এ অধ্যায় শেষে আমরা ধারণা নিতে পারব-
আমরা সবাই মিলে জাদুঘর/পুরোনো বিহার/বৌদ্ধধর্মীয় ঐতিহাসিক স্থানে একটি ফিল্ড ট্রিপে যাব। ফিল্ডট্রিপে যাওয়ার জন্য যা যা প্রস্তুতি নিতে হয় অথবা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, তা শিক্ষক থেকে জেনে নিয়ে নোট করে রাখ।
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে ঐ কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
ফিল্ড ট্রিপে যাওয়া সম্ভব না হলে আমরা ভার্চ্যুয়াল ট্রিপের মাধ্যমে বিকল্প অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে পারি।
তোমার ফিল্ডট্রিপের/বিকল্প অভিজ্ঞতাটি লেখো।
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে ঐ কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে। তিনি নেপালের তরাই অঞ্চলের বর্তমান উত্তর প্রদেশের বস্তি জেলার উত্তরে কপিলাবস্তু রাজ্যের শাক্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রাজা শুদ্ধোদন এবং মাতার নাম রানি মহামায়া। তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ গৌতম। তিনি ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে ছয় বছর কঠোর ধ্যান-সাধনার পর ৩৫ বছর বয়সে গয়ার অশ্বথ বৃক্ষমূলে মহাজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হন। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর তাঁর ধর্মমত প্রচার করে ৮০ বছর বয়সে কুশীনারায় পরিনির্বাণ (দেহত্যাগ) লাভ করেন। তাঁর প্রচারিত ধর্মমত পৃথিবীতে বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর ধর্ম প্রচার-প্রসারে যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন তন্মধ্যে রাজা বিম্বিসার রাজা অজাতশত্রু, রাজা প্রসেনজিৎ, শ্রেষ্ঠী অনাথপিডিক প্রমুখ অন্যতম।
বুদ্ধের সময় ভারতবর্ষ ষোলটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এই রাজ্যগুলোর প্রতিটিকে বলা হতো মহাজনপদ। এই মহাজনপদগুলোতে বুদ্ধ পরিভ্রমণ করে ধর্ম প্রচার করেছেন। মহাজনপদগুলো হলো যথাক্রমে: ১. অঙ্গ, ২. মগধ, ৩. কোশল, ৪, বজ্জি, ৫. কাসী, ৬. মল্ল, ৭. চেতী ৮. বৎস ৯. কুরু, ১০, পাঞ্চাল, ১১. মৎস্য, ১২. সুরসেন, ১৩. অশ্মক, ১৪. অবন্তি, ১৫. গান্ধার এবং ১৬. কম্বোজ। জনপদগুলোর মধ্যে মগধ, কোশল ও বজ্জি ছিল অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। এসব জনপদে বুদ্ধ বহুবার গমন করে তাঁর ধর্ম প্রচার ও বহু কুলপুত্রকে সঙ্ঘে দীক্ষাদান করেছেন।
বুদ্ধের সমকালীন রাজাদের মধ্যে যাঁরা বৌদ্ধধর্মের বিকাশে নানাবিধ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে রাজা বিম্বিসার, রাজা অজাতশত্রু, রাজা প্রসেনজিৎ ও শ্রেষ্ঠী অনাথপিণ্ডিক এবং রাজা বিশাখা অগ্রগণ্য। সিদ্ধার্থ গৌতম গৃহত্যাগের পর রাজা বিম্বিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। রাজা সিদ্ধার্থ গৌতমের সুন্দর সুগঠিত দেহ সৌষ্টব দেখে তাঁকে রাজগৃহে অবস্থান করে রাজ্যের অর্ধাংশে রাজত্ব করার অনুরোধ জানান। সিদ্ধার্থ মহা উপাসিকা বিম্বিসারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন; কিন্তু রাজার অনুরোধ অনুযায়ী আশ্বস্ত করেন যে, বোধিজ্ঞান লাভের পর তিনি রাজগৃহে আসবেন। এরপর সম্বোধি প্রাপ্তির পর বুদ্ধ দ্বিতীয় বর্ষে রাজগৃহে আগমন করলে রাজা বিম্বিসার তাঁকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করে তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর বিম্বিসার তাঁর জীবনব্যাপী বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারের জন্য আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন। পিটকগ্রন্থ থেকে জানা যায়, বুদ্ধ ভিক্ষু-সঙ্ঘের বহু বিধিবিধান রাজার পরামর্শক্রমে স্থির করতেন। ভিক্ষু-সঙ্ঘের উপোসথ ও বর্ষাবাস, অধিষ্ঠান-বিধি রাজা বিম্বিসারের অনুরোধক্রমেই বুদ্ধ প্রবর্তন করেছিলেন। কথিত আছে, বুদ্ধ বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির দ্বিতীয় বর্ষে রাজগৃহে আগমন করলে রাজা বিম্বিসার উক্ত দিনেই বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সঙ্ঘের বসবাসের জন্য 'বেলুবন' (বেণুবন) নামক উদ্যানটি বুদ্ধকে দান করেন। এটি ছিল প্রথম বৌদ্ধ বিহার বা সংঘারাম। রাজা বুদ্ধের কাছে সদ্ধর্ম শ্রবণ করে শ্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হন। তার স্ত্রী রানি ক্ষেমা দেবীও বুদ্ধের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণ করেছিলেন; ধ্যান-সাধনা করে তিনি অচিরে অর্হত্ত্ব ফল লাভ করেন। বুদ্ধ তাকে 'প্রজ্ঞায় অগ্রগণ্য' অগ্রশ্রাবিকার স্থান দিয়েছিলেন।
রাজা বিম্বিসার একজন সুদক্ষ, বিচক্ষণ ও সফল শাসক ছিলেন। তিনি তাঁর চিকিৎসক জীবককে বুদ্ধের চিকিৎসা সেবায় নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর শাসনামলে শুধু ভিক্ষুসঙ্ঘ নয়, প্রজাসাধারণসহ অন্য ধর্মানুসারী তীর্থিকগণও পরম সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি জনসাধারণের কল্যাণে বহু জনহিতকর কাজ করেছিলেন।
রাজা অজাতশত্রু ছিলেন বিম্বিসারের পুত্র। বুদ্ধের পরিনির্বাণের আট বছর পূর্বে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। অজাতশত্রু প্রথমে দেবদত্তের প্ররোচনায় বুদ্ধবিদ্বেষী ছিলেন। এমনকি বুদ্ধের প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিলেন। পিতা বিম্বিসারকে কারাগারে নিক্ষেপ করে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের ফলে রাজা বিম্বিসার কারাগারে যেদিন মৃত্যুবরণ করেন, সেদিন অজাতশত্রুর এক পুত্রসন্তানের জন্ম হলে তিনি পিতৃস্নেহ অনুভব করে অনুশোচনায় মর্মাহত হয়ে পড়েন। তাঁর এই মর্মবেদনা উপশমের জন্য রাজবৈদ্য জীবকের পরামর্শক্রমে বুদ্ধের নিকট উপনীত হন। বুদ্ধের নিকট 'সাম-ফলসুত্ত' দেশনা শুনে অজাতশত্রু বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করেন। তখন থেকে তিনি বুদ্ধের একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে পড়েন। বুদ্ধের ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর তিনি আজীবন সদ্ধর্মের প্রচার প্রসার ও কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি বহু বিহার নির্মাণ ও সংস্কার করেছিলেন। বুদ্ধের পরিনির্বাণের সংবাদ শুনে তিনি অতিশয় মর্মাহত হয়ে পড়েন এবং তাঁর দেহাবশেষের অংশ (দেহধাতু) এনে সুরম্য চৈত্য নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে মহাকাশ্যপ স্থবিরের পরামর্শক্রমে রাজা অজাতশত্রু বিভিন্ন রাজ্যের বুদ্ধের পুতাস্থিসমূহ সংগ্রহ করে রাজগৃহের দক্ষিণদিকে নিধান করেছিলেন।
