Agaricus

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | | NCTB BOOK
12

Agaricus-এর শ্রেণিবিন্যাস (Classification)
Kingdom: Fungi

    Division: Basidiomycota

      Class: Basidiomycetes

         Order: Agaricales

             Family: Agaricaceae

                 Genus: Agaricus

বাংলাদেশ থেকে নথিভুক্ত প্রজাতি হলো A. bisporus (Leg.) Sing. এটি হোয়াইট বাটন মাশরুম নামে পরিচিত।

আবাসস্থল (Habitat):
Agaricus ভেজা মাটিতে, মাঠে-ময়দানে বা গোবর, খড় ইত্যাদি পচনশীল জৈব পদার্থের উপর জন্মায়। এরা মৃতজীবী (saprophytic)। সাধারণত এদের বায়বীয় অংশ খাড়া হয়ে উপরে বৃদ্ধি পায় এবং পরিণত অবস্থায় অনেকটা ছাতার মতো দেখায়। তাই এদেরকে ব্যাঙের ছাতা বলা হয়।মাইসেলিয়াম থেকে ছাতার ন্যায় বায়বীয় অংশ সৃষ্টিকে ফ্রুকটিফিকেশন (fructification) বলা হয় এবং ঐ বায়বীয় অংশকে Agaricus উদ্ভিদের ফ্রুট বডি (fruit body বা fruiting body) বলা হয়। এরা মাশরুম (mushroom) নামেও পরিচিত। অনেক সময় লনে (Lawn-খালি জায়গা) অনেকগুলো মাশরুম বৃত্তাকারে বা চক্রাকারে অবস্থান করতে দেখা যায়। এরূপ অবস্থাকে পরীচক্র (fairy ring) বলা হয়।

গোজনন অংশ  তথা ফ্রুট বডি (fruiting body) মাটি বা আবাদ মাধ্যম থেকে উপরে বাড়তে থাকে। পরিণত অবস্থায় এর দুটি অংশ থাকে। কাণ্ডের ন্যায় অংশকে স্টাইপ (stipe) বলা হয় এবং উপরের দিকে ছাতার ন্যায় অংশকে পাইলিয়াস (pileus) বলা হয়। তরুণ অবস্থায় পাইলিয়াসটি ভেলাম (Vellum) নামক একটি পাতলা ঝিল্লিময় আবরণে আবৃত থাকে। পাইলিয়াসের নিচের দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় পর্দায় ন্যায় অংশকে গিল (gills) বা ল্যামিলী (lamellae) বলে। স্টাইপের মাথায় একটি চক্রাকার অংশ থাকে যাকে অ্যানুলাস (annulus) বলে। ল্যামিলীতে অসংখ্য ব্যাসিডিয়া (basidia) সৃষ্টি হয়। প্রতিটি ব্যাসিডিয়াম উর্বর এবং ব্যাসিডিয়ামের শীর্ষে আঙুলের ন্যায় চারটি অংশের মাথায় একটি করে ব্যাসিডিয়োষ্পোর (basidiospore) উৎপন্ন হয়। স্পোরগুলো অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে নতুন মাইসেলিয়াম তৈরি করে।

গিলের অন্তর্গঠন (Gill’s infrastructure)
গিল পাতলা পাতের মতো। গিলের অন্তর্গঠন বেশ জটিল প্রকৃতির। প্রস্থচ্ছেদ করলে একে তিনস্তরে বিভক্ত দেখা যায়, যথা-ট্রমা, সাবহাইমেনিয়াম ও হাইমেনিয়াম।

ট্রমা (Trama) : গিলের কেন্দ্রীয় বন্ধ্যা অংশকে ট্রমা বলে। ঢিলাভাবে স্টেরিগমা , জড়াজড়ি করে সজ্জিত গৌণ মাইসেলিয়াম দিয়ে ট্রমা অংশ গঠিত। এর হাইমেনিয়াম কোষগুলো ডাইক্যারিওটিক।

সাবহাইমেনিয়াম (Subhymenium) : ট্রমার উভয় দিকের অংশকে সাব-হাইমেনিয়াম সর্বহাইমেনিয়াম বলে। কোষগুলো আকারে ছোট, গোলাকার এবং ২-৩ নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট। এরূপ কোষবিন্যাসকে প্রোজেনকাইমা বলে। এ অঞ্চল থেকে  ব্যাসিডিয়াম উৎপন্ন হয়ে থাকে।

হাইমেনিয়াম (Hymenium) : গিলের উভয় পাশের বহিস্থ স্তরকে হাইমেনিয়াম বলে। উর্বর এ স্তরের কোষগুলো সাবহাইমেনিয়াম হতে উথিত  তলের সাথে লম্বভাবে সাজানো থাকে। এ স্তরেই গদাকার ব্যাসিডিয়াম উৎপন্ন হয়।

