ব্যবস্থাপনার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ব্যবস্থাপকীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কতকগুলো বাধার সম্মুখীন হন, সেগুলো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে । এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলোর অধিকাংশই সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অক্ষমতা বা অযোগ্যতার সাথে সম্পর্কিত থাকে । নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথে সৃষ্ট প্রধান প্রধান প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ উল্লেখ করা হলো:
১. অপূর্ণাঙ্গ বা অসম্পূর্ণ তথ্য (Imperfect or incomplete information) : অনেক সময়ই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ব্যবস্থাপকগণ পান না এবং সম্পূর্ণ তথ্যাদি সংগ্রহ করতে হলে পর্যাপ্ত সময় ও অর্থ ব্যয়ের যে প্রয়োজন পড়ে তারও সুযোগ সর্বত্র থাকে না । ফলে অপূর্ণাঙ্গ বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় । এতে সিদ্ধান্ত সঠিকতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না ।
২. সমস্যা ও বিকল্পসমূহের অসঠিক শনাক্তকরণ (Inaccurate identification of prablem or alternatives): অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকগণ যথাযথভাবে সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারেন না কিংবা কার্যকর বিকল্পসমূহের সন্ধান পান না । সমস্যার লক্ষণকেই সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করায় প্রকৃত সমস্যা অনাবিষ্কৃত থাকে । তাই ভুল বা অসঠিক সমস্যার চিহ্নিতকরণ থেকে সঠিক সমাধান পাওয়া সম্ভব নয় । যে কারণে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবস্থাপকদের সমস্যাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করা যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সতর্কতার সাথে বিকল্পসমূহ নির্ধারণ ও মূল্যায়ন প্রয়োজন ।
৩. পক্ষপাতমূলক ঝোঁক (Biasness): সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীগণ অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না । তার বা তাদের মধ্যে পক্ষপাতমূলক ঝোঁক সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়। শ্রমিকদের মধ্যকার গণ্ডগোল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন নিজেই যদি একটা পক্ষ নিয়ে ফেলেন তখন সিদ্ধান্ত যেমনি যথার্থ হয় না তেমনি বাস্তবায়নে আরেকটা পক্ষ ঐ সিদ্ধান্ত মানতে চায় না । তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে এ ধরনের প্রবণতা পরিহার করা উচিত।
৪.সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনীহা (Timidity): অনেক নির্বাহী থাকেন যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিচ্ছুক থাকেন গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজটি চালিয়ে নেয়াটাকেই তারা প্রাধান্য দেন। নিজে সিদ্ধান্ত না দিয়ে অনেক সময় কোনো অধস্তনের ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেন। এক্ষেত্রে এরূপ অধস্তনের দেয়া সিদ্ধান্ত তার সহকর্মীগণ মানতে চায় না। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন সিদ্ধান্ত দিলেও যতটা আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক তার ঘাটতি থাকে । ফলে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় । ফলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ থেকেই সিদ্ধান্ত আসা উচিত ।
৫. আবেগের প্রভাব (Effect of emotion): আবেগের সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিপরীতমুখী সম্পর্ক লক্ষণীয় আবেগ যত প্রবল হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ততই কার্যকারিতা হারায়। সমস্যা চিহ্নিতকরণ, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিকল্প উদ্ভাবন, মূল্যায়ন ও উত্তম বিকল্প গ্রহণ আর সেক্ষেত্রে মূল্যবান বিবেচিত হয় না। ব্যক্তি আবেগনির্ভর হয়ে পড়লে যত না ক্ষতি হয় তার চেয়ে একটা দল যখন আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তখন গৃহীত সিদ্ধান্তের মান নিঃসন্দেহে দুর্বল হয় এবং তার বাস্তবায়নে নানান জটিলতা দেখা দেয় । তাই আবেগমুক্ত থেকে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ।
৬. উপকরণের অপ্রতুলতা (Inadequacy of input factors) : সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সম্পদ, মানবীয় সম্পদ ও ভৌত সম্পদের অভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর্যায়ে উপনীত হতে পারে না । প্রয়োজনীয় মূলধন, জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণের অপর্যাপ্ততাই অধিকাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান কারণ । তাই যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা যেনো যথাযথভাবেই বাস্তবায়ন করা যায় এবং উপকরণের অপ্রতুলতার অভাবে যেনো তা অবাস্তবায়িত না থাকে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সতর্ক থাকা উচিত ।
৭. সহযোগিতার অভাব (Lack of co-operation) : সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনেক ক্ষেত্রেই অধস্তনরা ঊর্ধ্বতনদের সহযোগিতা করে না । অনেক ক্ষেত্রেই পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ইত্যাদির অভাবেই সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হয় না। তাই অধস্তনদের সহযোগিতার অভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে যতটা সম্ভব অধস্তনদের পরামর্শ গ্রহণ বা সম্পৃক্ত করা গেলে এরূপ সহযোগিতা লাভ সহজ হয় ।
আরও দেখুন...