বাজারের বিকাশ ও প্রকারভেদ (Development and Types of Markets)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - অর্থনীতি - বাজার | | NCTB BOOK
1

বাজারের ধারণায় যে মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করে তা হলো চাহিদা, যোগান, সময় এবং দাম ।
বাজারব্যবস্থায় একটি সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা দর-কষাকষি করে দ্রব্য বা সেবার দাম নির্ধারণ করে বেচা-কেনা করে। এই ধারণার প্রেক্ষিতে সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন অবস্থার কারণে বিভিন্ন ধরনের বাজার ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়েছে এবং বাজার ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করেছে । সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারের উৎপত্তি বিভিন্ন ধরনের হয়েছেবাজারের ধারণায় যে মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করে তা হলো চাহিদা, যোগান, সময় এবং দাম ।
বাজারব্যবস্থায় একটি সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা দর-কষাকষি করে দ্রব্য বা সেবার দাম নির্ধারণ করে বেচা-কেনা করে। এই ধারণার প্রেক্ষিতে সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন অবস্থার কারণে বিভিন্ন ধরনের বাজার ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়েছে এবং বাজার ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করেছে । সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারের উৎপত্তি বিভিন্ন ধরনের হয়েছে ।


১.অতি স্বল্পকালীন বাজার : যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে দ্রব্যের যোগান স্থির থাকে। কারণ ঐ অতি অল্পসময়ে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। ফলে চাহিদার বৃদ্ধি হ্রাস হলেও পণ্যের যোগান পরিবর্তন করা যায় না । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় সকালের কাঁচা বাজার । এ ধরনের বাজারে সকালে স্বল্প সময়ের মধ্যে পণ্যের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি হলেও এই অল্প সময়ে যোগানের পরিবর্তন করা যায় না ।


২. স্বল্পকালীন বাজার : চাহিদার পরিবর্তন হলে যোগান খানিকটা সাড়া দিতে সক্ষম । এই বাজারে ফার্ম নির্দিষ্ট আয়তনের মধ্যে থেকে পরিবর্তনশীল উপকরণগুলোর পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগানে খানিকটা পরিবর্তন আনতে পারে । আবার বাজারে দ্রব্যের চাহিদা কমে গেলে ফার্ম উৎপাদন কমাতেও পারে বা বাজারের অবস্থা খুব খারাপ হলে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধও করে দিতে পারে । সুতরাং স্বল্পকালীন সময়ে দ্রব্যের চাহিদার যেকোনো পরিবর্তনে যোগান কিছুটা সাড়া দিতে সক্ষম হয় ।


৩. দীর্ঘকালীন বাজার : চাহিদার যেকোনো পরিবর্তনের সাথে যোগানের যেকোনো পরিবর্তন সম্ভব । এ ক্ষেত্রে কোনো উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদনের আয়তন এবং উপকরণের সম্পূর্ণ পরিবর্তন সাধন করতে পারে । চাহিদা বৃদ্ধি বহুদিন ধরে চলতে থাকলে উৎপাদন প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন যন্ত্রপাতি বসিয়ে এবং অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার পরিবর্তন করে উৎপাদন এবং যোগানের সাথে সমন্বয় করে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে।


অঞ্চলভেদে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়;


১. স্থানীয় বাজার: যে দ্রব্যের ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে সে দ্রব্যের বাজারকে স্থানীয় বাজার বলা হয় । যেমন: মাংসের বাজার ।
অতি স্বল্পকালীন বাজার : যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে দ্রব্যের যোগান স্থির থাকে। কারণ ঐ অতি অল্পসময়ে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। ফলে চাহিদার বৃদ্ধি হ্রাস হলেও পণ্যের যোগান পরিবর্তন করা যায় না । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় সকালের কাঁচা বাজার । এ ধরনের বাজারে সকালে স্বল্প সময়ের মধ্যে পণ্যের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি হলেও এই অল্প সময়ে যোগানের পরিবর্তন করা যায় না ।


২. স্বল্পকালীন বাজার : চাহিদার পরিবর্তন হলে যোগান খানিকটা সাড়া দিতে সক্ষম । এই বাজারে ফার্ম নির্দিষ্ট আয়তনের মধ্যে থেকে পরিবর্তনশীল উপকরণগুলোর পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগানে খানিকটা পরিবর্তন আনতে পারে । আবার বাজারে দ্রব্যের চাহিদা কমে গেলে ফার্ম উৎপাদন কমাতেও পারে বা বাজারের অবস্থা খুব খারাপ হলে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধও করে দিতে পারে । সুতরাং স্বল্পকালীন সময়ে দ্রব্যের চাহিদার যেকোনো পরিবর্তনে যোগান কিছুটা সাড়া দিতে সক্ষম হয় ।


