত করে মজুত শক্তিকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নিস্কাশন করে, তাকে শাসন বলে। দেহের ভিতর গ্যাসীয় আদান-প্রদান একবার ফুসফুসে এবং পরে দেহের প্রতিটি কোষে পর্যায়ক্রমে সম্পাদিত হয়। শ্বসন ছাড়া আমাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, তিন-চার মিনিটের বেশি দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ থাকলে মৃত্যু অনিবার্য। শ্বসনতন্ত্রকে কাজের উপর ভিত্তি করে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) পরিবহণকারী অংশ ; খ) শ্বসনকারী অংশ ।
ক) পরিবহণকারী অংশ: শ্বসনতন্ত্রের এই অংশটি কতকগুলো বায়ু পরিবহণকারী নালী নিয়ে গঠিত যা দেহের বহিঃপরিবেশ ও ফুসফুসের গ্যাসীয় বিনিময়স্থলের মধ্যে সংযোগ করে। এটি নিম্নবর্ণিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।
১) নাক বা নাসিকা (Nose)
২) গলবিল (Pharynx)
৩) ল্যারিংক্স (Larynx)
৪) শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া (Trachea)
৫) ব্রঙ্কাই (Bronchi )
১। নাসিকা (Nose): নাক হচ্ছে অস্থি, তরুণাস্থি, পেশি ও যোজক কলানির্মিত একটি ফাপা অঙ্গ। এর ত্বক অসংখ্য তেল গ্রন্থি ও কিছু লোমবিশিষ্ট। ত্বকটি সম্মুখে নাসাছিদ্র অতিক্রম করে নাকের ভেস্টিবল (Vestibule) এ প্রসারিত। এখানকার এপিথেলিয়াম স্তরীভূত ও আঁইশাকার এবং কতকগুলো শক্ত লোমবাহী। নাসিকার অন্তঃস্থ গহবরটি নাস গহবর (Nasal cavity) যা একটি পাতলা ব্যবধায়কে ডান ও বাম অর্ধে বিভক্ত। এর প্রাচীর সিলীয় এপিথেলিয়ামে আবৃত, মিউকাস ঝিল্লি বেষ্টিত এবং রক্ত বাহিকা ও স্নায়ু প্রান্ত সমৃদ্ধ। নাসা গহবরের উপরের অংশের মিউকাস ঝিল্লি সংবেদী অলফ্যাক্টরী কোষযুক্ত।
নাসিকার কাজ: নাসিকা প্রশ্বাস বায়ু প্রবেশে সাহায্য করে; প্রশ্বাস বায়ুতে যে সব ধুলিকণা বা রোগজীবাণু থাকে, লোম ও শ্লেষ্মাঝিল্লি সেগুলোকে আটকে রাখা এবং ছাকনির মতো কাজ করে; নাসাপথ অতিক্রমকারী বাতাস কিছুটা গরম ও আর্দ্র হয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে।
২। গলবিল (Pharynx): নাসাগহবর পিছনদিকে দুটি ছিদ্র পথে নাসাগলবিল (Nasopharynx) এ উন্মুক্ত হয়। এরপর বাতাস মুখগলবিল (Oropharynx) অতিক্রম করে ল্যারিংক্সে প্রবেশ করে।
৩। স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংক্স (Larynx): এটি গলবিলের নিম্নাংশের সামনের দিকে অবস্থিত এবং শ্বাসনালীতে উন্মুক্ত ও ছোট ছোট খণ্ডবিশিষ্ট তরুণাস্থি নির্মিত অংশ। তরুনাস্থিগুলো অস্থি সংযোজক সন্ধি-বন্ধনী ও ঝিল্লিতে আবদ্ধ। উপরিভাগের তরুণাস্থির উপরে এপিগ্লটিস (Epiglottis) নামে একটি জিহবাকৃতির ঢাকনা থাকে। ল্যারিংক্সের গহবরে একজোড়া স্থিতিস্থাপক, পর্দার মত স্বরতন্ত্রী (Vocal cord) থাকে ।
ল্যারিংক্সের কাজ: খাদ্য গ্রাসের সময় এপিগ্লটিস (উপজিহবা) স্বরযন্ত্রকে ঢেকে রাখা, যাতে খাদ্যদ্রব্য ল্যারিংক্সে স্বরযন্ত্রে প্রবেশ করতে না পারে; স্বরতন্ত্রীর কাঁপনের ফলে স্বরের উৎপত্তি হয়। কথা বলতে বা কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে মুখ স্বরতন্তী একসাথে ব্যবহৃত হয়।
