এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা বর্তমানে বিশ্বে যে যে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছে তার প্রেক্ষাপট ও কারণ শনাক্ত করব। এরপর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানব। বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করে সাদৃশ্য বা মিল বের করব। সবশেষে, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে একটি 'স্বাধীনতা মেলা' এর আয়োজন করব। এই মেলাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল উপস্থাপন করব।
আমরা বিগত ক্লাসগুলোতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এই যুদ্ধ নয় মাস ব্যাপী হলেও এর বীজ বপন হয়েছিল অনেক আগে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আমরা এই সম্পর্কে কিছুটা জেনেছি। এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা আরও বিস্তারিত জানব।'
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতো পৃথিবীতে বর্তমানে কয়েকটি দেশে যুদ্ধ চলছে। আমরা হয়তো অনেকেই জানি কোন কোন দেশে এই যুদ্ধ হচ্ছে। এই যুদ্ধ কেনো সংঘটিত হচ্ছে সে বিষয়েও কিছুটা ধারণা আছে। চলো আমরা দলগত কাজের মাধ্যমে সেইসব যুদ্ধ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিই।
দলগত কাজ ১: |
এই শিখন অভিজ্ঞতার দলীয় কাজগুলো করার জন্য আমরা নতুন করে ৫-৬ জনের একটি দল গঠন করি। দলে বসে আমরা বর্তমান বিশ্বে কোন কোন দেশে যুদ্ধ হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করি। বিভিন্ন উৎস যেমন:সংবাদপত্র/ বই ইত্যাদি থেকে তথ্য নিই। এরপর দলে আলোচনা করে আমরা সেই সব দেশে কেনো যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে তা নিচের ছকে লিখি। প্রতিদল থেকে ১-২ জনকে আমরা নির্বাচিত করব আমাদের দলীয় কাজ উপস্থাপন করার জন্য।
বর্তমানে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধ | কেনো এই যুদ্ধ হচ্ছে |
|
এখন আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বিষয় জেনে নিই।
বাংলা অঞ্চলের মানুষের ইতিহাস কত হাজার বছরের পুরোনো? নিশ্চয়ই মনে আছে তোমাদের? আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগেও যে বাংলা অঞ্চলে মানুষের বিচরণ ছিল, তা আমরা ইতিহাসের অন্য অধ্যায়গুলো পাঠ করে ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছি। আদিকালে বাংলা অঞ্চলে নানান স্থানের নানান রকমের মানুষ একের পর এক বসতি স্থাপন করেছে। বাংলার বিশেষ ভূপ্রকৃতি তাঁদেরকে দিয়েছে নানান সুবিধা-অসুবিধা আর টিকে থাকার পথে নানান রকমের প্রতিবন্ধকতা।
বাংলায় মানুষের টিকে থাকার ইতিহাস তাই একদল মানুষের নিজস্ব প্রাণশক্তির ইতিহাস। দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর সমন্বয়ের বৈচিত্র্যে সাজানো ইতিহাস। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার পাশাপাশি বাংলা অঞ্চলের মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড়ো আরও একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নানান রাজশক্তির আগমন এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাত থেকে ১৯৭১ সালে আসে মুক্তি, আসে স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী একজন নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়ে বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসে তাঁর মতো আর কোনো নেতাকে আমরা পাইনি যিনি বাংলার মাটি-পানি-কাদা আর ঝড়বৃষ্টির পরিবেশ থেকে উঠে এসে সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই ভূখণ্ডের এক অতি সাধারণ পরিবার থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন। আমৃত্যু তিনি সাধারণ মানুষের জন্যই কাজ করে গেছেন।
ব্রিটিশ শাসকরা বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণে সম্পদ লুট করে নেয়ার জন্য এমনকিছু নীতি গ্রহণ করেছিল যার অনিবার্য পরিণতিতে সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, কারিগরসহ সকল সাধারণ পেশাজীবী মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছিল। ফলে ব্রিটিশ শাসক ও তাঁদের অনুগত জমিদার শ্রেণির বিরুদ্ধে মানুষ সশস্ত্র প্রতিবাদ, বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত হতে থাকে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, তিতুমীরের আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলনসহ নানান প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন এই সময় সংঘটিত হয়।১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার নামে এই সময় ভারত ভাগ করে তৈরি করা হয় ভারত ও পাকিস্তান নামের পৃথক দুটি রাষ্ট্র। একই কারণ দেখিয়ে বাংলা অঞ্চলের পূর্বাংশের একটি অংশকেও যুক্ত করা হয় দুই হাজার দুইশ কিলোমিটার দূরবর্তী পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলার দুই অংশের মধ্যেই নানান ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষের বসতি ছিল। একই সঙ্গে ছিল একই ধর্মের নানান তরিকার মানুষের বসতি। এই বৈচিত্র্য আর বহুত্বের বাস্তবতার মধ্যেই দেশভাগ করে হিন্দু আর মুসলমানের নামে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরি করা হয়। বাংলা অঞ্চলের পূর্ব অংশের (পূর্ব বাংলার) মানুষ পাকিস্তান শাসন কাঠামোর অধীনে নতুন এক শোষণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের শাসকেরা বাংলা অঞ্চলের পূর্বাংশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সকল সুবিধা নিজেদের দখলে নেয়। বাংলার পূর্বাংশের মানুষের সঙ্গে প্রভূর মতো আচরণে লিপ্ত হয়। ফলে পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী শাসকদের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষের মনে চরম বিক্ষোভ তৈরি হয়। ১৯৪৮ সালের পর থেকেই শুরু হয় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিজেদের মুক্ত করার লড়াই। আর বাংলার মানুষের এই লড়াই ও সংগ্রামে যিনি অগ্রভাগে থেকে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন, তিনি হলেন তাঁদের আপনজন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ অত্যাচারী শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এজন্যই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। এই বিজয় ক্ষমতালোভী শাসক ও শোষকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিজয়। খেটে খাওয়া শ্রমিক, কৃষক, কারিগরসহ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের বিজয়। এই বিজয়ের পথ সহজ ছিল না। এর পেছনে রয়েছে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের এক দীর্ঘ ইতিহাস। বাংলার জল-কাদা-পলিমাটি থেকে উঠে আসা একজন সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মানবিকতা, সাহস আর আত্মত্যাগের ইতিহাস।
