প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলের প্রচলন ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ফলকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায় । যেমন-
(ক) প্রধান প্রধান ফল, (খ) অ-প্রধান ফল, (গ) বাংলাদেশের উপযোগী বিদেশি ফল ।
(ক) প্রধান প্রধান ফল: আম, কলা, পেঁপে, আনারস, লিচু, নারিকেল, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আতা, শরীফা, তরমুজ, সফেদা, বেল, জাম, জামবুরা, কমলালেবু ইত্যাদি ।
(খ) অ-প্রধান ফল: আঙ্গুর, তাল, খেজুর, চালতা, আমড়া, তেঁতুল, আমলকি, জামরুল, করমচা, গোলাপ জাম, কমলালেবু, দেওফল, গাব, কামরাঙ্গা, জলপাই, ডুমুর, লটকন, ডালিম, চুকুর, তুতফল, বেতফল, ডেউয়া, পানিফল, বিলম্বী, সুপারি, অরবরই ইত্যাদি ।
(গ) বাংলাদেশের উপযোগী বিদেশি ফল: এ্যাভাকোডো, ফলসা, ল্যাংসাট, ট্রপিক্যালআপেল, স্টার ফুট, স্ট্রবেরি, রামবুটান, ডুরিয়ান, সালাক, ড্রাগন ফ্রুট ইত্যাদি ।
ছক-১
ক্রমিক নং | প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ফলের ভাগ | ফলের নাম ও মোট সংখ্যা |
১ | প্রধান প্রধান ফল | ১৬ |
২ | অপ্রধান ফল | ২৭ |
৩ | বিদেশি ফল | ৯ |
সর্বমোট: | ৫২ |
আবার ফলগাছের জীবনকাল ও ফল দেয়ার সময় কালের ভিত্তিতে ফলকে তিনভাগে ভাগ করা যায় ।
যেমন - ১ । দীর্ঘমেয়াদি ২। মধ্যম মেয়াদি ৩। স্বল্প মেয়াদি ।
১ । দীর্ঘ মেয়াদি-আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচু, বেল, তেঁতুল, কামরাঙ্গা, আমড়া ইত্যাদি ।
২ । মধ্যম মেয়াদি-পেয়ারা, জামবুরা, কুল, সফেদা, আতা, শরীফা, কমলা লেবু, জামরুল, জলপাই, অরবরই, করমচা, আমলকি, এভাকোডো, লটকন, ডালিম ইত্যাদি ।
৩ । স্বল্প মেয়াদি-কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, চুকুর ইত্যাদি ।
ছক-২
ক্রমিক নং | ফল গাছের জীবন কালের ভিত্তিতে ফলের ভাগ | ফলের নাম ও মোট সংখ্যা |
১ | দীর্ঘ মেয়াদি ফল | |
২ | মধ্যম মেয়াদি ফল | |
৩ | স্বল্প মেয়াদি ফল | |
সর্বমোট: |
ছক-৩
ক্রমিক নং | ফলের মৌসুম | ফলের নাম ও মোট সংখ্যা |
১ | গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের ফল | |
২ | শীত মৌসুমের ফল | |
৩ | সারা বছরের ফল | |
সর্বমোট: |
প্রয়োজনীয় উপকরণ
(১) বিভিন্ন ধরনের ফল ।
(২) প্রাসঙ্গিক তথ্য মোতাবেক ফলভিত্তিক সংখ্যা নিরূপণের তালিকা/ছক ।
(৩) চিত্রসহ ফলের সংক্ষিপ্ত বিবরণযুক্ত পুস্তিকা ।
(৪) কাগজ, কলম, কেল, রাবার, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১। ফল শনাক্তকরণের জন্য ফলের বাগানে বা বাজারে যেতে হবে ।
২ । ফলের চিত্র সংবলিত তালিকার সাথে মিলিয়ে শনাক্ত করতে হবে ।
৩ । ছক মোতাবেক ফলের নাম লিখতে হবে।
৪ । বিভিন্ন মৌসুমে বাগানে বা বাজারে গিয়ে ছক মোতাবেক কোন কোন ধরনের ফল পাওয়া যায় তা লিখতে হবে এবং সংখ্যা বের করতে হবে ।
৫ । পূরণকৃত ছক থেকে কোন কোন ফলের উৎপাদন বেশি বা বাজারে কোন ফল বেশি পাওয়া যায় তা নির্ধারণ করা যায়।
৬ । ফলের শতকরা হার নিরূপণ করে ফলের অবস্থান নির্ণয় করা যাবে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ফল বাগানের জন্য জমির উপযুক্ততা বিবেচনা করতে হবে । কেননা কোন কোন ফল উঁচু জমি এবং কোন কোন নিচু জমি পছন্দ করে । আবার কোন কোন ফল শুষ্ক আবহাওয়া এবং কোন কোন ফল আর্দ্র আবহাওয়া পছন্দ করে । এছাড়া অনেক ফলের জন্য মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব বিশেষ উপযোগী । তাই ফন্তু বাগানের জন্য এ সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে ফল চাষের জন্য সুপারিশ করা যাবে ।
তথ্যভিত্তিক উপকরণ
(১) জমির অবস্থানের তথ্য ও যেমন জমির প্রকৃতি (উঁচু বা নিচু বা ব্যবসায়িকভাবে বাগান স্থাপন উপযোগী হবে কিনা, বাগানের স্থানে আলো বাতাস খোলামেলাভাবে লাগে কিনা, রাস্তাঘাটের সুবিধাদি বিদ্যমান অথবা একেবারেই নেই প্রক্রিয়াধীন)
(২) আর্থ সামাজিক তথ্য ও ঋণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জমির দাম, শ্রমিক সুবিধা, সামাজিক অবস্থা, মানুষের রুচি ও চাহিদা, বাড়ির আঙ্গিনা বা বাঁধের ধারে বাগান করার জন্য জমি প্রাপ্তি ।
(৩) কারিগরি তথ্য ও ফল গাছের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উপযোগী আবহাওয়া, মাটির বুনট, মাটির গুণাগুণ, পানির উৎস, বীজ/চারা কলম প্রান্তির সুবিধা, সেচ সুবিধা ও সেচ যন্ত্রপাতি, সার, বীজ, কীটনাশকের সহজলভ্যতা ।
কাজের ধাপ
(১) উঁচু জমিতে বৃষ্টিপাত বেশি হলেও পানি জমার সম্ভাবনা থাকে না । তাই ফল গাছের জন্য উঁচু জমি চিহ্নিত করে কাগজে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
(২) নিচু জমি এবং বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় এমন স্থানে যে সকল গাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না সেগুলো লাগানো যাবে না ।
(৩) ভূ-গর্ভস্থ পানিতল কাছে হলেও যে সকল গাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না সে সমতু গাছ লাগানো যাবে না । কেননা সেখানে অল্প বৃষ্টিতেই পানিতল উপরে উঠে আসতে পারে ।
(৪) অধিকাংশ ফল গাছই খোলামেলা আলো বাতাস ও সূর্যালোক না পেলে ঠিকমত ফল দিতে পারে না । তাই সূর্যালোক পড়ে এবং আলো বাতাস লাগে তা দিনের বেলায় সূর্য উঠার পরে পর্যবেক্ষণ করে চিহ্নিত করতে হবে । এরপর কাগজে এলাকার মাপ লিখে নিতে হবে এবং মাপে কাঠি পুঁতে চিহ্নিত করতে হবে।
(৫) রাস্তাঘাটের ম্যাপ নিতে হবে, যা ফল উৎপাদনকালে সম্ভাব্য স্বল্প সময়ে ভালো রাস্তা দিয়ে যোগাযোগের পরিকল্পনা প্রণয়নে সুবিধা হবে। এমনকি নার্সারি হতে চারা কলম আনয়ন করাও সহজ হবে ।
(৬) সেচের সুবিধা আছে, জমির দাম কম, কাজ করার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাবে, বাগানের ফল চুরি হবে না বা গাছ পালা নষ্ট হবে না, উৎপাদিত ফল বিক্রয় করা যাবে এমন বিষয়গুলো জরিপ করে চিহ্নিত করতে হবে ও নিশ্চিত হতে হবে ।
(৭) ইটের ভাটা বা ধোয়া নির্গত হয় এমন কারখানার কাছে ফলের বাগান করা যাবেনা ।
(৮) বর্ষায় পাবিত হয় এমন স্থান বাগানের জন্য নির্বাচন করা যাবে না। পরবর্তীতে বাগান স্থাপনের জন্য কারিগরি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন-
(ক) মাটি এঁটেল, বেলে বা বেলে দোঁয়াশ তা জেনে লিপিবদ্ধ করতে হবে ।
(খ) মাটি কাঁকর যুক্ত, মাটিতে পানি প্রবেশ ক্ষমতা, মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি জানতে হবে ।
(গ) মাটির জৈব পদার্থ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে হবে ।
(ঘ) মাটির অম্লমান বা ক্ষারমান জেনে এলাকা চিহ্নিত করতে হবে ।
এরপর বিভিন্ন ফল চাষের বর্ণনা দেখে জমির ধান ও মাটির অবস্থা জেনে ফল গাছ নির্বাচন করে লাগানো উচিত হবে । তাতে লাভজনকভাবে ফল চাষ বা ফল বাগান করা সম্ভব হবে।
ছক: ফল বাগানের জন্য স্থান নির্বাচনী জরিপ ফরম ।
বাগানের জন্য প্রধান প্রধান বিবেচ্য বিষয় | নির্বাচিত বিষয় |
ফুল গাছের পছন্দনীয়: (ক) জমি-উঁচুনিচু (খ) জমি খোলামেলা/ছায়াযুক্ত /অন্ধকারভাব (গ) মাটির অমত্ব ক্ষারত্ব । (ঘ) মাটি এঁটেল/বেলেদোঁয়াশ পলি দোঁয়াশ/দোঁয়াশ/বেলে কাকরময় যোগাযোগ : (ক) রাস্তাঘাট--আছে/নেই (খ) যানবাহন-গ্রামীণ/আধুনিক (গ) সেচ সুবিধা আছে/নেই (ঘ) পানিতল-কাছে/গভীর অন্যান্য: (ক) বাজার ব্যবস্থা আছেনেই ( খ) শ্রমিক প্রাপ্তির সুবিধা আছে/নেই (গ) জমির মূল্য-বেশি/কম (ঘ) উপকরণ প্রাপ্তি-সহজ কঠিন (ঙ) আশেপাশে কলকারখানা-আছে নাই । (চ) অন্য কোন বিবেচ্য বিষয় (যদি থাকে) |
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গাছের প্রায়াজনীয় খাবার সরবরাহ এবং শিকড়ের বৃদ্ধির জন্য গাছ রোপণের আগে গর্ত করা একান্ত প্ৰায়াজন । এক এক গাছের জন্য এক এক পরিমাণ দূরত্বে ভিন্ন ভিন্ন আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে । সাধারণত কোন গাছের জন্য কি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে তা নিম্নোক্ত বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল । যথা-
(ক) গাছের আকৃতি
(খ) শিকড়ের গভীরতা
(গ) শিকড়ের বিস্তৃতি
(ঘ) চাষের মেয়াদ কাল
(ঙ) গাছের খাবারের চাহিদা ইত্যাদির উপর
উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
১। কোদাল ২। শাবল/খন্তা ৩ । ঝুড়ি ৪ । মাপযন্ত্র ও মাপের ফিতা ৫। বাশেঁর কাঠি ৬। দড়ি/সুতলি ৭। পলিথিন সিট ৮ । কীটনাশক ও জীবাণুনাশক ঔষধ।
কাজের ধাপ
১। গর্ত খননের পূর্বে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে সমতল করে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে ।
২। জমিতে গর্ত করার আগে চারা রোপণের নকশা মোতাবেক ফিতা বা কাঠির সাহায্যে মাপ দিতে হবে। মাপ দিয়ে নির্ধারিত দূরত্বে খুঁটি পুঁতে চারা রোপণের স্থান চিহ্নিত করতে হবে ।
৩ । নির্দিষ্ট দূরত্বে চিহ্নিত জায়গায় পর্ব করতে হবে । পর্ভের উপরের দিকের মাটি একদিকে এবং নিচের দিকের মাটি আর এক দিকে রাখতে হবে।
৪। চারা রোপণের ২০-৩০ দিন আগে গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে পরিমাণমত সার দিয়ে মাটি ভরাট করে দিতে হবে।
৫। যে সব জায়গায় উইপোকার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে সেখানে উইপোকা প্রতিরোধক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে ।
৬। পর্কের মাটি জীবাণুযুক্ত করার জন্য পুরো রোগনাশক দ্রবণটি পর্বের মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে এবং একটি পলিখিন সিট দিয়ে পত্রটি ঢেকে দিয়ে ৪৮ ঘন্টা রাখতে হবে। এরপর পলিথিন সিট সরিয়ে নিয়ে কোলাল/খুরপি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। এ অবস্থায় ৭-১০ দিন রাখতে হবে। এ সময় গ্যাসের গন্ধ চলে যাবে, গর্ত জীবাণুযুক্ত হবে।
৭। গর্তের উপরের মাটির সাথে গোবর পঁচাসহ প্রয়োজনীয় সার মিশানোর পর গর্ত ভরাট করার সময় উপরের অংশের মাটি গর্ভের নিচের দিকে দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে । আর নিচের অংশের আলাদা করে রাখা মাটি গর্ভের উপরিভাগে দিতে হবে। জমির উপরিভাগের মাটি বেশি উর্বর।
৮। সার মিশ্রিত মাটি গর্তে দেয়ার পর ভালোভাবে মাটি চেপে দিতে হবে। ৯। গাছের আকৃতি বিবেচনা করে গর্ভের ব্যাস ও গভীরতা নির্ণয় করতে হবে ।
গাছের আকৃতি | চারা লাগানোর গর্তের মাপ | একটি চারা থেকে আর একটি চারার দূরত্ব |
(ক) বড় বৃক্ষ জাতীয় পাছ (আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, বেল ইত্যাদি) | ১ মিটার ব্যাস ১ মিটার গভীরতা বা ৯০ x ৯০ x ৯০ সে.মি. | ৭-৮ মিটার |
(খ) মাঝারি গাছ (পেয়ারা, আতা, শরীফা, সফেদা, লেবু ইত্যাদি) | ৬০ সে.মি ব্যাস ও ৬০ সে.মি গভীর বা ৭৫×৭৫×৭৫ সে.মি.) | ৫ মিটার |
(গ) ছোট গাছ (কলা, পেঁপে, সুপারি) | ৫০ সে.মি. ব্যাস ৫০ সে.মি. গভীর | ২ মিটার |
(ঘ) খুব ছোট গাছ (আনারস, স্ট্রবেরী ইত্যাদি) | ১৫ সে.মি. ব্যাস ও ১৫ সে.মি গভীর) | ২ মিটার |
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