৪। ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালী (Trachea): এটি লিগামেন্ট সংযুক্ত কতগুলো অর্ধবৃত্তাকার তরুনাস্থি নিৰ্মিত প্ৰায় ১২ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট ফাঁপা নল। এর পশ্চাৎ প্রাচীর নরম এবং যোজক কলার ঝিল্লি নির্মিত ও অন্ননালী সংলগ্ন। ট্রাকিয়ার অন্তর্গাত্র মিউকাস ঝিল্লিতে আবৃত। এতে মসৃণ পেশিতন্তু, সিলিয়া ও মিউকাস-নিঃসারী গ্রন্থি থাকে। শ্বাসনালীর বহিঃপ্রাচীর যোজক কলার ঝিল্লি দ্বারা আবৃত।
ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীর কাজ: শ্বাসনালীর মাধ্যমে বাতাস দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে; বিরক্তিকর কোনো বস্তু ট্রাকিয়ায় ঢুকে গেলে ঝিল্লির সূক্ষ্ম রোম কাশির উদ্রেক করে তা উপরের দিকে পাঠিয়ে দেয় এবং ট্রাকিয়া পরিষ্কার রাখা।
৫। ব্রঙ্কাই (Bronchi): ট্রাকিয়া বক্ষ গহবরে প্রবেশ করে ৪র্থ বা ৫ম থোরাসিক কশেরুকার লেভেলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যে দুটি শাখার সৃষ্টি করে, তাদের ব্রঙ্কাই বলে। প্রথম সৃষ্ট এ ডান ও বাম শাখাকে ব্রঙ্কাই (Bronchi) বলে। এরা যথাক্রমে ফুসফুসের ডান ও বাম খণ্ডে প্রবেশ করে অসংখ্য ক্ষুদ্রতর শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে। এদের বলে ব্রঙ্কিওল (Bronchiole)। ব্রঙ্কাইয়ের প্রাচীর ট্রাকিয়ার মতই। ডান শাখাটি বাম শাখা অপেক্ষা চওড়া কিন্তু খাটো।
খ) শ্বসনকারী অংশ: শ্বসনকারী অংশের অঙ্গসমূহ যা ফুসফুসের ভেতরে থাকে :
ব্রঙ্কিওল (Bronchiol); এলভিওলার নালী (Alveolar duct); এলভিওলাই (Alveoli)
১) ব্রঙ্কিওল মানুষের ফুসফুস বক্ষ গহবরে ডায়াফ্রামের উপরে হৃদপিণ্ডের দুইপাশে অবস্থিত হালকা লাল রঙের কোণাকার অঙ্গ। ফুসফুসের অভ্যন্তরে অবস্থিত শাখা নালীগুলোকে ব্রঙ্কিওল বলে। ব্রঙ্কিওলের প্রান্তে ফুসফুসের শ্বসন অঞ্চল অবস্থিত। এটি অসংখ্য এলভিওলার থলি নিয়ে গঠিত। মানবদেহে ডান ও বাম এ দুটি ফুসফুস (Lungs) রয়েছে। এ দুটি আবার খাঁজের সাহায্যে খণ্ডে (Lobe) বিভক্ত। ডান ফুসফুস তিন খণ্ডবিশিষ্ট এবং বাম ফুসফুস দুই খণ্ডবিশিষ্ট ।
২) এলভিওলার নালী ব্রংকিওলের অতিসূক্ষ্ম ও তরুণাস্থিবিহীন প্রান্তগুলোকে এলভিওলার নালী (Alveolar duct) বলে। প্রতিটি নালী একেকটি এলভিওলার থলিতে (Alveolar sac) উন্মুক্ত হয়।
৩) এলভিওলাই প্রতিটি এলভিওলার থলি কতকগুলো এলভিওলাই (Alveoli) নিয়ে গঠিত। ফুসফুসের বহির্তল দ্বিস্তরী ভিসেরাল প্লুরা (Visceral pleura) ঝিল্লিতে আবৃত।
এলভিওলাসের গঠন: ফুসফুসে স্কোয়ামাস এপিথেলীয় কোষে গঠিত ও কৈশিক-জালিকাসমৃদ্ধ প্রকোষ্টের মত গ্যাসীয় বিনিময় তলকে একবচনে এলভিওলাস এবং এক কথায় এলভিওলাই বলে। মানুষের ফুসফুসে প্রায় ৭০- ৮০ বর্গমিটার আয়তনের তল জুড়ে ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) এরও বেশি সংখ্যক এলভিওলাই রয়েছে। প্রত্যেক এলভিওলাসের প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা, মাত্র ০.১ um (০.০০০১ মিমি) পুরু। এর বহির্দেশ ঘন, কৈশিক জালিকা সমৃদ্ধ কৈশিক নালিকা গুলো পালমোনারী ধমনী থেকে সৃষ্টি হয়। পরে এগুলো পুনর্মিলিত হয়ে পালমোনারী শিরা গঠন করে)। প্রাচীরটি আর্দ্র স্কোয়ামাস (আঁইশাকার) এপিথেলিয়াম নির্মিত। এতে কোলাজেন ও ইলাস্টিক তন্তুও রয়েছে। ফলে শ্বসনের সময় সংকোচন-প্রসারণ সহজতর হয়। এভিওলাস-প্রাচীরের কিছু বিশেষ কোষ প্রাচীরের অন্তঃতলে ডিটারজেন্ট (Detergent) -এর মত রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে। এ পদার্থকে সারফেক্ট্যান্ট (Surfactant) বলে।
