মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন চলছিল অপরিকল্পিত ও অবিন্যস্তভাবে। মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিতভাবে পরিচালিত হতে থাকে । তৎকালীন ইপিআরের বাঙালি সদস্য, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈনিক ও অফিসারদের সমন্বয়ে নিয়মিত সেনা ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয় । নিয়মিত সেনা ব্যাটালিয়ন নিয়ে পরে তিনজন সেক্টর কমান্ডারের নামের আদ্যক্ষরে কে-ফোর্স, এস-ফোর্স ও জেড-ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠিত হয় । সেনাসদস্য ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিতি লাভ করে। কখনো এরা গেরিলা নামেও পরিচয় লাভ করে। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । তারা দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের গোয়েন্দা শাখা পাকিস্তানি বাহিনীর গতিবিধি ও নানা কর্মকাণ্ডের সংবাদ মুক্তিবাহিনীকে সরবরাহ করত । গেরিলাদের মধ্যে ছাত্র ও কৃষকদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি ।
মুজিবনগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে এগারটি সেক্টরে বিভক্ত করে এবং প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্ব একেকজন কমাণ্ডারের হাতে ন্যস্ত করে । সেক্টর কমাণ্ডারদের অধীনে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি অনিয়মিত গেরিলা যোদ্ধারা নিয়োজিত ছিল । উল্লেখ্য, দশ নম্বর সেক্টরের কোনো আঞ্চলিক সীমানা ছিল না। এটি গঠিত হয়েছিল নৌ-কমাণ্ডারদের নিয়ে । প্রচলিত কায়দায় যুদ্ধের পাশাপাশি গেরিলাযুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ক্রমাগত যুদ্ধে জনবিচ্ছিন্ন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্রমশ হীনবল ও হতাশ হয়ে পড়ে । পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে দেখানোর জন্য ভারতের ওপর বিমান আক্রমণ চালায়। ওরা ডিসেম্বর পাকিস্তান সরকার ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতের লোকসভা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উক্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভারত সরকার ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে । এসময়ে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি যৌথ কমান্ড গঠন করা হয়। এই যৌথ কমান্ড জলে, স্থলে ও আকাশপথে প্রবল আক্রমণ চালার। ফলে মাত্র কয়েক দিনের যুদ্ধে পাকবাহিনী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও পরাজিত হয় ।
আরও দেখুন...