রাজা অজাতশত্রুর উল্লেখযোগ্য অবদান হলো বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বুদ্ধবাণীসমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর বুদ্ধের উপদিষ্ট ধর্ম বিনয় সংগ্রহ ও সংক্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয়। মহাকাশ্যপ প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ভিক্ষু সঙ্ঘের পরামর্শক্রমে অজাতশত্রু রাজগৃহের সপ্তপণী গুহায় ধর্মবিনয়ে পারঙ্গম পাঁচশত অর্হৎ ভিক্ষুর সমন্বয়ে প্রথম সংগীতি আয়োজন করেন। এতে বুদ্ধবাণীসমূহ আবৃত্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে 'ধম্ম-বিনয়' নামে সুবিন্যস্ত করে সংগৃহীত হয়। রাজা অজাতশত্রুর অবদান বৌদ্ধধর্মের বিকাশে নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়। তাঁর বত্রিশ বছর রাজত্বকালে তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রভূত কল্যাণ সাধন করেছেন।
কোশল রাজা প্রসেনজিৎ ছিলেন বুদ্ধের সমবয়সী। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা গ্রহণের পর তিনি বুদ্ধের একনিষ্ঠ ভক্ত হন এবং আজীবন বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। সংযুক্ত নিকায়ে রাজা প্রসেনজিতকে একজন অত্যন্ত সফল, নিরহংকার ও প্রজাবৎসল শাসকরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর প্রধান মহিষী মল্লিকাদবী বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাসম্পন্ন ছিলেন। তিনিই রাজাকে বুদ্ধের কাছে নিয়ে যান। বুদ্ধের উপদেশ শুনে রাজা শ্রদ্ধান্বিত হয়ে তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন, 'ভন্তে, আজ হতে আমাকে আপনার উপাসক হিসেবে গ্রহণ করুন; আমি আপনার শরণ গ্রহণ করলাম।' রাজা প্রতিদিন তিনবার বুদ্ধ ও ভিক্ষু সঙ্ঘকে দর্শন করার জন্য বিহারে যেতেন। তখন ধর্মীয় আলোচনার সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হতো। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বুদ্ধ ও অজাতশত্রুর মধ্যে আন্তরিক হৃদ্যতা ছিল এবং রাজা বুদ্ধকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। বুদ্ধ ও রাজা উভয়ে কোশলজাত ক্ষত্রিয় বংশের বলে রাজা গৌরববোধ করতেন। রাজা প্রসেনজিৎ 'রাজাকারাম' নামে একটি বিহার নির্মাণ করে বুদ্ধকে দান করেছিলেন। তিনি প্রতিনিয়ত বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করতেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে তাঁর দানকে 'অসমদান' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত রাজন্যবর্গ ছাড়া যে সকল রাজা বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে রাজা উদয়ন, রাজা চন্দ্র প্রদ্যোত, রাজা পুরুসাতি, রাজা রুদ্রায়ন অন্যতম। তাঁরা সকলেই বুদ্ধের একান্ত ভক্ত ছিলেন এবং বৌদ্ধধর্মের বিকাশে বিহারাদি নির্মাণসহ নানাবিধ কার্য সম্পাদন করেছিলেন।
বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও বিকাশ সাধনে শ্রাবস্তীর শ্রেষ্ঠী অনাথপিণ্ডিক এবং মহোপসিকা বিশাখার অবদানও উল্লেখযোগ্য। অনাথপিণ্ডিক ছিলেন শ্রাবস্তীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি রাজগৃহের এক বন্ধুর মাধ্যমে বুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত হয়ে বুদ্ধের শরণাগত হন। শ্রাবস্তীর জেত রাজকুমারের একটি মনোরম উদ্যান ছিল। শ্রেষ্ঠী উক্ত উদ্যান ক্রয় করে বিহার নির্মাণ করে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু-সঙ্ঘকে দান করার জন্য জেত কুমারের নিকট প্রস্তাব করলেন। জেত রাজকুমার উক্ত উদ্যানজুড়ে স্বর্ণমুদ্রা বিস্তারের বিনিময়ে বিক্রয় করতে রাজি হলেন। আঠার কোটি স্বর্ণমুদ্রা বিছানোর পর কিছু পরিমাণ স্থান অনাবৃত ছিল। অবস্থায় কুমার উক্ত অনাবৃত স্থান নিজে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আঠার কোটি স্বর্ণমুদ্রায় আবৃত স্থান শ্রেষ্ঠীকে বিক্রি করলেন। শ্রেষ্ঠী আরো আঠার কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়ে সেই উদ্যানে একটি মনোরম সুরম্য বিহার নির্মাণ করে আরো আঠারো কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়ে তিন মাস ব্যাপী মহোৎসবের মাধ্যমে উক্ত বিহার বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করেন। পালি সাহিত্যে এই বিহারের নাম 'অনাথপিণ্ডিকের জেতবনারাম'। ভগবান বুদ্ধ এই বিহারে উনিশ বর্ষা অবস্থান করে বহু ধর্ম বিনয় প্রজ্ঞাপ্ত করেছিলেন। অপরদিকে শ্রাবস্তীর মিগার শ্রেষ্ঠীর পুত্র পুণ্যবর্ধনের স্ত্রী বিশাখা বাল্যকাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা ছিলেন। তিনি মাত্র সাত বছর বয়সে স্রোতাপত্তিফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বিশাখার শ্বশুর বাড়ির সকলেই নগ্ন তীর্থিকদের অনুসারী ছিলেন। বিশাখার প্রচেষ্টায় তাঁরা বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশাখার অবদান অসামান্য। তিনি তাঁর নয় কোটি মূল্যের মহালতা স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে 'পূর্বারাম' নামে একটি মহাবিহার নির্মাণ করে দান করেন। তিনি প্রতিদিন তিনবার বিভিন্ন খাদ্য ভোজ্য ও পূজার উপকরণ নিয়ে বিহারে যেতেন। তিনি বুদ্ধের কাছে আটটি বর নিয়েছিলেন; তিনি প্রতিদিন পাঁচ শ ভিক্ষুকে অন্নদান করতেন, আগন্তুক ভিক্ষুকে আহার্যদান করতেন, অসুস্থ ভিক্ষুর ঔষধ-পথ্য দান ও সেবা শুশ্রুষা করতেন, বর্ষা চীবর দিতেন এবং ভিক্ষুসঙ্ঘের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি দান করতেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে তিনি 'মহা-উপাসিকা বিশাখা' নামে পরিচিত।
বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে মৌর্যসম্রাট মহামতি অশোকের অবদান এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মৌর্য বংশের প্রথম সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তাঁর মন্ত্রী চাণক্যের (কৌটিল্য) সহায়তায় নন্দবংশের উচ্ছেদ সাধন করে মগধের সিংহাসন অধিকার করেন এবং এক বিশাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। তাঁর রাজ্যসীমা দক্ষিণে মহীশূর, উত্তর-পশ্চিমে পারস্যের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি একজন সুদক্ষ সামরিক সংগঠক ও প্রশাসক ছিলেন। তিনি নিজে জৈন ধর্মের অনুসারী হলেও তাঁর রাজত্বকালে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তাঁর পুত্র বিন্দুসারের ওপর রাজত্বভার অর্পণ করে মহীশূরে চলে যান।
বিন্দুসার অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে রাজ্য শাসন করেছিলেন। তিনি পিতার মতো পারস্য সীমান্তের গ্রিকদের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন শান্তিকামী ও শিক্ষার প্রতি অনুরাগী। বিন্দুসারের রাজত্বকালে তক্ষশীলায় একবার প্রজাবিদ্রোহ হলে তিনি তাঁর পুত্র অশোককে বিদ্রোহ দমনে পাঠিয়েছিলেন। বিন্দুসারের অনেক পুত্র কন্যা ছিল। পঁচিশ বছর রাজত্ব করার পর বিন্দুসারের মৃত্যু হলে অশোক সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে মহামতি সম্রাট অশোকের অবদান অনেক। অশোক প্রথম জীবনে বৌদ্ধধর্মের প্রতি তেমন অনুরাগী ছিলেন না। পিতার মৃত্যুর পর অশোক কলিঙ্গ দেশ জয় করতে যান যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং দেড় লক্ষ মানুষ আহত ও বন্দি হয়। যুদ্ধের বিভীষিকা দেখে অশোক ভীষণভাবে মর্মাহত হন। তারপর ন্যাগ্রোধ শ্রামণের কাছে বুদ্ধবাণী শুনে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধধর্মের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনে আত্মনিয়োগ করেন। তখন তাঁর নাম হয় 'ধর্মাশোক'। প্রকৃতপক্ষে কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোকের জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে। এই যুদ্ধ ছিল মৌর্যযুগে শেষ বৃহৎ যুদ্ধ। এরপর ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়; দিগ্বিজয়ের পরিবর্তে শুরু হয় ধর্মবিজয়।
অশোক জনসাধারণের মধ্যে ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে, পর্বতের গায়ে গুহায় বুদ্ধের অনুশাসন খোদাই করে প্রচার করার ব্যবস্থা করেন। এসব উপদেশের মধ্যে প্রাণিহত্যা থেকে বিরতি, জীবগণের ক্ষতিসাধন থেকে বিরতি, মাতা-পিতা ও গুরুজনের সেবা ও গৌরব করা, শ্রামণ-ব্রাহ্মণ ও গরিবদুঃখী জনকে দান করা, ভৃত্যদের প্রতি সদয় থাকা, মিতব্যয়ী হওয়া ইত্যাদি অন্যতম। অশোকের এসব খোদিত উপদেশ বাণীকে - 'শিলালিপি' বলা হয়। অশোক সব ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন। তিনি ধর্মগুরুকে মুক্ত হস্তে দান করতেন। তিনি ভগবান বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দর্শন ও চিহ্নিত করে বিহার, স্তম্ভ ও চৈত্য নির্মাণ করেন। অশোক তাঁর রাজ্যে বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধের দেহাস্থি প্রতিষ্ঠা করে স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। বুদ্ধের ৮৪ হাজার ধর্মস্কন্ধকে স্মরণ ও পূজা করার জন্য অশোক রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৮৪ হাজার স্তম্ভ বা চৈত্য ও বিহার নির্মাণ করেন। অশোকের আর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির আয়োজন। এটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানী পাটলিপুত্রে। এই সংগীতির মাধ্যমে বৌদ্ধ সঙ্ঘ কলুষমুক্ত হয় এবং বহির্ভারতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য ধর্মদূত প্রেরণ করা হয়। অশোকের পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে শ্রীলংকায় একটি বোধিবৃক্ষের শাখাসহ পাঠানো হয়। এ বোধিবৃক্ষের শাখা শ্রীলংকার অনুরোধপুরে রোপণ করা হয়, যেটি এখনো বিদ্যমান।
মহামতি অশোক বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারের জন্য ধর্মমহামাত্র, পুলিসে, রজ্জুক, যুক্ত প্রভৃতি উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নিয়োগ করেছিলেন। তাঁরা রাজ্যে বিভিন্ন ধর্মসহ বৌদ্ধধর্মের উন্নয়নে তদারকি করতেন। অশোকের সময়েই ভারতবর্ষ ছাড়াও জাভা, সুমাত্রা, তিব্বত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে ধর্ম প্রচারক প্রেরণ করেছিলেন। তিনি দেবপ্রিয় (দেবানংপিয়) অশোক নামেও খ্যাত।
মৌর্য সাম্রাজ্যের অবসানের পর শুঙ্গ বংশীয় রাজারা মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁরা বৌদ্ধধর্মের প্রতি সদয় ছিলেন না। শুঙ্গ বংশের পর মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন কুষাণ বংশীয় রাজন্যবর্গ। এ বংশের শ্রেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন সম্রাট কনিষ্ক। সম্রাট অশোকের মতো তিনি প্রথম জীবনে বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরাগী ছিলেন না। স্থবির পার্শ্বকের সংস্পর্শে এসে তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রবল অনুরাগী হন এবং বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে আপ্রাণ প্রয়াসী হন। সম্রাট কণিষ্ক খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন ভিক্ষুসঙ্ঘ বিভিন্ন নিকায় ও মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। সম্রাট কণিষ্ক বিভিন্ন নিকায়ের পণ্ডিত ও প্রাজ্ঞ ভিক্ষুদের জলান্ধরে সমবেত করে সংগীতির আয়োজন করেন। তিনি এখানে কুণ্ডলবন নামে এক বিশাল বিহার নির্মাণ করে সংগীতির ব্যবস্থা করেন। এটি বৌদ্ধ সাহিত্যে 'কণিষ্ক সংগীতি' নামে অভিহিত। এ সংগীতির সভাপতি ছিলেন মহাপন্ডিত বসুমিত্র এবং সহসভাপতি ছিলেন অশ্বঘোষ। এতে পাঁচশ জন ভিক্ষু অংশগ্রহণ করেন। এই সংগীতিতে পালি ভাষার পরিবর্তে বুদ্ধবাণী সংস্কৃত ভাষায় সংকলন করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় তিন লক্ষ শ্লোকে রচিত বৌদ্ধ শাস্ত্র উপদেশ, বিভাষা ও অভিধর্ম ভাষ্য নামক তিনখানা ভাষ্যগ্রন্থ সংকলিত হয়। সংগীতি শেষে বিভাষা শাস্ত্রগুলো তাম্রপটে খোদাই করে একটি লোহার বাক্সে আবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়। দুর্ভাগ্য যে, সেই তাম্রপটগুলোর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
