১.১.৩ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রম ও ব্যয়ের সঠিক অনুমোদন, কোডিং, বিশ্লেষণ এবং রেকর্ড নিশ্চিতকরণের জন্য কার্যপ্রণালি ও দলিলাদি সম্পর্কে ধারণা (Concept of Procedures and Documents Required to Ensure the Corrcet Authorization, Coding, Analysis and Recording of D

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - কম্পিউটারাইজড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম-২ - অধ্যায় ১: উৎস দলিলাদি ও কোডিং শনাক্তকরণ এবং ম্যানেজমেন্ট রিপোর্টিং, | | NCTB BOOK
4

উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞানের আলোচনার শ্রম ব্যয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্যে অনেক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মরত থাকে। এদের বেতন ও মজুরি প্রদানে প্রতিষ্ঠানকে ব্যয়ভার বহন করতে হয়। এরূপ শ্রম ব্যয় হিসাবরক্ষণে কত জন কত সময় কাজ করে তা নির্ধারণ করা আবশ্যক। সময় লিপিবদ্ধকরণের জন্য অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে প্রয়োজনীয় কিছু উৎস দলিল সংরক্ষণ করা হয় যেমন- Clock card, Time sheet, Job card ইত্যাদি। এসব দলিলে প্রত্যেক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক, বেতনভূক্ত কর্মচারী কর্মকর্তা কতসময় কাজ করে তার হিসাব

রাখা হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে মজুরি হার (Wages rate), ওভারটাইম হার (Overtime rate). ন্যূনতম মজুরি (Minimum guaranteed wages) ইত্যাদির সমন্বয়ে প্রত্যেক শ্রমিক, কর্মকর্তা কর্মচারীর মোট মজুরি, বেতন তথা প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম ব্যয় (Labour cost) হিসাব করা হয়। 

শ্রম ব্যয়ের উপাদান (Elements of labour cost ) নির্দিষ্ট সময়ের (সাপ্তাহিক বা মাসিক) প্রেক্ষিতে একটি প্রতিষ্ঠান তার শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য মজুরি, বেতন ও বিভিন্ন ভাতা বাবদ যে ব্যয়ভার বহন করে তার মোট পরিমাণকে শ্রম ব্যয় বলে। শ্রম বায়ের উপাদান বিশ্লেষণ করে নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ পাওয়া যায়— মূল মজুরি ও বেতন (Basic wages and salaries) : শ্রমিকদের তাদের স্বাভাবিক (দৈনিক ৮ ঘণ্টা)কাজের ভিত্তিতে পূর্বনির্ধারিত হারে যে মজুরি দেওয়া হয় তাকে মূল মজুরি বলে। বেতনভুক্ত কর্মচারীগণ তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য মাসিক মূল বেতন পেয়ে থাকে।

ওভারটাইম মজুরি (Overtime wages) উৎপাদন চাহিদা বেশি থাকলে অনেক সময় শ্রমিকদের স্বাভাবিক সময়ের বেশি কাজ করতে হয়। বাংলাদেশের কারখানা আইন অনুযায়ী দৈনিক আট ঘণ্টা বা সাপ্তাহিক ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে অতিরিক্ত সময়কে ওভারটাইম বলে। এই অতিরিক্ত সময়ে শ্রমিকদের মূল মজুরির থেকে দ্বিগুণ হারে মজুরি প্রদান করা হয়।

বোনাস মজুরি শ্রমিকরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলে নির্ধারিত হারে প্রণোদনা হিসেবে কিছু অতিরিক্ত মজুরি পেয়ে থাকে যাকে বোনাস মজুরি বলে। প্রকৃতিগত দিক থেকে উপাদান ব্যয়ের মত শ্রম ব্যয়কেও দুইভাগে ভাগ করা যায়। প্রত্যক্ষ শ্রম ব্যয় (Direct labour cost ) উৎপাদনক্ষেত্রে সরাসরিভাবে যুক্ত শ্রমিকদের মূল মজুরি (Basic wages) যা বায় লক্ষ্যবস্তুতে (যেমন- ব্যাচ, জব) আরোপ করা যায় সেরূপ শ্রম ব্যয়কে প্রত্যক্ষ শ্রম ব্যয় বলা হয়।