৩. দীর্ঘকালীন বাজার : চাহিদার যেকোনো পরিবর্তনের সাথে যোগানের যেকোনো পরিবর্তন সম্ভব । এ ক্ষেত্রে কোনো উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদনের আয়তন এবং উপকরণের সম্পূর্ণ পরিবর্তন সাধন করতে পারে । চাহিদা বৃদ্ধি বহুদিন ধরে চলতে থাকলে উৎপাদন প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন যন্ত্রপাতি বসিয়ে এবং অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার পরিবর্তন করে উৎপাদন এবং যোগানের সাথে সমন্বয় করে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে।


অঞ্চলভেদে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়-


স্থানীয় বাজার: যে দ্রব্যের ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে সে দ্রব্যের বাজারকে স্থানীয় বাজার বলা হয় । যেমন: মাংসের বাজার ।

জাতীয় বাজার : যে দ্রব্যের ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেই দ্রব্যের বাজারকে জাতীয় বাজার বলে । যেমন, মোটা চালের বাজার ।


আন্তর্জাতিক বাজার : যে দ্রব্যের ক্রেতা ও বিক্রেতা দেশের ভূখণ্ডের বাইরেও বিস্তৃত থাকে, সেই দ্রব্যের বাজারকে আন্তর্জাতিক বাজার বলে । যেমন- তৈরি পোশাক ।


প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণি বিভাগ-


আগের অনুচ্ছেদে সময় অনুসারে বাজারের ধরন এবং স্থান বা আয়তন অনুসারে বাজারের ধরন সম্পর্কে আমরা পরিচিত হয়েছি । এখন সমগ্র বাজার কাঠামোকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আলোচনা করব। সত্যিকার অর্থে এ ধরনের বিশ্লেষণই অর্থনীতির জন্য বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারে ধরনসমূহ হচ্ছে : ১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার ২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার । অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার প্রধানত তিন প্রকার । ক. একচেটিয়া বাজার খ. একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক গ. অলিগোপলি বাজার বাজার ।
নিচে অতি সংক্ষেপে এ ধরনের কয়েকটি বাজারের ধারণা দেওয়া হলো ।


১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার (Perfectly Competitive Market)


পূর্ণ প্রতিযোগিতা এমন এক বাজারব্যবস্থা যেখানে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা সমজাতীয় দ্রব্য বেচা-কেনা করেন । বাজারে চাহিদা ও যোগান দ্বারা পণ্যের দাম একবার নির্ধারিত হলে কোনো ক্রেতা বা বিক্রেতার পক্ষে এককভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে তা পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না । একজন ক্রেতার চাহিদা বা একজন বিক্রেতার যোগান বাজারের একটা নগণ্য অংশ মাত্র । সুতরাং একজন বা অল্প কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতা সমজাতীয় দ্রব্যের বাজার দামকে প্রভাবিত করতে পারে না । সুতরাং পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে একবার দাম নির্ধারিত হলে ক্রেতা বা বিক্রেতাকে ব্যক্তিগতভাবে তা মেনে নিতে হয় ।


পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Perfectly Competitive Market)

পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় ।
১. অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা : পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো দ্রব্যের অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে ।
২. দ্রব্যের একক সমজাতীয় : পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিবেচিত পণ্য সমজাতীয় বা একই গুণসম্পন্ন হয় । পরিমাণগত ও গুণগত দিক থেকে পণ্যের একটি একক অন্য একক থেকে পৃথক করা যায় না । যেসব দ্রব্যের এককগুলো গঠন ও গুণগত দিক থেকে একই রকম অথচ পৃথকীকরণ করা যায়, তাদেরকে সমজাতীয় দ্রব্য বলে । যেমন- মোটা চাল, মসুরের ডাল ।

