হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপট
মদিনায় হিজরতের পর দীর্ঘ ৬ বছর মুসলমানরা পবিত্র হজ পালন করতে পারেননি। প্রিয় জন্মভূমির দর্শনও লাভ করেননি। তাই খন্দক যুদ্ধে জয়লাভের পর মুহাজিরদের মন স্বদেশে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মহানবি (সা.) তাদের অন্তরের ব্যথা বুঝতে পারেন। তাই তিনি ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের জিলকদ মাসে মাতৃভূমির দর্শন ও পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য ১৪০০ জন সাহাবিসহ মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
যিলকদ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। তাই মহানবি (সা.) আশা করেছিলেন, এ মাসে বিধর্মীরা তাদেরকে বাঁধা দিবে না। তিনি সাহাবিদের নিয়ে মক্কার নিকটবর্তী হুদায়বিয়া নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা খালিদ ও ইকরামার নেতৃত্বে একটি দল পাঠিয়ে মুসলমানদের বাঁধা প্রদান করে। মহানবি (সা.) বুদাইল নামক ব্যক্তির মাধ্যমে কুরাইশদের জানালেন যে, তিনি শুধুমাত্র ওমরাহ পালন করে চলে যাবেন; এছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু কুরাইশরা তাঁর কথায় কর্ণপাত করলো না। মহানবি (সা.) আলোচনার জন্য উসমান (রা.)-কে তাদের কাছে পাঠালেন। কিন্তু তারা আলোচনা না করে উসমান (রা.)-কে আটক করে। এদিকে হযরত উসমান (রা.) ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় মুসলমানদের মাঝে গুজব রটে যে, কুরাইশরা তাঁকে হত্যা করেছে। তাই মুসলমানরা উসমান (রা.) এর হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে আমরণ সংগ্রামের বাইয়াত (শপথ) গ্রহণ করেন। এটিই ইতিহাসে বাইয়াতুর রেদওয়ান নামে পরিচিত। আল্লাহ এ সন্ধির ফলে মহানবি (সা.) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বীকৃতি লাভ করেন। শান্তির দূত হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা প্রমাণিত হয়। কুরাইশরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে মেনে নেয়। এ সন্ধিতে ১০ বছর যুদ্ধ বন্ধ থাকার কথা ঘোষনা করা হয়, ফলে নিজ গোত্র কুরাইশদের সাথে মহানবি (সা.) -এর দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। মহানবি (সা.) আপাতত কুরাইশদের শত্রুতা থেকে নিস্তার পেয়ে নির্বিঘ্নে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। এসময় তিনি রোম সম্রাট, পারস্য-সম্রাট, আবিসিনিয়ার নাজ্জাশি প্রমুখের কাছে দূত পাঠিয়ে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
মোটকথা, হুদায়বিয়ার সন্ধি ইসলামের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
প্যানেল আলোচনা |
আরও দেখুন...