গৃহপালিত রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম আনসার আনসার Anser anser । রাজহাঁস মুলত মাংস উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়। আকারে মাঝারি জাভের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। ভূগময় এলকায় রাজহাঁস পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়। রাজহাঁসের ডিম উৎপাদন মৌসুমি। টাউলোজ এবং অ্যাম্বজেনকে সর্বোৎকৃষ্ট জাত হিসেবে মনে করা হয়। রাজ সাহসী এবং অধিক জীবনীশক্তির অধিকারী। আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক স্বীকৃত রাজহাঁসের মোট সাতটি স্ট্যান্ডার্ড জাত রয়েছে। এর মধ্যে ৩ জাতের হাঁস বেশি বড় বলে এদেরকে প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্য চারটি জাতের মধ্যে ৩ টি জাতের দেহের আকার কিছুটা ছোট বলে এদেরকে মিডিয়াম সাইজের হাঁস বলা হয়। বাকি ১ টি জাতকে সৌন্দর্য বর্ধনশীল হাঁস হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
এ অধ্যার শেষে আমরা
রাজহাঁসের সাতটি জাতের নাম নিম্নরূপ:
১. টাউলোজ
২.অ্যাম্বডেন
৩. আফ্রিকান রাজহাঁস
8. চাইনিজ রাজহাঁস
৫. মিশরীয় রাজহাঁস
৬. কানাডিয়ান রাজহাঁস
৭. সিবাস্টোপল।
টাউলোজ রাজহাঁস (Toulouse Goose)
অ্যাম্বডেন রাজহাঁস (Embdan Goose)
আফ্রিকান রাজহাঁস (African Goose)
আমেরিকান ধূসর রাজহাঁস (American Gray Goose)
ধূসর ব্রেকন রাজহাঁস (Gray Bracken Goose )
উৎপত্তিঃ এ জাতের রাজহাঁসের উৎপত্তিস্থল বৃটেনে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
ধূসর পিঠওয়ালা রাজহাঁস (Gray-backed Goose)
উৎপত্তিস্থল: এ জাতের উৎপত্তি ইউরোপে।
চীনা রাজহাঁস (Chinese Goose)
ছাই রঙের পিঠওয়ালা রাজ (Ash-backed Goose)
পিল গ্রীমস (Pill Grimes )
রোমান রাজহাঁস ( Roman Goose)
সিবাস্টোপল রাজহাঁস (Sebastopol Goose)
দেশী রাজহাঁস :
বাংলাদেশে রাজহাস পালন তেমন জনপ্রিয় নয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এদেশে রাজহাঁস পোষা হয় না। তবে অনেকে সখ করে পুষে থাকেন । দেশী রাজহাঁসগুলোর মধ্যে দু'ধরনের রঙ দেখা যায়। একটির দেহের রঙ কিছুটা আফ্রিকান রাজহাঁসের রঙের ন্যায়। অন্যটি পুরোপুরি সাদা।
রাজহাঁসের বাসস্থান খুবই সাধারণ। শেডটি সাধারণ হলেও রাতের বেলায় শেডটি সম্পূর্ণ বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে শিয়াল ও অন্যান্য শিকারি প্রাণির হাত থেকে হাঁসকে রক্ষা করার জন্য। জলবায়ু এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে ঘরের মেঝে পাকা হতে পারে। ঘরের মেঝে শুকনা রাখার লক্ষ্যে মেঝে ৮-১০ সে.