কণিষ্ক সংগীতি বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে 'চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি' নামে অভিহিত। এ সংগীতিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘ প্রধান দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি হীনযান বা থেরবাদ সম্প্রদায়, অপরটি মহাযান বা মহাসাঙ্ঙ্খিক সম্প্রদায়। এ দুটি সম্প্রদায় এখনো বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান। এই সংগীতিতে মূলত মহাযান পন্থী ভিক্ষুরাই প্রাধান্য পায়। থেরবাদী কোনো গ্রন্থে এ সংগীতিকে স্বীকার করা হয়নি। চতুর্থ সংগীতির পর থেকে মহাযান ধর্মমতের ব্যাপক প্রচার- প্রসার ঘটে। সম্রাট কনিষ্কও মহামতি অশোকের মতো চতুর্থ সংগীতি শেষে বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক প্রেরণ করেন, যার ফলে চীন, জাপান, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রচার লাভ করে। সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রেও কণিষ্কের অবদান অমরতা লাভ করেছে। পার্শ্বক, বসুমিত্র, অশ্বঘোষ, নাগার্জুন, সংঘরক্ষক, মাঠর প্রমুখ খ্যাতনামা পণ্ডিত ও সাহিত্যিকগণ তাঁর রাজসভা অলংকৃত করে রাখতেন। কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বপ্রথম বুদ্ধমূর্তির নির্মাণ ও বৌদ্ধ শিল্পকলার বিকাশ ঘটে। গান্ধার শিল্পকলায় বুদ্ধমূর্তির নির্মাণ সর্বপ্রথম কণিষ্কের সময়ে শুরু হয়। মথুরা শিল্পকলা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও কণিষ্কের অবদান রয়েছে।
কুষাণ যুগের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কণিষ্ক একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধধর্ম, সাহিত্য ও বৌদ্ধ শিল্পকলার বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন বটে, অন্যান্য ধর্মের প্রতিও তিনি উদারনীতি অবলম্বন করতেন। সম্রাট কণিষ্ক ধর্ম-মত নির্বিশেষে সকলের গ্রহণযোগ্য নৃপতি ছিলেন।
মগধকে কেন্দ্র করে খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের প্রথমার্ধে গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্রীগুপ্ত। এ বংশের শাসকগণ ছিলেন ব্রাহ্মণ্যধর্মের সমর্থক। তবে তাঁরা বৌদ্ধধর্ম ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ও উদার ছিলেন। গুপ্ত যুগে কোনো কোনো সম্রাট বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। শ্রীগুপ্ত বরেন্দ্রে মূগস্থাপন স্তূপের কাছে চীনা ভিক্ষুদের জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।
শ্রীগুপ্তের পুত্র সমুদ্র গুপ্ত একজন দক্ষ শাসক ও যোদ্ধা ছিলেন। তিনি গ্রন্থকার পন্ডিত বসুবন্ধুর কাছে বৌদ্ধদর্শন শিক্ষা গ্রহণ করেন। সিংহল রাজ মেঘবর্ণের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। মেঘবর্ণের অনুরোধক্রমে তিনি বুদ্ধগয়ার একটি বিহার নির্মাণের অনুমতি দেন। সমুদ্র গুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন (৩৯৯-৪১০ খ্রি.) ভারত ভ্রমণে আসেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনিতে দ্বিতীয় সমুদ্রগুপ্তের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার বিবরণে জানা যায়, তখন বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম সগৌরবে বিরাজ করত। বহু বিহারে শত শত বৌদ্ধ ভিক্ষু বাস করতেন। মথুরা, বারাণসীসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা অব্যাহত ছিল। গুপ্তযুগে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চাসহ শিল্প ভাস্কর্যে চরম বিকাশ সাধিত হয়েছিল। নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত গৌরব ও সমৃদ্ধি গুপ্তযুগেই ঘটেছিল।
হিউয়েন সাঙের বিবরণে জানা যায়, গুপ্তরাজ বংশের পাঁচজন রাজা নালন্দায় পাঁচটি সংঘারাম নির্মাণ করেছিলেন। তাঁরা একটি সুউচ্চ মন্দিরও নির্মাণ করেন। এখানে বালাদিত্য নির্মিত সংঘারামটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। নালন্দা বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ পায় গুপ্তযুগে। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের শেষ দিক থেকে এটি ধর্মীয়, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বখ্যাতি লাভ করে এবং এটির জনপ্রিয়তা ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলেও এখানে বেদ, বেদান্ত, দর্শন, ব্যাকরণ, উপনিষদ, মীমাংসা, চিকিৎসা শাস্ত্র, গণিত, যোগশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো। হিউয়েন সাঙ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন।
গুপ্তযুগে বৌদ্ধ শিল্পকলারও ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। গুপ্তযুগের বৌদ্ধ স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন মহারাষ্ট্রের অজন্তা, ইলোরা, ঔরঙ্গাবাদ, মধ্যপ্রদেশের বাঘ গুহায় দেখা যায়। অজন্তার গুহায় অন্তত বিশটি বিহার বা সংঘারাম গুপ্তযুগে নির্মিত। এখানকার গুহাগুলো চমৎকার অলংকার ভূষিত। গুপ্তযুগে বৌদ্ধ ভাস্কর্যের প্রধান দুটি কেন্দ্র হলো মথুরা ও সারনাথ। মথুরায় লাল বেলে পাথরে এবং ঈষৎ হলুদ বর্ণে নির্মিত বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বের মূর্তি অতি চমৎকার। গুপ্তযুগে নির্মিত বহু বৌদ্ধমূর্তি মথুরায় পাওয়া গেছে।
সারনাথে পাওয়া বুদ্ধমূর্তিগুলো গুপ্তযুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্যের নিদর্শন। মূর্তিগুলোর মধ্যে প্রশান্তি ও সন্তোষের এক অপূর্ব ছবি ফুটে উঠেছে। সারনাথে বুদ্ধের ধর্ম প্রচারের বিষয়টি একটি উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তির দ্বারা স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। বজ্রাসনে উপবিষ্ট এই মূর্তিটিতে হাত দুটি ধর্মচক্র মুদ্রায় বুকের কাছে তোলা রয়েছে। এর মধ্যে আধ্যাত্মিকতার বহিঃপ্রকাশ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। বিহারের গ্রামে চুনারের বেলে পাথরে নির্মিত পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের একটি বুদ্ধমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এ মূর্তিটির দেহসৌষ্ঠব অতি মসৃণ, মার্জিত, সুকুমার অঙ্গসৌষ্ঠব, শান্তসৌম্য ধ্যান গম্ভীর দৃষ্টি এবং দেহে রেখা প্রবাহের ধীর সংযত গতি সমকালের শ্রেষ্ঠ শিল্প নিদর্শন।