মাঠ ফসলের সাথে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের মূল পার্থক্য হলো যে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের ক্ষেত্রে ভালোভাবে চাষের পর জমিতে নির্দিষ্ট আকারের গর্ত খনন করার পর সার প্রয়োগ করে গাছ লাগানো হয়। চারা রোপণের সময় চারার গোড়া পটে বা বেড়ে যতটুকু গভীরে ছিল ততটুকু গভীরে রাখতে হবে। চারা রোপণের পর ঝাড়ো বাতাস ও জীবজন্তু হতে রক্ষার জন্য খুঁটি ও বেড়া এবং আবহাওয়া শুল্ক ও রৌদ্রজ্জল হলে পাছের উপর ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। কোদাল
২। খন্তা/ খাল
৩। ঝুড়ি
8। ঝরণা
৫। বাঁশের কাঠি
৬। বাঁশের খাচা
৭। দড়ি
কাজের ধাপ
১। সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করার এক সপ্তাহ পর গর্তে চারা লাগাতে হবে ।
২। চারা যদি পটে থাকে তবে চারাটি সাবধানে পট থেকে বের করতে হবে। পলিথিন ব্যাগের চারা হলে পলিথিন একপাশ দিয়ে কেটে দিতে হবে। নার্সারি বেডে চারা থাকলে রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে চারাটি খাসি করে নিতে হবে । খাসি করার এক সপ্তাহ পরে নার্সারি বেস্ত হতে চারাটি উঠায়ে পলিথিন ব্যাগ ব পটে স্থাপন করে ৪-৫ দিন ছায়ায় রাখতে হবে।
৩ । চারার গোড়ার বলের আকারে মাটি না সরিয়ে গর্ত হতে চারা লাগানোর স্থানের মাটি সরিয়ে নিতে হবে। পট হতে বা পলিখিন কেটে চারা বের করার সমর বাতে বল ভেঙে না যায় সেজন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৪ । চারাটির কাণ্ড বাম হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে এবং বলটি ডানহাতের তালুতে নিয়ে চারাটি সোজা করে গর্ভে বসানোর পর গর্ত হতে পূর্বে সরানো মাটি দিয়ে বলের চারপাশ ভালো করে চেপে দিতে হবে।
৫। চারা রোপণের পর ঝড় বাতাস হতে রক্ষার জন্য একটি সোজা বাঁশের কাঠি দিয়ে শক্ত করে চারাটি বেঁধে দিতে হবে ।
৬ । চারা রোপণের পর তাতে ঝরনা দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। গরু ছাগলের হাত থেকে চারা রক্ষা করার জন্য বাঁশের খাঁচা দিতে হবে। চারা বিকালে লাগানো উত্তম এবং রোপণের পর অন্তত এক মাস সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭। আবহাওয়া শুকনো এবং রৌদ্রজ্জল থাকলে চারার উপর চাটাই বা নারিকেরের শুকনো ডাল দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গাছের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে চারার বয়স বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন-দীর্ঘমেয়াদি গাছের চারা ২-৩ বছরের নিতে হয় । সেখানে স্বল্পমেয়াদি গাছের চারার ৩-৪ মাসের নিতে হয়। এমন কি স্বল্প মেয়াদী ফলের চারা আরও কম বয়সের নেওয়া যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
(১) দীর্ঘ মেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি ফলের চারা (আম, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, কলা, আনারস ইত্যাদি)।
(২) গর্ত তৈরির যন্ত্রপাতি (শাবল, খন্তা, কোদাল, খুরপি ইত্যাদি)
(৩) কাঠি এ সুতলি (
৪) পানি ও ঝরণা।
(৫) বাঁশের খাঁচা।
(৬) কীটনাশক ঔষধ
কাজের ধাপ
১। স্থানীয়ভাবে গুণগত মান সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত চিহ্নিত করতে হবে। যেমন- কোন গাছে বা বিশেষ ফল পাছে নিয়মিত ফল ধরে। সাধারণ রোগ ও পোকা মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে প্রতিকূল অবস্থায়ও ফল ধারণে তেমন কোন তারতম্য হয় না। ক্ষেত্র বিশেষে আগাম বা নাবিকল ধরে ইত্যাদি ।
২। কলম বা বীজ থেকে চারা তৈরি করার পর ২/৩ বছর নার্সারিতে পালন করার দরকার। কোন কোন ক্ষেত্রে ১ বছর নার্সারীতে পালন করলেও কোন অসুবিধা হয় না ।
৩। দুর্বল ও রোগাক্রান্ত চারা বাদ দিয়ে সতেজ চারা নিতে হবে।
৪। দীর্ঘমেয়াদি ফলের চারার গোড়ার দিকে এক মিটার কাজ পর্যন্ত কোন ডালপালা গজাতে দেয়া যাবে না।
৫। স্বল্পমেয়াদি ফলের ক্ষেত্রে চারার গোড়ার হতে উপরের দিকে পিরামিড আকৃতির হতে হবে অর্থাৎ গোড়া মজবুদ্ধ হতে হবে । পাতা চওড়া, ছড়ানো প্রকৃতির এবং চারা দূর্বল লিকলিকে হলে তা বাদ দিতে হবে ।
৬। দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি ফলের চারা নির্বাচনে চারার বয়স ফলের জাত ভেদে উপযুক্ত হতে হবে।
৭। চারা রোপণের গর্ত চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে তৈরি করতে হবে।
৮। প্রায় এক সপ্তাহ গর্ত করে খোলা রাখার পর সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে । গর্ত ভরাট করে এক থেকে দেড় সপ্তাহ রাখতে হবে ।
৯। চারার গোড়া হতে পট বা পলিব্যাগ সাবধানে সরাতে হবে। চারা লাগানোরে নির্দিষ্ট স্থানে চারার বলের সম পরিমাণ মাটি সরিয়ে সেখানে চারা কসাতে হবে। চারার গোড়ার কাও যতটুকু পর্যন্ত মাটিতে ঢাকা ছিল ততটুকু পর্যন্ত মাটির গভীরে ঢেকে স্থাপন করতে হবে।
১০ । চারার গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সে জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে । অথবা চারার গোড়া উঁচু করে লাগাতে হবে ।
১১ । বিকেলের দিকে ও মেঘলা দিনে চারায় লাগানো উচিত। তাতে চারা সহজে লেগে যেতে পারে ।
১২ । আবহাওয়া শুকনা এবং রৌদ্রময় থাকলে চারায় সেচ প্রদান ও চারার উপরে এক থেকে দেড় সপ্তাহ পর্যন্ত ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।
১৩ । চারার পাশে সোজা খুঁটি পুঁতে তার সাথে চারা সোজা করে বেঁধে দিতে হবে।
প্রাসঙ্গিক
তথ্য চারায় সেচ প্রদান করতে হলে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা, চারা রোপণের নকশা এবং গাছের পানির চাহিদা, গাছের বৃদ্ধি পর্যায় ইত্যাদি বিবেচনা করে সেচ প্রদান করতে হয় । সেচের পানি বেশি হলে বা অত্যধিক বৃষ্টি পড়ে পানি জমার সম্ভাবনা থাকলে চারার গোড়া হতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। ফলের বাগান
২। সেচ যন্ত্রপাতি (পাওয়ার পাম্প, গভীর বা অগভীর পাম্প, ঝরনা, পানি সরবরাহের পাইপ ইত্যাদি)
৩ । মাপ ফিতা
৪ । কোদাল, সুতলি, খুঁটি ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ
১। স্থায়ী বড় ফল বাগানের জন্য দুই সারির মাঝখানে নালা তৈরি করতে হবে ।
২। গাছের গোড়ায় থালার মত করে নিয়ে নালার মাঝে সংযোগ তৈরি করে পানি দিতে হবে। এতে পানির অপচয় কম হবে ।
৩। ছোট ছোট ফল গাছের জন্য প্রতি দুই সারি পর পর নালা তৈরি করতে হবে। গাছের দুসারিকে বেডের মত করে বেডের মাঝখান দিয়ে সেচ দিতে হবে । মাঝখানের নালায় পানি ভর্তি করে ২/৩ ঘন্টা রেখে দিলে সমস্ত জমি ভিজে যাবে ।
৪ । চারা রোপণ উপযোগী হলে আসতে আসতে সেচ কমাতে হবে। এতে চারা রোপণজনিত আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । তবে চারা রোপণের পূর্বে নার্সারিতে থাকা অবস্থায় ঝরনার সাহায্যে সেচ দিতে হবে । চারার অবস্থা ভেদে ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে সকাল বিকাল পানি সেচ দিতে হবে ।
৫ । চারা লাগানোর সময়, গাছের বড় বাড়তি ও ফুল ফোটার সময়, ফল ধরার সময় হতে ফল বড় হওয়ার সময় কালে সেচ দিতে হবে। সেচের সঠিক সময় নিরূপণের জন্য মাঠে গিয়ে গাছের শিকড়ের গভীরতার তিনভাগের দুইভাগ গভীর থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হবে । সংগৃহীত মাটিতে চাপা দিয়ে বল করা না গেলে বা বল করার পর প্রায় ১ মিটার উপর হতে নিচে ফেলে দিলে সহজেই ভেঙে গেলে সেচ দিতে হবে ।
৬। বিকালে পানি দিতে হবে। তাতে বাষ্পীভবন কম হবে এবং পানির অপচয় কম হবে।
৭ । পানির প্রবাহ বা নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য জমির উঁচু দিক থেকে ঢালের দিকে নালা করতে হবে । প্রয়োজনে এর সাথে গাছের গোড়ায় ছোট ছোট বেসিন বা থালাগুলো এবং নিচু ও অসমতল স্থানের সাথে নালা যুক্ত করা যেতে পারে ।
৮। বাগানে গাছের আকৃতি ছোট হলে ফোয়ারা পদ্ধতিতে সেচ দেয়া যেতে পারে ।
৯ । পাছে ফুল অবস্থায় ফোয়ারা সেচ দিলে পরাগায়নের অসুবিধা হতে পারে । ফুল অবস্থার ফোয়ারা সেচ দেয়া যাবে না।
১০। বৃষ্টির পানি যাতে গাছের গাড়ার দাঁড়াতে না পারে সেজন্য নিকাশ নালা তৈরি করতে হবে ।
প্রাথমিক তথ্য
দু'ভাবে ফলের চারা করা হয়। বীজ থেকে এবং ফলগাছের অঙ্গ থেকে। বীজের চারা সহজেই করা যায় এবং খরচও কম। বীজ থেকে গজানো চারা বড় ও শক্ত হয় এবং ফল বেশি দেয়। নারিকেল ও তালের মত কিছু ফলের চারা কেবল বীজ থেকে করা হয়। তবে আধুনিক প্রযুক্তি টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এসব পাছের চারা বীজ ছাড়াও করা যেতে পারে। বীজের চারার প্রধান অসুবিধা হলো মাতৃ গাছের গুণ বদলে যায় এবং গাছ দেরিতে ফল ধরে। কলা ও আনারসের মত কিছু ফলের গাছ বীজ থেকে করা যায় না। কলম বা অঙ্গজ পদ্ধতিতে মাতৃগাছের সকল ক্ষণ থাকে এবং কম সময়ে ফল পাওয়া যায় । কলমের সাহায্যে একই গাছে বিভিন্ন জাতের ফল ফলানো যায় এবং ইচ্ছে করলে মূল গাছের জাত বদলে দেয়া যায়। কলমের অসুবিধা হলো এর খরচ তুলনামুলকভাবে বীজের চারা থেকে বেশি। ক) জোড় কলম তৈরি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
গাছের আদি ঘোড়া ও উপজোড়া পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যখন একটি একক গাছ হিসাবে বৃদ্ধি লাভ করে তখন তাকে গ্রাফট জোড় কলম বলে এবং এ জোড়া লাগানো প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় গ্রাফটিং বা জোড় কলম। যে গাছের ওপর কাঙ্ক্ষিত গাছের ছোট একটি অংশ জোড়া লাগানো হয় তাকে আদিজোড়া (rootstock) এবং কাঙ্খিত গাছের এ অংশটিকে উপজোড় (scion) বলে। সহজভাবে বলা যায় জোড় কলমের জোড়ম্যানের নিচের অংশ হলো আদিজোড় ও উপরের অংশ হলো উপজোড়।
জোড় কলম প্রধানত দু'ভাবে করা হয়ে থাকে। প্রথমত উপজোড়কে মাতৃগাছে সংযুক্ত অবস্থায় রেখে জোড়া লাগানো হয়। একে সংযুক্ত জোড় কলম বলে এবং দ্বিতীয়ত উপজোড়কে মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জোড়ের সাথে জোড়া লাগানো হয়, একে বিযুক্ত জোড় কলম বলে।
সতর্কতা
১। আদিজোড় ও উপজোড়ের কর্তিত স্থান মসৃণ হতে হবে ।
২। আদিজোড় ও উপজোড় একসাথে বাঁধার পর মাঝখানে যেন কোনো ফাক না থাকে ।
খ) ভিনিয়ার জোড় কলম পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য: ভিনিয়ার জোড় কলম এক ধরনের পার্শ্ব জোড় কলম। এ পদ্ধতিতে আদিজোড়ের এক পার্শ্বে উপজোড়ের নিম্ন প্রান্ত স্থাপন করা হয় । উপজোড়কে মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আদি জোড়ের সাথে জোড়া লাগানো হয়।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যসমূহ
কাজের ধাপ
সতর্কতাঃ
গ) চক্ষু কলম (ৰাডিং) পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
বাডিং এমন এক প্রকারের জোড় কলম যাতে শাখার পরিবর্তে পল্লবের কুঁড়ি বা চোখ (ফ) উপজোড়রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । একে চোখ কলম বলে। শীতের শেষে, বসন্তে যখন গাছ বেশ সক্রিয় সম্পূর্ণ ও বর্ধনশীল হয়ে উঠে সে সময় অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাস চোখ কলমের জন্য খুবই উপযোগী। তবে ঐ সময় খুব গরম থাকলে চোখ শুকিয়ে যেতে চায়। চোখ কলমের জন্য প্রায় এক বক্সের বয়স্ক আদিজোড় নিলে ভাল হয়। বিবিধ প্রকার চোখ কলমের মধ্যে টি চোখ কলম, ভালি চোখ কলম, চক্র চোখ কলম ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য ।
ঘ) টি চোখ কলম পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