মি. পুরু করে কাঠের গুড়া দিয়ে লিটার দিতে হবে। হাঁস তার থাকার ঘর নোংরা করে ফেলে তাই স্যাঁতস্যাঁতে ভিজা লিটার অবশ্যই ঘন ঘন পরিবর্তন করে দিতে হবে। তাই বর্তমানে খামারিগন রাজহাঁস পালনের জন্য মাচা পদ্ধতি ব্যবহারের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। প্রত্যেক শেডের সাথেই আঙিনার জায়গা থাকতে হবে। আঙিনা কত বড় হবে তা খাদ্যাভ্যাস, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং জায়গার প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে হয়। তবে আঙিনায় জায়গার পরিমাণ প্রতি হাঁসের জন্য ২ বর্গ মিটার থাকা ভালো। আঙিনা যতদূর সম্ভব বড় করা যায় এবং হাঁস দৌড়ানো শুরু করার পূর্বেই আঙিনায় ঘাস রোপণ করে আঙিনাকে চারণ ভূমিতে রূপান্তর করতে হবে। তবে আঙিনা অবশ্যই বন্য প্রাণিমুক্ত রাখার জন্য বেড়া দিতে হবে। প্রত্যক শেডে ডিম পাড়ার বাক্স দিতে হবে যদিও কোনো কোনো রাজহাঁস মেঝে বা লিটারের উপর নিজে তাদের ডিম পাড়ার বাসা তৈরি করে থাকে।
প্লেটেড হাউজ
রাজহাঁসের প্লেটেড মেঝে তৈরির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
১. হাঁস দাঁড়ানোর জায়গায় প্লেটেড উপরিভাগ ২ (দুই) সেন্টিমিটার চওড়া নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্লেটেড নিচে ১.৫ সে.মি. চওড়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে ময়লা সহজে নিচে পড়ে যায়।
৩. একটি প্লেটেড থেকে অন্য প্লেটেড দূরত্ব হবে ১.৫ সে.মি।
৪. প্রতিটি রাজহাঁসের জন্য ১ বর্গমিটার মেঝের জায়গা দিতে হবে।
৫. মাটি থেকে প্লেটেড মেঝের উচ্চতা হবে ময়লা দূর করার জন্য যতটুকু উচ্চতা দরকার ততটুকু ।
রাজহাঁসের সদ্য ফুটন্ত বাচ্চাকে দুই ভাবে ব্রুডিং করা হয়। যথা :
ক) প্রাকৃতিক ত্রুডিং
খ) কৃত্রিম ক্রসিং
প্রাকৃতিক ব্রুডিং
যে সমস্ত বাচ্চা কুঁচে মুরগী বা রাজহাঁসের মাধ্যমে ফুটানো হয়, সে সময় বাচ্চাগুলোকে মুরগী বা রাজহাঁসই বাচ্চাকে পাখার নিচে রেখে তাপায়ন করে থাকে। যেহেতু রাজহাঁসের বাচ্চাগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পালক গঙ্গায় বলে বেশি সময় ধরে ব্রুডিং করতে হয় না।
কৃত্রিম ব্রুডিং
কৃত্রিমভাবে বাচ্চাকে তাপায়ন করাকে কৃত্রিম ব্রুডিং বলা হয়। রাজহাঁসের বাচ্চাকে ব্রুডিং করা সহজ। এর জন্য বিশেষায়িত কোনো ঘরের প্রয়োজন হয় না। মুরগির বাচ্চাকে যেভাবে ব্রুডিং করা হয় ঠিক সেভাবেই ব্রুডিং করতে হয়।
ব্রুডারের প্রকারভেদ
বিভিন্ন রকমের ব্রুডার-এর মাধ্যমে ব্রুডিং করা যায়। যেমন : ইলেকট্রিক ব্রুডার, গ্যাস ব্রুডার, মুরগির বাচ্চার ক্ষেত্রে হোভার যেখানে লাগানো হয়, রাজহাঁসের বাচ্চার ক্ষেত্রে হোভারটি ৩-৪ ইঞ্চি বেশি উপরে লাগাতে হবে, কারণ মুরগির বাচ্চার চেয়ে রাজহাঁসের বাচ্চার উচ্চতা বেশি ।
ব্রুডিং তাপমাত্রা
ব্রুডিং আরম্ভ করার সময়ে হোভার-এর উচ্চতা বরাবর তাপমাত্রা রাখতে হবে প্রায় ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইড। এই তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহে ৫-১০ ডিগ্রি করে কমিয়ে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত এনে স্থির রাখতে হবে। ৫ বা ৬ সপ্তাহ পরে সাধারণত আর তাপের প্রয়োজন হয় না যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তবে বাড়ন্ত বাচ্চাকে চারণভূমিতে ছেড়ে দেওয়া যায়। নিচে রাজহাঁসের বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ব্রুডিং তাপমাত্রা দেয় হল-