সারফেক্ট্যান্টের কাজ
শ্বসন পদ্ধতি (Respiration): শ্বসন হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পরিবেশ থেকে অক্সিজেন পরিবাহিত হয়ে গ্রহণ করা খাদ্যকে জারিত (Oxidation) করে বিপাকের (Metabolism) জন্য দেহ কোষে নিয়ে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য পদার্থকে কোষ থেকে পরিবেশে নিয়ে আসে। শ্বসন দুই পর্যায়ে হয়, যথা-
১) বহিঃশ্বসন (External respiration)
২) অন্তঃশ্বসন (Internal respiration) |
বহিঃশ্বসন (External respiration): এতে অক্সিজেন শ্বসিত হয় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড দেহ থেকে বের করে দেয়। যে প্রক্রিয়ায় ফুসফুসে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে অর্থাৎ অক্সিজেন ফুসফুস থেকে রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্ত থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে বহিঃশ্বসন বলে। ফুসফুসের এলভিওলার বাতাস (Alveolar air) ও এলভিওলির প্রাচীরে অবস্থিত কৈশিক জালিকার রক্তের মধ্যে এই বিনিময় ঘটে। প্রশ্বাসের মাধ্যমে আগত বাতাসে O2 এর চাপ ফুসফুসের রক্তের O2 এর চাপ অপেক্ষা বেশি হওয়ায় অক্সিজেন এলভিওলাস থেকে ফুসফুসের কৈশিকনালীর রক্তে প্রবেশ করে লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের সাথে রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন গঠন করে। কিছু পরিমাণ O2 রক্তরসেও দ্রবীভূত হয়। একই সাথে ফুসফুসের কৈশিকনালীর রক্তে (CO2) এর চাপ এলভিওলাসে (CO2) এর চাপের চেয়ে বেশি হওয়ার ফুসফুসের কৈশিকজালক থেকে (CO2) এলভিওলাসে প্রবেশ করে।
বহিঃশ্বসন দুই পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা -
ক) প্রশ্বাস বা শ্বাসগ্রহণ (Inspiration or inhalation) এবং
খ) নিঃশ্বাস বা শ্বাসত্যাগ (Expiration or Exhalation ) ।
শ্বাসগ্রহণ (Inspiration): ফুসফুসের বাতাস (Air) গ্রহণ করা। এতে সময় লাগে দুই সেকেণ্ড
শ্বাসত্যাগ (Expiration): ফুসফুস থেকে বাতাস বের করে দেয়া এতে সময় লাগে তিন সেকেণ্ড
শ্বাসক্রিয়ার উদ্দেশ্য: অক্সিজেন সরবরাহ করা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করা; অ্যামোনিয়া, কিটোন বড়ি, অপ্রয়োজনীয় তেল, পানি, অ্যালকোহল প্রভৃতি বের করে দেওয়া; রক্তের পানি ও অন্যন্য অংশের সমতা রক্ষা করা; শরীরের তাপের সমতা রক্ষা করা। প্রতি মিনিটে শ্বাসক্রিয়া ও শ্বসন একটি ছন্দময় প্রক্রিয়া। শ্বাসকার্যের কোনো বিরাম নেই। ঘুমের সময় কিছু কম থাকে, পরিশ্রম বা ব্যায়ামের সময় তা বেড়ে যায়। প্রতি মিনিটে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষ ১২-১৮ বার এবং নবজাত শিশু ৪০ বার শ্বাস ক্রিয়া করে থাকে।
