স্কিল কোর্স- এক: ইকো ট্যুর গাইডিং

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - জীবন ও জীবিকা - Life and Livelihood - | NCTB BOOK
21

এই কোর্স শেষে-
নিরাপত্তা বজায় রেখে নিজ নিজ এলাকায় ইকো ট্যুর গাইড হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হব এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে পর্যটন শিল্পে অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ হব।

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়

 হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;

 হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে

 কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;

এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপ্লুত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ জীবনের সীমারেখা পার হয়ে গেলেও বারবার এদেশে আসার আকুতি জানিয়েছেন তাঁর অনেক কবিতায়। যদি তিনি মানুষ বেশে আসতে না পারেন, তবে এদেশের প্রকৃতির উপাদান হয়ে যেন আসতে পারেন এই তার আবেদন! সত্যি আমাদের এই দেশ অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না করে যদি এই ঐশ্বরিক সৌন্দর্যকে পর্যটকের কাছে তুলে ধরা যায়, তাহলে কেমন হয়া

ইকো ট্যুরিজম ভাবনা

রায়হানাদের গ্রামটি অপূর্ব সুন্দর। সন্ধায় যখন পদ্মার ওপারে সূর্য ডোবে, তখন ছোট্ট গ্রামটি যেন এক স্বর্গ হয়ে ধরা দেয়া গত বছর নবান্নের মৌসুমে তার এক চাচা বিদেশ থেকে গাঁয়ে বেড়াতে আসেন। পদ্মা সেতুর পাড় ঘেঁষে তাদের ছোট্ট সোনার সেই গ্রামটি। রায়হানা দিনভর চাচাকে তাদের সারা গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল; পুকুরের সবুজ পানিতে লাল শাপলার ফুলেল বিছানা, তালগাছের মাথায় বাবুই পাখির ঝুলন্ত শৈল্পিক বাসা, মাঝবিলে পানকৌড়ির দৌড়ঝাঁপ, পাকা ধানের খেতে এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা বক কিংবা দত্তপাড়ার শতবর্ষী জটায়ু বটগাছ- কোনোটাই বাদ যায়নি। প্রকৃতির সঙ্গে এত চমৎকার সময় কাটানোর পর মুগ্ধ হয়ে চাচা বললেন- 'কতকাল দেখিনা আমার বাংলার এই রূপা' রায়হানা বলল, 'আজকে হাটবার, বিকেলে আপনাকে হাটে নিয়ে যাব। সেখানে সন্ধ্যায় সার্কাস দেখানো হয়। কালকে বটতলায় মেলা বসবে, সেখানে নিয়ে যাব।' চাচা হেসে বললেন, 'তুমি তো দেখছি খুব দক্ষ গাইড। ট্রেনিং নিয়েছ নাকি।' চোরা হাসি লুকিয়ে নিয়ে সে বলল, "হ্যাঁ চাচা। ট্যুরিস্ট গাইড হওয়ার খুব ইচ্ছা। তাই প্রাকটিস করছি।' চাচা বললেন, তাহলে ইকো ট্যুর গাইড হও। তুমি এটা খুব ভালো পারবে। 'শব্দটা রায়হানার কাছে একটু নতুন। তাই সে জানতে চাইল, 'ইকো ট্যুর মানে কী, চাচা?' চাচা একটা পুকুরের পাড়ে বসে পাতিহাঁসের জলকেলি দেখতে দেখতে রায়হানাকে ইকো ট্যুরিজম, ইকো ট্যুর গাইড ইত্যাদি সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন।

