তোমার পাশের বন্ধুর সাথে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রার্থনার মাধ্যমে সেশনটি শুরু করো। এ সেশনেও শিক্ষক তোমাদের জন্যে শ্রেণিকক্ষে পবিত্র বাইবেল ও শিশুতোষ বাইবেল সংগ্রহে রাখবেন।
বাইবেলের নির্ধারিত অংশটুকু তোমরা নিজেরা দুই/তিন বার পড়ো। পরে শিক্ষক তোমাদের সকলের জন্যে আরেকবার পড়বেন এবং ব্যাখ্যা করবেন। তুমি মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের পড়া ও ব্যাখ্যা শুনবে।
সমস্ত লোকের প্রতি ঈশ্বরের এবং যীশু খ্রীষ্টের ভালোবাসা
যোহন ৩:১৬
"ঈশ্বর মানুষকে এত ভালোবাসলেন যে, তার একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।"
১ যোহন ৩:১৬
"খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন, তাই ভালবাসা কি তা আমরা জানতে পেরেছি। তাহলে ভাইদের জন্য নিজের প্রাণ দেয়া আমাদেরও উচিৎ।"
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
ঈশ্বর সকল মানুষকে ভালোবাসেন। ঈশ্বর নিজেই ভালোবাসা। ঈশ্বরের ইচ্ছা পৃথিবীর সকল মানুষ যেনো পরিত্রাণ পায়। কেউ যেন বিনষ্ট না হয়। এ জন্যে ঈশ্বর মানুষকে ভালোবেসে তাঁর একমাত্র ও অদ্বিতীয় পুত্রকে এই পৃথিবীতে পাঠালেন, যেন পুত্রকে বিশ্বাস করে সকলে জীবন পায়। যীশু খ্রীষ্টকে এ পৃথিবীতে পাঠানোর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের ভালোবাসা আমাদের মাঝে প্রকাশিত হয়েছে।
যীশু খ্রীষ্ট মানুষকে ভালোবেসে ক্রুশে নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন, যেন আমরা তাঁর ভালোবাসা বুঝতে পারি। তাঁকে বিশ্বাস করে অনন্ত জীবন পেতে পারি। যীশু আমাদেরকে শুধু জীবন দিতেই নয়, পরিপূর্ণ জীবন দিতে এসেছিলেন। যীশু খ্রীষ্ট চান যেনো আমরাও একজন অন্যজনকে ভালোবাসি। আমরা অন্যকে ভালোবাসার মাধ্যমে ঈশ্বরের শিষ্য হতে পারি। যীশু আমাদের ভালোবেসেছেন এবং অন্যদের ভালোবাসতে বলেছেন। অন্যদের ভালোবাসা মানে যীশুকেই ভালোবাসা। অন্যের সেবা করা মানে যীশুরই সেবা করা। আমরা যখন ক্ষুধার্তকে খাবার দিই, তৃষ্ণার্তকে পানি দিই, বস্ত্রহীনকে কাপড় দিই, গৃহহীনকে আশ্রয় দিই, অসহায়কে সাহায্য করি, অসুস্থ লোকের সেবা করি, বন্দিকে দেখতে যাই এবং অতিথির সেবা করি, তখন আমরা যীশুরই সেবা করি।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
প্রেরিত ২:১৬-২১
'এটা সেই ঘটনার মত যার কথা নবী যোয়েল বলেছিলেন যে, ঈশ্বর বলছেন, শেষকালে সব লোকের উপরে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব; তাতে তোমাদের ছেলেরা ও মেয়েরা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাবে, তোমাদের বুড়ো লোকেরা স্বপ্ন দেখবে। এমন কি, সেই সময়ে আমার দাস ও দাসীদের উপরে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব, আর তারা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলবে। আমি উপরে আকাশে আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা দেখাব, আর নীচে পৃথিবীতে নানারকম চিহ্ন দেখাব, অর্থাৎ রক্ত, আগুন ও প্রচুর ধূমা দেখাব। প্রভুর সেই মহৎ মহিমাপূর্ণ দিন আসবার আগে সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে ও চাঁদ রক্তের মত হবে। রক্ষা পাবার জন্য যে কেউ প্রভুকে ডাকবে সে রক্ষা পাবে।'
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশু খ্রীষ্টের জন্ম থেকে তাঁর পুনরাগমন পর্যন্ত সময়কে শেষকাল বলা হয়। খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন থেকে অনন্তকাল শুরু হবে। আমরা এখন শেষকালে আছি। ঈশ্বর এ শেষকালে সকল বয়সের এবং শ্রেণির লোকদের মধ্যে তাঁর আত্মা ঢেলে দেবেন। তিনি ছেলে, মেয়ে, যুবক, যুবতী, বুড়ো, বুড়ি, দাস, এবং দাসী সকলের উপর তাঁর আত্মা ঢেলে দেবেন যেন সকলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকতে পারে। তারা বিভিন্ন কাজ করলেও, ঈশ্বরের আত্মার পরিচালনায় একসাথে মিলেমিশে কাজ করবে। ঈশ্বর চান যেন আমরা সকলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকি। তিনি চান যেন আমরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ জীবন যাপন করি এবং যতদূর সম্ভব আমরা যেন সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকি। কারণ সকলের সংগে শান্তিতে সহাবস্থানে থাকা আমাদের জন্যে ঈশ্বরের ইচ্ছা। এ জন্যে আমাদের ধৈর্যশীল ও সহনশীল হতে হবে।
