এ পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যই হাঁসের খাদ্যের প্রধান উৎস। এরা পরিত্যক্ত শস্যকণা, জলজ আগাছা, ক্ষুদিপানা, পোকামাকড়, কচি সবুজ ঘাস, পাতা, ঝিনুক, শামুক, ছোট মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে ও বংশবিস্তার করে থাকে। তবে এসব হাঁসকে নিয়মিত অল্প পরিমাণে ধান বা গম, চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি, রান্নাঘরের ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ সরবরাহ করা যায়। এরা বাড়ির আঙিনায় ও আশেপাশে চড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে খায় ।
হাওড়-বাওড় এলাকায় জলাশয়ে পানি থাকে বছরে সর্বোচ্চ ৮/৯ মাস। এই সময়ে কৃষকগণ হাঁসকে বাড়তি খাবার দেয় না। তারা হাঁসকে মুক্ত অবস্থায় সারাদিন জলাশয়ে ছেড়ে দেয়। জলাশয় থেকে হাঁস তাদের খাদ্য যেমন- শেওলা, শামুক, ঝিনুক, ছোট মাছ, আগাছা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি গ্রহণ করে তাদের খাবারের ৭০-৮০ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খামারিগণ শুধু কিছু পরিমাণ ধান, গম, কুঁড়া, হাঁসকে খেতে দেয়। অনেকেরই হাঁসের সুষম খাদ্য তৈরি, খাওয়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণাই নেই। তাই এসব হাঁসের ডিম উৎপাদন কমে যায়।
বিল ও হাওড়ের নিকটবর্তী খামারিগণ হাঁসগুলোকে বিল ও হাওড় হতে চড়িয়ে নিয়ে আসেন তখন সামান্য পরিমাণে খাদ্য ও পানি খেতে দিলে ভালো হয়। কারণ এই খাদ্য সারাদিন খাদ্য সংগ্রহ ও অন্বেষণের পর সন্ধ্যার সময় তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে উৎসাহিত করে।
চর এলাকায় বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন নিচু জলাশয়ে বা কর্দমাক্ত এলাকায় হাঁসগুলোকে নিয়ে খেতে দেয়া হয়। সেখান থেকে কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে তাদের মাঠে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, সেখান থেকে সারাদিন ঝরে পড়া ধান খুঁজে খুঁজে খায়। কমপক্ষে মাঠে ২-৩ মাস প্রচুর ধান থাকে যা খেয়ে হাঁস কোনো সুষম খাদ্য ছাড়াই প্রচুর ডিম দিতে পারে। মাঠের ঝরা ধান যখন ফুরিয়ে আসে তখন থেকে অল্প অল্প সুষম খাদ্য খাওয়ানো উচিত। এপ্রিলের দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে ছোট কাঁকড়া গর্ত থেকে বের হয়ে আসে এবং সেখানে শামুক ঝিনুক পাওয়া যায়, তা হাঁস অন্বেষণ করে গ্রহণ করে এবং পরে বর্ষাকাল চলে আসে এবং ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়া পর্যন্ত কোনো সুষম খাদ্য ছাড়াই প্রচুর ডিম দিয়ে থাকে ।
হাঁস মুক্ত পদ্ধতিতে জলাশয়ে চড়ে বিভিন্ন সময়ে খাদ্য উপকরণ সংগ্রহ করে গ্রহণ করাই হল হাঁসের খাদ্যাভ্যাস।
আরও দেখুন...