৩.১ লেয়ার মুরগির রোগ-ব্যাধি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

৩.১ লেয়ার মুরগির রোগ-ব্যাধি (Laver Chicken Diseases)

জীবদেহ রোগ-ব্যাধির কারখানা এবং জীবমাত্রই রোগের কবলে পড়ে। অন্যান্য প্রাণিদের মত মুরগির রোগ হয়। মুরগীর মৃত্যুর হার খুব বেশি। একজন মুরগি পালনকারী কাছে রোগ একটা বিরাট সমস্যা । মৃত্যুর হার দেখে যেকোনো পালনকারী নিরুৎসাহ বোধ করাই স্বাভাবিক। তবে সতর্ক দৃষ্টি ও ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো যায়। মাত্র কয়েকটি রোগ ছাড়া অনেক রোগকে ভাল করা যায় না । তাই রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা দরকার। রোগাক্রান্ত মুরগিকে সরিয়ে ফেলাই ভাল। কঠিন রোগ-ভোগের পর মুরগী ভাল হয়ে গেলেও আগের বা স্বাভাবিক স্বাস্থ্য কোনো দিনই ফিরে পায় না এবং ডিমপাড়ার হারও উল্লেখ ভাবে কমে যায় । এছাড়া এদের মাধ্যমে ঝাঁকের অন্যান্য মুরগির মধ্যেও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

 

Content added By

৩.১.১ রোগ সম্পর্কে ধারণা ও প্রকারভেদ

৩.১.১ রোগ সম্পর্কে ধারণা ও প্রকারভেদ (Disease Concepts and Types): 

রোগঃ পর্যাপ্ত খাদ্য ও উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়ার পরও যদি শরীরের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তবে তাকে রোগ বলে।

লেয়ার মুরগির অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলোকে নিম্নরূপে শ্রেণিবিভাগ করা যায়:

  • সংক্রামক রোগ বা জীবাণুঘটিত রোগ (Contagious Disease) । 
  • পরজীবী ঘটিত রোগ (Parasitic Disease) । 
  • অপুষ্টিজনিত রোগ (Malnutritious Disease)।

১. সংক্রামক রোগ: 

যেসব রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয় ও অসুস্থ পাখি থেকে সুস্থ পাখিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেগুলোকে সংক্রামক রোগ বলে। এদেরকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়, যথা-

পরজীবীজনিত রোগ: 

পরজীবী এক ধরনের জীব যা অন্য জীব দেহে বসবাস করে জীবন ধারণ করে । যে জীবের দেহের উপর এরা জীবন ধারণ করে তাদেরকে হোস্ট বা পোষক বলে। কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বসবাস করে ক্ষতিসাধন করে । এদেরকে দেহাভ্যন্তরের পরজীবী অন্তঃপরজীবী বলে। আবার কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের বাহিরের অঙ্গে বসবাস করে ক্ষতি সাধন করে। এদেরকে বহিঃদেহের পরজীবী বা বহিঃপরজীবী বলে। উভয় পরজীবী আক্রমনের ফলে পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এরা পাখির দেহে বসবাস করে পাখি কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্য নিজেরা খেয়ে ফেলে, ফলে আক্রান্ত পাখি পুষ্টিহীনতায় ভোগে। অনেক পরজীবী পাখির দেহে বসবাস করে রক্ত শুষে নেয়, ফলে আক্রান্ত পাখির দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

পরজীবী দুই প্রকার: 

১. অন্তঃপরজীবী: কৃমি 

২.বহিঃপরজীবী: উকুন, আঠালি ও মাইটস

অপুষ্টি জনিত রোগ: 

গৃহপালিত পাখি পালনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হল পাখিকে সুষম খাদ্য প্রদান করা। পাখির মাংস ও ডিম উৎপাদন এবং দৈনিক বৃদ্ধি সাধনের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন । খাদ্যের মধ্যে যেকোনো খাদ্য উপকরণের অভাব হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে, ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়, এমনকি পাখির মৃত্যুও হতে পারে। 

অপুষ্টি জনিত রোগ: জেরোপথ্যালামিয়া, প্যারালাইসিস, পেরোসিস, ক্যানাবলিজম, রিকেট ইত্যাদি ।

 

 

Content added By

৩.১.২ লেয়ার মুরগির জীবাণু ঘটিত বিভিন্ন রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি

৩.১.২ লেয়ার মুরগির জীবাণু ঘটিত বিভিন্ন রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি (Names, causes, symptoms, treatment and prevention of various layer diseases):

Content added By

৩.১.২.১ ভাইরাসজনিত রোগসমূহ

৩.১.২.১ ভাইরাসজনিত রোগসমূহ (Virul diseases) 

 

                      (ক) রাণীক্ষেত রোগ 

           Ranikhet/ New Castle diseases

রাণীক্ষেত মুরগির ভাইরাসজনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। পৃথিবীর কমবেশি প্রত্যেক দেশে এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। বাংলাদেশের মুরগির রোগগুলোর মধ্যে রাণীক্ষেত সবচেয়ে মারাত্বক ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর এ রোগে দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ রোগের ব্যাপকতা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে, মুরগি পালনের জন্য রাণীক্ষেত রোগ একটি প্রধান অন্তরায়। বয়স্ক অপেক্ষা বাচ্চা মুরগি এতে বেশি মারাত্বক আক্রান্ত হয়। সাধারনত শুষ্ক আবহাওয়ায়, যেমন- শীত ও বসন্তকালে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। তবে, বছরের অন্যান্য সময়েও এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল নামক শহরে শনাক্ত করা হয়। তাই তাকে নিউক্যাসল ডিজিজ বলা হয়। তাছাড়া এ উপমহাদেশে ভারতের রাণীক্ষেত নামক স্থানে সর্বপ্রথম এ রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে বলে এ রোগকে রাণীক্ষেত রোগ বলা হয় ।

রোগের কারণ: প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস নামক এক প্রজাতির প্যারামিরোভাইরাস এ রোগের কারণ।

রোগ সংক্রমণ - 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-

  • বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত স্থান থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে। 
  • অসুস্থ বা বাহক পাখির সর্দি, হাঁচি-কাশি থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত এবং অতিথি পাখি আমদানির মাধ্যমে। 
  • মৃত মুরগি বা পাখি যেখানে সেখানে ফেললে।
  • বন্য পশুপাখির মাধ্যমে।
  • পরিচর্যাকারী বা দর্শনার্থী মানুষের জামা, জুতো বা খামারের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। 
  • খাদ্য, পানি ও লিটারের মাধ্যমে।

রোগের লক্ষণ: রাণীক্ষেত রোগ প্রধানত তিন প্রকৃতির । যথা-

 ক.ভেলোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ 

খ.মেসোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ। 

গ. লেন্টোজেনিক প্রকৃতির লক্ষ ।

 

ক. ভেলোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ: এ প্রকৃতির রাণীক্ষেত রোগ সবচেয়ে মারাত্বক। এতে অনেক সময় অত্যন্ত দ্রুত জীবাণু সংক্রমনের ফলে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই মুরগি মারা যেতে পারে। তবে তা না হলে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। যেমন-

  • প্রথম দিকে আক্রান্ত পাখি দলছাড়া হয়ে ঝিমাতে থাকে । 
  • শরীরে কাঁপুনি হয়, ঘন ঘন শ্বাস গ্রহণ করে । 
  • সাদাটে সবুজ পাতলা পায়খানা করে ও দূর্বল হয়ে পড়ে। 
  • মুখ হা করে রাখে, কাশতে থাকে এবং নাকমুখ দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে।  
  • শরীর শুকিয়ে যায় । 
  • মাথার ঝুঁটি ও গলার ফুল কালচে হয় এবং চোখ মুখ ফুলে যায়। 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়, ডিমের খোসা পাতলা ও খসখসে হয়। তাছাড়া অপুষ্ট ডিম উৎপন্ন হয়।

খ. মেসোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ: মেসোজেনিক প্রকৃতিতে আক্রান্ত মুরগিতে রোগ লক্ষণ ততটা তীব্র নয়। তবে, নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায় :

  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।  
  • ডিম উৎপাদন কমে যায় । 
  • পাখির কাশি হয় ও মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয়। 
  • হলদে সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা করে । 
  • জীবাণু আক্রমনের দুই সপ্তাহ পর স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। ফলে মাথা ঘুরায় ও পা অবশ হয়ে যায়। 
  • মাথা একপাশে বেঁকে যেতে পারে, কখনো বা মাথা দুপায়ের মাঝখানে চলে আসে অথবা অথবা সোজা ঘাড় বরাবর পিছন দিকে বেঁকে যেতে পারে।

গ. লেন্টোজেনিক প্রকৃতি লক্ষণ:

  • এতে মৃদু প্রকৃতির লক্ষণ প্রকাশ পায়। যথা- 
  • শ্বাসতন্ত্র কম আক্রান্ত হওয়ায় এ তন্ত্রের লক্ষণ কম প্রকাশ পায় ৷ 
  • সামান্য কাশি থাকে। 
  • কিছুটা ক্ষুধামন্দা ভাব থাকে । 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

