সাধারণভাবে শব্দের একটি মূল অর্থ থাকে। একে বলা হয় মুখ্য অর্থ। যেমন, ‘কাটা’ শব্দ দিয়ে মূলত বোঝায় কোনো কিছু কেটে ফেলা। এখানে কেটে ফেলা হলো ‘কাটা’ শব্দের মুখ্য অর্থ।
মুখ্য অর্থের বাইরেও একটি শব্দের একাধিক গৌণ অর্থ থাকতে পারে। যেমন, ‘মেঘ কেটে গেছে’ বাক্যে ‘কাটা শব্দের অর্থ ‘সরে যাওয়া’। আবার, ‘টিকিট কাটতে হবে' বাক্যে কাটা শব্দের অর্থ ‘কেনা’। কাটা শব্দের এই ‘সরে যাওয়া’ ও ‘কেনা' অর্থগুলো গৌণ অর্থ।
নিচে কয়েকটি শব্দের মুখ্য অর্থ ও একাধিক গৌণ অর্থের প্রয়োগ দেখানো হলো।
খাওয়া | মুখ্য অর্থ | আহার করা | (সময়মতো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।) |
গৌণ অর্থ ১ | পান করা | (সে চা খাচ্ছে।) | |
গৌণ অর্থ ২ | নেওয়া | (লোকটি ঘুস খেয়ে জেলে আছে।) | |
গরম | মুখ্য অর্থ | উত্তপ্ত | (কামার গরম লোহা পিটিয়ে দা বানায়।) |
গৌণ অর্থ ১ | উগ্র | (কোনো কারণে তার মেজাজ গরম হয়ে আছে।) | |
গৌণ অর্থ ২ | চড়া | (কয়েকদিন ধরে মাছের বাজার গরম।) | |
গৌণ অর্থ ৩ | টাটকা | (আজকের গরম খবরটা জানেন?) | |
গৌণ অর্থ ৪ | শীত নিবারক | (বাইরে ঠান্ডা, গরম কাপড় পরে বের হও।) | |
ঘর | মুখ্য অর্থ | গৃহ | (ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া হয়েছে।) |
গৌণ অর্থ ১ | কক্ষ | (ও পড়ার ঘরে আছে।) | |
গৌণ অর্থ ২ | ছক | (সাদা ঘরে দাবার বোড়েটাকে এগিয়ে নাও । | |
গৌণ অর্থ ৩ | পরিবার | (সেখানে একঘর কুমোর বাস করে। ) | |
পথ | মুখ্য অর্থ | রাস্তা | (পথের পাশে একটা বিশাল বটগাছ।) |
গৌণ অর্থ ১ | উপায় | (সমস্যাটি সমাধানের পথ খোঁজো।) | |
গৌণ অর্থ ২ | দিক | (বাংলাদেশ উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে।) | |
নাম | মুখ্য অর্থ | নামকরণ | (তার নাম নয়নতারা। ) |
গৌণ অর্থ ১ | খ্যাতি | (তার অনেক নাম শুনেছি।) | |
গৌণ অর্থ ২ | লক্ষণ | (বৃষ্টি থামার নাম নেই।) | |
গৌণ অর্থ ৩ | বাহানা | (কাজের নামে শুধু ঘোরাঘুরি!) | |
ভার | মুখ্য অর্থ | ওজন | (বস্তাটার ভার অনেক বেশি।) |
গৌণ অর্থ ১ | বেজার | (মুখ ভার করে রয়েছ কেন?) | |
গৌণ অর্থ ২ | চাপ | (ঋণের ভারে লোকটি জর্জরিত।) | |
গৌণ অর্থ ৩ | দায়িত্ব | (সংসারের ভার সে একা টানছে।) | |
গৌণ অর্থ ৪ | দুঃসাধ্য | (এই বেতনে মাস চালানো ভার।) |
নিচের শব্দগুলো ব্যবহার করে মুখ্য অর্থ এবং এক বা একাধিক গৌণ অর্থের প্রয়োগ দেখাও।
১. পাকা | মুখ্য অর্থ ……………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ১…………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ২…………………………………………………………………………………………………………………. |
২. ধরা | মুখ্য অর্থ ……………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ১…………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ২…………………………………………………………………………………………………………………. |
৩. কথা | মুখ্য অর্থ ……………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ১…………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ২…………………………………………………………………………………………………………………. |
৪. বড়ো | মুখ্য অর্থ ……………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ১…………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ২…………………………………………………………………………………………………………………. |