ব্রুডার হাউজ
কোনো বিশেষায়িত বিল্ডিং-এর প্রয়োজন হয় না। সাধারণ ঘরে যাতে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভালো থাকে। যদি অল্প পরিসরে ব্রুডিং করা হয় তবে ছোট ঘর ব্যবহার করা যায়। রাজহাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং এর জন্য কাঠ, কনক্রিট এর মেঝে ভালো। ব্রুডিং এর সময় প্রতিটি বাচ্চার জন্য ১-১.৫ বর্গফুট জায়গা দিতে হয়। মেঝেতে প্রায় ২-৪ ইঞ্চি পুরু লিটার ব্যবহার করতে হয়। লিটার হিসেবে কাঠের গুড়া ব্যবহার করা যায়। মেঝেতে লিটার ভিজা একটি বড় সমস্যা। ব্রুডিং করার ক্ষেত্রে তাই ভেজা লিটার সরিয়ে সব সময় শুকনা লিটার ব্যবহার করতে হবে। লিটার ভেজা হলে ককসিডিওসিস ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।
খাদ্য
ব্রুডিং এর সময় রাজহাঁসের বাচ্চাকে মুরগির 'স্টার্টার রেশন সরবরাহ করা হয়। তারপর থেকে পিলেটের গ্রোয়ার রেশন এবং এর সাথে কিছু পরিমাণ ভুট্টা ও গম ভাঙা সরবরাহ করতে হয়। প্রথম কয়েকদিন বাচ্চাকে মোটা কাগজ বা ট্রে-এর মধ্যে খাবার সরবরাহ করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে রাজহাঁসের বাচ্চা ২৪-৩০ সপ্তাহ বয়সে বাজারজাত করা হয়।
পানি
সব সময় খাবার পানির প্রাপ্যতা থাকতে হবে। রাজহাঁসের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি গ্রহণ করে থাকে।
বাচ্চাকে চারণভূমিতে চড়ানো
যখন আবহাওয়া ভালো থাকে তখন প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাচ্চাকে চড়ানোর জন্য চারণভূমিতে দিয়ে অভ্যাস করাতে হবে। ঘাস হল রাজহাঁসের বাচ্চার প্রাকৃতিক খাদ্য । ৫-৬ সপ্তাহ বয়সের রাজহাঁসের বাচ্চাগুলো স্বাভাবিকভাবে চড়ে খেতে পারে, তবে সম্পূর্ণ পালক না গজানো পর্যন্ত তাদেরকে চড়ানোর পাশপাশি সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয়। বলা যায় প্রাপ্ত বয়স্ক ২০-৪০ টি রাজহাঁসের বাচ্চার জন্য এক একর চারণভূমির প্রয়োজন হয়। যদি চারণভূমিতে ঘাসের পরিমাণ কম থাকে তবে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজন।
বাচ্চা ফোটার পর ব্রুডিংকালে খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা বাচ্চা রাজহাঁসকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী মুরগির স্টার্টার রেশন সরবরাহ করতে হবে। প্রোটিনের শতকরা হার হবে ২০% এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে হবে। যখন বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হবে অর্থাৎ বয়স প্রায় ৩ সপ্তাহ হবে তখন তাদেরকে গ্রোয়ার রেশন (পিলেট ফিড) দিতে হবে যাতে প্রোটিনের শতকরা হার থাকবে ১৬-২০%। এর সাথে আরও গ্রিট ফিড দিতে হবে। গ্রিট ফিড হল বিভিন্ন মিনারেলস জাতীয় খাবার, যেমন- ঝিনুক, শামুক, হাড় গুঁড়া ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। কখনও রাজহাঁসকে মেডিকেটেড পোল্ট্রি ফিড সরবরাহ করা যাবে না। যে সমস্ত রাজহাঁস ডিম উৎপাদন করে তাদেরকে দৈনিক ২০০ গ্রাম খাবার সরবরাহ করতে হবে।