 

রোগ নির্ণয়: 

ময়না তদন্তে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখেঃ

  • শ্বাসনালীতে রক্তাধিক্য ও রক্ত সঞ্চায়ন।
  • স্বরযন্ত্র ও শ্বাসনালীতে রক্তাক্ত হয় ।
  • প্লীহা বড় হয়ে যায়।
  • খাদ্য অন্ত্রে, বিশেষ করে প্রভেন্ট্রিকুলাস ও গিজার্ডে, রক্তক্ষরিত পচা ক্ষত দেখা দেয়।
  • অন্ত্রের শেষভাগে পাতলা সাদাটে মল ।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত পাখিতে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিকে দৈনিক ২/৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধঃ 

রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ দু'ধরনের টিকা ব্যবহার করা হয়। যথা- বি. সি. আর. ডি.ভি. এবং আর. ডি. ভি. । বি.সি.আর.ডি.ভি. এ টিকাবীক্ষের প্রতিটি শিশি বা ভায়ালে হিম শুষ্ক অবস্থায় ১ মি. লি. মূল টিকাৰীজ থাকে। প্রতিটি শিশির টিকাবীজ ৬ মি.লি. পরিশ্রুত পানিতে ভালোভাবে মিশাতে হয়। এরপর ৪ দিন ও ১৯ দিন বরসের প্রতিটি বাচ্চা মুরগির এক চোখে এক ফোটা করে ড্রপারের সাহায্য নিতে হবে।

আর. ডি. ভি.: এ টিকাবীজের প্রতিটি ভায়ালে ০.৩ মি.লি. মূল টিকাবীজ হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। এ টিকা দু'মাসের অধিক বয়সের মুরগির জন্য উপযোগী। প্রথমে ভায়ালের টিকাবীজ ১০০ মি.লি. পরিশ্রুত পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তা থেকে ১ মি.লি. করে নিয়ে প্রতিটি মুরগির রানের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। ছয় মাস পরপর এ টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

টিকা ছাড়া খামার থেকে রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। যথা- 

ক) রাণীক্ষেত রোগে মৃত পাখিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটি চাপা দিতে হবে। 

খ) খামারের যাবতীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন-আয়োসান, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায়) দিয়ে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

 

                            (খ) গামবোরো রোগ (Gumboro Disease)

গামবোরো বাচ্চা মুরগির মারাত্বক সংক্রমণ রোগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এ রোগের পাখির রোগ প্রতিরোধক অঙ্গ অর্থাৎ বার্সাল ফ্যাব্রিসিয়াস আক্রান্ত হয় বলে প্রতিরোধক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন এরা সহজেই অন্য যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ রোগকে বার্ড এইডস বা পোল্ট্রি এইডসও বলা হয়। এই রোগটি সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ডেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গামবোরো জেলায় শনাক্ত করা হয় বলে একে গামবোরো রোগ বলে। কিন্তু এর মূল নাম ইনফেকশাস বার্সাইটিস বা ইনফেকশাস বার্সাল ডিজিজ । এ রোগে সাধারণত ২-৬ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের হার খুব বেশি (১০০% পর্যন্ত), তবে মৃত্যুহার খুব কম (৫-১৫%)। তবে কোনো কোনো সময় আক্রান্ত বাচ্চার ৫০% ও মারা যেতে পারে। এ রোগ থেকে সেরে ওঠা মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায় ।

রোগের কারণ: 

বিরনাভাইরিডি পরিবারের অন্তর্গত বিরনা ভাইরাসের সেরোটাইপ ১ এ রোগের জন্য দায়ী। এ ভাইরাসের দুটো স্ট্রেইন রয়েছে। যেমন- ক্লাসিক্যাল ও ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইন।

সংক্রমণঃ 

  • একই ঘরে রাখা অসুস্থ বাচ্চার সংস্পর্শে সুস্থ বাচ্চা এলে। 
  • বাতাসের মাধ্যমে। 
  • কলুষিত লিটার, যন্ত্রপাতি মাধ্যমে। 
  • খাদ্য, লিটার, পোকামাকড়ের মাধ্যমে।
  • পরিচর্যাকারী বা দর্শণার্থীর জামা, জুতো ইত্যাদির মাধ্যমে।

গামবোরো রোগে আক্রার পাখিতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

১) ক্ষুধামন্দা 

২) পালক উসকোখুশকো হয়ে যায়। 

৩) শ্লেষ্মাযুক্ত মল ত্যাগ করে, মলে রক্ত থাকতে পারে। এ মল মালদ্বারের চারপাশে আঠার মতো লেগে থাকতে পারে। 

৪) প্রথমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ও পরে তা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে আসে। 

৫) পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণে পানিশুন্যতা দেখা দেয়। 

৬) পাখি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে যায়। 

৭) শরীরের সতেজতা নষ্ট হয় । 

৮) তীব্র রোগে পাখির শরীরে কাঁপুনি হয় ও অবশেষে মারা যায়। 

৯) বেঁচে যাওয়া পাখির দৈহিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় । 

১০) বাচ্চাগুলো একসঙ্গে ব্রুডার বা ঘরের এককোণে জড়ো হয়ে থাকে। 

১১) ক্রিম সবুজ রঙের ডায়রিয়া হয়।

রোগ নির্ণয়: 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়:

  • রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। 
  • মৃত বাচ্চার ময়না তদন্তে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। এতে-
  • থাইমাস এবং বার্সা ফুলে যায় ও তাতে রক্তের ছিটা পাওয়া যায়। 
  • পা এবং উরুর মাংসে রক্তের বড় বড় ছিটা দেখা দেয়।

চিকিৎসা 
এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই । তবে আক্রান্ত পাখিগুলোকে ৩-৫ দিন স্যালাইন পানি (৫ লিটার পানি +২৫০ গ্রাম আখের গুড় + ১০০ গ্রাম লৰণ) পান করালে এদের পানিশূন্যতা রোধ হয়। এরা গায়ে শক্তি পার এবং রক্তপড়া বন্ধ হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ : 

রোগ প্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পন্থা। এজন্য খামারে সবসময় সাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। ঘর, খাঁচা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক, যেমন ফরমালিন (ফরমালিনঃ পানি = ১৪৯), আয়োসান বা সুপারসেপ্ট দিয়ে ধৌত করতে হবে। বাংলাদেশে গামবোরোর বেশ কয়েক ধরনের টিকা আমদানি করা হয় যেমন:

* নবিলিস গামবোরো ডি ৭৮ 

* ভি১ বার্সা জি 

* বার ৭০৬

* গামবোরাল সিটি ইত্যাদি।

এগুলো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায় নির্দিষ্ট বয়সে পাখিতে/মুরগিতে প্রয়োগ করতে হবে। তবে, ১০-১৪ দিন বয়সে প্রথমবার ও ২৪-২৮ দিন বয়সে বুষ্টার ডোজ হিসেবে চোখে ড্রপ বা মুখের মাধ্যমে পান করিয়ে এ টিকা প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

                                       (গ) মারেক্স রোগ (Murex Disease)

মারেক্স রোগ পাখির স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার সৃষ্টিকারী মারাত্বক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি লিম্ফোপ্রলিফারেটিভ রোগ, যা পাখির ক্যান্সার। এ রোগে পাখির প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র, যৌন গ্রন্থি, চোখের আইরিস, পেশি ও ত্বক আক্রান্ত হয়। সাধারণত ৬-১০ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা মুরগি এবং বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম হাঙ্গেরিতে মারেক নামে এক ব্যক্তি এ রোগটি আবিষ্কার করেন বলে তার নামানুসারে এ রোগের এরুপ নামকরণ করা হয়। অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে একে ফাউল প্যারালাইসিসও বলে।

রোগের কারণ 

হারপেসভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত হারপেস ভাইরাস ২ বা মারেক'স ডিজিজ ভাইরাস নামক ভাইরাস এ রোগের কারণ।

রোগ সংক্রমণ

  • বাতাসের সাহায্যে জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে।
  • খাদ্যের ব্যাগ বা বস্তা, যন্ত্রপাতি, জামা-জুতা ইত্যাদির মাধ্যমে। 
  • আক্রান্ত পাখির লালা, শ্লেষ্মা, মল, পাখার ফলিকূল ইত্যাদির মাধ্যমে।
  • কীটপতঙ্গ, বিশেষ করে, ডার্কলিং বিটলের মাধ্যমে।

রোগের লক্ষণ 

অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আক্রান্ত পাখির জাত, বয়স ও ভাইরাসের স্ট্রেইনের ওপর এ রোগের লক্ষণ নির্ভর করে । সাধারণভাবে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

  • প্রাতীয় স্নায়ু আক্রান্তের ফলে এক পা, এক ডানা বা দুই পা, দুই ডানা অবশ হয়ে ঝুলে পড়ে।
  • ষাড়ের মাংসপেশি আক্রান্ত হলে মাথা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। 
  • আইরিস বা চোখের উপরের পাতা আক্রান্ত হলে পাখিতে অন্ধত্ব দেখা দেয়।

দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির হলে-

  • ক্ষুধামন্দা দেখা যায় । 
  • ফ্যাকাশে দেখায় । 
  • পাতলা পায়খানা হয় ।
  • ডিম উৎপাদন কমে যায়।
  • পাখি খোড়ায়, পা ও ডানা ইত্যাদি অবশ হয়ে যায়। 
  • হা করে নিঃশ্বাস নেয়। 
  • অনাহার ও পানি শূন্যতার কারণে পাখি মারা যায় ।

রোগ নির্ণয় 

ময়না তদন্তের মাধ্যমে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

  • বাসা ও থাইমাস ছোট হয়ে যাবে। 
  • প্রান্তীয় স্নায়ু যেমন- সারাটিক স্নায়ু মোটা হবে।
  • যেকোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গে এবং ফলিকুল বা গোড়ার টিউমার হবে। 
  • চোখের আইরিসের বর্ণের বিকৃতি ঘটবে

চিকিৎসা 

এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে মাধ্যমিক সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ

  • স্বাস্থ্যম্মত বিধি ব্যবস্থায় খামার পরিচালনা করা।
  • বিভিন্ন বয়সের মুরগি বা কোয়েল আলাদা আলাদা পালন করা। 
  • খামারে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • সুস্থ মুরগির বাচ্চার টিকা প্রদান করা।

মারেক'স রোগ প্রতিরোধের জন্য বাচ্চা মুরগিতে টিকা প্রয়োগ করা সর্বোত্তম পন্থা। যেকোনো ধরণের ক্যানসারের বিরুদ্ধে এটি প্রথম উদ্ভাবিত টিকা। বাংলাদেশে মারেফ'স রোগের টিকা প্রস্তুত হয় না। তবে, বাজারে আমদানি করা টিকা কিনতে পাওয়া যায়। মারেক'স রোগের বিভিন্ন ধরণের টিকা রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে এইচ.টি.ভি.-১২৬ অর্থাৎ মারেক্সিন সি এ ভালো কাজ করে । এ টিকা একদিন বয়সের বাচ্চা মুরগিতে ০.২ মি.লি. মাত্রায় ঘাড়ের ত্বকের নিচে প্রয়োগ করা হয়।

 

 

                                       ঘ) এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (Avian Influenza)

 

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের কারণ: 

এটি ভাইরাসজনিত রোগ। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাস এরোগের কারণ। মানুষে ছড়ালে একে বার্ড ফ্লু বলে। মানুষে সংক্রমণের কারণে বার্ড ফ্লু বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত রোগ।

রোগের বিস্তার

  • রোগাক্রান্ত মুরসির প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শ, মুরগির মল, লালা ইত্যাদি ব্যবহৃত খাদ্য, পানি, যন্ত্রপাতি, পাত্র, ইত্যাদির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে। 
  • এছাড়া আক্রান্ত খামারের যানবাহন, ব্যক্তি, দর্শনার্থী ইত্যাদির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে ।

রোগের লক্ষণ:

  • মুরগির খাবার চাহিদা কমে যায়। 
  • চোখ, মাথা ও খুঁটি ফুলে যায় 
  • চোখে দিয়ে পানি পড়ে । 
  • শরীরের পালকবিহীন অংশে রক্ত জমে কালো হয়ে যায়। 
  • মুরগি দুর্বল হয়ে প্যারাইসিস হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত মুরগির শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমর ঘড় ঘড় লক্ষ করে ।
  • ঝুঁটি বেগুনি রং ধারণ করে ।
  • সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা দেখা যায় । 
  • আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়তে থাকে এবং মৃত্যুর হার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

শরীরের বিভিন্ন অংশে ও মাংসপেশিতে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। চামড়ার নিচে, শ্বাসনালী, ফুসফুসে রক্তক্ষরণ ও মা দেখা যায়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণরের জন্য ল্যাবে পাঠাতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়: 

জৈব নিরাপত্তা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়া কোনো খামারে এ রোগ দেখা দিলে সম্মিলিতভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমস্ত মুরগিকে ধ্বংস করতে হবে। কোনো ভাবেই আক্রান্ত মুরগি খামার থেকে বের করা যাবে না ।

 

                             (ঙ) ফাউল পক্স (Fowl Pox) 

পাখির বসন্ত বা ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। সব বয়সের সব প্রজাতির পাখি এতে আক্রান্ত হতে পারে। পাখির বসন্ত একটি মারাত্মক রোগ। অসস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকতা লাভ করে । তখন মৃত্যু হার অত্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ফাউল পক্স বলতে সব পাখির বসন্ত রোগকেই বুঝায় তথাপি বর্তমানে আলাদা নামেও, যেমন- পিজিয়ন পক্স, টার্কি পক্স, ক্যানারি পক্স প্রভৃতি ডাকা হয়। পৃথিবীর প্রায় পোল্ট্রি উৎপাদনকারী দেশেই বসন্ত রোগ দেখা যায়। এ রোগের পাখির দেহের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে এবং অভ্যন্তরীন অঙ্গে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লালচে নডিউল সৃষ্টি হয় যা বসন্তের গুটি নামে পরিচিত।

রোগের কারণঃ 

পরভিরিডি পরিবারের ফাউল পক্স ভাইরাস নামক ভাইরাস বসন্ত রোগের কারণ।

সংক্রমণ: নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। যথা-

  • রোগাক্রান্ত পাখির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে সুস্থ পাখিতে এ রোগ ছড়াতে পারে। 
  • ত্বকের ক্ষত বা কাটা ছেঁড়ার মাধ্যমে।
  • কিউলের ও অ্যাডিস মশার মাধ্যমে।
  • তাছাড়া কখনো কখনো রক্তশোষক মাছি, ক্লি ও আঠালির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

বসন্ত রোগ প্রধানত দু'প্রকৃতিতে দেখা যায়। যথা-

ক. ত্বকীয় বা হেড ফর্ম প্রকৃতিঃ এ প্রকৃতিতে আক্রান্ত পাখির মুখমণ্ডলে বসন্তের গুটি দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ওজন হ্রাস ও ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটিকে শুষ্ক বসন্তও বলা হয়।

 

খ. ডিপথেরিটিক প্রকৃতিঃ এ প্রকৃতিতে প্রথমে আক্রান্ত পাখির জিহ্বায় ক্ষত দেখা যায়। এ ক্ষত পরে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে বিস্তার লাভ করে । ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণে অবশেষে পাখির মৃত্যু ঘটে। এ প্রকৃতির বসন্ত আর্দ্র বসন্ত নামে পরিচিত।

এ দু'প্রকৃতির বসন্ত আবার পাখিতে মৃদু ও তীব্র আকারে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে ।

যেমন- মৃদু প্রকৃতির বসন্তেঃ 

*পাখির উম্মুক্ত ত্বকে বসন্তের ফোসকা দেখা যায়। এটিই এ প্রকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য । 

* মুরগির ঝুটি, গলকম্বল, পা, পায়ের আঙ্গুল ও পায়ুর চারপাশে বসন্তের গুটি বা ফুসকুঁড়ি দেখা যায়। এগুলো কিছুটা কালচে বাদামি রঙের হয়। 

* চোখের চারপাশে বসন্তের ফুসকুঁড়ির ফলে চোখ বন্ধ হয়ে যায় ।

 

তীব্র প্রকৃতির বসন্তে:

  • দেহের মুখগহ্বর, স্বরযন্ত্র, শ্বাসনালী ও অন্ত্রের দেয়ালেও বসন্তের ক্ষত দেখা দিতে পারে। 
  • শ্বাসনালী আক্রান্তের ফলে পাখির শ্বাসকষ্ট হয় ও পাখি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় । 
  • এতে ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায় । 
  • এতে পাখির মৃত্যু হার ৫০% পর্যন্ত হতে পারে ।

রোগ নির্ণয়-

  • আক্রান্ত স্থানে প্রথমে ছোট ছোট লাল দাগ হয় । 
  • পরবর্তীতে যা বড় হয়ে পুঁজপূর্ণ হয়, পেঁকে ঘা সৃষ্টি করে । এ ঘায়ে শেষে মামড়ি সৃষ্টি হয় ও তা পরবর্তীতে খসে পড়ে ।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত ক্ষত জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন- মারকিউরিক্রোম) দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে সকেটিল, সালফানিলামাইড বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক পাউডার লাগালে সুফল পাওয়া যায়।

রোগ নিয়ন্ত্রণ 

রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাসময়ে পাখিদের টিকা প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সৃষ্টি এবং মশা নিয়ন্ত্রণও জরুরি। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য এ দেশে দু'ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হয়। যথা- 