প্রশ্বাস বা শ্বাসগ্রহণ: স্নায়ু উদ্দীপনার প্রভাবে ডায়াফ্রামের পেশি (বৃত্তাকার অরীয় পেশিতন্তু) এবং প্রতিজোড়া পর্শকার মাঝখানে অবস্থিত বহিঃ ও অন্ত ও ইন্টারকোস্টাল পেশির সংকোচন প্রসারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে এই পর্যায়টি নিম্নেরূপভাবে সম্পন্ন হয়-
ক) বহিঃস্থ ইন্টারকোস্টাল পেশি সংকুচিত হয় এবং অন্তঃস্থ ইন্টারকোস্টাল শিথিল হয়। ফলে পাঁজর উপরের দিকে উঠে যায়।
খ) তখন ডায়াফ্রাম-পেশিও সংকুচিত হয়, ফলে ডায়াফ্রাম সমতল হয়ে যায়।
গ) উপরোক্ত দুই কর্মকাণ্ডের ফলে বক্ষগহ্বরের আয়তন বেড়ে যায় (বুক প্রসারিত হয়)। এতে বক্ষগহ্বর ও ফুসফুস অভ্যন্তরীণ চাপ বায়ুমণ্ডলীর চাপের চেয়ে কমে যায়।
ঘ) এ কারণে বাতাস নাসাপথের ভেতর দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং এলভিওলাই ফুলে উঠে। ফুসফুস ও বায়ুমণ্ডলীয় বাতাসের চাপ সমান না হওয়া পর্যন্ত বাতাসের চাপ অব্যাহত থাকে।
নিঃশাস বা শ্বাসত্যাগ: এটি প্রশ্বাসের পরই সংগঠিত একটি নিষ্ক্রিয়া প্রক্রিয়া। প্রশ্বাসে অংশগ্রহণকারী পেশিগুলো প্রসারণ বা শিথিলতার জন্য তা ঘটে। নিঃশ্বাসের সময় প্রশ্বাসকালে অংশগ্রহণকারী পেশিগুলো স্থিতিস্থাপকতার জন্য পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। তখন পর্শকাগুলো নিজস্ব ওজনের জন্য নিম্নগামী হয়, উদরীয় পেশীগুলোর চাপে ডায়াফ্রাম ধনুকের মত বেকে বক্ষগহ্বরের আয়তন কমিয়ে দেয়, ফুসফুসীয় পেশি পূর্বাবস্থায় ফিরে যায় এবং প্লিরার (Pleura) অন্তঃস্থ চাপ ও ফুসফুসের বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। বাতাস তখন ফুসফুস থেকে নাসিকাপথে বেরিয়ে গেলে ফুসফুসের আয়তনও কমে যায়।
অন্তঃশ্বসন (Internal respiration): শ্বসনের এই ধাপ কলায় সংঘটিত হয়। অন্তঃশ্বসনে দেহকোষ দ্বারা বিপাকের জন্য অক্সিজেন ব্যবহার করা এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেওয়া হয়। যে প্রক্রিয়া দ্বারা রক্ত থেকে অক্সিজেন কলা-কোষে প্রবেশ ও কোষমধ্যস্থ খাদ্যের তরল পদার্থ রক্তের অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে এবং কোষ থেকে রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বিনিময় (Gaseous exchange) হয় তাকে অন্তঃশ্বসন বলে।
পারদর্শীতার মানদন্ডঃ
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস ও ইকুইপমেন্ট)
ক্রমিক | নাম | স্পেসিফিকেশন | সংখ্যা |
১ | ছবিযুক্ত বই | পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক | ১টি |
২ | বল পয়েন্ট কলম | কালো কালির | ১টি |
৩ | অনুবিক্ষণ যন্ত্র | নমুনা মতাবেক | ১টি |
৪ | মডেল | নমুনা মতাবেক | ১টি |
মালামাল (Materials)
ক্রমিক | নাম | স্পেসিফিকেশন | সংখ্যা |
১ | প্রযোজ্য নয় | প্রযোজ্য নয় | |
২ | প্রযোজ্য নয় | প্রযোজ্য নয় |
কোষের গঠন ও অঙ্গানু চিহ্নিত করার কৌশলসমূহ
১. ছবিতে চিহ্নিত অঙ্গানু গুলোর সনাক্ত করা
২. সনাক্তকৃত অঙ্গানু গুলোর নাম পাশে লিখা
৩. অঙ্গানুগুলোর কাজ উল্লেখ করা
কাজের ধারা
কাজের সতর্কতা নমুনা অনুযায়ী সাবধানতা অবলম্বন কর।
অর্জিত দক্ষতা/ফলাফল: নমুনা চিহ্নিত করে এর ব্যবহার বা কাজ উল্লেখ করতে সক্ষম হওয়া।
ফলাফল বিশ্লেষণ/মন্তব্য: বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।
আরও দেখুন...