পরোক্ষ শ্রম ব্যয় (Indirect labour cost) : যে সকল শ্রমিক/কর্মচারী উৎপাদনের সাথে সরাসরি জড়িত না থেকেও উৎপাদন কাজে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে তাদেরকে প্রদত্ত মজুরি ও বেতনকেই পরোক্ষ শ্রম ব্যয় বলে। এসব ব্যয় কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আরোপ করা সম্ভব না বা সময়সাপেক্ষ। পরোক্ষ শ্রম ব্যয় মূলত কারখানা উপরিবায় (Production overhead) এর অংশ। মূল বেতনের/মজুরির সাথে প্রদত্ত সাধারণ ওভারটাইম মজুরি (General overtime wages), বিভিন্ন পরিপূরক ও সহায়ক সুবিধাদি যেমন যানবাহন, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া, উৎসব বোনাস প্রভৃতি পরোক্ষ শ্রম ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তোমরা পরবর্তী অধ্যায়ে বিভিন্ন রকমের বায়ের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রম ব্যয় নির্ধারণ ও বিশ্লেষণের জন্য শ্রমিকদের হাজিরা সময় (Attendance time) নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকদের কারখানায় আগমন ও প্রস্থানের সময়কে হাজিরা সময় বলে। ঘড়ি কার্ড (Clock card) এর মাধ্যমে প্রত্যেক শ্রমিকের আগমন ও প্রস্থানের সময় লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য পৃথক Clock card থাকে এবং Clock number তথা Unique card থাকে। সপ্তাহ শেষে প্রত্যেক শ্রমিকের কর্মরত ঘণ্টা নির্ণয় করে Clock কার্ডে লিখা হয়।

উপরের আলোচনায় Clock card এর সাহায্যে কিভাবে শ্রমিকদের আগমন ও নির্গমন সময় লিপিবদ্ধ করা হয় আমরা জেনেছি। এখন আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রম ব্যয় বিশ্লেষণ করার জন্য কারখানায় অবস্থানকালীন সময়ে শ্রমিকগণ কোন কাজে কতটুকু সময় খাটিয়েছে তা সম্পর্কে আলোচনা করব। কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিকদের সময় মূলত দুইভাবে ব্যয়িত হয়- কর্ম সময় (Working time) এবং বেকার সময় (Idle time)। দৈনিক/সাপ্তাহিক টাইম শিটে শ্রমিকদের কর্মরত সময়ের হিসাব থাকে এবং কোন কাজে (জব, ব্যাচে) কত সময় লেগেছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। টাইম শিটে শ্রমিকের স্বাক্ষর থাকে এবং তা সুপারভাইজার কর্তৃক অনুমোদিত থাকে।

কারখানায় অনেক সময় শ্রমিকরা কাজ করতে ইচ্ছুক হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে বেকার (lidle) সময় কাটে। যেমন উপকরণ স্বল্পতা, মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়া, লোডশেডিং ইত্যাদি। কিন্তু এসময় ও শ্রমিকদের মূল মজুরি প্রদান করা হয় যা স্বাভাবিকভাবেই পরোক্ষ শ্রম ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। কোন শ্রমিক কতটা বেকার সময় কাটালো তা চিহ্নিত করার জন্য ( Idle time card) সংরক্ষণ করা হয়।

কোন দিনের ঘড়ি কার্ডের (Clock card) সাথে টাইম শিট মিলিয়ে যদি সময়ের হেরফের পাওয়া যায় তাহলে এর বেকার সময় কার্ড প্রস্তুত করে, ব্যয়িত সময়ের কারণ ও উল্লেখ করা থাকে। অনেক সময় প্রত্যেক জব সম্পাদনের জন্য আলাদা জব কার্ড তৈরি করা হয় এবং ঐ জব সম্পাদনে কতজন শ্রমিক কত সময় ব্যয় করে তা রেকর্ড করা হয়। মূলত উৎপাদন পরিকল্পনা বিভাগ একটি জব সম্পন্ন করতে Standard time বেঁধে দেয় এবং আসলে কত সময় লেগেছে তার ভিত্তিতে এই জব সম্পাদনের মোট শ্রম ব্যয় (Labour cost) হিসাব করে।

এভাবে জব কার্ড, টাইম শিট থেকে আমরা শ্রমিকের বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যয়িত সময় এবং বায় সম্পর্কে ধারণা পাই এবং প্রকৃতিগতভাবে এই তথ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রমবায় বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করি। এসব দলিলপত্র উৎস দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেখানে শ্রমিকদের স্ব-স্ব Clock number/কোড কোন বিভাগের জন্য কাজ করেছে সেই বিভাগের কোড কোন নির্দিষ্ট জব/ব্যাচের জন্য কাজ করলে তার কোড উল্লেখ করা থাকে। এভাবে যথাযথ অনুমোদনের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যয় রেকর্ড করা হয়। কোডিং (Coding): ব্যবস্থাপনা পর্ষদ (Management) জানতে ইচ্ছুক থাকে কোন কোন ব্যয় কেন্দ্র (Cost center) থেকে মুনাফা কেন্দ্রের (Profit center) জন্য কত ব্যয় হয়েছে। তাই শ্রমিক কর্মচারীদের বিভিন্ন বিভাগে ব্যয়িত সময়ের ভিত্তিতে শ্রম বায়ের বণ্টন করা হয়। এজন্য কোডিং সিস্টেম প্রয়োজন।

Content added || updated By
Promotion