SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - NCTB BOOK

এ অধ্যায়ের শেষে আমরা ধারণা নিতে পারব -

■  সারিপুত্র থেরর জীবন-দৰ্শন; 

■  কৃশা গৌতমী থেরীর জীবন-দর্শন।

শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু দীর্ঘদিন ভিক্ষু জীবন পালন করছেন। তিনি জ্ঞানে-গুণে অনন্য। সর্বদা ধর্মীয় কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সারাদেশে তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে। এক মধু পূর্ণিমায় অজন্তা বিহারে তাঁকে ধর্মদেশনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সভামণ্ডপে উপস্থিত হলে বিহারের দায়ক-দায়িকা এবং ভিক্ষু-শ্রমণ তাঁকে সাদরে বরণ করেন। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করার পর, যথাসময়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী বিনয়ের সঙ্গে শুদ্ধানন্দ ভিক্ষুকে দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। যথাযথ সম্ভাষণ জানিয়ে তিনি দেশনা শুরু করেন। তিনি বলেন, এই পৃথিবীতে বহু জ্ঞানী, গুণী ও মহৎ ব্যক্তির জন্ম হয়েছে, যাঁরা মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। অনেক মহৎ কর্ম করেছেন। তাঁদের কাজে জীবজগৎ নানাভাবে উপকৃত হয়েছে। কর্মগুণে তাঁরা পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন। মানুষ আজও তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে এরকম অনেক জ্ঞানী-গুণী থের-থেরী, উপাসক-উপাসিকা, শ্রেষ্ঠী এবং রাজন্যবর্গের নামোল্লেখ আছে, যাঁরা কর্মগুণে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। সৎ ও আদর্শ জীবন গঠন করতে হলে এরকম মনীষীর জীবনী পাঠ এবং গুণাবলি অনুসরণ করা উচিত। আজ আমি কয়েকজ বৌদ্ধ মনীষীর কথা বলব, যাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমরা সহজে সুন্দর ও মহৎ জীবন গঠন করতে পারি। আমি প্রথমে সারিপুত্র থেরর জীবনাদর্শ বর্ণনা করব। আপনারা মন দিয়ে শুনুন।

 

সারিপুত্র থের

সারিপুত্রের গৃহী নাম ছিল উপতিষ্য। তাঁর মায়ের নাম ছিল সারি ব্রাহ্মণী। কিন্তু পিতার নাম জানা যায়নি। সারি ব্রাহ্মণীর পুত্র ছিলেন বলে তাঁকে সারিপুত্র নামে ডাকা হতো। তিনি উপতিষ্য গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য মতে, নালক গ্রাম ছিল তাঁর জন্মস্থান। ধারণা করা হয় যে, তিনি উচ্চবংশীয় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সারিপুত্রের তিন ভাই ও তিন বোন ছিলেন। ভাইদের নাম ছিল চুন্দ, উপসেন ও রেবত। বোনদের নাম ছিল চালা, উপচালা এবং শিশুপচালা। তিনি নিজে এবং তাঁর সকল ভাই-বোন বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন। সারিপুত্র ছিলেন অত্যন্ত প্রত্যুৎপন্নমতিসম্পন্ন।

একদিন সারিপুত্র তার বন্ধু মৌদাল্যায়নের সাথে একটি নাটক দেখতে যান। নাটক দেখে তাঁদের মনে বৈরাগ্যভাব জাগে। তাঁরা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সংসার ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন গৃহত্যাগ করে ব্রাহ্মণ সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ও তার বন্ধু গুরুর জানা সকল বিদ্যা শিখে নেন। কিন্তু গুরুর কাছে পরম মুক্তির পথের সন্ধান না পেয়ে দুই বন্ধু গুরুকে ত্যাগ করে চলে যান। উপযুক্ত গুরুর সন্ধানে তাঁরা দুজন দুদিকে যান। কথা ছিল উপযুক্ত গুরুর সন্ধান পেলে তাঁরা আবার একত্রিত হবেন এবং একে অপরকে জানাবেন।

এর কিছুদিন পর সারিপুত্র রাজগৃহে অবস্থান করছিলেন। সেখানে সারিপুত্র বুদ্ধের শিষ্য অশ্বজিতকে ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করতে দেখেন। অশ্বজিতের সৌম্য চেহারা দেখে সারিপুত্র মুগ্ধ হন। তিনি অশ্বজিতের সাথে আলাপ করেন। একপর্যায়ে সারিপুত্র তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন,

*আপনি কার শিষ্য ?