কলম এক প্রকার চোখ কলম বা বাডিং। এ পদ্ধতিতে উন্নত ডালের একটি মাত্র চোখ ব্যবহার করে নতুন গাছ উৎপাদন করা যায় । আদি জোড়ের গারে টি- কেটে সেখানে বর্ম আকৃতির বা চোখ আকৃতির কুড়ি স্থাপন করা হয় বলে এ পদ্ধতির এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি
কাজের ধাপ
৩। সতর্কতাঃ বাঁধার সময় কুড়িটি যেন ঢাকা না পড়ে প্রস্ফুটিত কুঁড়ি ব্যবহার করা যাবে না
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ফল গাছ বিভিন্ন সময় ও উদ্দেশে ছাঁটাই করা হয় । সময় ও উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে গাছ ছাঁটাইকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-ট্রেনিং ও প্রুনিং । ফল গাছ থেকে সঠিক ফলন ও মানসম্মত ফল পেতে হলে গাছের বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় ট্রেনিং এবং গাছ ফল ধারনের তরে পৌছানারে পর প্রুনিং করা প্রয়োজন । ট্রেনিং ও প্রনিং করার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকা দরকার । কারণ যথাযথ অভিজ্ঞতা না থাকলে অতিরিক্ত ট্রেনিং ও প্রুনিং করলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি ।
ক) ট্রেনিং পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গাছে ফল ধারনের পূর্বে একটি সবল ও সুন্দর কাঠামো তৈরির জন্য ছাঁটাই করা হয়। এ কাজটি প্রধানত প্রধান কাণ্ডকে কেন্দ্র করে করা হয় বলে এ ধরনের ছাঁটাইকে ট্রেনিং বলা হয় ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
কাজের ধাপ
১। ট্রেনিং এর প্রয়োজনীয় উপকরণ (চারাগাছ, সিকেচার, টেপ) সংগ্রহ করতে হবে।
২। চারা গাছে ট্রেনিং করতে হবে । ঝোপালো গাছ, যেমন- পেয়ারা, বাতাবীলেবু, শরিফা ইত্যাদি গাছে মুক্ত ও নাতি উচ্চকেন্দ্র পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে । দীর্ঘ বৃহদাকার গাছ, গাছের জন্য উচ্চকেন্দ্র ট্রেনিং অনুসরণ করতে হবে ।
৩। ট্রেনিং পদ্ধতির প্রয়োগ: ট্রেনিং পদ্ধতির দুইটি ব্যবস্থা নিম্নের ক) ও খ) অংশে বর্ণনা করা হলো -
ক) উচ্চ কেন্দ্র ট্রেনিং পদ্ধতি
খ) নাতি উচ্চ কেন্দ্র ট্রেনিং পদ্ধতি
গ) মুক্ত কেন্দ্র ট্রেনিং পদ্ধতি
সতর্কতা
১। ছাঁটাই করতে সিকেচার ব্যবহার করুন এবং থেঁতলানো বা ফেটে যাওয়া পরিহার করতে হবে।
২। ক্ষতস্থানে পাস্টার এবং আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া ভালো।
ঘ) পাছ ছাঁটাই এর জন্য প্রর্নিং পদ্ধতি অনুশীলন ফল গাছ সাধারণত দুটো পদ্ধতিতে প্রুনিং করা হয়। যথা-
১। অর্থভাগ ছেদন ও
২। পাতলাকরণ এ
পদ্ধতিতে গাছের উৎপাদন ক্ষমতা ও গুণগত মাণ বৃদ্ধি, পুষ্প মঞ্জুরীর অধিক প্রফুরন, গাছের পূর্ণ বিকাশ, ফলের আকার আকৃতি, রঙ ও ফল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গাছের কোন অংশ কেটে অপসারণ করা হয়। প্রনিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
কান্দ্রের ধাপ
১। প্রনিং-এর প্রয়োজনে বয়স্ক ও চারাগাছ ছাঁটাই করতে হবে। ঝোপালো গাছ (পেয়ারা, লেচু, শরীফা) মুক্ত রাখার জন্য অর্থভাগ জোন বা হেডিং ব্যাক প্রণালি প্রয়োজন হয় না। বরং কুল গাছের ফলনের জন্য হেডিং ব্যাক বা অগ্রভাগ ছেদন করা প্রয়োজন হয়। ঝোপালো গাছ ও অতি পুরাতন গাছকে উদ্দীপ্ত করতে খিনিং আউট/পাতলাকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
২। প্রুনিং অনুশীলনের জন্য নিচের পদ্ধতি দুটি অনুশীলন করতে হবে।
ক) হেডিং ব্যাক বা শাখার ডাল ছেদন পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে কাণ্ডের বা শাখার অগ্রভাগ থেকে কিছু কেটে বাদ দিতে হবে । কর্তিত স্থানে ব্রাশ দিয়ে পরাটার এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগিয়ে দিতে হবে। ছোট ছোট কান্ড সিকেচার ও বড় কাণ্ডসমূহ করাত দিয়ে কেটে দিতে হবে। এ পদ্ধতি অনুশীলনের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফল পাড়ার পর ৫-৬ বছর বয়স্ক কুল পাছ নির্বাচন করতে হবে ।
খ) থিনিং আউট (পাতলাকরণ) বা শাখা অপসারণ পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে কাগু বা শাখাকে সম্পূর্ণরূপে কেটে বাদ দিতে হবে। কর্তিত স্থানে ব্রাশ দিয়ে পরাটার এবং আলকাতরা লাগিয়ে দিতে হবে। ছোট ছোট শাখা সিকেচার দিয়ে ও বড় শাখাসমূহ করাত দিয়ে কাটতে হবে । ঝোপাল গাছ এভাবে ছাঁটাই করতে হবে। এ পদ্ধতি অনুশীলনের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল আহরণের পর ৪-৫ বছর বয়স্ক লেবু গাছ নির্বাচন করে কাজটি করতে হবে।
সতর্কতা
১। সুচিন্তিতভাবে ছাঁটাই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে ।
২। গাছ, জাত ও সময় ভেদে ছাটাই এর সময় বিভিন্ন হবে। পত্র পতনশীল গাছ শীতকালে এবং চির সবুজ গাছ গ্রীষ্মকালে (ফল সংগ্রহের পর) ছাটাই করা উচিত ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
আমের বংশ বিস্তার দু'ভাবে হয়ে থাকে। যেমন-
ক) বীজ দ্বারা ও খ) কলমের সাহায্যে
বীজ দ্বারা বংশবিস্তার করা হলে তাতে মাতৃ গাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না। তাই আমের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য কলমের সাহায্যে অর্থাৎ অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে চাষাবাদ করা উত্তম। ভালো জাতের চারা নির্বাচন-আমাদের উপ-মহাদেশে প্রায় এক হাজার জাতের আম চাষ করা হয়। তন্মধ্যে বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েকটি ভালো জাতের আমের নাম উল্লেখ করা হলো। ল্যাংড়া, গোপালভাগ, খিরসাপাত, মহানন্দা, কিষাণভাগে, মিসরীভাগে, কোহিতুর, হিমসাগর, আম্রপালি ইত্যাদি আগাম জাত। ফজলী, আশ্বিনা, চৌসা, কুয়াপাহাড়ী ইত্যাদি নাৰীজাত। এছাড়া প্রত্যেক এলাকার কিছু স্থানীয় ভালো জাতের আম পাওয়া যায় ।
উপকরণ
১। বীজ বা কলম ২। সার (জৈব-রাসায়নিক) ৩। ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক ৫। প্রেয়ার ও লাঙ্গল ও জোয়াল ৭। কোদাল ৮। মই ও মুখর। খুরপি ১০। পলিথিন ফিতা ১১। সিকেচার ১২। ঝুড়ি ১৩। রশি ১৪ । খুঁটি ১৫। জুনিং 'স' ১৬। খাঁচা ১৭। বাবারি ১৮। সিরিঞ্জ ১৯ । তুলা ২০। আলকাতরা / কেরসিন ২১ । বদন ২২। নিড়ানি ।
কাজের ধাপ
১। স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী আমের উন্নত জাত নির্বাচন করতে হবে । প্রয়োজনীয় কলম বা চারা সংগ্রহ করতে হবে । প্রতি একরে ৩৫ টি কলম/চারা লাগবে (বর্গাকার পদ্ধতি, দূরত্ব ১২ মিটার)
২। আম চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত গভীর দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে ।
৩ । উন্নত জাতের সায়ন গাছ হতে ভিনিয়ার কলমের মাধ্যমে কলম তৈরি করতে হবে বা সংগ্রহ করতে হবে । কলম তৈরির জন্য তত্ত্বীয় অংশ অনুসরণ করতে হবে।
৪ । জমি লাঙল দিয়ে ৩-৪ টি চাষ দিতে হবে। মুগুর দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙে দিতে হবে । আগাছা বাছতে হবে।
৫ । জমিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে ১২ মি. দূরত্ব (কলমের চারার জন্য) কোদাল দিয়ে ৭৫ সে. মি. x ১ মি. ১ মি. গভীর ৩৫ টি গর্ত করতে হবে । গর্ত ১ সপ্তাহ খোলা রাখার পর তত্ত্বীয় অংশে বর্ণিত পরিমাণ সার দিতে হবে । গর্ত ভরাটের সময় উপরের মাটি নিচে ও নিচের মাটি উপরে দিতে হবে। এর ১০-১৫ দিন পর বিকেল বেলা কলম চারা রোপণ করতে হবে ।
৬ । যদি টবে উৎপাদিত কলমের চারা রোপণের প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে টবের চারধারে ও নিচে আস্তে আস্তে আঘাত করতে হবে । টবটিকে চারা সমেত উল্টো করে চারার গোড়া দু আঙ্গুলের ফাঁকে চারাটিকে আটকিয়ে নিতে হবে । তারপর টবের কিনারা কোন খুঁটির সাথে আস্তে আস্তে আঘাত করতে হবে যেন চারাসহ সম্পূর্ণ মাটির বল খুলে আসে। এই প্রক্রিয়াকে “ডি পটিং” বলে। সাবধানে চারা বের করে চারাটি টবে যে পরিমাণ মাটির নিচে ছিলো ঠিক ততটুকুই চারার গর্তে পুঁতে দিতে হবে। তারপর চারধারে হাতে চেপে মাটি বসিয়ে, খুঁটি পুঁতে ও খাচা দিয়ে চারাকে ঘিরে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। রোপণের পর ৫-৭ দিন ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দিতে হবে ।
৭ । গাছের গোড়ায় আগাছা হলে নিড়িয়ে দিতে হবে। সেচের পর জো এলে চটা ভেঙে মাটি আলগা ও নরম রাখতে হবে । বয়স্ক গাছে বর্ষার আগে ও পরে গোড়ার মাটি কুপিয়ে বা লাঙল দিয়ে আলগা করতে হবে।
৮ । চারা রোপণের পর সার প্রয়োগ করতে হবে। সারের মাত্রা তত্ত্বীয় অংশের বর্ণনা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
৯ । সার প্রয়োগের নিয়ম হলো; ঠিক দুপুরের বেলা যে পরিমাণ স্থানে গাছের ছায়া পড়ে সে অংশ পর্যন্ত কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে সার প্রয়াগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছের গোড়ার চারদিকে (৩০-১০০ ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দিতে হবে । তবে গাছে মুকুল আসার আগে সেচ দেয়া যাবেনা । এতে করে মুকুল না এসে নতুন পাতা বের হয়ে যাবে । গাছের ফল মটর দানার আকৃতি হলে ৮-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে । বর্ষায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে । সে.মি. জাত ভেদে) কিছু জায়গা বাদ রেখে সার প্রয়োগ করতে হয় ।
১০। গাছে বেসিন বা থালা পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে । চারা গাছে প্রথম বছর শুকনো মৌসুমে ৮-১০ দিন পর পর এবং দ্বিতীয় বছর থেকে পঞ্চম বছরে
১১ । কলমের চারা রোপণের পর ৩-৫ বৎসর পর্যন্ত মুকুল এলে ছিড়ে ফেলতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি পরিপূর্ণ হবে এবং পরবর্তীতে ফলন ভাল হবে । গাছের গোড়া থেকে ২ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সকল শাখা প্রশাখা ছেটে ফেলতে হবে এবং ৪-৫ টি সতেজ ও চারদিকে প্রসারিত শাখা রেখে বাকীগুলো প্রুনিং করতে হবে । মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল ও কলমের জোড়ের নিচ থেকে বের হওয়া ডালপালা সিকেচার দিয়ে প্রুনিং করতে হবে ।
১২ । গাছে পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমনে তত্ত্বীয় অংশে বর্ণিত ব্যবস্থাবলি গ্রহন করতে হবে ।
১৩। আম সংগ্রহ করতে বাঁশের আগায় জালি বেঁধে পরিপক্ক আম পেড়ে আনতে হবে। আম পাড়ার পর আঘাতপ্রাপ্ত, কাটা, পোকাধরা, পচাফল বাছাই করতে হবে। আকার অনুসারে বড়, মাঝারি ও ছোট ফল গ্রেডিং করতে হবে। দূরে পাঠাতে বা বাজারজাতের জন্য কেবল মাত্র ফলের গায়ে রং এসেছে এরূপ আম সংগ্রহ করতে হবে । সংগৃহীত আম বাঁশের খাচা বা কাঠের বাক্সে খড়ের মধ্যে প্যাকিং করে প্রেরন করতে হবে ।
সতর্কতা
১। শীতের প্রথমভাগে সেচ দিলে ফুল না গজিয়ে, গাছে পাতা গজাতে পারে ।
২। গাছে ফুল ফোটা থেকে শুরু করে মটর দানার মত গুটি হওয়ার সময়সীমার মধ্যে সেচ দেওয়া যাবেনা ।
৩। ফল করা বন্ধ করতে সেচ দিয়ে এবং পানাফিক্স হরমোন (২-৩ মিলি ১০ লি: পানিতে) ১-৩ সপ্তাহ পর পর প্রে করে উপকার পাওয়া যায় ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
কাঁঠাল বহু বর্ষজীবী দ্বিবীজপত্রী বৃক্ষ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে পৃথকভাবে ধরে। কাঁঠাল পরপরাগায়িত ফসল, বংশবিস্তার সাধারণত বীজ দ্বারা হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি গাছই একটি আলাদা জাত। টব বা পলিথিন ব্যাগে বীজ বপন করে তা থেকে আঙ্কুরিত চারার বয়স ১-২ বছর হলে রোপণের জন্য ব্যবহার করা হয় । জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষা ও ভালো জাত সম্পন্ন ফল পেতে হলে ৮-১০ দিন বয়ক চারার ভালো কোন জাতের অঙ্কুর জোড় করে চারা উৎপাদন করা যায়।