অজন্তার গুহাগুলোর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটি গুহায় গুপ্তযুগের চিত্রশিল্প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম গুহায় অঙ্কিত বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের পদ্মপাণি মূর্তিটি অনুপম সৌন্দর্যে চিত্রায়িত। মূর্তিটির ভঙ্গিমা ও চিত্রণপ্রণালি অতি চমৎকার।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর পুষ্যভূতি বংশীয় রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বানভট্টের হর্ষচরিত, চীনা পরিব্রাজকদের বিবরণ, বিভিন্ন শিলালিপি ও অনুশাসন থেকে জানা যায় যে, হর্ষবর্ধন এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম জীবনে তিনি শৈবধর্মের অনুসারী ছিলেন, পরে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ দীর্ঘ ষোল বছর (খ্রিষ্টীয় ৬২৯-৬৪৫ অব্দ) ভারতবর্ষে অবস্থান করে বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং সারা ভারতবর্ষ ভ্রমণ করে বৌদ্ধধর্মের অবস্থা অবলোকন করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, হীনযান ও মহাযান ধর্মমতের দশ হাজারের অধিক ভিক্ষু বিভিন্ন বিহারে বাস করতেন। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, হর্ষবর্ধন বৌদ্ধ পন্ডিত ও জ্ঞানী-গুণীদের সভা আহ্বান করে ধর্মালোচনা শ্রবণ করতেন এবং যুক্তিতর্কের আয়োজন করতেন। তর্কে বিজয়ীকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করতেন। তিনি দেশে পশুহত্যা নিষেধ করেছিলেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সরাইখানা, হাসপাতাল, বিশ্রামাগার প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। তিনি দেশের সর্বত্র বহু বিহার ও চৈত্য নির্মাণ করেছিলেন। হর্ষবর্ধন এলাহাবাদের প্রয়াগে একাট বিশাল মন্দিরযুক্ত বিহার নির্মাণ করে এক বিশাল মেলার আয়োজন করেন। এই মেলা প্রতি পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হতো। এই মেলায় বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বিভিন্ন ধর্মের সাধু-সন্ন্যাসীকে আহ্বান করে ধর্মালোচনা করা হতো এবং অকাতরে দান দেওয়া হতো। রাজা হর্ষবর্ধন এ সময় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু এবং দীনদরিদ্রকে উদার হস্তে দান করতেন, এমনকি নিজের পরিধেয় বস্ত্র পর্যন্ত দান করে নিঃস্ব হয়ে ফিরে যেতেন।
হর্ষবর্ধন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এ সময়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বৌদ্ধশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বৈষয়িক বিদ্যাশিক্ষার প্রধান পীঠস্থান। তখন এটির মহা আচার্য বা অধ্যক্ষ ছিলেন বাঙালি দার্শনিক ভিক্ষু শীলভদ্র। তিনি চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের গুরু ছিলেন। হর্ষবর্ধন নালন্দায় একটি বিহার ও পিতলের মন্দির নির্মাণ করান। বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে রাজা হর্ষবর্ধনের অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
রাজা হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর প্রায় শতাধিক বছর বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসার একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন সমগ্র ভারতবর্ষে বিশেষ করে বাংলাদেশে ভীষণ রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তখন সমগ্র দেশে কোনো রাজা ছিল না। চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করত। এ অবস্থাকে বলা হতো 'মাৎস্যন্যায়'। মাৎস্যন্যায় বলতে ন্যায়-নীতিহীন অবস্থাকে বুঝায়। এ সময়ে কোনো ন্যায়-নীতি বলতে কিছু ছিল না। দেশের সর্বত্র দুর্নীতি অবিচার অনাচার বিরাজ করতো। এমন দুর্বিষহ অবস্থায় বাংলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দে গোপাল নামের একজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিকে রাজপদে অভিষিক্ত করেন। তিনি পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হলেন বাংলার প্রথম নির্বাচিত রাজা। তিনি বিশ বছর রাজত্ব করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ধর্মপাল রাজপদে অভিষিক্ত হয়ে পঁয়ত্রিশ বছর রাজত্ব করেন। ধর্মপালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দেবপাল রাজা হন। এভাবে পালবংশীয় রাজারা প্রায় চার শ বছর রাজত্ব করেন। পরবর্তী রাজাদের মধ্যে প্রথম মহীপাল, নয়পাল, দ্বিতীয় মহীপাল, রামপাল, মদন পালের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাল বংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন গোবিন্দপাল। পালবংশের সব রাজাই ছিলেন বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের প্রতিও তারা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। গোপাল নালন্দায় একটি বিহার দান করেন এবং ওদন্তপুর মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। তিব্বতী ইতিহাসবিদ তারনাথ উল্লেখ করেছেন যে, ধর্মপাল দেশে পঞ্চাশটির বেশি বিহার নির্মাণ করেছিলেন, এর মধ্যে বিক্রমশীলা মহাবিহার ছিল আন্তর্জাতিক মানের। এই বিহারের চারদিকে ১০৭টি ছোট মন্দির ছিল। এটি ছিল নালন্দার মতো একটি উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র। এখানে ১১৪ জন অধ্যাপক (আচার্য) হাজার হাজার দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতেন। ধর্মপালের আর একটি স্মরণীয় কীর্তি নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরের সোমপুর মহাবিহার প্রতিষ্ঠা। এটি ভারতবর্ষে আবিষ্কৃত একক বৃহত্তম বিহার। দেবপালের পৃষ্ঠপোষকতায় নালন্দা মহাবিহার, বিক্রশীলা মহাবিহার ও সোমপুর মহাবিহার পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রথম মহীপাল, নয়পাল, রামপাল প্রমুখ পাল বংশীয় রাজন্যবর্গ প্রত্যেকে বৌদ্ধধর্ম, শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি ইত্যাদির বিকাশে সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তাই পালবংশের রাজত্বকালকে বৌদ্ধ ধর্মের 'স্বর্ণযুগ' বলা হয়।
পাল রাজাদের শাসনামলে বাংলার বিখ্যাত পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর তিব্বত রাজের আমন্ত্রণে তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন।
পাল যুগে বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ বা বৌদ্ধ গান ও দোহা রচিত হয়। চর্যাপদের রচনাকাল খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে একাদশ শতক বলে বিবেচনা করা হয়। পাল রাজাদের সময়ে বৌদ্ধ স্থাপত্য ও শিল্পকলারও প্রভৃত উন্নতি লাভ করে।
বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম কখন এবং কীভাবে প্রচার-প্রসার লাভ করেছে তার সঠিক তথ্য কিংবা সন-তারিখ নির্ণয় করা কঠিন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বুদ্ধ কর্ণসুবর্ণে ও সমতটে সাত দিন এবং পুণ্ড্রবর্ধনে তিন মাস অবস্থান করে ধর্মপ্রচার করেছিলেন। কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও পুণ্ড্রবর্ধন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের নাম, যেগুলো বুদ্ধের জন্মস্থান মগধের কাছাকাছি। কাজেই গৌতম বুদ্ধের বাংলায় আগমন করে ধর্ম প্রচার করা অত্যন্ত স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। দীপবংস ও মহাবংস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সম্রাট অশোক তৃতীয় সংগীতির পর সোণ ও উত্তর থেরকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য মিয়ানমার পাঠিয়ে ছিলেন। তাঁরা চট্টগ্রাম হয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার সময় এখানে বুদ্ধের ধর্ম প্রচার করেন। এছাড়া পুণ্ড্রবর্ধন সম্রাট অশোকের শাসনাধীন ছিল বলে ধারণা করা হয়। অশোক ভারতবর্ষের এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন। ধারণা করা যায়- এসময়ে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। এছাড়া বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নস্থল সাঁচীতে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে প্রজ্ঞাপ্ত একটি অনুশাসন থেকে জানা যায় বাংলার পুণ্ড্রবর্ধন অঞ্চলের ধর্মদিন্না নামের এক উপাসিকা ও ঋষিনন্দন নামের একজন উপাসক সাঁচীস্তূপের তোরণ ও দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থদান করেছিলেন। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে নির্মিত বৌদ্ধ প্রত্নতীর্থ নাগার্জুনকোন্ডায় প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, সে সময় বাংলা বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান প্রাণকেন্দ্র ছিল।
খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাল বংশ, খড়গ বংশ, দেব বংশ ও চন্দ্র বংশের রাজারা রাজত্ব করতেন। পাল রাজবংশের রাজারা সকলেই ছিলেন বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় সমগ্র বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ ঘটে। খড়গ বংশের চারজন রাজা সমতটে রাজত্ব করতেন। এই বংশের তৃতীয় রাজা রাজভট্ট ছিলেন ত্রিরত্নের প্রতি অতি শ্রদ্ধাশীল। তখন সমতটে চারহাজার ভিক্ষু-ভিক্ষুণী বাস করতেন। এ বংশের রাজারা বহু বিহার ও বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন।
খড়গ বংশের পর দেববংশীয় রাজারা খ্রিষ্টীয় ৭২০-৮১৫ অব্দ পর্যন্ত সমতটে রাজত্ব করেন। এ বংশের শান্তিদেব, বীরদেব, আনন্দদেব ও ভবদেব নামে চারজন রাজা রাজত্ব করেন। তাঁরা সকলেই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং তাঁদের রাজধানী ছিল সমতটের দেবপর্বতে।
এদিকে নবম শতকের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামে দেববংশীয় তিনজন বৌদ্ধ রাজা শাসন করেছিলেন। তাঁরাও বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। এ বংশের রাজা কান্তিদেবের সময়ের রাজধানী বর্ধমানপুরে ১৯২৭ সালে ৬৬টি পিতলের বুদ্ধমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।
খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতকে পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলাদেশে সেন ও বর্মণ বংশের হিন্দু রাজারা শাসনভার গ্রহণ করেন। এ সময়ে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুসারীরা পৃষ্ঠপোষকতা পেতে থাকে, অপরদিকে বৌদ্ধরা বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হতে থাকে। এ সময়ে বৌদ্ধরা তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে পারত না; ফলে বৌদ্ধরা ধীরে ধীরে হীনবল হয়ে পড়ে। বর্মণযুগে জাতবর্মার সময়ে সোমপুর মহাবিহার ধ্বংস হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
আবার ত্রয়োদশ শতকে সেন ও বর্মনযুগের পর বাংলাদেশ ত্রয়োদশ শতকের প্রথম পাদে তুর্কিসেনাদের দখলে চলে যায়। এ সময় বৌদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পালবংশীয় রাজাদের পতনের পর আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলায় বৌদ্ধদের ইতিহাস অনেকটা তমসাবৃত। এ সময়ে দুজন খ্যাতনাম বৌদ্ধ ভিক্ষুর অবদান সম্পর্কে জানা যায়। একজন হলেন চকরিয়ার চন্দ্রজ্যোতি মহাস্থবির খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতকে মগধবাসী দীপঙ্কর মহাস্থবিরের নিকট উপসম্পদা গ্রহণ করে তিনি নবীন বয়সে ধর্মবিনয় শিক্ষা করার জন্য ব্রাহ্মদেশের মৌলমেইনে গমন করেন। সেখানে বিশ বছর ধর্মবিনয় শিক্ষা করে সেদেশের দশজন ভিক্ষুসহ একখানা চক্রাসন, তিনটি ত্রিভঙ্গ বুদ্ধমূর্তি ও কয়েক খণ্ড বুদ্ধাস্থি নিয়ে আগরতলা হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি আগরতলার লালমাই পাহাড়ে উপনীত হয়ে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। চন্দ্রজ্যোতি মহাস্থবির সেখানে পাঁচ বছর অবস্থান করার পর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড পাহাড়ের উচ্চতম শিখরে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে তার সঙ্গে আনীত একটি বুদ্ধমূর্তি প্রতিস্থাপন করেন। তখন থেকে এই পাহাড় চন্দ্রশেখর পাহাড় নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর চন্দ্রজ্যোতি মহাস্থবির পটিয়া থানার অন্তর্গত শ্রীমতী নদীর তীরে হাইডমজা নামের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তির আমবাগানে উপনীত হন। হাইডমজা মহাস্থবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হন এবং তিন দিনব্যাপী ধর্মসভার আয়োজন করেন। ইতিমধ্যে হাইডমজা জানতে পারেন যে, চন্দ্রজ্যোতি মহাস্থবির চকরিয়া নিবাসী চেন্দির পুত্র। তিনি চেন্দির নিকট লোক মারফত পুত্রের আগমন সংবাদ প্রেরণ করেন।