*আপনার গুরু কে ?

*তিনি কোন মতবাদী ?

অশ্বজিত বললেন, শাক্যবংশীয় মহাশ্রমণ গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ আমার শাস্তা (শিক্ষক) সম্যক সম্বুদ্ধের ধর্মমত জানার জন্য সারিপুত্রের কৌতূহল হলো। ভিক্ষু অশ্বজিত তাঁকে বুদ্ধভাষিত একটি গাথা শোনালেন। গাথাটির মর্মকথা হলো-

‘পৃথিবীর সকল কিছুর উৎপত্তির কারণ আছে। কারণ ছাড়া কোনো কিছুই উৎপন্ন হয় না।' বুদ্ধ আরো বলেছেন, ‘জগতে দুঃখ আছে। দুঃখেরও কারণ আছে। দুঃখের নিরোধ আছে এবং দুঃখ নিরোধের উপায় আছে। পরম নির্বাণ লাভের মাধ্যমেই এই দুঃখের অবসান হয় এবং পরম শান্তি অর্জিত হয়।

এটিই বুদ্ধের মতবাদ। অতএব, বুদ্ধ নির্বাণবাদী।

গাথাটি শ্রবণ করার পরে তিনি স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন। এরপর সারিপুত্র গিয়ে মৌদগল্যায়নকে বিষয়টি জানান। সারিপুত্র থেকে গাথাটি শুনে মৌদগল্যায়নও স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন। পরিশেষে তাঁরা বুদ্ধের কাছে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন। দুই বন্ধু রাজগৃহে উপস্থিত হন। এ সময় বুদ্ধ রাজগৃহে শিষ্যদের ধর্মদেশনা করছিলেন। বুদ্ধ দূর থেকে দিব্যজ্ঞানে তাঁদের মনোভাব জ্ঞাত হলেন। বুদ্ধ তাঁদের ভিক্ষুধর্মে দীক্ষিত করলেন। দীক্ষার পর তিনি সারিপুত্র থের নামে পরিচিতি লাভ করেন। দীক্ষিত হওয়ার পনের দিনেই সারিপুত্র থের অর্থত্ব ফলে উন্নীত হন। দীক্ষার দিন ভিক্ষু-ভিক্ষুণী সঙ্ঘের সমাবেশে বুদ্ধ সারিপুত্রকে অগ্রশ্রাবক হিসেবে ঘোষণা করে পাতিমোক্ষ দেশনা করেন। এই পদ লাভের জন্য তাঁর জন্ম-জন্মান্তরের সাধনা ছিল। ‘শ্রাবক' শব্দের অর্থ হলো শিষ্য। অতএব অগ্রশ্রাবক হলো শিষ্যদের মধ্যে অগ্রগণ্য। এতে বোঝা যায়, সারিপুত্র থের ছিলেন বুদ্ধশিষ্যদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

সারিপুত্র ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী। বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনে ছিলেন সুপণ্ডিত। বুদ্ধের ভাষণগুলো তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সহজ সরলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন। জেতবন বিহারে অবস্থানকালে বুদ্ধ সারিপুত্র থেরকে মহাপ্রজ্ঞাবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান দান করেন এবং ‘ধর্মসেনাপতি' উপাধিতে ভূষিত করেন। ধর্মদেশনার সময় সারিপুত্র সর্বদা বুদ্ধের ডান দিকের আসনে বসতেন। এজন্য তাঁকে বুদ্ধের ‘ডান হস্ত’ হিসেবেও অভিহিত করা হতো।

বুদ্ধের পূর্বেই সারিপুত্র থের পরিনির্বাণ লাভ তথা মৃত্যুবরণ করেন। সারিপুত্র থের অহত্ব ফলে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে তিনি নিজ মৃত্যু সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। তাই পরিনির্বাণের পূর্বে তিনি বুদ্ধকে বন্দনা নিবেদন করে নিজ জন্মস্থানে পরিনির্বাণের অনুমতি নেন। এরপর তিনি নিজ জন্মস্থানে ফিরে যান এবং নির্বাণ প্রাপ্ত হন। শ্রেষ্ঠী অনাথপিন্ডিক তথাগত বুদ্ধের অনুমতি গ্রহণ করে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারিপুত্রের দেহভস্মের ওপর শ্রাবস্তীতে একটি স্তূপ নির্মাণ করেন।