১। পিজিয়ন বক্স টিকা: এটি ৩ মি.লি. পরিশ্রুত পানির সাথে মিশিয়ে দু'সপ্তাহের বয়সের বাচ্চার ডানার পালকবিহীন অংশে বাইকৰ্ড প্রিকিং নিডল বা সূঁচ দিয়ে খোঁচা মেরে প্রয়োগ করা হয় ।

২। ফাউল পক্স টিকাঃ এ টিকা হিমত অবস্থায় ০.৩ মি.লি. মাত্রায় কাচের অ্যাম্পুলে থাকে। এ পরিমাণ টিকা পরিশ্রুত পানিতে মিশিয়ে দু'শ পাখিতে প্রয়োগ করা যায়। পিজিয়ন পক্স টিকার মতো এ টিকাও এ পদ্ধতিতে বাইকড প্রিকিং নিভল দিয়ে পাখির ডানার পালকবিহীন স্থানে ২-৩ বার বিদ্ধ করতে হবে । প্রতিবারই পরিশ্রুত পানিতে গুলানো টিকার নিডল চুবিয়ে নিতে হবে। এ টিকা প্রয়োগের ৫,৭ বা ১০ তম দিনে টিকাৰিক স্থানে বসন্তের গুটি দেখা গেলে এর কার্যকারিতা প্রমাণ হবে। এ টিকা একমাসের বেশি বয়সের পাখিকে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বিদেশে প্রস্তুত বসন্ত রোগের টিকা পাওয়া যায়। যেমন- ওভোডিপথেরিন ফোর্ট (ইন্টারভেট) যা কোম্পানির নির্দেশমতো মাত্রার প্রয়োগ করা হয়। বছরে একবার পাখিতে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়।

 

 

                                  (চ) ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious Bronchitis)

করোনা ভাইরাস এ রোগের কারণ। সাধারণত বাচ্চা মুরগির এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাদা জাতের মুরগিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। মৃত্যুহার ১০-১৫% পর্যন্ত হতে পারে। বাচ্চা মৃত্যুর হার ৯০% হতে পারে।

রোগের বিস্তারঃ বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত মুরগি ও তার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

রোগের লক্ষণ:

  • খামারে এ রোগের আক্রমণ হঠাৎ করে ঘটে ও প্রায় সকল মুরগি এক সাথে আক্রান্ত হয়। 
  • শ্বাসকষ্ট হয় ও মুখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। 
  • সকালে ও রাতে লক্ষণগুলো প্রকট হয়।
  • অনেক সময় পানির মত পাতলা ডাইরিয়া হয় । 
  • চোখের ঝিল্লি লাল হয়। 
  • ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায় ও ডিমের খোসা পাতলা ও অমসৃণ থাকে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

শ্বাসনালীতে প্রচুর শ্লেষ্মা ও মৃদু রক্তরক্ষরণ দেখা দিবে। অস্বাভাবিক ডিমের কুসুম দেখা যাবে।

প্রতিরোধ: 

নিয়মমতো টিকা প্রদান করতে হবে এবং জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে হবে। 

চিকিৎসা: 

কার্যকরী চিকিৎসা নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ এড়াতে অ্যান্টিবায়োটিক (মাইক্রোনিড, ডক্সাসিল ভেট) নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

                   (ছ) ইনফেকশাস ল্যারিঙ্গোট্রাকিয়াইটিস (Infectious Laryngo tracheitis):

ভাইরাস ঘটিত এই রোগটির অপর নাম এভিয়ান ডিপথেরিয়া। ৮-১৬ সপ্তাহ বয়সে এবং ডিমপাড়া অবস্থায় যেকোনো সময় এ রোগের সংক্রমণ হয়। মৃত্যুহার ১০-১৬% ।

রোগের বিস্তার:

  • আক্রান্ত মুরগির শ্বাস-প্রশ্বাস বা দেহ নিঃসৃত পদার্থের সংস্পর্শের মাধ্যমে খামারে ব্যবহৃত জিনিস পত্রের মাধ্যমে । 
  • এ রোগে আক্রান্ত মুরগি সুস্থ হওয়ার পর তার থেকে রোগ ছড়াতে পারে ।

রোগের লক্ষণ:

  • শ্বাসনালীতে রক্তক্ষরণ ও শ্লেষ্মা জমার কারণে শ্বাসকষ্ট হয় । 
  • নাক ও চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে। 
  • আক্রান্ত মুরগি মুখ খোলা রাখে এবং অনেক সময় দু'পায়ের উপর ভর করে ঘাড় লম্বা করে হাঁ করে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে ।
  • ঘড় ঘড় শব্দ হতে থাকে। 
  • কোন লক্ষণ প্রকাশের আগেই আক্রান্ত মুরগির মৃত্যু হতে পারে ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণঃ মুরগির শ্বাসনালীতে সাদা আঠালো তরল পদার্থ পাওয়া যায়। ফুসফুস রক্তের মত লাল হবে। 

চিকিৎসাঃ কার্যকরী চিকিৎসা নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ এড়াতে অ্যান্টিবায়োটিক (মাইক্রোনিড, ডক্সাসিল ভেট) নিৰ্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

 

                 (জ) এগ ড্রপ সিনড্রম ( Egg Drop Syndrom):

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। শুধুমাত্র ডিম পাড়া মুরগিতে এ রোগ ক্ষতিসাধন করে । ডিম পাড়া মুরগি ডিম পাড়ার শুরুতে বা ডিম পাড়ার যে কোনো সময় ডিম্বাশয় আক্রান্ত হয়। ডিম পাড়ার সময় হঠাৎ করে ডিম উৎপাদন কমে যায় বলে এ রোগকে এপদ্রপ সিনড্রম বলে।

রোগের বিস্তার: 

আক্রান্ত মুরগির ডিম পাড়া শুরু করলে ভাইরাস নিঃসৃত হয় এবং ফ্লোরের অন্য মুরগিতে ছড়িয়ে পড়ে।

রোগের লক্ষণঃ

  • সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময় ডিম পাড়া হঠাৎ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় । 
  • ডিমের খোসার গুণগতমান খারাপ হয় ।
  • বাদামি ডিমের রং বিবর্ণ হয়।
  • আক্রান্ত মুরগির রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। 
  • খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।
  • ডায়রিয়া দেখা যেতে পারে। 
  • পাতলা খোসার, নরম খোসার বা খোসাবিহীন ডিম পাড়তে দেখা যায়।

 

প্রতিরোধঃ 

ডিমপাড়া শুরুর পূর্বে টিকা প্রদান করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ডিম সংগ্রহ ও বহনের ট্রে নিয়মিত জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।

চিকিৎসা: কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.২ ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগসমূহ

৩.১.২.২ ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগসমূহ:

(ক) সালমোনেলোসিস (Salmonellosis) 

সালমোনেলা গোত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট মুরগির রোগগুলোকে সালমোনেলোসিস বলে। যে কোনো বয়সের মুরগিই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে ১ দিন হতে ২ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রধানত ডিমের মাধ্যমে বাচ্চাতে এ রোগ বিস্তার লাভ করে । মৃত্যুহার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। সালমোনেলা গুলোরাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রোগটি হলে একে পুলোরাম রোগ বলে। সালমোনেলা গ্যালিলেরাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রোগটি হলে একে ফাউল টাইফয়েড রোগ বলে।

রোগের লক্ষণ:

  • মুরগির বাচ্চার পাছা ভিজা থাকবে ও হলদে বর্ণের পাতলা পায়খানা করবে। 
  • বাচ্চা চি চি শব্দ করবে এবং মাথা একদিকে করে তাপের কাছে জমা হবে।
  • পাখা এলোমেলো হবে, চুপচাপ বসে ঝিমাবে । 
  • খাবারের প্রতি অনীহা থাকবে।
  • তীব্র পানি শুন্যতার কারণে মুরগি মারা যায়। 
  • মৃত বাচ্চার উদর গহ্বরে ডিমের কুসুম লেগে থাকে ।
  • বাড়ন্ত মুরগিতে খোঁড়া পা ও হাড়ের জয়েন্ট ফুলে উঠার কারণে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 
  • মুরগির এক ভায়েন্ট ফুলে যায় ও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে।
  • ঝুঁটি সাদা হয়ে যায়।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

বাচ্চাতে কুসুম অশোষিত অবস্থায় থেকে যায়। বিকৃত ও বিবর্ণ ডিম দেখতে পাওয়া যায়।

প্রতিরোধ:

  • বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে হবে। 
  • বাহক মুরগি নিধন করতে হবে সালমোনেলা যুক্ত বাচ্চা দ্বারা খামার শুরু করতে হবে। 
  • নিয়মিত আইওসান মিশ্রিত পানি দ্বারা ঘর, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে ।

চিকিৎসা: 

ইএসবি ৩০% পাউডার বা কসুমিক্স প্লাস ১ লিটার পানিতে ১-২ গ্রাম মিশিয়ে ৩-৪ দিন খাওয়াতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শুধু অ্যান্টিবায়োটিক সালমোনেলা দূর করা সম্ভব নয়। সালমোনেলা কিলার (যেমন: বায়োট্ৰনিক এস ই) নিয়মিত ব্যবহারে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

