ছক ৩.১৭: আমার জীবনের সংকটময় ঘটনা
ক্রম | ঘটনার বিবরণ |
১
|
|
২
|
|
৩
|
|
এবারে সবার সমস্যাগুলো একত্রে করো। একই ধরনের সমস্যাগুলোকে একটি সমস্যা হিসেবে নাও। এভাবে জীবনের নানাবিধ সংকট নামে একটি তালিকা তৈরি করো। এবারে দলে/জোড়ায় আলোচনা করে, দলের সবার 'নানাবিধ সংকট' তালিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ দশটি সমস্যা বেছে নাও। বিষয়গুলোর একটি করে সম্ভাব্য প্রতিকার সংক্ষেপে লিখে পোস্টার তৈরি করে উপস্থাপন করো।
সংকটের নাম | সম্ভাব্য সমাধান |
১. | |
২.
| |
৩.
| |
8.
| |
৫.
|
এই যে আমরা সমস্যাগুলো শনাক্ত করলাম অর্থাৎ মানুষ ও প্রকৃতির দুর্দশার উৎস অনুধাবন করলাম এবং কীভাবে তার প্রতিকার করা যায় তাও খুঁজে দেখলাম- এই কাজগুলো আসলে অন্যের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা - প্রকাশ করা। আমাদের অন্তরের এই সহমর্মিতাবোধ কোনো নির্দিষ্ট প্রাণি, ব্যক্তি, লিঙ্গ, শ্রেণি, সম্প্রদায়, অঞ্চল - ইত্যাদি বিবেচনা করে আসে না। প্রকৃত সহমর্মী মানুষ স্থান কাল পাত্র ভেদ না করে সকলের জন্যই সহমর্মিতা অনুভব করেন। অন্যের সুবিধা-অসুবিধাকে নিজের সুবিধা-অসুবিধার চেয়ে বড় করে দেখেন।
সকল জাতি ও ধর্মের মানুষ, সকল শিশু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি। সকলেই সমান; কেউ বড়, কেউ ছোট নয়। হিন্দুধর্মে বলা হয়েছে সকল জীবের মধ্যে আত্মারূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন। ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালোবাসা মানেই ঈশ্বরকে ভালোবাসা। ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। জীবের সেবা মানে তাঁরই সেবা। ঋগবেদে (৫.৬০.৫) আছে, মহাপ্রভুর দৃষ্টিতে কেউই বড়ো নয়, কেউই ছোটো নয়। সবাই সমান। প্রভুর আশীর্বাদ সবারই জন্য। সুতরাং সকলের প্রতি সহমর্মী হওয়া ধর্মের অঙ্গ। এটি মানুষের নৈতিক গুণ। তাই সব সময়ে, সকলের জন্য নিজের অন্তরে সহমর্মিতার বোধ লালন করা এবং বাক্য ও আচরণে তার প্রকাশ করা প্রয়োজন। সামবেদে বলা হয়েছে, সত্যিকারের ধার্মিক সব সময় মিষ্টভাষী ও অন্যের প্রতি সহমর্মী (সামবেদ ২.৫১)।
মানুষ, গাছপালা, প্রাণী, প্রকৃতির সকল জড়বস্তু ঈশ্বর সবকিছুকে একসূত্রে গেঁথেছেন। তাই সব মানুষ এবং সমস্ত প্রকৃতির প্রতি আমাদের সহমর্মী হতে হবে।
ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে একটি জনপ্রিয় গান আমরা শুনি থাকি-
মানুষ মানুষের জন্যে,
জীবন জীবনের জন্যে,
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু, মানুষ মানুষের জন্যে,
জীবন জীবনের জন্যে,
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু, মানুষ মানুষের জন্যে।
হিন্দুধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ, মনীষীদের বাণীতেও আমরা সহমর্মিতা সম্পর্কে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা পাই। চলো, আমরা তার মধ্য থেকে কয়েকটি পড়ি।
ওঁ সহ নাববস্তু, সহ নৌ ভুনজু,
সহ বীর্যং করবাবহৈ।
তেজস্বি নাবধীতমস্তু, মা বিদ্বিষাবহৈ।।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।
(তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২/১)
অর্থাৎ, পরমাত্মা আমাদের উভয়কে (শিক্ষক ও শিক্ষার্থী) সমানভাবে রক্ষা করুন এবং সমান জ্ঞানদান করুন: আমরা যেন সমানভাবে বিদ্যালাভের সামর্থ্য অর্জন করতে পারি: আমাদের উভয়েই অর্জিতবিদ্যা তেজস্বী হোক; আমরা যেন পরস্পরকে বিদ্বেষ না করি। আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক- এই তিন ধরনের বিঘ্নের বিনাশ হোক।
সমাজকে ভালোবাসো। ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও। দুর্গতকে সাহায্য করো। সত্য ন্যায়ের সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রাখার শক্তি অর্জন করো। [ঋগবেদ ১.১২৫.৬]
হে মানবজাতি, তোমরা সম্মিলিতভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হও। পারস্পরিক মমতা ও শুভেচ্ছা নিয়ে একত্রে পরিশ্রম করো। জীবনের আনন্দে সম-অংশীদার হও। [অথর্ববেদ ৩.৩০.৭]
