সেবা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ডিজিটাল প্রযুক্তি - Digital Technology - নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুযোগ গ্রহণ করি | | NCTB BOOK
9

ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দেওয়ার আরেকটি দিক হলো ডিজিটাল পেমেন্ট বা আর্থিক লেনদেন। বিশেষ করে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেন অনলাইন বা মোবাইলে করা হয়ে থাকে। যেমন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো সংশোধনের জন্য চার্জ বা পণ্য কেনার পর টাকা পরিশোধ করতে হয় মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে।

 

আবার অনেকক্ষেত্রে কোনো সেবায় ডেলিভারির সময়ও সরাসরি আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এজন্য যেকোনো উদ্যোগের আর্থিক লেনদেন কেমন হবে তার একটি পরিকল্পনা থাকতে হয়।

গত শ্রেণিতে ই-কমার্সের মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তির ধাপগুলো জেনেছিলাম। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত কোনো ই-কমার্সের প্লাটফর্ম থেকে সেবা গ্রহণের ধাপগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছিলাম এবং ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে ই-কমার্সের সেবা নেওয়ার ধাপগুলো অনুশীলন করি। এই অভিজ্ঞতায় আমরা নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে কী করে একটি উদ্যোগ নেওয়া যায় তার পরিকল্পনা করব।

আমাদের এলাকার তরুণদের মধ্যে একটা ইচ্ছে থাকে যে তারা ভাল আয় রোজগারের জন্য বিদেশ যাবে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কেউ না কেউ বিদেশে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত বেতন ও মানসম্মত কাজ পাচ্ছে না। অনেকক্ষেত্রে প্রতারণার স্বীকারও হচ্ছে। খোকন ভাই বিষয়টি অনুধাবন করে এলাকার তরুণদের জন্য বিদেশে চাকুরির তথ্য প্রদান, চাকুরি ও ভিসার আবেদন এবং ভিসা চেকিং সহ এই সম্পর্কিত সকল প্রকার সহযোগিতার জন্য সেবা দেয়া শুরু করলেন। কাজটি তিনি দায়িত্বশীলতা নিয়ে করে থাকেন ও অল্প কিছু সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে করেন। এতে তিনি এলাকার তরুণদের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। এই যে, খোকন ভাই এধরনের একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেন, এটি এক ধরনের উদ্যোগ। সাধারণভাবে যে কোনো কাজের কর্ম প্রচেষ্টা বা তৎপরতাই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে খোকন ভাইয়েরও নিজ এলাকায় থেকেই আয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হলো।

 

 

 

উদ্যোগ কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। একটি উদ্যোগ স্থাপনের চিন্তা বা ধারণা থেকে শুরু করে স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনা করাই হলো ব্যবসায় উদ্যোগ। ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বোঝায় মুনাফা অর্জনের আশায় লোকসানের সম্ভাবনা মাথায় রেখেও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা স্থাপনের জন্য দৃঢ় চিত্ত ও মনোবল নিয়ে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা। আর এই উদ্যোগ যে বা যারা গ্রহণ করেন সে বা তাদের বলা হয় উদ্যোক্তা।

 

 

 

 

একটি ই-কমার্সের উদ্যোগ গ্রহণ করতে কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হবে তা চিহ্নিত করে এই সেশনে আমাদের একটি পরিকল্পনা করতে হবে। এজন্য আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও ই-কমার্স সেবা উদ্যোগের পরিকল্পনা করব। এজন্য শিক্ষকের সহায়তায় আমাদের ক্লাসের প্রতি পাঁচজনে একটি করে উদ্যোগ চিহ্নিত করব এবং টার্গেট গ্রুপ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ডিজিটাল মাধ্যমে সেই উদ্যোগের পরিকল্পনার ধাপগুলো লিখব। পরিকল্পনায় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে-

  • টার্গেট গ্রুপ কারা
  • সেবার চাহিদা কেমন
  • কোন এলাকায় সেবা দেওয়া হবে
  • কী কী সেবা দেওয়া হবে
  • সেবার উৎস কী কী
  • সেবার দাম বা চার্জ নির্ধারণ
  • আইনগত ভিত্তি বা অনুমোদনের কী কী ডকুমেন্ট লাগতে পারে
  • ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে কোন প্লাটফরম ব্যবহার করা হবে
  • উদ্যোগ সম্পর্কে অন্যরা কীভাবে জানতে পারবে
  • কীভাবে সেবা পৌঁছানো হবে
  • আর্থিক লেনদেন কীভাবে হবে
  • এই উদ্যোগে আর কার কার সহায়তা নেওয়া যায়
  • দ্রুত ও সবসময় যোগাযোগের মাধ্যম কী

 

উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে সেশন-৩ এ ছক-৩.৬ এ চিহ্নিত সেবাগুলোর জন্য দলগতভাবে কাজ করব। আমাদের পরিকল্পনা প্রণয়নে শিক্ষকের সহায়তায় পরিচিত ও জনপ্রিয় নাগরিক বা ই-কমার্স সেবা প্রদানের কয়েকটি ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ পেজ/গ্রুপ ভিজিট করে উপরের বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলো অনুসন্ধান করব। সেই আলোকে আমাদের পরিকল্পনাটা সাজিয়ে নিব।

 

 

 

 

ই-কমার্সের ক্ষেত্রে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। প্রত্যেকটি উদ্যোগের নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে, নিজস্ব উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা থাকে। তাই আমি কোনো ই-কমার্সের উদ্যোগ নেওয়ার সময় অন্যের ই-কমার্স উদ্যোগের সাথে কোনো কিছু যেমন তার লোগো, পণ্য, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি মিলে যায় কিনা তা দেখে নিতে হবে। আগের শ্রেণিগুলোতে আমরা ট্রেডমার্ক, নিবন্ধন, প্যাটেন্ট, কপিরাইট ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছিলাম। ই-কমার্সের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কারো মেধাস্বত্বের সাথে যেন আমাদের পরিকল্পনা মিলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তা না হলে আইনগত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতে পারে।

 

 

 

 

Content added || updated By
Promotion