৫. মুখ | মুখ্য অর্থ ……………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ১…………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ২…………………………………………………………………………………………………………………. |
৬. পাগল | মুখ্য অর্থ ……………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ১…………………………………………………………………………………………………………………. গৌণ অর্থ ২…………………………………………………………………………………………………………………. |
সহপাঠীর লেখা বাক্যের সঙ্গে তোমার বাক্যগুলো মিলিয়ে দেখো।
অন্ধকার | পাথর | তরঙ্গ | অশ্ব | নিকৃষ্ট |
দুঃখ | চুল | বৃক্ষ | পাড় | তিমির |
গাছ | ঘোড়া | আঁধার | শশী | চিকুর |
কূল | চন্দ্র | তীর | তরু | প্রস্তর |
মন্দ | ঢেউ | অলক | খারাপ | যন্ত্রণা |
চাঁদ | শিলা | কষ্ট | ঊর্মি | ঘোটক |
উপরের ছক থেকে একই রকম অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দগুলো আলাদা করো। একটি নমুনা করে দেখানো হলো।
প্রতিশব্দ বলতে বোঝায় এমন কিছু শব্দ যেগুলো কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: ‘গাছ' শব্দটি কখনো বৃক্ষ, কখনো তরু, কখনো উদ্ভিদ, কখনো লতা, আবার কখনো তৃণ বোঝায়। এখানে বৃক্ষ, তরু, উদ্ভিদ, লতা, তৃণ—এগুলো ‘গাছ’ শব্দের প্রতিশব্দ। প্রতিশব্দকে সমার্থক শব্দও বলে।
বাক্যে একটি শব্দের বদলে তার প্রতিশব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন, ‘ডান দিকের রাস্তা দিয়ে যাও'—এই বাক্যের বদলে বলা যায় ‘ডান দিকের পথ দিয়ে যাও'। তবে প্রতিশব্দ সবসময়ে বদলযোগ্য হয় না। যেমন, কেউ বলতে পারেন ‘ধানগাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে।' কিন্তু এর বদলে ‘ধানবৃক্ষে পোকার আক্রমণ হয়েছে’- এমনটা কেউ বলেন না।
নিচে কিছু শব্দের প্রতিশব্দ দেওয়া হলো।
অকাল: অসময়, অবেলা, দুর্দিন, অশুভ সময়, দুঃসময়।
অতিথি: মেহমান, অভ্যাগত, আগন্তুক, নিমন্ত্রিত, আমন্ত্রিত, কুটুম।
অভাব: অনটন, দারিদ্র্য, দৈন্য, দীনতা, দুরবস্থা, অসচ্ছলতা।
আইন: বিধান, কানুন, ধারা, নিয়ম, বিধি।
একতা: ঐক্য, মিলন, অভেদ, অভিন্নতা।
কথা: উক্তি, বাক্য, বচন, কথন, বাণী, ভাষণ।
খাদ্য: খাবার, খানা, আহার, ভোজ্য, অন্ন, রসদ।
ঝড়: ঝঞ্ঝা, তুফান, সাইক্লোন, ঝটিকা, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়
দয়া: অনুগ্রহ, করুণা, কৃপা, অনুকম্পা, মায়া।
দিন: দিবস, দিবা, বার, রোজ।
নদী: নদ, গাঙ, স্রোতস্বিনী, তটিনী, নির্ঝরিণী।
পাখি: পক্ষী, পঙ্খি, বিহঙ্গ, বিহগ, পাখপাখালি ।
মন: অন্তর, দিল, পরান, চিত্ত, হৃদয়, অন্তঃকরণ।
যুদ্ধ : লড়াই, সংঘর্ষ, সংগ্রাম, সমর, রণ।
সুন্দর: মনোরম, মনোহর, শোভন, রম্য, সুদর্শন, ললিত।
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো। এরপর এখানকার অন্তত দশটি শব্দের বদল ঘটিয়ে অনুচ্ছেদটি লেখো।
রাত্রি যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে। এ কথার মানে হলো বিপদ দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সমস্যা যেমন আছে, তেমনি সেই সমস্যা সমাধানের উপায়ও আছে। পৃথিবীতে নানা রকম ঘটনা ঘটে বলেই পৃথিবী এত বৈচিত্র্যময়। দুঃখের ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনি আনন্দের ঘটনাও ঘটে। অন্যের দুঃখে দুঃখী হতে হয়, আর অন্যের আনন্দে আনন্দিত হতে হয়। তবে অনেক সময়ে নিজের বিপদের দিনে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মেঘ কেটে যেমন সূর্য ওঠে, তেমনি দুঃসময় কেটে সুন্দর সময় আসে।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