সারিপুত্রের উপদেশ হলো

“মানুষ মরণশীল। যে কোনো সময় মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তাই শীলাদি ধর্ম পরিপূর্ণ কর। যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ কর। দুঃখে পতিত হয়ে বিনাশ প্রাপ্ত হয়ো না। শত্রুর ভয়ে নগরের ভিতর বাহির যেমন সুরক্ষিত করা হয়, তেমনি নিজেকে সুরক্ষিত করে সর্বপ্রকার পাপ হতে মুক্ত রাখো। যারা শীলাদি পালন করে না, যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ করে না, তারা নরকে পতিত হয়ে শোক করে থাকে।”

সারিপুত্র থেরর জীবন চরিত বর্ণনা করার পর ভিক্ষু পুনরায় বললেন :

সারিপুত্র থেরর জীবনচরিত থেকে যে শিক্ষা পাই,তা হলো- একাগ্রতা ও অধ্যাবসায় থাকলে অবশ্যই মানুষ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। মানুষের জীবনের কোনো কাজের বৃথা যায় না। মানুষ ভালো কাজের ভালো ফল, খারাপ কাজের মন্দ ফল ভোগ করে। গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে খারাপ কাজ করা উচিত নয়। সকল প্রকার পাপকাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২৫

সারিপুত্র থেরর উপদেশ হতে তুমি কী শিক্ষা লাভ করেছ, তা লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২৬

সারিপুত্র থেরর কোন্ গুণটি তুমি অর্জন করতে চাও লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

সারিপুত্র থেরর জীবনাদর্শ বর্ণনা করার পর শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু বললেন, আমরা জীবজগতের প্রকৃত স্বরূপ বুঝি না বলে নানাভাবে কষ্ট পাই। শোকগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সহজে আমাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। কিন্তু যাঁরা বুদ্ধিমান, জীবজগতের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারে, তাঁরা সহজে কষ্ট পান না। শোকগ্রস্ত হন না। তাঁরা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে মহৎ জীবন গঠন করে। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে এরকম একজন থেরী আছেন যিনি নিজের একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বুদ্ধের উপদেশ শুনে জীবজগতের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারেন এবং ভিক্ষুণী হয়ে নিজ কর্মগুণে অর্হত্ব ফল লাভ করেন। তাঁর নাম কৃশা গৌতমী। একবার আমি এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, মৃত ব্যক্তির সন্তানেরা খুব কান্না করছেন। আত্মীয়-স্বজন কেউ তাদের থামাতে পারছেন না। তখন আমি তাদের কাছে ডেকে এনে বুদ্ধের একটি উপদেশ বলি। উপদেশটি হলো : ‘সকল প্রাণীর মৃত্যু হয়। উৎপন্ন সকল বস্তু একদিন ধ্বংস হয়ে যায়।’ ‘সকল মানুষ একদনি না একদিন মৃত্যুবরণ করে’- তা বোঝানোর জন্য আমি কান্নারত সন্তানদের কৃশা গৌতমী থেরীর জীবন কাহিনি শোনাতে শুরু করি। কাহিনিটি এরকম-

 

কৃশা গৌতমী থেরী

গৌতম বুদ্ধের সময়ে কৃশা গৌতমী শ্রাবস্তী নগরে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম ছিল গৌতমী। তার শরীর কৃশ হওয়ায় তিনি কৃশা গৌতমী নামে পরিচিত ছিলেন। বিবাহিত জীবনে তিনি তেমন আদর যত্ন পাননি। লোকে তাঁকে অনাথা বলত। কিন্তু পুত্র সন্তান প্রসবের পর তাঁকে সবাই সম্মান করতে থাকে। তিনি অতি আদরে ছেলেকে বড় করছিলেন। ছেলেটা যখন হাঁটতে শুরু করল তখন হঠাৎ মারা যায়। এক মাত্র পুত্রের মৃত্যুতে মা কৃশা গৌতমী শোকে পাগলের মতো হয়ে গেল। সন্তানের জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরে বলতে লাগলেন ‘আমার সন্তানের জন্য ঔষধ দাও'। লোকজন পুত্র শোকে কাতর মায়ের মনোবেদনা না বুঝে ব্যঙ্গ করতে লাগল। অবশেষে এক ভদ্রলোক তাঁকে বুদ্ধের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।