ইকো ট্যুরিজম ও ইকো ট্যুর

পরিবেশ ও প্রকৃতির নিয়মের কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়ে প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপভোগ করার পাশাপাশি গভীরভাবে প্রকৃতিকে জানা ও উপলব্ধি করাই হলো ইকো ট্যুরিজম। পর্যটনের এই ধারণা এসেছে পরিবেশের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ভাবনা থেকে। পর্যটনকে শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পরিবেশের ভারসাম্য বজায়ের রাখার প্রতি যত্নবান হওয়ার উপলব্ধি এই ইকো ট্যুরিজম ধারণার সঙ্গে যুক্ত। এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভ্রমণ-পিপাসু মানুষ আজকাল যান্ত্রিক একঘেয়ে জীবনের ক্লান্তি দূর করার জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ব্যাকুল। ইকো ট্যুরিজমের মূল ভাবনায় তাই কোনো এলাকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিদ্যমান বৈচিত্র্যময় পরিবেশ, পশু-পাখির স্বাধীন চলাচল ইত্যাদি উপাদান ঠাঁই করে নিয়েছে। পর্যটন খাতে তাই ইকো ট্যুরিজমের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। ইকো ট্যুরিজমের ভাবনাকে বিবেচনায় রেখে যে ট্যুর বা ভ্রমণ তা-ই ইকো ট্যুর নামে পরিচিতি পেয়েছে।

চিত্র ৭.১: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।(সুন্দরবন)

দলগত কাজ

নিজ এলাকার ইকো ট্যুর স্পট খুঁজি
কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় ইকো ট্রারের জন্য সম্ভাব্য স্পট বা জায়গাগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করো। প্রতিটি দল নিজেদের তালিকা দেয়ালে ঝুলিয়ে দাও। সব দলের তালিকা থেকে একই স্পটের (একই নাম যেগুলো এসেছে তালিকায়) নামগুলো চিহ্নিত করে একটি পোস্টারে লেখো। এরপর অবশিষ্ট অন্যান্য স্পটের নামগুলোও উক্ত পোস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত তালিকা বানাও।

ইকো ট্যুরিজম বা ইকো ট্যুর চাই কেন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিজেদের টিকে থাকার প্রয়োজনেই বিশ্বব্যাপী ইকো ট্যুরের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, স্থানীয় সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা, পরিবেশ দূষণ রোধ, পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ইকো ট্যুরিজম চিন্তার উদ্ভব। তাই প্রকৃতির অপার সৃষ্টিকে জানা এবং সচেতনভাবে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণে অভ্যস্ত করে তোলার একটা সুযোগ করে দেয় ইকো ট্যুরিজম। পর্যটন শিল্পের টেকসই বিকাশ ও উন্নয়ন এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করছে ইকো ট্যুরিজম। তাই বলা যায়, পরিবেশের যন্ত্র নিশ্চিত করতে ইকো ট্যুরিজম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ব্যাপক হারে ইকো ট্যুর চাই। ইকো ট্যুরে সহায়তার জন্য চাই ইকো ট্যুর গাইড। ইকো ট্রারের আরেকটি বড় ইতিবাচক দিক হলো, যে কেউ এখান থেকে লাভবান হতে পারে। এর জন্য বড় কোনো কোম্পানি স্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে না। একজন কৃষক বা স্থানীয় যেকোনো ব্যক্তি তার বাড়িতেই ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করতে পারে। ইকোট্টারিজমের ক্ষেত্রে এরকম হতে পারে- কোনো পর্যটক হয়তো কৃষকের বাড়িতেই থাকবে, কৃষক পরিবারে সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করবে, কৃষকের সঙ্গে কাজ করবে, তাদের এলাকায় ঘুড়ে বেড়াবে 

আমাদের দেশে ইকো ট্যুরের সম্ভাবনা

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি 

সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিতায় ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর সে ঘোষণা আজও সত্যি হয়ে ধরা দেয়া প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই বাংলাদেশ। এখানে তাই রয়েছে ইকো ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা। ভৌগোলিক অবস্থান, ষড়কতুর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সাজসজ্জা, পাহাড়-নদী, গাছগাছালি, হাওর-বাঁওড়-সাগর, প্রবাল দ্বীপ, বিস্তৃত সৈকত, পাহাড়ি ঝরনা-জলপ্রপাত ইত্যাদির সঙ্গে বেড়ে ওঠা হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও সভ্যতা, প্রাণিকুল, জীববৈচিত্র্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদি ইকো ট্যুরিজমের অনন্য উপাদান, যা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দেশের আনাচে কানাচে প্রাপ্তিক পর্যায়েও রয়েছে এমন অনেক পরিবেশগত পর্যটন স্পট। এদেশের শান্ত সবুজ প্রকৃতি ও নীল জলরাশি পর্যটকদের মনেও প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয়। পরিবেশের শান্তি বজায় রেখে এগুলো যদি আমরা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে ইকো ট্যুর আমাদের পর্যটন শিল্পে বিপুল অঙ্কের আর্থিক সাফল্য বয়ে আনবে। আর এসব ট্যুর ব্যবস্থাপনায় সহায়তার জন্য প্রয়োজন হবে অসংখ্য ইকো ট্যুর গাইড। আমরা যে কেউ হতে পারি এমন একজন গাইড।