দাগ দেওয়া শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ বসিয়ে বাক্যগুলো আবার লেখো। প্রথমটি করে দেখানো হলো।
এই গ্লাসের পানি ঠান্ডা। বাক্য: এই গ্লাসের পানি গরম।
তিনি শক্ত মনের মানুষ। বাক্য :………………………………………………………………………………………
কথাটি সত্য নয়। বাক্য :………………………………………………………………………………………
নতুন রাস্তাটি অনেক সরু। বাক্য :………………………………………………………………………………………
এ আয়নাতে সব ঝাপসা দেখা যায় । বাক্য :………………………………………………………………………………………
কাজটি যৌথভাবে করো। বাক্য :………………………………………………………………………………………
কাল দিনের বেলায় এসো। বাক্য :………………………………………………………………………………………
লোকটি কৃপণ। বাক্য :………………………………………………………………………………………
টেবিলে বইগুলো গোছানো আছে। বাক্য :………………………………………………………………………………………
আজকের খেলা তাড়াতাড়ি শেষ হলো। বাক্য :………………………………………………………………………………………
লক্ষ করো, বিপরীত শব্দ বসানোর ফলে বাক্যগুলোর অর্থ বদলে গেছে।
এক জোড়া শব্দ যখন পরস্পর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে, তখন একটিকে অন্যটির বিপরীত শব্দ বলে। যেমন: ‘দিন’ ও ‘রাত’। এখানে দিনের বিপরীত শব্দ রাত এবং রাতের বিপরীত শব্দ দিন। একইভাবে, উঁচু ও নিচু, ভালো ও মন্দ, শক্ত ও নরম-এগুলো পরস্পর বিপরীত শব্দ।
বিপরীত শব্দের একটি হাঁ-বাচক হলে অন্যটি না-বাচক হয়। যেমন ‘সুস্থ’ ও ‘অসুস্থ’ শব্দজোড়ার মধ্যে সুস্থ হাঁ- বাচক এবং অসুস্থ না-বাচক। এজন্য বিপরীত শব্দের সাথে না যুক্ত করে বাক্যের অর্থ ঠিক রাখা যায়। যেমন: লোকটি সুস্থ। এই বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে এভাবেও বলা যায়: লোকটি অসুস্থ নয়। ।
শব্দ | বিপরীত শব্দ | শব্দ | বিপরীত শব্দ |
---|---|---|---|
অগ্র | পশ্চাৎ | দীর্ঘ | হ্রস্ব |
অচল | সচল | নতুন | পুরাতন |
অজ্ঞ | বিজ্ঞ | নিন্দা | প্ৰশংসা |
আদান | প্ৰদান | পূর্ব | পশ্চিম |
আদি | অন্ত | বক্তা | শ্রোতা |
উপকার | অপকার | বাদী | বিবাদী |
কনিষ্ঠ | জ্যেষ্ঠ | ভোঁতা | ধারালো |
কল্পনা | বাস্তব | সহজ | কঠিন |
গ্রহণ | বর্জন | সৃষ্টি | ধ্বংস |
টাটকা | বাসি | স্বাধীন | পরাধীন |
এবার দাগ দেওয়া শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ বসিয়ে বাক্যগুলো এমনভাবে লেখো যাতে বাক্যের অর্থ ঠিক থাকে। এজন্য বাক্যের শেষে না, নি, নেই, নয় ইত্যাদি বসানোর দরকার হবে। প্রথমটি করে দেখানো হলো।
এই গ্লাসের পানি ঠান্ডা। বাক্য: এই গ্লাসের পানি গরম নয়।
তিনি শক্ত মনের মানুষ। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
কথাটি সত্য নয়। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
নতুন রাস্তাটি অনেক সরু। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
এ আয়নাতে সব ঝাপসা দেখা যায়। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
কাজটি যৌথভাবে করো। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
কাল দিনের বেলায় এসো। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
লোকটি কৃপণ। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
টেবিলে বইগুলো গোছানো আছে। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
আজকের খেলা তাড়াতাড়ি শেষ হলো। বাক্য:…………………………………………………………………………………………
আরও দেখুন...