শেখ মুজিব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইংরেজ শাসিত 'ব্রিটিশ ভারত' উপনিবেশের পূর্ব-প্রান্তে বাংলা নামক একটি প্রদেশের (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) পূর্ব অংশে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায়। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, বর্তমানে গোপালগঞ্জ পৃথক একটি জেলা হিসাবে বিদ্যমান। দিনটা ছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ব্রিটিশ ভারতের বিশেষ এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ শাসকদের বিতাড়িত করে মুক্তি লাভের জন্য ভারতের চারিদিকে তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে মাত্র ষোলো বছর বয়সেই শেখ মুজিবের ভেতর এই চেতনা জাগ্রত হয় যে, স্বাধীনতা আনতে হবে। এই দেশে ইংরেজদের থাকার কোনো অধিকার নেই। বঙ্গবন্ধু তখন নিয়মিত স্বদেশি আন্দোলনের বিপ্লবী নেতাদের কাছ থেকে বিপ্লবী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা শুনতেন। স্বদেশী আন্দোলন হলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন যা ১৯০৩ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল। নবম আর দশম শ্রেণিতে এ বিষয়ে তোমরা বিস্তারিত পরিসরে জানতে পারবে।
কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিবাদ সভায় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান (পেছনে দাঁড়ানো) এবং হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী (১৯৪৭)।
ভাষা, ধর্ম, সম্প্রদায় কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষের প্রতি ছিল বঙ্গবন্ধুর দরদ। ১৯৪৭ সালের আগে বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা এবং মহামারির সময় শেখ মুজিব হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধসহ সকলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দাঙ্গার সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষ পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভাষা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সাহায্য করেছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দাঙ্গায় উগ্রবাদী হিন্দুদের থেকে সাধারণ মুসলমানদের এবং উগ্রবাদী মুসলমানদের হাত থেকে সাধারণ হিন্দুদের রক্ষা করেছেন। ১৯৪৭ সালে তরুণ ছাত্রনেতা হিসাবে শেখ মুজিব হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক রায়টের বিরুদ্ধে কলকাতায় মহাত্মা গান্ধীর প্রতিবাদকে সমর্থন করেন।
১৯৪৮ সালেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী তথাকথিত অভিজাত শাসকেরা বাংলার পূর্ব অংশের মানুষের ওপর নতুন করে শোষণের এক জাল বিস্তারের নীলনকশা আঁকতে শুরু করেছেন। শেখ মুজিব বুঝতে পারেন, পাকিস্তান নামের নতুন এই কাঠামো কেবলই শোষণ-বঞ্চনা ও বৈষম্যের এক রাজনৈতিক খোলস বদল মাত্র। তিনি পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত হন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পরপরই পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর প্রথম আঘাত আসে ভাষার প্রশ্নে। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় উর্দুভাষী নেতারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করার উদ্যোগ নেন। পূর্ব বাংলার সচেতন রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল এবং সভা-সমাবেশ শুরু করেন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলন তীব্র রূপ লাভ করে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগানে এইদিন ঢাকা শহর মুখর হয়ে ওঠে। সারা দেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল এবং ধর্মঘট পালিত হয়। পূর্ব বাংলার সাধারণ শিক্ষার্থী, সচেতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছায়। পাকিস্তানি শাসকেরা এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দিতে পুলিশি নির্যাতনের পথ বেছে নেন। মিছিল ও ধর্মঘটে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী-জনতার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ মুজিব, অলি আহাদ, শামসুল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা সহ অনেককেই সমাবেশ থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।
১৯৪৯ সালে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয় এবং কারাগারে বন্দি করা হয়। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টন ময়দানের এক জনসমাবেশে 'উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা' বলে আবারও ঘোষণা দেন। ফলে ভাষার দাবিতে পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে চলমান বিক্ষোভ আন্দোলন আবারও তীব্র রূপ ধারণ করে। জেলে বসেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষার দাবিতে চলমান আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করতেন। ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু অনশন শুরু করেন। মৃত্যু অবধি না ভাঙার শপথ নিয়ে শুরু করা এই অনশন ১১ দিন ধরে অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘটের আহ্বান করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ তাতে নির্বিচার গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর - রহমান ভাষাশহিদদের প্রতি শোক জানান এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।