যন্ত্রপাতি ও লেয়ার সেড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্তকরণ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

১.২.১ লেয়ার বাচ্চা পালনের জন্য কক্ষ পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করণ কৌশল Washing, cleaning and disinfection techniques of shed for Rearing Layer chick

নতুন বা পুরাতন যে ঘর হোক না কেন, “অল ইন অল আউট” পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। একটি ঘরে এক ব্যাচ লেয়ার বাচ্চার পালন করে পুলেট হিসেবে বিক্রি করার কমপক্ষে ১৪ দিন পর অন্য ব্যাচ উঠাতে হবে। এ পদ্ধতি শুধুমাত্র রোগ প্রতিরোধই করে না রোগের জীবাণুকেও ধ্বংস করতে সহায়তা করে । লেয়ার বাচ্চা পালনের জন্য ঘর পরিষ্কার ও জীবানুযুক্ত করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

“অল ইন অল আউট”- একই জাতের একই বয়সের বাচ্চা / মুরগি খামারে একত্রে উঠানো এবং পালন শেষে একত্রে বের করাকে বোঝায়।

(ক) ব্রুডার ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা: 

১) ঘর খালি হওরার সাথে সাথে সমস্ত সরঞ্জাম, হোতার, ব্রুডার গার্ড, লিটার, খাঁচা ইত্যাদি বের করতে হবে।

২) পুরাতন লিটায় ফার্ম থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে। 

৩) ঘরের দেয়াল, দরজা, জানালা, নেট, পর্দা, ডেন্ট্রিলেটর, ফ্যান, বাঘ ইত্যাদি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে। 

৪) ঘরে কোনো মেরামত, সংস্কার ইত্যাদি প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

৫) পরিস্কার পানি দিয়ে দেয়াল, মেঝে, খাদ্য ও পানির পাত্র খুতে হবে। পাইপ দিয়ে উচ্চ চাপযুক্ত পানি প্রবাহের মাধ্যমে ঘর পরিষ্কার উত্তম।

 

(খ) ঘরের মেঝে, খাঁচা ও অন্যান্য সরঞ্জাম জীবাণুমুক্তকরণ: 

১) জীবাণুনাশক যেমন: (পভিসেপ, সুপারসেপ্ট, আয়োসান) দিয়ে খাবার ও পানির পাত্র, হোভার, ব্রুডার গার্ড, ব্রুডার হিটার, দেয়াল, মেঝে, ছাদ, পার্দা ও খামারের আশপাশে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 

২) ভিজা মেঝের উপর ১০০ বর্গফুট স্থানে ১ কেজি হারে শুকনা কস্টিক সোডা ছড়াতে হবে এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর মেঝে শুকিয়ে গেলে কস্টিক সোডার উপর হালকা পানি স্প্রে করতে হবে। 

৩) পরে সমস্ত ঘর পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

৪) বাচ্চা উঠানোর ৬ দিন পূর্বে বাচ্চার সমস্ত জিনিসপত্র আবার জীবাণুমুক্ত করে শুষ্ক করে ভিতরে রাখতে হবে।

 

(গ) ঘরের ভিতর লিটার বিছানো ও অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন: 

১) বাচ্চা ব্রুডিং এর ১(এক) দিন পূর্বে ঘর ভালোভাবে শুকানোর পর লিটার বিছাতে হবে। 

২) লিটারের উপর গোল করে চিকগার্ড স্থাপন করে তার মাঝামাঝি স্থানে হোভার সিলিং-এর সাথে ঝুলিয়ে দিতে হবে ।  

৩) ব্রুডার গার্ডের ভেতর হোভারের নিচে লিটারের উপর কাগজ, চিক বক্সের ঢাকনি বা প্লাস্টিক শিট বিছাতে হবে। 

৪) হোভারের সাথে হিটার (বাল্ব, ব্রুডার স্টোভ, গ্যাস বার্নার) সংযুক্ত করতে হবে।

 

(ঘ) ফিউমিগেশন: 

১) ব্রুডার ঘরে বাচ্চা গ্রহণের ১২ ঘন্টা পূর্বে সম্পূর্ণ ঘর চট বা পলিথিন দিয়ে ঘিরে ফিউগেশন উপকরণ ব্যবহার করে ঘরের ফিউমিগেশন করতে হবে। 

২) ব্রুডার ফিউমিগেশন করার জন্য ৩ গুণ ঘনত্বের ফিউমিগেশন উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। 

৩) প্রতি ১০০ ঘনফুট স্থানের জন্য ৬০ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও ১২০ মি: লি: ফরমালডিহাইড ব্যবহার করতে হবে। 

