১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের জন্য বাঙালিরা অনেক দুঃখকষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণের হাত থেকে মুক্তি লাভের আশায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আওয়ামী লীগকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা প্রদানের ক্ষেত্রে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১ লা মার্চ পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২রা মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং স্বাধীনতার সাংবিধানিক ঘোষণাপত্র গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ১৩ হাজার সদস্য ঐ দিন আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ' নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে পরিবার-পরিজনসহ হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান ও সামরিক শাসনের সূত্রপাত ঘটে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা শুরু হয়। দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়। এ অধ্যায়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট, অভ্যুদয়,পুনর্গঠন, সামরিক শাসনামল, গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা ও আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা সম্পর্কে অবহিত হব।
আরও দেখুন...