(খ) সংক্রামক সর্দি (Infectious Coryza)

সংক্রামক সর্দি বা ইনফেকশাস করাইজা মুরগির শ্বাসতন্ত্রের এর একটি মারাত্বক ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। সব বয়সের মুরগি এতে আক্রান্ত হলেও সাধাণত বয়স্ক মুরগি বেশি আক্রান্ত হয়। মুরগির মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ রোগকে ঠান্ডা লাগা, আনকমপ্লিকেটেড করাইজাও বলে। এ রোগ ১০০% পাখি আক্রান্ত হতে পারে, তবে মৃত্যু হার আনুপাতিক হারে অনেক কম।

রোগের কারণ:

 হিমোফিলাস গ্যালিনেরাম নামক এক প্রকার ক্ষুদ্র দণ্ডাকৃতির বা কক্রোব্যাসিলাই ব্যাকটেরিয়ার এ. বি. ও . টাইপ এ রোগ সৃষ্টি করে ।

সংক্রমণ পদ্ধতি: 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সুস্থ পাখিতে সংক্রমিত হয়। যথা-

  • আক্রান্ত মুরগি সুস্থ মুরগির সংস্পর্শে আসলে। 
  • কলুষিত শ্লেম্মার যারা দুষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে । 
  • পাশাপাশি অবস্থিত মুরগির ঘরে বাতাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে।

রোগের লক্ষণ: 

করাইজা রোগে আক্রান্ত মুরগিতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়। যথা:

  • মুখমণ্ডল ও মাথা ফুলে যায় । 
  • নাকমুখ দিয়ে পানি ঝরে। 
  • অক্ষিঝিল্লির প্রদাহ হয়ে চোখ ফুলে যায় ও আঠাযুক্ত হয়।
  • পলার ফুল বিবর্ণ হয়ে যায় ও ফুলে ওঠে। 
  • খাদ্য ও পানি পান করা বন্ধ হয়ে যায়। 
  • নাক দিয়ে শ্লেষ্মা করে।
  • কাঁশি হয় ও গলা দিয়ে ঘড় ঘড় শব্দ বেরোয়। 
  • শ্বাসকষ্ট হয়। 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়। 
  • লক্ষণ প্রকাশের ২-৩ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত পাখি মারা যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়:

  • রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। 
  • নাকের ঝিল্লিপর্দা ও সাইনাসের শ্লৈষ্মিক প্রদাহ থাকে। 
  • অক্ষিঝিল্লির প্রদাহ, মুখমণ্ডল ও গলার ফোলা থাকে।

সংক্রামক সর্দি বা ইনফেকশাস করাইজার চিকিৎসা:

  • খাদ্যের সঙ্গে সালফাডাইমিথোক্সিন ও সালফাথায়জল ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে পুনঃচিকিৎসা দিতে হবে । 
  • তাড়াতাড়ি সুফল পেতে হলে ভেটেরিনারি সার্জনের নির্দেশিত মাত্রায় স্ট্রেপটোমাইসিন ইনজেকশন ও খাদ্যের সঙ্গে সালফোনেমাইড ওষুধ খাওয়াতে হবে।

 

রোগ প্রতিরোধ : 

নিম্নলিখিতভাবে সংক্রামক করাইজা রোগ প্রতিরোধ করা যায়। যথা-

  • খামারে স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থা মেনে চলতে হবে ।
  • যেহেতু এ রোগ থেকে সেরে ওঠা পাখি রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে তাই পালনের জন্য বয়স্ক মুরগি না কিনে একদিন বয়সের বাচ্চা কেনা উচিত ৷
  • টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য ইনঅ্যাকটিভেটেড ইনফেকশাস করাইজা টিকা ব্যবহার করা। নেদারল্যান্ডের ইন্টারভেট কোম্পানি কর্তৃক প্রস্তুত এ টিকার নাম নভিভ্যাক করাইজা। প্রতিটি পাখির পেশি বা ত্বকের নিচে ০.৫ মি.লি. মাত্রায় টিকা প্রয়োগ করা হয়। প্রথমবার ৬ সপ্তাহ বয়সে ও দ্বিতীয়বার ৮ সপ্তাহ বয়সে টিকা প্রদান করলে ৮ মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়। বাংলাদেশে করাইজার কোনো টিকা প্রস্তুত হয় না ।

 

(গ) নেক্রোটিক এন্টারাইটিস (Necrotic enteritis)

এন্টারাইটিস কথাটির অর্থ হলো অস্ত্রের প্রদাহ। নানা কারণে অন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে। অস্ত্রে উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতি বা বিভিন্ন জীবাণু ও পরজীবীর কারণে এন্টারাইটিস হয়। সাধারণত ২-৮ সপ্তাহ বয়সের মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে ১(এক) সপ্তাহ বয়সের বাচ্চাও আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে মৃত্যুর হার ৫-৫০% পর্যন্ত হতে পারে।

নেক্রোটিক এন্টারাইটিস রোগের কারণ: 

বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, (যেমন: সালমোনেরা, ই-কলাই ও ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারপ্রিনজেনস) ও প্রোটোজোয়া(ককসিডিয়া) এ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী ।

রোগের লক্ষণ:

  • আক্রান্ত মোরগ-মুরগি ভীষণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। 
  • প্রচন্ড ডায়রিয়া দেখা দেয়, লক্ষণ প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই অবস্থার দ্রুত অবনতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়।
  • অনেক সময় লাল রঙের গুড়ের মতো বিষ্ঠা হয় বা কক্সিডিওসিস বা রক্ত আমাশর হিসাবে ভুল হতে পারে। 
  • তাছাড়া অনেক সময় পানির মত পাতলা বিষ্ঠা হয় এবং বদ হজমকৃত খাদ্য বিষ্ঠা সাথে বেরিয়ে আসতে পারে।
  • মোরগ-মুরগির ডানা ঝুলে পড়ে, দাঁড়াতে পারে না। 
  • পালক উস্কো-খুস্কো হয়ে যায় । 
  • ঠোঁট দিয়ে লালা পড়ে। 
  • বুকের মাংস কালো হয়ে যায়।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

কলিজা বড় হয়ে যায়, হলুদাভ রং এর এবং রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। অস্ত্রে রক্তক্ষরণ হয় এবং গ্যাস জমে বেলুনের মতো ফুলে উঠে। অনেক সময় ক্ষুদ্রান্তে সাদা রঙের ঘা দেখা দেয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীর মোটা হয়ে যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধঃ-

বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে। সংক্রমিত ঘর ও সরঞ্জাম ১:২০০ বা ১:৫০০ কস্টিক সোডা মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

  • ভাইরাস: ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদানের মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগ দমন করা হয়। 
  • প্রোটোজোয়া: কক্সিডিয়া নামক প্রটোজোয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পোল্ট্রি খাদ্যে কক্সিডিয়া বিরোধী ঔষধ ও ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। 
  • ব্যাকটেরিয়া: এন্টারাইটিস সৃষ্টিকারী ২ ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে-

(ক) সালমোনেলা, ই. কলাই ইত্যাদি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া- খাদ্যে বিভিন্ন এসিডিফায়ার (সালমোনেলা কিলার), এন্টিবায়োটিক (সি.টি.সি./অক্সি-টেট্রাসাইক্লিন/ফুরাজলিডন/টাইলোসিন ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। 

(খ) ক্লস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেনস (Clostridium perfringens) : নামক গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি নেক্রোটিক এন্টাররাইটিস রোগটি দমনের জন্য আমরা কার্যকর তেমন কিছু ব্যবহার করি না। নেক্রোটিক এন্টারাইটিস যেকোনো বয়সের মোরগ-মুরগির হতে পারে। মৃত্যুহার লেয়ার মুরগির তুলনায় ব্রয়লার মুরগির বেশি। রোগটির সংক্রমণ কোনোরূপ পূর্ব লক্ষণ প্রকাশ না করেই ঘটতে পারে। পুরাতন লিটার পুনঃব্যবহার করলে রোগটি ছড়াতে পারে। পুরাতন লিটারের মধ্যে রোগটির স্পোর বা বীজ থাকার সম্ভাবনা বেশি।

চিকিৎসা: 

যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন- টেট্রাসাইক্লিন বা রেনামাইসিন এর যেকোনো একটি ঔষধ বিধি মোতাবেক পানির সাথে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।

 

(ঘ) কলিবেসিলোসিস (Colibacillosis)

ইসকারিসিয়া কলাই নামক এক প্রকার ব্যাটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহকে কলিবেসিলোসিস রোগ বলে । এই জীবাণুটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সব প্রাণির শরীরের ভিতরে ও বাইরের পরিবেশে যেমন- খাদ্য বা পানির ভিতর এই জীবাণু উপস্থিত থাকে। সময় সুযোগমত জীবাণুটি শরীরের ভেতর রোগ সৃষ্টি করে । শরীরের অন্য কোনো রোগের উপস্থিতিতে বা অন্য কোনো ধরনের কারণে শরীর যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখনই এই জীবাণু রোগ সৃষ্টি করে । আবহাওয়াগত বা অন্য কোনো কারণে বাতাসের আর্দ্রতা বা লিটারের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় 