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "যুদ্ধ নয়, সহমর্মিতা; ধ্বংস নয়, সৃষ্টি; সংঘাত নয়, শান্তি ও সম্প্রীতি। বিবাদ নয়, সহায়তা; বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাব গ্রহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি।" তিনি অন্যের সুখ-দুঃখকে অনুভব করে নিজের আচরণ নির্ধারণ করতে বলেছেন। তাঁর কথায়, জীবনে কাউকে আঘাত করার আগে ভেবে নেবে নিজে আঘাত পেলে কেমন লাগে।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,
মনের কথা প্রাণের ব্যথা
বলিস কেবল তাকে পেলে
উপেক্ষা তোমায় করে না যে জন
যায় না তোমায় ঠেলে ফেলে।
ছক ৩.১৯: আমার জীবনের সহমর্মিতার কাহিনি
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
মহাভারতের রাজা পান্ডুর পাঁচ ছেলে ছিল। তাঁরা হলেন- যুধিষ্ঠীর, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। তাঁদেরকে একত্রে পঞ্চপান্ডব বলা হতো। বনবাসের সময় তাঁরা বনের ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করতেন। একদিন অর্জুন বন থেকে কিছু ফল আহরণ করলেন। তাঁদের মাতা কুন্তী দেবী এ ফলগুলো ছেলেদের সমানভাবে ভাগ করে খেতে বললেন, কিন্তু ভীম ঐ ফলগুলো খেতে রাজি হলেন না, কারণ ফল ছিলো খুবই অল্প। বাকি চার ভাই মনে মনে বিষয়টা বুঝতে পারলেন- ভীমের খাবার কম হয়েছে বিধায় সে খেতে চাচ্ছে না। প্রথমে যুধিষ্ঠীর, পরে অন্য ভাইয়েরা তাঁদের ভাগ থেকে কিছু কিছু ফল ভীমকে দিলেন, ভীম এতে মহাখুশি হয়ে আনন্দে ভোজন করতে লাগলেন। বাকী চার ভাইও আনন্দে খেতে শুরু করলেন।
তা দেখে কুন্তী দেবীর চোখ আনন্দাশ্রুতে ভরে গেল, তিনি সবাইকে বললেন, এই সহমর্মিতার ভাব যেন তাঁরা আজীবন ধরে রাখতে পারে। তখন যুধিষ্ঠীর মাকে বললেন, মা আমরা পাঁচ ভাই একে অপরের পরিপূরক।
মহাভারতের আরেক চরিত্র রাজা পরীক্ষিৎ। তিনি অর্জুনপুত্র অভিমন্যু ও বিরাট রাজ্যের রাজকন্যা উত্তরার পুত্র। যুধিষ্ঠিরের পর পরীক্ষিৎ হস্তিনাপুরের রাজা হয়েছিলেন। পরীক্ষিৎ ছিলেন খুবই ধার্মিক এবং প্রজাবৎসল রাজা। একবার তিনি শিকারে যান। সেখানে একটি হরিণকে তাড়া করে কিছুতেই ধরতে পারছিলেন না। হরিণকে তাড়া করতে করতে তিনি এক মাঠের পাশে এলেন। সেখানে তিনি মহর্ষি শমীককে দেখতে পেলেন। রাজা পরীক্ষিৎ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি একটি হরিণকে এদিক দিয়ে যেতে দেখেছেন? কিন্তু মহর্ষি তখন মৌনব্রত নিয়েছেন। তাই তিনি কোনো কথা বললেন না। রাজা তাঁর কাছে আবারও জানতে চাইলেন। এবারেও কোনো জবাব দিলেন না। ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত এবং বিরক্ত পরীক্ষিৎ বারবার একই প্রশ্ন করেও শমীকের কাছে কোনো উত্তর না পেয়ে ভীষণ রেগে গেলেন। কাছেই পড়ে ছিল একটা মরা সাপ। রাজা সাপটাকে তুলে মহর্ষির গলায় পেঁচিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
রাজা পরীক্ষিৎ মহর্ষি শমীককে চিনতেন না। কিন্তু মহর্ষি ঠিকই রাজাকে চিনতেন। তিনি রাজার ধর্মনিষ্ঠা এবং প্রজাবাৎসল্যের কথা জানতেন। তাই এই ঘটনায় শমীক একটুও রাগ করলেন না। কিন্তু শমীকের ছেলে শৃঙ্গী মুনি ছিলেন ভীষণ রাগী। তিনি এই ঘটনার কথা জানতে পেরে চরম অভিশাপ দিলেন। বললেন, যে আমার বাবাকে এমন অপমান করেছে, সে সাত দিনের মাথায় তক্ষক নামের সাপের কামড়ে মারা যাবে।
মহর্ষি শমীক এই কথা জেনে খুব দুঃখ পেলেন। ছেলেকে বললেন, তুমি খুব বড় ভুল করেছ। আমরা তপস্বী। ক্ষমাই আমাদের ধর্ম। পরীক্ষিতের কাছে অপমানিত হয়েও মহর্ষি শমীক রাজা পরীক্ষিতের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি এই অভিশাপের ফল থেকে রাজাকে বাঁচানোর জন্য সব ঘটনা জানানোর ব্যবস্থা করলেন।
ছক ৩.২০: একাত্মতা কর্নারে যা-কিছু রাখতে পারি
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকে কিছু কিছু জিনিস সংগ্রহ করো। সমস্ত জিনিস একত্র করে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী এক জায়গায় জড়ো করে রাখো। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা এরকম কোনো সংকটে তোমাদের ইথিক্স ক্লাব থেকে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করবে।
Read more