উপকরণ
(১) বীজ/কাটিং (২) সার (জৈব ও রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি ( ৭ ) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) পলিথিন ফিতা (১৩) সিকেচার (১৪) ঝুড়ি (১৫) খুঁটি (১৬) রশি (১৭) করাত (১৮) খাঁচা (১৯) টিন (২০) ঝাঝরি (২১) বালি (২২) বাশ (২৩) সিরিঞ্জ (২৪) তুলা (২৫) আলকাতরা/কেরোসিন (২৬) কোদাল ।
কাজের ধাপ
১। কাঁঠালের উন্নত জাত নির্বাচন করুন। প্রয়োজনীয় চারা (৩৫টি/একরে) সংগ্রহ করুন।
২। কাঁঠাল চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং উর্বর সুনিষকাশিত গভীর পেঁআশ এঁটেল দোআশ মাটি নির্বাচন করুন ।
৩ । উন্নত জাতের গাছ থেকে ভিনিয়ার কলম করে চারা তৈরি করুন ।
৪ । কাঁঠালের জমি ভালভাবে লাঙল দিয়ে ৪/৫টি চাষ ও মই দিন । মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে দিন । আগাছা হাতে বেছে সমতল করুন ।
৫ । জমিতে গর্ত খননের জন্য (কাঁঠালের কলমের চারা ৩৫) ১২ মি: দুরত্বে কোদাল দিয়ে ১x১ মি. গভীরী চওড়া মাপের ৫টি গর্ত তৈরি করুন । গর্ভ সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন। এরপর গর্তের মাটির সাথে জৈব সার বা গোবর ২৫ কেজি এবং ৩০০ গ্রাম টিএসপি মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিন । গা ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন এবং ১০/১৫ দিনপর বিকালের দিকে চারা লাগান ।
৬। চারা রোপণের জন্য টব থেকে চারা বের করে (আম দ্রষ্টব্য) নিন । চারা গর্তে বসিয়ে চারদিকে হাতে মাটি চেপে দিন । খুঁটি পুতে রশি দিয়ে চারা শক্ত করে বেঁধে দিন। রোপণের পরপর ঝাঝরি দিয়ে পানি দিন। ৫-৬ দিন সেচ ও ছায়া দিন । প্রতিটি চারাগাছ খাঁচা দিয়ে ঘিরে শক্ত করে খুঁটিসহ খাঁচা বেধে দিন ।
৭। চারা গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে দিন। মাটি আলগা করুন। সেচের পর জমিতে জো এলে চেপে থাকা মাটি ভেঙে আলগা করে দিন । বয়স্ক গাছে বর্ষার আগে ও পরে গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে লাঙল দিয়ে আলগা করে দিন এবং সব সময় আগাছামুক্ত করে রাখুন ।
৮। কাঁঠাল গাছে সার দুই দফায় বর্ষার পরে ও আগে উপরি প্রয়োগ করুন ।
৯ । চারা রোপণের পরে গাছ প্রতি ১০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করুন। দশ বছর বয়স্ক গাছে ৮০ কেজি জৈব সার, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৫ কেজি ও এমপি১.৫ কেজি প্রয়োগ করুন। এসব সার দুই দফায় (৮নং এ বর্ণিত নিয়মে) প্রয়োগ করুন ।
১০। গাছের গোড়ার চারদিকের কিছু জায়গা প্রকার ভেদে ৩০-১০০ সে.মি বাদ রেখে দুপুরে যতটুকু স্থানে ছায়া পড়ে সে অংশের মাটি কোদাল বা লাঙল দিয়ে আলগা করে সার প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিন ।
১১ । সার প্রয়োগের পর গাছে থালা পদ্ধতিতে সেচ দিন । চারা গাছে বর্ষাকাল বাদে প্রয়োজনে ৭-১০ দিন পর পর এবং বয়স্ক গাছে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিন।
১২। কাঁঠাল গঠনের জন্য বয়স্ক কাঁঠাল গাছের গোড়ায় ৪-৫ মি. এর মধ্যে ডালপালা গজালে ছেটে ফেলুন । মরা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেটে দিন। বয়স্ক গাছে ফল সংগ্রহের পর কাণ্ডে গজানো ছোট শাখা ও ফলের বোটার অবশিষ্টাংশ ঘেঁটে দিন ।
১৩ । কুঁড়ির কীড়া ও ফলের মাজরা পোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লি. পানিতে ৪-৫ চা চামচ ডায়াজিনন-৬০ তরল কীটনাশন গুলে ফল, কুঁড়ি ও পাতায় ভালোভাবে স্প্রে করুন ।
১৪ । কাণ্ডের মাজরা পোকা দমনের জন্য--(১) চিকন বক্র তার ঢুকিয়ে কীড়া বের করে এনে মেরে ফেলুন (২) গর্তে সিরিঞ্জ দিয়ে কেরোসিন/ আলকাতরা ঢুকিয়ে (১ সিসি) দিন, (৩) আলকাতরা ভেজানো তুলা বা কাদা দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিন ।
১৫। পাতায় দাগ পড়া ও পঁচা রোগের আক্রমণে প্রতি ১০লি, পানিতে ৪০-৫০ গ্রাম ডাইথেন-এম-৪৫ পাউডার গুলে পক্ষকাল পরপর পাতা, মুচি, ফল এবং ডগায় স্প্রে করুন ।
১৬ । গাছে ফুল আসার ৫-৬ মাস পর ফল সংগ্রহ করতে পারেন। পরিপুষ্ট ফল সাবধানে পেড়ে এনে খারাপ ভাল বাছাই করে নিন । দূরে চালান দিতে হলে একটু শক্ত কাঁঠাল পেড়ে পাঠান ।
সতর্কতা
১। কাঁঠাল গাছ জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখতে হবে। এবারে কাজের ধাপ অনুসরণ করে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ।
প্রসঙ্গিক তথ্য
সাধারণত কলার যৌন পদ্ধতিতে বা বীজ হতে বংশবিস্তার করা হয় না। কলা গাছের গোড়া থেকে যে তেউর (সাকার বের হয় তা দিয়ে এর বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। কলার অসি চারা ও পানি চারা এই দু'ধরনের তেউড় বা চারা পাওয়া যায়। রোপণের জন্য অসি চারা উত্তম । কারণ রোপণের পর এগুলো কম মরে এবং দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয় । তবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উভয় প্রকার চারার মধ্যে ব্যবধান থাকে না। কলার চারা অনেক বড় হওয়ার পরও রোপণ করা চলে তবে ছোট আকারের চারা উৎকৃষ্ট। ৩৫-৫০ সে.মি. দীর্ঘ ও পুরু গোড়া বিশিষ্ট চারা রোপণের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।
উপকরণ
(১) চারা (২) সার (জৈব ও রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) প্রে যন্ত্র (৬) পানি (৭) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) কোদাল (১৩) ছুরি (১৪) পলিথিন (১৫) খুঁটি (১৬) রশি (১৭) ঝুড়ি (১৮) ঝাঝরি ।
কাজের ধাপ
১। কলার উন্নত জাত নির্বাচন করুন । প্রয়োজনীয় চারা (৫৩৮-১২১০ টি/একরে) সংগ্রহ করুন ।
২। কলা চাষের জন্য বন্যামুক্ত উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত উর্বর পেঁআশ / এঁটেল দোআশ মাটি নির্বাচন করুন ।
৩ । সংগৃহীত চারা থেকে কীট/রোগাক্রান্ত বা খারাপ চারা বেছে ফেলে ৫০-৬০ সি.মি লম্বা ও ১.৫-২.৫ কেজি রাইজোম যুক্ত ভাল চারা নির্বাচন করুন । সম্ভব হলে শুধু অসি চারা নির্বাচন করুন। নির্বাচিত চারার সমস্ত শিকড় ছুরি দিয়ে কেটে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করুন ।
৪ । কলার জমি উত্তমরূপে লাঙল দিয়ে ৫/৬টি চাষ ও মই দিন মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে দিন ও হাতে আগাছা বেছে ফেলুন এবং মাটি সমতল করে তৈরি করুন ।
৫ । কলার জন্য ২-৩ মি. দূরত্বে ৭৫ সে.মি চওড়া এবং ৬০ সে.মি গভীর করে কোদাল দিয়ে) একর প্রতি জাত অনুসারে (৫৩৮-১২১০টি গর্ত তৈরি করুন । গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন । এরপর গর্তের মাটির সাথে ১৫ কেজি জৈব সার, খৈল ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন।
৬। গর্তে সার প্রয়োগের পর ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিন। মাটি উলট-পালট করে দিন। রোপণের দুই দিন পূর্বে পুনরায় মাটি উলট-পালট করে দিন । প্রতি গর্তে একটি করে চারা রোপণ করুন । রোপণকৃত চারার রাইজোম ১০-১৫ সে.মি, মাটির গভীরে স্থাপন করুন এবং উপ-কাণ্ড মাটির বরাবর বা সামাণ্য (১.৫-২.০ সে.মি) নিচে রাখুন ।
৭। চারা রোপণের পর মাটি ভালভাবে চেপে দিন। বয়স্ক গাছে বছরে ৪-৬ বার আগাছা বেছে দিন । সেচের পর জমিতে জো এলে চটা ভেঙে দিন এবং মাটি আলগা রাখুন । এরপর প্রতিটি সারির মাঝে ৩০ সে.মি চওড়া ও ২০ সে.মি গভীর নালা (কোদাল দিয়ে তৈরি করুন । এসব নালার মাটি তুলে গাছের সারি বরাবর বেড তৈরি করে দিন । এভাবে সেচ ও নিকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করুন ।
৮। জমিতে চারা রোপণের ২ মাস পর গাছ প্রতি ৮০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৬০ গ্রাম এমপি সার উপরি প্রয়োগ করুন এবং ৪-৫ মাসপর ১৬০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৬০ গ্রাম এমপি পুনরায় প্রয়োগ করুন । গাছের ৩০ সে.মি জায়গায় মাটি গোলাকার (বেন্ড) করে খুরপি । কোদাল দিয়ে আলগা করুন । সার ছিটিয়ে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন । রসের অভাব থাকলে সেচ দিন । চারা অবস্থায় ঝাঝরি দিয়ে এবং বড় গাছে ড্রেন পূর্ণ করে পানি দিয়েই সেচের কাজ চালাতে পারেন। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন।
৯ । চারা জমিতে রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকেই সাকার বের হতে থাকে । এসব সাকার বের হওয়ার সাথে সাথে মাটি বরাবর (ছুরি/কান্তে দিয়ে কেটে দিন। গাছে ফল পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত এভাবে সাকার কাটতে থাকুন । মুড়ি ফসল করতে চাইলে গাছে ফুল আসার পর একটি অসি চারা রেখে দিন (চিত্র দ্রষ্টব্য)। গাছে কাঁদি বের হলে প্রতিটি গাছে খুঁটি পুতে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিন ।
১০। গাছের পচা, রোগাক্রান্ত পাতা কেটে ফেলে বাগান পরিষ্কার রাখুন। কাঁদি বের হওয়ার পর (পুরুষ ফুলসহ) ঝুলন্ত মোচাটি কেটে ফেলুন।
১১ । বিটল পোকা দমনের জন্য (১) বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আগাছামুক্ত রাখুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪-৫ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ তরল ডায়াজিনন ৬০ তরল কীটনাশক গুলে ১০-১৫ দিন পর পর (পাতা ও ফলে) ভালোভাবে স্প্রে করুন, (৩) ২-৩ বছর শস্য পর্যায় করুন। (৪) কাদি ব্যাগিং করুন ।
১২ । ঘোড়া পোকা ও জাব পোকা দমনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ।
১৩। রাস্ট এবং থ্রিপস দমনের জন্য- (১) রঙিন পলিথিন ব্যাগে কঁদি ঢেকে দিন, (২) পক্ষকাল পরপর তামাক চূর্ণ ছিটাতে পারেন এবং (৩) ১১ (২) এর অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৪ । কাগু/গুড়ির উইভিল পোকা দমনের জন্য (১) আক্রান্ত গাছের খালে, কাণ্ড, গুড়ি তুলে এনে ধ্বংস করুন, (২) ২-৩ বছর (অমৃত সাগর/চাঁপা কলার চাষ না করা), শস্য পর্যায় করুন, (৩) ১১ (২) এর অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৫ । পানামা রোগ দমন- (১) আস্ত গাছ, পাতা, চারা, কাণ্ড তুলে পুড়িয়ে ফেলুন। গর্তের মাটি পাড়ান, (২) ৩-৪ বছরের জন্য (সাগর, মেহের সাগর, সবরী, চাপা কলার চাষ না করা) শস্য পর্যায় অবলম্বন করুন ।
১৬ । গুচ্ছমাথা রোগ (বানচীটপ) দমনে- (১) আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন, (২) ১১ (২) এর অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৭। সিগাটোগা (পাতার দাগ) দমনে- (১) আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন, (২) আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করুন (আগাছা বালাইনিকাশের ব্যবস্থাসহ), (৩) জৈব সার অধিক ব্যবহার করুন, (৪) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৪৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ গুলে গাছে ভালভাবে স্প্রে করে দিন ।
১৮ । প্রধান কাগু পচা রোগ দমনে প্রতি ১০ লিটার বার্গান্ডি মিকচার প্রে মেশিনে ভরে (৯৬ গ্রাম তুঁতে, ১২০ গ্রাম কাপড় ধোয়ার সোডা ও ১৯ লিটার পানি) পক্ষকাল পরপর ছিটান ।
