ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | NCTB BOOK

ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Bacteria)

ব্যাকটেরিয়ার কোষীয় আকার, ফ্লাজেলার বিন্যাস, রঞ্জক গ্রহণ ক্ষমতা, পুষ্টি গ্রহণ, শ্বসন প্রক্রিয়া প্রভৃতির ভিত্তিতে অণুজীববিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়াকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন।

ক. আকৃতি অনুসারেঃ
ব্যাকটেরিয়ার কোষের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের, যথা- গোলাকার, দন্ডাকার, প্যাচানো, কমা চিহ্ণের মতো, অণুসূত্রাকার, বহুরূপী ইত্যাদি। নিচে এদের বর্ণনা দেয়া হলো ।

১. গোলাকার (Spherical) বা কক্কাস (Coccus বহুবচনে -Cocci) : এককোষী গোল বা ডিম্বাকার, একক ব্যাকটেরিয়াকে কক্কাস বলে। সহাবস্থান অনুযায়ী এসব ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন-

মাইক্রোকক্কাস (Micrococcus) : 'কক্কাস ব্যাকটেরিয়া যখন এককভাবে থাকে তখন তাকে মাইক্রোকক্কাস বা মনোকক্কাস বলে । উদাহরণ- Micrococcus flavus.

ডিপ্লোকক্কাস (Diplococcus) : এক্ষেত্রে গোলাকার ব্যাকটেরিয়ারসমূহ কক্কাস – জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে । উদাহরণ-Diplococcus pneumoniae.


স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) : এরা দেখতে গোলাকার এবং একটি সারিতে শ খলাকারে থাকে উদাহরণ-Streptococcus lactis


টেট্রাকক্কাস (Tetracoccus) : যখন কক্কাই (গোলাকার ব্যাকটেরিয়া) দুটি ভিন্নতলে বিভাজিত হয় এবং ৪টি কোষের একেকটি গুচ্ছ গঠন করে। তখন সে অবস্থাকে টেট্রাকক্কাস বলে। উদাহরণ- Gaffkya tetragena.

সারসিনা (Sarcina) : যখন কক্কাই তিনটি ভিন্ন তলে বিভাজিত হয় এবং ৪টি করে এক একটি কোষগুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ-Sarcina lutea.

স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) : এক্ষেত্রে কক্কাই তিনটি ভিন্ন তলে অনিয়মিতভাবে বিভাজিত হয় এবং আঙ্গুরের থোকার মতো একেকটি গুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ- Staphylococcus aureus.

২. দণ্ডাকার বা ব্যাসিলাস (Rod-shaped or Bacillus) : এগুলো দেখতে বেলনাকার বা দণ্ডাকার। একক কোষকে ব্যাসিলাস (Bacillus) এবং একত্রে ব্যাসিলি (Bacilli) বলে। এধরনের ব্যাকটেরিয়ার সহাবস্থান অনুযায়ী এগুলো নিন্মোক্ত ধরনেরঃ

মনোব্যাসিলাস (Monobacillus ) : যখন ব্যাসিলাস এককভাবে অবস্থান করে। উদাহরণ-Bacillus

ডিপ্লোব্যাসিলাস (Diplobacillus ) : যখন দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে দুটি পাশাপাশি সংলগ্ন থাকে। উদাহরণ-Moraxella lacunata.

স্ট্রেপটোব্যাসিলাস (Streptobacillus ) : ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে পাশাপাশি শৃঙ্খলাকারে অবস্থান করে । উদাহরণ- Bacillus tuberculosis.

কক্টোব্যাসিলাস (Coccobacillus ) : ব্যাকটেরিয়া
সামান্য লম্বা বা ডিম্বাকার হয়। Salmonella,

৩. সর্পিলাকার বা স্পাইরিলাম (Spirillum) : এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া-দেহ সর্পিলাকার বা স্ক্রুর মতো প্যাচানো হয় । উদাহরণ-Spirillum minus.