চিত্র ৭.২: বাংলাদেশের একটি ইকো ট্যুর স্পট (বিছানাকান্দি, সিলেট)

দলগত কাজ

ইকো ট্যুর স্পট
আগের একই দলে ভাগ হয়ে প্রতিটি দল নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ট্যুর স্পটের তালিকা বানাও। প্রথমে যেকোনো একটি দলের তালিকা উপস্থাপন করো। উপস্থাপিত তালিকায় অন্যান্য দলের যেগুলো বাদ পড়েছে সেগুলোর নাম অন্তর্ভুক্ত করে পোস্টারে একটি সমন্বিত তালিকা বানাও এবং শ্রেণিকক্ষে টানিয়ে দাও।

ইকো ট্যুরে সুবিধা

ইকো ট্যুর প্রোগ্রামের অনেক সুবিধা রয়েছে। এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সম্প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি করে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও চর্চাকে সবার কাছে পরিচিত করে তোলে। সুতরাং বলা যায়, এটি একটি এলাকার-

  • পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সহযোগিতা করে
  •  অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কর
  • শিল্প-সংস্কৃতি রক্ষায় ভূমিকা রাখে এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সুসংহত করে
  • সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে
  • জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণের চর্চায় অভ্যন্ত করে তোলে

ইকো ট্যুর গাইডিং কীভাবে শুরু করব

প্রথমে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে আমাদের এলাকার কী কী বিশেষত্ব আছে? এই এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য কী? মূল শিল্প-সংস্কৃতি কী? মুক্তিযুদ্ধে এই এলাকার বিশেষ অবদান কী? এই এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কারা? এলাকায় কী কী উৎপন্ন হয়? প্রাকৃতিকভাবে আমাদের এলাকায় কী কী দর্শনীয় স্থান আছে (নদী, পাহাড়, খাল-বিল, বন-জঙ্গল, প্রাচীন বৃক্ষ, পুরাকীর্তি প্রভৃতি)? আমাদের এলাকার বিশেষ খাবার বা পণ্য কী আছে, যা খুব প্রসিদ্ধ বা প্রচলিত? এসব খাবার বা পণ্যের ঐতিহ্যগত বিশেষত্ব কী? এই এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা কেমন? এখানে প্রাচীন কোনো স্থাপনা আছে কি না, সেগুলোর ঐতিহাসিক মুলা বা ইতিহাস ইত্যাদি এমন অনেক তথ্য আগে জানতে হবে। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক ভ্রমণ ডায়েরি দেখা যায়। সেখান থেকেও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। যেমন: চাঁদপুরের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে প্রাচীন জমিদারের স্মৃতিবিজড়িত রূপসা জমিদার বাড়ি। এই এলাকার জন্য এটি হতে পারে একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থান। স্থানীয়ভাবে এর ইতিহাস জেনে নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, নিজের জানাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। এভাবে আমরা নিজ এলাকার বিশেষত্ব সংগ্রহ করে ইকো ট্যুর গাইডিং এ দক্ষ হয়ে ওঠতে পারি।

চিত্র ৭.৩: চাঁদপুরের রূপসা জমিদার বাড়ি

ইকো ট্যুর গাইডিংয়ের উদ্দেশ্য
ট্যুর গাইডিং এর মূল লক্ষ্য হলো পর্যটকদের ভ্রমণকে নিরাপদ, চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক করা। এ ছাড়া অন্যান্য যে উদ্দেশ্য রয়েছে, সেগুলো হলো-