১৯। রোপণের ১০-১৪ মাস সময়ের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করতে পারেন। ফল যখন পুষ্ট, গোলাকার (কিনারাবিহীন হয়) ও পুষ্প শুকিয়ে যায় তখন কলার কাদি কেটে সংগ্রহ করুন। সংগ্রহের পর পচা, কীট ও রোগে আক্রান্ত এবং অপুষ্ট কলা বাছাই করে ফেলুন । দূরে পাঠাতে অর্থ পত্ব এবং কাছে পাঠাতে বাছাই করুন । পরিপক্ক কলা খোলা ও ঠান্ডা স্থানে (কাচা কলা) কাদি ঝুলিয়ে, কাদির গোড়ায় মোমের প্রলেপ দিয়ে বা হিমাগারে (১১ সে, তাপে) কয়েকদিন সংরক্ষণ করতে পারেন ।
সতর্কতা
১। কীট ও রোগবিহীন বাগান থেকে (অসি) চারা সংগ্রহ করতে হবে ।
২। যে সমস্ত এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি সেখানে শীতের পূর্বে চারা লাগালে ফুল/ফুল আসতে ২-৩ মাস দেরি হতে পারে ।
৩। কলার জন্য নিকাশের ভাল ব্যবস্থা এবং নিড়ানীকালে যাতে শেকড় না কাটে সেদিক দৃষ্টি রাখতে হবে । এবারে কাজের ধাপ অনুসরণ করে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য:
আনারস দ্বিবর্ষজীবী এবং একটি গাছ একবার মাত্র একটি ফুল দিয়ে থাকে । বাংলাদেশে ৩ জাতের আনারস চাষ হয় ।
যথা- (ক) হানিকুইন (খ) জায়েন্ট কিউ ও (গ) ঘোড়াশাল ।
ভালোজাতের চারা নির্বাচন: আনারস অঙ্গজ পদ্ধতিতেই বংশ বিস্তার করে থাকে। এর চারাকে সাকার বলে
আনারসের ৫ ধরনের সাকার হয়। যথা-
১) ক্রাউন সাকার বা কিরিট
২) ফ্লিপ সাকার বা বোটার চারা ৩। কান্ড সাকার বা কাণ্ডের কেকরী
৪) প্রাভ/সাকার বা গোড়ার ফেকরী
৫) স্টাম্প সাকার বা পাড়া
উপকরণ
১) চারা (২) সার (জৈৰ + রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি (৭) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) কোদাল (১৩) তুমি (১৪) ঝুড়ি ।
আনারস চাষ করার জন্য নিম্নের কাজ/ধাপ অনুসরণ করতে হবে:
১। আনারসের উন্নত জাত নির্বাচন করুন। প্রয়োজনীয় চারা (প্রায় ১৬-১৮ হাজার একরে) সংগ্রহ করুন।
২। আনারস চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআশ মাটি নির্বাচন করুন।
৩। সংগৃহীত চাৱা থেকে বেছে নিয়োগ পার্শ্ব চারা নির্বাচন করুন। নির্বাচিত চারার নিচের দিক থেকে করেকটি পাভা (৫-৭টি) খুলে ফেলুন। চারাগুলো ১-২ সপ্তাহ রোেদ শুকিয়ে নিন । এছাড়াও প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২.০-২.৫ চা চামচ এরাটন-৬ ছত্রাকনাশক ফলে চারার গোড়া শাখেন করে নিন। এভাবে চারা প্রস্তুত করে জমিতে লাগান ।
৪। আনারসের জমি উত্তমরূপে লাগল দিয়ে ৪/৫টি চাষ ও মই দিন। মুগুর দিয়ে চেলা ভেঙে ফেলুন। আগাছা হাতে বেছে ফেলুন। ক্ষমি সমতল করে তৈরি করুন। শেষ চাষের সময় একর প্রতি ৮ টন গোবর ও ৮০-১০০ কেজি টিএসপি জমিতে প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিন।
৫। আনারসের জন্য প্রথমে বেড তৈরি করে নিন। ৯০ সে.মি. (৩) পরপর ৯০ সে.মি (৩") বেড তৈরি করুন। দুটি পাশাপাশি বেডের মাঝে ৯০ সে.মি (৩) চওড়া ও (১০/১৫ সে.মি (৪"/৬") গভীর নালা তৈরি করুন। নালার মাটি কোদাল দিয়ে তুলে দিন এবং বেড তৈরি করুন। এবারে ঘোড়া সারি পদ্ধতিতে প্রতি বেডে ৬০ সে.মি (২") পরপর সারি করে ২৫-৩০ সে.মি (১০"-১২") দূরে দূরে চারা রোপণ করুন ।
৬। এরপর প্রতিটি গর্তে একটি করে শোধন করা সতেজ চারা রোপণ করুন। চারা এমনভাবে রোপণ করুন যাতে ভেতরের কচি অংশ ২-৩ সে.মি মাটির উপরে থাকে । চারা লাগিয়ে গোড়ার মাটি হাতে ভালোভাবে চেপে শক্ত করে দিন ।
৭ । গাছ সবল হয়ে উঠলে প্রয়োজনে সেচ দিয়ে নিড়িয়ে আগাছা বেছে দিন এবং মাটি নরম ও আলগা রাখুন । সেচের পর জো এলে জমির চটা ভেঙে দিন । এছাড়াও মাঝে মাঝে নিড়িয়ে আগাছা তুলে ফেলুন । মাটি আলগা এবং ঝুরঝুরে রাখুন যাতে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে ।
৮ । বর্ষার পূর্বে ও পরে দুই দফায় সার উপরি প্রয়োগ করুন । প্রতিবার হেক্টর প্রতি ২৫০-৩০০ কেজি ইউরিয়া ও ৩০০-৩৫০ কেজি এমপি সার প্রয়োগ করুন। চারার ১০-১৫ সে.মি দূর দিয়ে মাটি নিড়িয়ে মাটি আলগা করে সার ভালভাবে মিশিয়ে দিন । নালা ভরে পানি রেখে সেচ দিন। শুকনো মৌসুমে ২০ দিন পরপর সেচ দিন । বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন ।
৯ । আনারসের একাধিক চারা জন্মায় । প্রতি গাছে দুটি চারা রেখে বাকীগুলো কেটে দিন ।
১০ । ছাতরা পোকা দমনে প্রতি ১০ লিটার পানিতে চা চামচের ৪-৫ চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ তরল কীটনাশক গুলে গাছে ভালভাবে স্প্রে করে দিন ।
১১ । কাণ্ড পচা (হার্টরট) রোগ দমনে- (১) গাছের গোড়ায় পানি জমতে দিবেন না, (২) চারা রোপণের পূর্বে শাধেন করে রোপণ করুন, (৩) প্রতি লিটার পানিতে ৩৫-৪০ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড-৫০ পাউডার গুলে গাছে ভালভাবে স্প্রে করে দিন ।
১২। রোপণের ১৭/১৮-২৪ মাসের মধ্যে ফল পাকে। ফল যখন পরিপক্ক হয় (কিছু হলুন রং এর হয়) তখন কেটে সংগ্রহ করুন । সংগ্রহের পর ছোট-বড়, ভালো-খারাপ বাছাই করে ফেলুন । দূরে চালান দিতে হলে একটু অধপক্ক ফল সংগ্রহ করুন । ফ্রিজে পাকা ফলকে ৪°-১০° সে. (৪০/৫০° ফা.) তাপে এক মাস সংরক্ষণ করতে পারেন। আনারস থেকে জুস, কোয়াস, জেলি, ভিনিগার তৈরি করেও সংরক্ষণ করতে পারেন। এ ছাড়াও লবণ/চিনি যোগে টিনজাত করেও রাখতে পারেন ।
সতর্কতা
১। ভারী মাটিতে আনারসের আকার বড় হয় কিন্তু হালকা মাটিতে ফলন ভালো হয়ে থাকে ।
২। বর্ষায় নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
৩। পরিচর্যা কালে যাতে গাছের পাতা না ভাঙে তারদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
৪ । ফলে আঘাত লাগলে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, তাই সাবধানে পরিবহণ করতে হয় ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পেঁপের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে থাকে । পেঁপে পরপরাগায়িত এবং বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে বলে অসংখ্য প্রকার পেঁপে দেখা যায়। বিশেষ কোন পেঁপের জাত আবাদ ও সংরক্ষণ করতে হলে নিয়ন্ত্রিত পরাগায়ণের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করা উচিত । ভালো জাতের চারা নির্বাচন-পেঁপের চারা তিন ভাবে উৎপাদন করা যায় । যথা- বেড়ে, পটে ও সরাসরি জমিতে। আদর্শ পেঁপে গাছের কতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার । যথা- গাছ বেটে জাতের হতে হবে । তাড়াতাড়ি ফল ধরতে হবে । একটি কক্ষে একটি করে ফল থাকবে । গাছে সমান ভাবে ফল হবে ।
বাংলাদেশে কয়েকটি অনুমোদিত বিদেশি পেঁপের জাত পাওয়া যায়। যেমন- (ক) বেঁটে-ওয়াশিংটন থাইডোয়ার্ফ হানিডিউ, রাচি, পুষা, শিমলা ইত্যাদি । (খ) লম্বা জাত- সেলো, বাংলাদেশে পেঁপের একটি মাত্র জাত আছে যার নাম শাহী পেঁপে ।
উপকরণ
(১) বীজ (২) সার (জৈব-রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি (৭) লাঙ্গল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) ছুরি (১৪) ঝুড়ি (১৫) কলার খোল (১৬) রশি (১৭) বেড়া (১৮) কাতে ।
পেঁপে চাষ করার জন্য নিম্নের কাজ /ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১। পেঁপের উন্নত জাত নির্বাচন করুন । প্রয়োজনীয় বীজ (৭০-৮০ গ্রাম/ একরে) সংগ্রহ করুন ।
২। পেঁপে চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি নির্বাচন করুন ।
৩। সংগৃহীত চারা থেকে বেছে নিরোগ এবং সুস্থ সবল চারা নির্বাচন করুন । চারা তৈরির জন্য প্রথমে বীজকে কাপড়ের পুটুলিতে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিন। ১৩ মি. মাপে (৩-৪ টি) বীজতলা তৈরি করুন। প্রতি বীজতলায় ২০-২৫ গ্রাম বীজ বুনে দিন। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে শোধন করে নিন । বীজ বপনের পর বীজ তলা গুড়া মাটি বা জৈব সার ও খড়কুটা দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিন । বীজ গজালে খড়কুটা সরিয়ে ফেলুন ।
৪ । বীজ গজানোর পর মাঝে মাঝে সেচ (৩-৪ দিন পর পর বিকেলে) দিন । আগাছা হাতে তুলে ফেলুন । বীজতলায় মাটি নিডিয়ে ঝরঝরে ও নরম রাখুন। এভাবে ৬-৭ সপ্তাহ পর্যন্ত চারাকে যত্ন করে বড় (২০-২৫ সে.মি) করুন। এছাড়াও ভাল জাতের পুরানো গাছ থেকে মাউন্ড দাবা কলম করেও চারা সংগ্রহ করতে পারেন ।
৫। পেঁপে জমি লাঙ্গল দিয়ে ভালভাবে ৫/৬টি চাষ ও মই দিন । আগাছা বেছে ফেলুন। মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে ফেলুন । জমি সমতল করুন ।
৬ । জমি তৈরির পর ২.৫ মি. দূরত্বে কোদাল দিয়ে ৯০ সে.মি চওড়া ও ৬০ সে.মি গভীর করে (৭৭৪টি) গর্ত তৈরি করুন । গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন। এরপর প্রতি গর্তে ২০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম খৈল, ৪০০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে মাদা তৈরি করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে নিন । এর ১০-১৫ দিন পর গর্তে চারা রোপণ করুন ।
৭ । বীজতলা থেকে সুস্থ সবল ও বেশি পাতাযুক্ত চারাগুলো সাবধানে মাটি/শিকড়সহ তুলে আনুন । প্রতি মাদায় ২০ ২৫ সে.মি ব্যবধানে (ত্রিভুজাকারে) ৩টি চারা রোপণ করুন । চারা বীজতলায় যতটুকু মাটির নিচে ছিল ঠিক ততটুকুই পুঁতে দিন । চারার পাশের মাটি হাতে হালকাভাবে চেপে বসিয়ে দিন । প্রতিটি চারা ছোট কাঠি পুতে রশি দিয়ে (আলাদা ভাবে) বেঁধে দিন । ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিন । চারার গোড়ার দিকে কিছু পাতা ছেটে ফেলুন । ৩-৪ দিন পর্যনত কলার খালে দিয়ে ছায়া ও সকাল বিকাল ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিন। এরপর ৭ দিন বিকেলে সেচ দিন।
৮ । চারার আশেপাশে আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন। জমির মাটি নরম ও আলগা রাখুন। সেচের পর জো এলে চটা ভেঙে দিন । বয়স্ক গাছ নিড়িয়ে আগাছা মুক্ত রাখুন । প্রতি দুইটি সারির মাঝে কোদাল দিয়ে ৩০ সে.মি চওড়া ও ২০ সে.মি গভীর করে নালা তৈরি করে মাটি দুই দিকে তুলে দিন । গাছে ফুল দেখা দিলে প্রতি মাদায় একটি করে সতেজ উভয় লিঙ্গ/স্ত্রী গাছ রেখে বাকি দুটি চারা গাছ মাটি বরাবর কেটে ফেলুন । তবে প্রতি ২০-২৫ টি গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখুন ।
৯ । সার উপরি প্রয়োগ দু'দফায় করুন । প্রথমবার চারা রোপণের ৪-৫ সপ্তাহ পর এবং দ্বিতীয়বার গাছে ফুল ধরা (৩ মাস) শুরু করলে প্রয়োগ করুন। প্রতিবারে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫০ গ্রাম এমপি প্রয়োগ করুন ।
১০ । সার প্রয়োগের জন্য চারার গোড়ার (৩০ সে.মি দূরে) চারদিকে দুপুরে যতদূর ছায়া পড়ে সে অংশের মাটি নিড়িয়ে আলগা করুন । সার ছিটিয়ে ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিন। রস কম থাকলে সেচ দিন। নালা ভরে পানি দিয়ে সেচের কাজ সমাধা করতে পারেন। বর্ষায় অতিরিক্ত পানি নিকাশের দিকে খেয়াল রাখুন ।
১১ । পেঁপে গাছে অনেক ফল ধরে । কিছু কিছু ফল ছিড়ে পাতলা করে দিন । বর্ষাকাল শুরুর সাথে সাথে গাছের গোড়ায় কোদাল দিয়ে মাটি তুলে দিন ।
১২ । ফলের মাছি দমনে- (১) আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম ডিপটেরেক্স -৮০ গুলে ৮-১০ দিন পরপর ফলে স্প্রে করুন ।