৪) ব্রুডিং স্থানের পরিমাণ হিসাব করে মোট পরিমাণ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ৪/৫ টি মাটি, কাচ বা পোরসেলিন পাত্রে ভাগ করে বিভিন্ন স্থানে সমদূরত্বে স্থাপন করতে হবে। 

৫) পরিমাণমতো ফরমালডিহাইড সমপরিমাণে খুব দ্রুত সবগুলো পাত্রে ঢেলে দিতে হবে এবং ঘর বন্ধ করে বের হয়ে আসতে হবে। 

৬) ফিউমিগেশন করার সময় সমস্ত ঘর ও সরঞ্জাম একই সাথে জীবাণুমুক্ত হবে । 

৭) ফিউমিগেশন করার ২০-৩০ মিনিট পর পর্দা সরিয়ে সম্পূর্ণ গ্যাস বেরিয়ে যেতে দিতে হবে । 

৮) ফিউমিগেশনের পর বাচ্চা প্রদানের ২/৩ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘর তালাবদ্ধ রাখতে হবে।

 

ফগার মেশিন ব্যবহার করেও ফিউমিগেশন করা যায়।

(ঙ) ঘরের চারিদিকে পরিষ্কারকরণ:

১) ঘরের চারপাশে ৫-৬ ফুট পরিমাণ জায়গায় ঘাস কেটে পরিষ্কার করতে হবে। 

২) পুরাতন মুরগি ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে 

৩) বাচ্চা উঠানোর কয়েকদিন পূর্ব থেকেই ঘরের ফুটবাধে জীবাণুনাশক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। 

৪) বাচ্চা উঠানোর পর প্রতিদিন ১(এক) বার করে ঘরের বাইরের চতুর্পার্শ্বে ৫% ফরমালিন দ্বারা স্প্রে করতে হবে। 

৫) নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরের আশেপাশে কোনো প্রাণি বা লোক চলাচল বন্ধ রাখতে হবে ।

 

 

 

Content added By

লেয়ার এর বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখার কৌশল

১.২.২ লেয়ার এর বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখার কৌশল (Strategies for maintaining a healthy environment in and around Layer Shed):

নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় থাকবে-

(১) মুরগির জাত ও উদ্দেশ্য হিসেবে প্রয়োজনীয় পরিমাপের ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি করে তৈরি করতে হবে, যাতে মুরগি পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়। 

(২) খামারে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে না হতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে । 

(৩) মুরগির খামারের উপরিভাগের তারের জাল দিয়ে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। 

(৪) ঘরে যাতে বৃষ্টির ছাট পড়ে লিটার ভিজে না যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

(৫) গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা খুব বৃদ্ধি পেলে তাপ কমানোর জন্য- 

          ক) ঘরের চালে পানি ছিটানো হয় 

          খ) ঘরের চারিদিকে পানি ছড়ানো হয় 

          গ) ঘরের মধ্যে ফগিং মেশিন দিয়ে পানি স্প্রে করে কুয়াশা তৈরি করা হয় 

          ঘ) ঘরের ভিতরে ও বাইরে ফ্যান ব্যবহার চালানো হয়

(৬) খামারে নতুন বাচ্চা উঠানোর আগে খামার সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দ্বারা পরিষ্কার করে পরে পানির সাথে জীবাণুনাশক মিশিয়ে খামার জীবনাণুমুক্ত করা হয় । 

(৭) খামারে ভালো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত খাদ্যের মাধ্যমে অ্যাসপারজিলোসিস ও বিষক্রিয়াসহ জটিল রোগ হতে পারে। 

(৮) হ্যাচারি থেকে সুস্থ সবল লেয়ার বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। তা না হলে সালমোনেলোসিস, মাইকোপ্লাজমোসিস ইত্যাদি রোগ হ্যাচারি থেকে খামারে আসতে পারে । 

(৯) খামারে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 

(১০) বর্জ্য পদার্থ, বিষ্ঠা, লিটার নিয়মিত পরিষ্কারসহ মুরগির ঘরের ভেতরের পরিবেশ অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। 

(১১) খামারে যাতে বন্য প্রাণি ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণি প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । কেননা বন্য প্রাণি ও ইঁদুর দ্বারা রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সালমোনেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ রোগ খামারে আসতে পারে। 

(১২) খামারে কোনো মুরগি অসুস্থ হলে দ্রুত সম্ভব পৃথক করে ফেলতে হবে। মারা গেলে তা সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে অবশ্যই মাটি নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। 

(১৩) খামারে কোনো জটিল সমস্যা দেখা দিলে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মোকাবেলা করতে হবে।

 

 

 

Content added By
Promotion