  •  সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দক্ষতার সঙ্গে ট্যুর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা
  • পর্যটকদের টার স্পটের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া
  • যথাসময়ে ট্যুর শিডিউল পর্যটকদের সঙ্গে বিনিময় (শেয়ার) করা
  • স্পট বা স্থানীয় বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও উপাত্ত ও ইতিহাস জানানো 
  •  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করা
  •  ভ্রমণকালে পরিবেশবান্ধব আচরণে পর্যটকদের অভ্যন্ত করে তোলা
  •  একটি সফল ট্যুরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা

কেমন হতে পারে ইকো ট্যুর প্রোগ্রাম

ইকো ট্যুর প্রোগ্রামগুলো সাধারণত এলাকাভিত্তিক অথবা বিষয়ভিত্তিক হয়ে থাকে। এগুলো এক দিনেরও হতে পারে, আবার কয়েকদিন বা মাসব্যাপীও হতে পারে। পর্যটকের উদ্দেশ্য ও চাহিদা অনুযায়ী এই প্রোগ্রাম সাজাতে হয়। বিভিন্ন ধরনের ইকো ট্যুর হতে পারে:
প্রকৃতি পর্যটন: সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশ (বন-জঙ্গল, পাহাড়, নদী, খাল-বিল, প্রাচীন বৃক্ষ ইত্যাদি)
পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের ইকো ট্যুর প্রোগ্রামগুলো হয়ে থাকে। যেমন: পাহাড়ে বা জঙ্গলে হাইকিং, বিল বা হাওর পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন অঞ্চলের পাখি পর্যবেক্ষন, নদী বা বিলে নৌ-ভ্রমণ ইত্যাদি প্রোগ্রাম ইকো ট্যুরের আওতাভুক্ত।
কৃষি পর্যটন: সাধারণত কোনো এলাকার কৃষি কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করা ও হাতে-কলমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে এই ধরনের ইকো ট্যুর প্রোগ্রামগুলো হয়ে থাকে। যেমন: খামার পর্যবেক্ষন, ফল বা ফুল বাগান ভ্রমণ, কৃষিপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি প্রোগ্রাম কৃষি-পর্যটনের অন্তর্গত।
কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট পর্যটন: এই ধরনের প্রোগ্রামগুলো সাধারণত কোনো একটি এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে করা হয়ে থাকে। যেমন: বাঁধ নির্মাণ, স্কুল নির্মাণ, টিউবওয়েল স্থাপন, গাছ রোপণ, সামাজিক বনায়ন প্রকৃতি কাজে অংশগ্রহণ এই প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত।

দলগত কাজ

নিজ এলাকার ইকো ট্যুর স্পট নির্বাচন
ইকো ট্যুর গাইডিংয়ের জন্য নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য জায়গাগুলোর যে তালিকা প্রস্তুত করেছ তা নিয়ে দলে (পূর্বে তৈরিকৃত একই দলে) আলোচনার মাধ্যমে একটি স্পট নির্বাচন করো। (স্পট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইকো ট্যুরের উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য বিবেচ্য দিকগুলো লক্ষ্য রেখে নির্বাচন করতে হবে।)

ট্যুর প্ল্যান তৈরি 

একটি চমৎকার ট্যুর প্ল্যান ভ্রমণের পুরোটা সময় চিন্তামুক্ত ও আনন্দময় করে তোলে। এ কারণে ইকো ট্যুরের জন্য একটি কার্যকর ও সুপরিকল্পিত ট্যুর প্ল্যান তৈরি করে নিতে হবে। উক্ত প্ল্যান করার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে

  •  ট্যুরে সময়কাল (ট্যুর শিডিউল)
  • সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ভ্রমণস্থানের (ট্যুর স্পট) পূর্বানুমতি নেওয়া
  •  কতজন অতিথি/গেস্ট/ভিজিটর থাকবেন
  •  ভাদের কোনো বিশেষ সাপোর্ট লাগবে কি না, লাগলে সেটি কী ধরনের
  • কোন জায়গা থেকে শুরু হবে এবং কোথায় শেষ হবে
  • কোন কোন জায়গা ভিজিট করব, কী কী দেখব, কী কী জানব (ট্যুরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী)
  • কোথায় খাওয়াদাওয়া করব
  • বিশ্রামের স্থান ও সময় কোথায় এবং কতক্ষন হবে।
  •  কোনো বিশেষ অ্যাক্টিভিটি আছে কি না, থাকলে সেটি কী, কোথায় এবং কখন?