১৩। কাও/গোড়া পচা রোগ দমনে- (১) পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন, (২) উঁচু জমিতে চাষ করুন, (৩) আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করে ফেলুন, ৪) সুস্থ গাছে ও রোগের প্রাথমিক দিকে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০-৩৫ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড-৫০ পাউডার গুলে পক্ষকাল পরপর গাছে স্প্রে করুন, (৫) বীজ শোধন করে বপন করুন।
১৪ । পাতা ও ফল পর্চা রোগ দমনে- (১) ফল ও কাণ্ড রোদ থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করুন । মরচে ধরা রোগ দমনে-(২) রোগাক্রান্ত ফল পাতা তুলে পুড়িয়ে ফেলুন ।
১৫ । পাতার দাগ পড়া দমনে কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করুন।
১৬ । পেঁপে মোজাইক (ভাইরাস) দমনে- (১) আক্রান্ত গাছ উপড়ে পুড়ে ফেলুন, (২) ভাইরাসমুক্ত বীজ সংগ্রহ করুন। দীর্ঘ শস্য পর্যায় অবলম্বন করুন ।
১৭ । গাছে থাকা অবস্থায় পেঁপে হলুদ রং ধরলে (বা আঠা ঘন ভাব ধরলে ফল পেড়ে নিন । রোপনের ১০-১২ মাস পর সংগ্রহ করতে পারেন। সংগ্রহের পর পঁচা, ভাল, খারাপ, ছোট-বড় বেছে নিন । ঝুড়িতে খড়/পাতা বিছিয়ে সাবধানে পেঁপে বাজারে পাঠান বা দূরে চালান দিন । হালুয়া, মোরব্বা, জ্যাম, জেলি তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন । চিত্র ফুল/ফল ও রোপণ পদ্ধতি দ্রষ্টব্য ।
সতর্কতা
১ । শীতের সময় বীজ গজাতে ৪/৫ সপ্তাহ লাগতে পারে । সদ্য সংগৃহীত বীজ থেকে গজানোর হার দ্রুততর ও গজানোর সংখ্যা বেশি হয় ।
২। উত্তম নিকাশের ব্যবস্থা উত্তম ফল দানে সহায়ক ।
৩। কলমের চারা/এফ-১ (হাইব্রিড) (উভয়লিঙ্গ) প্রতি গর্তে একটি চারা দেওয়া চলে ।
৪ । ইউরিয়া সার বেশি প্রয়োগ ভাল নয় । লাল মাটিতে ২৫০ গ্রাম/গর্তে চুন দেয়া ভাল ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পেয়ারা এমন একটি ফল যার মধ্যে একাধিক গুণের বিরল সমন্বয় ঘটেছে যা খুব কম ফলেই লক্ষ করা যায় । ইহা দ্রুত বর্ধনশীল এবং অপেক্ষাকৃত কম যত্নেই যে কোন স্থানে জন্মানো যায় । সাধারণত বীজ ও কলম দিয়ে বংশ বিস্তার করা হয় । বীজের গাছের ফলের গুণগত মাণ ঠিক থাকে না, বিধায় কলমের চারাই উত্তম । গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম দিয়ে বাগান করাই উত্তম ।
উপকরণ
(১) বীজ/চারা (২) সার (জৈব ও রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি ( ৭ ) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) ছুরি (১৩) পলিথিন (১৪) সিকেচার (১৫) খুঁটি (১৬) রশি (১৭) করাত (১৮) ঘেরা ও খাচা (১৯) টিন (২০) ঝাঝরি (২১) বালি ২২) বাঁশ (২৩) ঝুড়ি (২৪) সিরিঞ্জ (২৫) তুলা (২৬) জাল (২৭) আলকাতরা / কেরোসিন (২৮) কোদাল ।
পেয়ারা চাষ করার জন্য নিম্নের কাজ। ধাপ অনুসরণ করতে হবে
১। পেয়ারার উন্নত জাত নির্বাচন করুন। প্রয়োজনীয় বীজ/চারা (কলমের চারা ১৯৪টি / একরে) সংগ্রহ করুন।
২। পেয়ারা চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং উর্বর সুনিষ্কাশিত গভীর বেলে-দোঁআশ মাটি নির্বাচন করুন ।
৩ । উন্নত জাতের গাছ থেকে থাকলে গুটি কলম করে চারা তৈরি করুন ।
৪ । পেয়ারার জমি ভালভাবে লাঙল দিয়ে ৪/৫টি চাষ ও মই দিন । মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে ফেলুন। হাতে আগাছা বেছে ফেলুন। জমি সমতল করুন।
৫ । কলমের চারা ৫মি. (১৫) দূরত্বে রোপণ করুন। জমিতে ৫ মি. দূরত্বে ৬০ সে.মি চওড়া ও ৬০ সে.মি গভীর করে (১৯৪টি গর্ত তৈরি করুন ও গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন । এরপর গর্তে জৈব সার ১০ কেজি, খৈল ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, ছাই ৪ কেজি মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন। এর ১০-১৫ দিনপর গর্তে চারা রোপণ করুন ।
৬ । চারা রোপণের জন্য মাটির বলটি আস্ত রেখে সাবধানে টব থেকে চারা বের করুন । চারা পূর্বে যতটুকু মাটির নিচে ছিল ঠিক ততটুকুই পুঁতে দিন। চার পাশে হাতে চেপে মাটি বসিয়ে দিন। ঘেরা ও বেড়া দিয়ে বেঁধে দিন ।
৭ । চারা গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন। গোড়ার মাটি আলগা রাখুন । সেচের পর জো এলে চটা ভেঙে দিন । বয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে বর্ষার আগে ও পরে কোদাল / লাগুল দিয়ে মাটি আলগা করে দিন । এছাড়াও মাঝে মাঝে নিড়িয়ে মাটি নরম ও আলগা রাখুন ।
৮। পেয়ারা গাছে সার উপরি প্রয়োগ দু'দফায় করুন। অর্ধেক সার বসন্তকালে ও বাকি অর্ধেক শরৎকালে প্রয়োগ করুন।
৯ । চারা রোপণের পরের বছর গাছ প্রতি গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ গ্রাম ও এমপি ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করুন । এরপর প্রতি বছর গোবর ২০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪৫০ গ্রাম ও এমপি ৩৫০ গ্রাম প্রয়োগ করুন। পাঁচ বছর পর বা তদূর্ধ বয়ক গাছে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১.৫ কেজি, টিএসপি ১ কেজি ও এমপি ১ কেজি প্রয়োগ করুন। এসব সার দু' দফায় (৮ নং বর্ণিত নিয়েমে) প্রয়োগ করুন।
১০ । গাছের গোড়ার (৩০-৪০ সে.মি) কিছু দূর থেকে শুরু করে দুপুরে যতটুকু ছায়া পড়ে সে অংশের মাটি কোদাল/লাঙল দিয়ে আলগা করুন। সার ছিটিয়ে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিন। সার মাটি চাপা দিন ।
১১। সার প্রয়োগের পর গাছে থালা পদ্ধতিতে সেচ দিন। চারা গাছে সপ্তাহে ২ বার, বয়স্ক গাছে বর্ষাকাল বাদে ১৫ দিন পরপর এবং ফল আসার সময় ৮/১০ দিন পর সেচ দিন। বর্ষায় পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন।
১২। গাছের কাঠামো গঠনের জন্য গোড়ার ১ মি. এর মধ্যে কোন ডালপালা গজালে হেঁটে ফেলুন। এরপর চারিদিকে প্রসারিত ৩/৪ টি ডালপালা রেখে বাকিগুলো হেঁটে দিন । এছাড়াও গাছের ফেকরি, শুকনো, মরা, রোগাক্রান্ত ডালপালা হেঁটে দিন। ডালসহ ফল সংগ্রহ করতে পারেন।
১৩ । কাণ্ডের মাজরা পোকা দমন-লিচুর বর্ণিত উপায়ে দমন করুন ।
১৪ । ফলের মাছি দমনের জন্য- (১) আক্রানত ফল এবং ফলের গায়ে লেগে থাকা ডিম ধ্বংস করুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম ডিপটেরেক্স-৮০ গুলে ৮-১০ দিন পর পর ফলে স্প্রে করুন।
১৫ । শোষক ও জাব পোকা দমন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪/৫ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ কাটনাশক গুলে গাছে স্প্রে করুন ।
১৬ । ফলের ক্ষত ও ফোস্কা (এনথ্রাকনাসে) রোগ দমন- (১) আক্রান্ত ফল ধ্বংস করে ফেলুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০/৫০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ পাউডার গুলে পক্ষ কাল পরপর ফলে/ঘাতে প্রে করুন ।
১৭ । গাছের মড়ক (উইন্ট) দমন- (১) আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করুন, (২) বেশি করে জৈব সার প্রয়োগ করুন, (৩) নিকাশের ভালো ব্যবস্থা করুন, (৪) আক্রমণের প্রাথমিক স্তরে ডাইথেন এম-৪৫ স্প্রে করুন (১৬ নং বর্ণিত উপায়) ।
১৮ । ফল পরিপক্ক হওয়ার পর (হালকা হলুদ বা ফিকে সবুজ রং ধরার পর) ছিড়ে সংগ্রহ করুন । সংগ্রহ করে ভালো খারাপ বাছাই করুন ঝুড়িতে খড়/পাতা বিছিয়ে পেয়ারা স্তরে স্তরে সাজান। প্রতি সতরের মাঝে খড় বিছিয়ে দিন এবং ঝুড়িতে ভরে বাজারজাত করুন। জ্যাম, জালি তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন ।
সতর্কতা
১। পেয়ারা শুষ্কতা সহ্য করতে পারে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করে না ।
২। ফল বৃদ্ধি হওয়ার সময় জমিতে রসের অভাব ফল বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।
৩ । গাছের বয়স ২৩ বছর হলে, নতুন গাছ লাগানোই উত্তম ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাংলাদেশে অসংখ্য জাতের কুল পাওয়া যায় । তবে অধিকাংশ জাতই নিকৃষ্ট মানের খুব কম সংখ্যক কুলের ভালো জাত পাওয়া যায় । সুপরিচিত উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে- নারিকেলী, কুমিলা, আপেল ও বাউকুল । বীজ, অঙ্গ সংযোজন ও কুঁড়ি সংযোজনের মাধ্যমে কুলের বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের গাছের গুণাগুণ অনিশ্চিত বলে কখনো তা লাগানো উচিত নয় । কুড়ি সংযাজনই কুলের বংশ বিস্তারের সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি ।
উপকরণ
(১) বীজ/চারা (২) সার (জৈব+রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি (৭) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) কোদাল (১৩) করাত (১৪) চাকু (১৫) পলিথিন (১৬) টব (১৭) সিকেচার (১৮) ঝুড়ি (১৯) ঘেরা ও বেড়া ।
কুল চাষ করার জন্য নিম্নের কাজধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১। কুলের উন্নত জাত নির্বাচন করুন । প্রয়োজনীয় বীজ/চারা (১৭০ টি/ হেক্টরে) সংগ্রহ করতে হবে ।
২। কুল চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং উর্বর দোআশ মাটি নির্বাচন করতে হবে ।
৩। সংগৃহীত বীজ/চারা, নার্সারি বেডটবে রোপিত বীজ/চারার ১০/১২ মাস বয়স হলে (মাঘ-ফালগুনে) মাটি বরাবর কেটে দিন । কাটার পর গাছ থেকে বেশ কিছু ডাল গজাবে তা থেকে সতেজ দুটি ডাল রেখে বাকিগুলো কেটে দিন । এরপর গজানো ডাল ২৫-৩০ সে.মি লম্বা হলে মাঝামাঝি অংশে তালি কলম করে নিতে হবে ।
৪ । তারপর ঐ ডাল দুটিতে ১-১.৫ সে.মি চওড়া ও ২-২.৫ সে.মি লম্বা করে ছাল বাকল কেটে উঠিয়ে নিন । এবার একই মাপের কুঁড়িসহ উন্নত গাছের ছাল কেটে এনে ঐস্থানে বসিয়ে দিন। কুঁড়ির মুখটি খোলা রেখে পলিথিন ফিতা দিয়ে বেধে দিন । ৮/১০ দিনপর কুঁড়িটি বড় হওয়া শুর করলে জোড়ার ২/৩ সেমি উপরে (স্টক) ডাল দুটির আগা সিকেচার দিয়ে কেটে ফেলুন। এভাবে চারা তৈরি করে নিন । ২/১ মাস পরেই গাছটি জমিতে রোপণ করতে পারবেন । জোড়ার নিচ থেকে কোন ডাল বের হলে কেটে দিতে হবে ।
৫ । কুলের জমি ভালভাবে লাঙল দিয়ে ৩/৪টি চাষ ও মই দিন। হাতে আগাছা বেছে ফেলুন । জমি সমতল করতে হবে।
৬ । কুলের চারা ৮ মি. (২৫) দূরত্বে রোপণ করুন । জমিতে ৮ মি. দূরত্বে ৯০ সি.মি চওড়া ও ৯০ সে.মি গভীর করে কোদাল দিয়ে গর্ত তৈরি করুন । গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন। এরপর প্রতি গর্তে জৈব সার ১০ কেজি, খৈল ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ গ্রাম, ছাই ৫ কেজি মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন। এর ১০-১৫ দিনপর প্রতি গর্তে চারা রোপণ করতে হবে।
৭। মাটির বলটি না ভেঙে টব থেকে সাবধানে চারা বের করে রোপণ করুন। চারা পাশে হাতে চেপে মাটি বসিয়ে দিন । একটি খুঁটি পুঁতে চারাটি বেঁধে দিন। ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিন। চারাটি বেড়া দিয়ে ঘিরে দিন । চারা মাটির সাথে না লাগা পর্যন্ত ৪/৫ দিন মাঝে মধ্যে সেচ দিতে হবে ।
