হযরত ঈসা (আ.)

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আদর্শ জীবনচরিত | | NCTB BOOK
2

পরিচয়
মানুষের মুক্তির পয়গাম নিয়ে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে যেসব নবি ও রাসুল আগমন করেছেন হযরত ঈসা (আ.) তাদের অন্যতম। ফিলিস্তিনের ‘বাইত লাহম' (বেথেলহাম) নামক গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম মারিয়াম বিনতে হান্না বিনতে ফাখুজ। হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর হুকুমে পিতা ছাড়াই জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম সাল হতেই খ্রিষ্টাব্দ গণনা করা হয়। পবিত্র কুরআনে তাঁকে ‘মাসিহ ইবনে মারিয়াম' কালিমাতুল্লাহ ও রুহুল্লাহ ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর উপর আসমানি কিতাব ইঞ্জিল নাজিল হয়েছে।

মু'জিযা
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে মু'জিযা (অলৌকিক ক্ষমতা) দান করেন। তিনি দোলনায় থাকাবস্থায় বাক শক্তি লাভ করেন। আল্লাহ তায়ালা মু'জিযা হিসাবে তাঁকে মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধকে চক্ষুদান করা, শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য করার শক্তি দান করেছিলেন। তিনি আল্লাহর হুকুমে মাটির তৈরি পাখিতে ফুৎকার দিয়ে জ্যান্ত বানিয়ে ফেলতেন। আল্লাহ বলেন-

“আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা একটি পাখির আকৃতি তৈরি করব। অতঃপর তাতে ফুৎকার দেব। ফলে আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে নিরাময় করব এবং আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করব।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৪৯)

হত্যার ষড়যন্ত্র
হযরত ঈসা (আ.) ইহুদিদেরকে তাদের অপকর্ম হতে বাধা দিলে তারা তাঁর উপর খুব ক্ষিপ্ত হয় এবং তাঁকে অনেক কষ্ট দেয়। পাশাপাশি হত্যার ষড়যন্ত্রও করে। এ হীন উদ্দেশ্যে তারা হযরত ঈসা (আ.)-এর ঘর অবরোধ করে এবং তাঁকে হত্যা করার জন্য ‘তাইতালানুস' নামক জনৈক নরাধমকে পাঠায় । কিন্তু মহান আল্লাহ হযরত ঈসা (আ.)-কে জীবিত অবস্থায় আসমানে তুলে নেন । আর ‘তাইতালানুস' নামক ঐ ব্যক্তিকে হযরত ঈসা (আ.)-এর আকৃতি দান করেন। সে হযরত ঈসা (আ.)-কে কোনো কিছু করতে না পেরে বাইরে চলে আসে। অপেক্ষমান লোকজন তাকে হযরত ঈসা (আ.) মনে করে পাকড়াও করে। অতঃপর সবাই মিলে তাকে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন-

“তারা তাকে (ঈসা-কে) হত্যাও করে নি ক্রুশবিদ্ধও করে নি বরং তারা এরূপ ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছিল, যারা তার সম্পর্কে মতবিরোধ করেছিল, তারা নিশ্চয়ই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল। এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে তারা তাকে হত্যা করে নি। বরং আল্লাহ তাকে তাঁর কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন আর আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৫৭-১৫৮)

পুনরায় দুনিয়ায় আগমন
শেষ জামানায় পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে হযরত ঈসা (আ.) পুনরায় দুনিয়াতে আগমন করবেন। এসে তিনি ৪০ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। জিযিয়া প্ৰথা (অমুসলিম থেকে আদায়কৃত নিরাপত্তা কর) তুলে দেবেন। ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন। সমস্ত শূকর মেরে ফেলবেন। আল্লাহর ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। এ সময় পৃথিবীর লোকজনের আর্থিক অবস্থা এত উন্নত হবে যে, দান-সদকা নেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। হযরত ঈসা (আ.) মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উম্মত হয়ে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামের দিকে আহ্বান করবেন। এরপর তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবেন এবং তাঁকে রাসুল (স.)-এর রওজা মুবারকের পাশে দাফন করা হবে। কিয়ামতের দিন তাঁরা দুজন একই স্থান হতে উঠবেন।

ভ্রান্ত বিশ্বাস
খ্রিষ্টানরা নিজেদেরকে হযরত ঈসা (আ.)-এর উম্মাত মনে করে। অধিকাংশ খ্রিষ্টান বিশ্বাস করে যে, হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর পুত্র, মারিয়াম (আ.) আল্লাহর স্ত্রী এবং হযরত ঈসা (আ.)-কে ইহুদিরা ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। তবে কিছুসংখ্যক খ্রিষ্টান যারা হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রতি ইমান এনেছিল ও তাঁকে সাহায্য করেছিল তাদেরকে পবিত্র কুরআনে ‘হাওয়ারি’ (সাহায্যকারী) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর যারা হযরত ঈসা (আ)-কে আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে তাদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ বলেন-

“বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক অদ্বিতীয় । আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয় নি ।” (সূরা আল-ইখলাস, আয়াত ১-৩)

হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল । তাঁকে আল্লাহর বিশেষ কুদরতে পিতা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে। তাঁর সৃষ্টিকে হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়েছে। হযরত ঈসা (আ.) সংসারত্যাগী ছিলেন। কোনো ঘরও বাঁধেন নি এবং বিয়েও করেন নি । সারা জীবন তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ) প্রচার করে অতিবাহিত করেছেন । তাঁর উম্মতেরা তাঁকে আল্লাহর পুত্র বলে শিরকে লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ.)-কে পিতামাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাঁর জন্য হযরত ঈসা (আ.)-কে শুধু পিতা ছাড়া সৃষ্টি করা মোটেও কঠিন ব্যাপার নয়।

তাই হযরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বলার কোনো কারণ নেই। হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম আল্লাহর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং সকলের উচিত তাঁর ব্যাপারে সঠিক আকিদা পোষণ করা যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তিনি স্বাভাবিকভাবেই ইন্তিকাল করবেন। আমরা আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করব না এবং হযরত ঈসা (আ.)- কে আল্লাহর রাসুল হিসেবেই বিশ্বাস করব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে দলগতভাবে হযরত ঈসা (আ.)-এর মুজিযার একটি তালিকা তৈরি করে উপস্থাপন করবে।
Content added || updated By
Promotion