কয়লা হলো কালো বা কালচে বাদামি রঙের একধরনের পাললিক শিলা। এতে বিদ্যমান মূল উপাদান হচ্ছে কার্বন। তবে স্থানভেদে এতে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে হাইড্রোজেন (H2), সালফার (S), অক্সিজেন (O2) কিংবা নাইট্রোজেন (N2) থাকে। কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ, তাই জ্বালানি হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।প্রাকৃতিক গ্যাস আর খনিজ তেলের মতো কয়লা একটি জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel) হলেও এর গঠন প্রক্রিয়া আলাদা। প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে জলাভূমিতে জন্মানো প্রচুর ফার্ন, শৈবাল, গুল্ম ও অন্যান্য গাছপালা মরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কয়লা তৈরি হয়েছে। গাছপালায় বিদ্যমান জৈব পদার্থে থাকা কার্বন প্রথমে জলাভূমির তলদেশে জমা হয়। এভাবে জমা হওয়া কার্বনের স্তর আস্তে আস্তে পলি বা কাদার নিচে চাপা পড়ে যায় এবং বাতাসের সংস্পর্শ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরকম অবস্থায় কার্বনের স্তর আরো ক্ষয় হয়ে পানিযুক্ত, স্পঞ্জের মতো ছিদ্রযুক্ত জৈব পদার্থে পরিণত হয়, যাকে বলা হয় পিট (Peat)। পিট অনেকটা হিউমাসের মতো পদার্থ। পরবর্তীতে উচ্চ চাপে ও তাপে এই পিট পরিবর্তিত হয়ে কার্বনসমৃদ্ধ কয়লায় পরিণত হয়। কয়লা তিন রকমের হয়। যেমন: অ্যানথ্রাসাইট, বিটুমিনাস এবং লিগনাইট। অ্যানথ্রাসাইট হলো সবচেয়ে পুরোনো ও শক্ত কয়লা, যা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে তৈরি এবং এতে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ কার্বন থাকে। বিটুমিনাস কয়লা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো এবং এতে শতকরা ৫০-৮০ ভাগ কার্বন থাকে। লিগনাইট কয়লা ১৫০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো আর এতে সর্বোচ্চ শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত কার্বন থাকে।
প্রক্রিয়াকরণ
ভূগর্ভের কয়লার খনি থেকে মেশিনের সাহায্যে কয়লা উত্তোলন করা হয়। কয়লা উত্তোলনের জন্য দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হলো ওপেন পিট মাইনিং (Open Pit Mining) আর অন্যটি হলো ভূগর্ভস্থ মাইনিং (Underground Mining)। সাধারণত কয়লার স্তর ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে বলে ওপেন পিট মাইনিং পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়। মেশিন দিয়ে ভূগর্ভ থেকে কয়লা তোলার পর কনভেয়ার বেল্ট দিয়ে সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে নেওয়া হয়। সেখানে কয়লায় থাকা অন্যান্য পদার্থ যেমন : ময়লা, শিলা কণা, ছাই, সালফার – এগুলোকে পৃথক করে ফেলা হয়।
ব্যবহার
তোমরা কি জান, কোন কোন কাজে কয়লা ব্যবহার করা হয়? বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহৃত হয় ইটের ভাটায়। জ্বালানি হিসেবে শিল্প-কারখানায় এবং বাসাবাড়িতে জ্বালানি হিসেবেও সামান্য কিছু কয়লা ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো কয়লা ব্যবহৃত না হলেও পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার খুবই বেশি। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাবাব-জাতীয় খাবার তৈরিতে এবং কর্মকার ও স্বর্ণকারগণ বিভিন্ন সামগ্রী এবং অলংকার তৈরির সময় কয়লা ব্যবহার করে থাকেন।প্রাকৃতিক জ্বালানির সংরক্ষণে নবায়নযোষ্ট শক্তি: আলোচিত প্রাকৃতিক জ্বালানির সবগুলোই এক সমর নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এগুলোর ব্যবহার কমানো ও সংরক্ষণের জন্য আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারি। সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, পানির স্রোত এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রাকৃতিক জ্বালানির উপর চাপ কমাতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শক্তি সংরক্ষণ করতে পারি।
আরও দেখুন...