যেসব পরজীবী মুরগির দেহের বাইরের অংশ আক্রান্ত করে তাদেরকে বহিঃপরজীবী বা বহিঃদেহের পরজীবী বলে । যেমন-উকুন,আঠালি,মাইট এবং ফ্লি ইত্যাদি। এরা বেশির ক্ষেত্রেই মুরগির চামড়া এবং পালকের মধ্যে বসবাস করে । এ ধরনের পরজীবী পাখির দেহে কামড় দেয়,রক্ত শুষে নেয় এবং অনেক সময় ক্ষতের সৃষ্টি করে । আমাদের দেশের গরম আবহাওয়া এদের আক্রমণের অনুকূলে। যেকোনো মুরগি পালনে এলাকায় এদের আক্রমণ দেখা যায়। খাঁচা বা লিটার যে পদ্ধতিতেই পালন করা হোক না কেন, এদের আক্রমণ সব জায়গায়ই বিরাজমান ।
এরা মুরগির বুক, পেট ও পাখার নিচের পালক ও ত্বকের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে। কামড়ানি ও শোষক এ দু'ধরণের উকুনের মধ্যে কামড়ানি উকুন মুরগিকে আক্রান্ত করে । উকুন তালের সম্পূর্ণ জীবনচক্র মুরগির মধ্যেই সম্পন্ন করে । পাখির দেহ ছাড়া এরা ছয় ঘন্টার বেশি বাঁচতে পারে না। এরা মুরগির পালকের মধ্যে ডিম দেয়। দু'সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে উকুনের বাচ্চা হয় এবং পরবর্তীতে পরিপূর্ণ উকুনে পরিণত হয়।
উকুনের আক্রমণের মুরগির দেহে যেসব লক্ষণঃ
ক) উকুন চামড়ার উপরের অংশে কামড় দেয়, তাই মুরগি ঠোট দিয়ে শরীরের মধ্যে চুলকায়।
খ) মুরগির মধ্যে অস্থিরতা প্রকাশ পায়।
গ) চামড়া নষ্ট হয়ে যায়
ঘ) মুরগি পালক খেয়ে ফেলে।
ঙ) ডিম উৎপাদন কমে যায়।
প্রতিরোধ ও দমন
নিম্নলিখিতভাবে পাখিতে উকুনের আক্রমণ প্রতিরোধ ও দমন করা যায়। যথা-
ক) মুরগির ঘরে যাতে বন্য পাখি ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খ) মুরগির দেহে উকুন দেহে উকুন আছে কিনা তা প্রতিদিন যাচাই করতে হবে।
গ) সুস্থ মুরগির ঘরে উকুন আক্রান্ত মুরগি ঢুকতে দেয়া যাবে না।
ঘ) একই ব্যক্তিকে সুস্থ ও আক্রান্ত মুরগির ঘরে কাজ করতে দেয়া যাবে না।
ঙ) যে এলাকাতে প্রতিবছর উকুনের আক্রমণ দেখা দেয়, সে এলাকার মুরগির ঘরে মাঝে মধ্যে উকুননাশক স্পে করতে হবে।
চিকিৎসা:
ম্যালাথিয়ন, কার্বারাইল, ফেনক্লোরোফস নামক কীটনাশক নির্দিষ্ট মাত্রায় পানিতে বা বালিতে মিশিয়ে গোসল বা ধূলিয়ান করতে দিতে হবে।
আঠালি মুরগির দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে। রক্ত শোষণের পর দেহ থেকে নিচে নেমে আসে। যৌন মিলনের পর মারা যায়। স্ত্রী আঠালি মুরগির ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ডিম দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের করে। লার্ভা থেকে লিম্ফ এবং লিম্ফ থেকে পূর্ণাঙ্গ আঠালিতে পরিনত হয়। রাতের বেলায় মুরগির দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে।
আঠালি আক্রমনে মুরগির দেহে যেসব লক্ষণ
১) আঠালি কর্তৃক মুরগির রক্ত শুষে খাওয়ায় মুরগির রক্তশুন্যতা দেখা দেয়।
২) মুরগির মধ্যে অস্থিরতা প্রকাশ পায়।
আরও দেখুন...