খ্রীষ্টানদের দ্বারা পরিচালিত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হোস্টেল ও অনাথআশ্রম আছে যেখানে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একসংগে অবস্থান করছে। তারা সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে নিজেদের উন্নয়ন করছে।
পরমতসহিষ্ণুতা
১ পিতর ৩:১৫-১৬
"যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় সহকারে উত্তর দিও, সৎবিবেক রক্ষা কর, যেন যাহারা তোমাদের খ্রীষ্টগত সদাচরণের দুর্নাম করে, তাহারা তোমাদের পরিবাদ করণ বিষয়ে লজ্জা পায়।"
পবিত্র বাইবেলের এই অংশে প্রত্যেক বিশ্বাসীকে অন্তরস্থ প্রত্যাশার বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। অন্যের সাথে মৃদুতা ও সম্মানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যের মতামতের প্রতি সম্মান রেখে কথা বলতে বলা হয়েছে। একজন বিশ্বাসী যখন অন্যের সাথে সদাচরণ করে, তখন আমাদের খ্রীষ্টগত আচরণের দ্বারা ঈশ্বরের গৌরব হয়। আমরা পরমতসহিষ্ণুতার বিষয়ে আরও একটি বাইবেলের পদ দেখি।
১ পিতর ২:১৭
"সব লোককে সম্মান কর, তোমাদের বিশ্বাসী ভাইদের ভালবাস, ঈশ্বরকে ভক্তি কর, সম্রাটকে সম্মান কর।"
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
পবিত্র বাইবেলের এই অংশে ঈশ্বর আমাদের জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রথমত, ঈশ্বর সকল মানুষকে সম্মান করতে বলেছেন। সকল মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং সকলেই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ও সাদৃশ্যে সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তি ঈশ্বরের সম্প্রদানযোগ্য গুণাবলির অধিকারী। তাই ঈশ্বর বলেছেন যে, আমাদের সকল মানুষকে সম্মান করতে হবে এবং পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। এই শাস্ত্রাংশে সকল মানুষ বলতে সকল ধর্মের, বর্ণের, সম্প্রদায়ের ও পেশার লোকদের বুঝানো হয়েছে। কিন্তু আজকাল আমরা আমাদের ব্যক্তিগত মতামতকে যতটা বেশি প্রাধান্য দেই, অন্যের মতামতকে ততটা গুরুত্ব দেই না। ঈশ্বর তাঁর বাক্যে আমাদের অন্যের মতামতকে গুরুত্ব ও সম্মান করতে বলেছেন, কারণ আমরা সকলেই ঈশ্বরের সৃষ্টি।
দ্বিতীয়ত, ঈশ্বর আমাদের ভ্রাতৃ সমাজকে প্রেম করতে বলেছেন। এখানে ভ্রাতৃসমাজ বলতে যীশুখ্রীষ্টে বিশ্বাসী সকলকে বুঝিয়েছেন। বিশ্বাসীদের দেশ, জাতীয়তা, ভাষা, রং, শিক্ষাগত যোগ্যতা যা-ই হোক না কেন আমরা যেন সকলকে সম্মান করি ও সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেই।
তৃতীয়ত, ঈশ্বর আমাদের তাঁকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করতে বলেছেন। ঈশ্বর হলেন সকল মানুষের স্রষ্টা। তাই তাঁকে ভক্তি করে চলা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
চতুর্থত, ঈশ্বর আমাদের রাজাদের সম্মান করতে বলেছেন। অর্থাৎ আমরা যে দেশে বাস করি সেই দেশের সরকার ও কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা। সরকারের মতামতকে সম্মান করা, দেশের আইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা, সকল মানুষের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ।
পরমতসহিষ্ণুতা খ্রীষ্টিয় শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যের মতামত শোনা এবং সম্মান করা প্রত্যেকটি খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসীর জন্যে পালনীয়। এই জন্যে যতদূর সম্ভব আমরা যেন অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, পরস্পরের সাথে শান্তি রক্ষা করি এবং নম্রভাবে অন্যদের সাথে কথা বলি। যখন কেউ আমাদের বিশ্বাসের বিষয় জিজ্ঞেস করে, আমরা যেন নম্রভাবে, মৃদুভাবে, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বাসের কারণ ব্যাখ্যা করি। অন্যে দুঃখ পায় বা অন্যকে আঘাত দিয়ে আমরা যেন কখনও বলি। এমনভাবে আঘাত করে যেন কারো সাথে কথা না বলি। আমাদের আচরণে কেউ যেন কষ্ট না পায়।
তালিকা তৈরি করি
প্রিয় শিক্ষার্থী, পরমতসহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকার জন্যে বাইবেলের শিক্ষার আলোকে একটি নির্দিষ্ট কাজ করার ক্ষেত্রে সকলের ভিন্ন ভিন্ন মতকে সম্মান জানিয়ে কীভাবে একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় তার একটি পরিকল্পনা তোমাকে তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনাটি তৈরি হলে কীভাবে কাজটি করেছ সেই বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে একেকজন উপস্থাপন করো।
শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে সবার শুভকামনা করে সেশন শেষ করো।
আরও দেখুন...