পুত্রের আগমন সংবাদ শুনে পিতা তাঁকে সসম্মানে চকরিয়ায় নিয়ে যান এবং বিভিন্ন স্থানে সদ্ধর্ম প্রচারের ব্যবস্থা করেন। হাইডমজার অনুরোধক্রমে চন্দ্রজ্যোতি মহাস্থবির চক্রাসনটি তাঁকে প্রদান করেন। জমিদার হাইডমজা চক্রাসনটি প্রতিষ্ঠা করে তার ওপর একটি স্তূপ বা মন্দির নির্মাণ করেন। এই চক্রাসনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে বিশাল চক্রশালা মেলা বসে।
চন্দ্রজ্যেতি মহাস্থবির দ্বিতীয় বুদ্ধমূর্তি ঠেগরপুনি গ্রামে অবস্থানরত তাঁর পিতৃব্য রাজমঙ্গল মহাস্থবিরকে প্রদান করেন। রাজমঙ্গল মহাস্থবির সেই বুদ্ধমূর্তি বোধিবৃক্ষের উত্তর পাশে কাঠের গৃহ নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি এখনো 'বুড়া গোঁসাই' নামে হাজার হাজার নর-নারী কর্তৃক পূজিত হচ্ছেন। এই মূর্তিকে কেন্দ্র করে প্রতি মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে সপ্তাহব্যাপী বুড়া গোঁসাইয়ের মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
তৃতীয় বুদ্ধমূর্তিটি মহাস্থবিরের শিষ্য উরল স্থবিরকে প্রদান করেন। উরল স্থবির এটি চট্টগ্রাম শহরের রংমহল পাহাড়ে একটি চৈত্য নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠা করেন। কালক্রমে এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আসাম বেঙ্গল রেল কোম্পানির রাস্তা নির্মাণ করার সময় ত্রিভঙ্গ বুদ্ধমূর্তির উপরের অংশ পাওয়া যায় এবং এটি চট্টগ্রামের নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অষ্টাদশ শতকে কদলপুরের চাইঙ্গ স্থবির বৌদ্ধতীর্থ দর্শন করার জন্য বার্মা ভ্রমণে গমন করেন। তিনি রেজুন, প্রোম, মৌলমেন ভ্রমণ শেষে আরাকানের বিখ্যাত মহামুনি বিগ্রহ দর্শন করে অভিভূত হন। তিনি এরকম বিগ্রহ নির্মাণ করার জন্য এটির একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করে স্বদেশে প্রত্যাগমন করেন। স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে মহামুনি পাহাড়তলি গ্রামে আরাকানের মহামুনি বিগ্রহের অনুকরণে একটি মূর্তি নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষ কারিগর দিয়ে এটি নির্মাণ করাতে ছয় মাস সময় লেগেছিল। আরাকানের মহামুনি মূর্তির অনুকরণে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে এ বিগ্রহের নামকরণ করা হয় মহামুনি বিগ্রহ। পরবর্তী ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে বহু খ্যাতনামা ভিক্ষু সংঘের উপস্থিতিতে মহাসমারোহে বুদ্ধমূর্তির জীবন সঞ্চার করা হয়। এর পর চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে পক্ষকালব্যাপী মহামুনি মন্দির ও বিগ্রহকে কেন্দ্র করে বড়ুয়া, চাকমা, মারমাসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমাগমে বিশাল মেলা বসে। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলমান। এই মহামুনি মন্দির প্রতিষ্ঠায় কক্সবাজার এলাকার পালংয়ের ধর্মপ্রাণ জমিদার কুঞ্চধামাই এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র কেওজচাই চোধুরী সক্রিয় পৃষ্ঠাপোষকতা করেন।
বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধদের মধ্যে ছোট-বড় বহু নৃগোষ্ঠী রয়েছে। যেমন: বড়ুয়া, চাকমা, মারমা, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়ং, চাক, ওঁরাও ইত্যাদি। বড়ুয়া নৃগোষ্ঠী প্রধানত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা অঞ্চলে বাস করে, ওঁরাও নৃগোষ্ঠী উত্তরবঙ্গের রংপুর দিনাজপুর, রাজশাহী অঞ্চলে এবং অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর মানুষ বৃহত্তর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পটুয়াখালী অঞ্চলে বাস করেন। গবেষকগণ মনে করেন, বড়ুয়া বৌদ্ধরা বৈশালীর বজ্জি বংশীয়; বৌদ্ধদের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সময় তাঁরা পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এলাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। চাকমারা নিজেদের আদি নিবাস চম্পক নগর বলে দাবি করেন। এই চম্পক নগর ভারতের মগধে অবস্থিত ছিল। কুমিল্লা অঞ্চলের বৌদ্ধরা সিংহ পদবি ব্যবহার করেন। তাঁরা মনে করেন বুদ্ধের অপর নাম ছিল শাক্যসিংহ; তাঁরা এ কারণে সিংহ পদবি ব্যবহার করেন।
বর্তমানে পার্বত্য এলাকাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রচুর বৌদ্ধ বসবাস করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম প্রচার হওয়ার সময়ে চট্টগ্রামেও বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয়েছিল। আরাকানের প্রাচীন ইতিহাস 'রাজোয়াং' সূত্রে জানা যায় খ্রীষ্টীয় ১৪৬ অব্দে মগধ দেশের চন্দ্র-সূর্য নামে জনৈক সামন্ত যুবক বহুসংখ্যক অনুগামী সৈন্য সামন্ত নিয়ে চট্টগ্রাম ও আরাকান দখল করে একটি অখণ্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং আরাকানের ধান্যবর্তীতে রাজধানী স্থাপন করে চট্টগ্রাম ও আরাকান শাসন করেন। চন্দ্রসূর্যের সৈন্য সামন্ত ছিলেন বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। সংগতভাবে তাঁরা বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। চন্দ্রসূর্য বংশের ২৫ জন রাজা ৬২৪ বছর এবং পরে মহাসিংহ চন্দ্র বংশের রাজারা পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও আরাকান শাসন করেন। এ সময়ে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম ও আরাকানে দ্রুত বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটে, বহু বৌদ্ধ বিহার, চৈত্য প্যাগোডা নির্মিত হয়। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে শঙ্খ নদের উত্তরাঞ্চল এবং ১৭৫৬ খ্রীষ্টাব্দে দক্ষিণ চট্টগ্রামের নাফ নদীর উত্তর তীর পর্যন্ত মোগল সৈন্যরা দখল করে নেওয়ার ফলে চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশ মোগল সাম্রাজ্যভূক্ত হয়। এ সময়ে প্রতিকূল অবস্থার কারণে বহু রাখাইন বা মারমা সম্প্রদায় বৌদ্ধদের অধ্যুষিত আরাকনে আশ্রয় গ্রহণ করে। বড়ুয়া বৌদ্ধদের অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য হয়। প্রতিকূল পরিবেশে যারা কোনো প্রকারে নিজেদের ধর্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে জড়িয়ে টিকে ছিল, তারাই বড়ুয়া বৌদ্ধ।
