যৌথবাহিনীর সুপরিকল্পিত আক্রমনের মুখে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে । অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার পাকবাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজী ৩,০০০ (ভিরানব্বই হাজার) পাকিস্তানি সৈন্য, বিপুল পরিমাণ রসদ ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে রক্তের অক্ষরে লিখিত হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম ।
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ৩০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারায় এবং ২ লক্ষ ৭৬ হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয় । ১ কোটি মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দেশের সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি ।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ‘বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলেন' গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর নিজের কথোপকথন থেকেও জানতে পারি। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে অনেকের সাথে অন্নদাশংকর রায় ঢাকায় এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে কথোপকথন সম্পর্কে তিনি লেখেন, “শেখ সাহেবকে আমরা প্রশ্ন করি, ‘বাংলাদেশের আইডিয়াটি প্রথম কবে আপনার মাথায় এলো?’ ‘শুনবেন?’ তিনি (বঙ্গবন্ধু) মুচকি হেসে বললেন, ‘১৯৪৭ সাল । আমি সুহরাবর্দী (সোহরাওয়ার্দী) সাহেবের দলে। তিনি ও শরত্বসু চান যুক্তবঙ্গ । আমি চাই সব বাঙালির এক দেশ। ... থেকে খালি হাতে ফিরে এলেন সুহরাবর্দী ও শরৎ বোস। কংগ্রেস বা মুসলিম লীগ কেউ রাজি না তাদের প্রস্তাবে। তখনকার মতো পাকিস্তান মেনে নিই। কিন্তু আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা। হঠাৎ একদিন রব উঠল, আমরা চাই বাংলা ভাষা । আমিও ভিড়ে যাই ভাষা আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলনকেই একটু একটু করে রূপ দিই দেশভিত্তিক আন্দোলনে । পরে এমন একদিন আসে যেদিন আমি আমার লোকদের জিজ্ঞেস করি আমাদের দেশের নাম কী হবে? কেউ বলে পাক বাংলা। কেউ বলে পূর্ব বাংলা। আমি বলি, না বাংলাদেশ। তারপর আমি স্লোগান দিই, ‘জয় বাংলা’। ... ‘জয় বাংলা' বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলুম বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জয় যা সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে।'
আরও দেখুন...