মস্তিষ্ক

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র | | NCTB BOOK
7

মস্তিষ্ক (Brain):
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত ও জটিল অংশ মানুষের করোটিকার (cranium) মধ্যে সুরক্ষিত থাকে এবং দেহের সকল কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মস্তিষ্ক বলে । ভ্রূণীয় বিকাশের সময় নিউরাল টিউবের সামনের অংশ স্ফীত হয়ে মস্তিষ্ক গঠন করে। প্রাণিজগতের মধ্যে মানব মস্তিষ্কই সবচেয়ে জটিল। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন পুরুষের প্রায় ১৫০০ সিসি ও মহিলাদের প্রায় ১৩০০ সিসি এবং মানব ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থায় মস্তিষ্ক প্রধান তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত থাকে। পূর্ণাঙ্গ মানুষে এটি আরও জটিল রূপ ধারণ করে এবং বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়। মানব ভ্রূণের মস্তিষ্কের গঠনের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ মানুষের মস্তিষ্ককে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-অথমস্তিষ্ক বা প্রোসেনসেফালন (Fore brain or Prosencephalon)

•অথমস্তিষ্ক বা প্রোসেনসেফালন (Fore brain or Prosencephalon)
•মধ্যমস্তিষ্ক বা মেসেনসেফালন (Mid brain or Mesencephalol)
•পশ্চাৎমস্তিষ্ক বা রম্বেনসেফালন (Hind brain or Rhombencephalon)

১.অগ্রমস্তিষ্ক বা প্রোসেনসেফালনঃ অমস্তিষ্ক মস্তিষ্কের প্রধান অংশ গঠন করে। এটি তিন অংশে বিভক্ত, যথা- সেরিব্রাম, থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামস।

ক. সেরিব্রাম (Cerebrum) : দুটি পাশাপাশি অবস্থিত, বড়, কুন্ডলি পাকানো ও খাঁজবিশিষ্ট খন্ড নিয়ে  গঠিত। খন্ডদুটিকে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার (cerebral hemisphere) বলে। সেরিব্রাম মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ (মস্তিষ্কের ওজনের ৮০%-ই হচ্ছে  সেরেব্রাম)  এবং  মস্তিষ্কের  অন্যান্য  অংশকে আবৃত করে রাখে। খন্ডদুটি ভিতরে কর্পাস ক্যালোসাম (corpus callosum) নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত। সেরিব্রামের প্রাচীর দুটি স্তর নিয়ে গঠিন। বহিঃস্তর ৩ সে.মি. পুরু ও গ্রে ম্যাটার (grey matter)-এ গঠিত। নাম সেরিব্রাল কর্টেক্স (cerebral cortex)। এর নিচের স্তরটি অর্থাৎ, সেরিব্রামের অন্তঃস্তর হোয়াইট ম্যাটার (white matter)-এ গঠিত এবং সেরিব্রাল মেডুলা (cerebral medulla) নামে পরিচিত (উল্লেখ্য যে সুষুমাকান্ডের হোয়াইট ম্যাটার থাকে বাইরের দিকে, আর গ্রে ম্যাটার থাকে ভিতরের দিকে)।
ডান সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের পাশ এবং বাম হেমিস্ফিয়ার দেহের ডান পাশ নিয়ন্ত্রণ করে। এ সেরেব্রোল কর্টেক্সের বহির্তল কুণ্ডলিত হয়ে অসংখ্য ভাঁজের সৃষ্টি করে। এসব ভঁজের উঁচু স্থানগুলোকে জাইরি (বহুবচন-gyri, একবচন-gyrus) এবং নিচু স্থানগুলোকে সালকি (বহুবচন-sulci, একবচন-sulcus) বলে। এতে সেরেব্রামকে ৫টি খণ্ডে বা লোবে বিভক্ত দেখা যায়। যেমন- ফ্রন্টাল লোব (frontal lobe), প্যারাইটাল লোব (parietal lobe), টেম্পোরাল লোব (temporal lobe), অক্সিপিটাল লোব (occipital lobe) এবং লিম্বিক লোব (limbic lobe)।
Grey matter = কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ধূসর বর্ণের অংশ যা স্নায়ুকোষ, নিউরোগ্লিয়া ও সিন্যাপস নিয়ে গঠিত।
White matter = কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের টিস্যু যা মূলত মায়েলিনযুক্ত স্নায়ুতন্তু দিয়ে গঠিত। মায়েলিনযুক্ত থাকার কারণে টিস্যুটিকে সাদা চকচকে দেখায়।