৩.ক্রেতা ও বিক্রেতা বাজার সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞাত : বাজারব্যবস্থা পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক হলে পণ্যের এককের গুণাগুণ এবং দাম সম্পর্কে সকল ক্রেতা ও বিক্রেতা পুরোপুরি অবহিত থাকে ।
৪. শিল্পে ফার্মসমূহের অবাধ প্রবেশ ও প্রস্থান : পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারের অধীনে শিল্পে ফার্ম দীর্ঘকালীন সময়ে অবাধে প্রবেশ করতে পারে এবং প্রয়োজনবোধে শিল্প ত্যাগ করতে পারে । এক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধানিষেধ থাকে না ।
৫. বাহ্যিক প্রভাব নেই : পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে উৎপাদন, দাম নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাইরের বা সরকারি প্রভাব থাকে না । মোট কথা হচ্ছে, কর আরোপ, ভর্তুকি প্রদান, রেশনিং ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার প্রভাব সৃষ্টি করে না ।
৬. উপকরণের পূর্ণ গতিশীলতা : পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে উপকরণের অবাধ বিচরণ থাকে ৷ শ্ৰম উপকরণসহ অন্যান্য উপকরণ বিচরণের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধানিষেধ থাকে না। বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে উপকরণের গতিশীলতা থাকায় উপকরণ দাম সর্বত্র সমান থাকে ।
৭. নির্দিষ্ট দামে উৎপাদনকারী মুনাফা সর্বোচ্চকরণের প্রচেষ্টা নেয় : পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক ফার্মের মূল লক্ষ্য থাকে সর্বনিম্ন ব্যয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন । প্রদত্ত দামে ফার্ম মুনাফা সর্বাধিক করার চেষ্টা করলেও দীর্ঘমেয়াদে শিল্প স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে । মনে রাখা দরকার যে মোট আয় ও মোট ব্যয় সমান হলে তাকে স্বাভাবিক মুনাফা বলে । এখানে ব্যয়ের মধ্যে উদ্যোক্তার পরিশ্রম এবং আয়ের মধ্যে উদ্যোক্তার পারিশ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করে হিসাব করা হয়েছে।


২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের প্রকারভেদ-

ক) একচেটিয়া বাজার (Monopoly Market)


মনো (Mono) অর্থ এক, পলি (Poly) অর্থ বিক্রেতা। ফলে মনোপলি শব্দের অর্থ দাঁড়ায় একজন মাত্র বিক্রেতা। মনোপলি কথাটির অভিধানগত অর্থ হলো কোনো ব্যক্তি, সরকার অথবা কর্পোরেশন কর্তৃক কোনো একটি দ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের একচেটিয়া অধিকার । অতএব, যখন কোনো একটি মাত্র ফার্ম কোনো একটি দ্রব্য উৎপাদন করে অসংখ্য ক্রেতাকে যোগান দেয়,তখন সেই ফার্মকে একচেটিয়া কারবারি এবং যে বাজারে ঐ দ্রব্যটি কেনা-বেচা হয়, সেই বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলা হয় । যে দ্রব্য বিক্রয়ে যে ফার্ম একচেটিয়া অধিকার লাভ করে, সেই ফার্ম বাজারে সেই দ্রব্যের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে । এই ফার্মটি ছাড়া আর অন্য কোনো ফার্ম একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঐ দ্রব্যটি উৎপাদন করতে পারে না বলে একচেটিয়া বাজারে ফার্ম শিল্পের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না । পুরোপুরি একচেটিয়া বাজার বাস্তবে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে প্রায় একচেটিয়া বাজারের বেশ কয়টি উদাহরণ দেওয়া যায় । যেমন, বাংলাদেশ অক্সিজেন, জয়দেবপুরে অবস্থিত সমরাস্ত্র কারখানা ইত্যাদি।

একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Monopoly Market) একচেটিয়া বাজার বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ করা যায় ।