৪. ভিব্রিও (Vibrio) : এগুলো দেখতে কমা আকৃতির, অর্থাৎ দেহ খানিকটা পাক খাওয়া হয়। উদাহরণ- Vibrio

৫. হাইফা বা অণূসূত্রাকার (Hyphac-like) : এগুলো পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট দীর্ঘ অণূসূত্র আকৃতির হয়।
পরিবেশগত অবস্থার কারণে কিছু ব্যাকটেরিয়া তাদের আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়, উদাহরণ- Streptomyces sp.

৬. বহুরূপী (Plcomorphic) : এদেরকে বহুরূপী ব্যাকটেরিয়া বলে।

খ. ফ্ল্যাজেলার সংখ্যা ও অবস্থান অনুসারে:

ফ্ল্যাজেলার সংখ্যা ও অবস্থান অনুসারে ব্যাকটেরিয়া প্রধানত ছয় প্রকার; যথা-

১. অ্যাটিকাস (Atrichous) : এসব ব্যাকটেরিয়াতে কোন ফ্ল্যাজেলা থাকে না; উদাহরণ-Diptheria bacilli

২. মনোট্রিকাস (Monotrichous) : এরূপ ব্যাকটেরিয়ার এক প্রান্তে বা এক পার্শ্বে মাত্র একটি ফ্লাজেলাম থাকে। উদাহরণ-Vibrio cholerae
 

৩. অ্যামফিট্রিকাস (Amphitrichous) : এধরনের ব্যাকটেরিয়ার কোষের দুই প্রান্তে দুটি ফ্ল্যাজেলা থাকে; উদাহরণ-Spirilla serpentans |

৪. সেফালোট্রিকাস (Cephalotrichous) : এসব ব্যাকটেরিয়ার কোষের এক প্রান্তে একগুচ্ছ ফ্ল্যাজেলা থাকে উদাহরণ-Pseudomonas fluorescens.

৫. লফোট্রিকাস ( Lophotrichous) : এধরনের
ব্যাকটেরিয়ার কোষের দুই প্রান্তে দুইগুচ্ছ ফ্ল্যাজেলা থাকে (থাইম্যান, 1950); উদাহরণ-Spirillum volutans

৬. পেরিট্রিকাস ( Peritrichous) : এরূপ ব্যাকটেরিয়া কোষের চারপাশে বহু ফ্ল্যাজেলা থাকে; উদাহরণ- Bacillus tuposus.

গ. রঞ্জক ধারণের ক্ষমতা অনুসারে:

ড্যানিশ চিকিৎসক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান গ্রাম (Hans Christion Gram) ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যাকটেরিয়া কোষে রঞ্জিতকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন । তাঁর নাম অনুসারে এই রঞ্জিতকরণ পদ্ধতিকে গ্রাম রঞ্জণ (Gram stain) পদ্ধতি বলা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রধান রঞ্জক হলো কিস্ট্যান্স ভায়োলেট। এ রঞ্জকের উপর ভিত্তি করে ব্যাকটেরিয়া দুই ধরনের।

১. গ্রাম পরিজটিভ (Gram positive) : এরূপ ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্ট্যাল ভায়োলেট রং ধারণ করে এবং স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে ফেললে রং চলে যায় না; উদাহরণ- Bacillus subjilis।

২. গ্রাম নেগেটিভ (Gram Negative) : এরূপ ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্ট্যাল ভায়োলেট রং ধারণ করে কিন্তু স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে ফেললে রং চলে যায়; উদাহরণ—Salmonella typhi

ঘ. অক্সিজেনের নির্ভরশীলতা অনুসারে:
অক্সিজেনের নির্ভরশীলতা অনুসারে ব্যাকটেরিয়া প্রধানত দুই প্রকার; যথা-

১.অ্যারোবিক (Aerobic) : এরা বাতাসের মুক্ত অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। উদাহরণ- Azotobacter beijerinckia |

২. অ্যানঅ্যারোবিক (Anaerobic) : এরা বাতাসের মুক্ত আক্সজেন ছাড়াই বাঁচে। উদাহরণ-Clostridium

Content added By
Promotion