সংক্রমণের উপায়ঃ

  • ডিম পাড়া মুরগির প্রজনন নালিতে জীবাণু বিদ্যমান থাকলে তা ডিমকে আক্রান্ত করতে পারে বা ঐ ডিম হতে যে বাচ্চা ফুটে তাকে সংক্রমিত করতে পারে। 
  • আক্রান্ত মুরগির সংস্পর্শে আসলে বা হাঁচি, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্য মুরগিতে ছড়াতে পারে ৷
  • ইনকিউবেটরের আর্দ্রতা বেশি থাকলে এবং যন্ত্রপাতির মধ্যে এই রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকলে সদ্য ফোটা বাচ্চার রোগ দেখা দিতে পারে । 
  • মোরগ-মুরগি স্থানাস্তর করার সময় পরিবহন বা অন্য কোনো ধকল পীড়নের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
  • ঘরের মধ্যে এমোনিয়া গ্যাস জমে গেলে যে পীড়ন সৃষ্টি হয় তার ফলেও মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ 

এ রোগের লক্ষণগুলো নির্ভর করে মুরগির কোনো অঙ্গে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে তার উপর। যেমনঃ

১. অম্ল প্রদাহ (Enteritis):

  • পাতলা বিষ্ঠা হয়ে থাকে এবং পিছনের পালকে বিষ্টা লেগে থাকে। 
  • পালক উস্কো খুস্কো থাকে ।

২. কলিসেপটিসেমিয়া (Colisepticaemia):

  • হঠাৎ করে মোরগ-মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ে ও নিস্তেজ হয়ে যায়। নড়চড়ায় অনীহাভাব প্রকাশ পায় । 
  • মৃত্যু হার বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । 
  • শরীরের ভিতর বিভিন্ন অঙ্গে রক্তকরণ দেখা দেয়।
  • ডিমের মাধ্যমে সংক্রমণ হলে ভ্রুণ মারা যায় বা বাচ্চা ফুটলেও রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং ৪- ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত মৃত্যু হতে থাকে। 
  • যকৃতের মধ্যে সবুজ ক্ষত ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানার মতো দেখা যায় ।

৩. কলিগ্যানুলোমা (Coligranuloma): 

  • মুরগির যকৃত, অস্ত্র ইত্যাদির ঝিল্লীতে গুটিগুটি দানার মত দেখা যায় ।

৪. এয়ার স্যাক ডিজিজ (Air Sac Disease) : 

  • ৬-৭ সপ্তাহের ব্রয়লার মুরগিতে এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। 
  • শ্বাসনালী ও শ্বাস থলির মধ্যে এই ইনফেকশন হয় বলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । 
  • হৃৎপিন্ড, যকৃত ও চোখে প্রদাহ দেখা দেয় ।

৫. প্যানঅপথ্যালমাইটিস ও সোলেন হেড ডিজিজ (Panonthalmitis & Swollen Head Disease):

  • কলি সেপ্টিসেমিয়া রোগে আক্রান্ত মুরগির চোখের ভিতর ও তার চারিধারে দধির মত অথবা পুঁজ জাতীয় পদার্থ জমা হয় বলে চোখ ফুলে যায় ও চোখ বন্ধ করে রাখে। কখনও কখনও চোখ অন্ধ হয়ে যায় । এটাই প্যানঅপথ্যালমাইটিস নামে পরিচিত ।
  • আবার দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির চোখের চারিধারে পানি ও পুঁজ জমে ফুলে যায়। ফলে মনে হয় মাথা ফুলে গেছে। এটাকেই “সোলেন হেড ডিজিজ” বলে। এ সমস্ত মুরগি বার বার মাথা নাড়ে ও ঘাড় বাঁকিয়ে রাখে।

৬. চর্ম প্রদাহ (Dermatitis): 

  • চামড়ার নিচে জলপূর্ণ স্ফীতি ও মাংসপেশিতে রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়। 
  • চামড়ার ঘা দেখা যেতে পারে ।

৭. সাইনোভাইটিস (Syovitis): 

  • রক্তের মাধ্যমে জীবাণু প্রবেশ করে হাড়ের জয়েন্ট বা অস্থি সন্ধিতে ইনফেকশন করে । 
  • সাধারণত বাচ্চা মুরগি আক্রান্ত হয়। ফলে অস্থি সন্ধি বা গীড়া ফুলে যায় ও মুরগি হাঁটতে পারে না ।

৮. ওফ্যালাইটিস (Omphalitis): 

  • নাভীর প্রদাহে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • অপেক্ষাকৃত উষ্ণ স্থানে বাচ্চারা জড়ো হতে থাকার প্রবণতা দেখা যায় । 
  • এই রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চার নাভীর ঘা শুকায় না এবং বাচ্চার মৃত্যু হয়।

 

প্রতিরোধের উপায়: 

  • জৈব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। 
  • ডিম ফোটানোর জন্য সুস্থ, নিরোগ ও জীবাণু মুক্ত ডিম বেছে নিতে হবে। 
  • কোনো রূপ ধকল বা পীড়নে আক্রান্ত হওয়া মাত্র ভেট বেট পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

চিকিৎসাঃ সিপ্রোফ্লক্স সলুশন ১ মিলি ১-২লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে । ডায়রিয়া হয় বিধায় খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হয় ।

 

 

(ঙ) ওফ্যালাইটিস/ন্যাভাল ইল (Neval III)

ওফ্যালাইটিস একটি ইসকারিসিয়া কলাই জীবাণুঘটিত রোগ তবে সংক্রামক নয়। ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এ রোগটি মোরগ মুরগিকে আক্রমণ করে । ঘর বা লিটারের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে, হ্যাচারির ইনকিউবেটরের মধ্যে আর্দ্রতা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে, কোনো কারণে বাচ্চা অবস্থায় মুরগির পেটে থাকা ডিমের কুসুম অব্যবহৃত থাকলে, বাচ্চা অবস্থায় জীবাণুর সংস্পর্শে আসলে ওফ্যালাইটিস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা খুব বেশি বা কম হলে এবং পরিবহন জনিত পীড়নের কারণে মৃত্যু হার অধিক হয় ।

রোগের লক্ষণ:

  • মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত মুরগির বাচ্চা সাধারণত সুস্থ দেখায়। 
  • অসুস্থ বাচ্চার ঝিমুনি হয় ও মাথা ঝুলে পড়ে। 
  • আলো-তাপের উৎসের দিকে জড়ো হয়ে থাকে ।
  • নাভি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেটি লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। এ সময় সে স্থানে বাচ্চার ব্যাথা অনুভূত হয় । 
  • জন্ম হতে ১০-১৫ দিন বয়স পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে। মৃত্যু হার ১৫% পর্যন্ত হয় । 
  • বুকের চামড়ার নিচে ইডিমা (মাংস পেশিতে পচন ও পানি জমা) দেখা দিতে পারে ।

প্রতিরোধ 

হ্যাচারির ইনকিউবেটরের মাধ্যমে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোগের প্রতিরোধ ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব। ইনকিউবেটরে পরিষ্কার ও ভালো ডিম বাহাই করতে বসাতে হবে। 

চিকিৎসা: টেট্রা-ডেট পাউডার অথবা ডক্সাসিল-ডেট পাউডার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

 

(চ) ফাউল কলেরা (Fowl Cholera)

হাঁস-মুরগির কলেরা বা ফাউল কলেরা হাসমুরগির ও অন্যান্য গৃহপালিত ও বন্য পাখির একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমক রোগ। উচ্চ হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার এবং ভাররিরা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সব বয়সের পাখি এতে আক্রান্ত হতে পারে। হাঁসমুরগির ঘর স্বাস্থ্যসম্মত না হলে এবং ব্যবস্থাপনা ঘাটতি থাকলে এ রোগ মড়ক আকারে দেখা দেয়। সঠিকভাবে রোপ সনাক্ত করে চিকিৎসা করতে না পারলে মৃত্যু হার অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া এ রোগ একবার দেখা দিলে দমন করা মুশকিল হয়ে পড়ে। যদিও এ রোগকে ফাউল কলেরা বলে, কিন্তু ষ্টাভিয়ান পান্ডুরেপোসিস, অ্যাভিরাম হিমোরেজিক সেপ্টেলেমিরা ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। তবে হাঁসের ক্ষেত্রে রোগকে হাঁসের কলেরা বা ডাক কলেরা বলা হয়।

মুরগির কলেরা রোগের কারণ: 

পান্ডুরেলা মালটুসিডা নামক একপ্রকার গ্রাম নেগেটিভ ক্ষুদ্র দণ্ডাকৃতির বাইপোলার ব্যাকটেরিয়া এ রোগের একমাত্র কারণ।

 

