এই তরঙ্গ মাধ্যমের ঐ অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, মাধ্যমের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয় না। সাধারণভাবে বলা যায় যে, এ স্থলে সীমাবদ্ধ থেকে পর্যায়ক্রমে গতিশক্তি (স্থিতিস্থাপক) স্থিতি বা বিভব শক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
একটি টানা তারের কোথাও আঘাত করলে একটি তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। [চিত্র ১৭.১০] এবং এই তরঙ্গ তার বেয়ে দুই প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয় এবং পরিশেষে দুই প্রান্ত হতে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এই প্রতিফলিত তরঙ্গ ও মূল তরঙ্গের প্রকৃতি অভিন্ন থাকলেও তাদের মধ্যে দশা বৈষম্য 180° হয়।
ফলে তারে প্রতিফলিত তরঙ্গ ও এর বিপরীত দিকে গতিশীল (নতুন) মূল তরঙ্গ মিলে স্থির তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গ তারের বাইরে যায় না— তারের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে উৎপন্ন ও বিলুপ্ত হয়। তারটি ভালভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, তারের সকল বিন্দুর বিস্তার সমান নয়। স্থির তরঙ্গের ক্ষেত্রে কোন কোন বিন্দুতে বস্তুকণার বিস্তার শূন্য এবং কোন কোন বিন্দুতে বিস্তার সর্বাধিক। যে বিন্দুগুলোতে বিস্তার সর্বাধিক (চিত্রে A চিহ্নিত বিন্দুগুলো) তাদেরকে সুস্পন্দ বিন্দু (Antinode) এবং যে সকল বিন্দুতে বিস্তার শূন্য (চিত্রে N চিহ্নিত বিন্দুগুলো) তাদেরকে নিস্পন্দ বিন্দু (Node) বলে।
স্থির তরঙ্গের কতকগুলো ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল :
(ক) এই তরঙ্গ কোন একটি মাধ্যমের সীমিত অংশে উৎপন্ন হয়।
(খ) অগ্রগামী তরঙ্গের ন্যায় অগ্রসর না হয়ে একই স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে।
(গ) তরঙ্গের বিভিন্ন বিন্দুতে কম্পনের বিস্তার সমান নয়।
(ঘ) তরঙ্গের যে বিন্দুতে বিস্তার সর্বাধিক তাকে 'সুস্পন্দ' বিন্দু বলে এবং তরঙ্গের যে বিন্দুতে বিস্তার শূন্য তাকে 'নিস্পন্দ' বিন্দু বলে।
(ঙ) তরঙ্গের সস্পন্দ বিন্দুর বিস্তার তরঙ্গ সৃষ্টিকারী মূল তরঙ্গের বিস্তারের দ্বিগুণ-এর সমান।
(চ) সত্য দুটি পর পর নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী কণার সরণ একই দিকে হয় এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব /2। পর পর নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী অংশকে লুপ (Loop) বলে।
(ছ) পর পর দুটি লুপের সরণ পরস্পর বিপরীত দিকে হয়।
(জ) নিস্পন্দ বিন্দুতে চাপ ও ঘনত্বের পরিবর্তন সর্বাধিক, কিন্তু সুস্পন্দ বিন্দুতে চাপ ও ঘনত্বের পরিবর্তন শূন্য ।
(ঝ)পর পর তিনটি সুস্পন্দ বিন্দু বা পর পর তিনটি নিস্পন্দ বিন্দু বা দুটি লুপের মধ্যবর্তী দূরত্বই স্থির তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য।
(ট) স্থির তরঙ্গের স্থির বিন্দুসস্থ কণাগুলো ছাড়া সকল কণার গতি সরল ছন্দিত গতি।
(ঠ) কোন মাধ্যমে স্থির তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য () বা কম্পাঙ্ক (n) তরঙ্গ সৃষ্টিকারী যে কোন একটি মূল তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (λ) বা কম্পাঙ্ক (n)-এর সমান।
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mi>y</mi><mn>1</mn></msub><mo>=</mo><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub><mo> </mo><mi>s</mi><mi>i</mi><mi>n</mi><mo> </mo><mi>ω</mi><mfenced><mrow><mi>t</mi><mo>−</mo><mfrac><mi>x</mi><mi>v</mi></mfrac></mrow></mfenced></math>
