সামরিক শাসন ও মৌলিক গণতন্ত্র

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - জাতীয় চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় | NCTB BOOK

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৯ বছর পর ১৯৫৬ সালে সর্বপ্রথম পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয় । এ সংবিধানে বাঙালিদের কতিপয় দাবি বিশেষ করে বাংলাকে রাষ্ট্রের অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার সামরিক শাসন ঘোষণার মাধ্যমে তা বাতিল হয়ে যায়। আবার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইস্কান্দার মীর্জাকে সরিয়ে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন । তিনি সর্বজনীন ভোটাধিকার ভিত্তিক পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে ‘মৌলিক গণতন্ত্রের' ধারণা প্রবর্তন করেন ।

১৯৫৯ সালের ২৬শে অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান তার ‘মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ' ঘোষণা করেন । মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থাধীনে পাকিস্তানের উভয় অংশ থেকে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) করে মোট ৮০,০০০ (আশি হাজার) ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য নিয়ে দেশের নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয়। এরা মৌলিক গণতন্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। তাদের ভোটে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দ নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। মৌলিক গণতন্ত্র আদেশে নাগরিকদেরকে প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এক ধরনের পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। এ ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে পূর্ববাংলার জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হারায়। এ সময় রাজনৈতিক দল সকল সভা-সমাবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ মোট ৭৮ জন রাজনীতিককে কালো আইনের আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনোরূপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হয়।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে ১৯৬২ সালের জুন পর্যন্ত জেনারেল আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সামরিক শাসন বহাল থাকে । তিনি একটানা ৪৪ মাস সামরিক আইন দ্বারা দেশ পরিচালনা করেন। ১৯৬২ সালে জেনারেল আইয়ুব খান নিজস্ব ধ্যান-ধারণা নির্ভর একটি নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করেন। তাতে সংসদীয় সরকার এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ধারা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের বিধান রাখা হয় । রাষ্ট্রপতিকে এই ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে অসীম ক্ষমতাধর এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয় ।

আরও দেখুন...

Promotion