SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - রাসায়নিক বিক্রিয়া | NCTB BOOK

আমরা টর্চ লাইট, বিভিন্ন রকম রিমোট কন্ট্রোলার, নানা রকম খেলনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করি এগুলোকে ড্রাইসেল বা শুষ্ক কোষ বলে।

তোমরা কি জানো, এই শুষ্ক কোষ কীভাবে তৈরি করা হয়?

চিত্র ৮.২ : শুষ্ক কোষ

 

প্রথমে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl), কয়লার গুঁড়া এবং ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড (MnO2) ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ পানি যোগ করে একটি পেস্ট বা লেই তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণটি সিলিন্ডার আকৃতির দস্তার চোঙে নিয়ে তার মধ্যে একটি কার্বন দণ্ড এমনভাবে বসানো হয় যাতে দণ্ডটি দস্তার চোঙকে স্পর্শ না করে। কার্বন দণ্ডের মাথায় একটি ধাতব টুপি পরানো থাকে। শুষ্ক কোষের উপরের অংশ কার্বন দণ্ডটির চারপাশ পিচের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। দস্তার চোঙটিকে একটি শক্ত কাগজ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় । এখানে দস্তার চোঙ ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার বা অ্যানোড হিসেবে কাজ করে আর ধাতব টুপি দিয়ে ঢাকা কার্বন দণ্ডের উপরিভাগ ধনাত্মক তড়িৎদ্বার বা ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। এখন আমরা দেখে নিই কীভাবে শুষ্ক কোষ কাজ করে। 

 

কাজ : শুষ্ক কোষ দিয়ে তড়িৎ বর্তনী তৈরি করে শক্তির রূপান্তর দেখা

পদ্ধতি : ১টি তামার তারের এক প্রাপ্ত শুষ্ক কোষের অ্যানোড ও অপর তামার তারটি ক্যাথোডের সাথে যুক্ত করো। এবার

প্রয়োজনীয় উপকরণ : ১টি বৈদ্যুতিক বাল্ব, ১টি শুল্ক কোষ, ২টি তামার তার চিত্রের মতো করে বৈদ্যুতিক বাঘের সাথে তার দুটি সংযোগ দাও। বাল্বটি জ্বলে উঠল। কারণ হলো এখানে তামার তারের মাধ্যমে বাল্ব ও কোষের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরি হয়ে গেল।

চিত্র ৮.৩ : শুষ্ক কোষের বর্তনী

এখানে কী ধরনের শক্তির রূপান্তর ঘটল? বর্তনী তৈরি হওয়ার ফলে বাল্ব জ্বলছে এবং তা আলোক শক্তি দিচ্ছে। এই আলোক শক্তি হচ্ছে কোষের রাসায়নিক শক্তির একটি রূপ। আর কোষের শক্তির উৎস হলো এখানে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ অর্থাৎ দস্তা, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, কয়লার গুঁড়া ও ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড। তাহলে বলা যায় যে, ঐ সকল রাসায়নিক পদার্থের সঞ্চিত শক্তিই রূপান্তরিত হয়ে আলোক শক্তি উৎপন্ন করছে। অর্থাৎ এখানে রাসায়নিক শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।

 

তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis)

কাজ : তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানা

প্রয়োজনীয় উপকরণ : ব্যাটারি, তামার তার (দুটি), দুটি জিংক দণ্ড (তড়িৎদ্বার), পানি, লবণ, একটি কাচ পাত্র জিংক তড়িৎদ্বার 

পদ্ধতি : কাচ পাত্রে ৩০০ মিলিলিটার পানি নিয়ে ৩০ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ যোগ করে ভালোভাবে নাড়া দাও। এবার জিংক দণ্ড দুটি চিত্র অনুযায়ী তামার তার দিয়ে ব্যাটারির সাথে সংযুক্ত করো। জিংক দণ্ডের দিকে ভালো করে লক্ষ করো। উভয় দণ্ডের গায়ে গ্যাসের বুদবুদ দেখতে পাচ্ছ কি 

হ্যাঁ, এর কারণ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক সোডিয়াম আয়ন (Nat) ও ঋণাত্মক ক্লোরাইড আয়ন (CI) উৎপন্ন হয়।

একইভাবে দ্রবণে পানি বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন ও হাইড্রোক্সিল আয়ন উৎপন্ন করে।

ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিয়ে দ্রবীভূত লবণের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ও ক্লোরাইড আয়ন অ্যানোডের দিকে অগ্রসর হয়। ক্লোরাইড আয়ন (CI-) অ্যানোডে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরিন গ্যাস (Cl2) উৎপন্ন করে। তাই আমরা অ্যানোডে গ্যাসের বুদবুদ দেখতে পাই। অন্যদিকে সোডিয়াম আয়ন ও হাইড্রোজেন আয়ন ক্যাথোডের দিকে অগ্রসর হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ক্যাথোডে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন গ্যাস (H2) উৎপন্ন করে যার ফলে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায় ও দ্রবণে সোডিয়াম আয়ন (Na+) ও হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH) থেকে যায়।

সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে অ্যানোডে ক্লোরিন গ্যাস, ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং দ্রবণে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড থেকে যায়।

যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অন্য পদার্থে পরিণত হয় তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য (Electrolyte) বলে। সব পদার্থ তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না। যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়াও করে না, তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন- চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি।

নতুন শব্দ : যোজনী, যৌগমূলক, সংযোজন, দহন, প্রতিস্থাপন, প্রশমন, অ্যানোড, ক্যাথোড, তড়িৎ বিশ্লেষণ, তড়িৎ বিশ্লেষ্য, স্ন্যাক লাইম

 

এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম

- সংযোজন বিক্রিয়ায় একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে একটি নতুন পদার্থ তৈরি করে।

- দহন বিক্রিয়ায় একটি পদার্থ বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্যে পুড়ে প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে। 

- প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে প্রতিস্থাপিত করে নতুন পদার্থ তৈরি করে ।

- যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙে একের অধিক নতুন পদার্থে পরিণত হয় তাকে বিযোজন বিক্রিয়া বলে। 

- প্রশমন বিক্রিয়ায় বিপরীতধর্মী পদার্থ বিক্রিয়া করে একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে নিরপেক্ষ পদার্থ উৎপন্ন করে। দহন বিক্রিয়ায় সাধারণত রাসায়নিক শক্তি তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 

- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে।

- শুষ্ক কোষ ব্যবহার করলে রাসায়নিক শক্তি রূপান্তরিত হয়ে আলোক শক্তি বা অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

- যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। -

- যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে না তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। 

- মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। 

- রাসায়নিক সমীকরণে পদার্থগুলো সমীকরণটির তীর চিহ্নের বামদিকে এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলো তীর চিহ্নের ডানদিকে হবে।

Content added || updated By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.