ব্যাসিডিওকার্প (Basidiocarp) : ব্যাসিডিওমাইসিটিস শ্রেণির ছত্রাকের ফুট বডিকে ব্যাসিডিওকার্প বলে। কাজেই Agaricus-এর ফুট বডিকেও ব্যাসিডিওকার্প বলা হয়। Agaricus-এর ব্যাসিডিওকার্প গোড়ায় দণ্ডের ন্যায় স্টাইপ, স্টাইপের মাথার দিকে অ্যানুলাস এবং মাথায় ছাতার ন্যায় পাইলিয়াস নিয়ে গঠিত। এছাড়াও এতে আছে গিল বা ল্যামিলী, গিলে অসংখ্য ব্যাসিডিয়া এবং প্রতিটি ব্যাসিডিয়ামের মাথায় ৪টি করে ব্যাসিডিওস্পোর। ভূ-নিম্নস্থ মাইসেলিয়াম অংশ বাদে উপরে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় অংশটুকুই Agaricus-এর ব্যাসিডিওকার্প।

অঙ্কুরোদগম (Germination): অনুকূল পরিবেশে ব্যাসিডিওস্পোর অঙ্কুরিত হয়ে মনোক্যারিওটিক প্রাথমিক মাইসেলিয়াম গঠন শুরু করে। সোমাটোগ্যামির মাধ্যমে প্রাথমিক মাইসেলিয়াম হতে গৌণ মাইসেলিয়াম উৎপন্ন হয়। পরে গৌণ মাইসেলিয়ামের সহায়তায় সৃষ্ট রাইজোমর্ফ দিয়ে প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে।

পুষ্টি (Nutrition): জৈব পদার্থ শোষণ করে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।

জনন (Reproduction): Agaricus প্রধানত যৌন জনন প্রক্রিয়ায় জননকার্য সম্পন্ন করে। যৌন স্পোর উৎপাদনকারী অঙ্গের নাম ব্যাসিডিয়াম (basidium) এবং স্পোর এর নাম ব্যাসিডিওস্পোর।


Agaricus-এর অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ

১. খাদ্য হিসেবে Agaricus এর দুটি প্রজাতি A. campestris এবং A bisporus ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার চীন, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বামা, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে মানুষের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে (মানিকগঞ্জ ও সাভার) Volsariella ও Pleurons গণভুক্ত কয়েকটি মাশরুম প্রজাতির চাষ হচ্ছে। পুষ্টিগত দিক থেকে A. Zampestris ও A. bisporus (A prammescens ) অত্যন্ত উঁচু মানের এবং সুস্বাদু। টাটকা মাশুরুমে নানা ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। যেমন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, Vit-C, D, K, নিয়ামিন, প্যান্টোথেনিক এসিড ইত্যাদি।

২. শিল্প ও বাণিজ্যে : Agaricus এর চাষ লাভজনক বলে পাশ্চাত্যে বেশ কয়েকটি নামী শিল্পসংস্থা গড়ে উঠেছে। যা ৩. মৃত্তিকার পুষ্টি বৃদ্ধিতে : Agaricus মৃতজীবী; তাই বিভিন্ন জটিল বস্তুকে ভেঙ্গে মৃত্তিকার পুষ্টি বৃদ্ধি করে। কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে।

৪. ওষুধি গুণাবলি

ক. এতে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ এমন (Ca, K, P. Fe 3 Cu) সমন্বয়ে আছে যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত খেলে দেহের রোগ 
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

খ. এতে আঁশ বেশি থাকায় এবং চর্বি ও শর্করা কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাবার। এতে ইরিটাডেনিন, লোভাস্টাটিন ও এনটাডেনিন থাকে যা শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান । তাই নিয়মিত খেলে হৃৎরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় হয়। ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধ করে।

গ. এতে প্রচুর এনজাইম আছে যা হজমে সহায়ক, রুচি বর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরাময়ক। ৫. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : পৃথিবীর অনেক দেশে মাশরুম অত্যন্ত দামী খাবার। ব্যাপকভাবে মাশরুমের উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে আমরা মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি।

অপকারী ভূমিকাঃ

১. বিনাশী কার্য : Agaricus কাঠের গুড়ি, বাঁশ, খড় প্রভৃতির ক্ষতি করে।

২. জৈব বস্তুর ঘাটতি : Agaricus যেখানে জন্মায়, সেখানে জৈববস্তুর অভাব দেখা যায় ।

৩. বিষাক্ততা : কতিপয় প্রজাতি, যেমন Agaricus xanthodermus খুবই বিষাক্ত। তাই এসব ধরনের মাশরুম খেলে মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে।

বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়ঃ

i. অত্যন্ত উজ্জ্বল বর্ণের প্রজাতিগুলো বিষাক্ত।
ii. বিষাক্ত প্রজাতিগুলোর ব্যাসিডিওস্পোর বেগুনী বর্ণের।
iii. ঝাঁঝালো ও অম্লযুক্ত প্রজাতিগুলো বিষাক্ত 
iv. কাঠের উপর জন্মানো প্রজাতিগুলো বিষাক্ত। 
v. বিষাক্ত মাশরুম কখনো প্রখর রোদে জন্মায়না।

Content added || updated By

Read more

Promotion