১. বিক্রেতা উৎপাদন বা যোগান নিয়ন্ত্রণ করে : একচেটিয়া বাজারে একজনমাত্র উৎপাদক ও বিক্রেতা থাকে । তাই বিক্রেতা বাজারে দ্রব্যের উৎপাদন ও যোগান সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ।
নিকট পরিবর্তক দ্রব্য নেই : একচেটিয়া ফার্ম যে দ্রব্যটি উৎপাদন ও বিক্রি করে, সে দ্রব্যের তেমন কোনো পরিবর্তক দ্রব্য নেই । অর্থাৎ দ্রব্যটির সমজাতীয় বা প্রায় সমজাতীয় কোনো দ্রব্য পাওয়া যায় না ।
৩. সর্বাধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা : একচেটিয়া কারবারি যদি ব্যক্তি বা বেসরকারি খাত দ্বারা পরিচালিত
হয়, তাহলে তার লক্ষ হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা ।
8. একচেটিয়া কারবারির ফার্ম ও শিল্প একই : একচেটিয়া বাজারে একটিমাত্র ফার্ম থাকে । ফলে সে ফার্মটিই শিল্প হিসেবে পরিচিত।
৫. এককভাবে দাম অথবা যোগান নিয়ন্ত্রক : একচেটিয়া ফার্ম এককভাবে উৎপাদন যোগান দিয়ে থাকে ।
একমাত্র উৎপাদক হওয়ায় খুব সহজেই দ্রব্যের দাম অথবা যোগান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । তবে ফার্মটি
ইচ্ছামতো হয় দাম অথবা যোগান নিয়ন্ত্রণ করে; একসঙ্গে দুটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ।
৬. নতুন ফার্মের প্রবেশ বন্ধ : একচেটিয়া শিল্পে নতুন ফার্মের প্রবেশের সুযোগ নেই। নতুন ফার্ম প্রবেশ করতে গেলে একচেটিয়া ফার্ম পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমিয়ে দেয় । সে ক্ষেত্রে নতুন ফার্ম সম্ভাব্য লোকসানের ভয়ে প্রবেশ করে না । সে জন্যই একচেটিয়া বাজারে নতুন ফার্ম প্রবেশ করতে পারে না ।


খ) একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার (Monopolistic Competitive Market)

একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়া বাজারের কতিপয় বৈশিষ্ট্য একযোগে দেখা যায় । একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ফার্ম যে দ্রব্যগুলো উৎপাদন করে, তা সদৃশ হলেও অভিন্ন নয় । অর্থাৎ দ্রব্যের মধ্যে কিছু ভিন্নতা থাকে । আর এই দ্রব্যের পৃথকীকরণের মধ্যে একচেটিয়া বাজারের প্রবণতা বিদ্যমান। আবার বহুসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা থাকায় পূর্ণ প্রতিযোগিতার প্রবণতাও পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং সমজাতীয় অথচ পৃথকীকরণ করা যায় এমন সব দ্রব্য নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়া উৎপাদন সমন্বয়ে যে বাজার গড়ে উঠে তাকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে । যেমন গায়ে মাখার সাবান । বিভিন্ন কোম্পানির গায়ে মাখার সাবান ব্যবহার একই ধরনের হলেও এই সাবানগুলো পৃথক করা সম্ভব । যেমন মোড়ক ভিন্ন বা গন্ধ ভিন্ন ইত্যাদি । এই সব সাবানের যেকোনো একটির দাম বাড়লে, সাবানটির চাহিদা সামান্য কমতে পারে, তবে শূন্য হয় না। এই সাবানের ভক্ত ক্রেতা সব সময় এই সাবানটিই কেনে । এসব দ্রব্যের দামের পরিবর্তন হলেও ক্রেতা দ্রব্য ভোগ ও ব্যবহার ত্যাগ করে না ৷


একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Monopolistic Competitive Market)
একচেটিয়া প্রতিযোগিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো ।