এবং ঋণাত্মক X-অক্ষ অভিমুখে অগ্রগামী তরঙ্গের সরণ সমীকরণ,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mi>y</mi><mn>2</mn></msub><mo>=</mo><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub><mo> </mo><mi>s</mi><mi>i</mi><mi>n</mi><mo> </mo><mi>ω</mi><mfenced><mrow><mi>t</mi><mo>+</mo><mfrac><mi>x</mi><mi>v</mi></mfrac></mrow></mfenced></math>
এখানে A0 = তরঙ্গের বিস্তার, T = 2π/ = পর্যায়কাল এবং v = বেগ। এ স্থলে, y1 ও y2 হচ্ছে উৎস হতে x দূরত্বে অবস্থিত একটি কণার সময়ে দুটি পৃথক তরঙ্গের জন্য দুটি সরণ। ধরা যাক, তরঙ্গ দুটি একটি অপরটির উপর আপতিত হল। এখন এই দুটি তরঙ্গের লব্ধি সরণ-
এখানে, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>A</mi><mo>=</mo><mn>2</mn><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub><mo> </mo><mi>c</mi><mi>o</mi><mi>s</mi><mo> </mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mi>x</mi></math> স্থির তরঙ্গের উপর x দূরত্বে অবস্থিত কণার বিস্তার।
সমীকরণ (11) হতে দেখা যায় যে সমাপতিত তরঙ্গ দুটি একটি সরল ছন্দিত গতিসম্পন্ন তরঙ্গ উৎপন্ন করে। এই সরল ছন্দিত গতিটি অগ্রগামী তরঙ্গ নয় ; কারণ এতে অগ্রগামী তরঙ্গের ন্যায় দশার কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ অগ্রগামী তরঙ্গের ন্যায় দশা কোণের ভিতর (vt — x) জাতীয় কোন রাশি অন্তর্ভুক্ত নেই। সুতরাং, সমীকরণ (11) দুটি - তরঙ্গের উপরিপাতের ফলে সৃষ্ট স্থির তরঙ্গ প্রকাশ করে।
সমীকরণ ( 11 ) -এ বিস্তার, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>A</mi><mo>=</mo><mn>2</mn><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub><mo> </mo><mi>c</mi><mi>o</mi><mi>s</mi><mo> </mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mi>x</mi></math> । এটা কণার অবস্থান x-এর উপর নির্ভরশীল। কাজেই বিভিন্ন কণার বিভিন্ন অবস্থানের জন্য A ভিন্ন ভিন্ন হবে। যে সব বিন্দুতে A = 0 অর্থাৎ বিস্তার শূন্য হবে, সে সব বিন্দুতে নিস্পন্দ বিন্দুর সৃষ্টি হবে।
পরপর সংলগ্ন দুটি নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব : =
সুস্পন্দ বিন্দু (Antinodes): যে সকল বিন্দুতে লব্ধি বিস্তার, A সর্বাধিক; অর্থাৎ , সে সকল বিন্দুতে সুস্পন্দ বিন্দুর উদ্ভব হবে। সুতরাং, সুস্পন্দ বিন্দু তৈরির শর্ত হল :
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>A</mi><mo>=</mo><mn>2</mn><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub><mo> </mo><mi>c</mi><mi>o</mi><mi>s</mi><mo> </mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mo>=</mo><mo>±</mo><mn>2</mn><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub></math>
বা, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>c</mi><mi>o</mi><mi>s</mi><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi><mi>x</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mo>=</mo><mo>±</mo><mn>1</mn></math>
বা, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi><mi>x</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mo>=</mo><mn>0</mn><mo>,</mo><mi>π</mi><mo>,</mo><mn>2</mn><mi>π</mi></math>
বা, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>x</mi><mo>=</mo><mn>0</mn><mo>,</mo><mfrac><mi>λ</mi><mn>2</mn></mfrac><mo>,</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>λ</mi></mrow><mn>2</mn></mfrac></math>
