রোগীর সেবা বলতে বুঝায়, রোগীকে দেখতে যাওয়া, খোঁজ-খবর নেওয়া, প্রয়োজনীয় সেবা-শুশ্রুষা করা, সাহায্য করা, সাহস যোগানো, নরম ও সদয় কথা-বার্তা বলা ইত্যাদি।
রোগীর সেবা করা সুস্থ ব্যক্তির কর্তব্য এবং সেবা প্রাপ্তি রোগীর অধিকার। হাদিসের আলোকে এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের প্রতি যে ছয়টি দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তার মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা করা অন্যতম।
করার অর্থ প্রকৃতপক্ষে তার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করা। একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর চেয়ে উত্তম কাজ আর কিছুই হতে পারে না।
রোগীর সেবা করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। রোগীর সেবা করা মহান আল্লাহর সেবা করার শামিল। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, 'কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা আদম সন্তানকে সম্বোধন করে বলবেন, 'হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা করোনি।' বান্দা বলবে, 'আপনি তো সারা বিশ্বের পালনকর্তা। আমি আপনাকে কীভাবে সেবা করতে পারি?' আল্লাহ বলবেন, 'আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তার সেবা করলে সেটা আমারই সেবা করা হতো।' (মুসলিম)
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া মহানবি (সা.) এর আদর্শ। কেউ অসুস্থ হলে তিনি তাকে দেখতে যেতেন। রোগীর কপালে হাত রেখে স্নেহভরে খোঁজ-খবর নিতেন এবং তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করতেন। জানতে চাইতেন, 'তোমার কি কিছু খেতে মনে চায়?' রোগী কোনো খাবারের কথা বললে তিনি দ্রুত তার ব্যবস্থা করতেন।
অমুসলিম কেউ অসুস্থ হলেও তিনি তাকে দেখতে যেতেন। একবার এক ইহুদি বালক অসুস্থ হয়ে পড়লো। মহানবি (সা.) তাকে দেখতে গেলেন। তার মাথার কাছে বসে অত্যন্ত মমতার সাথে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। বালকটি তখন ইসলাম গ্রহণ করলো। তখন মহানবি (সা.) বললেন, 'সকল প্রশংসা অল্লাহর জন্য, যিনি এই যুবককে জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন।' (বুখারি)
একবার মহানবি (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা.) খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হযরত আবু মুসা আশ'আরী (রা.) তাঁকে দেখার জন্য আসলেন। তখন হযরত আলী (রা.) বললেন, 'কোনো মুসলিম সকালবেলা কোনো রোগীকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সাথে রওয়ানা দেয়। প্রত্যেক ফেরেশতাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে। তার জন্য জান্নাতে একটি বাগানও তৈরি করা হয়। আর সে যদি সন্ধ্যাবেলা কোনো রোগীকে দেখতে বের হয়, তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সাথে রওয়ানা দেয়। প্রত্যেক ফেরেশতাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান বরাদ্দ করা হয়'। (আবু দাউদ)
তবে রোগী দেখতে গিয়ে বেশি সময় রোগীর কাছে অবস্থান করা উচিত নয়। এতে রোগী ক্লান্ত হয়ে যায়। তার পরিবারেরও কষ্ট হয়। তবে প্রয়োজন থাকলে বা রোগী কিংবা তার পরিবার অগ্রহী হলে দীর্ঘ সময় অবস্থান করাতে কোনো দোষ নেই। রোগীকে খুশি করতে বারবার দেখতে যাওয়া উত্তম। রোগীর গায়ে হাত রাখা এবং তার আরোগ্যের জন্য দু'আ করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো রোগী দেখতে যেতেন, তখন ডান হাত দিয়ে রোগীর কপাল স্পর্শ করতেন এবং বলতেন, 'হে মানুষের প্রভু! রোগ-শোক দূর করুন, আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যদাতা, আপনার আরোগ্য ছাড়া কোনো আরোগ্য নেই, যা কোনো রোগকে অবশিষ্ট রাখে না' (বুখারিও মুসলিম)। রোগীর সেবা করা ও তাকে দেখতে যাওয়ার সময় উপর্যুক্ত বিষয়সমূহের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত।
সুতরাং কেউ অসুস্থ হলে আমরা স্বেচ্ছায় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবো। তার সেবা-শুশ্রুষা করবো। বিশেষ করে যারা অসহায়, অনাথ ও দরিদ্র, তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিবো। তাদের পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে সহায়তা করবো। আশাব্যঞ্জক কথা বলে তাদের মনকে প্রফুল্ল রাখবো। তাহলেই রোগীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হবে।
প্রতিফলন ডায়েরি লিখন
আরও দেখুন...