বাক্যের শব্দগুলোকে বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ, অনুসর্গ, যোজক ও আবেগ—এই আট শ্রেণিতে ভাগ করে দেখানো যায়।
বিশেষ্য: যেসব শব্দ দিয়ে ব্যক্তি, প্রাণী, স্থান, বস্তু, ধারণা ও গুণের নাম বোঝায়, সেগুলোকে বিশেষ্য বলে। যেমন: নজরুল, বাঘ, ঢাকা, ইট, ভোজন, সততা।
সর্বনাম: বিশেষ্যের বদলে বাক্যে যেসব শব্দ বসে, সেগুলোকে সর্বনাম বলে। যেমন: ‘মুনিরা দাবা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার জন্য স্কুলের সবাই গর্বিত।' এখানে দ্বিতীয় বাক্যের ‘তার’ প্রথম বাক্যের মুনিরাকে বোঝাচ্ছে। তাই ‘তার’ একটি সর্বনাম।
বিশেষণ: যেসব শব্দ দিয়ে বিশেষ্য ও সর্বনামের গুণ, দোষ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা ইত্যাদি বোঝায়, তাকে বিশেষণ বলে। যেমন: সুন্দর ফুল, বাজে কথা, পঞ্চাশ টাকা, হাজার সমস্যা, তাজা মাছ।
ক্রিয়া: বাক্যের উদ্দেশ্য বা কর্তা কী করে বা কর্তার কী ঘটে বা হয়, তা নির্দেশ করা হয় যেসব শব্দ দিয়ে সেগুলোকে ক্রিয়া বলে। যেমন: রাজীব খেলছে। বৃষ্টি হয়েছিল।
ভাবপ্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়া আবার দুই প্রকার: সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া। যে ক্রিয়া দিয়ে ভাব সম্পূর্ণ হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে পড়ছে। আর যে ক্রিয়া দিয়ে ভাব সম্পূর্ণ হয় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে পড়লে ভালো করবে। এখানে ‘পড়লে’ ক্রিয়াটি দিয়ে ভাব সম্পূর্ণ না হওয়ায় পরে একটি সমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
ক্রিয়াবিশেষণ: যে শব্দ ক্রিয়ার অবস্থা, সময় ইত্যাদি নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। যেমন: ছেলেটি দ্রুত দৌড়ায়। মেয়েটি সকালে গান করে।
অনুসর্গ: যেসব শব্দ কোনো শব্দের পরে বসে শব্দটিকে বাক্যের সাথে সম্পর্কিত করে, সেসব শব্দকে অনুসর্গ বলে। যেমন: সে কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। কোন পর্যন্ত পড়েছ?
যোজক: শব্দ বা বাক্যের অংশকে যুক্ত করে যেসব শব্দ, সেগুলোকে যোজক বলে। যেমন: লাল বা নীল কলমটি আনো। জলদি দোকানে যাও এবং পাউরুটি কিনে আনো।
আবেগ: মনের নানা ভাব বা আবগেকে প্রকাশ করা হয় যেসব শব্দ দিয়ে সেগুলোকে আবেগ শব্দ বলা হয়। যেমন: বাহ! চমৎকার লিখেছ। উফ, আর পারি না!
নিচের নমুনা থেকে বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ, অনুসর্গ, যোজক ও আবেগ—এই আট শ্রেণির শব্দ চিহ্নিত করো।
বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য এখানে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র-সৈকত। প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক এই সৈকতে বেড়াতে আসেন। আর এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘বাহ! কী সুন্দর!’
কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক এর ঢেউ। সবসময় বড়ো বড়ো ঢেউ তৈরি হয় সাগরে। আর সেই ঢেউ তীরে এসে জোরে জোরে আছড়ে পড়ে। অনেক মানুষ গা ভেজাতে সৈকতে নামে। তাদের কেউ কেউ ঢেউ দেখে আনন্দে লাফ দেয়। অনেকেই ভেজা বালি দিয়ে ঘর বানায়। ঢেউ এসে সেই ঘর ভেঙে দেয়। তবু তারা হাসিমুখে আবার ঘর বানাতে থাকে।
কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম থেকে। হিরাম কক্স ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন অফিসার। এর আগে কক্সবাজারের নাম ছিল পালংকি। হিরাম কক্স আঠারো শতকের শেষ দিকে পালংকির পরিচালক নিযুক্ত হন। তাঁর মৃত্যুর পর একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার।
পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এখানে কয়েকটি মোটেল নির্মাণ করেছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে অনেক হোটেল তৈরি হয়েছে। সৈকতের কাছে ছোটো-বড়ো অনেক হোটেল আছে। পর্যটকদের জন্য এখানে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের দোকান। দোকানগুলোতে বাহারি জিনিসপত্র পাওয়া যায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতেও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে যায়। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথটি সুন্দর ও রোমাঞ্চকর। কক্সবাজার ও আশেপাশের পর্যটন স্থানগুলোতে ঘোরার সময়ে কেবলই মনে হয়, আহা! কত সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় আমাদের বাংলাদেশ।
উপরের নমুনা থেকে চিহ্নিত করা বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ, অনুসর্গ, যোজক ও আবেগ—এই আট শ্রেণির শব্দ নিচের ছকে লেখো।
বিশেষ্য | |
---|---|
সর্বনাম | |
বিশেষণ | |
ক্রিয়া | |
ক্রিয়াবিশেষণ | |
অনুসর্গ | |
যোজক | |
আবেগ |
ভাবপ্রকাশের ধরন অনুযায়ী বাক্যকে বিবৃতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক—এই চার ভাগে ভাগ করা যায়।
বিবৃতিবাচক বাক্য: সাধারণভাবে কোনো বিবরণ প্রকাশ পায় যেসব বাক্যে, সেগুলোকে বিবৃতিবাচক বাক্য বলে। যেমন: একটি পাখি আমাদের কাঁঠাল গাছে বাসা বেঁধেছে।
প্রশ্নবাচক বাক্য: বক্তা কারও কাছ থেকে কিছু জানার জন্য যে ধরনের বাক্য বলে, সেগুলো প্রশ্নবাচক বাক্য। যেমন: কোন পাখি তোমাদের কাঁঠাল গাছে বাসা বেঁধেছে?
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ, প্রার্থনা ইত্যাদি বোঝাতে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য হয়। যেমন: কাঁঠাল গাছে একটি হাঁড়ি বেঁধে দাও।
আবেগবাচক বাক্য: কোনো কিছু দেখে বা শুনে অবাক হয়ে যে ধরনের বাক্য তৈরি হয়, তাকে আবেগবাচক বাক্য বলে। যেমন: কী সুন্দর দেখতে সেই পাখিটা!
নিচের নমুনা থেকে বিবৃতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক-এই চার রকমের বাক্য চিহ্নিত করো।
বিকাল সাড়ে চারটায় সবার মাঠে আসার কথা। আজ কোনো খেলা হবে না, জরুরি সভা হবে। ইমনদের পুরাতন ভিটায় একটা পোড়োবাড়ি আছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে কিছু অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কামাল বলছিল, ‘ওখানে গুপ্তধন থাকতে পারে।' নিলয় খানিক কৌতূহলী হয়ে ইমনের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘কী রে ইমন, ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে নাকি?” ইমন অবাক হয়ে বলেছিল, “তাই নাকি! আমি তো জানি না।' আসলেই কোনো গুপ্তধন আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছিল কামাল। বলেছিল, ‘চল, আমরাই খোঁজ করে দেখি। গুপ্তধন থাকলে ঠিক খুঁজে পাব।' ইমনদের পোড়োবাড়িতে কবে এবং কীভাবে অভিযান চালানো হবে, তা নিয়ে আলোচনার জন্যই আজকের সভা।
আমার অবশ্য খানিক ভয় ভয় করছে। কারণ, অপরিচিত লোকগুলো যদি ঠিক গুপ্তধন খুঁজতে আসে! আর যদি আমাদের সাথে ওদের দেখা হয়ে যায়! তবে ঠিক তারা প্রশ্ন করবে, ‘এখানে কী করছো তোমরা? তখন আমরা কী উত্তর দেবো? উত্তর ওদের পছন্দ না হলে বলতে পারে, ‘এখানে আর আসবে না। যাও, চলে যাও।' তাছাড়া লোকগুলো হয়তো গুপ্তধন খুঁজতে আসেনি, অন্য কাজে এসেছে। তবু সেখানে যেতে আমার ভয় করবে। যে পুরাতন বাড়ি! বাড়ির চারপাশে কত বড়ো বড়ো গাছ! দিনের বেলাতেও বাড়ির ভিতরটা অন্ধকার হয়ে থাকে। সেখানে এমনিতেই সহজে কেউ ঢুকতে চায় না।
আগের পৃষ্ঠার নমুনা থেকে বিবৃতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক-এই চার রকমের বাক্য নিচের ছকে লেখো।
বিবৃতিবাচক বাক্য | |
---|---|
প্রশ্নবাচক বাক্য | |
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য | |
আবেগবাচক বাক্য |
আরও দেখুন...