সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্য

পঞ্চম শ্রেণি (ইবতেদায়ী) - বিজ্ঞান - NCTB BOOK

আমরা চতুর্থ শ্রেণিতে জেনেছি, সুষম খাদ্য আমাদের সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে মানুষের বয়স ও কাজ অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদার পরিমাণে কম- বেশি হয়ে থাকে। তাই জানা দরকার আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন? তাছাড়া সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত ?

Content added By

(১)সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ ও সবল থাকার জন্য আমাদের সঠিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান প্ৰয়োজন । প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়। শরীরের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। আবার অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে ওজনজনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের বয়স ও কাজের ধরন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তবে যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে, তাদের বেশি খাদ্যের প্রয়োজন।

(২)প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ

প্রশ্ন : কীভাবে আমরা সুষম খাদ্য নির্বাচন করতে পারি?

কাজ : খাদ্যের পরিমাণ

কী করতে হবে :

১. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।

কখন খেয়েছি ?কী খেয়েছি ?কতটুকু খেয়েছি ?
সকালপরটা ও কলা ২টি ও ১টি
   
   

২. গতকাল কী খেয়েছি, কখন খেয়েছি এবং কতটুকু খেয়েছি তার একটি তালিকা তৈরি করি। 

৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।

(৩)নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব:

কোন প্রকার রাসায়নিক দূষক বা জীবাণুমুক্ত খাবারকে নিরাপদ খাবার বলা হয়। খাবার পুষ্টিকর হলেও নিরাপদ হওয়া দরকার। পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপদ না হলে আমাদের শরীরে কোনো কাজে আসে না। প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ না করলে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে নানা প্রকার রোগব্যাধি হয় ।

 

Content added By

সুষম খাদ্য গ্রহণ বলতে খাদ্যের প্রতিটি প্রকার থেকে সঠিক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করাকে বোঝায়। নিচের ছকে ৬–১২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণের একটি সাধারণ নির্দেশনা দেওয়া হলো।

৬ -১২ বছর বয়সের শিশুর খাদ্য তালিকা

খাদ্যের প্রকারভেদখাদ্যের নমুনাপরিমাণকত বার
খাদ্যশস্য ও আলু ( শর্করা )রুটি, পরটা, পাউরুটি১-২টাপ্রতিদিন ৩ – ৪ বার
ভাত, আলু, অথবা নুডুলস১ কাপ
শাক-সবজি (ভিটামিন, খনিজ লবণ )রান্না করা বা কাঁচা সবজিআধা কাপপ্রতিদিন ৩ অথবা ৪ বার
ফলমূল (ভিটামিন, খনিজ লবণ )

যে কোনো ধরনের ফল।

যেমন— আম, আপেল, কমলা

১ টিপ্রতিদিন ২ অথবা ৩ বার
ফলের রসছোট গ্লাসের ১ গ্লাস
মাছ, মাংস ও ডাল (আমিষ)মাংস১-৩ টুকরাপ্রতিদিন ১ – ২ বার
মাছমাঝারি মাপের ১ টুকরো
ডিম১টি
ডালমাঝারি মাপের ১-৩ কাপ
দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য (ক্যালসিয়াম, ভিটামিন)দুধএক গ্লাসপ্রতিদিন ১ -২ বার
দইএক কাপ
পনিরএক টুকরা
তেল ও চর্বিঘি, মাখন অথবা তেল১ টেবিল চামচ১ বার

 

আলোচনা

আমরা যা খাই তা কি সুষম খাবার ?

১. ডানে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।

২. গতকাল যে সকল খাবার খেয়েছি সেগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করি এবং মোট কতবার খেয়েছি তার তালিকা করি।

৩. খাবারের তালিকাটি পূর্বের ছকের সাথে তুলনা করি এবং তা সুষম কি না যাচাই করি।

৪. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।

খাদ্যের প্রকারভেদযা খেয়েছিকত বার খেয়েছি
খাদ্যশস্য ও আলু  
শাকসবজি  
ফল-মূল  
মাছ, মাংস ও ডাল  
দুগ্ধজাতীয় খাদ্য  
তেল ও চর্বি  

 

Content added By

বছরের সব সময় সব ধরনের খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায় না। তাই খাদ্যদ্রব্য নানাভাবে সংরক্ষণ করতে হয়।

প্রশ্ন : কীভাবে আমরা খাদ্য সংরক্ষণ করতে পারি ?