মুরগির কলেরা রোগের সংক্রমণ : 

মুরগির কলেরা রোগের রোগ নিম্নলিখিতভাবে সংক্রমিত হয় । যথা- 

১. সংবেদনশীল মুরগির ঘরে কোনো বাহক মুরগি থাকলে বা প্রবেশ করলে। 

২. বন্য পাখি বা অন্যান্য বাহক প্রাণির সংস্পর্শে সংবেদনশীল পাখি আসলে। 

৩. একই ঘরের বা খামারের এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিম্নলিখিত ভাবে এ রোগ সংক্রমিত হয় । যথা-

ক. আক্রান্ত মুরগির নাকের সর্দির মাধ্যমে। 

খ. এ রোগের মৃত মুরগিকে ঠোকর দিলে। 

গ. কুলষিত পানির মাধ্যমে। 

ঘ. মানুষের জামা জুতো ঘরের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে। 

ঙ. কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আক্রান্ত মোরগ থেকে সুস্থ মুরগিতে ।

 

মুরগি ও অন্যান্য পাখিতে সাধারনত দু'প্রকৃতিতে কলেরার লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন: 

১. তীব্র প্রকৃতির লক্ষণ। 

২. দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির লক্ষণ ।

১. তীব্র প্রকৃতির লক্ষণঃ 

ক. হঠাৎ ধপ করে পড়ে মারা যায়। রোগের লক্ষণ প্রকাশের পূর্বে অর্থাৎ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই মারা যায় । 

খ. সবুজ রংয়ের পাতলা বিষ্ঠা ত্যাগ করে । অনেক সময় বিষ্ঠা ফেনাযুক্ত হয়। 

গ. নাক মুখ দিয়ে পানি পড়ে।

২. দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির লক্ষণ: 

ক. গলার ফুল ফুলে যায়। (বিশেষ করে মোরগের ক্ষেত্রে)।

খ. মাথার ঝুটি একেবারে কালো হয়ে যায় । 

গ. সন্ধিপ্ৰদাহ বা আৰ্দ্ৰাইটিস হয় এবং পা খোড়া হয়ে যায়। 

ঘ. ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়। দুই মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকে। 

ঙ. অবশেষে আস্তে আস্তে মারা যায়।

 

রোগ নির্নয় 

নিম্নলিখিত ভাবে হাঁস-মুরগির কলেরা রোগ নির্ণয় করা যায় । যথা: 

ক. রোগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। 

খ. ময়নাতদন্তে বিভিন্ন অঙ্গের প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। যথা:

১. অন্নের রক্তক্ষরণ 

২. বন্ধুতে ছোট ছোট সাদা দাগ । 

৩. হৃদপিণ্ডের বাহিরের সাদা অংশে রক্তের ফোঁটা। 

৪. মৃত মুরগির সমস্ত অঙ্গে রক্তক্ষরণ ও রক্তাধিক্য । 

৫. গবেষণাগারে জীবাণু কালচার করে ।

চিকিৎসা: 

কলেরা রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইট গ্রুপের ঔষধ উল্লেখিত মাত্রায় প্রয়োগ করে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। 

১.ফ্লুমেকুইন ১০% পাউডার ১গ্রাম/২ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫দিন আক্রান্ত পাখিকে পান করাতে হবে। 

২. মেইন ২০% সলুশন ১ মিমি /৪ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন আক্রান্ত পাখিকে পান করাতে হবে।

 

রোগ প্রতিরোধ 

১) কলেরা রোগ প্রতিরোধে নিজের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে 

ক) এই ভ্যাকসিন ৭৫দিন বয়সে ১ সি সি করে রানের মাংসে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয় ।

খ) প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়ার ১৫ দিন পর পুনরায় ১ সি সি করে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হয় । 

গ) তারপর ৬ মাস পরপর ১ সি সি করে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হয় ।

২. সব সময় খামারের আশেপাশে জীবাণুনাশকের ব্যবহার বাড়ানো । 

৩. লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। 

৪. এক ঘরের যন্ত্রপাতি অন্য ঘরে নেয়ার সময় জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে। 

৫. খামারে জৈব নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.৩ মাইকোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট রোগ

৩.১.২.৩ মাইকোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট রোগ

(ক) মাইকোপ্লাজমোসিস (Mycoplasmosis) 

মাইকোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট মুরগির রোগসমূহকে মাইকোপ্লাজমোসিস বলে। সাধারণত মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপ্টিকাম ও মাইকোপ্লাজমা সাইনোভি নামক জীবাণু মুরগির মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। সকল বয়সের মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে মৃত্যু হার সাধারণত কম তবে অন্য রোগে সৃষ্ট জটিলতার জন্য মৃত্যু হার ৩০% পর্যন্ত হতে পারে।

রোগের বিস্তার:

  • আক্রান্ত মুরগি ও ডিমের মাধ্যমে সুস্থ মুরগি বা বাচ্চাতে রোগটি হতে পারে । 
  • গৃহপালিত মুরগি, বন্যপ্রাণি, আটালী, ইঁদুর প্রভৃতির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে। 
  • রোগটির সংস্পর্শে আসা মানুষের হাত পা ও আক্রান্ত ফার্মের আসবাসপত্র, যন্ত্রপাতি বা পরিবহন যানের মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে

রোগের লক্ষণ:

  • চোখ দিয়ে পানি ও নাক দিয়ে লালা ঝরে, চোখে পুঁজ জমা হয়ে থাকে । 
  • গলায় ঘড় ঘড় শব্দ হয়। 
  • চোখের পাতা, মাথা, মুখ ও পায়ের গিরা ফুলে থাকে। 
  • যার জন্য খুড়িয়ে হাঁটে। 
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মুরগি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় । 
  • পায়ের তলায় ফুলে যায়, পুঁজ হতে পারে। বুকের মাংসে ফোসকা দেখা যায়।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

শ্বাসনালীতে প্রচুর হলুদাভ সর্দি (মিউকাস) জমে এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। গিরার ক্রিমের মত আঠালো পদার্থ দেখা যায়।

প্রতিরোধ: 

রোগ ছাড়ানোর উপারগুলো ভালোভাবে জেনে সেগুলো সম্পর্কে সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে । নিয়মিত টিকা দিতে হবে। মাইকোপ্লাজমা যুক্ত খামার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। হ্যাচিং ডিম ইনকিউবেটরে রেখে ২-৩ ঘণ্টা ভাগ (৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দিয়ে ০.০৪% -০.১০ টাইলোসিন টারনেটি বা জেন্টামাইসিন দ্রবণের মধ্যে ২৫ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০-৩০ মিনিট রেখে দিলে ডিমের মধ্যেকার মাইকোপ্লাজমা জীবাণু মারা যায়। মুরগির শেডে অতিরিক্ত ধূলাবালি ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

চিকিৎসা: 

টাইলোসিন টারট্রেট ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.৪ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহ

৩.১.২.৪ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ সমূহ: 

(ক) এসপারজিলোসিস (Aspergillosis) 

এসপারজিলাস ফ্লেভাস নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট এ রোগকে এসপারজিলোসিস বলা হয়। মুরগির বাচ্চার ব্রুডিংকালীন সময়ে এ রোগ নিউমোনিয়া প্রকৃতির হয় বিধায় একে ব্রুডার নিউমোনিয়াও বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য বয়সের মুরগির আক্রান্ত হতে পারে। পুষ্টির অভাবজনিত কারণে দুর্বল মুরগি এবং ৰাজক মুরগি এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রুডিংকালীন সময়ে হলে ১০-৫০% মুরগি মারা যেতে পারে।

রোগের বিস্তার:

  • হ্যাচারিতে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার পর বা ব্রুডার হাউজে ব্রুডিং এর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এই ছত্রাকের স্পোর ফুসফুসে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। 
  • লিটার বেশি আর্দ্র হলে এই রোগের জীবাণু জন্ম নেয়। উক্ত স্পোর শ্বাসনালীতে যেরে রোগ সৃষ্টি করে ।

রোগের লক্ষণ:

  • শ্বাসকষ্ট হয় ও হাঁ করে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে । 
  • নিঃশ্বাসের সময় খড় খড় শব্দ হয়। 
  • খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দুর্বল হয়ে যায়।
  • পিপাসা বেড়ে যাওয়ার ফলে বারবার পানি পান করে । 
  • বাচ্চা মুরগিতে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারা যায় ।
  • চোখে আক্রান্ত হলে চোখ ফুলে যায় ও চোখ দিয়ে সবসময় পানি পড়ে। 
  • মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে অবশ হওয়ার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না।

পোষ্টমর্টেম লক্ষণঃ 

শ্বাসনালী, কণ্ঠনালী ও ফুসফুসে সাত দানার মত সাদা বা হলুদাভ নডিউল দেখা যায়। ফুসফুসে ধূসর বর্ণের ফেনা পাওয়া যায় ।