৮ । চারা গাছের গোড়ায় আগাছা হলে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন। গোড়ার মাটি আলগা রাখুন । সেচের বৃষ্টির পর মাটিতে দিন। সপ্তাহে একবার নিড়ান। বয়স্ক গাছ মাঝে মধ্যে নিভিয়ে দিন । বর্ষার আগে ও পরে কোদাল (লাঙ্গল দিয়ে জমির মাটি আগলা করে দিতে হবে । অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৯ । কুলের চারা রোপণের পরের বছর গাছ প্রতি ১০ কেজি গোবর সার, ইউরিয়া ২০৫ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ ও এমপি ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করুন । পাঁচ বছর পর বা বয়স্ক গাছে জৈব সার ৩০ কেজি ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৫ কেজি ও এমপি ১ কেজি প্রয়োগ করুন। এসব সার প্রতি বছর বর্ষার আগে অর্ধেক ও বর্ষার পরে অর্ধেক পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে।
১০ । গাছের গোড়া থেকে (চারিদিকে ৩০-৬০ সে.মি বাদ রেখে যতদূর পর্যন্ত দুপুরে রৌদ্রের ছায়া পড়ে সে অংশের মাটি কোদাল /লাগুল দিয়ে আলগা করুন। সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে ।
১১ । সার প্রয়োগের পর গাছে থালা পদ্ধতিতে সেচ দিন । চারা গাছ সপ্তাহে ১ বার, বয়স্ক গাছে ফুল /ফল ধরার সময়ে ১৫/২০ দিন পরপর সেচ দিন। বর্ষায় নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২। কলমের গাছের জোড়ার নিচের অংশ থেকে যত ডাল পালা গজাবে তা হেঁটে দিন । চার পাঁচটি প্রসারিত ডালপালা রেখে বাকিগুলো হেঁটে দিন। ফল সংগ্রহের পর বসন্তকালে) ২ সে.মি ব্যাসযুক্ত ডালপালা হেঁটে দিন । এছাড়াও শুকনো, মরা, রোগাক্রান্ত ডালপালা হেঁটে দিতে হবে ।
১৩ । কুলের ছিদ্রকারী পোকা, উইভিল, মিলিবাগ ও বিছা পোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪/৫ চা চামচ ডায়াজিনন-৬০ তরল/ মেটাসিসটকস-২৫ তরল কীটনাশক গুলে গাছে, ফলে ও পাতায় ভালোভাবে (১০/১২ দিন পরপর ২/১ দফায়) স্প্রে করতে হবে ।
১৪ । পাউডারী মিলডিউ দমনের জন্যপ্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩৫/৪০ গ্রাম থিওভিট-৮০ পাউডার গুলে পক্ষকাল পরপর ফলে ও গাছে স্প্রে করতে হবে ।
১৫ । শোষক ও জাব পোকা দমন- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪/৫ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ কীটনাশক গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।
১৬। ফল পরিপক্ক হওয়ার পর (হালকা হলুদ রং ধরার পর) পেড়ে সংগ্রহ করুন । সংগ্রহের পর পোকা ধরা, পঁচা, খারাপ, ফল বাছাই করুন । ঝুড়িতে খড় বিছিয়ে সাবধানে ফল বাজারে বা দূরে চালান দিন । ফল থেকে আচার, চাটনী ইত্যাদি তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন । স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (২৫°- ৩০° সে.) সপ্তাহ কাল এবং হিমাগারে (৪° সে.) ৩৪ সপ্তাহ কাল সংরক্ষণ করতে পারেন ।
সতর্কতা
১। ফুল ও ফলন বাড়াতে অতিরিক্ত ডাল ছাঁটাই, সার প্রয়োগ ও সেচ অবশ্য করণীয় ।
২। উন্নত জাতে পাউডারি মিলডিউ এর উপদ্রব বেশি তাই সতর্ক থাকতে হবে এবং নিরোধমূলক স্প্রে করতে হবে ।
প্রাসঙ্গিক তথা
নারিকেল একটি বহুবর্ষজীবী, একবীজ পত্রী, এক কাণ্ড বিশিষ্ট গুচ্ছমূল উদ্ভিদ। নারিকেলের জাত গুলোকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় । যথা- (১) টিপিকা জাত (লম্বা শ্রেণি) (২) জাভানিকা জাত (মাঝারী লম্বা শ্রেণি) এবং (৩) বামন বা নানা জাত (খাটো শ্রেণি) । নারিকেলের বংশ বিস্তারের জন্য উৎকৃষ্ট গুণাবলি সম্পন্ন মাতৃগাছ নির্বাচন করা উচিত । নারিকেলের বংশ বৃদ্ধি বীজ দ্বারা হয়ে থাকে । নারিকেলের বীজ থেকে উন্নতমানের চারা উৎপাদন করে বাগানে রোপণ করতে হয় ।
উপকরণ
(১) বীজ (২) সার (জৈব ও রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) প্রে যমত্র (৬) পানি (৭) ঝাঝরি (৮) লাঙল (৯) জোয়াল (১০) মই (১১) মুগুর (১২) খুরপি (১৩) কোদাল (১৪) ঝুড়ি (১৫) দা (১৬) রশি (১৭) বস্তা (১৮) বেড়া ।
নারিকেল চাষ করার জন্য নিম্নের কাজ/ ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১। নারিকেলের উন্নত জাত নির্বাচন করুন। নির্বাচিত মাতৃগাছ থেকে সতেজ, সুপক্ক, খোসাসহ, শাস পুরু, বড়, যথেষ্ট পানি আছে, কীট/রোগ মুক্ত এমন ফল (১৫০টি/হেক্টরে) সংগ্রহ করুন ।
২। নারিকেলের জন্য উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত উর্বর দোঁআশ/এঁটেল দোআশ/বেলে দোআশ মাটি নির্বাচন করুন।
৩ । চারা তৈরির জন্য সেচ নিকাশের সুবিধাযুক্ত স্থানে বেলে দোঁআশ ধরনের মাটিতে গভীরভাবে চাষ করে ২মি (৬) প্রস্থ ও ৩ মি. (১০) লম্বা ও ১৫-১২ সেমি. উঁচু করে (২/৩টি) বীজতলা তৈরি করুন। প্রতি বীজতলায় ৭৫/৯০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০-১২০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে ভালভাবে মিশিয়ে দিন। সংগৃহীত বীজ এক মাসের মধ্যেই রোপণ করুন । বীজের মুখের খোসাটি খুলে ফেলুন। প্রতি বীজতলায় ৩০ সে.মি দূরত্বে সারি টেনে ৩০ সে.মি পরপর পার্শ্ব ভাবে চিত্র (দ্রষ্টব্য) বীজ বপন (৪০/৫০ টি) করুন। বীজ সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে না ঢেকে পিঠের সামাণ্য খোলা রাখুন । বীজ বপনের পর বীজতলা খড়কুটা/নারিকেলের পাতা/ ছোবড়া দ্বারা ঢেকে দিন । বৃষ্টি না হলে একদিন পরপর ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিন । বীজতলায় আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন । এভাবে যত্ন করে ৩/৪ মাসের মধ্যে চারা না গজালে তা বাতিল করে তুলে ফেলুন । ৯-১২ মাস বয়ক সুস্থ সবল চারা জমিতে রোপণের জন্য বাছাই করুন ।
৪ । নারিকেলের জমি লাঙল দিয়ে ভালভাবে ৩/৪ টি চাষ ও মই দিন । মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে দিন । আগাছা বেছে ফেলুন । জমি সমতল করে নিন ।
৫। জমিতে ৯ মি. (২৭) দূরত্বে কোদাল দিয়ে ১ মি. চওড়া ও ১ মি গভীর করে গর্ত তৈরি করুন। গর্ত সপ্তাহকাল খোলা রেখে দিন। গর্তের তলায় ১০/১৫ সে.মি পুরু করে নারিকেলের ছোবড়া/তুষ বিছিয়ে দিন। এরপর প্রতি গর্তে ১৫ কেজি জৈব সার, ৪৫০ গ্রাম টিএসপি, ৩০ গ্রাম এমপি ও ৫ কেজি ছাই মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন। গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন। এর ১০/১৫ দিন পর চারা রোপণ করে দিন ।
৬। রোপণের জন্য বীজতলা থেকে সুস্থ ও সতেজ, পাতা গাঢ় সবুজ, বোটা খাট ও প্রশস্ত এমন অঙ্কুরিত চারা নির্বাচন করুন । বীজতলা থেকে দুহাতে ধরে চারা সাবধানে তুলে আনুন । প্রতি গর্তের মাঝখানে বীজের পিঠের কিছু অংশ খোলা রেখে চারা পুতে দিন। চারা স্থানান্তরের জন্য ঝুড়ি ব্যবহার করুন। হাতে চেপে মাটি বসিয়ে দিন । একটি চারা পুঁতে রশি দিয়ে বেঁধে দিন। চারা বেড়া দিয়ে ঘিরে দিন । চারা লেগে না উঠা পর্যন্ত রসের অভাব হলে সপ্তাহে ঝাঝরি দিয়ে ২/১ টি সেচ দিন। রোপণের পর ছায়া দানের ব্যবস্থা করুন ।
৭ । চারা গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন। চারা বাড়ার সাথে নিড়ানি এলাকার পরিসরও বাড়ান । সেচের পর মাটিতে জো এলে মাটির চটা ভেঙে দিন। মাটি আলগা রাখুন। বয়স্ক গাছ মাঝে মাঝে নিড়িয়ে আগাছা মুক্ত করুন ।
৮। নারিকেলের চারা রোপণের পর প্রতি বছর ৫ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করুন । ৫ বছর ও তদুর্ধ বয়স্ক গাছে ১০ কেজি জৈব সার, ইউরিয়া ৮৭০ গ্রাম, টিএসপি ৩২৫ গ্রাম ও এমপি ১.১৪ কেজি প্রয়োগ করুন ।
৯ । এসব সার বছরে দুই দফায় অর্ধেক বর্ষার আগে ও অর্ধেক বর্ষার পরে গাছে প্রয়োগ করুন। গাছের গোড়া (৪০-৬০ সে.মি বাদ রেখে) থেকে ১.০-১.৫ মি দূর পর্যন্ত (দুপুরে যতটুকু স্থানে রৌদ্রের ছায়া পড়ে) মাটি লাঙ্গাল/কোদাল দিয়ে আলগা করে সারগুলি ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। সার প্রয়োগের পর গাছে পাবন/থালা সেচ দিন । চারা গাছে সপ্তাহে ঝাঝরি দিয়ে ২/১ টি সেচ দিন এবং বয়স্ক গাছে বর্ষার পরে ১০/১৫ দিন পরপর পাবন/থালা পদ্ধতিতে সেচ দিন। বর্ষায় নিকাশের ব্যবস্থা করুন।
১০ । মরা, রাগাক্রান্ত, ভেঙে যাওয়া ডালপালা কেটে ফেলুন। হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাওয়া ডাল কেটে ফেলুন । বছরে ২/১ বার গাছ খুব সাবধানে পরিষ্কার করে দিন। শুষ্ক মৌসুমে মাটির রস সংরক্ষণ ও পরিবেশ ঠান্ডা রাখার জন্য গাছের গোড়ার চারদিকে যতদূর ছায়া পড়ে ততটুকু কচুরিপানা/নারিকেলের পাতা বা ছোবড়া দিয়ে ঢেকে দিন । বর্ষাকালে কোদাল দিয়ে গাছের গোড়ায় কিছু মাটি তুলে উঁচু করে দিন ।
১১ । গন্ডার পোকা দমনে পোকার গর্তে তার ঢুকিয়ে দিয়ে পোকা বের করে এনে মেরে ফেলুন। (২) আক্রান্ত মরা গাছ ধ্বংস করুন । (৩) সিরিঞ্জ দিয়ে (১ সিসি) কীটনাশক (ডায়জিনন/ মেটাসিসটক্স) গর্তে ঢুকিয়ে পোকা মারুন । (৪) আলকাতরা / তারপিন তেল/ কেরোসিন তেল গর্তে ঢুকিয়ে দিন । কাদা দ্বারা গর্তের মুখ বন্ধ করে রাখুন । (৫) বাগানে গোবর/আবর্জনা জমতে দিবেন না ।
১২। লাল পোকা উইভিল দমনে পঁচা খৈলের ফাদ পেতে পোকা ধরে মারার জন্য একটি খোলা পাত্রে পচা খৈল গর্তের মুখের কাছে রেখে দিন। পোকা বের হয়ে আসলে ধরে মেরে ফেলুন। ২/২০ গ্রাম সেভিন পাউডার ১ লিটার পানিতে গুলে সিরিঞ্জ দিয়ে গর্তে ঢুকিয়ে দিয়ে পোকা মেরে ফেলুন ।
১৩ । কালোমাথা শুয়া পোকা দমনে- (১) আক্রান্ত পাতা ধ্বংস করুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪ চা চামচ ডায়াজিনন ৬০ তরল কীটনাশক গুলে গাছের পাতায় ভালোভাবে স্প্রে করে দিন ।
১৪ । উইপোকা দমনে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪/৫ চা চামচ ডায়াজিনন ৬০ তরল গুলে মাটি আলগা করে গাছের গোড়াসহ মাটিতে ভালোভাবে স্প্রে করে দিন ।
১৫ । ইদুর দমনে- (১) আশে-পাশে গর্ত থেকে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলুন, (২) টিনের তৈরি প্রতিন্ধক তৈরি করে গাছের কাণ্ডে লাগিয়ে ইদুরের গাছে উঠা বন্ধ করে দিন ।
১৬ । কুঁড়ি পচা রোগ দমনে- (১) আক্রান্ত মরা গাছ ধ্বংস করে ফেলুন, (২) প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০/৪৫ গ্রাম ডাইথেন-এম-৪৫/ কুপ্রাভিট পাউডার গুলে নিয়ে গাছ, পাতা, কুঁড়িতে ভালোভাবে স্প্রে করে দিন ।
১৭ । ফল পচা ও ভূয়ো নারিকেল দমনে- (১) প্রতি বছর নিয়মিত সার ব্যবহার করুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পানোফিক্স গুলে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করে দিন ।
১৮ । পাতায় দাগ দমনে-১৬ (২) নং অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৯ । ছোট পাতা রোগ দমনে নিয়মিত ও পরিমিত সেচ সার প্রয়োগ করুন ।
২০ । কাণ্ডের রস ঝরা রোগ দমনে ক্ষতস্থান বেছে পরিষ্কার করে আলকাতরা / বোর্দোপেষ্ট লাগিয়ে দিন ।
২১ । শিকড় পচা রোগ দমনে (১) নিয়মিত ও পরিমিত সেচ সার প্রয়োগ করুন এবং নিকাশের ব্যবস্থা নিন, (২) গাছের গোড়া থেকে কিছু মাটি সরিয়ে ১৬ (২) এর অনুরূপভাবে প্রে করুন ।
২২ । ডাব হিসেবে ব্যবহারের জন্য কচি ফল আরোলা দা দিয়ে কেটে সংগ্রহ করুন। এছাড়া সম্পূর্ণ পরিপক্ক ঝুনা নারিকেল সংগ্রহ করুন। সংগৃহীত ফল ভাল-মন্দ, ছাট-বড় বাছাই করে নিন । নারিকেল তৈল/কাপরা করে সংরক্ষণ করতে পারেন । এছাড়া ঝুনা নারিকেল ঘরে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন বহুদিন ।
সতর্কতা
১। বীজের মুখের খোসাটি সরিয়ে ফেলা কর্তব্য । তাতে গজানো সহজ হয় ।
২। পাঁচ মাস পরে না গজানো চারা বাতিল করে নতুন বীজ লাগানো ভালো ।
৩। রোপণের এক বছর পর যদি কোন চারা না বাড়ে তবে তা তুলে ফেলে নতুন চারা রোপণ করা উচিত।
৪ । অন্য সব পরিচর্যা ঠিক থাকলেও (সেচ / সার কীট ও রোগ দমন শুধু পরাগায়ণের অভাবেও ফল ঝরে পড়তে পারে।