রাজহাঁসের সুষম খাদ্য তৈরির নমুনা
চারণ ভূমিতে রাজহাঁসের খাবার
যখন রাজহাঁস সম্পূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ ছয় সপ্তাহের বেশি বয়স হবে তখন তাদেরকে মুক্ত চারণ ভূমিতে দিতে হবে যেখান থেকে তারা প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলার অভ্যাস করবে। চড়ে ঘাস খাওয়া রাজহাঁসের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। পরবর্তীতে মুক্ত চারণে দিতে হবে। তবে চারণভূমিতে কখনও কীটনাশক ব্যবহার করে ঘাস উৎপাদন করা যাবে না ।
এক একর চারণভূমিতে ৩৬-৪০ টি রাজহাঁস পালন করা যায়। চারণভূমিতে ৩-৪ ফুট উঁচু তারের বেড়া দিতে হবে যাতে হাঁসগুলোকে বাইরের বন্যপ্রাণী থেকে রক্ষা করা যায়। রাজহাঁস শুধু ভেজেটারিয়ান নর, তারা ঝিনুক, শামুক, কেঁচো, ইঁদুর খেয়ে থাকে। তারা করেজ-এর সাথে সাথে বিট এর ফুল খুব পছল করে থাকে। তারা সব জাতীয় মূল এবং শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ পছন্দ করে, কিন্তু টক জাতীয় কোনো কিছু পছন্দ করে না ।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
রাজহাঁসের ৫০ কেজি সুষম খাদ্য তৈরি কর যে খাবারে ১৮% আমিষ এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি শক্তিমান থাকবে।
সাধারনত রাজহাঁসের ডিম পাড়ার সময় কান্ত কালে অর্থাৎ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে কিন্তু চাইনিজ রাজহাঁস সারা বছর ডিম পেড়ে থাকে। এক বছরের নিচে বরসের রাজহাঁসের ডিমের চেরে এক বছরের চেয়ে বেশি বয়সের রাজহাঁসের ডিমের উর্বরতা এবং বাচ্চা ফোটার হার বেশি হয়।
রাজহাঁস সাধারণত সকাল বেলা ডিম পেড়ে থাকে। তাই রাজহাঁসকে খুব সকাল বেলায় পানিতে ছেড়ে দেয়া যাবে না। সকাল বেলায় ছেড়ে দিলে ডিম উৎপাদন কমে যাবে, কারণ রাজহাঁস বাইরে গিয়ে পানিতে ডিম পাড়বে ফলে ডিম পাওয়া যাবে না। হাঁসগুলো সকাল ৯.০০ টার সমর ছাড়তে হবে।
রাজহাঁস বছরে বিভিন্ন ক্লাচে এ ডিম দিয়ে থাকে। ক্লাচ ফল কয়েকটি ডিম পেড়ে আবার কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার ডিম পাড়া শুরু করে। ডিম পাড়া শুরু করলে টানা যে কয়েকদিন ডিম দেয় তা একটি ক্লাচ। রাজহাঁস এক ক্লাচে ১২-১৫ টি ডিম পাড়ে এবং পরে ডিমে তা দেয়ার জন্য ব্রুডিং বা কুঁচে হয়ে যায়।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
বাচ্চা উৎপাদন :
রাজহাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২ (দুই) ভাবে ডিম ফোটানো যায় যথা :
ক) প্রাকৃতিক উপায়ে
খ) কৃত্রিম উপায়ে।
ক) প্রাকৃতিক উপায়ঃ