ভদ্রলোকের কথামতো তিনি বুদ্ধের কাছে যান এবং বলেন : ‘ভগবান ! আমার সন্তানের জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য ঔষধ দিন।' বুদ্ধ কৃশা গৌতমীর উচ্চতর জীবনের যোগ্যতা বুঝতে পেরে এবং জীবনের বাস্তব পরিণতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য বললেন, ‘নগরে যাও। সেখানে গিয়ে যে ঘরে কখনো কারো মৃত্যু হয়নি, সে রকম একটি ঘর থেকে এক মুঠো সরিষা বীজ নিয়ে এসো।' বুদ্ধের কথা শুনে কৃশা গৌতমী শান্ত হলেন এবং এক ঘর থেকে অন্য ঘরে ঘুরে ঘুরে সরিষা বীজ ভিক্ষা করতে লাগলেন, বীজ পেয়ে তিনি যখন জিজ্ঞেসা করলেন- ‘এই ঘরে কোন মৃত্যু হয়েছে কিনা? সবাই উত্তরে বলল, ‘এখানে কত মৃত্যু হয়েছে তার হিসাব নেই।' এভাবে ঘরে ঘরে ঘুরে তিনি বুঝতে পারলেন, কোনো ঘরই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়নি। কেউ মৃত্যুর ঊর্ধ্বে নয়। জীবনের করুণ পরিণতি বুঝতে পেরে মৃত পুত্রকে শ্মশানে নিয়ে গেলেন এবং শ্মশানে পুত্রের মৃতদেহ রেখে বললেন-

‘ইহা পল্লী বিশেষের ধর্ম নয়, নগর বিশেষের নয়, কোন বংশ বিশেষেরও নয়; স্বর্গ, মর্ত্য সর্বজগতের জন্য এই ধর্ম, সকল বস্তু অনিত্য।’

এ কথা বলে তিনি বুদ্ধের কাছে গেলেন। বুদ্ধ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গৌতমী সরিষা বীজ পেয়েছ কি?” কৃশা গৌতমী উত্তরে বললেন, ‘ভগবান সরিষা বীজের আর প্রয়োজন নেই। আমাকে দীক্ষা দান করুন।' তখন বুদ্ধ তাঁকে বললেন, ‘বন্যার স্রোতে যেমন গ্রাম, নগর ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি ভোগবিলাসে রত মানুষও মৃত্যুর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়।'

বুদ্ধের উপদেশ শুনে কৃশা গৌতমী স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন এবং ভিক্ষুণীধর্মে দীক্ষা দানের জন্য প্রার্থনা করেন। তাঁর প্রার্থনা পূর্ণ হয়। ভিক্ষুণী ধর্মে দীক্ষিত হয়ে তিনি সাধনার বলে প্রজ্ঞা লাভ করেন এবং লোভ, তৃষ্ণা, হিংসা প্রভৃতি ক্ষয় করে অর্হত্ব লাভ করেন। তিনি ভিক্ষুণীসংঘের নিয়ম-কানুন ভালোভাবে পালন করতেন। বুদ্ধ তাঁকে অমসৃণ বস্ত্র পরিধানকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেন। স্বীয় সাফল্যে উল্লসিত হয়ে তিনি অনেক গাথা ভাষণ করেছিলেন। তাঁর কিছু উপদেশ নিচে তুলে ধরা হলো:

১. সাধু ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে জ্ঞানী হওয়া যায়। সাধু ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা জ্ঞানীগণ প্রশংসা করেন।

২. সৎ মানুষকে অনুসরণ করলে জ্ঞান বর্ধিত হয়।

৩. চতুরার্য সত্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করো।

৪. আমি আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, নির্বাণ উপলব্ধি করেছি। আমি বেদনামুক্ত, ভারমুক্ত। আমার চিত্ত সম্পূর্ণ তৃষ্ণামুক্ত।

কৃশা গৌতমীর জীবন কাহিনি বলে শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু শোকাহত পরিবাবর পরিজনকে শান্ত করেন এবং কৃশা গৌতমী থেরীর উপদেশ বাণী অনুসরণের জন্য উপদেশ দেন। পরিবারের সদস্যগণ কৃশা গৌতমী থেরীর উপদেশ অনুসরণপূর্বক সৎ জীবন যাপনের প্রতিজ্ঞা করেন।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২৭