দলগত কাজ

ট্যুর প্ল্যান তৈরি
দলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত জায়গায় ইকো ট্যুর আয়োজন করার জন্য দলগত আলোচনার মাধ্যমে একটি ট্যুর প্ল্যান তৈরি করো।

ট্যুর শিডিউল

প্রতিটি ভ্রমণেই একটা সুনির্দিষ্ট শিডিউল থাকা প্রয়োজন। এতে ট্যুর গাইড এবং ট্রারিস্ট দুই পক্ষেরই সুবিধা হয়। সময় অনুযায়ী সবাই যার যার মতো প্রস্তুতি নিতে পারে। এতে সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। দলের কোনো সদস্য স্পটে যেতে সমস্যা অনুভব করলে তিনি শিডিউল দেখে আগে থেকেই দল ও গাইডকে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রাখতে পারেন। এসব কারণে ট্যুর প্ল্যানিংয়ের সময় অবশ্যই একটি ট্যুর শিডিউলও প্রস্তুত করা প্রয়োজন। স্পটের ধরন, ট্যুরের ধরন ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী ট্যুর শিডিউল দেখতে একেক রকম হতে পারে। এখানে একটি ট্যুর শিডিউলের নমুনা দেওয়া হলো।

দলগত কাজ

ট্যুর শিডিউল তৈরি
দলের সঙ্গে আলোচনা করে তোমাদের নির্ধারিত ট্যুরের জন্য নিজেদের পছন্দের ডিজাইন অনুযায়ী একটি ট্যুর শিডিউল তৈরি করো।

ট্যুর প্ল্যান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস নিশ্চিত করা
একটি ট্যুরে অনেক ধরনের উপকরণ (লজিস্টিকস) প্রয়োজন হয়। যেমন: যানবাহন (ট্রান্সপোর্ট), বিশ্রাম করা বা থাকার জায়গা, খাবার ও পানির ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ প্রভৃতি। কিছু উপকরণ ট্যুরের আগেই প্রয়োজন, আবার কিছু উপকরণ ট্যুর চলাকালীন প্রয়োজন। যদি এমন কোথাও ট্যুর আয়োজন করতে হয় যে তার আশেপাশে যাবার ও পানির ব্যবস্থা নেই, তাহলে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সঙ্গে বহন করে নিয়ে যেতে হবে। ট্যুরে প্রয়োজনীয় উপকরণ বা লজিস্টিকস সাপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে-

  •  এই ট্যুরে যেসব উপকরণ বা লজিস্টিকস সাপোর্ট প্রয়োজন হবে, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
  • কোন কোন উপকরণ ট্যুরের আগে প্রয়োজন, কোনগুলো ট্যুরের সময় সঙ্গে নিতে হবে এবং কোনগুলো স্পটে যাওয়ার পর প্রয়োজন হবে তা চিহ্নিত করতে হবে।
  •  কে/কারা এই উপকরণগুলো নিশ্চিত করবে, তা আগে থেকেই বণ্টন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
  • ট্যুর সদস্যদের নামের তালিকা এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে।
  •  বিশেষ/জরুরি প্রয়োজনে সাপোর্ট/ব্যাকআপ কোথায় পাওয়া যাবে তা জানতে হবে এবং প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য মোবাইল/ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে।

দলগত কাজ

লজিস্টিকসের প্ল্যান তৈরি
দলের নির্বাচিত জায়গায় ইকো ট্যুর আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের (লজিস্টিকস) এর পরিকল্পনা তৈরি করো