প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম ফোটানোর জন্য কুঁচে মুরগি এবং কুচে রাজহাঁস ব্যবহার করা হয়। কুঁচে মুরগি বা রাজহাঁস দ্বারা ডিম ফোটানোর জন্য প্রথমে একটি বাসা তৈরি করতে হয়। বাসা তৈরি করার জন্য ফলের ঝুড়ি বা মাটির গামলা বা কাঠের তৈরি বাসা ব্যবহার করা যায়। মুরগি বা রাজহাঁসের দেহের আকার অনুযায়ী বাসা তৈরি করতে হয়। ঝুড়ি, গামলা বা কাঠের বাক্সে খড়, কুটা বিছিয়ে দিতে হবে। যখন মুরগি দিয়ে ডিম ফোটানো হবে তখন একটি মুরগির নিচে ৪-৬ টি ডিম দেয়া যাবে কারণ মুরগির ডিমের চেয়ে রাজহাঁসের ডিম অনেক বড়। অনেক বড় বিধায় মুরগি নিজে ডিম ঘুরাতে পারে না তাই প্রতিদিন নিজে হাতের মাধ্যমে ঘুরিয়ে দিতে হবে; যখন মুরগি বাসা থেকে খাবার সংগ্রহ ও পানি পানের জন্য বাসা ছেড়ে বাইরে যায়। ১৫ দিন পর ডিমগুলোর উপর দৈনিক একবার কুসুম গরম পানি ছিটিয়ে দিয়ে ডিম ঘুরিয়ে দিতে হবে। ১০ তম দিনে ডিমগুলোকে ক্যান্ডেলিং করতে হবে। ক্যান্ডেলিং-এর জন্য উজ্জ্বল ইলেকট্রিক লাইটের নিচে ধরলে এর ভেতরের সবকিছু দেখা যাবে। ক্যান্ডেলিং করে যে ডিমগুলো অনুর্বর হবে তা বাদ দিতে হবে। তারপর কমপক্ষে ৩০ দিনের নিচে ডিম ফুটবে না ৩০-৩২ তম দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়ে আসবে। যখন কুঁচে হিসেবে রাজহাঁস ব্যবহার করা হবে তখন একটি রাজহাঁসের নিচে ১০-১৫ টি ডিম বসানো যাবে। তবে তা নির্ভর করে ডিমের আকার এবং রাজহাঁসের আকারের উপর। যদি কুঁচে রাজহাঁসের পানিতে সাঁতরানোর যথেষ্ট সুবিধা থাকে তবে ১৫ দিন পর থেকে পানি ছিটিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হবে না।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
কৃত্রিম উপায়ে রাজহাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো
যদি ইনকিউবেটর সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না যায় তবে ইনকিউবেটরে রাজহাঁসের ডিম ভালোভাবে ফোটে না। যদিও ডিমের উর্বরতার হার ৯০% তবুও প্রায়ই ইনকিউবেটরে রাজহাঁসের ডিমের ফোটানোর হার ৪০% এর বেশি হয় না। কারণ রাজহাঁসের ডিম ফোটানোর জন্য বিশেষভাবে ইনকিউবেটর প্রস্তুত করতে হয় ।
ইনকিউবেটর এ দুইটি ভাগ থাকে। একটি হল ইনকিউবেশন পিরিয়ড অন্যটি হল হ্যাচিং পিরিয়ড। রাজহাঁসের ক্ষেত্রে ডিম বসানো থেকে ২৬ তম দিন পর্যন্ত হল ইনকিউবেশন পিরিয়ড, ২৬তম দিনে ডিম স্থানান্তর করে হ্যাচিং ট্রেতে দেয়া হয় তখন থেকে বাচ্চা ফোটা পর্যন্ত সময় হল হ্যাচিং পিরিয়ড। ডিম বসানোর পর প্রতিদিন কমপক্ষে চারবার ডিম সম্পূর্ণরূপে ঘুরিয়ে দিতে হবে। ১৫তম দিনের পর থেকে ডিমকে সম্পূর্ণরূপে ৩৭.৫ সে. তাপমাত্রায় পানি দিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে দিনে একবার ।
২৭ তম দিনে ডিমগুলো সেটার থেকে হ্যাচারে স্থানান্তর করতে হবে। রাজহাঁসের ডিম ৩০ দিনের কম সময়ে ফোটে না। হ্যাচিং-এর সময় তাপমাত্রা রাখতে হবে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা রাখতে হবে প্ৰায় ৮০%। যখন বাচ্চা ফোটা আরম্ভ করে তখন তাপমাত্রা কমিয়ে ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ৭০% রাখতে হবে। সম্পূর্ণ বাচ্চা ফোটার ২-৪ ঘন্টা পর হ্যাচারি থেকে বের করে ব্রুডারে দেয়া হবে।
