আমাদের পৃথিবীকে ৩৬০° দ্রাঘিমারেখা দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। এই ৩৬০° কে আবার মূল মধ্যরেখা থেকে দুই দিকে অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ১৮০° করে ভাগ করা হয়েছে। এই ৩৬০° দ্রাঘিমা পুরোটাই আসলে কাল্পনিক। আমরা জানি পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার পুরোটি ঘুরে আসছে। হিসাব করলে দেখা যাবে ৩৬০° ঘুরে আসতে সময় লাগছে ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ২৪ X ৬০ - ১৪৪০ মিনিট। এই ১৪৪০ মিনিটকে ৩৬০° দিয়ে ভাগ করলে (১৪৪০ + ৩৬০) ৪ মিনিট। অর্থাৎ প্রতি ডিগ্রি দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময় লাগছে ৪ মিনিট।
স্থানীয় সময় (Local Time)
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর যে অংশটি পূর্ব দিকে সেই অংশটিতে আগে সূর্যোদয় বা সকাল হয়। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোনো একটি স্থানে সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর আসে তখন ঐ স্থানে মধ্যাহ্ন। ঐ ছাদের
ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা ধরা হয়। এই মধ্যাহ্ন থেকেই দিনের অন্যান্য সময়গুলো ঠিক করা হয়। আকাশে সূর্যের অবস্থান থেকে যে সময় স্থির করা হয় তাকে স্থানীয় সময় বলে। ঐ স্থান থেকে যত দূরের স্থান হবে সে হিসেবে প্রতি ১° দ্রাঘিমার জন্য সময় বাড়বে বা কমবে। স্থানটি যদি সেই স্থানের পশ্চিমের দিকের স্থান হয় তবে এর ১° ব্যবধানের জন্য ৪ মিনিট কম হবে। স্থানটি পূর্ব দিকের হলে ১০ ব্যবধানের জন্য ৪ মিনিট বেশি হবে। অর্থাৎ পূর্ব দিকের স্থানের সময় নির্ণয়ের জন্য ঐ স্থানের সময়ের সঙ্গে প্রতি ডিগ্রি ব্যবধানের জন্য ৪ মিনিট যোগ করতে হবে। কারণ সেই স্থানটি যেহেতু পূর্বে অবস্থিত তাই সেখানে আগেই মধ্যাহ্ন হয়েছে অর্থাৎ ১২টা বেজেছে।
প্রমাণ সময় (Standard Time)
দ্রাঘিমারেখার উপর সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সময় ঠিক করি। এভাবে মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থানকে সেই স্থানের দুপুর ১২টা ধরে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করলে সাধারণত একটি বড় দেশের মধ্যে সময়ের গণনার বিভ্রাট হয়। এই সময়ের বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক দেশে একটি প্রমাণ সময় নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত কোনো একটি দেশের মধ্যভাগের দ্রাঘিমারেখা অনুযায়ী যে সময় নির্ধারণ করা হয় সে সময়কে ঐ দেশের প্রমাণ সময় ধরা হয়।
দেশের আয়তনের উপর ভিত্তি করে প্রমাণ সময় একাধিক হতে পারে। আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্রে ৪টি এবং কানাডাতে ৬টি প্রমাণ সময় রয়েছে। সেসব দেশগুলোর প্রশাসনিক ও অন্যান্য কাজের সুবিধার জন্য তারা একাধিক প্রমাণ সময় ব্যবহার করছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের অদূরে অবস্থিত গ্রিনিচের (০° দ্রাঘিমায়) স্থানীয় সময়কে সমগ্র পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের পূর্ব দিকে অবস্থিত তাই আমাদের দেশে প্রমাণ সময় গ্রিনিচের সময়ের অগ্রবর্তী অর্থাৎ আমাদের এখানে গ্রিনিচের মধ্যাহ্নের পূর্বেই মধ্যাহ্ন হয়ে থাকে। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা ০° অন্যদিকে আমাদের বাংলাদেশের ঠিক মাঝখান দিয়ে ৯০° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করেছে। আর আমরা জানি প্রতি ১ ডিগ্রির জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট। তাই ৯০°-এর জন্য সময়ের পার্থক্য হবে ১০ X ৪ - ৩৬০ মিনিট বা ৬ ঘণ্টা। ৯০° পূর্ব প্রাঘিমার স্থানীয় সময়কে বাংলাদেশের প্রমাণ সময় ধরে কাজ করা হয়। আমাদের এখানে যখন দুপুর ১২টা তখন যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে সকাল ৬টা বাজে।
আরও দেখুন...