কাজ : সংবেদী অঙ্গ থেকে আসা অনুভূতি গ্রহণ ও বিশ্লেষণ করে।
চিন্তা, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি, উদ্ভাবনীশক্তি প্রভৃৎ মানসিক বোধের নিয়ন্ত্রণ করে।
বিভিন্ন সহজাত প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।
বাকশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সব ঐচ্ছিক পেশির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. থ্যালামাস (Thalamus)  : প্রত্যেক সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের সেরিব্রাল মেডুলায় অবস্থিত এবং গ্রে ম্যাটারে গঠিত ডিম্বাকার অঞ্চলের নাম থ্যালামাস । দুটি থ্যালামাই (বহুবচন) একটি যোজক দিয়ে যুক্ত।

কাজ : এটি সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর (sensory nerve) রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ কৱে (স্নায়ু আবেগ → থ্যালামাস → সেরেব্রাম)।
চাপ, স্পর্শ, যন্ত্রণা প্রভৃতি স্থূল অনুভূতির কেন্দ্র সুতর কেন্দ্র, আবেগের কেন্দ্র ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
মানুষের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক আচরণের প্রকাশ ঘটায়।
ঘুমন্ত মানুষকে হঠাৎ জাগিয়ে তোলা ও পরিবেশ সম্বন্ধে সতর্ক করে তােলে।


গ. হাইপোথ্যালামস (Hypothalamus): এটি থ্যালামাসের ঠিক নিচে অবস্থিত, গ্রে ম্যাটার নির্মিত এবং অন্তত এক ডজন  পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত অংশ। অংশগুলো সুনির্দিষ্ট কাজে নিযুক্ত থাকে হাইপোথ্যালামস একটি সূক্ষ্ম অংশের পিটুইটারি গ্রন্থির সংগে সংযুক্ত। এটি লিম্বিক সিস্টেম (limbic system; আচরণগত ও আবেগ সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করে)-এর মূল অংশ।কাজ : স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুকেন্দ্রের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।
দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘাম, ঘুম, রাগ, সীভন, ভালো লাগা, ঘৃণা, উদ্বেগ প্রভৃতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ভ্যাসোপ্রেসিন ও অক্সিটোসিন নামে দু’রকম নিউরোহরমোন সরাসরি ক্ষরিত হয় এবং তা পশ্চাৎ পিটুইটারির মধ্যে জমা থাকে।

২.মধ্যমস্তিষ্ক (Mesencephalon):
হাইপোথ্যালামাসের নিচে এবং সেরেবেলামের সম্মুখে অবস্থিত ছোট ও সংকোচিত অংশকে মধ্যমস্তিষ্ক বা মেসেনসেফালন বলে। এটি হোয়াইট ম্যাটার দিয়ে গঠিত এবং মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় গহব্বকে ঘিরে রাখে । অঙ্কীয়দেশে এটি একটি স্নায়ুরজ্জু দ্বারা থ্যালামাস পনস ও সেরেবেলামকে সেরিব্রাম  হেমিস্ফিয়ারের সাথে যুক্ত করে।

ক. টেকটাম (Tectum) : এটি মধ্যমস্তিষ্কের পৃষ্ঠীয় অংশ।

খ. সেরেব্রাল অ্যাকুইডাক্ট (Cerebral aqueduct) : এটি মধ্যমস্তিষ্কের ভিতরে অবস্থিত এবং মস্তিষ্কের তৃতীয় ও চিত্র চতুর্থ গহ্বরকে সংযুক্ত করে।

গ. কর্পোরা কোয়াড্রিজেমিনা (Corpora quadregemina) : এটি মধ্যমস্তিষ্কের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত এবং দুটি গোলাকার খণ্ড নিয়ে গঠিত।

ঘ. সেরেব্রাল পেডাল (cerebral peduncle) : এটি মধ্যমস্তিষ্কের অঙ্কীয়দেশে দুটি নলাক গঠিত।

কাজ : এটি অগ্র ও পশ্চাৎমস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে।
দর্শন ও শ্রবণ তথ্যের সমন্বয় ঘটায়।
 

৩.পশ্চাৎমস্তিষ্ক (Rhombencephalon): মস্তিষ্কের পশ্চাৎঅংশ ৩টি প্রধান অংশ দিয়ে গঠিত, যথা-