১. ফার্ম/বিক্রেতার সংখ্যা : একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় ফার্মের সংখ্যা অসংখ্য । এক একটি ফার্ম বাজারে মোট উৎপাদনের একটি সামান্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে কোনো ফার্মের পক্ষেই পণ্যের মূল্য বা মোট উৎপাদনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না । এ জন্য অনেক সময় জোট বা দলভুক্ত ফার্ম থাকে ।
২. উৎপাদিত দ্রব্যের পৃথকীকরণ : একচেটিয়া প্রতিযোগিতার অধীনে বিভিন্ন ফার্ম যে সব পণ্য উৎপাদন করে, সেগুলো অনেকটা সদৃশ হলেও একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করা সম্ভব । দ্রব্যগুলো গুণগত ও বাহ্যিক দিক থেকে কিছুটা পৃথক হয়ে থাকে । অর্থাৎ দ্রব্য পৃথকীকরণের অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন ফার্মের উৎপাদিত দ্রব্য সমজাতীয় নয় । এ জন্যই একচেটিয়া প্রতিযোগিতার উদ্ভব হয় ।
৩. শিল্পে ফার্মের অবাধ প্রবেশ ও প্রস্থান : একচেটিয়া প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে শিল্পে ফার্মের প্রবেশ এবং প্রস্থানে ফার্মের কোনো বাধানিষেধ নেই । সাধারণত স্বল্পমেয়াদে কোনো ফার্ম অস্বাভাবিক মুনাফা করলে দীর্ঘকালে নতুন ফার্ম শিল্পে প্রবেশ করে । আবার কোনো ফার্ম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দীর্ঘমেয়াদে শিল্প পরিত্যাগ করতে পারে। এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কোনো বাধা নেই ।
৪. বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় খরচ : প্রত্যেকটি ফার্ম তার পণ্যের বিক্রি বাড়াতে বেশি প্রচার করে । বেশি প্রচারের ফলে এই ফার্মগুলোর বিজ্ঞাপন ও আনুষঙ্গিক বিক্রয়জনিত ব্যয় বেড়ে যায়। প্রচার ও দ্রব্যের গুণগতমানের মাধ্যমে এই ফার্মগুলো পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ।
৫. চাহিদার প্রকৃতি : কোনো ফার্ম পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে অনেক ভোক্তা অপর ফার্মের পরিবর্তক দ্রব্য ক্রয় করলেও এমন কিছু ভোক্তা থাকে, যারা প্রথম ফার্মের পণ্যই কম পরিমাণে হলেও ক্রয় করে । অর্থাৎ কোনো ফার্ম পণ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি করলেও সেই পণ্যের চাহিদা শূন্য হয় না। প্রতিটি ফার্মের জন্য কিছু কিছু ক্রেতার বিশেষ পছন্দনীয়তা থাকে বলে প্রতিটি ফার্মের চাহিদা রেখার আকৃতি সাধারণত এক রকম হয় না । চাহিদা রেখার আকৃতি মূলত নির্ভর করে বিবেচনাধীন ফার্মের দ্রব্য অপরাপর ফার্মের দ্রব্যের সাথে কতটুকু পৃথক তার উপর ।
৬. মুনাফা সর্বোচ্চকরণ : একচেটিয়া প্রতিযোগিতার বাজারে প্রত্যেক বিক্রেতার লক্ষ্য থাকে মুনাফার পরিমাণ সর্বাধিক করা ।
৭. দ্রব্যের অনুকরণ : একচেটিয়া প্রতিযোগিতার বাজারে একজন বিক্রেতা অপর একজন বিক্রেতার উৎপাদিত দ্রব্য পূর্ণ অনুকরণ করতে পারে না। ফলে প্রত্যেক বিক্রেতা বা ফার্ম একচেটিয়া ফার্মের মতো নিজ নিজ দ্রব্যের যোগান বা যোগান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।
৮. দীর্ঘকালীন পরিস্থিতি : দীর্ঘকালীন সময়ে একচেটিয়া প্রতিযোগিতার বাজারে ফার্মের ভারসাম্য পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ফার্মের মতো স্বাভাবিক মুনাফা হয়ে থাকে ।
গ) অলিগোপলি বাজার
অলিগোপলি এমন এক বাজারব্যবস্থা যেখানে কতিপয় বিক্রেতা ও অনেক ক্রেতা সমজাতীয় বা প্রায় সমজাতীয় দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করেন, এ ধরনের বাজারে একজন বিক্রেতা অন্যান্য বিক্রেতার আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যেমন, “টেলিযোগাযোগ খাতের” ফার্ম তার পণ্যের বিজ্ঞাপনে একজন চলচ্চিত্রের নায়ককে ব্যবহার করলেন। সেটা পর্যবেক্ষণ করে আরেকটি ফার্ম তার বিজ্ঞাপনে একজন জনপ্রিয় খেলোয়াড়কে ব্যবহার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন ।


অলিগোপলি বাজারের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Oligopoly Market)


১. বিক্রেতার সংখ্যা : এ ধরনের দ্রব্যের বাজারে কতিপয় বিক্রেতা থাকে ।
২. দ্রব্যের প্রকৃতি : এ ধরনের দ্রব্যের বাজার সমজাতীয় অর্থাৎ দ্রব্যটি একই ধরনের বা প্রায় সমজাতীয় বা সামান্য পৃথকীকরণ করা যায় ।
৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : এ ধরনের দ্রব্যের বাজারের একটি ফার্ম তার দ্রব্যের দাম ও উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্মের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।
৪. বিজ্ঞাপনের প্রভাব : এ ধরনের দ্রব্যের বাজারে ফার্মসমূহ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিয়ে থাকে ।

Content updated By
Promotion