এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা প্রথমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম' এর একটি ঘটনা সম্পর্কে জানব। এই ঘটনার বিষয়ে আমরা নিজেদের মতামত প্রদান করব। এরপর নিজেদের মতামতের ভিন্নতা নির্ধারণ করব। পাঠ্যপুস্তকে প্রদত্ত ইতিহাসের বিষয়বস্তু পাঠ করব। এরপর খেলার মাধ্যমে তথ্য কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তা জানব। 'বৃটিশ আমলের শাসন ব্যবস্থা' নিয়ে কয়েকজন লেখক ও গবেষকের লেখা পড়ব। এই লেখা পাঠ করে লেখকদের মতামতের ভিন্নতাগুলো নির্ধারণ করব। এরপর আমরা ভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের দুইজন ব্যক্তি নির্ধারণ করব। দুইজন ব্যক্তির কাছে একই ঐতিহাসিক ঘটনার মতামত সংগ্রহ করব। তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মতামতের ভিন্নতায় কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা নির্ধারণ করব।
চলো তাহলে আমরা একটি ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিই।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবি কাজী নজরুল ইসলাম সব সময় শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন বার বার। তার লেখায় ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আবেদন। তাইতো তিনি জীবনে অনেক বার হয়েছেন কারাবন্দি। ব্রিটিশরা তাঁকে রাজদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। অন্যদিকে বাংলার মানুষের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন বিদ্রোহী কবি হিসেবে। তার লেখা গান ও কবিতা আজও আমাদের উদ্দীপ্ত করে। আজও আমরা খুঁজি পাই যেকোনো অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি। |
অনুশীলনী ১: |
আমরা এখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী চেতনা সম্পর্কে নিজেদের মতামত লিখি। প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন উৎসের সহায়তা নিতে পারি। আমরা নিজেদের মতামতগুলো উপস্থাপন করি। সহপাঠীদের উপস্থাপনা শুনে আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি, জাতীয় কবির বিদ্রোহী চেতনা আমাদেরকে ভাবিয়েছে। আমরা নানান দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে নিজেদের মতামত প্রদান করেছি।
|
লক্ষ্য করলে দেখব, ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী কবিকে রাজদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু বাংলার মানুষ এখনও তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন শোষণ ও নীপিড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক নির্ভীক যোদ্ধা ও বিদ্রোহী কবি হিসেবে। এভাবেই একই ঐতিহাসিক ঘটনা ব্যক্তির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন মতামত বা বয়ান তৈরি করে।
এখন আমরা আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট থেকে ইতিহাস জানার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
পহেলা বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। গ্রামের মাঠে বৈশাখী মেলা দেখার দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে মরিয়মের। জীবনে প্রথমবার সে মাটির পুতুল, খেলনা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, লাঠিখেলা দেখেছে। গ্রামের সকল ধর্মের সকল মানুষকে মিলেমিশে একসঙ্গে আনন্দ করতে দেখেছে। মেলায় আসার আগে মরিয়মের দাদু ওকে নিয়ে গিয়েছিল বাজারের বড়ো একটি দোকানে যেখান থেকে তাঁদের সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হয়। দাদুর কাছ থেকে মরিয়ম শুনেছে, বাংলা সন চালুর পর থেকে নাকী ব্যবসায়ীরা হালখাতা আয়োজন করেন। বঙ্গাব্দের প্রথম তারিখে প্রতিটি দোকানে হিসাবের নতুন খাতা খোলা হয়। পুরাতন বছরের সকল হিসাব নিকাশ শেষ করে নতুন খাতায় শুরু হয় হিসাবের নতুন যাত্রা। রীতি হিসেবে চলে পেট ভরে মিষ্টি খাওয়া।
বৈশাখী মেলার মাঠে নাগরদোলা, মাটির খেলনা, চরকী, বাঁশি, রঙিন বেলুনসহ নানা রকমের খেলনা পাওয়া যায়। সবাই নতুন পোশাকে সেজে মেলায় আসে। নানান রকমের খেলনা কেনে, খাবার কেনে, নাগরদোলায় চড়ে। দেখতে খুব ভালো লাগে।
|
মরিয়ম আনন্দমনে তার অভিজ্ঞতার গল্প বলে চলেছে। কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল মাইকেল, রেণু, নীলান্ত আর মাসুদ। চোখেমুখে নতুন কিছু দেখা, জানা ও শেখার আনন্দ নিয়ে নীলান্ত যোগ করল, নৌকা বাইচের কথা।
'নীলান্ত বলল, এবারই প্রথম সে নৌকা বাইচ দেখেছে তাঁদের গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীতে। নদীর দুই পাড়ে চলছিল কয়েক হাজার মানুষের আনন্দ-উৎসব। ছয়-সাতটি দল বাইচে অংশ নিচ্ছিল। মাঝি ভাইদের গানে গানে আর ছন্দে ছন্দে চলছিল নৌকাবাইচ। মরিয়ম আর নীলান্তের আনন্দ-অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে অনেক প্রশ্ন এসে ভীড় করেছে ওদের মাথায়।
রেণু বলল, শুনেছি আমাদের নানু, দাদুদের সময়ে এবং তার বহু আগেও নাকী বড়ো আয়োজনে বৈশাখী মেলা বসতো। দোকানে দোকানে হালখাতা হতো। আয়োজন করা হতো নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।