৫। গল্ডার ও লাল পোকা থেকে সতর্ক থাকতে হবে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ফসলের নানাবিধ রোগের লক্ষণ প্রতিদিনই আমাদের দৃষ্টিগাচের হয় । এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় গাছ ও রোগ উৎপাদকের মধ্যে অবিরাম মিথষ্ক্রিয়ার ফলে যতক্ষণ রোগে গাছটি মরে না যায় বা গাছের প্রতিক্রিয়ার ফলে রোগ উৎপাদক নিষ্ক্রিয় না হয়ে পড়ে ততক্ষণ উভয়ের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া চলতে থাকে এবং রোগের বিভিন্ন লক্ষণ ক্রমান্বয়ে প্রকাশ পেতে থাকে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
আক্রান্ত ফল গাছ ও ফল, ভাসকুলাম, মাটি খোড়ার যন্ত্র, ডালপালা ছাঁটাই এর কাঁচি, চোষ কাগজ বা খবরের কাগজ, ছোট করাত, হালকা প্রেস, হারবেরিয়াম শিট, ছোট আকারের কাগজের বাক্স, আঠা, গামটেপ, লেবেল, নোটবুক, স্টেলোপেন, পেনসিল, পারমানেন্ট কালি, নমুনা সংরক্ষণের বিভিন্ন আধার, রোগ শনাক্তকরণের বিভিন্ন পুস্তক, ছবি, চার্ট ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ
১। নমুনার জন্য সর্বদা সদ্য আক্রান্ত বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গাছ বা তার অংশ বিশেষ ও যফল সংগ্রহ করতে হবে।
২। রোগ বৃদির অবস্থায় রোগের লক্ষণ কেমন হয় তা দেখার জন্য রোগের বিভিন্ন অবস্থার একাধিক নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
৩ । গাছের পাতা, শিকড়, কান্ড প্রভৃতির নমুনা সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে চোষ কাগজ বা খবরের কাগজের মধ্যে নিয়ে হালকা প্রেসের মধ্যে চাপ দিয়ে রাখতে হবে ।
৪ । নমুনা বড় হলে তা সংগ্রহ করে ভেজা কাপড় বা কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে ভাসকুলামে রাখতে হবে ।
৫। ফল সংগ্রহ করে সেলােেফন ব্যাগে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে ।
৬ । বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে ব্যবহারিক শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে হবে ।
৭। ব্যবহারিক শ্রেণিকক্ষে রোগ শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন পুস্তক, ম্যানুয়াল, আলোকচিত্র ও ছবি এবং হারবেরিয়ামে সংরক্ষিত ও ভেজা নমুনার লক্ষণ মিলিয়ে রোগ সনাক্ত করতে হবে।
৮। সংগ্রহের পরপরই রোগ শনাক্ত করতে না পারলে নমুনাকে ফ্রিজে বা অন্য কোন ঠান্ডাস্থানে রেখে দিয়ে এবং সময় ও সুবিধা মতো শনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে ।
৯ । বিভিন্ন পুস্তক, ছবি, হারবেরিয়ামে সংরক্ষিত নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে রোগকে নিশ্চিত ভাবে সনাক্ত করতে না পারলে নমুনার রোগাগ্রত অংশ হতে প্যাথজেন বা রোগের জন্য দায়ী জীবাণুকে পৃথক করে বা আবাদ মাধ্যমে চাষ করে মাণক্রোস্কোপে দেখে জীবাণু সনাক্ত করতে হবে।
১০ । পুস্তক, ছবি, হারবেরিয়াম শিট ও কাচের আধারে রক্ষিত নমুনার বৈশিষ্ট্য ও জীবাণুর বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে রোগকে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করতে হবে ।
১১ । ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য শনাক্তকৃত রোগের নমুনা সমূহ তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী শুকিয়ে হারবেরিয়াম শিটে অথবা ভিজা অবস্থায় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের দ্রবনে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ব্যবহারিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্য সংরক্ষিত নমুনা অত্যান্ত কাজে লাগে। এ কারণে বিশ্বের বহু দেশে গাছ গাছড়া ও রোগাক্রান্ত গাছের নমুনার জাদুঘর (Plant desease her barium) প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ফলের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ সনাক্তকরণের একটি সহজ উপায় হলো হারবেরিয়াম তৈরিকরণ । হারবেরিয়ামে ফলের বিভিন্ন রোগের শুষ্ক নমুনা সংগৃহীত থাকে এবং তারপাশে রোগের লক্ষণসহ শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য দেয়া থাকে । এতে বিভিন্ন ফলের রোগের নাম জানা, চেনা ও শনাক্তকরণ অতি সহজে এবং অল্প সময়ে সম্ভব হয় ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। রোগাক্রান্ত গাছ, ফুল ও ফলের নমুনা
২। একটি ভারি ও মজবুত প্রেস অথবা চোষ কাগজ বা খবরের কাগজ
৩। হারবেরিয়াম শিট বা নমুনা স্থাপনের কাগজ
৪ । কাগজের ছোটবাক্স, আঠা, গামটেপ, তুঁতে বা মারকিউরিক ক্লোরাইড
৫। লেবেল, কলম, সুতা ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ
১। বাগান হতে রোগাক্রান্ত নমুনা ডাটা ও পাতাসহ ফুল সিকেচার বা চাকু দ্বারা কেটে সংগ্রহ করতে হবে।
২। সংগৃহীত নমুনাগুলো প্রথমে একটি চোষ কাগজে রেখে তার উপর আর একটি চোষ কাগজ রাখতে হবে । এ কাগজের ওপর আবার একটি নমুনা রেখে আগের মত তার উপর একটি কাগজ থাপন করতে হবে। এভাবে পর রাখতে রাখতে একটি নমুনার গাদা তৈরি হবে। এখন গাদাটিকে একটি ভারি প্রেসের দুডালার মধ্যে রেখে যথাসম্ভব জোরে চাপ দিয়ে ফিতা আটকিয়ে রাখতে হবে। প্রেস না থাকলে বিছানার তোষকের নিচে সমাণ স্থানে রাখতে হবে।
৩। প্রেসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা রাখার পর নমুনাগুলো বের করে শুকাতে হবে । আবার বিছানার তোষেকের নিচে তুলে কয়েক দিন রেখে নমুনাগুলো শুকাতে হবে ।
৪ । নমুনা গুলো শুকানোর কয়েক দিন পর চোষ কাগজ বা খবরের কাগজের মধ্য হতে বের করে নিতে হবে।
৫ । এরপর নমুনাগুলো সংগ্রহ করে (শুকানোর পর) হারবেরিয়াম সিটে স্থাপন করতে হবে ।
৬। নমুনা স্থাপনের জন্য ২৯০৪২ সে.মি. সাইজের হারবেরিয়াম সিট ব্যবহার করতে হবে। সিটে নমুনা আটকানোর জন্য আঠা, গামটেপ, সূতা প্রভৃতি ব্যবহার করতে হবে । আঠা লাগানোর জন্য প্রথমে একটি গাস শিটের উপর পাতলা করে আঠা লাগান এবং তার উপর নমুনাকে কিছু উপর থেকে হালকাভাবে ফেলতে হবে । এর ফলে নমুনার নিচের দিকে আঁঠা লেগে যাবে ও পরে হারবেরিয়াম সিটে রাখলে আটকে যাবে। আঠা লাগানো অবস্থায় সিটে স্থাপন করার পর নমুনা কখনও নড়াচড়া করানো যাবে না। কারণ, তাতে নমুনার নিচের আঁঠা সিটের বিভিন্ন স্থানে লেগে সিটকে নষ্ট করে ফেলবে ।
নমুনা সম্বন্ধীয় প্রয়োজনীয় তথ্য সকলের অবগতির জন্য তার পাশে সিটের এক কোনায় নমুনার সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ একটি লেবেল নিম্নোক্তভাবে লিখতে হবে ।
সংগ্রহ নম্বর-
প্রতিষ্ঠান-
রোগের নাম-
পোষাকের নাম-
পরজীবী-
প্রাপ্তিস্থান -
স্থানীয় অবস্থা-
অনুসন্ধানকারী-
তারিখ-
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১। যে ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে সে ফসল অনুযায়ী স্প্রে মেশিন নির্বাচন করতে হবে । যেমন মাঠ ফসলের জন্য হ্যান্ড প্রেয়ার, শক্তি চালিত ন্যাপসেক স্প্রেয়ার, ব্রোয়ার এবং বৃক্ষজাতীয় ফসল বা ফল বাগানের জন্য ফুট পাম্প ইত্যাদি ।
২। আক্রমণকারী পোকার ধরন ও ফসল ক্ষেতের আকার ও ফসলের প্রকৃতি অন্যায়ী প্রেমেশিন নির্বাচন করতে হবে । ছোট বাগান হলে পদপৃষ্ঠ স্প্রেয়ার (Foot pump) বড় বাগান হলে ব্রোয়ার ফুট পাম্প ইত্যাদি ।
৩। কীটনাশকের গঠনের ওপর ভিত্তি করেও সিঞ্চন যন্ত্র নির্বাচন করতে হবে। যেমন-পাউডার জাতীয় কীটনাশকের জন্য ডাষ্টার এবং তরল কীটনাশকের জন্য হ্যান্ড প্রেয়ার, পাওয়ার প্রেয়ার, বোয়ার ফুট পাম্প ইত্যাদি ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। হ্যান্ড স্পেয়ার/পাওয়ার প্রেয়ার/পদ পৃষ্ঠপ্রেয়ার
২। কীটনাশক
৩ । নাড়ন কাঠি
৪ । কীটনাশক প্রতিরোধক পাষোক
৫ । ফসলের ক্ষেত্র (শস্য মাঠফল/ বাগান)
৬। সাদা কাগজ, পেনসিল, রাবার ইত্যাদি
কাজের ধারা
১। ব্যবহারের জন্য নির্বাচিত সিঞ্চন যন্ত্রটি ব্যবহারের উপযোগী আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে । প্রধানত: নিম্নলিখিত বিষয় পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে । (ক) পাম্প করলে যন্ত্রে বাতাস আটকে থাকে কিনা (খ) নজেল দিয়ে পানি সঠিকভাবে নির্গমন হয় কিনা
২। এখন ব্যবহার উপযোগী সিঞ্চন যত্রটির চারভাগের একভাগ পরিষ্কার পানি দ্বারা ভর্তি করতে হবে ।
৩। তারপর সিঞ্চন যন্ত্রে একবারে যতটুকু নির্বাচিত কীটনাশক প্রয়োজন তার চারভাগের একভাগ সিঞ্চন যনেত্রর পানির মধ্যে ঢালতে হবে এবং নাড়ন কাঠি দ্বারা ভালোভাবে নেড়েচেড়ে মিশাতে হবে।
৪ । এরপর আবার চার ভাগের একভাগ পানি ও পূর্বের সমপরিমাণ কীটনাশক মেশিনে ঢালতে হবে এবং নাড়ন কাঠি দ্বারা নাড়াচাড়া করে ভালোভাবে মিশাতে হবে ।
৫ । এবার সিঞ্চন যনেত্র নির্ধারিত দাগ পর্যন্ত সর্বশেষ পানিটুকু ও কীটনাশকটুকু ঢালতে হবে এবং নাড়ন কাঠি দ্বারা ভালোভাবে মিশাতে হবে ।
৬ । অতঃপর কীটনাশক ঢালার পথ অর্থাৎ সিঞ্চন যন্ত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে ।
৭ । এখন হাতলের সাহায্যে পিস্টনের উঠানামা করিয়ে প্রয়োজন মাফিক পাম্প করতে হবে/ফুট পাম্পের ক্ষেত্রে পায়ের সাহায্যে চাপ দিয়ে পাম্প করতে হবে । যতক্ষণ পর্যন্ত পাম্প করতে খুব জোর না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত পাম্প করতে হবে ।
৮ । এবার কীটনাশক প্রতিরোধক পোকাক পরিধান করতে হবে এবং সিঞ্চন যন্ত্রটি কাঁধে তুলে নিতে হবে ।
৯ । যে জমিতে কীটনাশক ছিটাতে হবে সে জমির একপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়াতে হবে । ঘাসের টুকরো, পাতা উড়িয়ে বা ধুয়ার সাহায্যে বায়ু প্রবাহের দিক জেনে নিতে হবে।
১০। এখন সিঞ্চন যন্ত্রের ট্রিগারে চাপ দিয়ে বাতাসের অনুকূলে সমগতিতে এগিয়ে যেতে হবে এবং স্প্রে করতে হবে । সতর্ক থাকতে হবে যাতে কীটনাশক গায়ে না পড়ে ।
১১ । এভাবে জমি/বাগানের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে পৌছানারে পর প্রথম বার স্প্রে কৃত স্থান বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাস মোতাবেক দূরত্ব নিয়ে আবার জমির পূর্বের প্রান্তের দিকে ফিরে আসতে হবে। এভাবে জমিতে প্রে শেষ করতে হবে । সিঞ্চন যন্ত্রের মিশ্রণ শেষ হয়ে গেলে পূর্বের ন্যায় পুনরায় মিশ্রণ তৈরি করে যন্ত্রটি ভরে নিতে হবে এবং পূর্বের পদ্ধতিতে জমিতে স্প্রে করা শেষ করতে হবে।
১২ । পাতার আক্রমণকারী পোকার জন্য গাছের উপর এবং কাণ্ডে বা নিচের দিকে আক্রমণকারী পোকার জন্য পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।
১৩। ফলের বাগানে/উচু বৃক্ষের ক্ষেত্রে পদপৃষ্ঠ প্রেয়ার ব্যবহারের সময় প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও পানি অনুমোদিত মাত্রায় পৃথক কন্টেইনার বালতিতে মিশিয়ে নিতে হবে এবং প্রেয়ারের সাকসন পাইপের নিম্ন প্রান্ত কনটেইনার বা বালতির ভেতর মিশ্রিত কীটনাশকে ডুবিয়ে প্রের কাজ সম্পন্ন করতে হবে ।
সাবধানতা
১। সিঞ্চন যন্ত্র ব্যবহারের কলাকৌশল অনুশীলন কালে কোনরূপ ধূমপান করা যাবে না বা অন্য কোন খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না ।
২। কলাকৌশল অনুশীলনের পর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ।
৩। স্প্রে কার্যক্রম শেষে পরিধেয় সকল কাপড় এবং স্প্রে মেশিন ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে ।
আরও দেখুন...