“বুদ্ধের উপদেশ কৃশা গৌতমীর অর্হত্ব লাভের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল” - উক্তিটি সম্পর্কে তোমার অভিমত ব্যক্ত - করো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

কৃশা গৌতমী থেরীর জীবনাদর্শ বর্ণনা করার পর শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু বললেন, শুধু কৃশা গৌতমী থেরী নয়, অনেক রাজন্যবর্গও বুদ্ধের উপদেশ শুনে সৎ জীবন যাপন করতেন এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে রাজ্য পরিচালনা করতেন। অনেক গুণী রাজা বুদ্ধের উপাসক এবং বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। একবার আমি আনন্দ বিহারে কঠিন চীবর দানে যোগদান করেছিলাম। সেই দানানুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে ভিক্ষুসংঘ এবং অনেক দায়ক-দায়িকা সমবেত হয়েছিলেন। চাকমা রাজা এবং বোমাং রাজাও সপরিবারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের দেখে উপস্থিত দায়ক-দায়িকাগণ খুবই খুশি হন। আমি তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, মহৎ মানুষের সঙ্গ সুখকর এবং আনন্দদায়ক। বুদ্ধের সময়েও রাজা, মন্ত্রী ও শ্রেষ্ঠীগণ সপরিবারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করতেন। তাঁরা ধর্মের প্রচার-প্রসারে সহযোগিতা করতেন। আজকে এ পুণ্যানুষ্ঠানে রাজ পরিবারের সদস্যদের দেখে আমার বুদ্ধের সময়ের রাজা ও শ্রেষ্ঠীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা মনে পড়ে গেল। বুদ্ধের সময়ের রাজা বিম্বিসার, রাজা প্রসেনজিত, রাজা অজাতশত্রু, রাজা উদয়ন প্রমুখ ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁরা বুদ্ধকে খুবই ভালোবাসতেন। বুদ্ধ এবং ভিক্ষুসংঘকে চতুর্প্রত্যয় দান করতেন। বিহার দান করতেন। এছাড়া, রাজা ও অমাত্যগণ বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। আজ আমি বুদ্ধের সময়ের প্রভাবশালী রাজা প্রসেজিতের জীবন কাহিনি আপনাদের বলতে চাই।শুদ্ধানদ্ধ ভিক্ষু রাজা প্রসেনজিতের জীবনাদর্শ বর্ননা করার পর বললেন, সকলের গুণিজনের জীবন চরিত পাঠ করা উচিত। আমি মহৎ ব্যক্তিদের জীবন চরিত পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলছি। আপনারা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এরপর তিনি জীবন চরিত পাঠের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করলেন

জীবন চরিত পাঠের প্রয়োজনীয়তা

জগতে বিনা পরিশ্রমে কেউ মহৎ হতে পারেন না। যাঁরা মহৎ হয়েছেন তাঁদের জীবনেও সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-বেদনা এবং সফলতা ও বিফলতা ছিল। কিন্তু তাঁরা নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হননি। তাঁরা জীবজগতের কল্যাণ সাধনে নিজেকে উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। ন্যায়ের পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। সর্বদা আদর্শ জীবন যাপনের চেষ্টা করেছেন। সৎ ও ন্যায়ের পথে থেকে তাঁরা মানুষের সুখ- শান্তির জন্য কুশল কর্ম সম্পাদন করে গেছেন। জীবন চরিত পাঠে সেসব মহামনীষীদের গুণাবলি এবং অবদান সম্পর্কে জানা যায়। গুণাবলি অনুসরণ করে আদর্শ জীবন গঠন এবং মহৎকর্ম সম্পাদন করা যায়। তাই মহৎ ব্যক্তিদের জীবনচরিত পাঠ করা উচিত।

জীবন পাঠের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করার পর শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনা করে এবং সকলকে কুশল কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দিয়ে দেশনা শেষ করেন।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২৮

মহৎ জীবন গঠনের জন্য তুমি কী করবে তা নিচে লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

গুণীজনের জীবনী পড়ো, সৎ আদর্শ জীবন গড়ো।।

Content added By

Promotion