যেসব রোগের সংক্রমন হলে গলদা চিংড়ি চাষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলো হলো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাস ঘটিত সংক্রমন। রোগ সংক্রমনের প্রধান কারণগুলো হলো-
নিয়মিত পানি পরিবর্তন না করা পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনের ঘাটতি,
উপরোক্ত কারণগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে হ্যাচারিতে রোগ সংক্রমনের ঝুঁকি কম থাকে। হ্যাচারিতে যেসকল রোগ দেখা দেয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
চিংড়ি চাষের সবচেয়ে ক্ষতিকর জীবাণুগুলোর মধ্যে আলোকদায়ক জীবাণু একটি। চিংড়ির বহিঃত্বক বা অগ্রে অথবা অন্যান্য অঙ্গে হয়ে থাকে। চিংড়ি বেশি মাত্রায় এ রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রথমে যকৃত এবং অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে দেহের বিভিন্ন স্থানে গর্ভ তৈরির মাধ্যমে আক্রান্ত করে। Vibrio harveyi, V. splendidus প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী।
লক্ষণঃ
১) যকৃত ও অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি বাদামী বর্ণ ধারণ করে।
২) অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ছোট হয়ে যায়।
৩) দেহে গর্ত দেখা যায় এবং পরিশেষে উপাঙ্গের উপরের অগ্রভাগ পচন ধরে।
প্রতিকারঃ
১) Quinoline antibiotic ব্যবহার করা হয়।
২) মাইক্রোএলজি, ব্যাকটেরিওফাজ এবং প্রোবায়োটিক এর ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন কমাতে পারে।
৩) প্রতিদিন ৮০% পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হবে।
হ্যাচারিতে ভাইরাসের আক্রমন বেশি হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সকল পোনা মারা যায়। সংক্রমন রোধে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। গলদা চিংড়ির ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিম্নরূপ:
Baculovirus penaei (BP) ব্যাকুলো ভাইরাস এই ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এটি তাইওয়ানে প্রথম সনাক্ত করা হয়। এটি চিংড়িকে প্রথমে প্রোটোজুইয়্যা ধাপে এবং পরে মাইসিস ধাপে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ সময় ৯০% পোনা মারা যায়।
লক্ষণঃ
১) হেপাটোপ্যানক্রিয়াস এবং মিডগাট এপিথেলিয়াল কোষে একাধিক গোলাকার ছোট সাদা পাইপের মত দেখা যায়।
২) খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।
প্রতিকারঃ
১) এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট বা সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত পোনাকে কিমা করা ওয়েস্টার (oyester) এর মাংস খাওয়ানো হয়।
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু সঞ্চালক ব্যবহার করে তাদের পরিচর্যা করা হয়।
৩) হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে।
৪) সংক্রমন রোধ করতে ডিম এবং নগ্নিকে ৩ ঘন্টা যাবৎ পরিষ্কার লবণাক্ত পানিতে ধৌত করে তারপর ট্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে।
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ যা প্রায় সব গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে আক্রমন ঘটায়। সংক্রামক জীবাণু হলো Phycomycetus fungi, Lagenidium sp., Sirolpidium sp., Phythium; Leptolegonia mania প্রভৃতি।
লক্ষণ:
১) আকস্মিক মৃত্যু ঘটে এবং মৃত্যুর হার ২০-১00%।
২) লার্ভার দেহে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিকার :
১) লার্ভার ট্যাংক জীবাণুমুক্তকরণ, পানি পরিস্রাবণ, ক্লোরিনেশন করা উচিত।
২) বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যায়। যেমন: ০২ পিপিএম ফোন (treflan)।
৩) ১-১০ পিপিএম ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪) ২০ পিপিএম পরিষ্কারক সাবান গুঁড়া (detergent) দিয়ে ডিম জীবাণুমুক্তকরণ করা যেতে পারে।
৪) NaCl, KCl, MgCl এর মিশ্রণে ব্যবহৃত ঔষধ Legenidium এর আক্রমনকে হ্রাস করে।
প্রতিষেধক ঔষধ ও প্রয়োগমাত্রা
ক্লোরামফেনিকল, সারাফ্লক্সাসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং এনরোফ্লক্সাসিন প্রায়শই গলদা চিংড়ির এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে অধিক পরিমাণে ব্যবহারে প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। তবে ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার না করাই উত্তম এতে লার্ভার ক্ষতি হয়। প্রতিষেধক ঔষধ এবং এদের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নরূপ:
ঔষধ ------------------মাত্রা
অক্সিটেট্রাসাইক্লিন------------১০-২০ পিপিএম
অক্সোলিনিক এসিড -------------- ০.১-০.৫ পিপিএম
ফিউরাসল (Furasol) ------------ ১.০-২.৫ পিপিএম
জেনটিন ভায়োলেট (Gentin violet) --------- ০.১-০.২ পিপিএম
ফরমালিন (Formalin) ------------ ২৫-৫০ পিপিএম