কাজ : খাদ্য সংরক্ষণের উপায়

কী করতে হবে :

১. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।

খাদ্যকীভাবে সংরক্ষণ করা হয় ?
মাংস (গরু, মুরগি), মাছ 
দুগ্ধজাত খাদ্য ( দুধ, মাখন, দই) 
শাকসবজি 
ফলমূল 

২. কীভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয় তার একটি তালিকা তৈরি করি।

৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।

Content added By

খাদ্য সংরক্ষণের উপায়

বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিভিন্নভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। চাল, ডাল, গম ইত্যাদি রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। মাছ, মাংস, সবজি, ফল ইত্যাদি ফ্রিজের ঠান্ডায় বেশ কিছু দিন ভালো থাকে। এ ছাড়াও হিমাগারে শাকসবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি সংরক্ষণ করে বছরের বিভিন্ন সময় বাজারে সরবরাহ করা হয়। ফল থেকে তৈরি জ্যাম, জেলি, আচার ইত্যাদি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া লবণ দিয়ে বা বরফ দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করা যায়। আবার চিনি, সিরকা বা তেল দিয়ে জলপাই, বরই, আম ইত্যাদি খাদ্য অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়।

খাদ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব

খাদ্য সংরক্ষণ অপচয় রোধ করে ও দ্রুত পচন থেকে খাদ্যকে রক্ষা করে । মাছ, মাংস, সবজি, ফল, দুগ্ধজাত খাদ্য ইত্যাদি খুব সহজেই জীবাণু দ্বারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। খাদ্য সংরক্ষণ খাবারে পচন সৃষ্টিকারী জীবাণু জন্মাতে বাধা দেয়। খাদ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌসুমি খাদ্যদ্রব্য সারা বছর পাওয়া যায়। এ ছাড়া খাদ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে অনেক দূরবর্তী এলাকায় সহজে খাবার সরবরাহ করা যায়।

 

Content added By

যে সকল খাদ্য কম খাওয়া উচিত

প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে আমাদের সুষম খাদ্য খেতে হবে। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত ?

প্রশ্ন : কোন কোন খাবার পরিহার করা উচিত ?

কাজ : খাদ্যের শ্রেণিবিভাগ

কী করতে হবে :

১. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।

স্বাস্থ্যসম্মতস্বাস্থ্যসম্মত নয়
  

২. নিচের ছবিটি লক্ষ করি। খাবারগুলোকে “স্বাস্থ্যসম্মত” এবং “স্বাস্থ্যসম্মত নয়” এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করে ছকে লিখি ।

৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।

 

Content added By

কোন কোন খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত এবং কোনগুলো কম খাওয়া উচিত তা জানা জরুরি। কিছু খাদ্য রয়েছে যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আবার কিছু খাদ্য রয়েছে যা শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

কৃত্রিম রং ও রাসায়নিক পদার্থ মেশানো খাদ্য

খাবারকে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করতে কোনো কোনো খাবারে কৃত্রিম রং মেশানো হয়। যেমন – মিষ্টি, জেলি, চকলেট, আইসক্রিম, কেক, চিপস, কোমল পানীয় ইত্যাদিতে কৃত্রিম রং রয়েছে। কোনো কোনো কৃত্রিম রং মেশানো খাবার মানুষের ক্যান্সার, অমনোযোগিতা, অস্থিরতা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবারে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে থাকে। খাবার সংরক্ষণ ও ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এ সকল ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলে বৃক্ক ও যকৃৎ অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে।

জাঙ্ক ফুড

তোমাদের কেউ কেউ হয়তো “জাঙ্ক ফুড”- এর নাম শুনে থাকবে। জনপ্রিয় জাঙ্ক ফুডের মধ্যে রয়েছে বার্গার, পিজা, পটেটো চিপস, ফ্রাইড চিকেন, কোমল পানীয় ইত্যাদি। জাঙ্ক ফুড সুস্বাদু হলেও সুষম খাদ্য নয়। জাঙ্ক ফুডে অত্যধিক চিনি, লবণ ও চর্বি থাকে যা আমাদের শরীরে খুব সামান্যই দরকার হয়। সাধারণ খাবারের বদলে জাঙ্ক ফুড খেলে পুষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

 

Content added By

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :

১) খাদ্য সংরক্ষণের ৩টি উপায় বর্ণনা কর। 

২) খাদ্য সংরক্ষণের উপকারিতা কী ? 

৩) সুষম খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন কেন ? 

৪) কীভাবে আমরা সুষম খাদ্য পেতে পারি ? 

৫) কোন কোন খাদ্যে কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয় ? 

৬) নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ না করলে কী কী হতে পারে?

 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন :

১) একটি বার্গারে বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন— গরু ও মুরগির মাংস, টমেটো, লেটুস, পনির, পাউরুটি ইত্যাদি থাকে। তারপরেও খুব বেশি বার্গার খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কেন ?

২) খাদ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হই ? 

৩) খাদ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন ব্যাখ্যা কর।

Content added By
Promotion