ক. সেরেবেলাম (cerebellum) : এটি পশ্চাৎমস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ যা সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের নিচে অষ দুটি সমগোলার্ধে গঠিত। গোলার্ধ দু’টি ভার্মিস (vermis) নামে একটি ক্ষুদ্র যোজকের সাহায্যে যা বাইরের অংশ গ্রে ম্যাটার-এ এবং ভিতরের অংশ হোয়াইট ম্যাটারে-এ গঠিত। পূর্ণ বয়স্ক মানুষে সেরে প্রায় ১৫০ গ্রাম।
কাজ :ঐচ্ছিক চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে।
ঐচ্ছিক পেশির পেশিটান নিয়ন্ত্রণ করে।
দেহের ভার বজায় রাখে।
চলাফেরার দিক নির্ধারণ করে।

খ. পনস (pons) : এটি মেডুলা অবলংগাটার উপরের অংশের মেঝেতে অবস্থিত এবং আড়াআড়ি স্নায়ুতন্তু নির্মিত।
কাজ : সেরেবেলাম, সুষুমাকান্ড ও মস্তিষ্কের অংশের মধ্যে রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে।
পেশির কর্মকান্ড সমন্বয় করে।
স্বাভাবিক শ্বাসক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে।

গ. মেডুলা অবলাংগাটা (Medulla obolongata) : এটি পনস-এর নিচের কিনারা ঘেঁষে প্রসারিত, অনেকটা পিরামিড আকৃতির দন্ডাকার অংশ যা লম্বায় প্রায় ৩ সেমি চওড়ায় ২ সেমি. এবং স্থূলত্বে ১.২ সেমি.।
কাজ : হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, গলাধঃকরণ, কাশি, রক্তবাহিকার সংকোচন, লালাক্ষরণ প্রভৃতির স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
বমন, মল-মূত্রত্যাগ, রক্তচাপ, পৌষ্টিকনালির পেরিস্ট্যালসিস প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সুষুম্নাকান্ড ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করে।
মেডুলা অবলংগাটা IX, X, XI ও XII নং করোটিক স্নায়ুর উৎসস্থল হিসে সংশ্লিষ্ট স্নায়ুর কাজ সংশ্লিষ্ট স্নায়ুর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
মধ্যমস্তিষ্ক, পনস ও মেডুলা অবলংগাটাকে একত্রে ব্রেইন স্টেম (brain ‍stem) বলে।


মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকল / গহ্বর / প্রকোষ্ঠ (Ventricles of Brain):
মস্তিষ্কের গঠন নিরেট নয়, এর অভ্যন্তরে তরলপূর্ণ গহ্বর থাকে। গহ্বরগুলোকে ভেন্ট্রিকল (ventricle) বলে। মানুষের মস্তিষ্কে ৪টি ভেন্ট্রিকল দেখা যায়। এগুলো ২টি পার্শ্বীয় ভেন্ট্রিকল, ৩য় ও ৪র্থ ভেন্ট্রিকল নামে পরিচিত। মস্তিষ্কের গহ্বরে বিদ্যমান তরল পদার্থের নাম সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (cerebrospinal fluid)।

পার্শ্বীয় ভেন্ট্রিকল (Lateral Ventricles) : অগ্রমস্তিষ্কের দুটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত ভেন্ট্রিকল দুটিকে পার্শ্বীয় ভেন্ট্রিকল বলে।

তৃতীয় ভেন্ট্রিকল (Third Ventricle) : অগ্রমস্তিষ্কের দুটি থ্যালামাসের মধ্যবর্তী গহ্বরকে ৩য় ভেন্ট্রিকল বলে। ইন্টারভেন্ট্রিকুলার ফোরামিনা-র সাহায্যে এটি পার্শ্বীয় ভেন্ট্রিকল দুটির সাথে যুক্ত থাকে।

চতুর্থ ভেন্ট্রিকল (Fourth Ventricle) : এটি পশ্চাত্মস্তিষ্কের মধ্যে অবস্থান করে। সেরেব্রাল অ্যাকুইডাক্ট-এর মাধ্যমে এটি তৃতীয় ভেন্ট্রিকলের সাথে যুক্ত থাকে।

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

সেরেব্রাম
মেয়েবেলাম
মেডুলা অবলংগাটা
মধ্য মস্তিষ্ক
হাইপোথ্যালামাস
পন্স
মেডুলা অবলংগাটা
সেরেবেলাম
Promotion