প্রতিরোধ

  • হ্যাচারি যন্ত্র বাচ্চা ফোটানোর আগে ফিউমিগেশন করা উচিত। ছত্রাকমুক্ত ডিম বাচ্চা ফোটানোর আগে বেছে নিতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে বা বেশি শুকনা লিটার ব্যবহার করা উচিত না।
  • বেশি দিনের পুরনো ছত্রাকযুক্ত খাদ্য খাওয়ানো যাবে না, খাদ্য উপাদান মেশানোর পর বেশি দিন রাখা যাবে না। ময়লা আবর্জনামুক্ত শুকনা পরিবেশ রাখতে হবে। খাবার পাত্র ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খাবারে নিয়মিত কপার সালফেট এবং মোল্ড বাইন্ডার যোগ করতে হবে।

চিকিৎসা: 

কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই। মাইকোফিক্স প্লাস প্রতি কেজি খাদ্যে ১.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে । অথবা নিষ্টাটিন জাতীয় ঔষধ খাবারে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ।

 

(খ) আফলা-টক্সিকোসিস (Afla-toxicosis)

এটি মাইকোটক্সিন জনিত মারাত্মক রোগ। অ্যাসপাজিলাস নামক ছত্রাক থেকে এই মাইকোটক্সিন তৈরি হয় বা খাদ্যের মাধ্যমে বিশেষ করে সয়াবিন, ভূট্টা, চালের গুঁড়া ইত্যাদির মাধ্যমে খামারের মুরগিতে বিস্তার লাভ করে । নিম্নমানের খাদ্য (১৪% এর অধিক আর্দ্রতা), উপযুক্ত ভাবে গুদামজাত না করা, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ পোল্ট্রি খাদ্য মাইকোটক্সিন দ্বারা আক্রান্ত। সকল বয়সের মুরগি আক্রান্ত হতে পারে ।

রোগের বিস্তার:

  • খাদ্য যদি কোনো কারণে ভিজে যায় এবং সেভাবেই সংরক্ষণ করা হয়। 
  • খাদ্য মেশানোর পর বেশি দিন রাখা হয় এবং তা যদি মুরগিকে খাওয়ানো হয়।

রোগের লক্ষণ:

  • পালক ঠোকরাবে। 
  • পায়ের রং ফ্যাকাসে হবে ও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটবে। 
  • খাদ্যে অরুচি ও পাতলা পায়খানা হবে। মুখে ঘা দেখা দিবে । 
  • পালক উসকো-খুসকো হবে। 
  • ঝিমাবে ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে। 
  • শরীরের ওজন কমে যায় । 
  • পুষ্টি দ্রব্যের শোষণ হ্রাস পায় । 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে । 
  • পরবর্তীতে মুরগি মারা যাবে ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: লিভার কালচে বর্ণের। চামড়ার নিচে রক্তের ফোঁটা। পেটের ভিতরে প্রচুর রক্ত পাওয়া যাবে।

প্রতিরোধ: 

খাবারে টক্সিন বাইন্ডার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত লিটার ও খাবার পরিবর্তন করতে হবে। মাঝে মাঝে খাবারে অফলাটক্সিন-এর পরিমাণ জানার জন্য ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে হবে। লিটার শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। পঁচা, ভেজা ও নষ্ট খাবার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পরিষ্কার খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে।

চিকিৎসা:

  • মাইকোফিক্স গ্লাস বা যেকোনো টক্সিন বাইন্ডার খাদ্যের মেশাতে হবে। 
  • পানিতে আখের গুড় ও কপার সালফেট মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
  • পঁচা খাদ্য খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে ।

 

 

Content added By

৩.১.২.৫ প্রোটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ

৩.১.২.৫ প্রোটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ : 

(ক) রক্ত আমাশয় (Cocellosis)

ককসিডিয়া নামক প্রোটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহকে ককসিডিওসিস বলে। অল্প বয়সের মুরগি বিশেষ করে ৪-৮ সপ্তাহের মুরগি এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বেশি বয়সী মুরগিতেও কখনও কখনও এ রোগ দেখা দেয়। আমাদের দেশে আইমেরিয়া ট্রেনেলা ও আইমেরিয়া নেকাট্রিক্স নামে ২টি জীবাণু দ্বারা রক্ত আমাশয় হয়। মুরগির বাচ্চার মড়কের কারণগুলোর মধ্যে এই রোগ অন্যতম ।

রোগের লক্ষণ:

  • হঠাৎ করে খাদ্য ও পানি গ্রহণে অনীহা দেখাবে। 
  • পালক উসকো খুসকো হবে।
  • রক্ত মিশ্রিত চুনা পায়খানা করবে ও মলদ্বারের পালকগুলো পায়খানায় ভিজা থাকে। 
  • ৰাচ্চা চোখ বুজে এক জায়গার চুপ করে বসে থাকে।
  • শরীরে কাঁপুনি হয়। 
  • ঠোঁট,পা,খুঁটি ও পলার ফুল ফ্যাকাশে হয়ে যায় ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

আক্রান্ত মুরগিতে রক্তমিশ্রিত বিষ্ঠা থাকে। অস্ত্রের আক্রান্ত স্থানে ক্ষত চিহ্ন দেখা যায় ও অন্ত্রের দেয়ালের বাইরে থেকে রক্ত আবরণের চিহ্ন দেখা যায়। সিকামে রক্ত মিশ্রিত তরল বিষ্ঠা থাকবে।

প্রতিরোধ:

  • স্বাস্থ্যসম্মত লিটার ও পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। 
  • মুরগির ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • বাড়ন্ত মুরগির সাথে বাচ্চা মুরগি রাখা যাবে না । 
  • পানির পাত্রের নিচের ও চারিপার্শ্বের লিটার প্রতিদিন উল্টে পাল্টে দিতে হবে। 
  • বাচ্চা মুরগির ঘরে কাজ করার পর বড় মুরগির ঘরে কাজ করতে হবে।
  • বিধি মোতাবেক ঘর পরিষ্কার ও লিটার পরিবর্তন করে নতুন ব্যাচে বাচ্চা তুলতে হবে। 
  • লিটার সব সময় শুষ্ক রাখতে হবে। ১০০ বর্গফুট জায়গায় ৫-৭ কেজি চুন ছিটিয়ে মিশিয়ে দিয়ে লিটার ওলট পালট করে দিলে লিটার শুষ্ক থাকবে। ফলে ককসিডিয়ার জীবাণুসহ অন্যান্য জীবাণু মারা যাবে।
  • প্ৰতি ১০০ কেজি খাদ্যে ৫০ গ্রাম বাজারে প্রাপ্ত ককসিডিওস্ট্যাট মিশিয়ে খাদ্যে ব্যবহার করতে হয়। 
  • জৈব নিরাপত্তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। 
  • টিকা ব্যবহার করে ও বাচ্চার ককসিডিওসিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

চিকিৎসা 

ইএসবি৩ (৩০%) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন পান করাতে হবে। 

যদি রোগ মুক্ত না হয় তবে ২দিন পর আবার ইএসবি৩ (৩০%) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ দিন পান করাতে হবে।

এমবাজিন পাউডার ১.৫-২.০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন পান করাতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.৬ অন্যান্য রোগ

৩.১.২.৬ অন্যান্য রোগ: 

(ক) পেটে পানি জমা রোগ (Acytis):

এসাইটিস বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ব্রয়লার মুরগির একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগের কারণ একাধিক তবে রক্ত সংবহন তন্ত্রের ত্রুটির জন্যই শেষ পর্যন্ত এসাইটিস দেখা দেয়। যেকোনো বয়সের মুরগিই আক্রান্ত হতে পারে তবে ৫-৬ সপ্তাহের মুরগিই বেশি আক্রান্ত হয় ।

রোগের লক্ষণ:

  • সাধারণ ঝাঁকের ছোট মুরগিগুলোই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । 
  • পালক উসকো খুসকো হয় ।
  • ঝুঁটি ফ্যাকাসে ও কুচকানো থাকে । 
  • হাঁটা বা নড়াচড়ায় অনীহা দেখায় । 
  • শ্বাসকষ্ট হয় এবং পেট বড় হয়ে যায় ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

আক্রান্ত মুরগির পেটে হলুদাভ বা বাদামি রঙের পানি জমা হয়। হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যায়।

প্রতিরোধ:

  • বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভালো থাকলে, ব্রয়লার প্রতি জায়গার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, সেড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও লিটার শুষ্ক থাকলে, দুপুরের দিকে ২-৩ ঘন্টা খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখলে এবং পানিতে দ্রবণীয় মাল্টি ভিটামিন খাওয়ালে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 
  • খাদ্যের সাথে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতি টনে ১২৫ গ্রাম হিসাবে ব্যবহার করতে হবে ।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে খাবারের অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ ব্যবহার করলে এবং পি এইচ কন্ট্রোলার ১মিলি/ ২মিলি পানিতে ৫-৭ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এনফ্লক্স- ভেট সলুশন ব্যবহার করলে রোগের প্রবণতা কমে।

 

 

Content added By
Promotion