রাজা সাধারণত দুই উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। যথা- মাংসের জন্য ও সৌখিনতা। এই দুই উদ্দেশ্যে অনেক জাতের রাজহাঁস পালন করা হয়। এক্ষেত্রে রাজহাঁস সংগ্রহ করে এবং সম্ভব না হলে রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে এদের সনাক্ত করা হয়।
পারদর্শিতার মানদন্ডঃ
১) বিভিন্ন জাতের রাজহাঁসের সমাজকারী বৈশিষ্ট্য বলতে পারা।
২) বিভিন্ন জাতের রাজহাঁস সনাক করা
৩) বিভিন্ন প্রকার ছবি, তথ্য সংগ্রহ করা
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE)
খ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল
গ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:
কাজের ধারা:
১) বিভিন্ন জাতের রাজহাঁস সংগ্রহ করে পাশাপাশি খাঁচায় সাজিয়ে রাখ।
২) সম্ভব না হলে তাদের প্রয়োজনীয় ছবি ও তথ্যযুক্ত প্লাইড সংগ্রহ কর।
৩) বিভিন্ন জাতের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদন প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ কর ।
8) নিরাপত্তামূলক পোষাক যেমন অ্যারণ ও দানা পরে নাও ।
৫) বিভিন্ন জাতের রাজহাঁস সংগ্রহ করে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সমাপ্ত করে তথ্যের সাথে মিলিয়ে নাও।
৬) রাজহাঁসের জাতগুলো উৎপাদন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এবং পালনের উদ্দেশ্য অনুসারে শ্রেণিবিভাগ কর।
১) ছকে মাংস উৎপাদনকারি রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধ কর।
সতর্কতা:
১. বিভিন্ন জাতের রাজহাঁস পৃথক ভাবে রেখে সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যেন এক জাতের সাথে অন্য জাত মিশে না যায়।
২. রাজহাঁস সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন ছুটে না যায় ও গায়ে বিষ্ঠা না লাগে ৷
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. গৃহপালিত রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম লেখ ।
২. পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক স্বীকৃত রাজহাঁসের জাত কয়টি?
৩. রাজহাঁসের পাঁচটি জাতের নাম লেখ ।
8. টাউলোজ জাতের রাজহাঁসের উৎপত্তিস্থল কোথায় ?
৫. সৌন্দর্য বর্ধনকারী রাজহাঁসের জাতের তিনটি নাম লেখ ।
৬. প্লেটেড ঘরে একটি রাজহাঁসের জন্য কত বর্গমিটার জায়গা দিতে হয়?
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. টাউলোজ জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য লেখ ।
২. অ্যাম্বডেন জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য লেখ ।
৩. আফ্রিকান জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য লেখ ।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
8.কৃত্রিম উপায়ে রাজহাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
৫.রাজহাঁসের ব্রুডিং পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
আরও দেখুন...