ব্রিটিশ শাসনাধিকারের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ মোগল শাসনামলে চট্টগ্রামের বৌদ্ধ জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি আর্থসামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হীনবল হয়ে পড়ে। ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠানে ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করে। বৌদ্ধদের মধ্যে কিছু হিন্দু ও মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতির চর্চা করতে দেখা যায়। যেমন: দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, মনসাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, শনিপূজা ইত্যাদি সনাতন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতি চর্চা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ফকির-দরবেশের প্রতি বিশ্বাস, মাজারে মানত, সত্য পিরের শিরনি, বদর পিরের শিরনি, গাজীকালুর গানের আসর ইত্যাদি। বিদ্যমান ভিক্ষুসংঘের মধ্যেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শীলবিপত্তি ঘটে। ফলে বৌদ্ধধর্ম ও বিনয় চর্চায় বহু বৌদ্ধ-বিরুদ্ধ আচার অনুষ্ঠানের অনুপ্রবেশ ঘটে। এ অবস্থায় ১৮৫৬ সালের চৈত্র মাসে আরাকানের রাজগুরু সারমেধ মহাস্থবির তীর্থ ভ্রমণ উপলক্ষে সীতাকুন্ডে আগমন করেন। সেখানে চট্টগ্রামের তৎকালীন ভিক্ষুদের প্রধান রাধাচরণ মহাস্থবিরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। সাক্ষাতে উভয়ের মধ্যে চট্টগ্রামের বৌদ্ধধর্মের অবস্থা সম্পর্কে আলাপ আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে রাধাচরণ মহাস্থবির সারমেধ মহাস্থবিরকে চট্টগ্রাম ভ্রমণের আহবান জানান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সারমেধ মহাস্থবিরের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন আরাকানের রাজার বংশধর।
রাধাচরণ মহাস্থবিরের আমন্ত্রণে সারমেধ মহাস্থবির ১৮৫৬ সালে তীর্থদর্শন শেষে সীতকুণ্ড ও চক্রশালা ভ্রমণ করে পাহাড়তলী শাক্যমুনি বিহারে প্রায় দুই বছর অবস্থান করেন। এসময়ে তিনি বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করে বৌদ্ধধর্মের নিরিখে ধর্মচর্চা করার জন্য উপদেশ দিতেন। একইসঙ্গে ভিক্ষুসংঘের জীবনযাপনে বিনয়বহির্ভূত নীতি ত্যাগ করে বিনয়ানুকূল জীবন যাপনের উপদেশ দিতে লাগলেন। তাঁর ধর্মদেশনা বাংলা ভাষায় তর্জমা করে দিতেন বাংলা, পালি, সংস্কৃত, উর্দু ও ব্রহ্মভাষায় সুপণ্ডিত রাধাচরণ মহাস্থবির।
সারমেধ মহাস্থবির ১৮৬৪ সালে পুনরায় চট্টগ্রামে আসেন। এ সময় জ্ঞানালংকার মহাস্থবির (লালমোহন মহাস্থবির) সহ প্রথমে সাতজন ও পরে আরো অনেকে তাঁর কাছে পুনঃদীক্ষা গ্রহণ করেন। সারমেধ মহাস্থবিরের কাছে যাঁরা পুনরায় উপসম্পদা গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা সংঘরাজ নিকায় এবং যাঁরা উপসম্পদা গ্রহণ করেননি, তাঁরা 'মহাস্থবির নিকায়' নামে পরিচিতি লাভ করেন। এভাবে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশে দুটি নিকায়ের সৃষ্টি হয়, যা এখনও আছে।
বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের নবজাগরণের সূচনা হয় উনবিংশ শতকের শেষার্ধে। এ সময় ধর্ম সংস্কারে সংঘরাজ সারমেধ মহাস্থবিরের অবদান, বাংলাদেশের বৌদ্ধদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ১৮৮৭ সালে গুণামেজু মহাস্থবির, নাজির কৃষ্ণচন্দ্র চৌধুরী, ডা. ভগীরথ চন্দ্র বড়ুয়ার নেতৃত্বে 'চট্টল বৌদ্ধ সমিতি' (বর্তমানে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি) প্রতিষ্ঠা, ১৮৯২ সালে কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবির কলকাতায় বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা (Bengal Buddhist Association) গঠন করেন এবং মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথের কর্তৃক ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ (বর্তমানে বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি প্রচার সংঘ) প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফাউন্ডেশন, প্রান্তিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইত্যাদি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়; যেগুলো বাংলাদেশের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিঃসন্দেহে অবদান রেখে চলেছে।
বাংলাদেশের সামাজিক অগ্রগতি ও রাজনৈতিক সংগ্রামে বৌদ্ধদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলনে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর অনেকে অংশগ্রহণ করে জেল খেটেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন এমনকি ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। অবস্থানগত ও সংখ্যাগত কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৌদ্ধদের বিচরণক্ষেত্র সীমিত পরিসরে হলেও আনুপাতিক হারে তাদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়; বরঞ্চ এ বিষয়ে তাঁদের আত্মত্যাগ অত্যন্ত গৌরবের ও আত্মশ্লাঘার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বৌদ্ধরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, অনেকে শহিদ হয়েছেন, অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন; লুন্ঠিত হয়েছে বৌদ্ধদের ধন সম্পদ, অগ্নিদগ্ধ হয়েছে হাজার হাজার বৌদ্ধ ঘরবাড়ি, লাঞ্ছিত ও ধর্ষিত হয়েছে, অনেক বৌদ্ধ তরুণ-তরুণী। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর কবল থেকে সংসারত্যাগী বৌদ্ধ ভিক্ষু, বৌদ্ধ উপাসনালয় ও মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি লুন্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে বহু বৌদ্ধ নর-নারী পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রতিটি বৌদ্ধ গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র ও আশ্রয়কেন্দ্র। বাংলাদেশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি চাকমা, মারমা, বড়ুয়া, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খিয়াং প্রভৃতি বৌদ্ধ নৃগোষ্ঠীর বসবাস। আর বড়ুয়া বৌদ্ধরা প্রধানত বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ইত্যাদি সমতল অঞ্চলে বসবাস করেন। বাংলদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বিকাশ সাধনে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের পাশাপাশি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না এর ঘরে (✔) চিহ্ন দাও।
আরও দেখুন...