:- পরপর সংলগ্ন দুটি সুস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব = <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mo>=</mo><mfenced><mrow><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>λ</mi></mrow><mn>2</mn></mfrac><mo>−</mo><mfrac><mi>λ</mi><mn>2</mn></mfrac></mrow></mfenced><mo>=</mo><mfrac><mi>λ</mi><mn>2</mn></mfrac></math> [ চিত্র ১৭.১০] এবং একটি সুস্পন্দ ও একটি সন্নিহিত নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব বা ব্যবধান <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>λ</mi></mrow><mn>4</mn></mfrac></math> । [ চিত্র ১৭.১১] -এ a এবং n দ্বারা যথাক্রমে সুস্পন্দ ও নিস্পন্দ বিন্দুর অবস্থান দেখান হয়েছে। পাশাপাশি দুটি নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যে একটি সুস্পন্দ বিন্দু থাকে।
অগ্রগামী তরঙ্গ | স্থির তরঙ্গ |
---|---|
১। মাধ্যমের সকল কণাই পর্যাবৃত্ত গতি লাভ করে। | ১। মাধ্যমের নিস্পন্দ বিন্দুর কণাগুলি ছাড়া অন্যান্য সব কণাই পর্যাবৃত্ত গতি লাভ করে। |
২। মাধ্যমের কণাগুলো কখনও স্থির অবস্থা প্রাপ্ত হয় না। | ২। প্রতিটি পূর্ণ কম্পনে কণাগুলো দুই বার স্থির অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। |
৩। মাধ্যমের প্রতিটি কণার বিস্তার সমান; কিন্তু তাদের ভেতর দশার পার্থক্য থাকে। | ৩। মাধ্যমের প্রতিটি কণার দশা সমান; কিন্তু বিস্তার বিভিন্ন। সুস্পন্দ বিন্দুতে বিস্তার সর্বাধিক এবং নিস্পন্দ বিন্দুতে বিস্তার সর্বাপেক্ষা কম। |
৪। মাধ্যমের ভেতর দিয়ে নির্দিষ্ট বেগে অগ্রসর হয়। | ৪। মাধ্যমের মধ্যে স্থিরভাবে অবস্থান করে এবং সীমাবদ্ধ স্থানে পর্যায়ক্রমে উৎপন্ন ও বিলুপ্ত হয়। |
৫। মাধ্যমের প্রতিটি কণাকে সরণ, ঘনত্ব, চাপের পরিবর্তন, শক্তি ও বেগের একই রকম পরিবর্তন চক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। | ৫। মাধ্যমের প্রতিটি কণাকে একই রকম পরিবর্তন চক্রের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। |
৬। অগ্রগামী অনুপ্রস্থ তরঙ্গের ক্ষেত্রে পরপর দুটি তরঙ্গশীর্ষের মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং অগ্রগামী অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে একটি সংকোচন ও একটি প্রসারণের মোট দৈর্ঘ্যকে এক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে। | ৬। পরপর তিনটি নিস্পন্ন বিন্দু অথবা তিনটি সুস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বই স্থির তরঙ্গের এক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য। |
৭। অগ্রগামী তরঙ্গের সমীকরণ হচ্ছে- <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>y</mi><mo>=</mo><mi>A</mi><mo> </mo><mi>s</mi><mi>i</mi><mi>n</mi><mo> </mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mo> </mo><mo>(</mo><mi>v</mi><mi>t</mi><mo>−</mo><mi>x</mi><mo>)</mo></math> | ৭। স্থির তরঙ্গের সমীকরণ হচ্ছে- <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>y</mi><mo>=</mo><mn>2</mn><msub><mi>A</mi><mn>0</mn></msub><mo> </mo><mi>c</mi><mi>o</mi><mi>s</mi><mo> </mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>π</mi><mi>x</mi></mrow><mi>λ</mi></mfrac><mo> </mo><mi>s</mi><mi>i</mi><mi>n</mi><mo> </mo><mi>ω</mi><mi>t</mi></math> |
আরও দেখুন...