ট্যুর প্ল্যান অনুযায়ী খরচের পরিকল্পনা

যেকোনো ইভেন্ট/প্রোগ্রামেরই কিছু না কিছু খরচ আছে। ইকো ট্যুর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। একটি ট্যুর প্রোগ্রামকে সফল করতে হলে অবশ্যই এর খরচ সঠিকভাবে নিরূপণ করতে হবে। যেমন: যাওয়া ও আসার পরিবহন খরচ, খাওয়া-দাওয়ার খরচ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্পটে প্রবেশ টিকিটের খরচ ইত্যাদি।

দলগত কাজ

খরচের পরিকল্পনা
প্রতিটি দল নির্বাচিত জায়গায় ইকো ট্যুর আয়োজন করার জন্য একটি খরচের পরিকল্পনা তৈরি করো।

উপকরণ

দর (ইউনিট কণ্ঠ

পরিমান/সংখ্যা

খরচ

    
    
    
    

ট্যুর কনফার্মেশন

  •  গেস্ট/পর্যটকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্যুরের বিষয় অবগত করা
  •  ট্যুর প্ল্যানটি গেস্ট/পর্যটকের সঙ্গে শেয়ার করা
  •  গেস্ট/পর্যটকের কাছ থেকে ট্যুরের নিশ্চয়তা (কনফার্মেশন) নেওয়া
  • যদি গেস্ট/পর্যটক কোনো পরিবর্তন চায়, তাহলে তা ট্যুর প্ল্যানে আপডেট করতে হবে

ইকো ট্যুর গাইভিংয়ের অনুশীলন করি

ক) প্রতিটি দল তাদের নির্বাচিত স্পটে ট্যুরের জন্য নিজেদের করা পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্লাসে ভূমিকাভিনয় করে দেখাও।

খ) প্রত্যেকে নিজ পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যকে নিয়ে নিজেদের এলাকার নির্দিষ্ট একটি স্থানে বা স্পটে বেড়ানোর জন্য এক দিনের একটি ট্যুর প্রোগ্রাম আয়োজন করো এবং উক্ত প্রোগ্রামে নিজে একজন ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করো।

গ) তোমার পরিচিত/আত্মীয়দের মধ্যে কেউ এলাকায় বেড়াতে এলে তাকে নিয়ে একটি ট্যুর প্ল্যান করে নিম্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্পট দেখাও।

বাংলাদেশকে ইকো ট্যুরিজমের স্বর্গরাজ্য বললেও ভুল হবে না! জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর অন্যতম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, প্রকৃতির অনবদ্য সৃষ্টি প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সৈকত- সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা, সবুজের চারণক্ষেত্র সিলেটের চা-বাগান, বিছানাকান্দি, রাতারগুল; পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সংস্কৃতি ও বনাঞ্চল; বান্দরবানের সাজেক ভ্যালি, নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়: নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ; মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, উয়ারী-বটেশ্বর, যাট গম্বুজ মসজিদ এসবই তো আমাদের একেকটি সম্পদ। শুধু বিখ্যাত এই পর্যটন স্থানগুলো নয়, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে ছোট ছোট জলাধার, উদ্যান, ঐতিহাসিক স্থানগুলোও ইকো ট্যুরিজমের আকর্ষনীয় ও সম্ভাবনাময় সম্পদ।

আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ এলাকার বৈচিত্রা খুঁজে নিজেরাই দক্ষ গাইডিংয়ের মাধ্যমে সবার কাছে ইকো টুরিজমকে পরিচিত করে তুলি তাহলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।

চিত্র ৭.৪: বাংলার মেঠোপথ

পল্লি কবি জসীমউদ্দীনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তাই চলো পর্যটকদের করি নিমন্ত্রণ-
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গায়

 গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়

 সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া 

দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া

 বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ভরিয়া রাখিবে তায় 

বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়

 

স্বমূল্যায়ন

বাড়ির সদস্য বা অতিথিদের নিয়ে আয়োজিত ইকো ট্যুর পরিচালনা করতে গিয়ে যেসব কাজ করেছ। তার বিবরণ লেখো।

 

Content added By
Promotion